প্রতিশোধ পর্ব_১৮
💘
#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর
কুনালও আয়ানকে দেখতে পায় সে সেখান থেকে চলে যায়।
আয়ুসী আয়ানকে দেখে চোখ মুখ যেন কীরকম হয়ে গেছে।একটু আগের আয়ান আর এখনকার আয়ানের কত পার্থক্য।আয়ানের দুটো হাতে চায়ের কাপ ছিল।হঠাৎ আয়ান সেগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আয়ুসীর দিকেই এগিয়ে আসতে থাকে।
আয়ুসী আয়ানের এই রূপ দেখে ভয় পেয়ে গেছে।দাঁড়াবার শক্তি হারিয়ে ফেলছে।আয়ান আয়ুসীর সামনে এসে দাঁড়ায়।চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।
আয়ান বলতে শুরু করে-সত্যি নিজের রূপটা দেখিয়েই দিলে।
আয়ুসী অনেক কষ্টে বলে-কী বলছেন এসব।
কিছুই বুঝতে পারছ না।নাকি না বোঝার ভান করছ।-আয়ান
আমার কথাটা তো শুনুন।-আয়ুসী
আয়ান আয়ুসীর হাতটা শক্ত করে ধরে বলে-কী শুনব।আর কী শোনাতে চাও তুমি।কতদিন ধরে চলছে।মনে হয় তো অনেক দিন।যা আমিও লক্ষ্য করেছি।
আয়ুসী-প্লিজ আমার কথাটা শুনুন।
আয়ান-চুপ কর।একটাও কথা বলবে না।আমি কী ভেবেছিলাম আর তুমি—-।ভেবেছিলাম তোমাকে মেনে—-
আয়ানের কথাতে আয়ুসী আয়ানের চোখের দিকে তাকায়।আয়ান বলা বন্ধ করে দেয়।
তুমি যার যোগ্য তাই পাওয়া উচিত।আর আমি তোমাকে সেটাই দেব।-আয়ান
এই বলে আয়ান আয়ুসীকে দূরে ঠেলে দেয়।আয়ুসীর চোখ থেকে জল বেড়িয়ে আসে।এদিকে আয়ান চলে যায়।আয়ুসীর চোখের সামনে সব ঘোলা হয়ে আসতে থাকে।কোনো রকমে চোখটা মুছে নিয়ে আয়ানের পিছনে পিছনে দৌড়াতে থাকে।আয়ানের পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলে-আমার কথা একবার শুনুন।আমি ওকে চিনি না।
আয়ান দাঁড়িয়ে বলে-চেন না।কিন্তু ডান্স করতে পার।
আয়ুসী আয়ানের কথায় কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না।আয়ান চলে যেতে থাকলে আয়ুসী আয়ানের হাতটা ধরে বলে-আপনি বিশ্বাস করুন।
আয়ান হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে-একদম আমাকে ছোঁবে না।
এই বলে আয়ান চলে যায়।
আয়ুসী চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল গড়িয়ে পরে।আয়ুসী মুছে নিলেও কোনো বাঁধা মানে না।
এদিকে আয়ান হোটেলে চলে যায়।আয়ুসীও আসে।আয়ুসী রুমে গিয়ে দেখে আয়ান চুপ করে বসে আছে।আয়ুসী কাছে যেতেই আয়ান চোখ খুলে আয়ুসীকে একবার দেখে নিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নেয়।
সত্যি বলছি আমি লোকটাকে—-
আয়ুসীর কথা আয়ান শেষ করতে দেয় না।
কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান কর না।-আয়ান
কিন্তু—-
আয়ান কিছু বলে না।উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।আয়ুসী দরজার কাছে গিয়ে দেখে দরজা বাইরে থেকে লক করা।আয়ুসী এসে খাটের উপর বসে পরে।তারপর হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে।চোখের জল তার গলা বেয়ে নেমে আসে।অনেকক্ষণ পরে সে একটু শান্ত হয়।
তারপর চোখে মুখে জল দিয়ে এসে বসে।আর ভাবতে থাকে ছেলেটি আসলে কে?কেন এমন করল?লোকটিকে তো প্রথম ভালোই মনে হয়েছিল।তাকে বিপদ থেকে বাঁচাল।তাহলে!
আয়ুসীর মাথাতে একটা ভাবনা উঁকি দেয়।ছেলেটির সাথে যে দেখা হচ্ছে সেটা কী শুধুই এমনি এমনি।নাকি ছেলেটি ইচ্ছা করে তাকে ফলো করছে।আয়ুসী মাথায় কিছু আসে না।আবার সে কাঁদতে থাকে।আর আয়ানের কথা মনে পরতেই আরো জোরে কাঁদতে শুরু করে।
রাত হয়ে আসে।আয়ান ফেরে না।আয়ুসীর ভয় করতে থাকে।সে ঘরের ভিতর পাইচারি করতে থাকে।আর বারবার জানলা দিয়ে বাইরে দেখতে থাকে।এদিকে আয়ান হোটেলের গার্ডেনে বসে থাকে।কুনাল আয়ুসীর হাত ধরেছিল সেটা যতবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে ততবার তার চোখ মুখ লাল হয়ে যেতে থাকে।
আয়ান আসে না দেখে আয়ুসী ঘোরাঘুরি করতে করতে একটা চেয়ারে বসে পড়ে।আয়ুসী চিন্তা করতে থাকে কী করে আয়ানকে বলবে।এদিকে শরীরও আর সঙ্গ দেয় না।নানা চিন্তা করতে করতে কখন যে সে ঘুমিয়ে পরে নিজেই জানেনা।চেয়ারে একটা হাত মাথার উপর রেখে সে ঘুমিয়ে পরে।
রাত বাড়লে আয়ান ঘরে আসে।আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে আরো রেগে যায়।কিন্তু কিছু বলে না।খাটের উপর গিয়ে বসে থাকে।আর আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে বসে।
আয়ান আস্তে আস্তে বলে-তুমি কেন এমন করলে।আর আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে—-তাই যে আমিও একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।সত্যি আমি কত ভুল।তুমি ভালো কিছুর যোগ্য নও।তোমার সাথে যা করব ভেবেছিলাম তাই করব।তোমাকে তিলে তিলে শেষ করব।
আয়ান আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরে।
সকাল হয়ে আসে।আয়ুসীর ঘুম ভেঙ্গে যায়।আগের দিনের কথা মনে পড়ে সে তাড়াতাড়ি উঠে পরে।কিন্তু আয়ানকে দেখতে পেয়ে সে আরো যেন ভয় পেয়ে যায়।আয়ুসী দেখে আয়ান ঘুমাচ্ছে।আয়ুসী আয়ানের কাছে এসে দাঁড়ায়।আয়ানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমে চলে যায়।
আয়ুসী এসে চেয়ারে বসে অপেক্ষা করতে আয়ানের ওঠবার।বেলার দিকে আয়ান ওঠে।আয়ুসীর দিকে একবার তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার অর্ডার দেয়।এদিকে আয়ুসী কিছু বলতে যাবে।কিন্তু আয়ানের দিকে চেয়ে তার গলার স্বর বের হয় না।কিছুক্ষণের মধ্যে খাবার এসে যায়।আয়ান খেয়ে বেড়িয়ে যায়।আয়ুসী কিছু বলতে পারে না।
সারাদিন চুপ করে ঘরে বসে থাকে।আয়ুসী জানে রাতে ট্রেন।তাই সব প্যাকিং করে নেয়।সে জানে আয়ান তার আগেই চলে আসবে।চুপ করে বসে থাকতে থাকতে আবার সে কাঁদতে থাকে।আয়ানের এরকম ব্যবহার সে মেনে নিতে পারছে না।কারন আয়ান এই কয়েকদিন তার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেনি।তাই আয়ানের এই ব্যবহারে আয়ুসী কষ্ট পেতে থাকে।
সন্ধ্যা হবে আয়ান ফিরে আসে।নিজের লাগেজ নিয়ে নেয়।এদিকে আয়ুসীও নিজের লাগেজ নেয়।আয়ান গাড়ি ঠিক করে।আয়ান গাড়িতে বসে।কিন্তু মুখে কোনো কথা নেই।আয়ুসীও বসে পরে।ঘন্টাখানেকের মধ্যে স্টেশানে পৌঁছায়।আয়ান গিয়ে সিটে বসে পরে।এবার দুজনের সিট নীচে।ট্রেন ছেড়ে দেয়।আয়ান নিজের মতো ফোন ঘাটতে থাকে।আর আয়ুসী মাঝে মাঝে আয়ানের দিকে তাকায়।কিছুক্ষণ বাদে আয়ান শুয়ে পরে।এদিকে আয়ুসী চুপ করে বসে থাকে।কাল রাত থেকে খাওয়া নেই।শরীরটাও খারাপ লাগতে থাকে।আয়ুসী নিজের ব্যাগ থেকে একটা বিস্কুটের প্যাকেট বার করে খেয়ে নেয়।কারন সে চায় না আয়ান আবার রেগে যাক।
আয়ুসীর দু চোখে ঘুম আসে না।জানলার বাইরে সে তাকিয়ে থাকে।কোথা থেকে কী হয়ে গেল ভাবতে থাকে।এদিকে জোরে বৃষ্টি আসে।আয়ুসী জানলা বন্ধ করে দেয়।তারপর শুয়ে থাকে।শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরে।
সকালে আয়ান আগে ঘুম থেকে ওঠে।উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে বসে থাকে।আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে দেখে আয়ুসী ঘুমিয়ে আছে।আয়ুসীকে যত দেখছে আয়ান যেন তত রেগে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর আয়ুসী ঘুম থেকে ওঠে।আয়ানের দিকে চোখ পরতেই সে তাড়াতাড়ি উঠে বসে।তারপর ফ্রেশ হয়ে আসে।আসার সময় দেখে আয়ান ট্রেনের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে।আয়ুসী নিজের সিটে গিয়ে বসে পরে।আয়ান আর নিজের সিটে ফেরেনি।একবার এসে একটা বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে চলে গেছে।
এরকম করেই সারাদিনটা ট্রেনে যায়।রাতের দিকে তারা বাড়ি ফেরে।কিন্তু লাভাকে ধ্রুবর বাড়ি থেকে আনতে গিয়ে কল্যাণী দেবী দুজনকে না খাইয়ে ছাড়ে না।এদিকে ধ্রুবও আয়ানকে বলে ছবি দেখাতে।আয়ান দেখায়।আয়ুসী সবার সামনে হাসার অভিনয় করে।এদিকে লাভা দুজনকে দেখতে পেয়ে ছুটে যায় আয়ুসীর দিকে।
ধ্রুব দেখে বলে-লাভা আয়ুসীকে ভালোবেসে ফেলেছে।
আয়ান শুনে চুপ করে থাকে।
অনেক রাতে বাড়ি ফিরে আসে।আয়ান চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে লাভাকে জায়গামতো রেখে শুয়ে পরে।আয়ুসীও শুয়ে পরে।কিন্তু ঘুম আসতে চায় না।তার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে।
সকালে আয়ুসী ব্রেকফ্রাস্ট রেডি করতে থাকে।আর আয়ান লাভাকে আদর করতে থাকে।
কতদিন তোমাকে আদর করা হয়নি।-আয়ান
এদিকে লাভা চুপ করে আদর খাচ্ছে।
আয়ুসী ব্রেকফ্রাস্ট রেডি করে আয়ানের কাছে এলে আয়ান কিছু বলে না উঠে যায়।
আয়ান টেবিলে এসে খাওয়া শুরু করে।আয়ুসী চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
আয়ানের খাওয়া হয়ে গেলে চলে যাচ্ছে তখন আয়ুসী বলে-একবার আমার কথাটা—-
আয়ান রেগে আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে চলে যায়।আয়ুসী তখন আয়ানের হাতটা ধরতে যায় আয়ান রেগে আয়ুসীকে ঠেলে দিয়ে চলে যায়।এদিকে আয়ুসী পরে যায় টেবিলের কোনাতে লেগে অল্প কেটে যায়।আয়ুসীর চোখ দিয়ে নিরবে জল গড়িয়ে পরে।এদিকে আয়ান ইচ্ছা করে নি।আর আয়ান জানতেও পারেনি।কারন সে আর আয়ুসীর দিকে তাকায় নি।
এদিকে ধ্রুব ও তার মা জিজ্ঞাসা করলে আয়ুসী বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলে।আয়ানও সত্যিটা জানতে পারে না।
এরকম ভাবে দিন যেতে থাকে।আয়ান লাভাকে আয়ুসীর কাছে আসতে দেয় না।আর নানা রকম ভাবে আয়ুসীকে অপমান করতে থাকে।মাঝে মাঝে খাবার রেডি করলে বলে এটা হয়নি,ওটা হয়নি।আয়ুসীকে আবার নতুন করে করতে হয়।আয়ান একদম আয়ুসীর সাথে ভালো ব্যবহার করে না।
একদিন অফিসে আয়ুসী ঠিক করে আজ সে একটু বার হবে লোকটাকে খুঁজতে।আর ভাইয়ের কাছেও যাবে।তাই আয়ানকে বলে সে ভাইয়ের কাছে যাচ্ছে এই বলে বেড়িয়ে যায়।আয়ান কিছু বলে না।
আয়ুসী রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে বাস স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ায়।বাস আসলে উঠে পরে।সে জানে না কোথায় যাচ্ছে।এদিকে আপনমনে বাসের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে।একটা স্টপেজে এসে বাস থামে।হঠাৎ আয়ুসী দেখতে পায় সেই লোকটিকে রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে।আয়ুসী কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়।এদিকে বাস ছেড়ে দিয়েছে আয়ুসী তাড়াতাড়ি করে বলে-প্লিজ বাস থামান।
এদিকে বাসের কন্ট্রাক্টর রেগে যায়।
কী দিদি এতক্ষণ কী করছিলেন।ঘুমিয়ে পরেছিলেন নাকি—-
প্লিজ দাদা বাসটা থামান-আয়ুসী
বাসটা থামায়।কিন্তু অনেকটা দূরে।আয়ুসী ছুটতে থাকে।সেই জায়গায় এসে খুঁজতে শুরু করে।কিন্তু পায় না লোকটিকে।
আয়ুসী দু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে আসে।এদিকে সে বেখেয়ালে সামনে দিয়ে হাঁটছিল হঠাৎ পিছন থেকে একজন তার নাম ধরে ডাকতে থাকে।আয়ুসী পিছনে ফিরে দেখে কুনাল।
চলবে—-