#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_৭
রাতের অন্ধকার কাটিয়ে চারিদিকে ভোরের আলো ফোঁটেছে। সূর্যের আলো পর্দা ভেদ করে রুমের ভিতরে ঢুকছে। সূর্যের আলো তার চোখে পড়তেই একরাশ বিরক্তি নিয়ে পিটপিট করে চোখ খোলে সে। চারপাশে তাকিয়ে সে অবাক হয়ে যায়। রুমে সে একা মানে আভিয়ান এখনো বাড়ি ফিরে নি। কাল বিকালে বের হয়েছে, এখন সকাল হয়ে গেছে তবুও না আসায় সে কিছুটা চিন্তায় পরে যায়। সে গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নিচে দেখে আভিয়ান এসেছে নাকি।কিন্তু সে এখনো আসেনি। এভাবে আর যাই হোক বেঁচে থাকা যায় না। তার যে এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা। তাকে যে সব প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে। আর একমাত্র আভিয়ানের কাছেই তার সব প্রশ্নের রয়েছে৷ তাকে যে জানতেই হবে,,, কেন করলো সে তার সাথে এই বিশ্বাসঘাটকতা?? কেন সে তার বিশ্বাস আর ভালোবাসা নিয়ে এভাবে খেললো??? কেন সে তার জীবন নিয়ে খেলছে??? আজকে তাকে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সে নিজেে মনকে শক্ত করে অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলো।
বেলকনি থেকে সে রুমের ভিতরে ঢুকলো। খুব অস্থির লাগছে তার। আজ প্রায় দুই দিন ধরে বিয়ের শাড়ীই পরে আছে সে। এখানে তো তার কোন কিছুই আনা হয়নি। আলমারিতে কিছু একটা হয়তো পেতে পারে এই ভেবে সে গিয়ে আলমারি খোলে। আলমারি খোলে সে অনেকটা অবাক হয়। আলমারির অর্ধেকটা জায়গা জুড়ে শুধু তার প্রয়োজনীয় জিনিসই রাখা। সে বেশি কিছু না ভেবে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। এখন সব শাওয়ার নেওয়াটা সবচেয়ে বেশি জরুরি বাকি সব কিছু পরেও ভাবা যাবে।
সে অনেকক্ষন সময় নিয়ে ভালো করে গোসল করে পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। এখন অনেকটা ফ্রেস লাগছে তার।
সে আবার বেলকনিতে চলে যায়। রাতে বৃষ্টি পরায় প্রকৃতি আরো বেশি সজীব হয়ে উঠেছে। সূর্যের আলো গাছের পাতায় পড়ে এক আলাদা সৌন্দর্যের সৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মাঝে হালকা বাতাস বইছে। বাতাসে গাছের পাতা থেকে দুই-এক ফোঁটা করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমি মুগ্ধ হয়ে সব কিছু উপভোগ করছি। বরাবরই প্রকৃতির রুপে আমি মুগ্ধ হই।আজও এর কোন ব্যতিক্রম নয়। শত মন খারাপের মাঝেও মন ভালো হয়ে যায়। আমি মুগ্ধ হয়ে সব কিছু উপভোগ করছি। নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি আমি এর মাঝে। হঠাৎ করে গাড়ির হর্নের আওয়াজে আমার ধ্যান ভাঙে। একরাশ বিরক্তি নিয়ে আমি সেদিকে তাকাই। গাড়ি থেকে আভিয়ানকে নামতে দেখে তার বিরক্তিটা আরও বেড়ে যায়। সে সেদিকে না তাকিয়ে রুমের ভিতরে চলে আসে।
আভিয়ান টলমলে পায়ে কোন রকমে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। আভিয়ান রুমে ঢুকতেই আদ্রিজা তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সে আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। তার চোখ – মুখ পুরো লাল হয়ে আছে। পরনের কাপড়ও হালকা ভিজা। দেখেই বুঝা যাচ্ছে রাতে হয়তো বৃষ্টিতে ভিজেছে। আভিয়ানকে এভাবে দেখে তার খারাপ লাগলেও সে রুক্ষ স্বরে বলে আপনাকে আজ আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আজকে কিছুতেই আপনি পালাতে পারবেন না।
এতক্ষনে আভিয়ান ভালো করে আদ্রিজার দিকে তাতায়। সে নীল শাড়ী পরে আছে। চুল ছাড়া, বাতাসে তা মুখের সামনে এসে পরছে। মুখে কোন মেকাপ নেই। তবুও তাকে অনেক সুন্দর লাগছে। আদ্রিজাকে এভাবে দেখে সে অনেকটা ঘোরের মাঝে চলে যাচ্ছে। সে তার থেকে চোখ সরাতে পারছে না। এভাবে তাকিয়ে থাকলে নিশ্চয়ই আজ কোন অঘটন ঘটে যাবে তাই সে অন্য দিকে চোখ সরিয়ে নেয়। পরে বলো,,, তুমি কি জানতে চাও বলো???
আপনার স্ত্রী আর সন্তান থাকতেও আপনি জোর করে আমাকে বিয়ে কেন করেছেন??? যার জন্য আপনি আমাকে ঠকালেন সে কোথায় আর আপনার তো সন্তানই বা কোথায়??? কেন আপনি আমার জীবনটা এভাবে নষ্ট করলেন বলেন???
আভিয়ান তার দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের চোখ নিচের দিকে সরিয়ে নিয়ে বলে,,,, তোমার সব প্রশ্নের উত্তর তুমি পাবে কিন্তু আজ নয় সঠিক সময় আসুক পরে।
আদ্রিজা ভ্রু কুঁচকে রুক্ষস্বরে বলে,, আমি এখন জানতেই চাই। আর আপনি এখনি সব কিছু আমাকে বলবে।
এখন শুধু এইটুকুই জেনে রাখো তুমি ছাড়া আমার আর কোন স্ত্রী নেই আর আমার কোন সন্তানও নেই। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসতাম আর এখনো তোমাকেই ভালোবাসি। তুমি ছাড়া অন্য কোন মেয়ে আমার জীবনে কোন দিন ছিল না আর না কোন দিন আসবে।
আদ্রিজা চিৎকার করে বলে,,, আমি বিশ্বাস করি না আপনার কথা। আপনি যা বলছেন সব মিথ্যা বলছেন।
আমি সত্যিটা জানতে চাইছি। আপনি আমাকে সব সত্যিটা বলেন???
আমি যা বলছি সব সত্যি বলছি। এখন তুমি বিশ্বাস করবে কি-না সেটা সম্পূর্ণ তোমার ব্যপার। আর একদিন তুমি নিজেই সব সত্যিটা জানতে পারবে কিন্তু আজ নয়। আমার শরীর ভালো লাগছে না। খুব কান্ত লাগছে আমি ঘুমাবো। আমি আর তোমার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। আর কিছু না বলে আভিয়ান খাটে গিয়ে শুয়ে পরে। সারা রাত বৃষ্টিতে ভিজার ফলে তার মাথা ব্যাথা করছে। সে চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে চেষ্টা করে। আর কান্ত থাকার কারণে ঘুমিয়েও যায়। আদ্রিজা এখনো আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। এক মুহূর্তের জন্য এটা ভাবছে,,, আগের সব কিছু যদি মিথ্যা হতো। আভিয়ানের কথা গুলো সব যদি সত্যি হতো, তবে আজ তার জীবনটা অন্য রকম হতো। এতটা বিষাদময় হতো না সবকিছু। সত্যিই কি আভিয়ান যা বলছে সব সত্যি বলছে???
হঠাৎ করে দরজায় কারো নক করার আওয়াজে তার ধ্যান ভাঙে,,,,,সে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে জিজ্ঞেস করে কি দরকার???
মেয়েটি ভয়ে ভয়ে বলে,,, ম্যাম স্যার বলেছে আপনাকে খাবার দিয়ে যেতে,,,,,,
আদ্রিজা হেসে বলে,, আমাকে ভয় পাওয়ার কোন দরকার নেই। আর তুমি আমার ছোট তাই ম্যাম না বলে আমাকে আপু বললে খুশি হবো। খাবারটা টেবিলে রেখে যাও।
মেয়েটি মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,, স্যার ঠিকই বলেছে। আপনি সত্যিই অনেক ভালো আপু। পরে খাবারটা টেবিলে রেখে মেয়েটি চলে যায়।
আদ্রিজা দরজা লাগিয়ে খেতে যায়। একবার ভাবে আভিয়ানকে ডাক দিবে, সেও তো কিছু খায়নি। কিন্তু পরে ভাবে আমি কেন তার চিন্তা করতে যাবো। খেলে খাবে না খেলে নাই। আমার প্রচন্ড ক্ষিদা লেগেছে আমি খেয়ে নেই। সে আর কিছু না ভেবে খাবারটা খেয়ে নেয়।
সে আবার বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। তার নিজের পরিবারের জন্য তার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আজ দুই দিন হলো সে তাদের ছেড়ে আছে। তাদের সাথে তার কোন যোগাযোগও হয়নি। সাফিন কি তাদের তার কথা বলেছে। ওর মা – বাবা কি সব কিছু মেনে নিবে। সব কিছু শুনে কি তাকে ভুল বুঝবে??? তার মনে একরাশ ভয় বাসা বাঁধছে। সবাই যদি ভুল বুঝে তার থেকে দূরে চলে যায় তখন সে কিভাবে বাঁচবে?? তার বাবা- মার সাথে তাকে কথা বলতে হবে। তার নিজের ফোন তো তার বাড়িতেই রয়ে গেছে। এখন যোগাযোগ করতে হলে আভিয়ানের ফোন লাগবে। তাই সে রুমের ভিতরে আসে। আভিয়ানকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে সে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। সারা রুমে সে তার ফোন খুঁজতে থাকে। পুরো রুম খুঁজেও ফোন না পেয়ে বিরক্ত হয়ে খাটে বসে। পাশে থাকা বালিশটা রাগে নিচে ফেলে দেয়। পরে সেদিকে তাকিয়ে দেখে পাশেই ফোন রাখা। সে ফোন নিয়ে দ্রুত আবার বেলকনিতে চলে যায়।
ফোন অন করতেই দেখে পাসওয়ার্ড দেওয়া। আর সে তো আভিয়ানের পাসওয়ার্ড জানে না তাই আবারও তার মন খারাপ হয়ে যায়। সে ফোন হাতে নিয়েই এক ধ্যানে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে,,,,,,
.
.
চলবে,,,,