“স্বপ্নচূড়ার আহ্বান”
পর্ব-১৯
পৃথিবীর অজানা বিরক্তকর ও ক্যাটক্যাটে আওয়াজটা
বোধ হয় একমাত্র এলার্ম বাবাজীর। তার সামনে যদি সৌন্দর্যের খেতাব পাওয়া মানুষটি গভীর ঘুমেও থাকে।
মনে হয় না, এর বিন্দুমাত্র মায়া হবে। সে তার সিদ্ধান্তে অটল। ঘুমন্ত মানুষটার কান ঝাঁঝরা করে না দেয়া পর্যন্ত সে থামবেই না। সকাল সাতটা বাজতেই এলার্মের ঢাক-ঢোল পেটানো আওয়াজে অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে বসলো নীলাংশ। সকাল থেকে রাত সবকিছুই সুষ্ঠু একটি নিয়মে বাঁধা। খুবই গোছানো স্বভাবের সে৷ নিজহাতেই বিছানা ঝেড়ে হাত মুখ ধুয়ে আসলো। রুটিন অনুযায়ী বিশাল ছাঁদের একটা বড় রুমে পৌঁছালো। জিম করার সকল যন্ত্রপাতি এখানেই রাখা। তার শরীরে পাতলা এ্যাশ কালারের সেন্ডো গেঞ্জি, হাঁটুতে নামানো একটা টাউজার। পুশআপ করতে করতে চোখ বন্ধ করে হঠাৎ মনে পড়লো কাল রাতে পায়রা তার সাথে কোনো কথা বলেনি৷ রাতের খাবারও অল্প করে খেয়ে চুপটি করে নিজের রুমে চলে গেছে। যদিও এমন নয়, যে পায়রা তার সাথে অনেক কথা বলে। কিন্তু যতটুকুই বলুক মুখে একটা উজ্জ্বল মুচকি হাঁসি বিদ্যমান থাকে। মুখের অর্ধাংশ বড় ওরনার আড়ালে থাকলেও, পিটপিট করে তাকিয়ে থাকা ডাগর আঁখির দিকে তাকালেই কীভাবে যেনো নীলাংশ বুঝে ফেলে রাগ, অভিমান, মোহনীয় হাঁসি।
মেয়েটার চোখ হাঁসে। ধড়ফড়িয়ে চোখ খুলে ম্যাট্রেসের উপর বসে পড়ে। মাত্র বারোবার পুশআপ করেছে সে। যেখানে অন্য দিনে কম করে হলেও ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশটা সহজেই দিয়ে ফেলে৷ তবে আজ কেনো সে অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠলো! কোনো অজানা কারণে মন খারাপ হয়ে গেলো। কারণ বুঝতে পারলো না। প্রোটিন শেকের ফ্লেক্সটা হাতে তুলে রুমের কাচের দরজা খুলে বাহির হলো। দেড় ঘন্টা পর ভার্সিটিতে যেতে হবে। প্রতিদিন এই সময়ে দ্রুত সবকিছু শেষ করে ভার্সিটির জন্য তৈরি হয়। অথচ, আজ কেমন বিষন্ন লাগছে। ছাঁদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়ালো৷ প্রচুর বাতাস গায়ে এসে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পেছনে ফিরে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই থমকে গেলো।
সবসময়কার মতোই মুখটা ঢাকা। ফোলা ফোলা চোখদুটো চকচক করছে। মাত্র ঘুম ভেঙে এসেছে। গ্রামের বাড়িতে তো শিমুল গাছের নিচে বসে তাজা বাতাস প্রাণভরে উপভোগ করতো। তারপর দৌড়ঝাঁপ করে স্কুল। স্যারের ভয়ে তটস্থ হয়ে দাঁড়ানো। বাড়ি ফিরে এসে তাঁরা বুবুর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে কথার ঝুলি খুলে বসতো। পাশের বাড়ির সমবয়সী মালার সঙ্গে নানারকম খেলায় মেতে থাকতো। সুন্দর হওয়ায়
খেলার দলে বেশ নেতৃত্ব থাকতো৷ আজ সব স্মৃতি। ছাঁদের একটা চেয়ারে বসলো। স্মৃতি গুলো কত সুশ্রী রূপের হয়। অথচ বর্তমানে সেসব শুধুই কিছু দীর্ঘশ্বাস।
নীলাংশকে এখনো সে দেখেনি তা নয়। ছাঁদে ঢুকতেই উল্টো পাশে দাঁড়ানো দেখেছে । কিন্তু কালকের অভিমানটা এখনও কমেনি। অভিমান হলে পায়রা কখনোই কারো সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করেনা। চুপ করে মন ভালো হওয়ার জায়গায় গিয়ে বসে। মন ভালো হলেও অভিমানের অস্তিত্ব বজায় রেখে চলে।
যার উপর অভিমান তার সাথে প্রয়োজনে হু/হা। এর ব্যতীত কোনো কথা বলেনা। হোক সে যত বড় কিছুই।
নীলাংশ ঠিক পেছনে এসে দাঁড়ালো পায়রার। সে ভেবেছে পায়রা এখনো তাকে দেখতে পায়নি। কথা বলতে কেমন গলায় আঁটকে যাচ্ছে কেনো অদ্ভুত!
পায়রার কোমড়ের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চুলগুলোর দিকে কিছুক্ষণ নিজের অবাক দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে রইলো৷ চুল সবসময় বেঁধে রাখে মেয়েটা। এই প্রথম দেখলো সে। সবসময়কার মতোই চোখের দিকে একবার তাকাতেই বুঝতে পারলো কোনো কারণে মেয়েটারও মন ভালো নেই। তার চিরাচরিত মনকাড়া হাসি ফুটিয়ে বললো –
‘পিচ্চি, এত সকালে ঘুম থেকে উঠে এলে যে! আর ছাঁদেই বা এলে কী করে? ‘
পায়রা চকিতে তাকালো। ছেলেটা এত কাছে কখন এলো! নীলাংশের ফর্সা মুখমন্ডলের উপর বিন্দু বিন্দু মুক্তার মতো ঘাম জমেছে। ভীষণ স্নিগ্ধ হাঁসি। আচ্ছা, ছেলেটা সব সময় এতো হাঁসে কেনো! ছেলেটার কী কোনো দুঃখ নেই? নিজেকে আড়ালে রাখে হয়তো।
কেমন একটা মলিনতা দেখতে পায় পায়রা। এটা তার মনের চোখ। মনের চোখ মানুষের আসল স্বত্বা চিনতে তুখোড় খেলোয়াড়। কেমন একটা ঘোরে চলে গেছিলো পায়রা। নীলাংশের কোমল হাঁসির উপর কোনো খসখসে বাক্য উচ্চারণ করতে পারলো না। মুখ ফিরিয়ে নিচু স্বরে বললো-
‘আমি সকালেই উঠি। আর রায়াবু বলেছিলো আপনাদের ছাঁদটা সুন্দর। তাই এলাম। আপনি বললে চলে যাচ্ছি। ‘
কথাটায় অজস্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিমান জড়িয়ে বললো পায়রা। সে নিজেও জানেনা কেনো একটু কিছুতেই সুন্দর সাহেবের উপর তার এত অভিমান জমে। কিন্তু, এতটুকু বুঝতে পারে সুন্দর সাহেবের অল্প কিছু স্নেহবাক্য যেমন তাকে শান্তি অনুভব করায়। ঠিক তেমন কিঞ্চিৎ পরিমাণে উপেক্ষা তার মন খারাপের ঢেউ তোলে।
নীলাংশ বড়ই আহত হলো৷ মুখের হাঁসি মিলিয়ে গেলো। পিচ্চি কী জানে তাকে ভীষণ দুঃখ দিয়েছে!
সে কী বলেছে নাকি চলে যেতে! পায়রা পা বাড়িয়েছে চলে যাওয়ার জন্য।
নীলাংশ মলিন মুখ করে বললো-
‘ইউ আর হার্টিং মি পিচ্চি! কথা বলছো না কেনো?’
পায়রা যেতে যেতে বিরবির করে শুধু বললো-
‘আমি পঁচা লোকের সাথে কথা কইনা। ‘
চলবে…
আরেকটু বড় করতে চাইছিলাম কিন্তু বন্ধু বান্ধবের উইশের চোটে আর লিখতে পারলাম না। কাল গল্প দিতে পারবো কিনা সিয়র না। বাসায় মেহমান থাকবে।
সবাই দোয়া করবেন আমার জীবনের নতুন বছরটা যেনো ভালো হয়।