প্রেমাসক্তি’ পর্ব – ১৪

0
5751

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#part -14

আজ আট দিন নীলিমা ভারসিটিতে যাচ্ছে নাহ।
আরিয়ান থেকে থেকে দীর্ঘশ্বাস টানছে,,, সে নিজে ও ভারসিটি তে এসে মন দিতে পারে নাহহ।
বার বার মেয়েটার আকুলতা ভরা মিনতি চোখ দুটো চোখের সামনে ভেসে উঠে।
বার বার কন্ঠে বেজে উঠে নীলিমার সেই কন্ঠস্বর আমাকে আপন করে না নিতে পারো একবার শক্ত করে জড়িয়ে কপালে চুমু তো খেতে পারো।
আরিয়ানের চোখ থেকে টুপ করে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো ।
মাস খানেক পর মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা,,, এখন পড়াশুনার প্রতি অনীহা প্রকাশ করা টা বোকামি।
কিন্তু আরিয়ান তো ইচ্ছে করে করছে না এমন,,, নীলিমার কথা বার বার মাথায় ঘুরপাক খায়।
আদৌ কি সম্ভব প্রেমাসক্তি থেকে বের হওয়া ?
যদি বের হতেই পারে তো এটাকে কি প্রেমাসক্তি বলা যাবে ?
উহুম যাবে নাহহ,,, প্রেমাসক্তি হলো এমন আসক্তি যাহহ ড্রাগ এলকোহল সব কিছু কে হারিয়ে দেয়।
প্রেমাসক্তি হলো এমন আসক্তি যা পাগল করে দেয়।
আরিয়ান নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারছে নাহহহ।
আচ্ছা নীলিমা কি আদৌ পেরেছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে ?
আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস টেনে রুম থেকে বেরিয়ে ব্যলকনিতি চলে আসলো।
ব্যলকনিতে রাখা ছোট্ট কয়েকটা ফুলের টব।
ফুল গুলো কে খুব যত্নে মুরিয়ে রাখে আরিয়ান।
সপ্তাহ খানেক হলো ফুল গাছ গুলোর যত্ন নেওয়া হচ্ছে নাহ।

ব্যলকনিতে যেতেই কেমন মনে হচ্ছে ফুল গাছ গুলো আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
যেন খিল খিল করে হেসে বলছে
– পারবি না তুই এই আসক্তি থেকে মুক্ত হতে।
খুব কি ক্ষতি হতো একটি বার চেষ্টা করতে?
চেষ্টা করেই দেখতি ,,,,, হতে ও তো পারে তোদের মিলনমালা।

আরিয়ান মাথা চেপে ধরে বলল
– এটা সম্ভব নয়,,,কেন আমাকে দূর্বল করে দিচ্ছো কেন ?
আমি নীলি কে সুখ দেখিয়ে কষ্ট দিতে পারবো নাহহহ।
ওও ভালো থাকুক,, আমার ভাগের সুখ টুকু আমি ওকে দিলাম।
আমার নীলি আমার মনের কোনে সব সময় থাকবে,,, সবসময়।

*

চারদিকে অন্ধকার ঘেরা,,, থেকে থেকে ডিম লাইট জ্বলে উঠছে।
ডিম লাইট এর আলো এতোটা ই তুচ্ছ যে মনে হচ্ছে হ্যারিকেন জ্বালানো হয়েছে তা ও নিভু নিভু আগুনে।
পরিবেশ একদম গুমোট,,,, কোথাও কোনো পোকা মাঁকড় এর আওয়াজ ও শোনা যাচ্ছে নাহহহহ।
কিছুক্ষণ পর পর মেঝে তে মারবেল পরার মতো আওয়াজ হচ্ছে।
এই গুমোট আর অন্ধকার পরিবেশে আওয়াজ টা বিকট রূপ ধারন করছে।
মনে হচ্ছে হিন্দি কোনো হরর মুভির ভয়ঙ্কর সিন দেখানো হচ্ছে।

মেঝেতে বসে দু হাঁটু গুঁজে থুতনি ঠেকিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আসে নীলিমা।
কিছুক্ষণ পর পর ডুকরে ডুকরে কাঁদছে।
কান্নার আওয়াজ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
মনে হচ্ছে নিঝুম রাত্রে কোনো অশরীরী আত্মা কাঁপিয়ে কাঁদছে।

চুল গুলো উসকো খুসকো,, চোখ দুটো ফুলে ফেঁপে লাল হয়ে আছে।
নাকের পাটা টা লাল টকটকে হয়ে আছে।
ঠোঁট দুটো অসম্ভব ভাবে থরথর হয়ে কাঁপছে।
বার বার হিচকি উঠে যাচ্ছে,,, নাহহহ সে পারছে নাহহহ আর।
আরিয়ানের সাথে একটি বার হলে ও কথা বলতেই হবে।
নীলিমা মেঝে হাতরিয়ে ফোন খুঁজতে লাগলো।
বেডের কোনে পরে আছে ফোনটা ,,,,,

নীলিমা ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মতো খুবলে ধরলো ফোন টা কে ।
হাত দুটো কাঁপছে,,, নাম্বার খুঁজে পাচ্ছে নাহহ।
মনে হচ্ছে শরীরে কারেন্ট লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নীলিমা আরিয়ান কে ফোন লাগালো,,,, নেশাক্তের মতো করে ফোন দিতে লাগলো।
যেন গলায় দম এসে আটকে গেছে।
বেশ কয়েক বার রিং হলো আরিয়ান ফোন ধরলো নাহহ ।
নীলিমা সঙ্গে সঙ্গে ফোন টাকে মেঝে তে আছাড় মারলো।
ফোন খুলে ছড়িয়ে পড়লো মেঝে জুড়ে।
নীলিমা নিজের চুল নিজেই ছিড়তে লাগলো,,,পাগলের মতো করতে লাগলো।
সাউন্ড প্রুফ রুম হওয়ার কারনে মধ্যরাতে নীলিমার পাগলামি গুলো কারো মস্তিষ্কে পৌছালো ও নাহহ।

নীলিমা নিজের হাতে পায়ে কামড় বসিয়ে দিলো ।
শান্তি হচ্ছে নাহহহ,,,,কিছুতেই শান্তি মিলছে নাহহহ।
আরিয়ানের কন্ঠস্বর না শুনলে শান্তি অনুভব হবে নাহহহ।
সাইট টেবিলে ল্যান্ড ফোন দেখে ঝাঁপিয়ে পড়লো আরিয়ানের নাম্বার ডায়াল করে ফোন লাগালো।
বার কয়েক রিং হতেই আরিয়ান ফোন রিসিপ করলো।
আরিয়ান কোনো শব্দ করলো নাহহহ কারন সে জানে এটা নীলি।
আরিয়ানের গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ শুনতে লাগলো।
প্রতি টা নিশ্বাস যেন নীলিমার বুকের ভেতর হুংকার দিয়ে শব্দ তুলে যাচ্ছে।

নীলিমা কাঁদতে লাগলো,,, পাগলের মতো করতে লাগলো।
আরিয়ানের বুকের বাম পাশ টা চিন চিন ব্যাথা করে উঠছে।
নীলিমার ভয়ঙ্কর আর্তনাদ আরিয়ানের প্রতি শিরা কে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
আরিয়ান উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল
– এই নীলি ঠিক আছো তুমি?
এমন কেন করছো ?
প্লিজ নীলি শান্ত হও ,,, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।

নীলিমা শান্ত হতে পারছে নাহহহ।
বুকের ভেতর টা খা খা করে পুরছে।
আরিয়ান নিজেই পাগল হয়ে যাচ্ছে।

নীলিমা অস্ফুটন স্বরে বলল
– আমি ঠিক নেই আরিয়ান।
ভুলতে পারি নি তোমায়,,, বরং আকরে ধরে বেঁচে আছি।
তোমাকে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।
এই গভীর প্রেমাসক্তি আমায় বাঁচতে দিবে নাহহহ।
প্রেমাসক্তি তে আমি শেষ হয়ে যাবো।
একটু কাছে টেনে নাও আরিয়ান ,,প্লিজ আরিয়ান।

আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে দাড়িয়ে আছে।
চোখের কোনে পানি স্পষ্ট,,,,
আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে শ্বাস নিয়ে বলল
– সম্ভব না নীলি।

নীলিমা চরাও হয়ে বলল
– কেন ? কেন সম্ভব নয় ?
আচ্ছা একটু দেখা করো প্লিজ,,, চোখ দুটো জ্বলছে আরিয়ান।।প্লিজ একটু দেখা তো করো ,,,,,,,

আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– লোকেশন পাঠিয়ে দাও,,,,

নীলিমা লোকেশন দিয়ে ফোন রাখলো।
বেডের উপর শুইয়ে গা এলাতেই চোখ দুটো ক্লান্তি তে বুজে গেল।

*
বেলা বারোটা ,,,, নীলিমা দাড়িয়ে আছে সেই লেকের পারে।
লেকের ধার থেকে ছোট ছোট পাথর কুড়িয়ে পানি তে ঢিল ছুড়ছে।
অপেক্ষায় চোখ দুটো ক্লান্ত হয়ে গেছে।
এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে অপেক্ষার থেকে মরে যাওয়া বেশি শান্তির।
অথচ গোটা সাত আট দিন তাকে না দেখেই কাটিয়ে দিয়েছে।
যদি ও দিন গুলো ছিল ভয়ঙ্কর যন্ত্রণার।
নীলিমা বা হাতের ঘড়ি টার দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো 12’4 বাজে।
আরিয়ান কে বারোটার সময় আসতে বলেছিলো সে।
কিন্তু নীলিমা আরিয়ানের জন্য সেই 11’30 থেকে অপেক্ষা করছে।
নীলিমার চোখ দুটো কাঁদছে,, কিন্তু কি আশ্চর্য চোখ থেকে কোনো বিন্দু পানি কনা ও পরছে নাহহ।
নীলিমার চোখ দুটো স্থির যেন কোনো যন্ত্রমানবী দাড়িয়ে আছে।
নীলিমা লেকের পার থেকে মুখ ফিরিয়ে পেছন তাকাতেই আরিয়ান কে দেখতে পেল ।
আরিয়ানের দৃষ্টি ও স্থির,,, চোখে মুখে উপচে পড়া অসহায়ের ছাপ।
নীলিমা মুচকি হেসে বলল
– কখন এসেছো ?

আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– কুড়ি মিনিট হতে চলল।

নীলিমা কিছু বলল না,,,,, নীলিমা আর আরিয়ান লেকের ধার ধরে ছোট ছোট কদম ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে।
যেন লেকের পানি গুলো কে প্রদর্শন করাই ওদের লক্ষ্য।
নীলিমা লেকের টলটলে পানির দিকে তাকাতেই দেখতে পেল ওদের ছায়ার মিলনমালা।
ছায়া দুটো এমন ভাবে পরেছে যে দেখে মনে হচ্ছে ওরা দুজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছে।
আচ্ছা বাস্তবে কি সম্ভব না?
কেন ভাগ্য অসহায় করে রেখেছে তাদের ?
কেন দুটি হৃদয় এক হয়ে ও আলাদা।
এভাবে কি সম্ভব বেঁচে থাকা?
নীলিমার চোখ দুটো ভিজে গেছে,,,,,, আরিয়ান মাটির দিকে তাকিয়ে কদম ফেললে ও আড়চোখে নীলিমাকে দেখে যাচ্ছে।
প্রিয়তমাকে দেখার সুখ আদৌ কি মিস করা যায়?
এ সুখ যে সমস্ত দুঃখ পুষিয়ে দেয়,, যদি একটু বুকে জড়িয়ে নিতে পারতো তবে কি খা খা করে জ্বলে উঠা হৃদয় টা ঠান্ডা বরফের মতো শীতল হয়ে যেতো।
বেশ অনেক টা পথ হেটে আসলো দুজনে,,, এর মাঝে কেউ একটা রা ও কাটে নি।
আরিয়ান আশে পাশ টা চোখ বুলিয়ে দেখলো পরিবেশ টা গুমোট।
কেমন যেন থমকে গেছে,,,, মনে হচ্ছে সময় টা ও থমকে গেছে।
আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– নীলি এভাবে পাগলামি কেন করছো ?
তোমাকে না বলেছি একটু ও কান্না করবা নাহহহ।

নীলিমা স্থির হওয়া চোখ দুটি আরিয়ানের দিকে নিক্ষেপ করলো।
চোখ দুটো থেকে যেন জ্বলন্ত লাভা বের হচ্ছে।
কোথাও পানির কোনো অস্তিত্ব নেই।
আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– চোখ দুটোর কি হাল করেছো?
নিজেকে আয়নায় দেখেছো ?
সুন্দর মানুষ টা কেমন অস্বাভাবিক রূপ ধারন করেছে ?

নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– অসিস্ত হীন মানবীর সৌন্দর্য আদৌ কি প্রয়োজন ?

আরিয়ান কিছু বলল না গুমোট পরিবেশ টায় পেরিয়ে গেল আরো কিছু টা সময়।

নীলিমা ডুকরে কেঁদে উঠলো।
আরিয়ান বুকে হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে।
নীলিমার কান্নার শব্দ তাকে পাগল করে দিচ্ছে চোখের পানি তো খুন ই করে দিবে।
আরিয়ান পেছন ফিরে বলল
– প্লিজ নীলি ,,, আমার সহ্য হচ্ছে নাহহহ।

নীলিমা তাচ্ছিল্যর রেখা ফুটিয়ে চিৎকার করে বলল
– তোমার সহ্য হচ্ছে না ?
আমি গোটা সাত আট টা দিন এই কান্না নিয়ে কি করে বেঁচে আছি ?
দেখতে পাচ্ছো না তুমি,,, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।

তবু ও কেন বুকে টেনে নিচ্ছ না ?
সারাক্ষণ শুধু নিজেকে সামলে নাও সামলে নাও।
আমি পারবো নাহহহ নিজেকে সামলাতে।
পারবো না আমি,,,,, শেষ হয়ে যাবো।
আর সেটা ও তোমার চোখের সামনে কিন্তু তুমি আমাকে বাঁচাবে ও নাহহহ।

আরিয়ান কিছু বলতে গিয়ে ও বলল নাহহ।
নাহহহ দুর্বল হলে চলবে নাহহ।

আরিয়ান কে কিছু বলতে না দেখে নীলিমা ঠোঁট কামড়ে কান্না করতে লাগলো।
আরিয়ান এখনো কোনো রা ও কাটছে নাহহহ।
নীলিমা স্থির থাকতে পারলো না।
ঝাঁপিয়ে পড়লো আরিয়ানের বুকে।
এই বুকের স্পন্দন গুলো বলে দিচ্ছে সে কতো করে নীলিমা কে চায় ।
কতো টা ব্যাকুল একটু ভালোবাসার জন্য ।
কিন্তু উপর দিয়ে স্থির করে রেখেছে।

আরিয়ান আর সহ্য করতে পারছে নাহহ।
নীলিমার ছোঁয়া আরিয়ান কে উন্মাদ করে দিচ্ছে,,, আরিয়ান নীলিমা কে ছাড়িয়ে বলল
– চলে যাও নীলি,,, আট দিন কাটাতে পেরেছো তো।
দেখবে আর ও দশ দিন ও না দেখে কাটিয়ে দিবে,,,, এক সময় ভুলে ও যাবে।
এভাবে ভেঙে পরলে চলবে নাহহহ।
আমরা দুজন দুজনার
নই যে।

নীলিমা কিছু বলল নাহহ,,, আরিয়ান ঠিক ই বলেছে সময় ঠিক ই পেরিয়ে যাবে।
কিন্তু ভুলে যাওয়া আর হবে নাহহহ।
কোন দিন ও ভুলতে পারবে নাহহহ সে।

নীলিমা আবার আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরতে গেলেই আরিয়ান হাত এগিয়ে বাঁধা দেয়।

নীলিমার পা দুটো থমকে যায়।
আরিয়ান হাত জোড় করে চোখ বন্ধ করে বলল
– প্লিজ নীলি,,,,,,

নীলিমা আর কিছু বলল না।
নীলিমার আওয়াজ না পেয়ে আরিয়ান চোখ দুটো মেলে দিলো।
নীলিমা দৌড়ে চলে যাচ্ছে,,,, আরিয়ান এক দৃষ্টি তে সেই পথে চেয়ে রইলো।
নীলিমা চোখের আড়াল হলেই আরিয়ান মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো।
থুনঠান পরিবেশে একটা পোকা মাঁকড় এর আওয়াজ ও শোনা যাচ্ছে না ।
আরিয়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল
– আমি পারছি না আর,,,, পারছি নাহহ।
ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছি আমি,,,,, শেষ হয়ে যাচ্ছি।
শেষ হয়ে যাচ্ছি,,,,,, আরিয়ান চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
লোকালয়ে যদি এভাবে হুংকার দিয়ে কাঁদা যেতো তাহলে আরিয়ান রোজ কাঁদতো।
ভালোবাসার নির্মম পরিণতি গুলো মানুষ কে শুধুই কাদাতে পারে।
সুখ এনে দিতে পারে নাহহহ।

*

ফোন বেজে চলেছে,,, নীলিমার মধ্যে রিসিপ করার কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে নাহহ।
কিন্তু ফোনের আগন্তুক ও নাছর বান্দা একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে।
নীলিমা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ফোন রিসিপ কর বলল

– হুমমম মিহি বল

– গোটা পনের দিন হয়ে গেছে ভারসিটি আসছিস নাহহ।
তার উপর ফোন ও ধরিস নাহহ ।
কি হয়েছে রে?

নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– কি হবে আর,,,, ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।

– কি সব বলছিস ইয়ার,,, আচ্ছা শোন আজ বিকেল চারটায় ক্যাফে দেখা কর।
খুব আর্জেন্ট বুঝেছিস?
আসবি তো ,,, প্লিজ ইয়ার,,,,

নীলিমা রোবটের মতো উত্তর দিল সে আসবে।

ফোন রাখতেই মিসেস চৌধুরী এসে হাজির।
মেয়ে কে মাথা থেকে পা অব্দি দেখে বললেন
– নীলু কি হয়েছে রে মা।
আজকাল কথা বলিস না ,,, ভারসিটি যাস না।
শরীরের হাল দেখেছিস,,,, এক বেলা খাস তো দু বেলা খাস নাহহ।

তোর আব্বু না হয় বাহিরে আছেন,,,, যখন এসে শুনবে, দেখবে তোর এই অবস্থা তখন খুব রাগ করবে কিন্তু।

নীলিমা কিছু বলল নাহহ।

মিসেস চৌধুরী মেয়ে কে বেডে বসিয়ে বললেন
– তোর আব্বু কতো দিন ধরে বলছে তোর সাথে কথা বলবে।
তোর ফোন নাকি বন্ধ,, কল রিসিপ করিস নাহ ।
নানান কাহিনি,,,,, একটু পর তোর আব্বু ফোন দিবে কথা বলে নিছ কেমন।
আর নাস্তা উপরে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

নীলিমা মৃদু হেসে মাথা ঝাকালো।
মিসেস চৌধুরী মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে পড়লেন।
তার মনের ভেতর চলছে নানান যুদ্ধ নীলিমার চোখ মুখ দেখলেই বোঝা যায় ,,, নীলিমা ভালো নেই।
রাত জাগে,,, আর চোখের স্থির দৃষ্টি বলে দেয় দেহে প্রান নেই।
চোখের লাল আভা বলে কান্না করেছে কতো রাত।
কিন্তু ছোট থেকেই মেয়ের উপর জোড় দেখান না ওনি।
মেয়ের ইচ্ছে হলে মেয়ে নিজেই বলবে।
কখনো মেয়েটার গায়ে ফুলের টোকা ও দেন নি ওনি,,,, আর নীলিমার বাবার সাথে তর্ক ও করেন নি।
একদম ই শান্ত প্রকৃতির মানুষ ওনি।
নীলিমা ই তাদের চোখের মনি,,,, এক মাত্র সন্তান বলে নয় ,,, নীলিমার মতো মায়াবিনী কে উপেক্ষা করার শক্তি সবার থাকে নাহহহ।
মিসেস চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ের রুমের দিকে তাকালেন নীলিমা এখনো একি ভঙ্গিতে বসে আছে।
মিসেস চৌধুরী চোখের কোন থেকে পানি মুছে নিচে নেমে গেলেন।

*

বেলা সারে চারটে ,,, সবাই ক্যাফে তে বসে আছে।
সবাই অপেক্ষায় আছে নীলিমার জন্য।
কনা বেশ বিরক্ত হচ্ছে ভেবে রেখেছে নীলিমা আসলেই চট করে দুটো ঠাপ্পর বসিয়ে দিবে।
কি মনে করেছে কি ,,,, পনের দিন হলো দেখা নেই ,,, ফোন ধরে নাহহহ।
এমন করার কারন টাই বাহহহ কিহহহ।

রুমি গালে হাত দিয়ে বসে আছে।
প্রচন্ড মন খারাপ তার ,,,, নীলিমার জন্য দুদিন চোখের পানি ও ফেলেছে সে।

মিহি মাথায় হাত ঠেকিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।
তার মনের অবস্থা বুঝা দায়।

কনার ফোন বেজে চলছে,,, মনে হচ্ছে কেউ একজন ফোন রিসিপ না করলে জ্বালিয়ে মারবে।
কনার মুখ টা বিরক্তি তে ভরে উঠছে,,,, কনা ফোন রিসিপ করে বলল
– ঐ তোর কি হইছে?
যখন তখন ফোন দেওয়া তোর অভ্যাস হয়ে গেছে।
তোর সাথে আমার এক মাস পরে বিয়ে ,,, এখনো আমি তোর বউ নাহ।
এখন ফোন দিবি না তুই।

এই টুকু বলেই কনা ফোন কেটে দিলো।
টেবিলের উপর এক প্রকার ছুড়ে ফেলল ফোন টা।

মিহি ভ্রু কুঁচকে বলল
– কি হইছে?

কনা রাগে কটমট করতে করতে বলল
– দূর কেন যে এই হাঁদা রাম রে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম।
এরেন্জ ম্যারেজ করার ইচ্ছে টাই ছিলো ভুল।
এই গরু তে পাগল করে দিলো।

মিহি ছোট্ট করে হেসে বলল
– এতো আগে বিয়ে করার শখ করেছিস কেন ?

মিহির কথা শুনে কনা হা হয়ে রইলো।
এই মেয়ে কি বলছে এসব ?
যে নিজেই এক মাসের প্রেমে লুকিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে।
সেখানে ওও তো এরেন্জ ম্যারেজ করবে।

কনা কে এভাবে হা হয়ে থাকতে দেখে মিহি দাত কেলিয়ে হাসলো।
তারপর আপসোস এর সুরে বলল
– দেখ কানা তোর ভাগ্য টা খুব ভালো।
ঐ গাদা টা আই মিন রাদিব ভাইয়া ,,, বিয়ের আগেই তোর তুই তুইতোকারি সহ্য করছে,,, একটু উঁচু গলায় কথা ও বলে নাহহহ।
আর তুই কি নাহহহ বেচারার হাড় গোড় ভেঙ্গে দিচ্ছিস।

কনা রেগে বলল
– ঐ তুই কারে কানা বলিস ?
আর কি বললি ওও বেচারা ,,, আরে নাম্বার ওয়ান চালাক ওহহ।
এনগেন্সমেন এর দিন কি বলে জানিস,,,, বিয়ের তো চার মাস বাকি এই চার মাস চুটিয়ে প্রেম হবে।
আর বিয়ের দিন থেকে তিন দিন অব্দি ঘর থেকে বের ই হতে দিবে নাহহহ।

কি অসভ্য,,,,,

রুমি এগিয়ে এসে বলল
– হাউ রোমান্টিক ইয়ার,,,, আমার বি এফ টা একটা নিরামিষ ।

কনা ভেঙ্চি কেটে বলল
– দূর রোমান্টিক না ছাই,,,, আমি ও কম নাকি ,, আমি শার্টের কলার টেনে বলেছিলাম,,, বিয়ের দিন থেকে তোর গাঁয়ের শার্ট খুঁজে পাবি নাকি সন্দেহ,,,, ঝাঁটার বারি দিয়ে সোজা করে দিবো।

কনার কথা শুনে মিহি আর রুমি গগনকাপিয়ে হাসতে লাগলো।
যার ফলে আশে পাশের সবাই ফ্যাল ফ্যাল করে চোখ দিয়ে ওদের গিলে খাচ্ছিলো।
সবার মুখের ভঙ্গি মা দেখে ওরা তিন জন ই আবার গগন কাঁপিয়ে হাসি দিলো।

ক্যাফের গেট টেনে ধীর গতিতে এগিয়ে আসছে নীলিমা।
রুমি দেখতে পেয়েই বলল
– এই এই হাসি থামা ঐ যে নীলু ,,,,,

সবাই নীলিমার দিকে দৃষ্টি দিলো।
নীলিমা একটা সাদা শুতোর কাজ করা লাল কালো রঙা কুর্তি পড়েছে।
মুখে নেই কোনো মেইক আপ এর ছোয়া,,, চোখ দুটো গর্তে ঢুকে গিয়েছে।
গোলাপী রঙা ঠোঁট টা কেমন উসকো খুসকো লাগছে।
মুখে নেই কোনো হাসির ছোয়া,,,, তবু ও এই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে কতো গুলো চোখ।
যেন নীলিমাই পৃথিবীর সেরা সুন্দরী।
নীলিমা ধীর পায়ে এসে চেয়ার টেনে বসতেই সবাই গুম মেরে বসে রইলো।
সবাই কে এভাবে তাকাতে দেখে নীলিমা কিছু ই বলল না,,,, টেবিলে রাখা সফট ড্রিক্ এর বোতল থেকে এক গ্লাস সফট ড্রিক্ নিয়ে নিল।

কনা এগিয়ে এসে বলল
– তুই কি জানিস তোকে কতোটা সুন্দর লাগছে ?

মিহি চোখ ছোট ছোট করে বলল
– তবে সেই সৌন্দর্যর থেকে বেশি চোখে লাগছে ,,, মুখের তিক্ততা।

রুমি নীলিমার গালে হাত বুলিয়ে বলল
– কি হয়েছে নীলু ?

নীলিমা কিছু বলল না।
একজন ওয়েটার এসে বলল
– ম্যাম আপনাদের কি লাগবে?

মিহি সবার জন্য কুল কফি অর্ডার দিয়ে বলল
– নীলু বল না কি হয়েছে তোর ?

নীলিমা কিছুই বলল না ,, গ্লাস থেকে রোবট এর মত সফট ড্রিক্ খেতে লাগলো
সবাই গালে হাত দিয়ে বসে রইলো। অতক্ষণে ওয়েটার অর্ডার সার্ভ করে দিলো।
নীলিমা কফি হাতে নিয়ে বলল
– এভাবে দেখিস নাহহহ ,,,,, এখান থেকে গিয়ে সব বলব।

সবাই কোনো উত্তর না দিয়ে দ্রুত কফি খেতে লাগলো।

*

চার বান্ধবী বসে আছে পার্ক এ।
নীলিমা হাতে গোলাপ নিয়ে একটা একটা করে পাপড়ি ছিড়ে যাচ্ছে।

মিহি ধীর কন্ঠে বলল
– নীলু,,,,,

নীলিমা চোখ উঠাতেই সবাই কেঁপে উঠলো।
চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে,,,, পানিতে টুইটুম্বর হয়ে আছে।

রুমি এগিয়ে এসে বলল
– এই নীলু কি হয়েছে তোর ?

কনা রেগে বলল
– কাঁদছিস কেন ?

মিহি যেন কিছু একটা আচ করতে পেরেছে।
মিহি সবাই কে চুপ থাকতে বলল ,,, সবাই চুপ হতেই নীলিমা অঝোরে কাঁদতে লাগলো।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে সমস্তটা বলল ,,,,, চার বান্ধবী ই কেঁদে যাচ্ছে।
কি বলবে কি ওরা ?
সবাই মনের ফিলিং বুঝতে পারলে ও কিছু করার কি আদৌ আছে?
নীলিমার মতো ধনী ফ্যামিলির মেয়ে কে কি আদৌ একজন অনাথের হাতে তুলে দিবে ?

কনা এগিয়ে এসে নীলিমা কে জড়িয়ে বলল
– তুই চিন্তা করিস নাহহহ সব ঠিক হয়ে যাবে ।
আচ্ছা তুই তো বলিস তোর আব্বু তো তোকে খুব বেশি ই ভালোবাসে,,,, আঙ্কেল কে একবার বলে তো দেখ।

নীলিমা ভাবলো ,,,, সত্যি ই তো আব্বু কেন মেনে নিবেন না তাই নাহহহ ?
নিশ্চয় ই মেনে নিবেন,,,, আর যাই হোক মেয়ের সুখের জন্য মেনে নিতে ও তো পারে।
কিন্তু যদি না মেনে নেয় ?
নীলিমা পারবে নাহহ তার ফ্যামিলি কে আঘাত করতে আর না পারবে আরিয়ান কে ছাড়তে।

নীলিমার মুখ আবার গম্ভীর হয়ে গেল ।
সবাই নীলিমা কে বুঝিয়ে বলল এতো ভাবিস নাহহহ।
আগে আরিয়ান কে মানাতে হবে।
সবাই লড়াই করতে পারলে ও কেন ওর ভালোবাসার জন্য লড়াই করবে না ?

নীলিমা সবার কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো ।
তারপর ভাবলো সত্যি ই তো।
নীলিমা মৃদু হেসে বাসায় ফিরে আসলো ।
ফোন নিয়ে ঘাটতে লাগলো,,, আরিয়ানের ছবি গুলো তে চোখ বুলাতে লাগলো।
আরিয়ান কে ফোন করলে আরিয়ান ফোন রিসিপ করবে নাহহহ তাই আর ফোন করলো না।
ফোন হাতেই ঘুমিয়ে পড়লো।

*

ভারসিটিতে হই চই লেগে গেছে।
মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষার আগে সবাই কে নিয়ে টুর হবে বলে ঠিক করেছেন ভারসিটি কর্তৃপক্ষ।
নীলিমার খুব আনন্দ হচ্ছে,,, আরিয়ান ও তো যাবে।
নীলিমা নাম লিখিয়ে দিলো,,,,,, কিন্তু পরে জানতে পারলো আরিয়ান যাবে নাহহ।
নীলিমা জানে আরিয়ান কেন যাবে নাহহহ।
নীলিমা চোখের পানি আড়াল করে নাম বাতিল করতে গেল।

রুমি এসে বলল
– ঐ কোথায় যাস?

– নাম বাতিল করতে।

– মানে ?

– আমি যাবো নাহহহ রে তোরা যাহহহ।

– কেন ?

নীলিমা আর কিছু বলল না সামনের দিকে আগাতে লাগলো।

*

👇
অনেক অনেক সরি আমি।
গল্প দেরি করে দেওয়ার একটি ই কারন এই বিশাল পার্ট।
সারা দিন লিখেছি, আম্মুর বকা খেতে খেতে দিন শেষ আমার ।
আশা করি আজকের এই বিশাল পার্ট পেয়ে সবাই খুশি হয়েছেন।

মিহি, রুমি, কনা গম্ভীর হয়ে বসে আছে।
তাদের সামনে বসে আছে আরিয়ান।
আরিয়ান সবাই কে তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে পরখ করে বলল
– আমি জানি তোমরা কেন এসেছো।
দেখো নীলি কে আমি সুখ দিতে পারবো নাহহ ,,,সেই সুখ দেওয়া আমার সামর্থ্যের মধ্যে নেই।

কনা মুখ উচিয়ে বলল
– কি বলছেন কি ভাইয়া,,, জানেন মেয়ে টা কতো আশা করে আছে।
ওওও তো শেষ হয়ে যাবে,,,

আরিয়ান মৃদু হেসে বলল
– ওওও পারবে সামলাতে।

সবাই বেশ অনেক ক্ষন কথা বলল আরিয়ান নানা রকম যুক্তি দিয়ে ওদের হাড়িয়ে দিলো।

সবার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে শুধু দীর্ঘশ্বাস।

মিহি মৃদু কন্ঠে বলল
– নীলু টুর এ যাবে নাহহহ।

আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে আছে দেখে মিহি বলল
– কারন ও মনে করে আপনি ওর জন্য টুর মিস করবেন।
আর ও সেটা চায় নাহহহ,,,,
বলেছে,,, ওও যাবে নাহহহ আপনি যেতে পারেন।

আরিয়ান নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো।
টুর যেহেতু বাস জার্নি,,,, তো মাঝে দু তিন ঘন্টা বাস থেকে নামবে সবাই।
সেই ক্ষেত্রে নীলিমা পাগলামি করবে ও নাহহহ।
আর আরিয়ান যথা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করবে।
নীলিমা টুর থেকে ঘুরে এলে কিছু টা শান্তি অনুভব করবে।

আরিয়ান মাথা উঁচু করে বলল
– আচ্ছা সমস্যা নেই,,,, আমি ও যাবো।
নীলি কে ও যেতে বইলো,,,,

তারপর আর ও কিছু কথা বলে আরিয়ান বের হয়ে গেল।

নীলিমা আড়াল থেকে সব কথা শুনলো।
আরিয়ানের যুক্তি তার বান্ধবীদের ও হারিয়ে দিয়েছে।
নীলিমার চোখ থেকে অঝোরে পানি পরতে লাগলো।
চোখের পানি লাগামহীন হয়ে গেছে।

কনা নীলিমা কে ফোন দিয়ে ক্যাফে তে আসতে বলল
নীলিমা বলল সে দশ মিনিটের মধ্যেই আসছে।

নীলিমা ক্যাফের ওয়াসরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো।
কাউকে বুঝতে দেওয়া যাবে না,,, ওও যে সব কথা শুনেছে।

নীলিমা নিজে কে স্বাভাবিক করে আসতেই মিহি হেসে বলল
– আরিয়ান ভাইয়া বলেছে ওনার কাজ ছিলো তাই ওনি যাবে নাহহ।
তুই যখন ওনার জন্য যেতে চাইছিস নাহহহ তাই ওনি বলেছে যাবে।

নীলিমা অভিনয়ের হাসি দিয়ে বলল
– ঠিক আছে তাহলে আমি ও যাবো।

সবার সাথে স্বাভাবিক আচারন করে নীলিমা বাসায় ফিরে আসলো।
ব্যালকনিতে গিয়ে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলল।।
তিন দিন পর টুর ,,, ঢাকা টু
কুমিল্লা।

*

বাস চলছে আপন গতিতে ,,, সবাই নাচা নাচি হই হুল্লর এ ব্যস্ত।
নীলিমা বাসের এক কোনে চুপ করে বসে আছে।
মনে কোনো আনন্দ নেই,,,,,, দুপুর দুটোর দিকে একটা বড় রেস্টুরেন্ট এর সমনে বাস থামালো।
খেয়ে সবাই রওনা হলো,,,, একটা রিসোর্ট এর দিকে,,,,

তিনটের দিকে বাস থামলো এক বিশাল রিসোর্ট এ।
সবাই গাড়ি থেকে নেমে হৈ হুল্লর করতে লাগলো।
গ্রামীন ছোয়া পেয়ে যেন সবাই মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে গেছে।
নীলিমা মৃদু হেসে হাঁটতে লাগলো,,,, আরিয়ান কে লান্স এর সময় দেখেছিলো।
এখন দেখতে পাচ্ছে নাহহহ,,,,, নীলিমা উপরে যতটা না শক্ত হয়ে আছে ভেতরে ভেতরে ততটাই শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আরিয়ান কে ছাড়া বাঁচা সম্ভব নয়।

নীলিমা রিসোর্ট ঘুরতে ঘুরতে একটা বাগানের দিকে চলে আসলো।
বাগানে ফুলের বাহার,,, নানা রঙের ফুলের ছড়াছড়ি।
বাগানের শেষ প্রান্তে চোখ যেতেই নীলিমা থমকে গেল।
আরিয়ান দাড়িয়ে আছে,,,, নীলিমা ছুটে আরিয়ানের কাছে গেল।
তৃষ্ণার্ত মন ছুটে চলেছে,,,, আরিয়ানের কাছে।
নীলিমা আরিয়ান কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
আরিয়ান কেঁপে উঠলো,,,, নীলিমার থেকে নিজেকে আড়াল করতেই এই বাগানের শেষ প্রান্তে এসেছিল আরিয়ান কিন্তু নীলিমা এখানে চলে এসেছে।

আরিয়ান নীলিমা কে ছাড়িয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল
– নীলি তুমি চলে যাও প্লিজ,,,

আরিয়ানের গলা কাঁপছিল,,, আরিয়ানের মন চাইছে নীলিমা কে জড়িয়ে নিতে।
কিন্তু বিবেক বাঁধা দিচ্ছে,,,,,

নীলিমা থমকে দাঁড়িয়ে থাকলো।
আরিয়ান চলে যেতে নিলেই নীলিমা আরিয়ানের হাত ধরে ফেলল।
আরিয়ান কিছু বলতে পারছে নাহহহ।
নীলিমা মৃদু স্বরে বলল
– প্লিজ আরিয়ান ,,,,, চলে যেও নাহহ।

আরিয়ান নীলিমা কে ছাড়িয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল
– প্লিজ নীলি,,,

আরিয়ানের কথা শুনলো না নীলিমা।
উল্টো নীলিমা আরিয়ান কে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।

আরিয়ান সহ্য না করতে পেরে ধমক দিয়ে বলল
– কি হচ্ছে কি নীলিমা,,,, আমি অসহ্য হয়ে গেছি।
কেন পাগলামি করছো তুমি,,, বুঝো না কেন ,,, আমরা অসহায়।
আমাদের পথ চলা সম্ভব নয়,,,
প্লিজ যেতে দাও,,,,,,

নীলিমা থমকে দাড়ালো,,, আরিয়ান কখনোই তাকে নীলিমা বলে ডাকে নাহহ।
আজ নীলিমা বলে ডাকলো,,,,,,
আরিয়ান চলে যেতে লাগলো।
নীলিমা কিছু বলল না আর,,,, শুধু স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইলো।

*

পুরো রিসোর্ট ঘুরে সবাই রওনা দেবে ঢাকার উদ্দেশ্যে।
আরিয়ান নীলিমা কে খুঁজে চলেছে,,,,, নীলিমা কে দেখতে পাচ্ছে নাহহ ওহহ।
মিহি কে গিয়ে বললেই মিহি বলল
– ওহহহ তো সাথে নেই,,,

আরিয়ানের মাথায় চরাও দিয়ে উঠলো নানান ভাবনা।
মিহি বলল
– ভাইয়া নীলু নেই কোথাও

আরিয়ানের শরীর কাঁপতে লাগলো।
মিহি , রুমি, কনা , আর আরিয়ান খুঁজতে লাগলো নীলিমা কে।

আরিয়ানের মনে পড়লো রিসোর্ট এর সেই বাগানে রেখে এসেছিলো নীলিমা কে।
নীলিমা সেখানে নেই তো,,,, আরিয়ান ছুটে চললো সেই বাগানে,,,, আরিয়ানের পিছু পিছু মিহি, কনা আর রুমি ও গেল।

আরিয়ান পুরো বাগান হন্তদন্ত হয়ে খুঁজতে লাগলো।
নাহহহ নীলিমা নেই ,,,, ফোন টা ও সুইচ অফ।
আরিয়ানের মাথা কাজ করছে না,,, আরিয়ান চুল চেপে ধরে চিৎকার করে বলল
– নীলিইইই ,,,,,

আরিয়ানের বুক কাঁপছে,,, কেন সে নীলিমা ফেলে চলে গেল।
আরিয়ান পাগলের মতো করতে লাগলো, রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে আশে পাশে খুঁজতে লাগলো,পাশেই রয়েছে নদী
আরিয়ান নদীর পার ধরে হাঁটতে লাগলো নাহহহ খুঁজে পেল না নীলিমা কে।
আরিয়ানের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে,

রুমি, কনা , আর মিহি ও কাঁদছে।
সবাই পুরো আশে পাশে খুঁজে ও পেল না নীলিমা কে।
কিছু দূর পরেই জঙ্গল রয়েছে, আরিয়ান ছুটে চলল সেই দিকে।
জঙ্গলের কাছে আসতেই আরিয়ানের চোখ দুটো স্থির হয়ে গেল।
পাথরের গায়ে হেলান দিয়ে পরে আছে নীলিমা।
আরিয়ানের পা যেন থমকে গেছে, আরিয়ান আগানোর শক্তি পাচ্ছে নাহহ।
মিহি হাঁপাতে হাঁপাতে বলল
– ভাইয়া এভাবে বসে আছেন কেন ?

আরিয়ান কিছু বলল না,,, কাঁপা শরীর নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
ছুটে চলল নীলিমার কাছে,,, এই সামান্য জায়গা টুকু তে দু বার হোঁচট খেলো।
নীলিমার কাছে এসে পাগলের মতো করতে লাগলো আরিয়ান।
নীলিমার মুখে হালকা করে ঠাপ্পর দিয়ে বলতে লাগলো
– নীলি উঠো প্লিজ , কি হয়েছে তোমার এই নীলি,

মিহি নীলিমার হাত পা ঘষতে লাগলো।
বা হাতের কাছে আসতেই মিহি আঁতকে উঠলো ।
কনা আর রুমি ও এসে পৌছে গেছে,,

মিহির মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে নাহ।

কনা এগিয়ে এসে বলল
– এই মিহি কি হয়েছে?
মিহি কাঁপা কাঁপা হাত দিয়ে নীলিমার বা হাতের দিকে ইশারা করলো।
আরিয়ান নীলিমা কে জাগাতে ব্যস্ত,

কনা নীলিমার বা হাতের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো।
আরিয়ান নীলিমার হাতের দিকে তাকাতেই থমকে গেল।
নীলিমার বা হাত টা কিছুটা থেতলে গেছে, সাথে ছুড়ি দিয়ে কেটেছে।
কাটা টা বেশ গভীর, সাথে খানিকটা রক্ত ঝরেছে ।

আরিয়ান কোনো কথা না বলে দ্রুত নীলিমা কে কোলে তুলে নিলো।
মিহি ,কনা আর রুমি কাঁদতে লাগলো।
এই মেয়েটা কে এতো বোঝানোর পর ও কেন এমন করলো ওহহ।

পাশে থাকা হসপিটালে নিতেই ডাক্তার বললেন
– ওহহ মাই গড , হাতের শিরার উপর আঘাত করেছে।

ডাক্তার ভালো করে চেইক আপ করে বললেন
– থ্যাংক গড।
শিরার উপর বেশি আঘাত পরে নিহহ।
ওনাকে ইনজেকশন পুশ করে দিচ্ছি, ঘন্টা খানেক ঘুমাবে তারপর বাসায় নিয়ে যাবেন।
অনেক টা রক্ত ঝরেছে, ভালো ভাবে যত্ন নিবেন।

আরিয়ান ডাক্তারের পরামর্শ মতো কিছু ঔষুধ এনে রাখলো।
নীলিমা ঘুমোচ্ছে, আরিয়ান নীলিমার ব্যান্ডেজ করা হাত টায় বার বার চুমু খাচ্ছে।
এভাবে মেয়ে টা একদিন মরেই যাবে।
এ কেমন আসক্তি যার থেকে চেয়ে ও মুক্তি পাওয়া যায় নাহহ।

মিহি, রুমি, আর কনা আরিয়ানের সামনে দাড়াতেই আরিয়ান মাথা তুলে তাকালো।

কনা মৃদু হেসে বলল
– ভাইয়া আমাদের মনে হয় আপনাদের আলাদা কিছু সময় কাটানো দরকার।
আমরা যাচ্ছি, সন্ধ্যার আগেই রওনা দিবে বাস ।
আপনারা ও আগে বের হয়ে যাইয়েন।

আরিয়ান মাথা ঝাকালো,, সবাই মুচকি হেসে হসপিটালের কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।
এদের এই বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।

আরিয়ানের বুক টা খা খা করে উঠছে।
যদি নীলিমার কিছু হয়ে যেত, কি করে বাঁচতো ও।
ঘন্টা দেড়েক পর ই নীলিমা জেগে উঠলো।
নীলিমা জাগতেই আরিয়ান ঝাঁপিয়ে পরে নীলিমা কে জড়িয়ে ধরলো।
নীলিমা নিঃশব্দে কাঁদছে, আরিয়ানের পিঠে পানির স্পর্শ লাগতেই আরিয়ান নীলিমা কে ছেড়ে দিলো।

নীলিমা ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো।
আরিয়ান সামান্য রাগি কন্ঠে বলল
– একদম কাঁদবে না , মরার এতো শখ কেন ?
আমাকে ফেলে ই চলে যেতে চাও।

এই কথা গুলো বলতে বলতে আরিয়ানের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।

নীলিমা মুচকি হেসে বলল
– মেয়েদের মতো ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদছো কেন ?

আরিয়ান চোখের পানি আড়াল করে বলল
– মজা করো আমার সাথে, আর কখনো মরার কথা ভাবলে একটা ঠাপ্পর দিবো।

নীলিমা ডুকরে কেঁদে উঠলো।
আরিয়ান ব্যস্ত হয়ে বলল
– আরে আবার কাঁদছো কেন।
আমি কি বলেছি এখনি মারবো তোমায়।

– আরিয়ান একটু আগলে রাখো না আমায়।
প্লিজ আরিয়ান
যেখানে আমার একটু কষ্ট তোমার সহ্য হচ্ছে না সেখানে তুমি নিজেই কেন এতো কষ্ট দিচ্ছো।
প্লিজ আরিয়ান
আমার জন্য পারবে না লড়াই করতে ?
আমাদের গল্প না হলে ও তো আমরা বলতে পারবো চেষ্টা করেছি।
কেন আগেই হার মেনে নিবো আমরা ?
পারবে না আমার জন্য লড়াই করতে ?

নীলিমার কথা তে আরিয়ানের চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
আরিয়ান নীলিমা কে বুকে টেনে নিয়ে বলল
– পারবো নীলি, যে আসক্তি আমাদের সব থেকে দূর্বলতা সেই আসক্তি কেই সব থেকে বড় শক্তি বানাবো আমরা।
আমরা একে অপরের জন্য বেঁচে থাকবো, শেষ অব্দি লড়াই করবো।

নীলিমার চোখে মুখে ফুটে উঠলো খুশির ঝলকানি।
ঠোঁটে হাসি চোখে জল এ যেন সাগরকন্য মায়াবতী।
দুজনের প্রেমাসক্তি, আসক্তি থেকে রূপ নিলো শক্তি তে।
দুজনেই প্রেমের আসক্তির জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত।

*

দেখতে দেখতে কেঁটে গেল চার চার টে মাস।
আর কিছু মাস পরেই নীলিমার পরীক্ষা আর আরিয়ানের মাস্টার্স কমপ্লিট হয়ে গেছে।
আপাতত একটি মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানির ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে আরিয়ান।
বেশ ব্যস্ত সময় পার করছে আরিয়ান, সাথে সময় করে প্রিয়তমার সাথে ফোনআলাপ।

দু তিন দিন পর পর ই প্রিয়তমার সাথে সময় কাটানো।
সব মিলিয়ে তাদের জীবন বেশ উল্লসিত ।
দিন যত যাচ্ছে, দুজন দুজনার আসক্তি তে আর ও বেশি করে পরছে।

আরিয়ান ফাইল হাতে কাজ করছিলো ।
রাত এগারো টা ছুঁই ছুঁই, নীলিমার ফোন আসতেই মুচকি হেসে রিসিপ করে বলল
– কেমন আছো নীলি ?

ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– ভালো নেই তোমায় ছাড়া,,, বুকে জড়িয়ে নাও না একটু।

আরিয়ান হাসতে হাসতে বলল
– এখনি ?

– হুম নাও না গো একটু বুকে জড়িয়ে ।
একদম গুটি গুটি মেরে শুইয়ে থাকবো প্রমিস,,

নীলিমার বাচ্চা বাচ্চা কথা গুলো আরিয়ান রোজ ই শুনে।
তবে মাঝে মাঝে একটু বেশি ই দুষ্টুমি করে যেমন আজ।

আরিয়ান মৃদু হেসে বলল
– তা আমার নীলি পাখি টার কি আবদার আজ ?

নীলিমা খুশিতে গদগদ হয়ে বলল
– এই তুমি বুঝলে কি করে ?

আরিয়ান ফোন হাতে বেডে শুইয়ে বলল
– ঐ যে প্রেমাসক্তি, দুটি হৃদয় একটি আত্মা , একে অন্যের মনের কথা বুঝে যাবো ঠেকাতে পারবে না কোনো সত্তা।

আরিয়ানের কথা শুনে নীলিমা খিল খিল করে হেসে উঠলো।
আরিয়ান বুকের বা পাশে হাত রেখে বলল
– এভাবে হেসো না নীলি, বুকে লাগে , ইচ্ছে করে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে।

আরিয়ানের মায়াবি আকুলতা ভরা কন্ঠে নীলিমার ঘোর লেগে যায়।
নীলিমা নেশাতুর কন্ঠে বলল
– নাও না মিশিয়ে একদম গভীরে, বুকের পাঁজর টা কেমন কেমন করছে যে।
একটা গভীর চুমু দাও না প্লিজ,

নীলিমার কথা শুনে আরিয়ান মুচকি হাসছে।
নীলিমা মাঝে সাঝে লাগামহীন হতে শুরু করে।
কিন্তু আরিয়ান একটু কাশি দিয়ে মেয়েটা কে লজ্জায় ফেলে দেয়।
আজ ও তার ব্যতিক্রম হলো না ,, আরিয়ান হাল্কা কাশতেই নীলিমা চুপসে গেল।

নীলিমা লজ্জা পেয়ে বলল
– একটু আগে কি করছিলে ?

– অফিসের কাজ করছিলাম।

– আচ্ছা তাহলে কাজ করো।

আরিয়ান মৃদু হেসে বলল
– উহুমমম , তোমার আবদার টা আগে শুনবো।

– নাহ নাহ আজ নাহ অন্য একদিন আজ কাজ করো।

– মোটে ও নাহহহ , আমার নীলির আগে কোনো কাজ ই নাহ।

আরিয়ানের জোড়াজোড়ি তে নীলিমা বলল
– সারা রাত কথা বলতে চাইছিলাম, কথা বলতে বলতে একে অপরের নিঃশ্বাস মেপে নিতাম।

আরিয়ান মুচকি হেসে বলল
– কাজ শেষ করতে ঘন্টা খানেক লাগবে।
বারোটার দিকেই ফোন দিবো,, তারপর সারা রাত একে অপরের নিঃশ্বাস মাপবো।

আরিয়ানের কথা শুনে নীলিমা মুচকি হাসলো।
ফোন রেখেই বেডে শুইয়ে পরল নীলিমা।
এই এক ঘন্টা নীলিমা, আরিয়ানের সাথে কল্পনার সংসার সাজাবে।
যা তার রোজকার অভ্যাস

*

নীলিমার বাবা বিজনেস এর কাজে পাঁচ টি মাস রাশিয়া তে ছিলেন।
আজ দুদিন হলো তিনি বাড়ি ফিরেছেন।
নীলিমা বেশ খুশি বাবার সাথে নানা রকম আড্ডা দিতে ব্যস্ত।
আজ আজাদ চৌধুরীর বাড়িতেই একটা বিজনেস কনফারেন্স মিটিং আছে।
বড় বড় বিজনেসম্যান দের নিয়ে নানান আয়োজন।
নীলিমা একটা কটন কাপড়ের গ্রাউন পড়েছে, ভারী জামা কাপড় কিংবা মেইক আপ তার একদম ই পছন্দ নয়।
তার মনে হয় , দু ইঞ্চি মেই আপ করলে তাকে পেত্নি লাগবে।
চুল গুলো উঁচু করে ঝুঁটি বেঁধে, ঠোঁটে গোলাপি রঙা লিপজেল দিয়ে হালকা পাউডার মেখে নিয়েছে, ব্যস তার সাজ কমপ্লিট।

কনফারেন্স মিটিং শেষে সবাই ডিনারে বসেছে।
আশে পাশের সবাই নীলিমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে ।
যার ফলে নীলিমার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে,, সে তো ভারী মেইক আপ করে নি তাহলে কি করে তাকে ভুতের মতো লাগতে পারে।
নীলিমা দ্রুত ডিনার কমপ্লিট করে উঠে গেল,, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় ই কিছু মানুষের আলোচনা শুনতে পেল।
আজাদ চৌধুরী কে বলছেন নীলিমা কে তাদের পুত্র বধু করতে চান। তাদের কথা শুনে নীলিমার ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল।
নীলিমা দীর্ঘশ্বাস টেনে আগাতে গেলেই আরেকজন তার মায়ের কাছে প্রস্তাব রাখছে।
নীলিমার মেজাজ চরে গেল, এরা কি পেয়েছে, জিনিস পত্র যে একের পর একে চাইতেই থাকবেন।
যত্তসব নীলিমা উপরে উঠে গেল,,।

মাঝে কেঁটে গেল আর ও কিছু দিন, নীলিমা আরিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে সেই লেকের ধারে বসে আছে।
প্রায় ই এই লেকের ধারে বসে থাকে এরা।
নীলিমার মন টা খারাপ , কাল রাতে তাদের মা বাবার আলোচনা শুনে খুব ভয় হচ্ছে তার।

কাল রাতে রুমে জগ এ পানি শেষ হয়ে গিয়েছিল।
তাই নীলিমা পানি আনার জন্য কিচেনে যাচ্ছিলো।
মা বাবার রুম ক্রস করার সময় শুনতে পায় আজাদ চৌধুরী বলছেন
– মেয়ে তো বড় হয়েছে , বিয়ে তো দিতেই হবে।
যদি ও এখন বিয়ে দিতে চাই না আমি।
কিন্তু মেয়ের জন্য ভালো ভালো সমন্ধ আসছে।
যদি এনগেন্সমেন করিয়ে রাখি , দু বছর বাদে না হয় বিয়ে দিবো।

এই টুকু শুনেই নীলিমার কলিজায় পানি শেষ হয়ে গেছে।
কিচেনে যাওয়া তো দূরের কথা বাকি কথা টুকু না শুনেই নীলিমা দ্রুত তার নিজের রুমে গিয়ে মেঝে তে বসে পরেছে।
সারা রাত চিন্তায় ঘুম হয় নি

আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– নীলি ভয় পাচ্ছো কেন ?
আমরা দুজন মিলে লড়াই করবো।
নীলিমা মাথা ঝাকিয়ে আরিয়ানের বুকে মাথা রাখলো।
আরিয়ান নীলিমার মাথায় চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।

বিকেলের দিকে নীলিমা বাড়ি ফিরতেই আজাদ চৌধুরী বললেন
– নীলু মা আমার ঘরে আয় তো কিছু কথা আছে।

নীলিমা বুঝে গেছে, কি কথা।
নীলিমা মাথা ঝাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।
মুখে পানির ছিটে দিয়ে নিলো।

নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বাবার রুমের দিকে পা বাড়ালো।

রুমের কাছে এসে দরজা নক করতেই আজাদ চৌধুরী বললেন
– আয় , নক করার কি প্রয়োজন।

নীলিমা কিছু বলল না, বুকটা কেমন করছে।
নীলিমা আজাদ চৌধুরীর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
আজাদ চৌধুরী মুচকি হেসে মেয়েকে বসতে বললেন।

নীলিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
– শরীর ঠিক আছে মামুনি?

নীলিমা মাথা ঝাকিয়ে বলল
– হুমম ।

আজাদ চৌধুরী একটা ফাইল বের করে বললেন
– এটা আমাদের নতুন কোম্পানির শেয়ার।

তোর নামে করার জন্য সাইন লাগবে।
নীলিমা দ্রুত গতিতে সাইন করে দিলো।
যেন সে এখানে থাকলে দম বন্ধ হয়ে যাবে।

বেশ কিছুক্ষন যেতেই
নীলিমা বলল
– আব্বু চলে যাবো ?

আজাদ চৌধুরী কিছু একটা ভেবে বললেন
– নাহহ একটা কথা বলার ছিলো।

নীলিমা শুকনো ঢোক গিলে বলল
– কিহহ।

আজাদ চৌধুরী ফাইল সাইট টেবিলে রেখে বললেন
– আমার কম্পানির শেয়ার হোল্ডার রা তাদের ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব রেখেছে।
আমি তাদের ,

এই টুকু বলতেই নীলিমা ডুকরে কেঁদে উঠলো।
আজাদ চৌধুরী মেয়ের কান্ডে অবাক হয়ে গেলেন।
নীলিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
– নীলু মা কাঁদছিস কেন?

নীলিমা হিচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বললেন
– আব্বু আমি এই বিয়ে করতে পারবো নাহহ।

আজাদ চৌধুরী মুচকি হেসে বললেন
– আমি ওদের বারন করে দিয়েছি মা।
কিন্তু তুমি কোনো কথা শোনার আগেই বারন কেন করলে?

নীলিমা থমকে গেল, কি বলবে এখন।
আজাদ চৌধুরী মুচকি হেসে বললেন
– কোনো সমস্যা মামুনি ?

নীলিমা মাথা ঝাকিয়ে বলল
– নাহহহ

– তাহলে বলো ,,

নীলিমা চোখ খিচে বন্ধ করে নিল।বার কয়েক লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
– আব্বু আমি একজন কে ভালো বাসি ।
আর ওকেই বিয়ে করতে চাই

মেয়ের কথা শুনে আজাদ চৌধুরী হা হয়ে গেলেন।
নীলিমার ভয় হচ্ছে তার বাবা মেনে নিবেন তোহহ।

আজাদ চৌধুরী হাসতে হাসতে বললেন
– এটা তো ভালো কথা মামুনি আগে কেন বলোনি?
আচ্ছা কাল আমাদের বাড়িতে ফ্যামিলি নিয়ে আসতে বলো।

নীলিমার যেন ধরে প্রান এলো।
নীলিমা কাচু মাচু হয়ে বলল
– আব্বু ও অনাথ।

নীলিমার কথা শুনে আজাদ চৌধুরী কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন।
তারপর দীর্ঘশ্বাস টেনে বললেন
– ওহহহ আচ্ছা কাল আসতে বলো।

নীলিমা খুশি হয়ে বাবা কে জড়িয়ে বলল
– থ্যাংক ইউ আব্বু।

আজাদ চৌধুরী মুচকি হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

*

আরিয়ান নীলিমাদের বাসার ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
কিছু দূর নীলিমা দাড়িয়ে আছে।
আরিয়ানের বরার বসে আছেন আজাদ চৌধুরী, আর নীলিমার কাকা হানিফ চৌধুরী।
মিসেস চৌধুরী নাস্তা দিয়ে গেলেন।
আরিয়ানের চোখে মুখে কোনো ভয়ের ছিটে ফোটা ও নেই।
অথচ নীলিমার হাত পা কাঁপছে।

আজাদ চৌধুরী হালকা কেসে বললেন
– তোমার নাম ?

– আরিফুল আরিয়ান।

– পড়াশোনা?

– মাস্টার্স কমপ্লিট, আপাতত একটা মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানিতে ম্যানেজার হিসেবে আছি।

আজাদ চৌধুরী তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে আরিয়ান কে দেখে নিলেন।
দেখতে শুনতে খুব ই ভালো লাগছে ওনার কাছে।
আরিয়ান কে বেশ ভালোই লেগেছে ওনার।

আজাদ চৌধুরী আর ও কিছু টুক টাক কথা বলে নিলেন।

হানিফ চৌধুরী তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে আরিয়ান কে দেখছেন।
হানিফ চৌধুরী কেশে বললেন
– তা তোমার পরিবার কোথায়।

আরিয়ান মুচকি হেসে বলল
– আমি অনাথ।

তারপর আরো ও বেশ কিছু কথা বলে আরিয়ান বাসায় চলে আসলো।

নীলিমা বেশ খুশি , তার বাবার চোখ মুখ দেখে বুঝে গেছে, তার বাবা রাজি।

রাত প্রায় দশটা আজাদ চৌধুরী গম্ভীর হয়ে বসে আছে।
নীলিমা অঝোরে কাঁদছে , আজাদ চৌধুরী সাফ সাফ বলে দিয়েছেন।

আরিয়ানের সাথে তার বিয়ে দেওয়া হবে নাহহ।
কারন আরিয়ান অনাথ আর আরিয়ান নীলিমা কে কি খাওয়াবে ?
নীলিমার এতো চাহিদা পূরন করতে পারবে না।
সব থেকে বড় বিষয় পরিবারের শাসন ছাড়া ছেলে ভালো হয় নাহ।

নীলিমা হিচকি তুলে বলল
– আমি মানিয়ে নিতে পারবো ,যদি এটাই কারন তাহলে ওকে আসতে কেন বললে আব্বু?
আমি ওকে স্বপ্ন দেখালাম,,

আজাদ চৌধুরী তীক্ষ্ম কন্ঠে বললেন
ওনার কথার নড়চড় হবে নাহহ।

নীলিমা কাঁদতে কাঁদতে উপরে উঠে গেল ।

*

মাঝে কেঁটে গেল আর ও কয়েক টি মাস।
নীলিমা আরিয়ান , লড়াই করে যাচ্ছে, আগের মতো দেখা করে না তবে ফোনআলাপ দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।

আজাদ চৌধুরী তেমন কিছু বলেন না দেখে নীলিমা খানিক টা অবাক ই হয়।
আরিয়ানের মাথায় অনেক কিছু এলে ও নীলিমা কে বুঝতে দেয় না।
মুচকি হেসে মেয়ে টাকে সামলে নেয়।

দেখতে দেখতে আর দুটো মাস চলে গেল।
নীলিমার কোর্স এর ফাইনাল এক্সাম ও হয়ে গেল।

কাল সারারাত নীলিমা আরিয়ানের ফোনআলাপ চলেছে।
যার ফলে নীলিমার ঘুম থেকে উঠতে সকাল এগারো টা বেজে গেল।

ঘুম থেকে উঠেই সাজানো গোছানো বাড়ি দেখে নীলিমা থমকে গেল।
বাড়ি তে কিসের অনুষ্ঠান ?

নীলিমার মাথা কাজ করছে না , নীলিমা তার মায়ের কাছে গিয়ে যা শুনলো তাতে নীলিমার মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা ।

নীলিমার চাচাতো ভাই সাহেল এর সাথে আজ নীলিমা বিয়ে।
নীলিমার মাথা ঘুরছে , এতো দিন কিছু না বলার সমস্ত কাহিনী পরিষ্কার হয়ে গেল।

নীলিমার হাত পা কাঁপছে, নীলিমা ছুটে নিজের রুমে গেল।
আরিয়ান কে ফোন লাগাতেই আরিয়ান রিসিপ করে মৃদু হেসে বলল
– আই লাভ ইউ নীলি, তোমাকে পাওয়ার আসক্তি আমার আর ও বেড়ে গেছে।

নীলিমা বুঝে গেল , আরিয়ান খবর পেয়ে গেছে।
নীলিমা ঢুকরে কেঁদে উঠলো।

আরিয়ানের গলা ধরে আসছে ,,
আরিয়ান মৃদু হেসে বলল
– আমাদের পথ চলা কি এখানেই শেষ নীলি ?

নীলিমা চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।

আরিয়ান অসহায়, অনেক কিছুই আছে করার আবার অনেক কিছুই নেই করার।

নীলিমা চিৎকার করতে করতে বলল
– আমাদের গল্প শেষ নয় আরিয়ান , আমাদের গল্প আবার নতুন করে শুরু হবে।
তুমি লেকের ধারে আসো , আমি আসছি।

আরিয়ান চোখের পানি মুছে লেকের ধারে গেল ।

নীলিমা একটা সার্ভেন্ট এর পোশাক পরে মুখ ঢেকে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
যার ফলে কেউ নীলিমা কে চিনতে পারলো না।
লেকের ধারে এসে আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরলো।
আরিয়ান মৃদু হেসে বলল
– কি করবে নীলি ?

নীলিমা আরিয়ানের দু হাত ধরে বলল
– আমায় বিয়ে করবে আরিয়ান ?

আরিয়ানের চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
আরিয়ান নীলিমার হাত দুটো শক্ত করে ধরে নিয়ে গেল।

আরিয়ান আর নীলিমা রেজিস্ট্রি সম্পূর্ণ করে সিলেট এ চলে গেল।
সারা রাত ট্রেনের মধ্যে ছিলো ,,, সিলেট এ পৌছাতে পৌঁছাতে সকাল হয়ে গেল।
নীলিমা মুচকি হেসে বলল
– আমরা একে অপরের জন্য আরিয়ান।

আরিয়ান মৃদু হেসে নীলিমা কে জড়িয়ে নিলো।
সামনে তাকাতেই কিছু লোক কে দেখতে পেল যারা ওদের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে তাকিয়ে তেড়ে আসছে।
আরিয়ান সময় নষ্ট না করে নীলিমার হাত ধরে পালাতে লাগলো।
একটা পাহাড়ের শেষ এ এসে দাড়িয়ে পড়লো।
কারন আর রাস্তা নেই ,,

নীলিমা আরিয়ান কে দু হাতে জড়িয়ে আছে।
আজাদ চৌধুরী তেড়ে এসে নীলিমার হাত ধরলেন, আরিয়ান শক্ত করে নীলিমার হাত ধরে আছে।
আজাদ চৌধুরী আরিয়ান কে লাগাতার মারতে লাগলেন।
আরিয়ান টু শব্দ অব্দি করলো না।
নীলিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল
– আব্বু ওকে ছেড়ে দাও প্লিজ।

আরিয়ানের থেকে নীলিমা কে ছাড়াতে পারলেন না আজাদ চৌধুরী।
হানিফ চৌধুরী ইশারা করতেই কিছু লোক এসে আরিয়ান কে টেনে নিয়ে গেল।
নীলিমা ছটফট করতে লাগলো ,,, আরিয়ান শুধু নীলিমার দিকে চেয়ে আছে।
আজাদ চৌধুরী আর হানিফ চৌধুরী আরিয়ান কে লাগাতার মারতে লাগলেন।
প্রতি ফলে আরিয়ান কিছু বলল না শুধু নীলিমার দিকে চেয়ে আছে।
আরিয়ান কখনোই নীলিমার বাবার গায়ে হাত তুলবে না।
নীলিমা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পরলো।
ছুটে গেল আরিয়ানের বুকে , আরিয়ান বাঁকা হেসে তাকালো।
হনিফ চৌধুরী কিছু লোক দিয়ে নীলিমা কে সরিয়ে দিতে বললো।
নীলিমা চিৎকার করে বলতে লাগলো
– ওকে মেরো নাহহ তোমরা আমি তোমাদের কথা শুনব, বিয়ে করে নিবো আমি।
শুধু ওকে ছেড়ে দাও,,, কেউ শুনলো না নীলিমার কথা।
একটা বুলেট এর শব্দ কানে আসতেই নীলিমা চিৎকার করে উঠলো।
আরিয়ানের বুক থেকে বিগলিত রক্ত ঝরছে।
নীলিমা চিৎকার করে উঠলো,,
আরিয়ানের চোখে শুধু নীলিমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পেল নীলিমা।
আরিয়ান লুটিয়ে পরলো পাহাড়ের ঢালে,, হঠাৎ করেই আরিয়ান পাহাড়ের ঢাল থেকে পরে গেল নিচে।

নীলিমা চিৎকার করে উঠলো,,
শেষ হয়ে গেল নীলিমার ভালোবাসা, প্রেমাসক্তি তে পরা দুটি হৃদয় আলাদা হয়ে গেল।

পরবর্তী পার্ট পেতে পেইজ এ ফলো দিয়ে রাখুন

https://www.facebook.com/Fatema-tuz-ফাতেমা-তুজ-110123584545542/

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here