#প্রতিশোধ
পর্ব_৩ 💘
#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর
আয়ান আর ধ্রুবর কথার মাঝখানে একজন ঘরে আসে।
হাই,ইয়ঙ্ ম্যান।কী করা হচ্ছে?—-
আয়ান-আঙ্কেল,আসুন,আসুন।
ইনি হচ্ছেন বিপ্লব আঙ্কেল।
নতুন কোম্পানি কেমন লাগল?-বিপ্লব আঙ্কেল।
ভালো-আয়ান।
গুড,গুড,তা ইয়ঙ্ ম্যান আমাদের বাড়িতে কবে যাচ্ছ?শ্রেয়া আর ওর মা বলছিল তুমি কতদিন যাও না।-বিপ্লব আঙ্কেল
যাব আঙ্কেল।-আয়ান।
ঠিক আছে।মনে থাকে যেন ইয়ঙ্ ম্যান।তাহলে আমি আসছি।-বিপ্লব আঙ্কেল।
এই বলে বিপ্লব আঙ্কেল চলে যায়।কিন্তু যাওয়ার সময় একবার আড় চোখে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে যায়।
তারপর ধ্রুবও আয়ানকে বলে বাড়ি চলে যায়।আর ধ্রুব বাড়ি চলে যাওয়ার পর আয়ান ওর বাবা মার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।
অন্যদিকে
আয়ুসী বাড়ি ফিরে দেখে তার ভাই পড়তে বসেছে।ফ্রেস হয়ে ভাইয়ের সাথে একটু গল্প করে।তারপর তার কাছের মানুষের দেওয়া প্রিয় ছোট্ট টেডিটাকে নিয়ে আয়ুসী জানলার ধারে এসে বসে।শীতল হাওয়ায় সে চোখটা বন্ধ করে তার সেই প্রিয় মানুষটিকে মনে করার চেষ্টা করে।
কিন্তু এ কী চোখ বন্ধ করে যার মুখটা ভেসে ওঠে সে দেখে আঁতকে ওঠে।আবার সে চোখটা বন্ধ করে আবার সেই এক মুখ।এ মুখ কেন সে দেখছে।নিজেকে পাগল পাগল লাগে।নিজেকে একটু শান্ত করে জল খায়।তারপর আস্তে আস্তে আবার চোখের পাতা বন্ধ করে।আবার এক মুখ।নিজেকে সে আর সামলাতে পারে না।চিৎকার করে ওঠে।
আয়ুসীর চিৎকারে ওর ভাই নিলয় ছুটে আসে।আয়ুসী
তখন জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে আর ঘামছে।
নিলয় এসে বলে-এই দিদিভাই কী হয়েছে?
আয়ুসী তখনও কথা বলার অবস্থায় নেই।
নিলয়-দিদিভাই,এই দিদিভাই তোর কী শরীর খারাপ লাগছে?
আয়ুসী তখন কাঁদতে কাঁদতে বলে-ভাই ওর মুখটা মনে পড়ছে না,মনে পড়ছে না।
নিলয় আয়ুসীকে শান্ত করার চেষ্টা করে।জলের জগটা দিয়ে বলে-দিদিভাই জল খেয়ে নে।
আয়ুসী এক নিশ্বাসে জল খেয়ে নেয়।নিলয় পাশে এসে বসে।আয়ুসী নিলয়দের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকায় আর ওর চোখ থেকে অঝোর ধারায় জল গড়াতে থাকে।
আয়ুসী-ভাই,ওকে—-
নিলয় আয়ুসীর হাতদুটোকে নিজের হাতের মধ্যে নেয়।বলে-এরকম কতদিন করবি দিদিভাই।সেই মুখ কী মনে রাখা যায়।তুই কবে দেখেছিলিস,সেই ছোটবেলায় দেখা।আর কী মনে থাকে।
আয়ুসী-থাকে,থাকে।আমার মনে আছে।কিন্তু আজ অন্য একজনকে দেখলাম।
নিলয়-কাকে দেখলি?
আয়ুসী আমতা আমতা করে বলে-আমাদের কোম্পানির নতুন বসকে।
নিলয়-কী?
আয়ুসী-হ্যাঁ,আমি এ কী দেখলাম ভাই।
নিলয় আয়ুসীর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে-আজ তুই সারাদিন অফিসে ছিলিস,খুব ধকল গেছে।আর তুই বলেছিলিস যে উনি তোকে বাড়ি পৌঁছিয়ে দিয়েছে।তাই হয়তো—-
আয়ুসী-কিন্তু—-
নিলয়-এটাই ঠিক।
আয়ুসী চুপ করে থাকে।
নিলয় বলে-এই ভাবে কতোদিন চলবে দিদিভাই।ছোটবেলার সেই মুখ মনে রেখে তুই কী করবি।আজ তো সে অনেক বড় হয়ে গেছে।তুই কীভাবে তাকে খুঁজে পাবি?
আয়ুসী—-
নিলয়-তাছাড়া তুই যেটা ভাবছিস সেটা কী হবে?খুঁজে পেলেও ও তোর কথা কী বিশ্বাস করবে?
আয়ুসী-হ্যাঁ,করবে।ও করবে আমি জানি।
নিলয় আয়ুসীর কোলের উপর রাখা টেডিটাকে দেখে নিশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে-জানি না দিদিভাই তুই কিসের ভরসায় আছিস।
নিলয় আয়ুসীকে বলে-ওসব কথা বাদ দে।আর ভাবিস না।
আয়ুসী-না,যে দোষ বাবা করেনি সেটা আমি ওকে বলব।
নিলয়-তোর কাছে প্রমাণ আছে?
আয়ুসী-প্রমাণ কী হবে?আমি বললেই ও বিশ্বাস করবে।
নিলয় চুপ করে থাকে।কথা ঘোরাবার জন্য বলে-তুই মনে হয় প্রেমে পড়েছিস দিদিভাই।
আয়ুসী-মানে?
নিলয় হাসতে হাসতে বলে-হ্যাঁ,তোর অফিসের নতুন বসের।
আয়ুসী-তুই চুপ করবি।বড্ড ফাজিল হয়েছিস।যা পড়তে বস।
নিলয়-ভেবে দেখ।
এই বলে নিলয় চলে যায়।
আয়ুসী চুপ করে জানলার বাইরে তাকিয়ে থাকে।
আয়ুসী ভাবতে থাকে হয়তো নিলয়ের কথায় ঠিক।হয়তো আজ বেশি ধকল গেছে।কিন্তু কেন আজ মনে পড়ল না।সে টেডিটাকে আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।
অন্যদিকে আয়ান ধ্রুব চলে যাওয়ার পর বাবা মার ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে।তার চোখে প্রতিশোধের আগুন।
নিশীথ রাত্রে কোন্ মায়াবী নিশির ডাকে
একটি পাড় যখন প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে।
অপর পাড় তখন ভালোবাসা আঁকড়ে ধরে।
❣
(আমার নিজস্ব ভাবনা)
চলবে—-