শেষটা সুন্দর’ পর্ব-৬

0
434

#শেষটা_সুন্দর
#পর্ব৬
#নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা
শ্রাবণ সন্ধ্যায় এক নিঃসীম কালাে অন্ধকার সমগ্র পৃথিবীকে মুহূর্তে গ্রাস করে ফেলে। তখন ভাষাহীন নীরবতায় নিকষ কালাে আঁধারের বুকে বিশ্ব-প্রকৃতি যেন তার বিভ্রান্ত-অবসন্ন শরীর এলিয়ে দেয়। কেবল অশ্রান্ত সঙ্গীতমুখর বর্ষণধারা এই নীরব সন্ধ্যাকে ছন্দময় করে তােলে । শ্রাবণের বর্ষণধারাই সন্ধ্যাকে গম্ভীর ও গূঢ় রহস্যময় অর্থে ভরে দেয়। তখন সমগ্র বিশ্ব যেন এক নিবিড় আবেশে কোনাে এক পাতালপুরীর রাজ্যে হারিয়ে যায় । বর্ষণমুখর সন্ধ্যার এমন মৌন-মুহূর্ত গভীর আবেগে হৃদয়কে আপুত করে । প্রকৃতির এমন করুণ ও বিষন্ন রূপ আর কখনাে চোখে পড়ে না। সারাদিন অবিরাম বৃষ্টিধারায় পথ-ঘাট যেন জনমানবহীন বিরান প্রান্তর । মনে হয় কোথাও যেন প্রাণের সাড়া নেই, নেই জীবনের উচ্ছল কোলাহল । গাছের পাতায় অনেক দিনের জমাটবাধা অশ্রু যেন বর্ষার জল হয়ে অবিরাম ঝরে । এমন অশ্রু পতনের অনুপম আওয়াজ আমাদের মনকে অসীমের সন্ধানে নতুন এক কল্পনার জগতে নিয়ে যায় ।সন্ধ্যা হয়ে এসেছে । কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে গভীর রাত । রেহান আর আমার সম্পর্কটা দিন দিন গাঢ় হচ্ছে । এর কি নাম দেয়া যায় । চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এসবই ভাবছি । ঠিক তখনি আব্বু ডেকে পাঠালেন।আব্বুর ফ্রেন্ড জাহিদ আংকেল আর তার ওয়াইফ সাজিদা আন্টি সাথে তাদের একমাত্র ছেলে মিনহাজ এসেছে আমাদের বাসায়।মিনহাজের পরিচয়টা দেয়া প্রয়োজন । কেননা ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে রয়েছে । আমাদের বাবারা আমাদের অগোচরে কথা দিয়ে রেখেছেন।আমি মোটেও রাজি ছিলাম না।কিন্তু আব্বুর মুখের দিকে তাকিয়ে আর না করিনি । মিনহাজ কে আমার কোন কালেই পছন্দ ছিল না।ও আমাদের ভার্সিটিতেই পরে আর আমার চেয়ে দুই ব্যাচ সিনিয়র । এত দিন ওনারা দেশে ছিলেন না । আংকেল , আন্টি আমেরিকাতে সেটেলড হয়ে যাবেন ।ওর প্ল্যান দেশে থাকার । ওর চাচাতো ভাইয়ের বিয়েতে ওনারা প্রায় তিন সপ্তাহ মিশিগান এ কাটিয়ে এসেছেন । ও এতদিন ছিল না আর আমিও ফ্রি ছিলাম। ও থাকলেই আমার লাইফে ইন্টারফিয়ার করে । ওনাদের দেখে আমার মুড্ তাই খারাপ হয়ে গেলো । আব্বু আর আংকেল, আম্মু আর আন্টি নিজেদের মাঝে গল্প করছেন। আব্বু বললেন,
মুগ্ধতা আম্মু , মিনহাজ আব্বুকে নিয়ে তোমার ঘরে যাও ।
জি আব্বু ঠিক আছে।
মিনহাজ চলো ।
হ্যা চল ।
ওর সাথে কথা বলতে শুরু করলাম। ওকে রেহানের কথা এড়িয়ে গেলাম কারণ ও জানলে খুব বাজে ভাবে রিয়েকট করবে । কিন্তু নবীন বরণ অনুষ্ঠানের কথা আর আমার পারফর্ম করার বিষয়টা জানালাম । ও কিছুই বললো না । ঘন্টা খানেক কথা বলার পর ও চলে গেল । বেশ কিছুক্ষন আমি চুপচাপ বসেছিলাম । আব্বু রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকলেন ।কিন্তু আমার ভালো লাগছিল না বিধায় খাইনি ।
রাত সাড়ে দশটা বাজে , আমি আবারো রেহানের কথাই ভাবছিলাম ।বেহায়া মনটা কোনো কথাই শুনতে চায় না । তখনই ফোনটা বেজে উঠলো । যাকে নিয়ে ভাবছিলাম তিনি কল করেছেন । রিসিভ করলাম ,
এই মুগ্ধ শুনছো ?
হ্যা বলো।
আমাদের জুটিটা টিচার সিলেক্ট করেছে ।
তাই?
ইয়েস, তুমি খুশি হও নি?
অনেক খুশি হয়েছি।
আচ্ছা কালকে একটু বের হতে পারবে আমার সাথে ?
কেন?
শপিং এ যেতাম।
আমি গিয়ে কি করব ?
বা রে তুমি আর আমি ম্যাচিং শাড়ি আর পাঞ্জাবি কিনবো না? আমাদের পারফরম এর জন্য ।
ও হ্যা খেয়াল ছিল না । ওকে বলো কখন যাবে?
তোমার সুবিধা মতো টাইম দাও।
আমি কালকে দুপুর এর পর বের হব ।
ওকে ।
মুগ্ধ , তোমার ফ্যামিলি সম্পর্কে তো তেমন কিছুই জানি না ?
বলো কি জানতে চাও ।
তোমরা কয় ভাইবোন আর আংকেল আন্টি সম্পর্কে কিছু বল।
ও আমরা দুই ভাই বোন। আমি বড় আর আমার ছোট ভাই । ও ক্লাস এইটে পড়ে।ওর নাম রাদিফ কবির রুগ্দ্ধ। আর আমার বাবা মিরাজুল কবির তিনি একজন ব্যাবসায়ী । আম্মু রিতু খান তিনি একজন প্রফেসর ।এইতো আমার ফ্যামিলি । তোমার সম্পর্কে কিছু বল।
আমরাও দুই ভাই বোন । আমিও বড় । আমার ছোট বোন সোহানা। ও আমার চার বছরের ছোট । আমার বাবা রাহান চৌধুরী , একজন আর্মি অফিসার ছিলেন। তিনি মারা গেছেন সাত বছর গত হইসে। আমার আম্মু বর্ণালী হাসান একজন আর্কিটেক্ট । এইতো আমার ফ্যামিলি।
ও অনেক রাত হয়েছে । খাইছো?
না , তুমি?
না, কেন? খাওনি ।
এমনি। আর তুমি ?
ওই এমনি । আচ্ছা রাখি।
ওকে ।কাল দেখা হচ্ছে ভার্সিটিতে, ইনশাআল্লাহ ।
ইনশাআল্লাহ।
#চলবে
[রি চেইক হয়নি।ভুলত্রুটি মাফ করবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here