শব্দহীন_অনুভূতি পর্ব_৮
#পলি_আনান
মধ্যে রাতের পার্টিতে ব্যস্ত আরাফ, শাকীল,নাফিসা
তাদের মাঝে আজকে লিবানের আসার সুযোগ হয়নি। কেননা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় লিবানের বাবা ধমকে আবার তার রুমে পাঠিয়ে দেয়।
ওয়াইনের বোতলে একটু পর পর চুমুক দিচ্ছে আরাফ।কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে শাকীল আর নাফিসা ডান্স করছে।তাদের দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় আরাফ।ম্যাসেজের টোন বাজতেই মোবাইলের স্কিনের দিকে চোখ যায়।
“প্রভা” মেসেজ করেছে।ইদানীং প্রভার কথা ভাবলেও তার সারা শরীরে কেউ যেন কেউ আগুন লাগিয়ে দেয়।দ্রুত মোবাইলটা বন্ধ করে ঘাড় ঘুরে শাকীলের দিকে তাকায়। কিন্তু একি শাকীল নাফিসা নেই।হঠাৎ আরাফ তার ঘাড়ে টান অনুভব করে।কেউ তার শাটের স্লিভ ধরে টানছে।বিরক্ত হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে শাকীল আর নাফিসাকে দেখেই বিরক্তে মুখ কুচকে নেয়।ঝাকরা দিয়ে শাট ঠিক করে বলে,
– ওই ডাফারের দল কি শুরু করছিস? শাট ছিড়ে যাবে তো।
– ছিড়ে যাক। তুই তলে তলে কি করছিস আরাফ?আর আমাদের জানাচ্ছিস না।এই আমরা বন্ধু?
নাফিসার কথা ভ্রু-যুগল কুচকে নেয় আরাফ।শাটের স্লিভটা ঠিক করতে করতে বলে,
– আমি আবার কি করলাম আজব!কিসব বলছিস তোরা?
– ওই বেটা, আবার মিথ্যা কথা কস কিল্লাইগা।তুই দামড়ার লম্বা বেটারে আগে হাবু ভাবতাম।ভাবতাম আমাদের দলের তুই আমাদের মতোই হাবু কিন্তু না না তুমি তো মিয়া বাবু, সোনা, ময়না পাখীও জুটাই ফেলছোস কপালে।অথচ আমরাই জানলাম না।
শাকীলের কথায় ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বসে রইলো আরাফ।ওয়াইনের বোতলে একটা চুমুক দিয়ে ভাবতে থাকে কি বুঝাতে চাইছে এই লেজ বিহীন বাদর গুলো।তারা কি হৃদিতাকে নিয়ে কিছু সন্দেহ করছে ওহ আল্লাহ।কেস তবে জন্ডিস হয়ে যাবে।
– কি বলছিস তোরা আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। বুঝিয়ে বল প্লিজ।
– ওই নাফু অবুজ খোকাটারে বুঝা।কি কইতাসি আমরা।
নাফিসা আরাফের সামনের চেয়ারে বসে, ভ্রু বাকিয়ে বলে,
– তুই হৃদিতাকে লাইক করিস?
– না নাফিসা এইসব কি কথা বলছিস তোরা। শুধু শুধু বাড়াবাড়ি করছিস।
আরাফের এমন অযৌক্তিক উওর শুনে ক্ষেপে যায় শাকীল তেড়ে এসে আরাফকে কিছু বলতে নিলেই নাফিসা হাত ইশারায় বারন করে।কিন্তু মুখের কথাটা আর লাগামহীন ভাবে রাখতে পারলোনা। নাফিসার পাশে বসে গমগম সুরে বলে,
– আবার মিথ্যা কথা কেন বলস?ওরে জিগা নাফু আজ তাহলে লাইব্রেরিতে বসে হৃদিতার হাতে হাত রাখা,ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া ওইসব কি ছিল।
আরাফ তড়াক করে তাকায় দুজনের দিকে।ওয়াইনের বোতলটা হাত থেকে রেখে আঙুল ইশারা করে বলে,
– তোরা তখন ক্লাসে ছিলি না?
– না ছিলাম না। লিবানকে ক্লাসে বসিয়ে রেখে আমি আর শাকীল প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করবো বলে তোকে দেখতে বেরিয়ে আসি।তারপর যা দেখার দেখে নিয়েছি।যা বোঝার বুঝেও নিয়েছি।
নাফিসার কথা শুনে আরাফ মাথায় হাত দিয়ে আর্তনাদ সুরে বলে,
– ওহ শীট!
নাফিসা আর শাকীলের চোখাচোখি ইশারায় কথা বলে।আরাফ তাদের ইশারা বুঝতে পেরে ধমকের সুরে বলে,
– তোরা দুইজনে প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করতে ক্লাস থেকে বেরিয়েছিস। তাহলে আমার প্রাইভেট টাইমে আড়িপাতা হলো কেন?কমনসেন্স নেই নাকি তোদের?আর নাফিসা শাকীল না হয় বলদ আমি জানি,কিন্তু তুই কেন এমন করলি?
আরাফের কথায় চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে যায় শাকীল, গম্ভীর কন্ঠে আরাফের চোখেচোখ রেখে বলে,
– যা করেছি বেশ করেছি।যদি স্বীকার করতি হৃদিতাকে লাইক করিস তবে রাস্তা ক্লিয়ার করে দিতাম এখন যেহেতু স্বীকার করলি না সেহেতু আমাদের বুঝে নিতে হবে আসলে তোদের দুজনের মাঝে কি চলছে। আর কথা বাড়াতে চাই না এবার সত্যিটা স্বীকার কর বেটা।
আরাফ যা বোঝার বুঝে নিয়েছে এরা আজ তাকে সহযে ছাড়বে না সবটা ইচ্ছা করেই প্লানিং সাজানো তাদের।
– ওকে ঠিক আছে সবটা বলবো তোদের।কিন্তু শর্ত,নোমান ভাই,আর লিবান যেন কিচ্ছু না যানে।
– ওকে আমাদের দুইজন ছাড়া এই বিষয়টি কেউ যানবেনা।
আরাফ একে একে শুরু থেকে শেষ সব কথা নাফিসা আর শাকীলকে জানায়।নাফিসার খুশির যেন কমতি নেই। আরাফের মনে হৃদিতার জন্য ফিলিংস এসেছে এর থেকেও গুড নিউজ আর কি হতে পারে।
– আরে বাহ!আজকের তাজা খবর।’আমাদের আরাফ মশাই অবশেষে ফ্লার্টিং ছেড়ে রিয়েল প্রেমে পড়েছে। কিন্তু তুই হৃদিতাকে বলছিস না কেন?
শাকীলের প্রশ্নে ফিচেল হাসে আরফ।বাম হাতটা ঘাড়ের উপর বুলিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
– হৃদিতা আমায় মোটেও পছন্দ করেনা রে।মেয়েটি তার ক্যারিয়ারের পেছনেই ছুটছে।বাকিটা কি হবে দেখা যাক।
আরাফের আফসোস সুরের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায় দুজনের। কিন্তু নাফিসার হুট করেই অন্য কথা মনে পড়তেই মন খারাপ সুরে বলে,
– বাট দোস্ত তোর লাইফে তো প্রভা আছে, তাহলে,?
সঙ্গে সঙ্গে দমে যায় আরাফ।এই এক ভয় তার জীবনে হৃদিতাকে দূরে সরিয়ে রাখার।
– আমি জানি না কি হবে।তবে নোমান ভাই ইদানীং একটু বেশি প্রভার কথা বলছে আমার সামনে।
আরাফের কথা শেষ না হতেই শাকীল ধমকের সুরে বলে,
– কর মাইয়াগো লগে আরো ফ্লার্টিং কর।ওই মাইয়া এবার উল্টা তোরে মুরগী বানাই ছাড়লো।কবে ছাড়া পাবি তুই এইসব থেকে? আমার তো মনে হয় জিন্দেগীতেও ছাড়া পাইবিনা।বাইদা ওয়ে হৃদিতাকে প্রপোজ করবিনা?
– না,ভুলেও না।
আরাফে প্রত্যুত্তরে চমকে তাকায় নাফিসা। অবাক হয়ে বলে,
-মানে কি তুই প্রেম করবি অথচ হৃদিতাকেই বলবি না!বিষয় টা এমন হয়ে গেলো না”ধরি মাছ, না ছুই পানি!
– যা হবার হবে। আমি হৃদিতাকে বলতে পারবো না আমি তাকে ভালোবাসি। যানিস, ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে আমাদের বড্ড ভয়,অন্য কোন ভয় না হারানোর ভয়।যদি চলে যায়।আমার অনুভূতি গুলোকে একা করে।
-তাই বলে তুই বলবি না তাকে?
– না! আমার অনুভূতি গুলো না হয় শব্দহীন ভাবেই থাক।
আরাফ ওয়াইনের বোতলটা হাতে নিয়ে হাটতে হাটতে দুই বন্ধুর কাছ থেকে আড়াল হয়ে যায় এদিকে শাকীল আর নাফিসা তাকিয়ে আছে একে অপরের মুখের দিকে।
কেটে যায় আরো কয়েকদিন। হৃদিতা আর আরাফের সম্পর্কে এখন বেশ উন্নতি হয়েছে।হৃদিতার বর্তমানে সবচেয়ে কাছের বন্ধু আরাফ।পরিক্ষার বাকি মাত্র বারো দিন।এই কয়েকদিন আরাফ আর হৃদিতা দুজন দুজনকে বেশি সময় দিচ্ছে।একদিকে আরাফ যদি এই সেমিস্টার পাশ করে না আসতে পারে তবে তার বাবার দেওয়া সেই ফ্লাট আর ফিরে পাবেনা।বন্ধুদের নিয়ে হইহুল্লোড় আড্ডাও হবেনা।আরাফ মাথা নিচু করে নিজের পড়া পড়ছে। হৃদিতা কিছুক্ষন কাচুমাচু করে আরাফের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আরাফ একটা কথা বলি?
– হুম বল,
– তুই নোমান ভাইয়ার মতো এইসব কাজে নিজেকে জড়াইস না প্লিজ।তুই ছেলেটা ভালো কিন্তু তোর পাগলামোর কারনে পড়াশোনায় পিছিয়ে গেছিস।তুই চাকরি না পেলেও তোর বাবার যে অফিস তার দায়িত্ব নিয়েই চলতে পারবি তারপরেও নোমান ভাইয়ার মতো নিজেকে উগ্র বানাইস না প্লিজ।
হৃদিতার আকুল কন্ঠে এমন কথায় ভড়কে যায় আরাফ। তবুও নিজেকে ধাতস্ত করে আরাফ বলে,
– হঠাৎ এমন কথা বললি কেন৷ তুই?
– আমি জানিনা, তবে তোর খারাপ লাগলে সরি তবে যা মনে এসেছে বলে দিলাম।
আরাফ সুক্ষ্ণভাবে কিছুক্ষন হৃদিতার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিন্তু হৃদিতার কথার কারনটা খুঁজে পেলো না।তবে এটা নিশ্চিত হৃদিত নোমান ভাইকে মোটেও পছন্দ করে না।
বাড়ি ফিরে হৃদিতা ঘরে ডুকতেই তার মাথায় যেন বাজ পড়ে।তিনজন পুরুষ দুইজন মহিলা তাদের ঘর ঘুরেফিরে দেখছে।হৃদিতা অনেকক্ষন থেকে ভাবছিল এরা কারা হতে পারে, তাকে দেখতে পাত্র আসেনি তো?অবশেষে তার ভাবনাটাই সত্যি হলো সুফিয়া হৃদিতার জন্য পাত্র পক্ষ ঠিক করেছে।সারা বাড়ি খুঁজেও নেহাকে পেলনা হৃদিতা।কিছুক্ষণ পর যানতে পারে সুফিয়া নেহাকে তার ফুফির বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।এরো একটি বিশেষ কারন আছে কেননা হৃদিতার বিয়ের কথা শুনলেই প্রতিবাদ করবে নেহা।হামিদা আর ওয়ালীদ চুপচাপ সুফিয়ার কান্ড দেখছে।
রাগী সুফিয়ার বিরুদ্ধে যাওয়ার সাধ্য তাদের নেই।
পর্দার আড়ালে পাত্রকে দেখেই হৃদিতার সারা শরীরে ঝংকার দিয়ে উঠে।মধ্যে বয়স্ক পাত্র! তার আগের ঘরেও নাকি একটি দুটি মেয়ে আছে।হৃদিতা দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে খুঁজতে থাকে, কিন্তু পুরো রুম তন্ন তন্ন করলেও তার ফোন সে পায় না।আবারো রুম থেকে বেরিয়ে পাত্র পক্ষের রুমের দিলে উঁকি ঝুঁকি মারে তৎক্ষণাৎ নিজের ফোনটা সুফিয়ার হাতে দেখেই বুঝতে বাকি নেই তাকে আজকের পর থেকে এককথায় বন্ধী করে রাখা হবে।পেছনে ঘুরে তার খালামনির দিকে ঠোঁট ফুলিয়ে কাদঁতে নিলে তিনি চুল হাত বুলিয়ে বলেন,
– অনেক চেষ্টা করেছি আটকানোর কিন্তু তোর দাদি মানলেন না।শেষে কি না এই বাড়ি থেকে আমাকেও বের করে দেওয়ার হুমকি দিলেন।তোর খালুকে ত্যাজ্যপুত্র করার কথা বললেন তুই তো বড় হয়েছিস মা আশা করি সব বুঝতে পারছিস।
হামিদার কথা শুনো থমকে যায় সে। তার জন্য হামিদার সাজানো সংসারটা ভেঙ্গে যাবে কিছুতেই মানতে পারবেনা সে। থাক না কিছু মানু্ষের পূর্ণতার জন্য আমার জীবনটা অপূর্ণ রয়ে যাক।
গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।
কেটে যায় চারদিন। বিয়ের বাকি আর মাত্র দুইদিন।তাই এতদিন রাগের মাথায় শপিং এ না গেলেও হৃদিতাকে তো উপহার হিসেবে কিছু দিতেই হবে তাই কাউকে কিছু না জানিয়ে শপিং করতে বের হয়।গোল্ড প্যালেসে ডুকেই আরাফকে দেখরে পাবে সপ্নেও ভাবেনি নেহা।আরাফ আর তার জেঠিমা গোল্ডের হার দেখছে তখনি আরাফের শাট টেনে ধরে নেহা।বিরক্তে মুখ ভঙ্গিতে পেছনে তাকালে নেহাকে দেখেই মুখে উচ্ছ্বাসিত ভাব ফুটে উঠে।
– আরে দোস্ত তুই এখানে?
– একটু কাজ ছিল তাই এলাম
তুই বিয়ে শাদী করছিস নাকি?কার জন্য গয়না চুজ করতে এসেছিস?
– আরে না। জেঠিমার বোনের মেয়ের জন্মদিন তাকেই উপহার দেবে।তা তোর কি কাজ?
– আমার আর কাজ!হৃদিতার বিয়ে তাকে একটু কিছু উপহার দেওয়াতো প্রয়োজন তাই চলে এলাম।
হৃদিতার বিয়ে!কথাটি নেহা ঠিক যতটাই সহজ ভঙ্গিতে বললো আরাফের কাছে কথাটি ঠিক ততটাই বিদঘুটে, অসহ্য, শ্রবণ মনে হলো।পর পর কয়েকটি ঠোক গিলে নিজেকে ধাতস্ত করে বলে,
-ম..মানে?
– আরে হৃদিতাকে তুই তো চিনিস দুইদিন পরেই তার বিয়ে।
– মানে কি চারদিন পর আমাদের পরিক্ষা আর এত ব্রিলিয়ান্ট মেয়েটা বিয়ে করে নেবে?
আরাফের কথার উলটো পিঠে নেহা শুরু থেকে শেষ সুফিয়ার কান্ডের কথা আরাফকে জানায়।আরাফ ভাবতে থাকে এজন্যই কি গত দুইদিন হৃদিতা গম্ভীর ছিল?কিন্তু এতটা কাছে থেকেও আরাফ বুঝলো না।নেহাকে আর তার জেঠিমানে বিদায় দিয়ে সে দ্রুত সে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়।
শাকীল আর নাফিসা একসাথে বসে নিজেদের পড়া পড়ছে তখনি ফোন দেয় আরাফ। দ্রুত ফোন রিসিভ করে হাসিহাসি মুখ করে বলে,
– কিরে প্রেমিক পুরুষ, আমার কাছে আবার প্রয়োজন ?
– সব শেষ রে শাকীল, সব শেষ!
– শেষ মানে?কি বলছিস তুই?
আরাফ একে একে নেহার বলা কথা গুলো শাকিল কে বলতে থাকে। ফোনের স্পিকার অন করায় পাশ থেকে নাফিসা চুপচাপ সব শুনছে।
আরাফের গলা প্রচন্ড পরিমানে কাপঁছে মুখ দিয়ে কথা বের হতে না চাইলেও জোর করে কথা বের করছে।
– আরে আরাফ চিন্তা করিস না। প্রয়োজনে আমরা তোর জন্য হৃদিতাকে তুলে আনবো। এত চাপ নিস না তুই শক্ত হ।
– নারে এইসব করে কোন লাভ নেই। যাকে পাওয়া হবে না সে না পাওয়াই থাক।শুধু শুধু মেয়েটার কলংক বাড়বে।
– কিন্তু তুই নিজেকে সামলাতে পারবি?
শাকীলের প্রশ্ন শুনে দ্রুত ফোন কেটে দেয় আরাফ।কিচ্ছু বলার নেই তার এই মূহুর্তে। সব যেন ধৌয়াশা লাগছে,পাওয়া না পাওয়ার দ্বন্দে জড়িয়ে যাচ্ছে বার বার।
রাত সাতটার পর খাটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে হৃদিতা। অন্য রুমে নেহা আর তার মা কি নিয়ে আলোচনা করছে।সুফিয়া ঘুমিয়ে আছে মাগরিবের পর থেকে।
হঠাৎ হৃদিতার ফোন ভাইব্রেট হতে থাকে।ফোন হাতে তুলে আরাফের নাম্বার দেখেই একচিলতে হাসে।দরজা খুলে বাইরে গিয়ে পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে ফোন রিসিভ করে।দুইচার বার হ্যালো হ্যালো বলে কিন্তু তবুও ফোনের বিপরীত পাশ থেকে কোন কথার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। নিকষ কালো রাতের আকাশে জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকা তারার দিকে তাকিয়ে দুচোখে অশ্রু কণা ছেড়ে দেয় সে।ভাবতে থাকে জীবনের কথা গুলো। রাতের আকাশের এমন কালোর মাঝে তার জীবনটাও কালো। কিন্তু তার জীবনে কোন তারা নেই যে অন্ধকার আকাশের মতো একটুকরো আলো নিয়ে তার জীবনে আসবে।
ঠোঁট চেপে নিজের কান্না জমিয়ে রাখতেই হৃদিতা উপলব্ধি করে মোবাইলের বিপরীত পাশের লোকটাও কাদঁছে।ফ্যাচ ফ্যাচ নিশ্বাস নেওয়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু কেন কাদঁছে ?নির্জন রাতের পরিবেশে কয়েকটি ঝিঝিপোকার ডাক তার সাথে একম গুমুট কান্নার আওয়াজ পরিবেশটা বড্ড বিষাদিত লাগছে হৃদিতার কছে।
রাতেএ একা নিস্তব্দ জায়গায় মধ্যে রাতে গুমড়ে কাচ্ছে আরাফ পার্টি করতে এসেই হুট করেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে যে।দূর থেকে তাকে তীর্যক দৃষ্টিতে দেখছে নাফিসা আর শাকীল।
– আমরা কি আরাফের জন্য কিছুই করতে পারবো না নাফু?
– মনে হয় না পারবো।আগে চল কান্না থামাই।
নাফিসা আর শাকীল এগিয়ে যায় আরাফের দিকে।মাথা নুইয়ে গুমড়ে কাঁদছে ছেলেটি।
-আরে দোস্ত কাদঁছিস কেন? প্লিজ নিজেকে সামলা।
– কাল হৃদিতার বিয়ে নাফু, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।কি করবো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।কালকের চিরতরে হারিয়ে ফেলবো আমি হৃদিতার অধিকার।
আরাফ আবার মাথা নিচু করে নেয় তখনি শাকীল গমগম সুরে বলে,
– অধিকার হারাবি মানে? তুই না ওকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবিস। বেস্ট ফ্রেন্ড মানেই তো অর্ধেক বউ।তাহলে ওই ব্যাটার আগে তোর হৃদিতার প্রতি অধিকার আছে।
এমন সিরিয়াস মুহূর্তে শাকীলে এহেন যুক্তিহীন কথায় চোখ পাকিয়ে তাকায় নাফিসা।আরাফ চোখের পানি মুছে ঠোঁট বাকিয়ে বলে,
– নাফিসাও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাহলে নাফিসা কি আমার অর্ধেক বউ।কইরে নাফিসা আমার অর্ধেক অর্ধাঙ্গিনী আয় আমার কোলে আয়।
আরাফের এমন কথা শুনে ঠোঁট টিপে হাসে নাফিসা কিন্তু হুট করেই শাকীল নাফিসাকে টেনে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
– খবরদার এটা আমার হক।তুই হাত বাড়াইস না।একদিকে খালতো বোন অন্য দিকে বেস্ট ফ্রেন্ড।খালতো বোন মানেই খালতো ভাইগো হক, আর বেস্ট ফ্রেন্ড মানেও হক তাহলে বুঝতেই পারছিস দুইদিক থেকে অর্ধেক অর্ধেক হয়ে,নাফিসা সম্পূর্ন আমার বউ লাগে। তুই বরং ভাবী ডাকিস সমস্যা নাই।
শাকীলের এমন যুক্তি শুনে এবার শব্দ করেই আরাফ হেসে দেয়।
– তোরা সুখে থাক দোস্ত। অন্তত পূর্নতা যেন পায় তোদের সম্পর্কে।
আরাফ উঠে যায়।পকেট থেকে ফোন নিয়ে হৃদিতার ছবি দেখতে থাকে।এই মেয়েটিকে হয়তো তার আর পাওয়া হবেনা।অন্য হাতের সিগারেটেটা আরেকটা টান দিয়ে মুক্ত করে দেয় ধৌয়া গুলো।যেদিন থেকে শুনেছে হৃদিতার বিয়ে সেদিন থেকে কত’শ প্যাকেট সিগারেট খাওয়া আরাফের শেষ হয়েছে যানা নেই তার।সিগারেটে টান দিয়ে হৃদিতার ছবির দিকে তাকায় আরাফ।চোখ বন্ধ করলেই মনে পড়ে সেদিনে লাইব্রেরির কথা।পাচঁ আঙ্গুলে হাতে হাত গুজে আরাফ হৃদিতাকে অনুভহ করেছিল। সেই ছোঁয়া যেন এখনো তার হাতে লেগে আছে।সেদিন কফিশপের কান্নার লেপ্টে যাওয়া কাজল মাখা চোখ দুটো দেখার আবার তৃষ্ণা জাগে আরাফের মনে।হয়তো আর কখনোই দেখতে পাবে না সে।প্রেমের অনুভূতি আদান প্রদান কফিশপে বসেও আর হয়তো আড্ডা দেওয়া হবে না।
হাতে থাকা সিগারেটটা শেষ হলেই আরেকটা সিগারেট হাতে তুলে নেয় আরাফ।আগুন জ্বালিয়ে মোবাইলের স্কিনে হৃদিতার ছবি দেখতে দেখতে বলে,
– তোরা মেয়েরা একপ্রকার নেশা!তোরা আশে পাশে থাকলেও যেন নেশা নিয়ে ঘুরিস।সহজেই কাবু করতে সক্ষম তোরা।আবার চলে গেলেও হাতে অন্যরকম নেশা ধরিয়ে দিয়ে চলে যাস।কে বলেছে তোরা মায়াবতী? তোদের নাম নেশাবতী রাখাটাই উচিত ছিল।
#চলবে….।