বাঁধন ছেঁড়া প্রেম পর্বঃ৭

0
842

#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম
#পর্ব:০৭
#যারিন_তাসনিম

নিয়াজ সোফায় বসে নিরল আক্তারের মন জয়ের উদ্দেশ্যে বলে,
“জানো, আন্টি। আজ ভাবি নিয়াজকে দেখে লজ্জায় নুয়ে যাচ্ছিলো। বোধহয়, খুব লাজুক হবে। আর একদম শান্তশিষ্ট।”
নিরল আক্তারের মেজাজ আরো বিগড়ে গেল, নিয়াজের মুখে ‘ভাবি’ ডাক শুনে। মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রেখে বলল,
“তুই খেয়েছিস, নিয়াজ?”
উদ্দেশ্যে সফল হতে না পেরে নিয়াজের মুখ মলিন হয়ে গেল। বলল,
“আন্টি, দুপুরে খেয়েছিলাম।”
“কি খেয়েছিস?”
“আন্টি, আমি গার্লিক চিকেন উইংস খেয়েছিলাম। তাশরিক কি খেয়েছে, খেয়াল করি নি।”
নিরল আক্তার চোখ বড় করে তাশরিকের দিকে তাকাতেই তাশরিক নিজের রুমে চলে গেল। নিয়াজ দাঁড়িয়ে বলল,
“আন্টি, আমি তাশরিকের রুমে যাচ্ছি।”
নিরল আক্তার হ্যাঁ-বোধক উত্তরে মাথা নাড়ালেন। নিয়াজ দ্রুত পায়ে তাশরিকের রুমে চলে গেল।
তাশরিকের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেখলো, তাশরিক রুমে নেই। ওয়াশরুমে গিয়েছে। খাটে বসে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। নিরল আক্তারকে খুব ভয় পায় নিয়াজ। মন ভালো থাকলেও তিনি সবসময় গম্ভীর থাকেন। তাহলে, মন ভালো না থাকলে যে কেমন থাকে, তা ভাবতেই গা শিরশির করে নিয়াজের। ভাগ্যিস! তার মা এমন নয়। তাহলে সে থাকতেই পারতো না। সে নিজেই গম্ভীর, তার উপর তার মা-ও গম্ভীর থাকলে তাকে কোনোদিন বুঝতোই না। জীবন বেদনাদায়ক হত। টেবিলে কোনো কিছু রাখার শব্দে সে বাস্তবে ফিরে আসলো। তাশরিক বেরিয়েছে। অথচ, সে খেয়ালই করে নি। টেবিলের উপর নিজের ঘড়িটা রেখে তাশরিক বলল,
“দেখেছিস, আম্মুর মুখটা? কোনোভাবেই মানতে চাচ্ছে না সিদ্ধীকে। আমি কি করবো, বুঝে উঠতে পারছি না।”
নিয়াজ খাটে গা এলিয়ে বলল,
“বাদ দে। কোনো না কোনো ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”
তাশরিক খাট থেকে কিছুটা দূরে থাকা সোফায় বসে বলল,
“একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।”
নিয়াজ মুখ উচুঁ করে তাশরিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি?”
“দাদু ফোন দিয়েছিল সকালে। দাদু অনেক অসুস্থ। বলছে, একবার দেখা করতে যেতে। আমার বিয়েতেও আসবে না। আমি কয়েকদিনের জন্য খুলনা যাবো দেখা করতে।”
নিয়াজ মাথা রেখে বলল,
“ওহ, এই কথা। ভালোই তো, দাদু-দাদীর সাথে দেখা করে আসিস।”
“শুধু এই কথা না।”
নিয়াজ আবার মাথা উঠিয়ে বলল,
“আর কি?”
তাশরিক দাঁত বের করে হেসে বলল,
“তুইও যাবি আমার সাথে। সিদ্ধীও যাবে। দাদু ওকে দেখতে চেয়েছে।”
নিয়াজ লাফ দিয়ে উঠে বলল,
“ইমপসিবল। আমি যাচ্ছি না।”
তাশরিক করূন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“প্লিজ, চল। তুই না গেলে আমার খুব বোরিং লাগবে। আর তুই গেলে আমরা মজা করতে পারবো।”
“আন্টি জানে?”
“জানে। আম্মুও বলেছে, দেখা করে আসতে।”

নিয়াজকে চুপ থাকতে দেখে তাশরিক বুঝে গেল, নিয়াজ রাজি হয়েছে।

“ভাইয়া? দরজাটা খুলো।”
আওয়াজ পেয়ে তাশরিক দরজা খুলে বলল,
“কি সমস্যা?”
অহনা তাশরিককে দরজার থেকে ঠেলে সরিয়ে ভিতরে ঢুকলো। লাজুক দৃষ্টিতে নিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“নিয়াজ। খেতে ডেকেছে, আম্মু।”
নিয়াজ অহনার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বলল,
“আচ্ছা, ছোট বোন। যাও, তুমি। আমরা আসছি।”
তাশরিক অহনার সামনে এসে জোর গলায় বলল,
“কীসের নিয়াজ? কে নিয়াজ? নিয়াজ তোর কত বড়, খবর আছে? ভাইয়া ডাক।”
নিয়াজ উঠে এসে তাশরিকের কাঁধে হাত রাখে। বলে,
“থাক, ছোট মানুষ। শুনো ছোট বোন, আমি তোমার বড়। তুমি আমায় ভাইয়া ডেকো, কেমন?”
অহনা চোখগুলো বড় করে মেজাজ দেখিয়ে বলে,
“কে ছোট বোন? আমি তোমার ছোট বোন কবে হইলাম? আমাকে একদম ছোট বোন ডাকবে না।”
তাশরিক কিছু বলতে যাবে, সেই মুহূর্তে নিয়াজ কথা কেড়ে নিয়ে বলে,
“আচ্ছা, যাও তুমি। আমরা আসছি।”
অহনা একটু গিয়ে পিছন ফিরে নিয়াজকে দেখে। এরপর চলে যায়। আওয়াজ না করে হেসে নিয়াজ বলে,
“তুই রাগ করছিস কেন? ও বুঝে নাই, তাই ‘নিয়াজ’ ডেকেছে।”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাশরিক বলল,
“ওর এই ‘নিয়াজ’ ডাকার মধ্যে অন্য কিছু ছিল। চার বছর আগে যখন তুই আর আমি একসাথে আমেরিকা গিয়েছিলাম, তখন ও খুব কেঁদেছিল। আমার নিজেরই খুব খারাপ লাগছিলো যে, ও আমার জন্য কান্না করছে। পরে বুঝলাম, আমার জন্য নয়, তোর জন্য কেঁদেছিল। তাজরিন যখন ওকে স্বান্তনা দিচ্ছিল, ‘কাঁদিস না, ছোটু ভাই ৩-৪ বছর পরই চলে আসবে।’
তখন ও কান্না থামিয়ে তাজরিনের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, ”

” ‘ওই বদমাশের জন্য কাঁদছি না, নিয়াজের জন্য কাঁদছি। আচ্ছা আপি, নিয়াজ যদি আমেরিকা থেকে বউ নিয়ে আসে, তবে আমার কি হবে?’ ”

মেয়েলি কণ্ঠ শুনে নিয়াজ আর তাশরিক দুজনে একসাথে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে, তাজরিন দাঁড়িয়ে আছে। তাশরিক দৌঁড়ে গিয়ে তাজরিনকে জড়িয়ে ধরলো। বলল,
“আপু, তুই কখন এসেছিস?”
তাজরিন নিজের হাত থেকে ব্যাগ ফ্লোরে রেখে তাশরিককে জড়িয়ে বলল,
“এইমাত্র ছোটু ভাই।”
নিয়াজ এগিয়ে এসে সালাম দিল৷ বলল,
“আপু কেমন আছেন?”
তাশরিক তাজরিনকে ছেড়ে শুধু একহাতে জড়িয়ে রাখলো। তাজরিন বলল,
“এইতো নিয়াজ। তোমার কি খবর?”
নিয়াজ কিছু বলার আগেই তাশরিক বলল,
“আমার মত একটা ফ্রেন্ড থাকলে খারাপ থাকা যায় নাকি।”
তাজরিন মৃদু হেসে তাশরিকের মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
“মা নাকি তোদের অনেকক্ষণ হয়েছে খেতে ডেকেছে। যা।”

তাশরিক তাজরিনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আপু, ভাইয়া আসে নি?”
“না, তোর ভাইয়ার কাজ আছে। তাই আসে নি।”
তাশরিক মন খারাপ করে রইলো। তাজরিন সেদিকে নজর না দিয়ে নিয়াজের কাছে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“তোমাকে যে আমার ছোট বোন খুব পছন্দ করে, জানো?”
নিয়াজ কি বলবে, বুঝে উঠতে পারলো না। মুহূর্তেই তাশরিকের মন খারাপ চলে গেল। মেজাজ বিগড়ে গেল। তাজরিনের কাছে এসে উঁচু গলায় বলল,
“পছন্দ করে তো কি হয়েছে? অতটুকু মেয়ে পছন্দ, অপছন্দের কি বুঝে?”
তাজরিনও রেগে গিয়ে বলল,
“চার বছর ধরে অহনা নিয়াজকে পছন্দ করে। ও ইন্টারে পড়ে। এসব বুঝার জ্ঞান ওর আছে। এই যুগের ছেলেমেয়েরা তাড়াতাড়িই ম্যাচিউরড হয়।”
“আচ্ছা মানলাম, ও পছন্দ করে। তাহলে কি করবে? ওর সাথে নিয়াজের বিয়ে দেবে? ওদের বয়সের ডিফারেন্স কত, জানো?”
তাজরিন চুপ করে রইলো। পরিস্থিতি সামলাতে নিয়াজ তাশরিকের হাত ধরে বলল,
“চল, আন্টি সেই কখন খেতে ডেকেছে।”
বলেই টেনে নিয়ে গেল।
তাশরিক আর নিয়াজের বাসার দূরত্ব খুব বেশি নয়। তাই নিয়াজ রাত করেই বাড়ি ফেরে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here