স্বপ্নের প্রেয়সী 💖 পর্ব- ৮

0
3153

💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
Part – 8
________________________

কাকার মুখে শুনলাম যে সেইদিন নাকি ফারহান ভাইয়া ওদের মেরেছেন ।
এবার সবটা আমার কাছে খোলসা হলো ফারহান ভাইয়া কে সেদিন বলেছিলাম তাই ওনি ওদের শাস্তি দিয়েছেন,
ঠিক হয়েছে একদম ।
কাকা কে বিদায় জানিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । এই গলিটা পেরোতেই দেখলাম ফারহান ভাইয়া আসছেন।
আজকে আর তেমন ভয় হচ্ছে না ।
আমাকে ওনি কতো সাহায্য করলেন আমার ও তো উচিত ওনাকে কিছু দেওয়া কিন্তু কি দিবো ।
পরক্ষণেই মনে পড়ল আরে আমার কিটক্যাট আছে
তো ।
ইয়া হু ওনি নিশ্চয়ই এটা পেয়ে খুশি হবেন কিছু না ভেবেই কিটক্যাট বের করে নিলাম ।
ফারহান ভাইয়ার সামনে গেলাম ।
গিয়ে বললাম থ্যাংকস ভাইয়া।
ওনি চোখ নাড়ালান অর্থাৎ কেন ?
আমি বুজতে পেরে বললাম ঐ পাজি বখাটেদের শাস্তি দেওয়ার জন্য ।
ওনি হালকা নিচু হয়ে বললেন তোকে কে বলল আমি যে ওদের শাস্তি দিয়েছি ।
আমি বললাম
– হানিফ কাকা বলল । আপনি ওদের কিভাবে রাম ধোলাই দিয়েছেন বলেই ফিক করে হেসে দিলাম ।
ওনি আমার দিকে শান্ত দৃষ্টি তে চেয়ে রইলেন ।
পরক্ষণেই সেদিনের ওড়নাটা ওনার হাতে দেখতে পেলাম ওনি বললেন এই যে তোর ওড়না টা ।
আমি হাতে নিয়ে কিছু না ভেবেই বললাম এটা বরং আপনি ই রেখে দিন । আমি নিয়ে কি করব আর ।
আমি আরেকটা ওড়না কিনে নিয়েছি ।
ওনি আমার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বললো
– ওমম এটা ভালো না তাই আমাকে দিচ্ছিস ।
আমি বললাম
– কে বলেছে হুম । এটা অবশ্যই ভালো ।
ফারহান ভাইয়া বললো
– না এটা আমার পছন্দ নয়।
– আচ্ছা তাহলে কোনটা পছন্দ ।
ওনি আমার গলার দিকে দেখিয়ে বললেন
– এটা পছন্দ আমার ,দিবি আমায় ।
আমি বললাম
– আচ্ছা নিন এটা ।
– ওনার চোখে শান্তি অনুভব করলাম । পরক্ষণেই পেছন ঘোরে ওড়না টা দিয়ে দিলাম । আর ফারহান ভাইয়ার হাতে থাকা ওড়না টা ভালো করে গলায় জড়িয়ে নিলাম।
পরক্ষণেই একটি মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম
– হ্যাপি ?
ওনি ওড়না টা হাতে ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে বলল
– হুম হ্যাপি।
আমি কিছু একটা ভেবে নিজের মাথায় নিজেই থাপ্পড় দিয়ে বললাম
– আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম ।
ফারহান ভাইয়া সন্দিহান চোখে তাকালেন
আমি বললাম
– এই যে আপনাকে চকলেট দিতে।
চকলেট দিয়ে বললাম আমাকে সাহায্য করার জন্য আমার সব থেকে প্রিয় চকলেট টা দিলাম।

ফারহান ভাইয়া মৃদু হাসলেন ।
আমি বিদায় নিয়ে চলে আসলাম ।
খানিকটা যাওয়ার পরই ফারহান ভাইয়া কিছু একটা ভেবে আমাকে থামিয়ে দিলেন ।
আমি দাঁড়ালাম ওনি আমার কাছে এসে বললেন কিছু ভুলে যাচ্ছিস না তো।
আমি ভেবে বললাম না তো।
ফারহান ভাইয়া বললেন কাউকে কোনো কিছু উপহার দিলে জানিস না সেটা নিজ হাতে করে দিতে হয় ।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
– কীভাবে?
ওনি বললেন এই যে তুই আমাকে চকলেট দিলি এটা তোর উচিত আমাকে খাইয়ে দেওয়া ।
আমি বললাম
– ও আচ্ছা এখনি দিচ্ছি ।
ফারহান ভাইয়ার থেকে চকলেট টা নিয়ে ফারহান ভাইয়াকে একটা বাইট দিতে বললাম ।
ফারহান ভাইয়া একটা বাইট দিলেন ।
তারপর আমাকে সেই চকলেই টা থেকেই একটা বাইট দিতে বললো ।
আমার চোখ চকচকে হয়ে উঠলো কারন কিটক্যাট আমার দুর্বলতা । আমি তাড়াতাড়ি একটা বাইট দিলাম ।
ফারহান ভাইয়া জোড়ে হেসে উঠলেন ।
আমি ওনাকে হাসতে দেখে বললাম
– কি হয়েছে হাসছেন কেন ?
ওনি আমাকে বললেন
ওয়ান সেকেন্ড দাড়া ।
ওনি ওনার পকেট থেকে রুমাল বের করে আমার ঠোঁটের উপর লেগে থাকা চকলেট টা মুছে দিলেন।এবার আমি নিজেই হেসে দিলাম । আমি এমনই চকলেট খেলে মুখ ভরিয়ে ফেলি। পরক্ষণেই আমি বললাম থ্যাংক ইউ ।
ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে বললেন ফারাবি কোন ক্লাসে যেন পড়ছিস ।
আমি বললাম ক্লাস সেভেন ভাইয়া ।
ফারহান ভাইয়া কিছু চিন্তা করে মৃদু হাসলেন বললেন পিচ্ছি টা ।
আচ্ছা তাহলে এখন যা । সাবধানে যাবি ঠিকাছে ]
আমার মুখে হাসির রেখা ফুটৈ উঠলো ।
হঠাৎ নীল আর নেহার ডাকে আমার হুস ফিরল।

[ বিকালে ভেলকেনি তে বসে ছিলাম ।
ভেলকেনিতে বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ চোখ পড়ল আমার কাবাটে কিছু একটা আটকে রয়েছে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাবাটের দিকে আগালাম ।
কাবাট খুলেই দেখতে পেলাম সেই ওড়না টা ।
যেটা ফারহান ভাইয়া কে আমার গলা থেকে ওড়না গিফট দিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। এটা আর ব্যবহার করা হয় নি । কেমন যেন মায়া লাগতো ।তবে খুব যত্নে রেখেছিলাম।
হয়তো আম্মু কাবাট গোছাতে গিয়ে এটা ভূলে বের করে রেখে দিয়েছিল । ওড়না টা হাতে নিয়ে আবার ভেলকেনিতে চলে আসলাম । ভেলকেনি তে ছোট টবে রাখা কালো গোলাপ গাছ টার দিকে তাকালাম । এই সেই গাছ যেটা ফারহান ভাইয়া আমাকে জন্মদিনে দিয়ে ছিল ।
আর এটা থেকে চারা নিয়ে অনেক কষ্ট করে বেশ কয়েকটা গাছ উৎপন্ন করি। যার কয়েকটা ছাদে , বাগানে আর বাসার সামনে গেটের কাছে রেখেছি । কিন্তু এই গাছ টা কে সব সময় আমার আশে পাশে রাখি ।কারন ফারহান ভাইয়া বলেছিল এই গাছ টার কিছু হলে আমাকে বেঁধে রেখে দিবে ।
গাছটার দিকে তাকাতেই দেখলাম একটু শুকিয়ে গেছে তাই পাশে রাখা স্পেশাল ফ্লাওয়ার স্পে দিয়ে ভালো করে স্পে করলাম । বাহ কিছূ ক্ষনের মাঝেই গাছটাকে কেমন সতেষ দেখাচ্ছে । গাছের দিকে তাকিয়েই আর ওড়নাটাকে জড়িয়ে পুরনো সেই স্মৃতি তে ডুব দিয়েছিলাম ।
যার রেশ কাটলো পিচ্ছি দুটোর ডাকে ।
__________________

পিচ্ছি দুটো বড্ড বেশি দুষ্টু তবে ফারাবি আপি বলতেই অজ্ঞান ।
বয়স হবে আট। দুটিতে যমজ হলে ও দেখে বোঝার উপায় নেই এরা যমজ।
দুজনের ঝগড়া লেগে থাকে সারাক্ষণ । একটু ও বনি বনান নেই ।
নীল আর নেহা হলো আমার ছোট ফুপির মেয়ে।
আমার আব্বু রা 3 ভাই 2 বোন ।
প্রথমে বড় আব্বু তারপর আব্বু, তারপর বড় ফুপি আর তারপর ছোট ফুপি আর সর্বশেষ বাড়ির ছোট ছেলে ছোট চাচ্চু ।

বড় ফুপির এক ছেলে এক মেয়ে ।
বড় নিলয় ভাইয়া তারপর তানহা আপি ।
নিলয় ভাইয়া এমবিবিএস পড়ছেন দ্বিতীয় বর্ষ আর তাহনা আপি এইসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন ।
বড় ফুপির বাসা ও ঢাকাতেই ।
আর ছোট ফুপির এই দুই মেয়ে আর এক ছেলে ।

তামান্না বড় আর তার পর এই পুঁচকে দুটিতে নীল নেহার ছয় মিনিটের বড় ভাবা যায় হাহাহা।
তামান্না নবম শ্রেণীতে পড়ে আর নীল নেহা ক্লাস টু ।
ছোট ফুপি কানাডা তে সেটেল ।
তবে প্রতি বছরে দুবার আসেন ।
আর আমার ছোট চাচ্চু তার কথা বলতে গেলে আমার নিজের ই কান্না পায়।
ছোট চাচ্চু আমার আর রিফাত ভাইয়ার বন্ধু ই বটে।
জীবনের সমস্ত কিছু আমাদের জানিয়ে দেয় ।
চাচ্চুর নাম আরিফ হোসেন।
বয়স 29 হলে ও এখনো বিয়ে টা করে উঠতে পারে নি ।
কারনটা হলো জীবনের প্রথম প্রেমে ছ্যাঁকা পাপ্ত আসামি ওনি ।
ওনার জীবনের প্রথম প্রেম হয়েছিল নবম শ্রেণীতে।
সমবয়সী প্রেম যাকে বলে এক বছরের মাথায় প্রেম এ ছ্যাঁকা খেয়ে বাকা হয়ে গেলেন ।
ছোট থেকেই পড়াশুনাতে ডাব্বা মারতেন ওনি ।
হাজারো চেষ্টা করে ও ওনাকে কেউ ঠিক করতে পারে
নি ।
এক প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে কি উন্নতি রে বাবা ।
ছ্যাঁকা খেয়ে পড়াশুনাতে এতো মন দিয়ে ছে যে একদম ক্লাস টপার ভাবা যায় ।
দশম শ্রেণীর প্রথম দিকে চাচ্চুর প্রেমের ছন্দপতন ঘটে ।
তিন মাস নাকি ডিপ্রেশন এ ভুগেছেন ।
হাজার হোক প্রথম প্রেম বলে কথা ।
তিন মাস পর পড়াশুনার গতিতে চমকে যায় সবাই ।
সবাই ভেবেছে যে ভালো করবে কিন্তু ক্লাস টপার হবে এটা কেউ গুনাকখুরে ও ভাবতে পারে নি ।
তখন কার ক্লাস টপার ছিলো আমাদের পাশের বাসার রাজিব চাচ্চু । ছোট চাচ্চু ক্লাস টপার হবে ওনি এটা ভুলে ও স্বপ্ন দেখবেন না । কিন্তু ওনার সমস্ত ধ্যান ধারনা ভুল প্রমান করে আরিফ চাচ্চু হয়ে গেলেন ক্লাস টপার ।
আর কি তার জন্য রাজিব চাচ্চুর সে কি কান্না ।
কান্নার কারনে স্কুল থেকে নাকি স্যার রা এসে সান্ত্বনার বানী ঝেড়ে গেছেন ।
কিন্তু কাজ হয় নি ।
কয়েক দিনের মাথায় রাজিব চাচ্চু ঠিক হন কিন্তু এক প্রতিজ্ঞা করেন যে আরিফ চাচ্চু কে কাদিয়ে ছাড়বেন ।
যার ফল স্বরূপ আমার চাচ্চু অবিবাহিত আছেন ।
কেন তাই তো , আরে আর বলবেন না প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে পড়াশুনাতে উন্নতি করার পর পাঁচ বছর সিঙ্গেল হয়ে কাটিয়ে দেয় আরিফ চাচ্চু ।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে পাঁচ বছরের মাথায় যখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা দিবে তখন ।
আবার প্রেমে পড়ে যায় এবার প্রেমে পরে রাজিব চাচ্চুর ছোট বোন মনি আন্টির ।
মনি আন্টি ছোট থেকেই ওনার নানা বাড়ি থাকেন ।
মাঝে মাঝে ঢাকা আসতেন।
ওনার নানার ইচ্ছে ছিলো মনি আন্টিকে ওনাদের বাসায় রেখে স্কুল টা অন্তত পড়াবেন ।
এসএসসি পরীক্ষার পর ওনি ঢাকায় চলে আসেন আর এদিকে ফেঁসে যায় আমার চাচ্চুর ছোট্ট মন টা।
সাত বছর পার হয়ে গেল ওদের প্রেমের। এতদিনে ও বিয়ে হলো না শুধু মাএ রাজিব চাচ্চুর জন্য ওনি তো প্রথমে মেনে নিতেই চায় নি ।কিন্তু বোনের দিকে তাকিয়ে মেনে নিয়েছেন ।কিন্তু একটি শর্ত গিফট করেছেন ।
মনি আন্টির পড়াশুনা কমপ্লিট হওয়ার পর ই বিয়ে ।
আহহহহহ সেই শর্তের জন্যই আমার চাচ্চু 29 বছরে এসে ও বিয়ে করতে পারে নি ।
অথচ রাজিব চাচ্চু বিয়ে করে বউ বাচ্চা নিয়ে বসে আছেন ।
ছোট চাচ্চু এমন কোনো দিন যায় না যে ওনার এক্স কে বকা দেন না ।
কারন প্রেম না হলে ছ্যাঁকা খেতো না আর না ক্লাস টপার হতো ।
এতো দিনে ওনি বিয়ে করে বউ বাচ্চা নিয়ে থাকতেন।
অথচ ওনার কপাল টাই খারাপ ।

[ আসসালামুআলাই । আজকের পার্ট একটু ছোট হয়েছে জানি । আশা করি তবুও গল্প টি আপনাদের ভালো লাগবে । কমেন্ট করে জানাবেন কেমন হয়েছে ।
আর আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন । ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন । ধন্যবাদ ]

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💜 হ্যাপি রিডিং 💜

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here