#শেষটা_সুন্দর
#পর্ব_২০
#নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা
দেড় বছর আগের সেই কাঙ্খিত বহুল প্রতীক্ষিত দিনটি ,
সময় যত এগিয়ে আসছে মুগ্ধতার শরীরের কাঁপুনি তত তীব্র হচ্ছে । মনে হচ্ছে রেহানের সাথে দেখা করার আগেই হৃদপেশীর ক্রিয়া বন্ধ হয়ে সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মুগ্ধতা মারা যাবে । আজ চার চারটা বছর পর রেহানকে দেখবে মুগ্ধতা ।
আচ্ছা রেহানেরও কি আমার মত এমন অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে ? হয়তো হ্যাঁ হয়তো বা না । লাইফে কত কঠিন কঠিন প্রজেক্ট নিমিষে করেছি কখনোতো সামান্য হাত কাঁপাকাঁপিও করেনি । তবে আজ কি হলো ? রেহান কি আমার প্রজেক্টগুলোর চেয়েও ভয়ানক কিছু ? ধুর কি সব আবোলতাবোল ভাবছি । মাথাটা নির্ঘাত রেহানের চিন্তায় চিন্তায় খারাপ হয়েছে । এসব চিন্তা ভাবনা করতে করতে রেডি হয়ে নিলাম । আজ গাঢ় নীল রঙের একটা শাড়ি পরেছে । সাথে ম্যাচিং হিজাব আর হাল্কা সেজেছি । সাজ বলতে ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক , চোখে কাজল , আর মুখে ফেস পাউডার । ব্যাস আমার সাজে কমপ্লিট । এখন ঘড়িতে সময় বিকেল সাড়ে চারটা । যদিও হাতে ২০ মিনিট হাতে রেখেই বেরিয়ে পড়লাম । আর রেহানকে যেই কফি শপ এ আসতে বলেছি তার দূরত্ব খুব
বেশি হলে ১০ মিনিটের পথ খালামনির বাসা থেকে । আজকের বিকেলটা রাস্তাতে একটু বেশিই ভিড় চোখে পড়ছে । সকলের মাঝেই গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যাস্ততা । একটা রিক্সা নিয়ে নিলাম । পৌঁছাতে খুব একটা সময় লাগলো না । ঠিক ১২ মিনিট পরই গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম । রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে কফি শপের ভিতরে গিয়ে বসলাম । অপেক্ষার প্রহর গুনছি রেহান আসবে বলে ।
অপরদিকে ,
আজকে মায়াবতীকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দেবো । আমি প্রেম করে বিয়ে করার পক্ষে কোনদিনই না , বিয়ের পরে জমিয়ে প্রেম করার পক্ষে । তখন না থাকবে কোনো গুনাহের ভয় কিংবা কারো কুনজরে পড়ার বা কটাক্ষ শোনার কোনো ভয় । ব্যাপার কি ? আজ এত সিরিয়াস কথা ভাবছি আমি রেহান চৌধুরী । এটা তো বেশ চোখে পড়ার মতো একটা বিষয় । এসব ভাবতে ভাবতেই মনের অজান্তে হেসে চলেছি ।
হঠাৎ আম্মু বলে উঠলো ,
আমার রেহান আব্বুটার কি প্রেম প্রেম পাচ্ছে ?
আমিও আম্মুর কথার উত্তরে বলেই বসলাম ,
না , আম্মু বিয়ে বিয়ে পাচ্ছে ।
এ কথা বলতে দেরি সোহানা রাক্ষসী আর আম্মুর ঘর কাঁপিয়ে হাসতে দেরি হয়নি । আমি সৎবিৎ ফিরে পেয়ে হতবিহব্বল এর মতো তাকিয়ে রয়েছি । এইটা আমি কি বললাম । আম্মু বললো ,
থাক আব্বুটা আর লজ্জা পেতে হবে না । আমি তোর জন্য মেয়ে দেখবো নাকি তোর পছন্দের অপেক্ষায় থাকবো ? আমার ইচ্ছে তোর পছন্দের অপেক্ষায় থাকার বলতে গেলে আমি রইলাম অপেক্ষায় , কখন তুই আমাকে মেয়ের বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে যেতে বলবি । আমি অবাক হয়ে আম্মুর কথা শুনছি । কতটা বুঝেন তিনি আমাকে । এই পৃথিবীতে তার মতো কেউ হয়তো আমায় এতোটা বুঝতে পারবেন না ।
কি হলো রেহান আব্বু , কি ভাবছিস ?
আম্মু কিছু না । তুমি থাকো আমি বের হবো ।
বাসা থেকে বের হয়ে আসার সময় আমি সোহানার মাথায় চাটি মেরে এসেছি । মেয়েটা সবসময় অতিরিক্ত করে । আম্মুর কথাগুলো শুনে সব দাঁত বের করে হাসতেছিলো । রাগ উঠেছিলো ওর উপর বেশ । যাক অনেক কিছু ভেবে ফেলেছি । হাতে ১৫ মিনিট সময় রেখে বেড়িয়েছি । আমার মায়াবতীকে আজ দীর্ঘ চার বছর পর দেখবো । আবেগে যেনো সবটা গুলিয়ে না যায় শুধু সেই দোয়া করছি । পৌঁছে গিয়েছি , বাইক থেকে নেমে কফি শপের ভেতরে ঢুকলাম । আমার মায়াবতী আমায় দেখে দাঁড়িয়ে গেলো । আমি ওকে দেখে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রয়েছি । আজ আমি মুগ্ধতাই মুগ্ধ হয়েছি , মায়াবতীতে আজ হারাতে বড্ডো মন চাইছে । আমি আসার ঠিক ৫ মিনিটের মাথায় রেহান চলে এসেছে । ওকে দেখে আমার কি যে হলো জানি না , দাড়িয়ে গেলাম । রেহান বলল ,
মুগ্ধ বস । আমি বললাম ,
বসছি , তুমিও বস ।
আমি হঠাৎ খেয়াল করে দেখলাম রেহান এসির ভেতরে থেকেও তরতর করে ঘামছে । যদিও এই সময়টা না শীত না গরম । এভাবে তো গরমে মানুষ ঘামে , ও কি তবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে । আরো ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম টেবিলে রাখা ওর হাতটা । তাকিয়ে দেখলাম ওর হাতটা অসম্ভব রকম কাঁপছে । অবাক করার বিষয় হলো , আমার হাতটিও বেহায়ার মতো কাঁপছে । তবুও ওকে সাহস জোগাতে আমি আমার কাপা হাত দিয়ে ওর হাতটা আলতো করে চেপে ধরলাম । জানিনা কেন ওকে ছোয়ার সাথে সাথে আমার চোখযুগল অশ্রুতে পূর্ণ হয়ে ঝাপসা হয়ে গেলো । রেহান আমার দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বললো ,
মুগ্ধ চোখজোড়া মুছে ফেলো । অশ্রুতে তোমায় মানায় না ।
আমি অশ্রুপূর্ণ চোখে মৃদু হেসে বলে উঠলাম ,
জ্বি জনাব , মাথায় থাকবে । আসলে কি বলতো এতোগুলো দিন পর তোমায় দেখে চোখযুগল কেন জানি ভরে উঠলো অশ্রুতে ।
তারপর আমরা দুজনে অনেক কথা বললাম ।
#চলবে
#NUSRAT_TABASSUM_METHILA
[রি চেইক হয়নি। আজকের লিখাটি বড্ডো অগোছালো । তার জন্য দুঃখিত । ভুলত্রুটি মাফ করবেন ]