জীবনের অন্যরঙ পর্ব-১৩

0
494

#জীবনের অন্যরঙ [১৩তম পর্ব]
#আজিজুর রহমান

অনন্তকাল এ-অনন্তলোকে
মন-ভোলানোরে তার খুঁজে ফিরে মন।
দক্ষিণা-বায় চায় ফুল-কোরকে ;
পাখি চায় শাখী, লতা-পাতা-ঘেরা বন।

খাবার টেবিলে বসে একটু আগে বলা অনির কথাগুলো নিয়ে মনে মনে নাড়াচাড়া করতে থাকে অর্নিতা। সামির আভিজাত্যের বেড়া ডিঙোতে পারেনি এর উল্টোটাও হতে পারত। শুভা অন্তরাল ছিন্ন করে বেরোতে পারেনি কিম্বা মানুষের অনেক ইচ্ছে আমরণ সুপ্তই থেকে যায় বাস্তবের মাটিতে অঙ্কুরিত হয়না। আসমানে মেঘের মত মানুষের জীবন,তার ইচ্ছায় ভাসতে ভাসতে চলা।মেঘ জমে বৃষ্টি হয় আবার সুর্য ওঠে।এই জীবনের পথ,একদিন শেষ হবে পথ চলা।
রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে।
যে যাবার তারে আটকায় সাধ্য কার?কবিগুরুর ‘যেতে নাহি দিব’ কবিতাটা মনে পড়ল। মনকে উদাস করে দেয় কথাটা। অনিমান আড়চোখে অর্নিকে দেখে আনমনাভাবে যখন হাত ভাজ করে মুখে খাবার তুলছে হাতের গুলি ফুলে উঠছে ছেলেদের মত। চোখাচুখি হতে অর্নিতা জিজ্ঞেস করল,অনি তোর রাতে রুটি খেতে অসুবিধে হয়?
–কিছু একটা খেতে পেলেই হল,আমার ওসব অভ্যাস হয়ে গেছে। কিছুক্ষন পর জিজ্ঞেস করল,অর্নি আপু তুমি মোবাইলটা বন্ধ করে রেখেছো,জরুরী ফোনও তো আসতে পারে। বিয়েতে যাইনি রাজুভাইও ফোন করতে পারে।
–খেয়ে ওঠ,জরুরী ফোন দেখাচ্ছি।

খাওয়া সেরে অনিমান ঘরে ঢুকে বিছানা ঠিক করে শোবার উদ্যোগ করছে,অর্নিতা ঢূকে ওর হাতে মোবাইল দিয়ে বলল,কথা বল।
অনিমান মোবাইল কানে দিয়ে হ্যালো বলতে ওপার হতে মেয়েলী কণ্ঠ ভেসে এল,অনি হিয়ার?
–হ্যা,আপ?
— এ্যাড্রি,ভেরি আর্জেন্ট প্লীজ টু-মরো–।

কান থেকে ফোন সরিয়ে দেখল অর্নি আপু তার দিকে হাসি-হাসি মুখে তাকিয়ে,লজ্জা পেয়ে অনিমান ফোন ফিরিয়ে দিল। অর্নিতা বলল,শুয়ে পড়। তোকে একটা অন্য সিম দেবো। তুই রাজুকে ফোন করে নতুন নম্বর জানিয়ে দিবি। গুড নাইট।

মনে পড়ল এমার কথা। খুব স্বার্থপর মহিলা টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে চলে গেল। একবার পিছন ফিরে দেখলও না। অবশ্য তার জন্য আজ অর্নি আপুকে পেয়েছে। পুলিশ ধরে হাজতে ভরেছিল বলেই অর্নি আপুর সঙ্গে দেখা।

রিলিফ অফিস থমথম করছে। মনিটরে চোখ রেখে আঙ্কেল ওরফে রাকিব হোসেন বসে দেখছেন মিথিলা ক্লায়েন্ট কনসোলিং করছে। ফোন বাজতে ধরে বললেন, হে বল–।
–স্যার কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করছি কিন্তু সুইচ অফ।
–তোর জন্য দুইচ অন করে রাখবে?রাবিশ।
–ডেরাতে নেই,নজরদারি চলছে–। নিলয় সরকার বলল।
–একটা মানুষ ভ্যানিশ হয়ে গেল?খবর না থাকলে ফোন করবে না। বিরক্ত নিয়ে রাকিব হোসেন ফোন কেটে দিলেন। ল্যাণ্ড লাইন বেজে উঠল,বলছি….শুনুন মিসেস আরুতি, ওভাবে হয়না কে কনসোলিং করবে অফিস ঠিক করবে….অনিমান বিজি আছে অন্যকাজে…ফোনে নয় অফিসে এসে কথা বলবেন…গুড নাইট।

রাকিব “ডিসগাস্টিং মহিলা” বলে গজগজ করতে করতে খাস কামরায় ফিরে মনিটরে চোখ রাখলেন।একটা ছেলে অফিসের নীচে ঘুরঘুর করছিল সিকদার বলল,তাকে এ্যারেস্ট করেছে। ছেলেটি মুসলিম বলেই সন্দেহ হয়েছিল। পুজোর মুখে আরো সতর্ক হতে হবে।

সকাল হতে ঠেলা গাড়ীতে আরেক ঠেলা বাঁশ এল।প্যাণ্ডাল বাধা শুরু হয়ে গেছে। এবারে অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছে মেয়েরা। বেলা ভাবি সম্পাদক হয়েছে।শুভ একটা বেসরকারী ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েছে। ব্যাঙ্ক যাতায়াতে অনেক সময় লেগে যায়। বেসরকারী ব্যাঙ্ক বলে ইতস্তত করলেও শেষ পর্যন্ত রুবিনা আণ্টি বিয়েতে সম্মতি দিয়েছে। কয়েকদিন ঠিক পরেই নভেম্বরে বিয়ে ঠীক। বিয়ে ঠিক হবার পর রোজির সঙ্গে ফোনে যা একটু কথা হয় কিন্তু চাক্ষুষ দেখা হয়না। অনিমানদের ফ্লাট সম্পুর্ণ হয়নি তারই মধ্যে দোতলার একটা ফ্লাট তাগাদা দিয়ে বাসযোগ্য করে রবি কাকু সপরিবারে ঢূকে পড়েছে। আল্পনা ভাবিও মেয়েদের সঙ্গে চাঁদা তুলতে বের হয়। একরকম নিরুদ্দেশ হলেও এখনো মাঝে মাঝে অনিকে নিয়ে আলোচনা হয়,তখন অস্বস্তি বোধ করে আল্পনা ভাবি।মুন্নী ভাবি একদিন জিজ্ঞেস করেছিল,ওর কাকা খোঁজখবর নিয়েছে কিনা?
–কোথায় খোঁজ নেবে, কাকার সঙ্গে কোনোদিন যোগাযোগ রাখতো?তা ছাড়া তার নিজের সংসার আছে,কোনদিক দেখবে বলুন?অনির আক্কেল দেখুন,আরে কাকা কি তোর শত্রূ?

নয়নকে স্কুল বাসে তুলে দিতে বেরিয়ে গেল উষা।বিয়ের পর এই দায়িত্ব নিজে যেচে নিয়েছে। উষার ইচ্ছে চাকরি করার,রাজু আপত্তি করেনি। কোনো স্কুলে যদি চাকরি হয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

অর্নিতা খবর পেয়েছে তার একজন খবরি গ্রেপ্তার হয়েছে। ছিচকে পকেটমার এলাকার খবরাখবর দিত।রিলিফ অফিসের উপর নজর রাখতে বলেছিল। কদিন পর পুজো শুরু হতে চলেছে, তার আগেই সবুজ প্রকাশিত হবে। পুজো সংখ্যায় অনির উপন্যাস থাকবে আগেই জানিয়েছিল বাদল সাহেব। বিজ্ঞাপন যোগাড় করে দিয়েছে অর্নিতা। অনি নিয়মিত লিখছে,অর্নিতা বাস্কেটে ফেলে দেওয়া বাতিল কাগজগুলো কুড়িয়ে পড়ে অনি জানেনা। একদিন একটা লেখায় নজর আটকে যায়।”স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছিল তখন এক জলপরী টেনে তুলে তাকে নব জীবন দেয়।” জলপরী কে,কার কথা বলছে তার কথা কি?সময় পেলে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করবে ভেবে রেখেছে। ঘর থেকে কাজে বেরিয়ে গেল অর্নিতা।
অনিমান ঘরে বসে লিখছে। জানকি খালা ঢুকে জিজ্ঞেস করল, সাহেব চা দেবো?

অর্নি আপুর সঙ্গে একটু আগে চা খেয়েছে,তাহলে এখনই আবার চায়ের কথা বলছে কেন?মনে হয় মাসী তার সঙ্গে গল্প করতে চায়। অনি লেখা থেকে মুখ তুলে হেসে বলল,দাও। জানকি চা নিয়ে এসে টেবিলে রেখে মেঝেতে বসে পড়ল।
অনিমান চায়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করল,খালা কিছু বলবে?
জানকি ইতস্তত করে আঁচলের গিট খুলে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল,একটু পড়ে দেবেন?
অনিমান দেখল ইংরেজিতে লেখা একটা চিঠি। অনেক ভুল থাকলেও বুঝতে অসুবিধে হয়না। নীচে স্বাক্ষর সুভ্রা । অনিমান জিজ্ঞেস করল,সুভ্রা কে?
–আমার মেয়ে।
–তোমার মেয়ে কতদুর লেখাপড়া করেছে?
–বেশি না,এটা জামাই লিখে দিয়েছে। জানকি বলল।
ছোটো কয়েক লাইনের চিঠি,অনিমান পড়ে বলল,খালা ভাল খবর। তোমার মেয়ে মা হতে চলেছে,তোমাকে যেতে লিখেছে,সবাই ভাল আছে।
জানকি চুপ করে কোন ভাবনায় ডুবে যায়। অনিমান ভাবে খালার কি মন খারাপ হয়ে গেল? –তুমি খুশি হওনি?
–খুশি হবনা কেন,ম্যাডামরে বলি ছুটি নিতে হবে,যাতায়াতের খরচ তাছাড়া তো খালি হাতে যাওয়া যায়না। আপনি বসেন আমি আসিছি।
জানকি খালা চলে যাবার পর অনিমান লিখতে বসে কিন্তু লেখা এগোয় না। মনটা পুরানো দিনে ঘোরাফেরা করে। কত মুখ মনে পড়ে,পাড়ায় এখন পুজোর ব্যস্ততা। কল্পনায় দেখতে পায় দল বেধে চাদা তুলতে বেরোচ্ছে সবাই। চ্যারিটিকে কেন্দ্র করে পাড়া আরো সংগঠিত। কেউ কি তার কথা ভাবছে?নাকি আর পাচটা ঘটনার মত হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির অন্ধকারে। বিয়ের পর রাজু ভাই কি আগের মত সময় দেয়? ফ্লাট অনেকটা হয়েছিল দেখে এসেছে এখন কি অবস্থা কে জানে। সরদার পাড়ায় সে থাকেনা বাবুয়া এতদিনে নিশ্চয় জেনে গেছে। কাকাও জানবে,খোঁজাখুঁজি করছেনা তো?কাকা বরাবর এমন ছিল না,এখন রাতারাতি কেমন বদলে গেছে। অর্নি আপুর সঙ্গে দেখা না হলে এতদিনে কোন অন্ধকারে তলিয়ে যেত ভেবে শিউরে ওঠে। নতুন জীবনের আস্বাদ পেয়েছে কিন্তু ভয় হয় কতদিন স্থায়ী হবে?এবারের শারদীয়ায় তার লেখা বেরোবে,মিতা বা শুভ্রতার হাতে পড়তেও পারে। বেলা ভাবির ম্যাগাজিন কেনার অভ্যাস আছে,তার নাম দেখে ভাববে একী সেই অনিমান?ম্লান হাসি ফোটে মুখে। অর্নি আপুর আসার সময় হয়ে এসেছে,এখন আবার জানকি কোথায় গেল?
মনে হল জানকি এল। একটা প্লেটে দুটো রসগোল্লা সাজিয়ে জানকি এসে বলল, সাহেব মিষ্টিমুখ করেন।
–এসব আনতে গেলে কেন?
–এতবড় একটা খবর দেলেন। জানকির শরীর থেকে যেন উচ্ছ্বাস চুইয়ে পড়ছে।

পাড়ার হিন্দুদের ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বলছে চন্দন ধুপের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। একে একে লোকজন আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন খবর রাকিব হোসেনের মনকে আলোড়িত করলেও বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায়না। শান্ত সমাহিত স্মিত হাসিতে ভরা মুখ।অফিসের দায়িত্বে রাগিনী। কিছু কিছু খবর তার কানে এসেছে।

রাকিব হেসেন সবার কাউন্সিলিং দেখে চলছেন মনিটরে। রাকিব হোসেন চমকে ওঠেন,এরা কারা,এতজন কিভাবে ঢুকল ঘরে?এরা তো অফিসের কেউ বলে মনে হচ্ছেনা।
অফিসে পুলিশ ঢুকেছে ছড়িয়ে পড়ে খবর। সুইচ টিপে মনিটর বন্ধ করে রাকিব হোসেন মুহূর্তে কোথায় অদৃশ্য হলেন,কারো জানার উপায় নেই। সারা অফিসে হৈচৈ ছোটাছুটি শুরু হয়ে গেল।

জানকির এই একটিমাত্র সন্তান, মেয়ের বিয়ে দিয়ে গেছেন। কত বছর বয়সে মেয়ের বিয়ে হয়েছে?সুভ্রাকে দেখেনি অনিমান। জানতে ইচ্ছে হয় যখন বিয়ে হয় তার মনে কি বিয়ের বাসনা জেগেছিল নাকি বাপ-মায়ের বাধ্য সন্তান হিসেবে তাদের ইচ্ছে মেনে নিয়ে সম্মত হয়েছে?একটা মেয়ের মনে বিয়ের ইচ্ছে জন্মে কত বছর বয়সে?অর্নি আপুকে দেখে তো মনে হয়না তার মধ্যে বিয়ের জন্য ব্যাকুলতা আছে।সারাক্ষণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চিন্তা।সামাজিক অবস্থান ভেদে বিয়ের ইচ্ছের বয়সের তারতম্য হয় কি?অনিমান জিজ্ঞেস করল,খালা তোমার মেয়ের বয়স কত হবে?
–এককুড়ি পার হয়ে গেছে কবে।
–এত অল্প বয়সে–।

অনিমানের উদবেগ দেখে খিলখিল করে হেসে উঠল খালা। হাসি থামিয়ে বলল,আপনে বুঝবেন না। বাচ্চা হলে যে কি সুখ মেয়ে হলে বুঝতেন।
নতুন কথা শেখা হল। সন্তান জন্ম দিয়ে মেয়েরা সুখ পায়। মনে হয় ম্যাডাম এল। জানকি চলে গেল।

অর্নিতা ঢুকল বেশ খুশি খুশি ভাব। হাতে একটা বই।ঘরে ঢুকে হাতের বইটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে চেঞ্জ করল। জানকি এক গেলাস সরবৎ নিয়ে উপস্থিত।অর্নিতা হাত বাড়িয়ে গেলাসটা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,সাহেব কি করছে?
–লিখতেছে। জানকি বানিয়ে বলল।
–ওকে পাঠিয়ে দাও।

অর্নিতা পোশাক চেঞ্জ করে নিল। অনিমান দরজায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,অর্নি আপু ডাকছো?খাটের উপর সবুজ পত্রিকাটা পড়ে থাকতে দেখে বলল,ছেপেছে?
–ছাপবেনা মানে?ছাপা হয়েছে ছাপ্পা মারা হয়েছে।অর্নিতার গলায় আত্মবিশ্বাস।

অনিমান বুঝতে পারেনা অর্নি আপুর কথা। মোবাইল বাজতে টেবিল থেকে ফোন তুলে কানে লাগায়। অর্নিতার চোখে মুখে বিরক্তি ফুটে ওঠে….এর মধ্যে আদালতে জামীন হয়ে গেল?…..ঠিক আছে ঠিক আছে সিসিটিভির ফুটেজ আছে অসুবিধে হবেনা. ..নানা আপনি কি করবেন…রাখছি?
অর্নিতার মুখ থমথমে অনিমান জিজ্ঞেস করল,কি হয়েছে?

অর্নি আপু মুখে হাসি টেনে যা বলল,আজ দুপুরে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে রিফিল অফিস থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। রাকিব হোসেনকে খুঁজে পায়নি। একটু আগে সবাই জামীনে মুক্ত হয়ে গেল।
অনিমান শুনে কোন কথা বলল না। অর্নিতা বলল,তোর মন খারাপ মনে হচ্ছে।
–আমার মন খারাপ হবার কি আছে?তুমি যা ভাল বুঝেছো করেছো।
অনির কথায় অর্নিতা বিরক্ত হয়। গলা চড়িয়ে বলল,জানকি খানা লাগাও।

হাসিখুশি অর্নি আপুকে গম্ভীর দেখতে ভাল লাগেনা। অনিমানের খারাপ লাগে। অর্নি আপু যা করেছে জীবনেও সে ঋণ শোধ করতে পারবেনা। খেতে বসে জিজ্ঞেস করল,অর্নি আপু তুমি আমার উপর রাগ করেছো?
–তুই কে?তোর উপর আমি কেন রাগ করব?
–কেউ না?তাহলে তুমি আমার জন্য এত করছো কেন?
–বাজে কথা থাক। খাওয়া হলে লেখাটা পড়। কোনো বদল করতে হলে করবি। বাদল ভাই বলল, ব্রাদাস এ্যাণ্ড ফ্রেন্ডস পাব্লিশার্স লেখাটা বই হিসেবে প্রকাশ করতে চায়। ওরা আসবে টাকা পয়সার কথা যা বলার বলে ঠিক করে নিবি।
–আমি কি বলব,তুমি যা বলার বলবে।
–তোর ব্যাপার তুই যা ভাল বুঝবি বলবি।
অনিমান মনে মনে হাসে,অর্নি আপু তার কথা তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এখন না মেজাজ শান্ত হোক পরে কথা বলা যাবে। অর্নিতা খেয়ে উঠে পড়ল। ঘরে এসে ভাবছে নিলয়ের কাছে সিসি টিভির ফুটেজ রয়েছে নষ্ট করে ফেললে তার হাতে কিছু থাকবেনা। রাকিব হোসেন বেশ প্রভাবশালী তাতে কোনো সন্দেহ নেই।তার কাছে খবর ছিল রাকিব অফিসেতে আছে কিন্তু কোথায় গা-ঢাকা দিল?তন্ন তন্ন খুঁজেও পাওয়া গেলনা। কোনো চোর কুঠরি আছে হয়তো। হতে পারে মহিলা হয়তো মুখোসের পিছনে আছে আসল মুখ।
–অর্নি আপু আসব?অর্নিতা তাকিয়ে দেখল দরজায় অনি দাঁড়িয়ে।
অনিমান ঘরে ঢুকে বলল,একটু বসবো?

–তোকে বললাম না,অদল বদল কিছু করার থাকলে কর। কয়েকদিনের মধ্যেই ওরা আসবে।
–আমি একটা অন্য কথা বলতে এসেছি।
অর্নিতা পা তুলে খাটে আসন করে বসে বলল,বল কি বলবি?
অনিমান খাটে মুখোমুখি বসে শুরু করল,আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত যা ঘটছে সবই হয়তো আমাদের মনোপুত নয়। না ঘটলেই বুঝি ভাল হতো।
–তুই কি আজকের ব্যাপারে বলছিস?
–বিশ্বাস করো অর্নি আপু তোমার পরাজয় দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়।
–জয়-পরাজয়ের কথা আসছে কেন?
–অফিসেতে কি হয় তুমি কি ভাবছো কেউ জানেনা?
–আমি মনে করি অফিস একটা অবৈধ কারখানা।
–আমি কি অন্যকথা বলেছি?
–তোর খুব দরদ দেখছি। রেইড করেছি সামাজিক স্বার্থে।
–তাতে বন্ধ হয়ে যাবে তুমি মনে করো?
–বন্ধ হল কি থাকল তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। আমার ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই,অন্যায় বুঝেছি করেছি।
–তোমার স্বার্থ আছে।
–কি বললি?আমার স্বার্থ আছে?সেদিন তোকে রাগাবার জন্য বলেছিলাম,আমি অফিসেতে যাবো–।
–আজ তুমিই রেগে যাচ্ছো।
–অনি এবার কিন্তু ঠাষ করে একটা চড় মারব।
অনিমান হেসে বলল,তা তুমি পারো। আমাকে শেষ করতে দাও। অফিসের শেকড় অনেক গভীরে তা তুমি আমার থেকে ভাল জানো। দুই-একজনকে গ্রেপ্তার করে কিছুই করতে পারবে না তাও তুমি জানো না তা নয়। তাহলে তুমি কেন করছো?নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার অদম্য আকাঙ্খ্যা তোমার মনে। কড়া অফিসার সৎ অফিসার শুনতে তোমার ভাল লাগে। কাম্য কর্ম নিষ্কাম কর্ম অপেক্ষা নিতান্ত নিকৃষ্ট। অতএব কামনাশূণ্য হয়ে সমত্ব বুদ্ধির আশ্রয় গ্রহণ কর।ফলাকাঙ্খী হয়ে যারা কাজ করে তারা অতি হীন।
অর্নিতা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে অনিমানের দিকে।এক সময়ে হেসে ফেলে বলল,অনি কি বই বললি, বইটা আমাকে দিস তো–পড়বো।
–অর্নি আপু এইজন্য তোমাকে আমার খুব ভাল লাগে। জানার ইচ্ছে জীবনের লক্ষণ। যে মুহূর্তে এই ইচ্ছে লুপ্ত হয় মানুষ তখন বেঁচে থেকেও মৃত।

–তোকে আজ বড় কোনো সাধু মনে হচ্ছে।
–যার যা মনে হয় আমি তাই।
–আমার মনে হয় তুই দিন দিন পাগল হচ্ছিস। একটু বিশ্রাম নিস।
–জ্বি, এইটা তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
–ব্যক্তিগত মানে?
–শোনো একটা গল্প বলি,এক সাধুমহারাজ বলছিল।এক যুবতী হরিণী বনে ঘুরতে ছিল। হরিণী মানে মেয়ে হরিণ।
–হ্যা-হ্যা বুঝছি। আমারে অত বুকা ভাবিস না।
–তারে দেখে এক হরিণের মনে প্রেমের উদয় হল।ঝোপের মধ্যে ছিল বাঘ ,তার চোখ হিংসায় জ্বলে উঠল। আঃ কি সুন্দর গোস্ত ! আমাদের দেখাটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। একই জিনিস এক-একজন এক-এক রকম দেখে।
–তুই ভালো কথা বলতে পারিস । আমি এতসব বুঝি তোর মতো। অর্নিতা গম্ভীর হয়ে যায়।
অনিমান বলে, তুমি জ্ঞানী। জ্ঞানী মানুষরা বলে, বলার কিছু নাই। অনেক কিছু দেখার আছে শোনার আছে।

অর্নিতার মনের সমস্ত গ্লানি যেন স্বেদবিন্দুর মত শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে থাকে। অনিমান খাট থেকে ম্যাগাজিনটা তুলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।

অর্নিতা অন্য মনস্কভাবে চিন্তা করে। ভাল কাজ করার অন্তরালে কি রয়েছে তার আত্মপ্রতিষ্ঠার উদগ্র আকাঙ্খ্যা?আপন মনে হাসল।

বেলা পড়ে এসেছে একবার বেরোতে হবে। অর্নিতা মনে মনে ভাবে অনি বছর চার-পাঁচ ছোট হবে বয়সে কিন্তু কথা বলে বিজ্ঞের মত। ওর সঙ্গে কথা বলে মনটা বেশ হালকা মনে হয়। অনির কথাটা মিথ্যে নয়,সত্যি হয়তো খ্যাতির জন্য একটু বেশি লালায়িত হয়ে পড়েছিল। আমিই ভাল আর সবাই খারাপ এই চিন্তাকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক নয়। অনির হাসি-হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে অনুভব করে বিশাল এই পৃথিবী, তুলনায় মানুষ অতি ক্ষুদ্রজীব। অনিকে এখন বাইরে বেরোতে দেওয়া যাবে না। জানকি চা নিয়ে ঢুকল। অর্নিতা জিজ্ঞেস করে,সাহেব কি করছে?
–বই পড়তেছে। ডাকবো?
কি ভেবে বলল,না থাক। ফিরে এসে টিফিন করব।
অবস্থাটা সামলে নিতে হবে,এরা অত্যন্ত প্রভাবশালী সহজে ওকে ছেড়ে দেবে মনে হয়না। অর্নিতা বেরিয়ে গেল। জানকি চা নিয়ে অনিমানের ঘরে যেতে জিজ্ঞেস করে,ম্যাডাম বেরিয়ে গেল?কখন আসবে কিছু বলেছে?
–বলল ফিরে এসে টিফিন করবে।
অনিমান বই থেকে মুখ তুলে হেসে বলল,তোমার ম্যাডাম কেমন মানুষ?
–মানুষ খারাপ না। তবে এক জায়গায় সুস্থির বসে থাকতে পারেনা। সবাই যদি আপনেরে যমের মত ভয় পায় আপনের ভাল লাগবে?

অনিমান অবাক হয়ে জানকিকে দেখে। লেখাপড়া জানেনা একজন সাধারন বিধবা কত সুন্দর একটা কথা বলল নিজেই জানেনা। অনিমান বলল,খালা তুমি সুন্দর কথা বলো।
–সুন্দর কথা বললি সে সুন্দর হয়না।
–মানে?
–সুন্দর মুখ সুন্দর কথা সব বাইরে ভিতরে যে কে ঘাপটি মেরে বসে আছে যতক্ষণ না বেরোচ্ছে বুঝবার উপায় নাই।
অনিমানের মনে হয় খালা কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতা থেকে কথাটা বলল। অনিমান জানকিকে তাতিয়ে দেবার জন্য বলল,তোমার কথা শুনতে ভাল লাগে।
জানকি উৎসাহিত হয়ে বলল,এইযে আমারে দেখে আপনের কেমন মনে হয়?
–ভাল মানুষ।
–আমিও প্রেত্থম তাই ভেবেছিলাম। জানকি হাসল।
জানকি কি যেন ভাবছে লক্ষ্য করে অনিমান। সম্ভবত মনের দ্বিধা কাটিয়ে বলল,কদিন পর মেয়ের কাছে যাবো,আবার দেখা হবে কিনা জানিনা।
–দেখা হবেনা কেন?
–সব কি আমার উপর নিবভর করে,উপরওয়ালার ইচ্ছে। বুকের মধ্যে চাপা একটা কথা আজ পর্যন্ত কাউরে বলিনি। আপনেরে বলে ময়লাটা বের করে দিতে চাই।
অনিমান বইটা পাশে সরিয়ে রাখে। জানকি কিছু ইঙ্গিতে কিছু শব্দে তার কাহিনী বলতে শুরু করল।সুভ্রার বাবা মারা যাবার পর চোখের সামনে অন্ধকার নেমে এল। সেই সময় একজন মানুষ ফেরেশতার মত পাশে এসে দাড়িয়েছিল। আর ঐ লোকটিই আমাকে শেষ করে দিতে চাইলো। আজকে আমি এখানে এসে বেঁচে গেলাম।

জানকির কাহিনী ধীরে ধীরে অনিমানের মাথায় ঢোকে। সেই লোকটি এবং জানকি–দুজনের ভিতরের মানুষ সুযোগ পেয়ে বেরিয়ে এসেছিল। অনিমান জিজ্ঞেস করল,কবে যাবে?
–অষ্টমী পার করে যাব ইচ্ছে আছে। এখন টীকিট পেলি হয়।
–ম্যাডাম জানে?
–আভাস দিয়েছি, টিকিট পেলি বলব। যাই টিফিন করিগে ম্যাডামের আসার সময় হয়ে গেল। কিছুটা গিয়ে ফিরে এসে সাবধান করে গেল,আপনে এসব ম্যাডামরে বুলবেন না।

অনিমানের অভিজ্ঞতা হয়েছে। বাইরে থেকে আমাদের সামান্য ভগ্নাংশ চোখে পড়ে। অনিমানের মাথায় নানা ভাবনা খেলা করে। নতুন লেখা শুরু করতে পারছেনা,অর্নি আপু বলে গেছে উপন্যাসটা পড়ে দেখতে। প্রয়োজনে যদি কিছু অদল বদল করতে হয়।

কেসের দিন পড়েছে ৯ তারিখ,ঐদিন সারা পাড়ায় মহাসপ্তমী উৎসব। তারপর পুজোর ছুটি পড়ে যাবে আদালত বন্ধ। নিলয় লোকটা মিনমিনে শয়তান। সাকিলই বা শয়তান কম কি?একটা অফিসারও তার সঙ্গে নেই। যারা অসৎ ঘুষখোর তারাই সমাজে সংখ্যা গরিষ্ঠ,এইকথা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় অর্নিতা।বাসায় ফেরার পথে নজরে পড়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা নতুন জামা কাপড় পরে ফূর্তিতে মেতে আছে। পবিত্র শিশু মনকে সমাজের কলুষ স্পর্শ করতে পারেনা। জীপ থামিয়ে একটা মণ্ডপে গিয়ে একটি বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর করে। পুলিশী ধড়াচূড়া দেখে শিশুটী অস্বস্তি বোধ করে। অবোধ শিশু বুঝতে পারেনা উর্দির আড়ালে প্রচ্ছন্ন এক মাতৃহৃদয়ের আকুলতা। উদয় রাজপাল পাশে দাঁড়িয়ে স্যারের কাজ দেখে মুচকি হাসছে। অর্নিতা দূরে দাঁড়ানো বেলুনওলাকে ডেকে মণ্ডপের সব বাচ্চাকে একটি করে বেলুন দিতে বলল। বেলুনের দাম মিটিয়ে জীপে উঠে বসল। জীপ স্টার্ট করতে মনে হল মোবাইল বাজছে। রাস্তার পাশে জীপ দাড় করিয়ে মোবাইল কানে দিয়ে বলল, হ্যালো?

বলল, হ্যালো?
–অনিমান?আমি চিত্রা বলছি।
মহিলা সম্ভবত তার গলার আওয়াজ বুঝতে পারেনি।অর্নিতা জিজ্ঞেস করে,এই নম্বর আপনি কোথায় পেলেন?
–এটা অনিমানের নম্বর নয়?স্যরি–।
–অনিমানের নম্বর কিন্তু আপনি কোথায় পেলেন?
ওপারের মহিলা সম্ভবত ঘাবড়ে গিয়ে থাকবেন বললেন,না মানে উনি আমাকে একসময় পড়াতেন–।
–আপনি নম্বরটা কোথায় পেলেন বলেন নি।
–সবুজ পত্রিকা দপ্তর থেকে আমাকে এই নম্বর দিয়েছে। তাহলে হয়তো ভুল হয়েছে–।
–না ভুল হয়নি। শুনুন আপনি ওর সঙ্গে কথা বলতে হলে এই নম্বরে আধ ঘণ্টা পরে ফোন করুন।
–আচ্ছা ঠিক আছে।ধন্যবাদ।
ব্যাপারটা জলের মত পরিষ্কার হয়,প্রথমে ভেবেছিল অনির কোনো ক্লায়েণ্ট। পরে বুঝতে পারে এটা তার নম্বর পত্রিকা দপ্তরে দিয়েছিল, ক্লায়েণ্ট জানবে কি করে? অনি মেয়েটিকে একসময় পড়াতো ভেবে মনে মনে হাসে অর্নিতা। অনেক ঘাটের জল খেতে খেতে অনি শেষে এই ডোবায় এসে পড়েছিল।

ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। এখন হাওয়ায় ভাসছে,দুর্গা পুজো বাঙালীদের বড় উৎসব। একসময় সেও দরজায় দরজায় ঘুরে চাদা তুলেছে। বিসর্জনের মিছিলে সামিল হয়ে নেচেছে। মেয়েরা তখন নাচতো না সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতো। বাবার জিদে পাড়া ছাড়তে হল। সব ধর্মের মানুষরা একসাথে বাস করতো। কিন্তু সেও জিদ করে আইপিএস পরীক্ষায় বসেছে। নিয়োগ পত্র পেয়ে যখন ঢাকায় ট্রেনিং নিচ্ছে খবর পেল বাবা মারা গেছে। রাতের ট্রেনে চলে আসলো,শেষ দাফন সেরে আবার ঢাকায়।অতীতের কথা ভেবে মনটা উদাস হয়। আম্মী বিয়ের কথা বলেছিল অর্নিতা বলেছিল চাকরি হলে ভাববে।সেসব দিন কোথায় হারিয়ে গেছে। অনির সঙ্গে আবার দেখা হবে কখনো ভাবেনি। বাংলোর সামনে গাড়ী থামিয়ে নেমে পড়ল অর্নিতা।
–আপনি পুজোয় দেশে যান না?
–ছুটিতে পুজাতে যাই। উদয় রাজপাল বলল।
–আমার সঙ্গে থেকে আপনার খাটনি বেড়ে গেছে।
–না স্যার এখন দেখছি আপনি জলদি বাসায় আসছেন। উদয় রাজপাল হেসে বলল।

উদয়ের কথায় অর্নিতার খেয়াল হয় ঠিকই ইদানীং একটু তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরে আসছে।
ঘরে ঢূকে চেঞ্জ করল। অফিসের কেস নিয়ে এখন আর মাথা ব্যথা নেই। অনি ঠিক বলেছে সে একলা কি করতে পারে?অঞ্চলের লোকেরা একটা ম্যাস পিটিশন করতে পারতো। অন্যায়কে প্রশয় দেওয়া, অন্যায়কে সহ্য করা সব দোষ একার নয়। তাতে সবার দোষ রয়েছে। সবাই যদি তাদের বিরুদ্ধে হতো তাহলে এসব অবৈধ কাজ কখনোই হতো না।
জানকি জিজ্ঞেস করে,ম্যাডাম টিফিন দিই?
–সাহেব কই?
–সাহেব সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকে।
–ওকে এখানে পাঠিয়ে টিফিন দিয়ে যাও।
অনিমান ম্যাগাজিন নিয়ে ঢুকল। অর্নিতা ওকে দেখে জিজ্ঞেস করল,তোর পুজো দেখতে ইচ্ছে করেনা?
–তুমি তো বেরোতে মানা করেছো।
–ঠিক আছে অষ্টমীর দিন তোকে নিয়ে তোর পাড়ায় যাবো।
— সত্যিই? অর্নি আপু তোমাকে দেখলে সবাই অবাক হয়ে যাবে। অনিমান উচ্ছ্বসিত ভাবে বলল।
জানকি টিফিন দিয়ে গেল। দুজনে টিফিন খেতে লাগল। অনিমান বলল,কতদিন আগে লিখেছি এখন পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছে যেন সব নতুন।
–কোনো চেঞ্জ করার থাকলে–।
–কোনো চেঞ্জ করার দরকার নেই। চেঞ্জ করতে গেলে সবটাই বদলাতে ইচ্ছে হবে। তার চেয়ে নতুন উপন্যাস শুরু করব ভাবছি।
–নব জীবন কেমন নাম হয়?
–ঐ রকম কিছু ভাবছি। অনিমানের খটকা লাগে অর্নি আপু নব জীবন কেন বলল?জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা তুমি নব জীবন কেন বললে?
মোবাইল বেজে উঠতে স্পীকার অন করে অনিকে দিয়ে বলল,কথা বল।
–হ্যালো কে বলছেন?
–অনিমান চৌধুরী?
–হ্যা বলুন।
–আমাকে চিনতে পারছোনা? আমি চিত্রা।
অনিমান তাকিয়ে দেখল অর্নি আপু মুচকি হাসছে।
–ওহ তুমি? চিত্রা তুমি এখন কি করো?
— ইংলিশ অনার্স নিয়ে পড়ছি। তোমার লেখাটা আমি বার কয়েক পড়েছি।
–কেমন লাগলো?
–বলতে পারব না কিন্তু পুরানো কথাগুলো ভীষণভাবে মনে পড়ছিল। আচ্ছা তুমি কি বানিয়ে বানিয়ে লিখেছো?
–এই পৃথিবীর মাটি নিয়ে তাকে মূর্তিরূপ দিয়েছি।
–দারুণ বলেছো। আমারও তাই মনে হয়েছে বাস্তবের বাগানে ফুটে থাকা ফুল নিয়ে তুমি মালা গেঁথেছো।
–তুমিও দারুণ বলেছো।
–হি-হি-হি তোমার কাছে শেখা।
–তোমার মা আণ্টি সব ভালো আছেন?
–সবাই ভাল আছে। অনি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
–তোমার যা ইচ্ছে জিজ্ঞেস করতে পারো।
–চিত্রাকে তুমি ভুলে যাওনি তো?
–তোমার কাছে যেটুকু পেয়েছি সযত্নে রেখে দিয়েছি।
–আচ্ছা এমন কোন কথা কি আছে যা আমাকে বলতে চেয়েছো কিন্তু বলতে পারনি?
–অবশ্যই আছে। সব সময় সব কথা কি বলে ওঠা যায়?
–কি কথা? নিঃসঙ্কোচে বলতে পারো।
–সেসব হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির অন্ধকারে।
ওপাশ থেকে সাড়া পাওয়া যায়না। অনিমান বলল,কি হল চিত্রা?
–কিছুনা। পরে তোমায় ফোন করতে পারি?
–খুব আনন্দ পাবো।
অনিমান ফোন ফিরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,অর্নি আপু তুমি স্পীকার অন করেছিলে কেন?তুমি ভেবেছো সেইসব–তাই না?
অর্নিতা বলল,না। এটা আমার নম্বর,সেইসব এখানে আসবে না। একটু আগে এই মেয়েটী ফোন করেছিল,কেন যেন কৌতুহল হল। তুই রাগ করেছিস?
–অর্নি আপু আমি চেষ্টা করেছি তবু তোমার উপর রাগ করতে পারিনা কেন বলতো?
–চেষ্টা করে যা একদিন না একদিন পারবি। অর্নিতা হাসতে হাসতে বলল।
অর্নিতা গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করল,চিত্রাকে তুই ভালবাসিস?
–অর্নি আপু তুমি না–সব সময় ইয়ার্কি ভাল লাগেনা।

মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ছাড়া অন্য কিছু খোঁজাখুঁজি করে সময়ব্যয় এবং শক্তি ক্ষয় করার ইচ্ছা নাই অনিমানের। অর্নিতা তার জীবনে আলো হয়ে এসেছে। অন্ধকারে তলিয়ে যেতে শুরু করেছিল। তবে একটি আলোর হাত তাকে আকড়ে ধরে বের করেছে।

হঠাৎ করে অর্নিতা জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা অনি একটা সত্যি কথা বলবি?
–অর্নি আপু আমার দোষ বানিয়ে কথা বলতে পারিনা।
–আমাকে কি খুব রাগী মনে হয়?
অনিমান চুপ হয়ে যায়।
–যা সত্যি তুই বল,আমি তোর কথায় কিছু মনে করবো না।
–অর্নি আপু তোমারে আমার মোটেই রাগী মনে হয়না।
–তাহলে সবাই আমাকে ভয় পায় কেন?
–সেইটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। গরীবের মুখে মানায় না তাই একটা কথা বলছি না।
–তুই বল,তোর কথা আমার ভাল লাগছে।
— যার খাওন জোটে না সে কখনো রাগ করে বলেনা “ভাত খাবোনা।”যে জানে না-খাইলে সবাই তারে সাধাসাধি করবে সেই রাগ করে বলে,”ভাত খাবো না। “আপনের রাগের গুরুত্ব আছে তাই রাগ করেন।আমার মন বলে, অনি ক্রোধে বোধ নষ্ট হয়। চোখে আলো পড়লে চোখ ধাধিয়ে যায় পথ দেখা যায় না।আলো ফেলতে হয় পথে।
অর্নিতা বিস্মিত চোখ মেলে অনিকে দেখে।
— কি ভাবতেছো?
–কিছু না। এখন বিশ্রাম কর গিয়ে।

অর্নিতাও চলে গেল নিজের ঘরে। অনির কথা তাকে সবসময় ভাবায়। ছেলেটি তার থেকে ছোট। তবে তার মুখের কথা আর জীবনকে চেনার ভিন্নরকম দৃষ্টিভঙ্গি তাকে বারবার অনির কাছে টেনে নিয়ে যায়। সে অনিকে আগেও ভালোবাসতো আর এখনও ভাসে। তবে কখনো মুখ ফুটে বলতে পারে নি।

.
.
চলবে…!

[গল্পটি কেমন হচ্ছে কমেন্ট বক্সে নিজের মতামত জানান।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here