শব্দহীন_অনুভূতি পর্ব_২০
#পলি_আনান
ঘুমন্ত শহরটা জেগে উঠেছে আরো একবার।আজ ভোর থেকেই ঝিরঝির বৃষ্টি।ঘুমন্ত আরাফের মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো হৃদিতা।জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আনমনে ভাবতে থাকে প্রভার কথা।মাথায় চিন্তারা জট পাকিয়ে যাচ্ছে।আরাফকে শান্ত থাকলে বললেও সে নিজে তো শান্ত থাকতে পারছে না।
বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ছুয়ে দেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়।সঙ্গে সঙ্গে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি এসে তার হাত ছুঁয়ে দেয়।ঠান্ডা বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ছুঁয়ে দেওয়ায় অন্যরকম শিহরণ বয়ে যায়।
তখনি আরাফের মুখের সামনে তার মুখ নিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আরাফের পোড়া কালো ঠোঁট দুটোর দিকে তাকিয়ে বেশ রাগ লাগে তার।এই ছেলের সিগারেট ফোকা কমালেও এই বদ অভ্যাসটা একেবারেই বিদায় দিতে পারে নি সে।প্রতিদিন নিয়ম করে একটা হলেও সিগারেট ফুকতে হবে তার।হৃদিতা ঠোঁট বাকিঁয়েয়ে উঠে যায় আরাফের ফোন হাতে নিয়ে এলার্ম সেট করে আবার আলমারির দিকে অগ্রসর হয়।দুইটা শাড়ি হাতে নিয়ে দ্বিধায় ভুগতে থাকে। কোনটা পড়বে সে?কমলা নাকি মেজেন্ডা কালার?হুট করেই আরাফের শার্টের তাকের দিকে চোখ যায় তার।আরাফের এত শত শার্ট, টি-শার্টের মাঝে একটা কমলা রঙের শার্ট ও খুঁজে পেলো না সে।আরাফের কি কমলা রঙ পছন্দ করে না?হবে হয়তো!আট-দশটা স্বামী স্ত্রীর মতো তাদের কখনো নিয়ম করে ঘোরাঘুরি হয়নি।খুব একটা ভালোলাগা আদান-প্রদান হয়নি। যা হয়েছে লুকোচুরি প্রেম,ভালোবাসা।দুষ্টু মিষ্টি খুনশুটি ঝগড়া, প্রেমালাপ।
তাক থেকে আরাফের মেজেন্ডা রঙের একটা শার্ট বের করে বিছানায় রেখে নিজের শাড়িটা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো হৃদিতা।
লেখনীতে পলি আনান।
হালকা সাজগোজ করে হৃদিতা নিচ তলায় নেমে আসে।পুরো বাড়ি আরো একবার নতুন করে সাজানো হয়েছে যার দরুনে সবকিছু তকতকে, ঝকঝকে করছে।বাড়ির সার্ভেন্ট গুলোর হাতে হাত লেগে কাজ করছেন হুমায়রা।তার মৃত বোনের মেয়ে আজ এই বাড়িতে পা রাখবে। নিজের মেয়ে থেকেও কোন অংশে কম দেখেন’না তিনি।হৃদিতা শাড়ির কুচি সামলে সামনের দিকে অগ্রসর হতেই তানিয়াকেও চোখে পড়ে তার। বিষয়টা দেখে অবাক না হয়ে পারলো না সে।যে তানিয়াকে দশটার আগে ঘুম থেকে উঠতে দেখা যায় না সে আজ সাড়ে আটটায় নিচে সবার হাতে হাত রেখে কাজ করছে, বাহ!
কিছুটা সামনে এগিয়ে যেতেই মায়মুনাকে চোখে পড়ে।দুজনের মাঝেই চোখাচোখি কথা হয়।সবাইকে ব্যস্ত দেখে মায়মুনা হৃদিতাকে আড়ালে তার রুমে ডাকে। হৃদিতাও বড় বড় পা ফেলে সবাইকে আড়াল করে মায়মুনার রুমের দিকে যায়।
-মা আমায় ডেকেছেন?
– হ্যা রুমে আয়। দ্রুত দরজা বন্ধ কর।
হৃদিতা রুমে ডুকেই দরজা বন্ধ করে পুরো।রুমটায় একবার চোখ বুলায়।মায়মুনা আলমারিতে কি একটা খুঁজছেন।কয়েক মিনিট পর দুই,একটা গয়নার বাক্স নিয়ে হৃদিতার সামনে বসে।প্রথম বক্স থেকে লকেট যুক্ত চেইন নিয়ে হৃদিয়ার গলায় পড়িয়ে দেয়।হৃদিতার চোখে মুখে ফুটে আছে বিস্ময়!
– মা আপনি কি করছেন এইসব?
– চুপ কর!বিয়ের পর তোকে গয়না দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়ার কথা কিন্তু কিছুই দিতে পারলাম না।এতদিন তো সেলোয়ার-কামিজ পরেই থাকতি আমিও খেয়াল করিনি তোর গলা হাত খালি।আজ শাড়ীর সাথে হাত গলা খালি বিষয়টা আমার মোটেও ভালোলাগছেনা।চাইলেই এর থেকে ভারী গয়না তোকে দিতে দিতে পারি কিন্তু তোকে এর জন্য অনেক জবাবদিহি করতে হবে আমাকেও করতে হবে, সবাই যানে তোকে আমি মেনে নিলাম না তাহলে এত গয়না দেওয়ার মানে কী?বুঝতেই তো পারছিস মা।
– না না আমার আর কিচ্ছু চাই না। বরং এই চেইন নিয়ে আমি বিপাকে পড়েছি কেউ জিজ্ঞেস করলে কি জবাব দেবো আমি?
– তুই বলবি আরাফ তোর বিয়ের পর আমার কাছ থেকে আরাফ তোর জন্য নিয়ে গেছে।আমাকে সবাই জিজ্ঞেস করলে বলবো আরাফের রাগারাগিতে আমি দিতে বাধ্য হয়েছি।
কথা শেষ করে মায়মুনা অন্য একটি বক্স খুললেন সেখানে এক জোড়া চিকন চুড়ি।মায়মুনা দ্রুত হৃদিতার হাতে চুড়ি কানের দুল আরেকটা আংটি পরিয়ে দেয়।
– একদিনে এত কিছু,সবাই আমার দিকে তো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাবে আমি কি জাবাব দেবো?
মায়মুনা চোখ ইশারায় থামিয়ে দিলেন হৃদিতাকে।
– যা শিখিয়ে দিয়েছি তাই বলবি।আর আমি তোকে ভারী কোন গহনা দিতে পারিনি যা দিয়েছি সব সিম্পল।তুই তো জানিস না আরাফের দাদী মানে আমার শাশুড়ী মায়ের কথা।তিনি ছিলেন এই বাড়িতে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।সব সময় আমাকে গয়না দিয়ে সাজিয়ে মুড়িয়ে রাখতেন। আমার বিয়ের দেড় বছর পর আরাফের জেঠু বিয়ে করেন।বিয়ের এক বছরের মাথায় তোর জেঠিমার নোমান হওয়ার সংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে যেহেতু আমি বাড়ির মেঝো বউ হওয়া শর্তেও আগে বিয়ে হয়েছে, কিন্তু আমার সন্তান হয়নি। বহু বছরের অপেক্ষায় ছিলাম শুধুমাত্র একটি সন্তানের জন্য। চারিদিকের মানুষ যখন আপয়া সহ গালমন্দ করতে থাকে ঠিক তখনো আমার শাশুড়ী আমার হাত ছাড়েন নি ঠিক বন্ধুর মতো আমাকে ভরসা দিয়ে গেছেন।নিয়াজ হওয়ার আট মাসের মাথায় আমার আরাফ হয়। আল্লাহ আমাকে নিরাশ করেন নি।আরাফের যখন এগারো বছর তখন আমার শাশুড়ী মারা যান। তারপর থেকেই নিজেকে একা নিঃসঙ্গতায় ভুগতে থাকি। বাড়িতে মন মানতো না তাই আরাফের বাবার সাথে হাতে হাত মিলাই বাড়ির ব্যবসায়।
হৃদিতা চুপচাপ শুনতে থাকে মায়মুনার কথা। এই নারী বাইরে থেকে নিজেকে যতটা দাম্ভিক প্রমাণ করেন তিনি ততটা দাম্ভিক নন।হৃদিতাকে মুচকি হাসতে দেখে তার গালে হাত রাখে মায়মুনা। মেকি হাসি দিয়ে হৃদিতাকে ধিক্কার দিয়ে বলেন,
– নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে হাসছিস তুই?আমি জানিনা ভাবছিস তোর ভেতরে কি চলছে?এতটাই
ভাবাবেগবর্জিত আমি?
মায়মুনার কথায় চকিতে নড়ে ওঠে হৃদিতা। নিজের হাসি মুখটা মূহুর্তেই ধৌয়ায় মিলিয়ে যায়।
– আমি যানি প্রভা আসবে বলে তোর আর আরাফের মাঝে দ্বিধা দ্বন্দ্ব চলছে।তবে চিন্তা করিস না ইনশাআল্লাহ তোদের বন্ধন অটুট থাকবে চিরজীবন।
– ত-তুমি কি করে জানলে মা?
– চুপচাপ থাকি মানে এই না যে বাড়িতে সবার অন্তরালে কি চলে আমি জানি না।আমি সব জানি, তোরা কি এটা জানিস নোমান তোদের ডিভোর্স পেপার তৈরি করতে দিয়েছে?
হৃদিতা থমকে যায় নিশব্দে দুচোখ দিয়ে অশ্রুকণা গুলো বিসর্জন দিতে থাকে। একটা সময়ে ফুফিঁয়ে উঠে।মায়মুনা চুপচাপ হৃদিতাকে পরখ করছে।
– মা-মা আপনি কি বলছেন এইসব;আমি পারবো না, আমি পারবো না….
হৃদিতা বিড়বিড় করে একটা শব্দই বলছে মায়মুনা চুপচাপ হৃদিতার কান্ড দেখছে। চোখের কাজল গুলো লেপ্টে গাল ছুঁয়ে গেছে।
– আমার ছেলে তোমায় এখনো এই সাজে দেখেছে?দেখেনি তো!তবে সাজ নষ্ট করছো কেন?
মায়মুনার যুক্তিহীন কথায় আহাম্মক বনে যায় হৃদিতা অশ্রু সিক্ত নয়নে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে মায়মুনার দিকে।
– কেঁদো না এই বাড়িতে অনেক কিছুই চলে যেটা তুমি জানো না।যা হবার তা হবে তবে তোমারদের ডিভোর্স নয়,অন্য কারো বিনাশ হবে। যাও রুমে যাও আরাফের কাছে যাও।
হৃদিতা উঠে দাড়ালো তবে দরজার সামনে গেলো না উল্টো মায়মুনার বুকে আছড়ে পড়লো। কাদঁতে কাদঁতে হেচকি তুলে ফেলেছে সে।মায়মুনা দুহাত দিয়ে আগলে নেয় তাকে।মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় পরম যত্নে।
মায়মুনার রুম থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করে বের হলে মুখোমুখি সামনে পরে হুমায়রা,
– ওই রুমে এতক্ষন কি করছিলি হৃদি’মা?
হৃদিতা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায় হুমায়রার দিকে।পরক্ষণেই মনে পড়ে উনি তো আরাফের বিস্তস্ত কাছের লোক উনাকে বলাই যায়।আবার মায়মুনার কথা খেলাফ না করে সম্পূর্ণ কথাটা হজম করে নিলো হৃদিতা।
– মায়ের রুমের কিছু ময়লা ফুলাদানি ছিল সেগুলো পরিষ্কার করতে গিয়েছিলাম।
– ওহ!
হৃদিতা সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে সেখান থেকে প্রস্তান করলো।
এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আরাফের।চারিদিকে চোখ বুলিয়ে হৃদিতাকে খুজঁতে থাকে। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করে সাড়ে নয়টা বেজে গেছে।
– বাহ! মহারানী আজ এলার্ম দিয়ে ঘুম থেকে উঠালো বেপার কি, তিনি কোথায়?
আরাফ আবারো উপড় হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় সম্পূর্ণ ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি তার চোখে।
হৃদিতা রুমে এসে আরাফকে শুয়ে থাকতে দেখেই তেতে উঠে,
– একি?এখনো ঘুমে কেন এই লোকটা!
আরাফ চোখ কুচকে হৃদিতার দিকে তাকায়। কিন্তু শাড়ী পরিধানকারী হৃদিতাকে দেখে আর শুয়ে থাকতে পারলো না ঝপাং করে উঠে বসে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো।আরাফের চাহনীতে হৃদিয়া অস্বস্তি পরে যায়। হাতে থাকা কফি মগটা সেন্টার টেবিলে রেখে আরাফের দিকে আড় চোখে তাকায়।এখনো শুয়ে আছিস কেন? বেলা হয়েছে তো।
আরাফ তার ডান হাত হৃদিতার দিকে বাড়িয়ে দেয়।হৃদিতা অবাক হয়ে একবার আরাফের দিকে আরেক বার তার হাতের দিকে তাকায়।
-কী?
– সাহস থাকলে আমার হাত ছুঁয়ে দেখা!
আরাফের কথায় ঠোঁট বাকায় হৃদিতা।
– কী এমন সাহস প্রয়োজন তোর হাত ছুঁয়ে দিয়ে? আজব!
হৃদিতা আরাফের হাতে হাত রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধপাস করে বিছানায় ফেলে।হৃদিতা আর্তনাদ করার আগেই আরাফ মুখ চেপে তার পাশে উপড় হয়ে শোয়।হৃদিতার গালে হাত রেখে চোখের কাজলে হাত বুলায়,
– কেঁদেছিস কেন তুই?
-ক–কই,আমি কাদিঁনি।
– আবার মিথ্যা বলছিস।কেঁদেছিস তুই,তোর চোখের কাজল লেপ্টে গেছে সেই কাজল আবার মুছে নিয়েছিস আলতো করে। তোর নাক যে ফুলে লাল হয়ে আছে।চোখের বিমর্ষ ভাব বলে দিয়েছে তুই কেঁদেছিস।
হৃদিতা তার দৃষ্টি নামিয়ে নেয় আরাফের গালে নিজের হাত রাখে।দুজনের দৃষ্টি এখন স্থির,
– তোর জন্য কেঁদেছি,তোকে হারানোর ভয়ে কেঁদেছি।
আরাফ ম্লান হেসে হৃদিতার নাকে নাক ঘষে দেয়।
– কিন্তু আজ হঠাৎ এমন সাজ?আমাকে মত্ত করবি বলে?
– উহুহ, আমাদের দেখে অন্য কেউ খুন হবে বলে।
আরাফ ঠোঁট কামড়ে হাসে,
– প্রেয়সী বুঝি হিংসাত্মক হয়ে আজ আগুন জ্বালাবে!অন্যকে পুড়াবে।কিন্তু প্রেয়সীর সুহৃদ যে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে তা কি সে জানে?
– জানার প্রয়োজন বোধ করছি না এই মূহুর্তে। আপদত শাওয়ার নিয়ে আসুন,শার্ট ভাজ করে রেখেছি পড়ে আমাকে ধন্য করুন।
আরাফ আবারো স্নিগ্ধ হাসে। হৃদিতার চোখে মুখে ফুঁ দিয়ে কানের সামনে ফিসফিস করে বলে,
– আমার কৃষ্ণ বর্ণ ভস্মীভূত ঠোঁটের,আপনার কোমল সুশ্রী ঠোঁটের ছোঁয়া আদর কি গ্রহন করবেন, আপনি এই মূহুর্তে?
হৃদিতা ঢোক গিলে আরাফের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
– আগে ঠোঁট পোড়ানোর কারনটা ছেড়েদিন তবে অবশ্যই আমি আদর গ্রহন করবো কিন্তু তার আগে নয়।
আরাফ খিটখিটে মেজাজে হৃদিতার দিকে তাকায় হৃদিতাকে হাসতে দেখে তার অধরে আলতো করে নিজের অধর ছুঁয়ে দেয়।হৃদিতা বিস্ময় নিয়ে তাকালে আরাফ ভ্রু নাচিয়ে হাসে।
– এটা কি হলো?আমি তো তোকে অনুমতি দিলাম না।
– কিন্তু আমার তো তোর উওর পছন্দ হলো না। তাই আমার আদর আমি আদায় করে নিলাম বাইদা ওয়ে সিগারেট আমি ছাড়তে পারবো না। তবুও তোর কথা ছেড়ে দিয়েছি, কিন্তু দিনে একটা সিগারেটে আমার মন ভরে’না রে।
– ঠিক আছে আমাকে ছেড়ে দে যত ইচ্ছে সিগারেটের ধৌয়া উড়াবি কিচ্ছু বলবো না।
– ঠাটিয়ে দু চড় দেবো।বাই দা ওয়ে হঠাৎ সিগারেটের তেষ্টা পেয়েছে আমার লাইটার আর সিগারেট দে।
হৃদিতা উঠে যায় সিগারেট আরাফের ঠোঁটে পুরে দিয়ে লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।আরাফ সিগারেটের আগুন টান দিয়ে ধৌয়া নাকে মুখে ছেড়ে দেয়।হৃদিতার দিকের দিকে তাকিয়ে তার করুন মুখশ্রী দেখে হো হো করে হাসতে থাকে।
অবশেষ দুপুরের খানিকটা আগে প্রভা এনায়েত বাড়ির দারপ্রান্তে এসে পৌছে যায়।সবার সাথে আলাপচারিতা শেষে তার মন শুধু আরাফ কে খুজঁতে থাকে।আইদার সঙ্গে বিভিন্ন কথা শেষ প্রভা উষ্কখুষ্ক মন তাকে জিজ্ঞেস করেই বসে,
– আইদা তোমার দাভাই কোথায়?
– কে আরাফ ভাইয়া?
-হুম
– সে তো ভাবীমনির কাছে!
– “ভাবীমনি” সে কে?
– ওমা তুমি জানো না। আরাফ ভাইয়ার বউকে ভাবীমনি বলি।
আইদার কথা শুনে বিনা মেঘে বজ্রপাত পড়ার মতো অবস্থা হলো প্রভার। শুরু হয়ে গেছে বুকের ভেতরটায় ধড়াস ধড়াস শব্দ।ঢোক গিলে মুখে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে নোমান আর আরাফের কথা। কেউ তাকে কিচ্ছু জানালো না তাকে?বিডিতে এসে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা তার সাথে ঘটবে সপ্নেও ভাবেনি সে।
সোফা থেকে দাঁড়িয়ে নোমানের সামনে যেতে নিলেই প্রভার চোখে পড়ে, হৃদিতা আর আরাফ যুগল বন্ধী তার দিকে এগিয়ে আসছে।তাদের চোখে মুখে হাসির ঝলক যেন সুখী দম্পত্তি।
প্রভার কিড়মিড় করে তাকানোর ভাব বুঝতে পেরে নোমান তার দিকে এগিয়ে আসে এবং হাত টেনে সবার আড়ালে নিয়ে যায়।তাকে বুঝিয়ে বলে হৃদিতা আর আরাফের সম্পর্কের কথা কিন্তু তাতেও মানতে নারাজ প্রভা।হিংসাত্মক দৃষ্টিয়ে প্রভা যখন তাকিয়ে থাকে হৃদিতার দিকে তখন হৃদিতা কোন কারন ছাড়িই আরাফের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।হৃদিতা আরাফের হাত ধরে মনে মনে প্রভাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– তুমি জ্বলে যাও ভস্ম হয়ে যাও তাতে আমার কি?শুধু আমার স্বামীর দিকে তাকানো বন্ধ করো।
#চলবে….