#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম
#যারিন_তাসনিম
#পর্বঃ১
-রিক্সাটা ঘুরাও তো মামা!
-কি হলো?
-চুপ!
ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেলো রাহা।
রাহার বাড়ির সামনে আসতেই….
-নামো..
অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো সে। নরম কণ্ঠে বললো,
-আমরা যাবো না রমনা পার্কে?
-নামতে বলছি, নামো।
কথা না বাড়িয়ে রাহা নেমে গেল। সে জানে, কথা তাকে শুনতেই হবে, তাই কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।
-এখন বাসায় যাবা। ফ্রেশ হবা। এরপর রান্নাঘরে গিয়ে এঁটো বাসনগুলো ধুবা।
কেনো যে তার মায়ের অসুস্থতার কথা বলতে গেল, এই আফসোস এখন সে করছে। সম্পর্কের ১ বছর হওয়ার উপলক্ষে বহু কষ্টে মানুষটাকে ঘুরতে যাওয়ার জন্য রাজি করিয়েছিল। যখনি বললো, তার মা অসুস্থ, মানুষটা আর ঘুরতে নিয়ে গেল না। বাড়ি গিয়ে এখন মায়ের সেবা করতে হবে।
-যাও!
ধমকের সুরে বললো। রাহা-ও দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে গেল।
———————————————————————————————————
“ম্যাডাম, ইমারজেন্সি”
নার্সের কণ্ঠে কল্পনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে এলো। দ্রুত টেবিলের উপর থেকে মাথা উঠিয়ে মাস্ক পড়ে নিল। চোখের কোণে জমে থাকা একবিন্দু জল মুছে হ্যান্ড গ্লাভস পড়তে পড়তে আইসিইউর দিকে গেল।
পৃথিবীতে আরো একজন আসলো। সুস্থভাবে নতুন অতিথিকে নিয়ে আসলো রাহা। প্রকৃতি-ও যেন স্বাগতম জানাচ্ছে। কিছুক্ষন আগেও কালো মেঘে আকাশ ঢাকা ছিল। আর সেই মেঘগুলো আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। সূর্য উঁকি দিচ্ছে।
মাথাটা বড্ড ধরেছে। রাহা এক কাপ চা আনতে পাঠালো।
৫ মিনিটের মধ্যেই চা চলে এলো।
মোবাইলের গ্যালারিতে ঢুকে পুরনো ছবিগুলো দেখা শুরু করলো।
স্লাইড করে করে প্রত্যেকটা ছবি দেখলো।
আবারও অজান্তে চোখভর্তি পানি চলে আসলো।
-চা-টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, খেয়ে নে।
রাহার অপোজিটে থাকা চেয়ারটা টেনে বসার মুহূর্তে বললো চন্দ্রিমা।
রাহা তার পরনে থাকা এফ্রোনের পকেটে ফোন ঢুকিয়ে ফেললো। এরপর চায়ের কাপে চুমুক দিল।
চন্দ্রিমার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞেস করলো,
-তুমি এখানে?
-মা-র বাড়ি যাচ্ছিলাম, ভাবলাম তোর সাথে দেখা করে যাই।
রাহা চা খেতে খেতেই জিজ্ঞেস করলো,
-চা আনাই?
-প্রয়োজন নেই।
রাহা আর কোনো জবাব দিল না।
চন্দ্রিমা নিজ থেকে বললো,
-আর কতদিন?
-চন্দ্রিমা আপু, প্লিজ। তুমিও এখন শুরু করো না। ফুপি কেমন আছে?
-আল্লাহ যেমন রেখেছে। কিন্তু কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবি না।
রাহা দাঁড়িয়ে গেল। সামান্য ভ্রু কুঞ্চিত করে বললো,
-চলো, একসাথে যাই। তোমাকে বাড়ি নামিয়ে দিব।
-আর কতদিন, বল?
রাহা না শুনার ভান করে বললো,
-চলো, ভালো লাগছে না।
আজ-ও মেয়েটার মুখ থেকে কথা বের করতে পারলো না চন্দ্রিমা। চঞ্চল স্বভাবের মেয়েটা কেমন যেন হয়ে গেছে। কেন হয়েছে?
অবশ্য এর উত্তর চন্দ্রিমার কাছে আছে।
রাহা চন্দ্রিমাকে তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়ি পৌঁছল।
বেল দিতে না দিতেই রাব্বি এসে খুললো।
এটা নিত্যদিনের ঘটনা। বোন এসে উপস্থিত হতে না হতেই ভাইকে আর কে পায়!
রাহা বাড়িতে এসেই প্রথমে নিজের রুমে চলে যায়, আর পিছনে রাব্বি-ও যায়।
রাব্বি এবার দশম শ্রেণিতে পড়ে। রাহাদের ফ্যামিলিতে প্রত্যেকটা মানুষই ডাক্তার, না হয় ইঞ্জিনিয়ার অথবা ব্যাংকার।রাহার মা শিউলি আমিন একজন ব্যাংকার। প্রত্যেকেই ভালো পজিশনে আছে। আর যদি কেউ ভালো পজিশনে যেতে না পারে, তাহলে তাদের ফ্যামিলির কেউই তাকে চিনবে না। তাই সবাই নিজ উদ্যোগে ভালোভাবে পড়াশোনা করে। তার জন্য রাব্বিও পড়াশোনার ব্যাপারে সিরিয়াস। তার বাবা ড. নজরুল আমিন তাকে বলেই দিয়েছেন যে, তাকে ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে। নাহলে এই ফ্যামিলিতে তার কোনো মূল্য থাকবে না।
রাহা ইংরেজিতে খুব ভালো, তাই রাব্বি প্রতিদিন ইংরেজির কোনো না কোনো রুলস নিয়ে উপস্থিত হবেই।
রাব্বি খাটে বসে কলম মুখে দিয়ে কামড়াচ্ছিল।
রাহা ওয়াশরুম থেকে এসেই রাব্বির হাতে একটা খাতা দেখতে পেল।
নতুন কিছু নয়! তাই সে স্বাভাবিকভাবে বললো,
“বলেছিলাম না, কলম না কামড়াতে। জানিস কত ধরনের জীবাণু থাকে? যা আমরা খালি চোখে….”
কথা আটকিয়ে রাব্বি বললো,
“আচ্ছা আপু, সরি। এবার আমাকে এটা বুঝিয়ে দাও”
রাহা খাতার দিকে তাকিয়ে বললো, “আজও সেনটেন্স কানেকটর বুঝাতে হবে? কাল না বুঝিয়ে দিলাম?”
রাব্বি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,
“আসলে আপু, আমি তো বুঝেছিলাম। কিন্তু গাইড থেকে ট্রাই করতে গিয়ে পারছিলাম না, তাই একটু আবার বুঝিয়ে দাও।”
রাহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে খাটে বসে কলম রাব্বির হাত থেকে টেনে নিয়ে বুঝালো।
রাব্বি মুখে হাসির রেখা টেনে বললো, “আজ ভালোভাবে বুঝেছি। ”
রাহা চুলের থেকে গামছাটা খুলতে খুলতে বললো, “যা তাহলে।”
রাব্বি দরজার কাছে যেতেই থেমে গেল। আবার ফিরে আসলো।
রাহা চুল মুছা বন্ধ করে ওর দিকে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকালো।
রাব্বি কাচুমাচু হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আপু একটা প্রশ্ন করি?”
রাহা হ্যাঁ-বোধক উত্তরে মাথা নাড়ালো।
রাব্বি নিচু কণ্ঠে বললো, “আপু, ওইযে আমি যখন ছোট ছিলাম, তুমি যে একটা ভাইয়ার সাথে লুকিয়ে ভিডিও ক..”
চলবে,,,