ধূসর রঙে আকাশ পর্ব-১৮

0
1221

#ধূসর_রঙে_আকাশ
#পর্ব_১৮
লিখা: Sidratul Muntaz

রিম্মি পদ্মপুকুরের সামনের সিড়িতে পা ভিজিয়ে বসে আছে। নির্বিকার ভঙ্গিতে, দুই গালে দুই হাত রেখে। নীলাভ্র পেছনে এসে দাড়ালো। নিচু গলায় বলল,
” এইখানে কেন এনেছো? যা বলার জলদি বলো। আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না।”
নীলাভ্রর মস্তিষ্কে আন্দোলিত হয় রিম্মির বার্তা। রিম্মি বলল,
” থাকতে পারবে না? নাকি থাকতে চাও না?”
নীলাভ্র গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিল, ” দুটোই।”
রিম্মি মুচকি হাসল। নীলাভ্র রিম্মির পাশে বসতে বসতে বলল,
” কতদিন ধরে চলছে এসব?”
রিম্মির দায়সারা উত্তর,
” প্রথমদিন থেকেই।”
নীলাভ্র চোয়াল শক্ত করে বলল,” মানে?”
” যেদিন ওরা এ বাসায় এসেছে সেদিন থেকেই। প্রত্যেক রাতে দেখা করি আমরা।”
” কেন করো?”
” করতে হয়।”
” এতো অকপটে কথাগুলো বলতে লজ্জা করছে না? তাহলে আমার সাথে কি করছো এতোদিন? ফাজলামো? সামনে শুক্রবার আমাদের বিয়ে হচ্ছে। কার্ডও ছাপানো হয়ে গেছে। এলাকার প্রত্যেকটা মানুষ এ খবর জানে। মা তোমাকে পছন্দ করেন না। তাও কত স্ট্রাগল করে মাকে রাজি করিয়েছি। সবই কি ফাজলামোর জন্য?”
নীলাভ্র কিছুটা উচ্চকণ্ঠে বলল। রিম্মি দুইকান চেপে ধরল। নিঃশব্দে বলল,
” এতো জোরে কথা বলার প্রয়োজন নেই। আমি এমনিই তোমার কথা বুঝতে পারি।”
নীলাভ্র নিজের চুল খামচে ধরল। চুপ করে থাকতে পারছে না সে। অযথা চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে। মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। এই যন্ত্রণার নিরাময় কি? রিম্মি বলল,
” বিশ্বাস করো নীলাভ্র, আমি বিশ্বাসঘাতক না। চরিত্রহীনাও না৷ তোমরা যেমন ভাবছো তেমন কিছুই আসলে হয়নি। আমাদের মধ্যে শারিরীক কোনো সম্পর্ক নেই। তবে মানসিক একটা বোঝা-পড়া নিশ্চয়ই আছে। সেটা ঠিকমতো মিটিয়ে নিতে পারলেই আমি মুক্ত। সেও মুক্ত।”
নীলাভ্র ভ্রু কুঞ্চিত করল,” মানে?”
” সব মানে আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো না। শুধু এইটুকু জেনে রাখো, আমি তোমাকে ঠকাইনি।”
” কিভাবে বিশ্বাস করি তোমার কথা? নিজের চোখে যেটা দেখেছি সেটা কি মিথ্যে? তুমি ওইভাবে..”
নীলাভ্রর গলায় শব্দ আটকে আসে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। রুদ্ধ কণ্ঠে বলল,
” উফফ! এই এতোবড় ঘটনার পেছনে কি ব্যাখ্যা থাকতে পারে? আমি মানতে পারছি না কিছু। মানতে পারছি না রিম্মি।”
” অন্তত এইটুকু তো জানো। আমি কোনো সাধারণ মানুষ নই। তোমার কাছে হয়তো অপশরী। কারো কারো কাছে অশরীরী, ভূত,প্রেত, জ্বীন, ডাইনি, আরও কত কি! সত্যি বলতে আমি এসবের কিছুই না। রক্ত-মাংসে মানুষ আমি। শুধু পার্থক্যটা হলো সময়ের।”
” সময়ের পার্থক্য মানে?”
” ভুল সময়ে পৃথিবীতে চলে এসেছি। এই সময়টা আমার জন্য না। এখানে আমার মতো কেউ নেই। সবার কাছে আমি অসুস্থ, অস্বাভাবিক, এলিয়েন। কিন্তু আজ থেকে কমপক্ষে দুইশো আড়াইশো বছর পর এই পৃথিবীটা আমার মতো হয়ে যাবে।”
” কি বলছো এসব?”
” সত্যি বলছি। কিন্তু আমি চাইনা এটা হোক। যদি সত্যিই এমন হয় তাহলে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে বিচ্যুতি ঘটবে। ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবীটা। সবাই সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে। একটা বিরাট পরিবর্তন আসবে সভ্যতায়। দাঙ্গা বেধে যাবে। জানো নীলাভ্র, আমি চাইলেই সব করতে পারি। চাইলে পুরো পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে পারি। সবকিছু তছনছ করতে পারি এক নিমেষে। চাইলে আমীরকেও খুন করে দিতে পারি। কিন্তু আমি সেটা করবো না। কারণ আমি অকৃতজ্ঞ নই। এইযে আমার এতো ক্ষমতা, শক্তি সবই আমীরের জন্য। ও যখন আমার জীবনে ছিল না তখন আমি ছিলাম সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষ। সহজ-সরলভাবে তোমাদের মতোই কথা বলতে পারতাম। কারো চোখের দিকে তাকিয়ে মনের আকুতি বুঝে নেওয়ার সাধ্য আমার ছিল না৷ কিন্তু এখন আমি একটা পিপড়ার হার্টবিটও উপলব্ধি করতে পারি। আমার থেকে দশমিটার দূরে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটি কি নিয়ে চিন্তা করছে সেটাও অনায়াসে বলে দিতে পারি। এগুলো কোনো অলৌকিক শক্তি না। কোনো অতিপ্রাকৃত ঘটনাও না। সবকিছুরই সুস্পষ্ট যুক্তি আছে। আমার শ্রবণসীমা স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে উপরে। বিশ হার্জের নিচের শব্দও আমি শুনতে পারি। চাইলে সময়কেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এইযে আমার বয়স বাইশ বছর পাঁচমাস, আমি চাইলে সারাজীবন এই বয়সে আটকে থাকতে পারি। আবার চাইলে ষাট বছরের থুরথুরে বুড়িও হতে পারি। অথবা ষোল বছরের কৈশোরে ফিরে যেতে পারি। সব পারি আমি, সব! কিন্তু এতোকিছু আমি চাইনি। শুধু স্বাভাবিক একটা জীবন চেয়েছিলাম। আমি সেটা পাইনি। তার বদলে পেয়েছি এই যন্ত্রণাময় অস্বাভাবিক জীবন। আমি এই জীবন থেকে মুক্তি চাই। আবারও কোনো সাধারণ মানুষের মতো বাঁচতে চাই। আমীরের আমাকে তেমন প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমারই ওকে প্রয়োজন। আমার এই অস্বাভাবিক জীবন থেকে শুধু ওই পারে আমাকে মুক্তি দিতে। ”
নীলাভ্র চুপ করে কথাগুলো বুঝল। কিন্তু আমীরের সাথে রিম্মির সম্পর্ক কি ছিল? রিম্মি কিভাবে এরকম হলো? আর রিম্মিকে এমন বানিয়ে আমীরের লাভ কি? রিম্মি আবার নীলাভ্রর মস্তিষ্কে বার্তা পাঠালো,
” তোহা সব জানে।”
নীলাভ্র অবাক হয়ে বলল,” তোহা জানে?”
” হুম। ও-ই সব জানে। কিন্তু ওর হয়তো কিছু মনে নেই। যদি কোনোভাবে ওকে মনে করানো যেতো, তাহলে খুব ভালো হতো।”
” রিম্মি আমি না এখনো কিছু বুঝতে পারছি না। সব গুলিয়ে যাচ্ছে।”
” তোমাকে বুঝতে হবে না। শুধু এইটুকু বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে ঠকাইনি। আমীরের সাথে আমার কোনো অন্যায় সম্পর্ক নেই। আর আমি মিথ্যে বলছি না। এর প্রমাণ কি জানো?”
” কি?”
” মিথ্যে বললে আমার দুই গাল লালচে হয়ে যায়। দেখো তো এখন হচ্ছে নাকি?”
নীলাভ্র তাকিয়ে দেখল রিম্মির গাল দুটো একদম পরিষ্কার। কোনো লালচে ভাব নেই। রিম্মি হেসে বলল,
” এবার একটা মিথ্যে কথা বলি। তোমার গায়ে কালো শার্ট। ”
নীলাভ্র নিজের দিকে তাকালো। ওর গায়ের টি-শার্ট সাদা। তারপর আবার রিম্মির দিকে তাকাতেই দেখল ওর গাল দুটো লাল টুকটুকে হয়ে আছে। নীলাভ্র বিস্ময়ে হা হয়ে গেল। এর আগে কখনো এমন দেখেনি। তার মানে রিম্মি কখনো ওর সাথে মিথ্যে বলেনি। নীলাভ্র বলল,
” আরেকবার মিথ্যে বলো তো।”
” তোমার ভুড়ি বেড়ে যাচ্ছে নীলাভ্র। ”
নীলাভ্র নিজের পেটে হাত রাখল। ওর তো ভূড়িই নেই। রিম্মির গাল আগের চেয়েও দ্বিগুণ লাল হয়ে গেছে। অনেকটা টমেটোর মতো। নীলাভ্র বলল,
” আরেকটা মিথ্যে।”
” লুঙ্গীতে তোমাকে আস্তো উল্লুক দেখতে লাগে।”
এইবার গাল দুটো এতোটাই লাল হলো, মনে হচ্ছে রক্ত। ভয়ংকর দেখাচ্ছে রিম্মিকে। নীলাভ্র কি বলবে বুঝতে পারল না। রিম্মি হাসতে হাসতে বলল,
” আসলে লুঙ্গীতে তোমাকে দারুণ লাগে। মিথ্যের পরিমাণ যত গাঢ় হবে, গালও ততই লাল হতে থাকবে। কিন্তু এটা শুধু সেই বুঝবে যে এই বিষয়টা জানে। তোমাকে জানালাম একটাই কারণে। যেন তুমি বিশ্বাস করতে পারো।”
” আমি এখনো কিছু বিশ্বাস করতে পারছি না।”
” এরপরেও অবিশ্বাস করলে আমার কিছু বলার নেই। তুমি চাইলে বিয়েটা ভেঙে দিতে পারো। কিন্তু আমি তোমাকে আমার বিশুদ্ধতার প্রমাণ অবশ্যই দিবো। কাল আমাকে নিয়ে হসপিটালে যেতে পারবে?”
” কেন?”
” পরীক্ষা করতে। আমি কুমারী কিনা।”
” ছিঃ।”
” ছিঃ এর কি আছে? এমনি এমনি তো তুমি বিশ্বাস করবে না।”
” এতেই কি প্রমাণ হবে তুমি নির্দোষ? নিজের চোখে যে দৃশ্য দেখেছি সেটা অস্বীকার করি কিভাবে?”
” সব তো বললামই। এবার তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করো। কিন্তু জেনে রাখবে, আমীরের সাথে আমার কখনো কোনো অন্যায় সম্পর্ক নেই,ছিলনা। ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
রিম্মি উঠে দাড়ালো চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। নীলাভ্র পিছু ডাকল,
” রিম্মি।”
রিম্মি থামলো। নীলাভ্র বলল,
” এই বিয়েটা হচ্ছে।”
রিম্মি বলল,” কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।”
” কিরকম?”
” পরে সময়মতো জানিয়ে দিবো।”
রিম্মি এটুকু বলে আর থামলো না। চলে গেল। নীলাভ্র দাড়িয়ে চিন্তা করতে লাগল, তার সিদ্ধান্তটা কি ঠিক?

তোহা আঘাতপ্রাপ্ত গালে হাত রেখে শুয়ে আছে। অনেকটাই ফুলে গেছে গাল। ভিমরুল কামড়ালে যেমন অবস্থা হয় ঠিক সেরকম। রাগে, দুঃখে শুধুই কান্না পাচ্ছে। জ্বরও চলে এসেছে বোধহয়। আমীর হঠাৎ এসে তোহার কপালে হাত রাখল। তোহা ঝাড়ি মেরে হাতটা সরিয়ে দিল। চোখেমুখে ক্রোধ উপচে পড়ছে তার। আমীর বলল,
” জ্বর তো ভালোই এসেছে। দেখি, ওঠো।”
আমীর কাধ ধরে তোহাকে উঠাতে চাইল। তোহা চোখমুখ শক্ত করে বলল,
” খবরদার। একদম আমার ব্যাপারে নাক গলাতে আসবেন না। আমার যাই হোক, মরে যাই আমি, তাতে আপনার কি? আপনি বরং গিয়ে দেখুন রিম্মি কেমন আছে।”
” বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে তোহা। উঠো, ঔষধ লাগাতে দাও।”
” জুতা মেরে গরুদান? লাগবে না আপনার ঔষধ।আপনি বরং রিম্মিকে গিয়ে ঔষধ লাগিয়ে দিন।”
আমীর কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে তোহার দিকে চেয়ে রইল। তারপর হঠাৎ একটা দড়ি নিয়ে তোহার দুইহাত পেছন থেকে শক্ত করে বাধতে লাগল। তোহা ধস্তাধস্তি শুরু করল। কিন্তু আমীরের শক্তির কাছে বেশিক্ষণ পারল না। অযথাই চিৎকার করে গেল। আমীর ওর মুখেও টেপ মেরে দিল। এবার চিৎকারও বন্ধ। শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমীর এন্টিসেপটিক ক্রিম তোহার গালের ব্যথার জায়গাটায় মালিশ করল। প্রায় পাঁচমিনিটের মতো সময় লাগে। এটুকু সময়েও তোহা নড়াচড়া করেছে। আমীর ক্রিম লাগানো শেষ করে সোজা হয়ে বসল। একটা ক্লান্ত শ্বাস নিয়ে বলল,
” শোনো এবার, তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই না তোহা। রিম্মির সাথে আমার কোনো নিষিদ্ধ সম্পর্ক নেই। আমরা কোনো পাপ করছিলাম না।”
তোহা ইশারায় বুঝালো ওর মুখ খুলে দিতে। আমীর খুলে দিল৷ তোহা চিৎকার দিয়ে বলল,
” তাহলে ওই মেয়েকে আমার বাসায় এনেছেন কিজন্য? মাঝরাতে ফাঁকারুমে আপনারা নিশ্চয়ই বন্য প্রজাতি নিয়ে গবেষণা করছিলেন না? আর তার চেয়েও বড় কথা, আমি ওর গায়ে আঘাত করেছিলাম বলে আপনার এতোই কষ্ট লাগল যে আমাকে চড় মারলেন? কিভাবে পারলেন এটা? আমাকে আপনি কিভাবে মারতে পারলেন?”
” ঠিকাছে এবার তুমিও আমার গালে একটা চড় মেরে দাও। শোধবোধ।”
তোহা মুখ ঘুরিয়ে নিল। আমীর বলল,
” শান্ত হয়ে শোনো, রিম্মির কোনো দোষ নেই। আমিই ওকে ডেকেছিলাম এখানে। ওকে আমার প্রয়োজন ছিল। আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে রিসার্চ করছিলাম। মাঝখান থেকে তুমি এসে ওকে অন্যায়ভাবে মারতে শুরু করলে। এটা কি ঠিক? আমি তখন মেজাজ কন্ট্রোল করতে পারিনি। পরে এর জন্য আমার নিজেরই খুব খারাপ লেগেছে। আই এম সরি তোহা।”
” রিম্মিকে আপনার প্রয়োজন মানে? কিসের প্রয়োজন ওকে? কেন প্রয়োজন? আর ওকেই যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আমি এখানে কেন? আমার তো এখানে থাকার কথা না। আপনার তো আমাকে কোনো প্রয়োজন নেই। কখনো আমার কাছে এসেছেন? আমাকে তো স্পর্শও করেন না আপনি। যেন আমি কোনো ছোয়াচে রোগী। অবশ্য আমাকে স্পর্শ করার দরকারই বা কি? মাঝরাতে স্পর্শ করার জন্য তো মানুষের অভাব নেই আপনার।”
” ছি তোহা।”
” এখন ছি? এসব শুনতে এখন খুব লজ্জা লাগছে তাইনা? তাহলে করতে লজ্জা লাগেনি?”
আমীর চোয়াল শক্ত করে উচ্চকণ্ঠে বলল,” তুমি জানো আমরা কি করছিলাম?”
” নিজের চোখেই তো দেখেছি। জানার আর কিছু বাকি নেই।”
” নিজে ভুল দেখেছো, ভুল বুঝেছো, সাথে আবার ওই ছেলেটাকেও ডেকে এনেছো। তোমার নিরেট মাথায় কি কিচ্ছু ঢোকে না? এখন যদি তোমার কারণে ওদের বিয়েটা ভেঙে যায়? একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিলে তুমি। ক্ষমা করতে পারবে নিজেকে?”
” নিজেকে ক্ষমা করার প্রশ্নই আসে না। আমি কিভাবে ওর জীবন নষ্ট করলাম? ও-ই আমার জীবন নষ্ট করেছে।”
” আমি রিম্মিকে ওইসময় এক্সামিন করছিলাম। ওর শরীরের রক্ত থেকে এন্টিবডি নিয়ে একটা বিরল রোগের ভ্যাক্সিন তৈরী করতে চাই আমি। বিশ্বাস না হলে এসো আমার সাথে, সব দেখাবো তোমাকে। ওর এক্স-রে রিপোর্টও আছে৷ আমি শুধু পরীক্ষা করছিলাম এন্টিবডি দেওয়ার জন্য ও প্রস্তুত কিনা। আর তুমি এসব ভাবছো? আমি আর যাই হই, চরিত্রহীন না তোহা। তোমাকে আমি কখনো ধোকা দিতে পারি না।”
” এক্সমিন করছিলেন? তাহলে চোরের মতো লুকিয়ে কেন? মাঝরাতে কেন? আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পরেই কেন?”
” রিম্মি ওর সময়মতো আসে। এখন সেই সময়টা যদি মাঝরাতে তুমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পরেই হয় তাহলে আমার কি করার আছে?”
” বাহ, খুব সুন্দর। একটা মেয়ে প্রত্যেকরাতে এ বাসায় আসছে। যে কারণেই হোক, আমাকে একবারো জানানোর প্রয়োজন মনে হয়নি আপনার?”
” প্রয়োজন মনে হয়েছে। কিন্তু রিম্মি চাইতো না এটা কেউ জানুক। নীলাভ্রর সাথে তো তোমার ভালো সম্পর্ক। তুমি যদি ওকে বলে দিতে? এজন্য ইচ্ছে করেই তোমাকে জানাই নি।”
” কেন? আমি নীল ভাইকে বললে কি সমস্যা হতো?”
” নীলাভ্র হয়তো রিম্মিকে এন্টিবডি দিতে নিষেধ করতো৷ কারণ এতে রিস্ক অনেক। রিম্মির জীবন সংকট হতে পারে। কিন্তু রিম্মি মনে করে, ওর মাধ্যমে যদি লক্ষ-কোটি প্রাণ বাঁচে তাহলে একটু জীবন ঝুঁকি নেওয়াই যায়। ক্ষতি কি? রিম্মি খুব সাহসী মেয়ে। আই এপ্রিসিয়েট হার অ্যাফোর্ড।”
” আপনার কোনো কথা বিশ্বাস করলাম না।”
তোহা একথা বলে উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে পড়ল। আমীর আর এ বিষয়ে তর্ক করেনি। সেও চুপচাপ শুয়ে পড়ে তোহার পাশে।

সকালে উঠে তোহা দেখল ওর পায়ে সেই সিলভার প্লেটের পায়েলটা লাগানো। কিন্তু এটা তো গতকালকেই বাথরুমে পড়ে গিয়েছিল। তাহলে এখন কিভাবে আসলো?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here