#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম:
পর্ব:২০
#যারিন_তাসনিম
অহনা নিয়াজের সামনে আসা সত্ত্বেও নিয়াজ ওদিকেই অপলকভাবে তাকিয়ে আছে। অহনা ভ্রুকুটি করে পিছে তাকালো।
রাহা শাড়ি সামলাতে সামলাতে আসছে। মৃদু হাওয়ায় ওর খোলা চুলগুলো পিছনে গিয়ে উড়ছে। শাড়ি সামলানোর কারণে হাতের কালো চুড়িগুলো একটা একটার সাথে বারি খাচ্ছে। চুলগুলো পিছনে যাওয়ায় কালো রঙের কানের দুলগুলোও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। নিয়াজ দাঁড়িয়ে গেলো। অহনা রাহাকে দেখে নিয়াজের দিকে তাকালো। রাহা নিয়াজকে একবার দেখে সিদ্ধীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। অহনা নিয়াজের সামনে তুড়ি মারলো। নিয়াজ সংবিত ফিরে পেলো। অহনা কটমট করে তাকিয়ে বলল,
“ওদিকে কী, নিয়াজ? দেখো, আমি লাল রঙের গাউন পরেছি, আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?”
নিয়াজ অন্যদিকে ফিরে বলল,
“ভালো।”
অহনা বিরক্ত হলো। নিয়াজ আবার রাহার দিকে তাকালো। সাদা রঙটা যে পবিত্র, তাই ওর মতো পবিত্র মেয়েকে সাদা রঙটা আরো পবিত্র করে তুলেছে। নিয়াজের চোখ ফেরাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। রাহা না তাকালেও বুঝতে পারছে, নিয়াজ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তাই লজ্জায় চোখ তুললো না।
তাশরিক সিদ্ধীর হাত টেনে একপাশে নিয়ে গেল। সিদ্ধী হাত ছেড়ে বলল,
“এখানে এনেছো কেন?”
মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে তাশরিক বলল,
“একটা গল্প বলি?”
সিদ্ধী ওকে একবার পরখ করে বলল,
“ছোট হলে বলো।”
“একটা দেশে একটা ছোট রাজ্য ছিলো৷ আর সেই ছোট রাজ্যের একপাশে একটা মিষ্টি পরী থাকতো। রাজকুমার অন্য দেশে থাকায় সেই পরীর খোঁজ পায় নি। দেশে ফিরার পর সেই পরীকে সৌভাগ্যবশত একটা জায়গায় দেখে। ব্যস! রাজকুমার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, এই পরী শুধু তার হবে। যেই ভাবা, সেই কাজ৷ পরীর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সব ঠিকঠাক চলে। বিয়ের আগে একদিন মিষ্টি পরীটা মিষ্টি রঙের শাড়ি পরে রাজকুমারের মন আরো বেশি কেড়ে নেয়। সেই বারাবারি রকমের সৌন্দর্য রাজকুমারের চোখের সামনে আগুন ধরিয়ে দেয়। চোখ ঝলসে উঠে।”
সিদ্ধী লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলল,
“ফ্লার্ট করছো?”
তাশরিক হেসে জবাব দিল,
“যদিও ফ্লার্ট করছি না, কিন্তু করলেও দোষ কোথায়? তুমি আমার বউ।”
সিদ্ধী জবাব দেওয়ার আগেই অহনা পিছন থেকে বলল,
“এখনো বউ হয় নি, ভাইয়া। সো, এসব ফ্লার্ট করা বন্ধ করো। আমার নিয়াজ একা একা কাজ করছে।”
“আমার নিয়াজ” বলায় সিদ্ধীর মেজাজ খারাপ হলো। কিন্তু কিছু বলল না। অহনা নিয়াজের কাছে গেল। তাশরিক সিদ্ধীকে ইশারা দিয়ে যেতে নিলে সিদ্ধী পিছন থেকে তাশরিকের ব্লেজার টেনে ধরে বলল,
“ঠিক যেভাবে যেভাবে নাটক করতে বলেছিলে, সেভাবেই করেছি। আর নাটকের জন্যই আমার রাহা বাবু শাড়ি পরতে চেয়েছে।”
তাশরিক সিদ্ধীর দিকে তাকিয়ে বলল,
“হুম, আর দেখেছো, নিয়াজ কেমন বেহায়ার মতো তাকিয়ে ছিলো। আমিও নাটক করে মিথ্যা বলেছি নিয়াজকে। তাই নিয়াজ রাহাকে শাড়ি পরতে বলেছে দেখেই রাজি হয়েছে।”
সিদ্ধী তাড়া দিয়ে বলল,
“হয়েছে, চলো এবার।”
বার-বি-কিউ করা শেষ হওয়ার পর নিয়াজ প্যাকেট থেকে নানরুটি বের করে প্লেটে রাখতে থাকে। অহনা নিয়াজকে সাহায্য করা শুরু করে। রাহা তীক্ষ্ণচোখে তাকিয়ে আছে।
অহনা বোধহয় সত্যিই নিয়াজকে ভালোবাসে। নিয়াজও হয়তো বাসে। তাহলে তখন কেন মিথ্যা বলল যে, আবেগের বয়সটাতে রাহাই প্রথম এসেছিলো নিয়াজের জীবনে আর এখনো আছে।
সিদ্ধী রাহাকে ঝাঁকাতেই রাহা চমকে উঠলো। সামনে নিয়াজ পলকহীন দৃষ্টিতে হাতে প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সিদ্ধী নিজের বাহু দ্বারা রাহার বাহুতে ধাক্কা মেরে ফিসফিস করে বলল,
“তোর জানের প্রাণ সেই কখন প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, নিচ্ছিস না কেন?”
রাহা দ্রুত প্লেটটা নিয়াজের হাত থেকে নিল। নিয়াজ ওই অবস্থাতেই তাকিয়ে রইলো। সিদ্ধী দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
“এভাবে সবার সামনে তাকিয়ে না থেকে আমার বেস্টিকে বিয়ে করে নিজের সামনে বসিয়ে রাখেন।”
নিয়াজ আবার গিয়ে আরেক প্লেট এনে সিদ্ধীকে দিল।
গোল করে সবাই মোড়া নিয়ে বসেছে। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই তাশরিক নিয়াজকে নিচতলায় তাশরিকের রুমে ডাকলো। তখন রাহা, সিদ্ধী আর অহনা গল্প করছিলো। তাশরিক নিয়াজকে একটা প্যাকেট দিলো। নিয়াজ অবাক ভঙ্গিতে বলল,
“কি এটা?”
তাশরিক আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“খুলে দেখ।”
নিয়াজ খুলতেই চমকে উঠলো। প্রায় চল্লিশ/পঞ্চাশটা গোলাপ। তাশরিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এগুলো কোথায় পেয়েছিস? আমাকে কেন দিয়েছিস?”
তাশরিক ফিসফিসিয়ে বলল,
“রাহাকে প্রপোজ করার জন্য।”
কিছুটা জোরেই নিয়াজ বলল,
“হোয়াট?”
তাশরিক ভীত কণ্ঠে বলল,
“দোস্ত, রাগ করিস না। তুই আর কতদিন এভাবে কষ্ট পাবি বল? আর রাহাকেও কতদিন কষ্ট দিবি? আজকে এই সুবর্ণ সুযোগটা মিস করিস না। দেখ, আজকে সবার সামনে প্রপোজ করলে অহনাও বুঝবে, তুই অন্য কাউকে ভালোবাসিস। তোর পিছু ছাড়বে।”
নিয়াজ দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলল,
“ইম্পসিবল। ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”
তাশরিক নিয়াজের পিঠে চাপড় মেরে বলল,
“ঠিক হয়েছে, বিয়ে হয় নি। সময় থাকতে কাজটা করে ফেল। নাহলে চারজনের জীবন একসাথে নষ্ট হবে। তোর, রাহার, অহনা আর রাহা যাকে বিয়ে করবে তার।”
নিয়াজ খাটে বসে মাথায় হাত রাখলো। তাশরিক দাঁড়ানো অবস্থাতে ভাবলো, আর কি বলা যায়। যেটা বললে নিয়াজ রাজি হবে। ভাবতে না ভাবতেই আরেকটা বুদ্ধি তাশরিকের মাথায় উঁকি দিল। তাশরিক স্থিরভাবে বলল,
“জাস্ট ইমাজিন! সাদা শাড়িতে লাল রঙের গোলাপ হাতে নিয়ে রাহা হাসছে। আর সেই হাসি তুই মুগ্ধ হয়ে দেখছিস।”
নিয়াজ নিচে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে ছিল। কথাটা শুনতেই তাশরিকের দিকে একবার তাকালো। বলল,
“যদি ঝামেলা হয়? ও তো আমার উপর রেগে আছে, আমি ওকে ছেড়ে দিয়েছিলাম বলে।”
তাশরিক বসে বলল,
“ওগুলা সামলানো যাবে। তুই শুধু তোর কাজটা কর।”
তাশরিক আর নিয়াজ ছাদে গেল। অহনা নিয়াজকে দেখে হাসলো আর বলল,
“নিয়াজ, আমার পাশে এসে বসো।”
নিয়াজ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। তাশরিক ইচ্ছে করে অহনার পাশে গিয়ে বসলো। অহনা বিরক্তির দৃষ্টি নিয়ে তাশরিকের দিকে তাকালো। নিয়াজ রাহার বিপরীতে থাকা মোড়াটায় বসলো। তাশরিক সিদ্ধীকে ইশারা করতেই সিদ্ধী বলল,
“এভাবে বসে বসে টাইম ওয়েস্ট না করে কেউ একজন গান গাও প্লিজ। আমার গান শুনতে ইচ্ছে করছে।”
তাশরিক তাল মিলিয়ে বলল,
“কিন্তু এখানে গান কে গাইবে?”
সিদ্ধী অবাক হওয়ার নাটক করে নিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ওমা! আমাদের রাহা বাবু থাকলে আর কাউকে লাগে নাকি? আমাদের রাহা বাবু খুব সুন্দর গাইতে পারে, তাই না ভাইয়া?”
নিয়াজ আশেপাশে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
“হুম।”
অহনা অবাক চাহনিতে বলল,
“নিয়াজ, তুমি কীভাবে জানো?”
ভিলেনের মতো হাসি দিয়ে তাশরিক বলল,
“হোয়াটএভার, রাহা প্লিজ। একটা গান গাও।”
রাহা সিদ্ধীর দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে আবার তাশরিকের দিকে তাকিয়ে নরম কণ্ঠে বলল,
“না, ভাইয়া। আমি অনেকদিন গাই না। পারি না তেমন।”
সিদ্ধী রাহার কানের কাছে এসে বলল,
“তোর দুলাভাই রিকুয়েষ্ট করছে, একটা গা না প্লিজ।”
রাহা সায় দিলো না। নিয়াজ এবার বলল,
“সবাই যেহেতু বলছে, একবার গাওয়া উচিত।”
সিদ্ধী টেনে টেনে বলল,
“হ্যাঁ! সেটাই তো।”
রাহা অবাক হয়ে নিয়াজের দিকে তাকিয়ে রইল। নিয়াজ আরেকবার রাহার দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়লো। রাহা চোখ নামিয়ে দূরের গ্রামের দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করল,
Janam janam janam sath chalna yunhi
Qasam tumhe qasam aake milna yahin
Ek jaan hai bhale do badan hon juda
Meri hoke humesha hi rehna
Kabhi na kehna alvida
Meri subha ho tumhi
Aur tumhi shaam ho
Tum dard ho tum hi aaram ho
Meri duaaon se aati hai bas yeh sadaa
Meri hoke humesha hi rehna
Kabhi na kehna alvida
Meri hoke humesha hi rehna
Kabhi na kehna alvida..
Teri baahon mein hain mere dono jahan
Tu rahe jidhar meri jannat wahin
Jal rahi agan hai jo yeh do tarfa
Na bujhe kabhi meri mannat yahi
Tu meri aarzoo main teri aashiqui
Tu meri shayari main teri mausiqui
Talab Talab Talab bas teri hai mujhe
Nason mein tu nasha banke ghulna yunhi
Meri mohabbat ka karna tu haq ye ada
Meri hoke humesha hi rehna
Kabhi na kehna alvida
Meri subha ho tumhi
Aur tumhi shaam ho
Tum dard ho tum hi aaram ho
Meri duaaon se aati hai bas yeh sadaa
Meri hoke humesha hi rehna
Kabhi na kehna alvida
চলবে,
বি.দ্র: আজকের পর্ব বড় করে দিয়েছি কারণ, ব্যক্তিগত কিছু কাজ থাকার জন্য কালকে গল্প দিবো না।