জীবনের অন্যরঙ পর্ব-১২

0
358

#জীবনের অন্যরঙ [১২তম পর্ব]
#আজিজুর রহমান

অকারণে !-জানি আমি জানি
তোমারে পাব না আমি। এই গান এই মালাখানি
রহিবে তাদেরি কন্ঠে- যাহাদেরে কভু
চাহি নাই, কুসুমে কাঁটার মত জড়ায়ে রহিল যারা তবু।

বাংলোর অফিসে বসেই কাজ করছেন এস পি সাহেব। ফোন আসছে ফোন ধরছেন। অনিমান লাঞ্চ সেরে চলে গেছে,বলে গেছে আসবে। তবু না-আসা অবধি ভরসা নেই। খেয়ালি ছেলে মুডের উপর চলে। ওর অর্নি আপুকে অন্য কেউ কিছু করুক ও চায়না, অফিসেতে যাবো বলতে যেভাবে পা জড়িয়ে ধরেছিল ভেবে রক্তিম হয় অর্নিতা। অতীতের স্মৃতি চারণায় মন ডুবে যায়। প্রথম ওকে দেখেছিল যোগা ক্লাসে। চোখ বুজে ধ্যান করছিল দেখে মনে হচ্ছিল সন্ত,সেদিনই ওকে ভাল লেগে যায়। পরে আলাপ হয়েছে। একদিন রাত্রিবেলা ট্যাক্সির জন্য ছোটাছুটি করছে,যখন বলল,দাড়া আমি গাড়ি নিয়ে আসছি। অবাক হয়ে বলেছিল তুমি গাড়ী চালাবে?সেই রাত্রে ওর ভাবিকে পৌঁছে দিয়েছিল অর্নিতা। অর্নিতা লক্ষ্য করেছে তার ডানপিটে ভাব অনির খুব পছন্দ। উদার মন সরল তবে পর নির্ভরশীল। ওকে একা ছাড়া কি ঠিক হল?পুলিশ পারেনা হেন কাজ নেই।

বাবার চট্রগ্রাম পোস্টিং হলে প্রথমে সেখানে তারপর রাজশাহীর কাছে ঐ পাড়ায় চলে আসে। তখন অর্নিতা বি.এ পড়ছে। তার বরাবর স্বপ্ন ছিল আই পি এস হবে।পাড়ায় বাঙালী ছেলেদের সঙ্গে মিশে গেল। দুর্গাপুজো,ঈদ, পিকনিক এমন কি সামাজিক অনুষ্ঠানেও তাকে নেমন্তন্ন করা হত। বাঙালী মেয়েদের মত সে অতটা মুখচোরা ছিলনা। একবার পিকনিক করতে গিয়ে ,কয়েকজন ব্যাডমিণ্টন খেলছিল। ছেলেরা কোথা থেকে ঘুরে এসে খুব হাসাহাসি করছিল। ফোন বাজতে কানে লাগিয়ে বলল,এখন রাউণ্ডে বের হবো।

এসপি অর্নিতা মির্জা বেরিয়ে গেলেন। উদয় রাজপাল পিছনে উঠে বসল। এর আগে আরো অনেকের সঙ্গে কাজ করেছে কিন্তু এই এসপি ডেয়ার ডেবল আছে।রেইড উচ্ছেদ খোদ স্পটে দাঁড়িয়ে থাকেন। কই আউরত এত সাহসী হয় উদয় রাজপাল দেখেনি আগে। মগর সাচ্চা লোককে কেউ পরসন্দ করেনা। অনির মোবাইলে ফোন আসে,অন করে কানে লাগাতে মেয়েলী গলা শুনে কেটে দেয়। মনে হচ্ছে কোনো ক্লায়েণ্ট হবে। এইভাবে ভেসে যাচ্ছিল ছেলেটা।
অনিমানকে দেখে মিস্ত্রীরা অবাক হয়। অনিমান বুঝতে পারে রাতে ফেরেনি বলে ওদের চোখে কৌতুহল।
–কাল রাতে বিয়ে বাড়ীতে আটকা পড়েছিলাম।উপযাচক হয়ে বলল অনিমান।
–আসেননি ভাল করেছেন। একজন কাজ থামিয়ে বলল।

অনিমান অবাক হয়। আরেকজন বলল,দু-দুবার পুলিশ এসেছিল। রাতে এসেছিল আবার সকালেও।
বুকের মধ্যে ধক করে উঠল। বুঝতে না দিয়ে জিজ্ঞেস করে,কি বলছিল পুলিশ?
— কি একটা লোকের খোঁজ করছিল।
–ভুল করেছে মনে হয়। অনিমান দোতলায় উঠে গেল।

ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ঘাম মুছল। অর্নি আপু কি এইজন্য পীড়াপিড়ী করছিল?কি করবে এখন?বিছানা নেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু বাক্স নিয়ে ওদের সামনে দিয়ে বেরোতে গেলে সন্দেহ করবে। এর পিছনে আঙ্কেলের হাত নেই তো?তাকে ছেলের মত মনে করে বাবা হয়ে ছেলের কেন ক্ষতি করতে চাইবে?বারবার জানলা দিয়ে উঁকি দেয়,জানলায় দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখা যায়। পুলিশ কেন তার খোঁজ করছে তার অপরাধ কি?অসহায় বোধ করে। হঠাৎ নজরে পড়ল,মিস্ত্রীরা রাস্তা দিয়ে গল্প করতে করতে চলেছে। কিছুটা গিয়ে বাহাদুর রোডের দিকে বাক নিল। মনে হয় টিফিন করতে যাচ্ছে। আর দেরী করা ঠিক হবেনা,এইবার বেরিয়ে পড়া যাক। বাক্স নিয়ে নীচে নামতে দেখল একটা অটো বাহাদুর রোড থেকে বের হচ্ছে। পিছনে লোক ভর্তি ড্রাইভারের পাশে বাক্স কোলে নিয়ে বসল।অটো স্টার্ট করতে মনে হল ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। অর্নি আপুর ওখানে আর কদিন তারপর কোথায় যাবে? অর্নি আপু অতবড় চাকরি করে ইচ্ছে করলে তার একটা ব্যবস্থা করতে পারে না? বেকার ছেলের চাকরি দরকার মুখ ফুটে বলতে হবে কেন? চাকরি থাকলে আজ কি তাকে ঐসব অবৈধ কাজ করতে হতো?পুজোর আগে তাদের ফ্লাট হয়ে যাবে শুনেছে কিন্তু এদিকের ঝামেলা না মিটলে ফ্লাটেই বা যাবে কি করে?আঙ্কেলকে ধরা ছাড়া কোনো উপায় দেখছে না।কিন্তু আঙ্কেল রাকিব যদি ঐসব করতে বলে? অর্নি আপু কে কথা দিয়েছে আর ঐসব করবে না। অটোর ইঞ্জিনের শব্দ আরো জোরে হোক যাতে চিন্তাগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

অটো থেকে নেমে বাস রাস্তার দিকে হাঁটতে থাকে। বাস স্টপে দেখল কৃষ্ণকলি দাড়িয়ে, তাকে দেখে মৃদু হাসলেন। অগত্যা অনিমান কেও হাসতে হল।অধ্যাপিকা কাছে ঘেষে এসে জিজ্ঞেস করেন, অফিসে যাচ্ছেন?

আবার চিন্তাটা ধরিয়ে দিল। অনিমান সম্মতিসুচক হাসল। ইতিমধ্যে বাস এসে পড়তে কৃষ্ণকলি চট করে বাসে উঠে পিছন ফিরে জিজ্ঞেস করল,উঠবেন না?
অনিমান বলল,পরে যাবো।
এতবড় পৃথিবীতে তার জন্য কি একটু জায়গা হবেনা?নিজেকে ভীষণ একাকী মনে হয়। বাস আসতে উঠতে যাবে কণ্ডাকটর গতিরোধ করে,বাক্স যাবেনা।
–ভাই ভাড়া দেবো। কণ্ডাকটরের মায়া হয়,পথ ছেড়ে দিল।
বাক্সটা বসার জায়গার নীচে ঢুকিয়ে দিয়ে জানলা ঘেষে বসল। কেউ জানেনা তার বাক্সে কত টাকা।যখন টাকা ছিল না,ভাবনা ছিলনা। তার সঙ্গে কথা বলতে ভালবাসতো। এখন টাকা হয়েছে কিন্তু তাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। খান্না সিনেমার কাছে বাস বাক নেয়। মনে পড়ল সন্ধ্যা আপুর কথা। এদিক ওদিক খুঁজলো চোখ,কোথাও নজরে পড়লনা। পাড়ানাইড় ঢুকে ট্র্যাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে গেল বাস। বাস নড়ে উঠল, ধীর গতিতে এগোতে থাকে।একসময় মিলিয়ে যায় দূরে। কনডাকটর হাক পাড়ে এসপি বাংলো। অনিমান বাক্স নিয়ে নেমে স্বস্তি বোধ করে। গেটের কাছে যেতে একজন সিপাহী তেড়ে এল,কাঁহা যায়গা?
–এসপি—।
–আভি নেহি, রাউণ্ডমে হ্যায়।
অনিমান বুদ্ধি করে বলল,জানকি খালা আমাকে চেনে।
–বোলা না সাম মে আইয়ে।

গোলমাল শুনে জানকি খালা বেরিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। অনিমান মাথায় একটা ব্যাপার ঝিলিক দিয়ে গেল। যখনই কোনো বিপদে পড়ে তাকে উদ্ধার করে কোনো না কোনো মহিলা। তাকে যে ঘরটায় বসতে বলা হল,সেটি স্টোর রুম। দুপুরে যাবার সময় দেখে গেছে ফাইল-পত্তরে ঠাষা এদিক-ওদিক ছড়িয়ে থাকা ভাঙ্গাচোরা ঝুলকালিতে জড়ানো আসবাব।সেসব একদিকে সরিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। দেওয়াল ঘেষে একটা ক্যাম্প খাট। ঘরে দু-একটা পোকা-মাকড় থাকলেও এখানে পুলিশ ঢুকে তাকে বিব্রত করতে পারবেনা ভেবে আশ্বস্থ বোধ করে অনিমান। জানকি খালা চা নিয়ে ঢুকল।

সামনে জীপে কয়েকজন সিপাই সহ ওসি নিলয় পিছনে এসপি সাহেবের জীপ এসে দাড়ালো রিলিফ অফিসের নীচে। অর্নিতা মির্জা জীপ থেকে নেমে চারপাশ ঘুরে দেখলেন। নিলয় জিজ্ঞেস করল,স্যার ভিতরে যাবেন?
অর্নিতা মির্জা সানগ্লাস খুলে হাসলেন।
— রাকিব হোসেন ধর্মপ্রাণ পুরুষ দেখলেও পুণ্যি স্যার। ক্যালানের মত হেসে বলল নিলয়।
–আপনে বহুৎ পুন্য কামায়া?
–হে-হে-হে আসি মাঝে সাঝে। বিব্রত স্বরে বলল নিলয়।

অর্নিতা জীপে উঠে স্টার্ট করতে নিলয়ের জীপ অনুসরন করে। উদয় পিছনে বসে নিলয়কে ইঙ্গিত করে বলল,বাঙালী লোক বহুৎ হারামী।
–হারামী সব মুলুকেই পাবেন। অর্নিতা বললেন।
–জী সাব।

অনিমান ফিরেছে কিনা কে জানে। যোগা ক্লাসে ওকে দেখে ভাল লেগেছিল। তারপর ঘণিষ্ঠতা হয়। লাজুক মুখচোরা স্বভাব। ওকে দিয়ে বলিয়ে না নিলে নিজে মুখ ফুটে কিছু বলবেনা।

জানকীর সঙ্গে অনির বেশ ভাব জমে গেছে। বহুকাল জানকি এমন মনোযোগী শ্রোতা পায়নি। তার জীবনের কথা কেউ এমন গুরুত্ব দিয়ে শুনবে ভাবেনি।জানকি তার মনের মধ্যে জমে থাকা অতীতকে তুলে ধরে তৃপ্তি পায়।

তার স্বামী সমীর গ্রাম হতে শহরে এসেছে। প্লাম্বারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। সমীর এবং জানকির একমাত্র মেয়ে সুভদ্রার বিয়ের হয়। সমীরের মৃত্যুর পর অসহায় জানকি জনৈকের সহায়তায় এসপি বাংলোয় রান্নার কাজ পেলেও মনে শান্তি ছিলনা। এসপি ভদ্রলোক নেশা করতেন,রাতে দরজা ধাক্কাতেন।
–উনি বিয়ে করেননি?অনি জিজ্ঞেস করে।
–বিয়ে করেছে ছেলেমেয়ে আছে। সবাই দেশে থাকে।
–দেশ কোথায়?
–চট্রগ্রাম জেলার লোক, ভারত বডার গার্ডের কোনো স্থান হবে।

জানকি আবার শুরু করে। অন্যত্র যাবার জন্য একে তাকে বলা শুরু করেছে। এমন সময় এসপি বদলি হয়ে গেলেন তার জায়গায় এলেন একজন মেয়ে। সিদ্ধান্ত বদলে এখানেই থেকে যাওয়া স্থির করে।এসপি তাকে খালা বলে সম্বোধন করেন,বয়স কম বাজে নেশা নেই। খুব মেজাজি এই যা দোষ। গল্প করতে করতে অনিমান জানকি খালার সম্পর্কে অনেক কথা জানল।
–এই ম্যাডাম কেমন, ভাল?
–মেয়ে মানুষ একা একা থাকে। খুব খারাপ লাগে।
বাইরে জীপের শব্দ পেয়ে জানকি উঠে পড়ে বলল,মনে হয় ম্যাডাম আসিছে। আপনি এইসব কথা ম্যাডামরে বলিবেন না। জানকি চলে গেল। জানকি অর্নি আপুর নিঃসঙ্গতার প্রতি ইঙ্গিত করে গেল। ঠিকই অর্নি আপু তো বিয়ে করতে পারে।

পুলিশি পোশাকে অর্নি আপু ঢুকে বলল,এসেছিস?কোথায় তোর জিনিসপত্র?

অনিমান বাক্স দেখিয়ে দিল। অর্নি আপুকে দেখে কে বলবে মেয়ে। আড়চোখে চেয়ে চেয়ে দেখে। অর্নিতা বলল,খোল দেখি কি সম্পদ আছে?

অনিমান বাক্স খুলতে অর্নিতা হাতড়ে দেখতে থাকে।কয়েক প্রস্থ জামা প্যাণ্ট লুঙ্গি কয়েকটা খাতা আর কয়েকগোছা টাকা। হঠাৎ বালা জোড়া নজরে পড়তে জিজ্ঞেস করে,এগুলো কোথায় পেলি?
অনিমান লাজুক মুখে নীচের দিকে তাকিয়ে থাকে। অর্নিতা টাকাগুলো হাতে নিয়ে বলল, এগুলো নোংরা টাকা বুঝতে পারছি কিন্তু এদুটো কোথায় পেলি?
–আমার মা দিয়েছে।
–তাহলে এগুলো বেচলেই টাকা পেতিস ঐসব করতে গেলি কেন?
অনিমান চুপ করে থাকে। অর্নিতা বলল,অপরাধের অজুহাত?
–না মোটেই না। ওগুলো মা আমাকে দেয়নি। বলেছে বউকে দিবি।

অর্নিতা হাসি পেলেও হাসেনা। বালা জোড়া ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে বলল,বিছানা কোথায়?
–এই কত কষ্ট করে এনেছি। দু’বার পুলিশ খুঁজতে গেছিল জানো?

অর্নিতার এই আশঙ্কা ছিলনা তা নয়। অনিকে বলল,তুই বড় ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিস। এবার বুঝতে পারছিস কেন তোকে এখানে আসতে বলেছিলাম?কই দেখি তোর উপন্যাস?
অনিমান একটা খাতা এগিয়ে দিল। অর্নিতা পড়তে চেষ্টা করে,অবব্ব–।
অনিমান বলল,অব্যক্ত প্রেম। মানে যে কথা বলা হয়নি।
–যে কথা বলা হয়নি। এটা শুনতে আরো ভাল লাগছে। ঠিক আছে একটু বিশ্রাম করে আমার ঘরে আয়। ভাবছি আজ আর বেরবো না।

অর্নিতা খাতা আর বালাজোড়া নিয়ে চলে গেল। অনিমান বুঝেও কিছু বলতে পারেনা। হয়তো ভুল করে নিয়ে গেছে খেয়াল হলে দিয়ে দেবে। অন্যের বালা অর্নি আপু নিতে যাবে কেন?

ঘরে এসে চেঞ্জ করল অর্নিতা মির্জা। ড্রয়ার টেনে বালাজোড়া রেখে খাতাটা নিয়ে বালিশে বুক দিয়ে পড়তে শুরু করল। পড়তে পড়তে পুরানো পাড়ার ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অঞ্চলের বিখ্যাত ডাক্তার বারিক শাহের একমাত্র মেয়ে শুভ্রতা ওরফে শুভাকে ভালবাসে সামির । সামির নিম্নবিত্ত পরিবারের অতি সাধারণ যুবক। শুভা কলেজ যায় আসে তার নজরে পড়ে সামির তাকে সর্বত্র ছায়ার মত অনুসরণ করছে।শুভা বাড়ীর ব্যালকনিতে দাড়ালে নজরে পড়ে দূরে দাঁড়িয়ে চাতকের মত তাকিয়ে আছে সামির। রাস্তায় ফুচকাওলাকে দাঁড় করিয়ে নীচে নেমে এল। আশা সামির হয়তো এই সুযোগে ফুচকা খাবার অজুহাতে তার পাশে এসে কিছু বলতে পারে। শুভার ফুচকা খাওয়া শেষ হয় ঘাড় ঘুরিয়ে সামিরের দিকে তাকাতে দেখল অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে কি যেন দেখছে। শুভার রাগ হয় দপদপিয়ে বাড়ীতে ঢূকে যায়। একদিন কলেজ যাবার সময় একটা কাগজে বড় বড় করে লিখল “কিছু বলার থাকলে বলুন” তারপর ভাজ করে বইয়ের ভাজে রেখে কলেজ যাবার জন্য বের হল। লক্ষ্য করল পিছনে পিছনে আসছে সামির। একবার পিছন ফিরে তাকালো। নিরীহ মুখ করে অন্য দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইচ্ছে করছিল কাছে গিয়ে আচ্ছা করে শুনিয়ে দেয়। কিছু যদি নাই বলবি পিছন পিছন ঘুরছিস কেন?কৌশলে বইয়ের ভিতর থেকে কাগজটা ফেলে দিল। কিছু পড়ে গেছে যেন বুঝতে পারেনি। কিছুটা যেতে সামির ছুটতে ছুটতে এসে সামনে দাড়ালো। শুভা বুঝতে পারে এতদিনে কাজ হয়েছে। শুভা অবাক হবার ভান করে জিজ্ঞেস করল,কিছু বলবেন? সামির একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল,এটা পড়ে গেছিল।
–ওটা কি দেখেন নি?
–না ভাবলাম কোনো দরকারী কোনো কিছু হবে–তাই?
–আর কিছু বলবেন?
–না ঐটা দিতে এলাম। শুভা কাগজটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে হন হন করে কলেজের দিকে হাঁটতে থাকে। চোখ ফেটে জল আসার জোগাড়। মাসের পর মাস গেল বছরের পর বছর। এক ঋতু যায় আর এক ঋতু আসে কিন্তু সামিরের কোনো পরিবর্তন নেই। মেয়ে বড় হয়েছে ডা.শাহ বিয়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। তারই এক বন্ধুর ছেলে,জয় সবে ডাক্তারী পাস করেছে।ডা.শাহ এফ আর সি এস করার জন্য তাকে বিলেত পাঠাবার দায়িত্ব নিলেন। জয় শুভার নামে কার্ড ছাপা হল। সামিরও আমন্ত্রিত ছিল বিয়েতে। হুজুর তার দায়িত্ব পালন করছে। ঘোমটার ফাঁক দিয়ে লক্ষ্য করে বাথরুম যাবার প্যাসেজে দাঁড়িয়ে জুলজুল তাকিয়ে আছে। বিয়ে শেষ হতে বাথরুম যাবার নাম করে সামিরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলল,এদিকে এসো। আড়ালে নিয়ে শুভা জিজ্ঞেস করে,সত্যি করে বলতো কেন পিছন পিছন ঘুর ঘুর করো?
–আর করব না।
–তুমি কি আমায় ভালবাসো? সামির মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
শুভা অবাক হয়ে বলল,তাহলে বলোনি কেন?না বললে কি করে বুঝব?
–না মানে–।
শুভার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায় বলল,না মানে কি?
–তোমরা কত বড়লোক তোমার বাবা কতবড় ডাক্তার আবার উচ্চ বংশের।
–এত বোঝো তাহলে পিছন পিছন ঘুর ঘুর করছিলে কেন?
–তোমাকে একটু দেখব বলে। হায় আল্লাহ,শুধু একটু দেখা আর কিছু নয়?জিজ্ঞেস করল,আমার বিয়ে হয়ে গেল। এখনো ভালবাসো?
সামির ম্লান হাসল। শুভা ব্যঙ্গ করে বলল,ভালোবাসা ভ্যানিস?
সামির বলল,”রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে।” ফুপিয়ে কেঁদে ফেলে শুভ্রতা তারপর দ্রুত বাথরুমে ঢুকে গেল।
দু-শো পাতার উপন্যাসের এই সংক্ষিপ্তসার। পিকনিক পুজো, ঈদ অনেক কিছু আছে। অর্নিতা বালিশ দিয়ে চোখ মুছে হাসল। এই শুভ্রতাটা কে? ড. বারিকের মেয়ে শুভ্রতা নয়তো? মনের মধ্যে কেমন একটা উশখুশ ভাব অনুভব করে। অনিকে আসতে বলেছিল এলনা কেন?অনির লেখার স্টাইলটা বেশ,শব্দ চয়ন উপমা অলঙ্কার সমৃদ্ধ। সন্ধ্যেবেলা একবার ভাবছে বেরোবে। ইদ প্রায় এসে গেল,যদি কোনো পত্রিকার সংখ্যায় লেখাটা প্রকাশ করা যায়। এটার ব্যবস্থা করে রাকিব হোসেনের একটা ব্যবস্থা করবে। অনিমান একবার উঁকি দিয়েছিল,দরজা বন্ধ দেখে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েছে। অর্নিতা উঁকি দিয়ে দেখল ঘুমিয়ে পড়েছে অনি।

পোশাক পরে বেরোবার জন্য তৈরী হয়। জানকি এসে জিজ্ঞেস করল,ম্যাডাম খাবার করব?
–না এসে খাবো।

বংলা স্ট্রীটে সবুজ পত্রিকা দপ্তরে ব্যস্ত বাদল সাহেব। এখনো কয়েকটা লেখা আসেনি। প্রথম প্রথম দপ্তরে এসে বসে থাকত একটু নাম হলেই টিকিটা পর্যন্ত দেখা যায়না। বিশেষ করে পুজো সংখ্যার লেখা জোগাড় করতে ঘাম ছুটে যায়। সম্পাদক মশাই ওকে করেই দায়িত্ব শেষ,হ্যাপা সামলাতে হয় ম্যানেজার বাদল কে।
–বাদল ভাই কেমন আছেন?
বাদল সাহেব চশমাটা নাকের ডগায় তুলে তাকিয়ে একগাল হেসে বললেন,আরে পথ ভুলে নাকি?
–কেন আসতে নেই নাকি?
লম্বা জিভ কেটে বাদল সাহেব বললেন,আপনাদের আসায় বাঁধা দেবে কার সাধ্য?তবে কি না খাকি আর লেখালিখি–হে-হে-হে।
–খাকি বাদ দিয়ে গোয়েন্দা উপন্যাস হয় নাকি?
–কি ব্যাপার বলুন তো?আপনি আবার গোয়েন্দা উপন্যাস লিখছেন নাকি?
–না রোমান্স।
–বলেন কি?দাড়ান-দাড়ান একটু দম নিতে দিন। চা খাবেন তো?চেয়ার থেকে উঠে জানলা দিয়ে মুখ বের করে,এ্যাই কেষ্ট উপরে দু-কাপ চা পাঠা। নিজের জায়গায় এসে বললেন,হ্যা বলুন অনেকদিন পর কি মনে করে?
অর্নিতা মির্জা একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বললেন,একটু পড়ে দেখবেন।
বাদল সাহেব ফাইল খুলে দেখলেন মোটা করে লেখা-যে কথা হয়নি বলা/ অনিমান চৌধুরী । বাদল সাহেবের কপালে ভাজ পড়ে,নামটা কেমন চেনা মনে হচ্ছে।
— অনিমান চৌধুরী কে?
–আমার বিশেষ বন্ধু।
–হ্যা মনে পড়েছে। এর লেখা আমাদের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। হঠাৎ কোথায় ডুব দিলেন। আপনি যখন দিলেন নিশ্চয়ই দেখব।

কেষ্ট চা দিয়ে গেল। বাদল সাহেব চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,দেখি সাকিল সাহেব পাস করে দিলে শারদীয়াতেই বের করে দেবো। দরজায় দরজায় ঘোরা আর পোষায় না।
–সাকিল সাহেব কে?
–উনি এবারের শারদীয়ার সম্পাদনার দায়িত্বে। শুনুন ম্যাডাম আপনাকে একটা কথা বলি। লেখার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই,ভুল বুঝবেন না। –বুঝেছি বিজ্ঞাপন তো?
–হা-হা-হা। ঘর কাপিয়ে হাসলেন বাদল সাহেব।একেই বলে সাপের হাঁচি বেদেয় চেনে।
–আমার দপ্তরে কটা ফর্ম পাঠিয়ে দেবেন।
–অনিমান ছেলেটার লেখার হাত ভাল। একটু বেশি সেণ্টিমেণ্টাল। দেখা যাক এখন সম্পাদকের মর্জি।
–বাদল ভাই লেখাটার কোনো কপি নেই,একটু সাবধানে রাখবেন।
–কোনো চিন্তা করবেন না আপনার নম্বর আমার কাছে আছে। বাদল ভাই আশ্বস্থ করলেন। অর্নিতা মির্জা সালাম দিয়ে পত্রিকা দপ্তর হতে নীচে নেমে এল। বাদল সাহেব লোকটা মহা ধড়িবাজ। লেখা মনোনীত হলে তবে বিজ্ঞাপন। প্রেমচাদ বড়াল স্ট্রীটে একবার তার খপ্পরে পড়েছিল। বয়স্ক লোক বিয়ে-থা করেন নি আবার পত্রিকার সঙ্গে আছেন জেনে ছেড়ে দিয়েছিল। সেই থেকে পরিচয়।

হাতের কাজ রেখে বাদল সাহেব লেখাটায় চোখ বোলাতে লাগলেন। লেখার স্টাইল খারাপ নয়। সাকিল সাহেব লোকটা পাগলাটে ধরণের কখন কি মর্জি হয়,টাকা পয়সা যোগাড় করা লেখা সময়মত ছাপা–সব বাদল সাহেব কে করতে হয়। সাহিত্যের নিরাপত্তার স্বার্থে এদের সাহায্যও দরকার বাদল সাহেব জানেন। হাড়কাটায় পারুলের ঘরে একবার এর খপ্পরে পড়েছিল,হাজতে ভরে দিলে লজ্জায় পড়তে হত। পরিচয় পেয়ে ভদ্রমহিলা সেদিন ছেড়ে দিয়েছিল।

ঘুম থেকে উঠে অনিমান অর্নি আপু কে দেখতে না পেয়ে জানকি খালার কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে বেরিয়েছে। একবার বলল বেরোবে না আবার বেরিয়ে গেল?
–সংসার না থাকলে ঘরে মন টেকেনা। জানকি খালার সহজ সমাধান। জানকি খালার কথায় গুরুত্ব না দিলেও অনিমানের মনে হয় অর্নি আপু একটু চাপা স্বভাবের। মনের মধ্যে ভাঙচুর চললেও বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। সব সময় হাসিখুশী। অর্নিতা নামটা সার্থক। ভীষণ জিদ্দি বরাবর,বাবার আপত্তি সত্বেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল। হঠাৎ বাংলা শেখার ঝোক চাপতেই সেই বাংলা শিখে ছাড়ল। অনিমানের মানূষের ভিতরটা সম্পর্কে বেশি আগ্রহ কিন্তু অর্নি আপুকে আজও ভাল করে চিনতে পারল না। আজ একটা ফয়সালা করতে হবে। এখানে কতদিন থাকবে আর কেনই বা থাকবে, আঙ্কেলের ওখানে যাবেনা তাহলে কি চিরজীবন অর্নি আপুর অনুগ্রহের পাত্র হিসেবে থাকতে হবে? অর্নি আপুর বিয়ে হলে সব কিছু অর্নি আপুর মর্জি মত হবেনা। অর্নি আপুর স্বামী তাকে অপছন্দও করতে পারে। সময় থাকতে থাকতে আত্মসম্মান বাঁচিয়ে এখান থেকে সরে পড়াই ভাল।

অর্নি আপু উপন্যাসটা পড়তে নিয়েছে,পড়েছে কিনা জানা হয়নি। দেখা হলে জিজ্ঞেস করবে কেমন লাগল?একজন মহিলার মতামত এক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ।
সন্ধ্যে হয়ে এসেছে এবার বাসায় ফেরা যাক। অর্নিতার ভাল লেগেছে গল্পটা কিন্তু সব সময় গল্প বিবেচিত হয়না গল্পকারকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝছে দেরীতে হলেও প্রতিভা একদিন তার স্বীকৃতি আদায় করে নেবে। বাংলোর সামনে গাড়ী থামতেই জানকি গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে দিল। তরকারি হয়ে গেছে পুর ভরে লুচি করে রেখেছে ম্যাডাম এলেই ভাজতে শুরু করবে। অর্নিতা ঘরে ঢুকে চেঞ্জ করল। দরজায় অনিকে দেখে ডাকল, ভিতরে আয়। অনিমান বিছানার একপাশে বসে ভাবে কিভাবে কথাটা শুরু করবে? অর্নিতা বলল, শোন অনি তোকে একটা কথা স্পষ্ট বলে দিতে চাই,মন দিয়ে শোন।
ভালই হল অর্নি আপুই শুরু করেছে। অনি মাথা নীচু করে শুনতে থাকে। অর্নিতা বলল, এখানে থাকতে হলে শুয়ে বসে কাটালে চলবে না। তোকে কাজ করতে হবে।
–কি কাজ বলো?
–জানকি করছে আমি করছি। চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা করছি,তুই বসে বসে লিখবি।
–আমি বিছানায় বসে লিখতে পারি।
–কিভাবে লিখবি তোর ব্যাপার তবে লিখতে হবে।বছরে অন্তত দুটো বড় লেখা চাই। হাসছিস কেন? আমি কি তোর সঙ্গে মজা করছি?
–মজা করছো না কিন্তু মজার কথা বলছো।
জানকি দু-প্লেট কচুরি নিয়ে ঢুকল। অর্নিতা একটা প্লেট নিয়ে কচুরি খেতে লাগল।
–জানকি দারুন করেছে তাই না? অর্নিতা জিজ্ঞেস করল। অনিমান জবাব দিল না।

অর্নিতা জিজ্ঞেস করল,মজার কথা কি বললাম শুনি?
–শোনো অর্নি আপু ফরমাস করে তুমি জানকি খালাকে দিয়ে ভাল কচুরি করাতে পারো কিন্তু সাহিত্য হয়না।
–তাহলে কিভাবে হয় শুনি?
–লেখা ব্যাপারটা মুডের ব্যাপার।
–হ্যা তুই টো-টো করে ঘুরে বেড়াবি আর যখন মুড আসবে লিখবি?এসব ফাকিবাজি চলবে না। তুই প্রতিদিন অন্তত পনেরো–না দশ পৃষ্ঠা করে লিখবি। যা মনে আসে খালি লিখে যাবি, পছন্দ নাহলে ছিড়ে ফেলবি।
–এটা মন্দ নয়। কিন্তু এতো আমার কাজ তোমার কাজ কি বললে নাতো?
–খুব তোমার-আমার শিখে গেছিস?তুই তো এরকম ছিলি না। আমি তোদের সবার জন্য কাজ করছি জানকি আমাদের সবার জন্য কাজ করছে। কাজ হচ্ছে কাজ, আমার-তোমার কিরে?
–এবার আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
–ক্ষেপিয়ে দেবার মত কিছু বললে ভাল হবে না কিন্তু–।
অনিমান এবার অর্নি আপুর গলায় মেয়েলি সুর শুনতে পেল। মেয়েলিপনাকে সব সময় চেপে রাখার চেষ্টা করে। অনিমান জিজ্ঞেস করল,তুমি লেখাটা নিয়ে পড়েছো?
জানকি চা দিয়ে গেল। অর্নিতা চায়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে,শোন অনি সত্যি করে বলবি। ঐ যে শুভা মেয়েটা কে?
–শুভ্রতা।
–হ্যা শুভা। ওকি ডাক্তার কাকুর মেয়ে?
–ওর বাবা ডাক্তার।
–কথা ঘোরাবি না। কি যেন নাম? শুভ্রতা হ্যা শুভ্রতাই কি শুভা?
–এরপর জিজ্ঞেস করবে সামির আমি কিনা?
–তুই আমাকে বলেছিলি জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে লেখকের লেখায় পারিপার্শ্বিক এসে যাবেই।
–অর্নি আপু আশপাশের চরিত্র লেখার মধ্যে আসে।একজনের মধ্যে একাধিক চরিত্রের মিশ্রণ থাকতে পারে। আবার ব্যক্তি না এসে ভাবও আসতে পারে।যেমন সামির আভিজাত্যের বেড়া পেরিয়ে মুখ ফুটে মনের কথা বলতে পারেনি। এর বিপরীতও হতে পারতো। তোমাকে আজ একটা সত্যি কথা বলছি,সবাই শুভ্রতাকে জড়িয়ে আমাকে ঠাট্টা করত সেজন্য আমার মনে হয়তো দুর্বলতা জন্মে থাকতে পারে তার মানে এই নয় আমি শুভ্রতাকে ভালবাসি।বিজ্ঞান বলছে পদার্থের যা শক্তি আছে তার সামান্য অংশ আমরা দেখতে পাই তেমনি মানুষকে আমরা যেভাবে দেখি তারও বাইরে আছে অন্য মানুষ। কখনো কোনো কারণে সেদিকটা প্রকট হয় আবার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেদিকটা উন্মোচিত নাও হতে পারে। অর্নিতা সব কথা না বুঝলেও অনির কথা শুনতে ভাল লাগে। অনির মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,তুই কি সত্যিই কাউকে ভালবাসিস নি?

–আগেই বলেছি নিজের মন ঠিক কি চায় মানুষ সব সময় বুঝতে পারেনা। ইচ্ছে কারো মনে নানা কারণে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে তখন সেই ইচ্ছেকে সনাক্ত করা যায়না। সাধারণভাবে আমার মনে হয় বেলা ভাবি মুন্নী ভাবি মিতা তুমি–সবাইকে আমি ভালবাসি। কিন্তু সব ভালবাসাকে যদি এক পংক্তিতে ফেলে বিচার করি তা ভুল হবে। ভালবাসার নানা চরিত্র আছে–প্রেম প্রীতি শ্রদ্ধা স্নেহ বাৎসল্য ইত্যাদি।
–তোর কথা শুনতে শুনতে মাথা ধরে গেল। রাত হয়েছে ওঠ। আর মনে রাখবি রোজ দশ পৃষ্ঠা–।

অনিমান হতাশ হয় যেকথা বলবে মনে করেছিল সেটাই বলাই হলনা। তবে এটুকু বোঝা গেল তাকে এখানেই থাকতে হবে। একটা কথা বুঝতে পারেনা অর্নি আপু বলছিল তাকে বিপদ ঘিরে আছে। কিসের বিপদ সে কী করেছে?মোবাইলটা নিয়ে নিয়েছে,কারো সঙ্গে কথা বলার উপায় নেই। বালাজোড়া নিয়েছে ফেরত দেবার কথা ভুলে গেছে। পরক্ষনে মনে হল হয়তো তার ভালোর জন্য নিজের কাছে রেখেছে।টাকাগুলো তো ছুয়েও দেখল না।

আমার বেদনা আজি রূপ ধরি’ শত গীত-সুরে
নিখিল বিরহী-কন্ঠে–বিরহিণী–তব তরে ঝুরে!
এ-পারে ও-পারে মোরা, নাই নাই কূল!
তুমি দাও আঁখি-জল, আমি দেই ফুল!

.
.
চলবে…!

[গল্পটি কেমন হচ্ছে কমেন্ট বক্সে নিজেদের মতামত জানান।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here