জীবনের অন্যরঙ পর্ব-১৪

0
703

#জীবনের অন্যরঙ [১৪তম পর্ব]
#আজিজুর রহমান

অভিমানী মেঘ সেদিন যদি গো নাহি আসে আর ফিরে,
যে সাগর থেকে মেঘ এসেছিল – যেয়ো সে সাগর তীরে।
তোমারে হেরিলে হয়তো আমার অভিমান যাব ভুলে,
তব কুন্তল-সুরভিতে সাড়া পড়িবে সাগরকূলে।
আমি উত্তাল তরঙ্গ হয়ে আছাড়ি পড়িব পায়ে,
জলকণা হয়ে ছিটায়ে পড়িব তব অঞ্চলে, গায়ে।

সকালে আদালতে রিলিফ অফিসের কেস ওঠার কথা। বিষয়টা নিয়ে অর্নিতা আগের মত আগ্রহী নয়।আসামী শাস্তি পেল কি মুক্তি পেল তাতে তার কি আসে যায়। অনি বলছিল কাজ করে যাও। রেজাল্ট নিয়ে ভাবার দরকার নেই। তবু চিন্তাটা নাকের ডগায় ঘুরে ফিরে আসছে। অনেক শুনেছে রাকিব হোসেনের কথা,স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়নি। সেদিন কোথায় গায়েব হল,পেলে দেখিয়ে দিত ক্ষমতা কি।

রাকিব হোসেনের অপার ক্ষমতা সবাই জানে। তা হলেও সবাই একটু নার্ভাস। আদালতে আজ তাদের কেস ওঠার কথা। মিথিলার কোনো চিন্তা নেই।অলৌকিক ক্ষমতাবলে রাকিব হোসেন কিই না করতে পারে। রাকিব হোসেন আছেন মানে তার উপরে ওপরঅলার হাত রয়েছে। সকাল সকাল স্নান সেরে আদালতে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়। খাস কামরায় ধ্যানস্থ সকাল থেকে রাকিব হোসেন। ধ্যান মানুষের মেন্টাল পাওয়ার বৃদ্ধি করে থাকে। অনিমান কে ফিরে পাবার আশা নেই বুঝতে পারছেন। এখন ওপরঅলার প্রতি তার অপরিসীম ক্ষোভ,দিয়ে কেন আবার ফিরিয়ে নিল। আউরতটা শিখ হলেও বহুকাল এই মুলুকে বসবাস করছে, রাকিব হোসেন খবর নিয়েছে। নিমীলিত চোখের কোলে জল চিকচিক করে।

ঘুম ভাঙ্গলেও শেষরাতের আমেজ অনিমান চাদরে আপাদ মস্তক ঢেকে শুয়ে আছে । জানকি ঘরে ঢুকে বাক্স ধরে টানতে অনিমান মুখের চাদর সরিয়ে জিজ্ঞেস করল, কি হল খালা?
–বাক্সটা ওইদিকি সরায়ে দিচ্ছি। জানকি থতমত খেয়ে বলল।
–কি দরকার পায়ের কাছেই থাকনা।
–ওঠেন। চা দিচ্ছি। জানকি চা আনতে গেল।
স্নান সারা,অনির মতো অর্নিতা ধ্যানস্থ করছে। মন দিয়ে নিজের কাজ করে যাও, ফলাফল ওপরঅলার হাতে। আম্মুর মুখটা মনে পড়ল। একসময় উঠে আসন তুলে রাখল অর্নিতা । জানকি চা দিয়ে গেল।
–সাহেব কি করছে? অর্নিতা জিজ্ঞেস করল।
–ডেকে দিচ্ছি। জানকি চলে গেল।

অনিমান চায়ের কাপ নিয়ে ঢুকতে দেখল,অর্নি আপু ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে, হাতের ইশারায় বসতে বলল। মর্নিং…না যেমন আছে নো চেঞ্জ …দশ? কিন্তু রয়ালটি কম হয়ে যাচ্ছেনা? …পরের এডিশন হলে বাড়াবে?….চেক আমার নামে হলে ভাল হয়…ও সই করে দেবে… থ্যাঙ্ক ইউ রাখছি…শুভ সকাল।

ফোন রেখে অনির তাকিয়ে হাসল,কার ফোন বলতো?
অনিমান হাসল,অর্নি আপুকে বেশ সুন্দর দেখতে লাগছে। মনে শান্তি থাকলে মানুষকে সুন্দর লাগে।
–বাদল ভাই ফোন করেছিল। দশ হাজার দেবে তার উপর রয়াল্টি। এবার তোর নামে একটা ব্যাঙ্ক এ্যাকাউণ্ট খুলতে হবে। চেক দিতে আসলে সই করে নিয়ে নিবি।
–অর্নি আপু নতুন উপন্যাস শুরু করেছি,নাম দেবো “নবজন্ম।”
অর্নিতা উদাস হয়ে কি যেন ভাবে। আচমকা প্রশ্ন করল,চিত্রা কি বাঙালী?
অনিমান হেসে বলল,হ্যা বাঙালী। ওর বাবার নাম সুনীল গুহার।
–সুনীল গুহার?এক মুহূর্ত ভেবে বলল, নামটা শোনা-শোনা লাগছে। কোথায় থাকে?
–সল্ট লেক।
–সমজ গেয়া। ওর সিস্টার ইন ল রিলিফ অফিসের সঙ্গে কানেকশন আছে।

অনিমান বুঝতে পারে রঞ্জার কথা বলছে,অর্নি আপুকে সেকথা চেপে গিয়ে বলল, অফিসেতে অনেক অভিজাত ফ্যামিলির লোকজন যায়।
–অফিসের উপরে তোর বহুৎ দরদ? অর্নিতা মজা করে বলল।
অনিমান কোনো উত্তর দিলনা। অর্নিতা বলল,গুসসা হলি?
অনিমান চোখ তুলে তাকাল,চোখের পাতা ভিজে বলল,তুমি দু-তিন বছরের বড়–।
–চার-পাঁচ বছর।
–তুমি যা করেছো আমার মায়ের মতো।
–সাদি হলনা মা বানিয়ে দিলি?
–ভালো চাকরি করছো,এবার সাদি করলেই পারো।
অর্নিতাকে উদাস মনে হয়, অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,লেড়কা ঠিক হয়ে গেছে। ট্রান্সপোর্টের বিজিনেস। তোর পাড়ায় মঞ্জিত আছে–ওর কেমন রিলেটিভ।
–ট্রান্সপোর্টের বিজিনেস? অনিমান অবাক হয়ে বলল।
অর্নিতা হেসে ফেলল,বহুৎ মালদার লোক,তোর অর্নি আপুর মত কয়েকটাকে কিনে নিতে পারে। তোর পছন্দ নয়?
–আমার পছন্দে কি এসে যায়?তোমার ইচ্ছেটাই আসল।
অর্নিতাকে বিষণ্ণ মনে হল বলল,সব কি আমার ইচ্ছেতে হবে?
–ইচ্ছে না থাকলে তোমার আম্মীকে বলে দাও।
–ধুর বোকা। আমি ভাবছি আজকের মামলার কথা।এই শালা রাকিব বহুৎ জাহাঁবাজ লোক আছে। দেখি এখন ওপরঅলার ইচ্ছে।
অনিমান কথা বাড়ায় না। বুঝতে পারে অর্নি আপু অফিস নিয়ে ভাবছে।
আদালত চত্বরে ভীড় বাড়তে থাকে ক্রমশ। পুজোর আগে আজ শেষ দিন। ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পুলিশের জীপ। একটা এ্যাম্বাসাডোরে এসেছে মিথিলা ও আরো অন্যান্যরা। এরা জামীনে ছাড়া পেয়েছে। মামলা ঊঠতে উঠতে বেলা গড়িয়ে গেল। মিথিলার উকিল দাঁড়িয়ে বলল,মে লার্ড আমরা এখনো চার্জশিট পাইনি। জজ সাহেব আই.ও-র দিকে তাকালেন। আই ও পরেশ সাহেব আমতা আমতা করতে থাকে। জজ সাহেব বিরক্ত হয়ে পুজোর পর শুনানির দিন ধার্য করে দিলেন। সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কাঠগড়া থেকে নেমে গেল। নিলয় শেষ মুহূর্তে জীপ থেকে নেমে যখন আদালতে পৌছালো তখন অন্য মামলার শুনানি শুরু হয়ে গেছে। পরেশ সাহেবের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানল ওসি সাহেব। এস আই পরেশ সাহেবকে জীপে উঠতে বলে জিজ্ঞেস করল,স্যার এসেছিলেন?
–এসপি সাহেব?
–তাছাড়া আবার কে স্যার?মুচকি হেসে বলল নিলয়।
–না ওনাকে দেখিনি।
–আর দেখতে হবেনা। ঐযে বলেনা পীপিলিকার পাখা ওঠে–শালা রাকিব স্যারের সঙ্গে টক্কর।ড্রাইভারকে বলল,চালা।

অর্নিতা চিঠি পাবার পর ডিআইজি আইজি স্বরাষ্ট্র সচিব সবার কাছেই ছুটোছুটি করেছে। স্যার আমার এখানে একবছরও হয়নি যুক্তি দেখিয়েছে। সবার এককথা আমার হাতে নেই। কার হাতে তাও কেউ খোলসা করে বলল না। একে একে সব অফিস বন্ধ হতে শুরু করে,জীপে বসে অর্নিতা পকেট থেকে চিঠিটা খুলে আরেকবার দেখল,সিলেট। চোখমুখ লাল ঠোঁট কাপছে। উদয় রাজপাল ঠিক কি হয়েছে না জানলেও বুঝতে পারে,স্যার মুশিব্বাত মে।
রাত হয়েছে,এত রাত হবার কথা নয়। অর্নি আপু আসছেনা দেখে অনিমান অপেক্ষা করতে করতে টিফিন খেয়ে নিল। জানকি বলল, ম্যাডাম ঐরকম। এই মাসখানেক একটু তাড়াতাড়ি ফিরছিল।

আদালতে আজ অফিসে মামলা ওঠার কথা। এত রাত অবধি আদালত খোলা থাকার কথা নয়। কি হতে পারে অর্নি আপুর কিছু অনুমান করতে পারেনা। রাগ হয় অর্নি আপুর স্বেচ্ছাচারিতার জন্য। মাথার উপর কেউ বলার নেই একা একা যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছে।

পাড়ায় আনন্দের ঢেউ বয়ে চলছে। উষার কি রকম বোন ছন্দা এসেছে দিদির বাড়ী বেড়াতে। সবখানে ভীড়,বাশার ঢাক বাজাচ্ছে। নজর ছন্দার দিকে।মঞ্জিত ঢাকের কাঠি কেড়ে নিয়ে বাশারকে সরিয়ে বাজাতে শুরু করল। শুভ বলল এই হচ্ছে ঢাকের আওয়াজ,সাবু খেয়ে ঢাক বাজানো যায়। শুভর কথা গায়ে মাখেনা বাশার। বেলা ভাবি উশাকে জিজ্ঞেস করে,কর্তা কই?
–সে তো আমার থেকে আপনার ভাল জানার কথা।উশা হেসে বলল।
বেলা ভাবি সম্পাদিকা হলেও রাজুকে সবদিক সামলাতে হয়। বেলা ভাবি কালকের অনুষ্ঠান নিয়ে চিন্তিত। শুভ্রতা আসতে মিতার মনে পড়ল অনির কথা। কোথায় উধাও হল কে জানে। ওর বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলে উল্টোপাল্টা ভাবতে পারে। অনির সঙ্গে শুভ্রতার কি সত্যিই কিছু ছিল? আণ্টির গা-ঘেষে দাঁড়িয়ে রোজি। উল্টো দিকে শুভ দাঁড়িয়ে,কদিন পরেই তো বিয়ে। তবু কেমন দেখছে যেন আশ মেটেনা। সুবীর ধুনুচি নিয়ে ঢাকের তালে তালে নাচতে শুরু করে। তনিমার সঙ্গে কেটে যাবার পর সুবীরকে এখন সঞ্জনার সঙ্গে দেখা যায়। তনিমার নিরুদ্দেশ রহস্যময় রয়ে গেল। কেউ বলছে ফেল করে পালিয়েছে আবার কারো ধারণা কোনো ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে। রাত বাড়তে থাকে,রাজুকে দেখে বেলা ভাবি জিজ্ঞেস করল,পেয়েছো?
–এইমাত্র বাজার থেকে কিছু জিনিস নিয়ে ফিরলাম।কি অবস্থা হিমেশ জানে।
–যাক বাবা শান্তি। বেলা ভাবি বলল।

অনিমানের মনে শান্তি নেই। অর্নি আপু বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছে,বেরিয়ে খোঁজ খবর করবে তার উপায় নেই। সেই সকালে লাঞ্চ করে বেরিয়েছে,এতরাত হল কোথায় যেতে পারে?হঠাৎ একটা কথা মনে হতে চমকে উঠল। রাকিব আঙ্কেল কিছু করেনি তো?শুনেছে এরা বাণ-ফান মারতে পারে। কান্না পেয়ে যায়।
জানকি বলল,সাহেব আপনি বেকার বেকার চিন্তা করছেন,ম্যাডাম ঐরকম। টেবিলে খাবার দিয়েছি খেয়ে নেন।
অনিমানের ইচ্ছে হল ঠাষ করে জানকির গালে এক চড় কষিয়ে দেয়। টেবিলে দুটো প্লেট সাজানো। সেদিকে তাকিয়ে চোখ ছাপিয়ে জল চলে আসে। অর্নি আপুকে বহাল তবিয়তে আবার দেখতে পাবে তো?

বাইরে জীপের আওয়াজ হতে সজাগ হয়। অর্নিতার বিধ্বস্ত চেহারায় ঢূকে অনিকে দেখে বলল,তুই খেয়ে নে। রাতে আমি খাবোনা। অর্নিতা নিজের ঘরে ঢুকে গেল।
অনিমানের যেন ধড়ে প্রান এল, কোন কথা বলার সাহস হয়না। টেবিলে বসে কিছু খেল কিছু খেলনা। অর্নি আপুর কি হয়েছে না জানা অবধি শান্তি পাচ্ছেনা।
সিকদার সাহেব থানাতেই মালের বোতল নিয়ে বসে আছে। আজ নাইট ডিউটী। সাধু সন্তদের ব্যাপারই আলাদা। কখন কার উপর কৃপা হয় কে বলতে পারে। ফোন বেজে উঠতে রিসিভার কানে লাগায়।
–সিকদার?প্লেনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি বলুন।
–আর ভাই বলবেন না হা-হা-হা।
–দাঁত না কেলিয়ে কি হয়েছে বলবেন তো? সিকদার খিচিয়ে ওঠে।
–মনে হচ্ছে মাল পেটে পড়েচে?হা-হা-হা।
–এইবার ফোন রেখে দেবো।
–না না অমন কম্মটি করবেন না তাহলে রসের কথা হতে বঞ্চিত হবেন।
–মনে হচ্ছে রস একেবারে উথলে উঠছে?
— চিঠি পাবার পর একবার যদি সুন্দরীর মুখটা দেখতেন হা-হা-হা।
— ম্যাডাম?
–ট্রান্সফার পেয়ে কি যে মুখের অবস্থা।হা-হা-হা।

সিকদার ফোন রেখে দিল। চোখের সামনে অর্নিতা মির্জার মুখটা ভেসে ঊঠল। অত্যন্ত সৎ অফিসার তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দীর্ঘ চাকরি জীবনে অভিজ্ঞতা তো কম হলনা। একটাই দোষ ভদ্রমহিলা কল্পনার জগতে বাস করছেন। নিলয় স্যার ক্যালাচ্ছে অথচ এই নিলয়কে যখন অন্যায়ভাবে কুল্পিতে বদলি করেছিল এই মিস অর্নিতা ম্যাডাম সেটা রদ করেছিলেন বলেই ঢাকায় বসে দাঁত ক্যালাতে পারছে।তিনি নিজেও ম্যাডামের সঙ্গে বেইমানি করেছেন ভেবে সিকদার লজ্জিত বোধ করে। ম্যাডাম অবশেষে সত্যিই বদলি হয়ে গেলেন?

ঘরে ডিম লাইট জ্বলছে। অর্নিতা উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। কাঁদছে কিনা দেখে বোঝা যায় না।
অনিমান ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘুম আসেনা।অন্ধকারে পা-টিপে টিপে অর্নি আপুর দরজা ঠেলতে খুলে গেল। ডিম লাইটের আলোয় দেখল অর্নি আপু আগোছালোভাবে শুয়ে আছে। দরজা ভেজিয়ে ভিতরে ঢুকল। নীচু হয়ে দেখল চোখের পাতা বন্ধ।হাতের তালু কপালে রাখে,খপ করে হাত চেপে ধরে অর্নিতা পাশ ফিরে চোখ মেলে হাসল। ভক করে নাকে গন্ধ এসে লাগে।
–তুমি নেশা করেছো?
অর্নিতা কোনো উত্তর না দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে।হারামীতে ছেয়ে গেছে দেশটা, একটা লোক খুঁজে পেলনা পাশে দাড়াবার মত। কত সিপাই সান্ত্রী তার মধ্যে নিজেকে বড় একা মনে হয়। একবার মনে হয় চাকরি-বাকরি ছেড়ে দেশে গিয়ে আম্মীর কোলে শুয়ে পড়ে। বেজম্মা নিলয় কেমন নিরীহভাব করে দাড়িয়েছিল,স্পষ্ট বুঝতে পারছিল মনে মনে খুব হাসছিল। অথচ ওর জন্য ডিআইজিকে বলে সেই বদলি আটকেছিল। আল্লাহ এ কেমন বিচার? অনিটা বড় সরল কেমন বলদের মত দাঁড়িয়ে আছে। অর্নি আপুর চিন্তায় ওর ঘুম হচ্ছেনা।

বিছানার একপাশে বসে অর্নি আপুর চুলে হাত বোলায় অনিমান। অর্নিতার ভাল লাগে, চন্দ্রতালু হতে কি এক ভাললাগা অনুভুতি সারা শরীরে চারিয়ে যাচ্ছে।
–অর্নি আপু তোমার কি হয়েছে?
তার কি হয়েছে অনিকে কি বলবে?অর্নিতা বলল,আমার খুব কষ্ট হচ্ছেরে অনি।
–কোথায় কষ্ট আমাকে বলো।
অর্নিতা ভাবে বোকা ছেলে ওকে কি করে বোঝাবে তার বুকের মধ্যে কি যন্ত্রণা হচ্ছে। কয়েকটা লম্পট জানোয়ার তাকে নিয়ে মাজাক করেছে। সব শুয়োরের বাচ্চা একদিকে তার পাশে কেউ নেই, সে বড় একা।তার নিষ্ঠা সততার কোনো মূল্য দিলনা হারামীর বাচ্চারা। ওপরঅলার এ কি বিচার!
–তোমার খাবার নিয়ে আসব?তুমি তো কিছু খাওনি।
–খেতে ইচ্ছে করছে না,তুই এসেছিস ভাল লাগছে।
–ঠিক আছে তুমি ঘুমাও,আমি পাশে বসে আছি।
একটা আউরত নিদ যাবে আর ও পাশে বসে থাকবে,মনে মনে হাসে অর্নিতা। অনিমান লক্ষ্য করে অর্নি আপু চোখ মেলছেনা,মনে হয় আলো সহ্য করতে পারছেনা। জিজ্ঞেস করল,আলো নিভিয়ে দেবো?
–না থাক। তুই ঘুমোবি না?
–আমার অভ্যেস আছে তুমি ঘুমাও। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

চুলের মধ্যে আঙুল সঞ্চালিত করতে থাকে অর্নিতার শরীর জুড়িয়ে যায়। অনিমান নিজের মনে বলতে থাকে,এবার তুমি একটা বিয়ে করো। শরীর খারাপ-টারাপ হলে দেখাশুনার জন্যও একজন লোক দরকার। ঐ যে ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা না কি তোমার মা ঠিক করে রেখেছে তুমি বললে,ওনাকে খবর দাও। অর্নিতা শুনতে শুনতে মনে মনে হাসে,কে শুনছে ওর কথা তবু বকে যাচ্ছে। অনি বলে,একা একা কারই বা ভাল লাগে। তোমাকেও বলি এইসব মারদাঙ্গা কাজ মেয়েদের পোষায়। স্কুল কলেজে পড়ানো এক তা না যত চোর ডাকাতের পিছনে দিনরাত ছুটে বেড়াও। অর্নিতা ভাবে অর্নি আপুর চিন্তায় ওর ঘুম আসছে না,বকেই চলেছে। জানো অর্নি আপু বিয়ে করলে আজ কেউ না থাকুক অন্তত একজন–। অর্নিতা পালটি খেয়ে অনির হাত সরিয়ে চোখ মেলে তাকায়,মুখের দিকে অপলক চেয়ে থাকে। অনিমান অস্বস্তিতে অন্যদিকে মুখ ফেরায়। অর্নিতা বলল,তখন থেকে বিয়ে-বিয়ে করছিস,তুই বিয়ে করবি?
–আবার ইয়ার্কি?এরকম করলে আমি কিন্তু চলে যাবো।
অর্নিতা হাতে ভর দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করে,অনিমান পিঠের নীচে হাত দিয়ে অর্নি আপুকে সোজা হতে সাহায্য করে।
–ইয়ার্কি কিরে?তুই আমার ইয়ার্কির পাত্র?
–না তা নয়,দেখো বিয়েটা ছেলেখেলা নয়।
–সে তোকে শেখাতে হবেনা। শোন অনি তোকে আজ একটা কথা বলি। যথেষ্ট বয়স হয়েছে আমার।ভেবেছিলাম একটা কথা হয়তো কোনোদিন বলা হবে না, আজ বলছি। প্রথম যেদিন হাবৃ ভাইয়ের যোগ ক্লাসে গেছিলাম,দেখলাম খালি গায়ে চোখ বুজে একটা ছেলে গভীর ধ্যান মগ্ন। চারপাশে কোনকিছুই তাকে স্পর্শ করতে পারছে না। আমার মনে হয়েছিল যেন এক দেবশিশু বসে আছে। ওপরঅলা যেন আমারই জন্য একে গড়েছে, ভালবেসে ফেললাম।ছেলেটা কে তখন না জানলেও পরে জেনেছিলাম আমাদেরই পাড়ায় থাকে তার নাম অনিমান চৌধুরী ।
–তাই-ই? কোনোদিন বলোনি তো? অনিমান হাসল।
–বলিনি ভয়ে।
–ওঃ বাব্বা তুমি আমাকে ভয় পাও? অনিমান ফিক করে হাসল।
–আমি শিখ তুই বাঙালী তার উপর বয়সে চার-পাঁচ বছরের ছোটো–যদি প্রত্যাখ্যাত হই?এই আশঙ্কায় বলা হয়ে ওঠেনি। আমি তোকে ভালবাসি বিশ্বাস কর।তুই আমাকে ভালবাসিস না সত্যি করে বলতো?
–অর্নি আপু আমি তোমাকে কত ভালবাসি কি করে বোঝাবো কিন্তু–কিন্তু–।
–কিন্তু কি?
–মানে সেটা এইরকম ভালবাসা কিনা বুঝতে পারি না।
–আমার জন্য তুই না খেয়ে বসেছিলি কেন?এতরাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে তুই কেন জেগে বসে আছিস?আমার কি কষ্ট ওর ঘুম আসছে না, যা ভাগ এখান থেকে—।
–ঠিক আছে ঠিক আছে আমি কি বলেছি বিয়ে করব না?
–তাহলে বল, মেনো তেরে না প্যার ওয়া।
–এর মানে কি?
–আমি তোমাকে ভালবাসি।
–ঠিক আছে মেনো তেরে না প্যার ওয়া কিন্তু অর্নি আপু সেই ট্রান্সপোর্টের–।
–থাপ্পড় খাবি?সে তার পছন্দমত মেয়ে খুঁজে নেবে। আমার নিজের একটা পছন্দ আছে না?তুই উঠে ড্রয়ারটা খোল।
অনিমান উঠে টেনে ড্রয়ার খুলল।
–এবার কোনের দিকে হাত ঢুকিয়ে বালাজোড়া বের কর।
অনিমান বালা নিয়ে আসতে অর্নিতা বলল,আমার ডানদিকে বোস।
অনিমান ডানদিকে গা ঘেষে বসতে অর্নিতা হাত বাড়িয়ে বলল,মনে মনে ওপরঅলার নামকরে পরিয়ে দে।
অনিমান বাচ্চা ছেলের মত কেঁদে ফেলল। অর্নিতার খটকা লাগে সে কি জোর করছে? জিজ্ঞেস কর, কাঁদছিস কেন?
–অর্নি আপু মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। তুমি জানোনা মার কাছে শিখ খ্রীষ্টান কিছু না শুধু তার ছেলের সুখের জন্য মা সব পারতো। আজ থাকলে কি খুশী যে হত–।
অর্নিতা অনিকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,আমারও বাপু নেই, আণ্টি নেই তো কি হয়েছে আমি আছি না?বোকা ছেলে–,ওপরঅলার নাম করে দে পরিয়ে দে।
অনিমান হাতটা নিয়ে বালা পরাতে থাকে। অনির মাথায় গাল ঘষতে লাগল।
অনিমান বিরক্ত হয়ে বলল,এরকম করলে পরানো যায়?
–আচ্ছা ঠিক আছে আর করব না,তুই পরা।
বালাজোড়া পরাবার পর দু-হাত চোখের সামনে তুলে ধরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে ভাবে অর্নিতা,আমি কি বন্দী হয়ে গেলাম?
–অর্নি আপু একটা কথা বলবো?
–এ্যাই তুই আমাকে আপু-আপু করবিনা তো?
–তাহলে কি বলবো মিস অর্নিতা?
অর্নিতা খিল খিল করে হেসে ফেলল। তোকে ইচ্ছে করছে ঠাস করে এক চড় কষাই।
–অর্নি আপু সবাইকে চড় মারতে তোমার ভাল লাগে?
–সবাইকে না তোকে। ফের আপু?
–বারে আগেও তো তাই বলতাম। অনিমান বিরক্ত হয়ে বলে।
–তুই আমার কাছে আয়।
অনিমান এগিয়ে গেল,অর্নিতা উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরে।
অনিমান অসহায়ভাবে বলে,একী করছো অর্নি-অর্নি–।
–তুই আমাকে ছুঁয়ে থাকলে আমি অনেক উন্নতি করবো অনি। মনে মনে বলে,তুমি আমার সব।
সাধারণ সাজ তার মধ্যে আলাদা করে চেনা যায়।সালোয়ার কামিজে কি সুন্দর লাগছে।
–অর্নিতা বলল,তুই আমাকে শুধু অর্নি বলবি।
–তোমার ভাল লাগলে তাই বলবো কিন্তু আমার না কেমন লজ্জা লাগে।
–বিয়ের পর কেউ আপু বলে?
–আবার?তাহলে আমি চলে যাবো।
–কেন আমাকে তোর পছন্দ নয়?চোখ কুচকে জিজ্ঞেস করে অর্নিতা।
অনিমান ত্রস্ত হয়ে বলল,তুমি কি যে বলো না। তুমি–তুমি মানে তোমাকে আমার মনে হয় সৌন্দর্যের দেবির মত। সবার থেকে আলাদা। জানো আমার মাও ছিল সবার থেকে আলাদা।
–তাহলে তোর আপত্তি কোথায়?
অনিমান মাথা নীচু করে বসে থাকে।
–কি হল কথা বলছিস না কেন?
–নিজেরই খাওয়া জোটে না বউকে কি খাওয়াবো বলো?
অর্নিতা এবার হাসে না,চুপ করে বসে অনিকে লক্ষ্য করে।
–ঠিক আছে। তুই মন দিয়ে পড়াশুনা কর। চাকরির কথা এখন ভাবতে হবে না।

–আবার এই আপু-আপু করবি নাতো?আপনা বিবিকে কেউ আপু বলে?
–অনেকদিনের অভ্যেস আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
–ঠিক আছে কি বলছিলি বল?
–না মানে আমি বেকার–তুমি যদি একটা চাকরি–।
–একদম ওসব বলবি না। তুই চাকরি করলে তোর বিবিকে দেখবে কে–পাড়ার লোক? তুই লিখবি শুধু লিখবি,একদিন সবাই আমাকে বলবে লেখকের বউ–অর্নিতা চৌধুরী। আমায় একটু আদর করতে ইচ্ছে হচ্ছেনা?লাজুক গলায় বলল অর্নিতা।
লজ্জায় রাঙা হয়ে অনিমান বলল,বিয়ের আগে?
অর্নিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। অনি তার অর্নি আপুর ক্ষেত্রে এত দ্বিধা,এই অদ্ভুত নীতিবোধ অর্নিতাকে বিস্মিত করে। আরেকবার উপলব্ধি করল তার ভুল হয়নি। অনির প্রতি আকর্ষণ আরো তীব্রতর হয়। অর্নিতা ওর মাথা টেনে নিয়ে ঠোঁটজোড়া মুখে নিয়ে নেই। অনিমান ঠোঁট ছাড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, অর্নি আপু এখন তোমার মনে কোনো কষ্ট নেইতো?
–আবার আপু?
–ভুল হয়ে গেছে অর্নি।
–দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আয়।
অনিমান খাট থেকে নেমে দরজা বন্ধ করে হাসতে হাসতে বলল,স্বামীকে কেউ তুই-তোকারি করে?অবশ্য এখনো আমাদের বিয়ে হয়নি।
–কে বলল বিয়ে হয়নি?তুমি বালা পরিয়ে দাওনি?সিলেট গিয়ে রেজিস্ট্রি করব।
–কেন সিলেট কেন?
–সব বলব কাছে এসে বোসো।
অনিমান খাটে গিয়ে বসতে অর্নিতা কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। অনিমান তর্জনী দিয়ে অর্নির কপালে নাকে গালে বোলাতে থাকে। অর্নিতা বলল,আমাকে এখান থেকে বদলি করে দিয়েছে সিলেট।
–আমি জানতাম এরকম কিছু হবে। শুনেছি রাকিব আঙ্কেলের নাকি মন্ত্রী-সান্ত্রী অনেকের সঙ্গে জানাশোনা। তুমি না থাকলে আমার যে কি হতো।
–আমি তো হেরে গেলাম অনি।
–এরকম বলে না সোনা। নাক টেনে দিয়ে বলল,এভাবে হারজিতের বিচার হয়না।
কি আছে অনির কথায় কে জানে কিন্তু শুনলে মনে এক উৎসাহ সৃষ্টি হয়। অর্নিতা বলল, তুমি আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।
–তুমি উপুড় হয়ে শোও।
অর্নিতা উপুড় হয়ে অনির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। তার ভালোবাসা দিয়ে সব মালিন্য ধুয়ে মুছে সাফ করে দেবে। অর্নিতা জিজ্ঞেস করল,আচ্ছা তোমার কি মনে হয়,রাকিবের কাছে আমি হেরে গেছি?
–উফস তুমি কিছুতেই ভুলতে পারছো না ওই ব্যক্তির কথা। তোমার প্রতিদ্বন্দ্বি হবার কি যোগ্যতা আছে ঐ খারাপ ব্যক্তির?
–খারাপ ব্যক্তি?
–তা নয়তো কি?অবস্থার সুযোগ নিয়ে আমাকে দিয়ে কত খারাপ কাজ করিয়ে নিয়েছে।
অনিমান মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে থাকে। অর্নিতা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা অনির স্পর্শ তাকে ভালোবাসার পরম তৃপ্তি দিচ্ছে। কতকাল ধরে যেন এমন ভালোবাসার অপেক্ষা করেছিল। কেউ তাকে নিজের মতো করে ভালোবাসা দিবে। আগলিয়ে রাখবে পরম মমতায়।

সহজে যা পাওয়া যায় মানুষ তা চায় না,যা পাওয়া যায় না তা পাওয়ার জন্য জিদ আরো তীব্রতর হয়। কিন্তু অর্নিতা তার মনের মানুষকে খুঁজে পেয়েছে। যে তার একান্ত আপন। সে কখনো একা রবে না যদি অনি তার পাশে থাকে। অনি তার শক্তি, আশা, ভালোবাসা, সাহস সবকিছু।

অর্নিতা দুহাতে জড়িয়ে ধরে অনিকে। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর অর্নিতা অনির বুকে ঘুমিয়ে পরলো। অনি বুঝতে পারে অর্নি বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়েছে। পাছে ঘুম ভেঙ্গে যায় তাই আলতো করে অর্নিকে পাশে নামিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে।সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমে ডুবে যায়। রাত তখন প্রায় শেষ হতে চলেছে। বাইরে শোনা যায় পাখির কলরব।
মোবাইলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। হাত বাড়িয়ে মোবাইল কানে দিয়ে উঠে বসল অর্নিতা।
পাশে ঘুমে অচৈতন্য অনি। অর্নিতা চাদর টেনে অনিকে ঢেকে দিয়ে খাট থেকে নেমে বলল,হ্যালো?
–কনগ্রাটস মিস অর্নিতা । ওপাশ থেকে পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এল।
–কে বলছেন?
–আন্না রাকিব হোসেন। কোথায় পোস্টিং হল?
অর্নিতার চোয়াল শক্ত হয়। শ্লেষের স্বরে বলল,আপনার অসীম ক্ষমতা,জানেন না কোথায় পোস্টিং হল?
–বাট ইউ ওন দা গোল্ড।
–মানে?
–আমার ছেলেকে গ্র্যাব করে নিলে।
অর্নিতা ঘুমন্ত অনির দিকে তাকালো। অর্নিতার মুখে হাসি ফোটে বলে,আপনার হাত অনেক লম্বা।
–হি-হি-হি বাট ইট কাণ্ট ডু এগেইন্সট গড’স উইল।অল দা বেস্ট।
–থ্যাঙ্ক ইউ। অর্নিতা তৃপ্তি বোধ করে।

বাথরুমে গিয়ে ওয়াশ করে চোখে মুখে জল দিয়ে জানকির খোঁজ করে। ঘরে উঁকি দিয়ে দেখল জানকি নেই। এত ভোরে গেল কোথায়?গেটের কাছে যেতে একজন কন্সটেবল এগিয়ে এসে বলল,স্যার কিছু বলবেন?
–কাজের মহিলা–।
–কিছুক্ষণ আগে চলে গেল। বলল দেশে যাচ্ছে।
জানকি চলে গেছে?যাবার কথা বলছিল কিন্তু আজই যাবে বলেনি তো? অর্নিতা রান্না ঘরে গিয়ে চায়ের জল চাপায়। আজ তাহলে হোটেল থেকে খাবার আনতে হবে। রাকিব বলছিল গডস উইল। হয়তো হবে না হলে এতদিন পর অনিকে কেন ফিরে পাবে? হোটেল থেকে খাবার নয় আজ স্বামীকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে। চা করে অনিকে ঘুম থেকে টেনে তুলে বলল,চা নেও।
অনিমান নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পায়, রাতে এখানেই ঘুমিয়ে পরেছিল। চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিয়ে বলল,বোসো।
–বসলে হবেনা। জানকি নেই রান্না করতে হবে।
–জানকি নেই মানে?
–দেশে চলে গেছে।
–তাহলে রান্না করবে কে?তুমি পারবে?
–তাহলে তুমি করো। অর্নিতা চলে গেল।

অনিমান লুঙ্গি পরে নিজের ঘরে গিয়ে অবাক। বাক্স হাট করে খোলা। হাতড়ে দেখল টাকা নেই। জানকি বলেছিল,সুন্দর কথা বললেই সুন্দর হয়না। ভিতরে অন্য মানুষ থাকে। অনিমানের মুখে হাসি ফোটে।অনৈতিকভাবে উপার্জিত টাকা গুলো নিয়ে অস্বস্তি ছিল একটা সদ্গতি হল। রান্না ঘরে গিয়ে বলল,অর্নি আপু জানো জানকি মনে হয় আমার টাকাগুলো নিয়ে গেছে।
অনিমানের মুখ দেখে মনে হয় বুঝি কোনো খুশীর খবর দিতে এসেছে। অর্নিতা বলল,আবার আপু?
–অর্নি বলতে গেলেই আপু এসে যায়, আমি কি ইচ্ছে করে বলি?
–ঠিক আছে। এরপরে যেন আপু না শুনি। তোমার মুখে অর্নি নাম শুনতে আমার ভালো লাগে।
অনিমান খুব আনন্দ পায় দু-হাতে অর্নিতার গাল চেপে বলতে থাকে অর্নি-অর্নি। অর্নিতা অবাক হয়ে ভাবে একেবারে ছেলেমানুষ। অথচ এক এক সময় কত গভীর চিন্তা থেকে কথা বলে। অর্নিতা জিজ্ঞেস করল,জানকি কত টাকা নিয়ে গেছে?ভেবেছে ওকে কেউ খুঁজে পাবেনা ?
— গেছে ভাল হয়েছে। অর্নি ঐ টাকায় পাপ লেগে ছিল। এই জীবনে পাপের স্পর্শ দিতে চাইনা।

–আচ্ছা অনি সত্যি করে বলতো কাল আমার ঘরে কেন শুয়েছিলে?
–তুমি বলেছিলে পাড়ায় নিয়ে যাবে।
–তোমাকে কি জিজ্ঞেস করলাম?
–বললে তুমি বিশ্বাস করবে না।
–বিশ্বাস না করার কি আছে?সত্যি করে বলবে,আমি কিছু মনে করবো না।
–আগে নজর ছিল অর্থ কিন্তু যেখানে অন্তরের টান থাকে তার স্বাদ আলাদা। এতদিন জানতাম না,কাল রাতে বুঝেছি আমি তোমাকে ভালবাসি।
অর্নিতা লজ্জা পায়। অনিমান বলল,জানো এইদিনে আমাদের ভাত হতনা,মা লুচি ভাজত–গরম গরম ফুলকো লুচি।
অর্নিতা অবাক হয়ে অনিকে দেখে জিজ্ঞেস করে,লুচি তোমার পছন্দ?
–ধ্যেৎ, একদিন একরকম রোজ এক জিনিস ভাল লাগে? অর্নি তোমাকে অত খাটতে হবেনা।
–যাও ঘরে গিয়ে বোসো। আমি টিফিন নিয়ে যাচ্ছি।
অনিমান চলে গেল। অর্নিতা ভাবতে থাকে কাকে নিয়ে কাটবে তার সারা জীবন। তার মনে আর নেই কোনো আফশোস। অনিকে পেয়ে অর্নিতা যেন নতুন উদ্দীপনা ফিরে পেল।
.
.
চলবে…!

[গল্পটি কেমন হয়েছে কমেন্ট বক্সে নিজের মতামত জানান।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here