এক মুঠো ভালোবাসা 💝পর্ব:১৫

0
1066

#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৫

চারদিকে ভোরের আলো ফুটেছে । সূর্যের দেখা এখনো মেলেনি। মাঝে মাঝে পাখির কলকল ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এই সুন্দর পরিবেশ একমাত্র গ্ৰামীন জীবনেই সম্ভব।আরমোরা ভেঙ্গে উঠে বসলো মেহের ।এমন পরিবেশ সে অনেকদিন আগে নিত্তদিনই উপভোগ করতো।এখন আর করা হয়না।।
শরীর ঢাকা কাঁথাটা একটানে খুলে ফেললো সে। তার পাশে আরামসে ঘুমিয়ে আছে ফুলি নামক কাজের মেয়েটি। এখন সে এই মেয়েটির সাথেই ঘুমায়।‌ এগিয়ে গিয়ে শুকনো বকুল ফুলের উপর হাত ছুয়ালো। ফুলগুলো অনেকটা শুকিয়ে এসেছে। কাল রাতে সে ভেবে নিয়েছে এই বাড়িতে আর থাকবে না।ফিরে যাবে নিজের গ্ৰামে ।এখানে থেকে অপরিচিত মানুষের কথা শুনার চেয়ে চাচী অত্যচার সহ্য করা অনেক ভালো।।
ফুলগুলোকে ওরনাটায় পেঁচিয়ে শব্দহীন পায়ে বেরিয়ে এলো সে। দরজার কাছে এসে চারদিকে ভালোভাবে দেখে নিল সে‌। দারোয়ান চাচা নেই ,,হয়তো ভোর হওয়াতে নিজের বাড়িতে চলে গেছে ।শান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বেরিয়ে এলো সে।

গ্ৰামীন মাটির রাস্তার ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সে। আসে পাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না।তবে মিনিট দশেক পরেই দেখা মিলবে সবার ।কারণ গ্ৰামের মানুষরা যেমন সবার আগে ঘুম থেকে উঠে।। তেমনি সবার আগে ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ ক্লান্ত মনে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই রাস্তা আগলে দাঁড়ালো কেউ।জুতো বিহীন ফর্সা পা দুটো তার নজরে এলো। মুখের দিকে তাকালো না মেহের । নিজের মতো পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্দেগ হলে হঠাৎ হাত টেনে দাঁড়া করিয়ে দিলো তাকে ।ঘাড় বাঁকিয়ে অচেনা মানুষটার দিকে তাকালো মেহের। ভয়ে আতকে উঠলো সে।তার সামনে নিবিড় দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। যে চোখে চোখ রাখার মত সাহস খুঁজে পাচ্ছেনা।স্তব্ধ হয়ে চোখ সরিয়ে নিল সে। বেশ কিছুক্ষণের নীরবতা বিরাজ করলো।কেউ কারো সাথে কথা বললো না। দুহাত বুকে গুজে ভ্রু কুঁচকে বলল…

— “কি হলো যাচ্ছ না কেন?? আমিও তোমার সাথে যাবো নিয়ে চলো”!!

নিবিড়ের শান্ত কন্ঠে ঘাবড়ে গেল মেহের । বুঝতে অসুবিধা হলো না ,কোনো ঝড় আসতে চলেছে।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল..

— “আসলে আমি …

বাক্য সে করতে পারল না মেহের । ধমকে উঠলো নিবিড়..

— “আসলে তুমি কি…!! সাহস কি করে হলো আমাকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছ?? তুমি পালিয়ে গিয়ে সবার সামনে আমাকে ছোট করতে চাইছ ?? তোমার পেছনে আমি অনেক টাকা খরচ করেছি ।এই ধর,, তোমার জন্য শপিং করা ,, খাওয়া দাওয়া।।আমার সব টাকা দিয়ে তারপর যেখানে ইচ্ছা চলে যাও ।।টাকা দাও…

ধমকে কেঁপে উঠলো মেহের ।আমতা আমতা করে বলল..

— “আমি টাকা পাবো কোথায়”??

— “সেটা যাওয়ার আগেই ভাবা উচিত ছিলো। যতদিন পর্যন্ত আমার টাকা ফিরিয়ে দিতে না পারছ,, ততদিন আমার কথা মতো চলবে ।।যাওয়ার জন্য এক পা ফেলেছ তো পা ভেঙ্গে বসিয়ে রাখবো ।
চলো এবার”।।

নিবিড় মেহেরের হাত চেপে ধরে বড় বড় পা ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।নিবিড়ের পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে উঠতে পারছে না মেহের । যার ফলশ্রুতিতে,, বারবার হাতে টান পড়ছে তার। তবুও বাক্য উচ্চারণ না করে নিবিড়ের সাথে সাথে এগিয়ে গেল সে ।

_________________
— “কি খাবে নান রুটি না-কি পরোটা ?? তাড়াতাড়ি বলো সময় নেই”।

তখন মেহের কে নিয়ে সোজা গ্ৰামীন হোটেলে চলে এসেছে নিবিড়।
— “আমার পেট ভরা ।এতো সকালে কিছু খেতে পারবো না”।।

— “না খেলে টাকা দাও আমার..!!(হাত বাড়িয়ে দিয়ে নিবিড়)

— “কিছু খেলে সেই টাকা টাও তো আপনি হিসেব করে রাখবেন! এখন এই টাকা দিতে পারছিনা পরে এর থেকে বেশী দিবো কিভাবে “।(গাল হাত দিয়ে মেহের)

বিরক্তিকর একটা ভাজ ফুটে উঠলো নিবিড়ের কপালে। হাত দিয়ে মেহেরের গালে থাকা হাতটা সরিয়ে দিল। সাথে সাথে থুতনিটা গিয়ে বাড়ি খেল টেবিলের সাথে । তর্জনী দিয়ে আলতোভাবে থুতনিটা ঘসতে লাগলো সে।ভ্রু কুঁচকে ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো””কি খাবে””।
ঠোঁট প্রসারিত করে সংক্ষেপে উত্তর দিলো” পরোটা”। যা স্পষ্ট ভাবে শোনা গেল না। ঠোঁটের উচ্চারণের ভঙ্গিতে তা বোঝার বুঝে নিল সে।ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে চেয়ারে পা তুলে বসে রইল ।।

মিনিট দশেক পেরুবার আগেই খাবার টেবিলে পৌঁছে গেল । নিবিড় নিজের মতো খেতে লাগলো‌। আসেপাশে মেহের নামের কেউ আছে ,,সেটা যেন বেমালুম ভুলে গেছে নিবিড়।মেহেরের ইচ্ছে করছে নিজের চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে । নিবিড়ের টিকি টাও ছুঁতেও পারবে না তাই।আপাতত নিজের ভেতরের ইচ্ছে টাকে দমন করে পরোটা ছেঁড়ায় মন দিল। দুহাতে দুটো চামচ নিয়ে মাঝখান দিয়ে ছেড়ার চেষ্টা করছে। মেহেরের এমন পাগলামী দেখে শব্দ করে হেঁসে দিলো নিবিড়।।হাসতে হাসতে বলল…

— “হা হা হা ।।লাইক সিরিয়াসলি, তুমি চামচ দিয়ে রুটি ছিঁড়ে খাবে।আজকে শেষ হবে তো” ??

— “তো কি করবো ।সবাই দেখলে হাসবে যে”??(মুখ কালো করে মেহের)

— “কে হাসবে !!( একটু ভেবে আবার) এই ফাঁকা চেয়ার টেবিল,, গ্লাস আর প্লেট গুলো।।নাকি আমি”।।

নিবিড়ের কথায় মুখ তুলে তাকালো মেহের। আসেপাশে সবগুলো চেয়ার টেবিল ফাঁকা। ভেতরে ভেতরে অস্বস্তিতে ফেটে পড়ছে সে। শুধু শুধু এতোক্ষণ বৃথা চেষ্টা করছিল।নিবিড় পরোটা ছিঁড়ে সবজি লাগিয়ে মেহেরের মুখে পুড়ে দিয়ে মৃদু কন্ঠে বললো..

— “নিশির সাথে তেমন কথা বলবে না। ইভেন্ট বিয়েতেও যাবে না। সারাক্ষন রুমের ভেতরে থাকবে । কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলবে ,মাথা ব্যাথা করছিলো তাই যাও নি।। মনে থাকবে তো” ।।

শুধু মাথা নেড়ে সায় দিলো মেহের ।পূর্ণরায় খাবারে মন দিল নিবিড়।।

___________________
আজ নিশির হলুদ সন্ধ্যা।।মাঝখানে কেটে গেছে দুইদিন। এই দুদিনে মনের ভুলেও রুমের বাইরে পা রাখেনি মেহের। নিবিড়ের প্রতিটি কথা মেনে চলেছে।
নিশির সাথে টুকটাক কথা ছাড়া তেমন কোনো কথা হয়নি। একপ্রকার জোর করেই হলুদে আসতে রাজি করিয়েছে মেহের কে। মেহের হলুদ রঙের শাড়ি পড়ে তৈরি হয়েছে ।নিশির কথা রাখতে নিবিড়ের অগোচরে একবার নিশির গায়ে হলুদ ছুইয়ে দিয়ে চলে আসবে।

— “আপামনি আপনারে ভাইজান নদীর ধারে যাইতে কইছে। তিনি একটু আগে হেইহানে গেছেগা”।(রুমে ঢুকতে ঢুকতে ফুলি)

মেহের পাশে ফুলি দাঁড়িয়ে আছে ।আজ ফুলিও হলুদ শাড়ি পড়ছে ।দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।আলতো হেসে নদীর তীরের দিকে এগিয়ে গেল সে। নিবিড় যেতে বলেছে মানে ,তাকে এখন সেদিকে যেতেই হবে।

নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে মেহের ।জায়গাটা অনেকটা নির্জন। এবং ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা।নিবিড় আসতে বলেছে অথচ নিবিড়ের দেখাই পাওয়া যাচ্ছে না।বিরক্ত হলো মেহের । উঠে চলে আসতে নিলে নিবিড়ের কন্ঠস্বর ভেসে এলো।। নিবিড় ক্রমাগত মেহের মেহের বলে ডেকে চলেছে ।।ডাকতে ডাকতে একসময় মেহেরের খুব কাছে এসে দাঁড়াল।কোমরে হাত রেখে ঘনঘন শ্বাস নিতে নিতে বলল …

— “এতো রাতে এখানে কেন ডেকেছ?সবাই ফাংশনের কাজে ব্যস্ত ,,জরুরী কিছু বলার হলে বাড়িতেই তো বলতে পারতে ।খামখা এখানে কেন আসতে বললে”??

আকাশ থেকে পড়লো মেহের ।সে তো নিবিড়কে ডাকে নি বরংচ নিবিড় ফুলিকে দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছে।শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তার।।তাহলে কি ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে তার জন্য!! শাড়ির আঁচল মুচরাতে মুচরাতে বলল..

–” আমি আপনাকে ডাকি নি ।।বরংচ আপনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন । এখন কেন অস্বীকার করছেন”??

ভড়কে গেল নিবিড় ।সে মেহের কে ডাকেনি ।আর মেহের বলছে তাকে সে ডাকেনি।তাহলে তাদের এখানে ডাকলো টা কে??

চলবে…🎀🎀
— আমার গল্প নেগেটিভ মাইন্ডের কেন??(আপনাদের প্রশ্ন)

-,” আমি নিজেই নেগেটিভ মাইন্ডের মানুষ।সব রাইটাদের মন মানসিকতা একহয় না। তাই হাজার চেয়েও আমি আমার অভ্যাস বদলাতে পারবো না ।।তার জন্য দুঃখিত ।যদি ভালো না লাগে ইগনোর করতে পারেন ,, তবুও ভালোবাসা 💓”!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here