নিবেদিত_প্রেম_আরাধনা ||২য় পর্ব||

নিবেদিত_প্রেম_আরাধনা
||২য় পর্ব||
-ঈপ্সিতা শিকদার
আবরাহাম আড়ংয়ের শপে ঢুকতেই এক শ্যাম বর্ণের রমণী দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে তার গালে অধর ছোঁয়ায়। ঘটনার আকস্মিকতায় আবরাহাম অবাক। মেয়েটা ছুটে পালাতে নিলেই হাত ধরে ফেলে আবরাহাম।

“হোয়াট দ্য হেল! এটা কী ছিল, মেয়ে?” রাশভারী কণ্ঠ আবরাহামের।

মিনমিনে কণ্ঠে মেয়েটি নিজের হাত ডলতে ডলতে শুধায়,
“আসলে আপনি অনেক হ্যান্ডসাম তো, তাই বন্ধুরা ডেয়ার দিয়েছিল আপনাকে… আমি সরি।”

তীক্ষ্ম চোখে পর্যবেক্ষণ করে আবরাহাম মেয়েটিকে। গোলগাল শ্যামলা মুখশ্রী, বয়স বড়োজোর ষোল বা পনেরো হবে। এই উঠতি বয়সী মেয়েদের কাছে এই ব্যাপারগুলোই এডভেঞ্চার, থ্রিল দেয় তাদের। তবে এত সহজে ছাড়ার আবরাহামের ইচ্ছে নেই।

“নাম কী তোমার?”

“সুখ। আমি এখন যাই ভাইয়া?”

বেশ অসহায় কণ্ঠ মেয়েটির। হাসি পেয়ে যায় আবরাহামের। তবুও নিজের মুখশ্রীর মাঝে এর লেশমাত্র আনে না। গম্ভীরতা বজায় রাখে।

“বাহ্! একটু আগেই না বললে আমি হ্যান্ডসাম, এখন আবার ভাইয়া। যাকগে এত সহজে তো তোমায় তো ছাড়া যাবে না। মেবি ইউ ডোন্ট নো আ’ম ইউর নিউ ক্লাসঠিচার।”

সুখ চমকিত হয়। সূক্ষ্ম ঘাম বেয়ে পড়ে তার ললাট থেকে। চোখেমুখে উৎকণ্ঠা। সে তো শুধুই একটু ইঞ্জয় করতে চেয়েছিল ছুটির দিনটা। এ কোন বিপদে পড়ে গেল। বন্ধুদের খোঁজার চেষ্টা করে সে। সবাই পালিয়েছে।

“যাও তোমার বন্ধুদের নিয়ে এসো। তোমাদের গার্ডিয়ান কল করবো।”

“ওরা তো নেই। আ’ম রেয়ালি রেয়ালি সরি। প্লিজ ফরগিভ মি স্যার। আমি জানতাম না আপনি আমাদের টিচার।”

“আচ্ছা, যাও তা করতে হবে না। কান ধরে উ-ঠবস করে পাঁচবার৷”

এবার অনুভূতির বাধ ভাঙে সুখের। কেঁদেই উঠে সে। কাঁদতে কাঁদতেই পাঁচবার উঠ-বস করে।

“স্যার এবার প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন। আমি আর কখনোই এমন ভুল করবো না। প্লিজ স্যার!” ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে সে।

আবরাহাম আলতো হারে কপোল মুছে দেয় সুখের। মাথায় হাত বুলিয়ে নরম গলায় শুধায়,
“নারী, নারীর ছোঁয়া, নারীর ভালোবাসা, নারী জড়িত সবকিছুই অনেক মূল্যবান। তোমার বয়স কম, অনেক এক্সাইটিং লাগবে এখন, এডভেঞ্চারাস, থ্রিলিং লাগবে। বুঝ হলে বুঝতে পারবে কোন পথে গা ভাসিয়ে ছিলি, সামান্য এক্সাইটমেন্টের জন্য। তুমি অনেক মূল্যবান, নিজের ব্যক্তিত্ব, সম্মান, মূল্য এভাবে নষ্ট কোরো না।”

সুখ নত চোখে মাথা ঝাঁকায়। লোকটির কথা একবিন্দুও মিথ্যে নয় তা তার জানাই।

“আর শোনো আমি তোমার টিচার নই। সো দেয়ার ইজ নাথিং ঠু ওয়ারিহ্ সুইটহার্ট।” আবরার চোখ মেরে সামনের দিকে চলে যায়।

সুখ হা করে তাকিয়ে থাকে। আপন মনেই বিড়বিড়ায়, “আস্ত বজ্জাত লোক!”

আবরাহাম চলে যেতেই তাদের চারদিকে জমা ভিড় কমতে শুরু করে। সেই ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজন দর্শক নিবেদিতাও। আবরাহামকে দেখা মাত্রই সে চিনে ফেলে। আনমনেই বলে সে,
“মানুষটা মজার, আর ইন্টারেস্টিংও।”

___

নতুন বসের জন্য গিফট্ কিনে সোজা অফিসে আসে সে। একটি মাল্টিন্যাশোনাল কোম্পানিতে মোটামোটা ভালো পোস্টেই চাকরিরত সে।

অফিসে ঢুকতেই তার কলিগ ও একমাত্র বান্ধুবী মালিহা এসে কফি এগিয়ে দেয়। সে পানসে মুখে তা হাতে নেয়।

“তোর জামাই ফোন দিসিলো তোর কথা জিজ্ঞেস করলো। কণ্ঠস্বর ভালো লাগলো না। ঝগড়া করেছিস না কি?”

“ওর কথা আর বলিস না। আমি ওর সাথে আর সংসার করবো না সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

“হোয়াট! হুট করেই কী হলো?”

“অনেক কিছু।” কাল সারাদিনের ঘটনা খুলে বলল নিবেদিতা।

“এই সামান্য কারণে তুই তালাক নিবি? আরে সংসারে তো একটা পর্যায়ের পরে এসব হয়ই। আচ্ছা বল, ও তোর গায়ে হাত তুলেছে কোনোদিন?”

“না, তুলেনি। ও এমন ছেলেই না।”

“ওর এ্যাফেয়ার বা কারো প্রতি অ্যাট্রাকশন আছে এমন কোনো ইঙ্গিত পেয়েছিস? অথবা, কোনো সময় গালি-গালাজ দিয়েছে?”

শব্দ করে নিঃস্বাশ ফেলে রমণী। এবারও ইশারায় নাকোচ করে।

“তাহলে? হি ইজ আ নাইস গাই। কাল রাগের মাথায় ওসব বলে ফেলেছে। সরি বলে দিবে।”

“বাট মালিহা ও আমাদের ঠিক করে তাকায়ও না দিনে একবার। আমাদের কথাবার্তাও আজকাল খুব সীমিত। বললেও একতরফা আমি। আগে তো আরাধ্য এমন ছিল না। দিনে কম করে হলেও পঞ্চাশ বার বলতো ভালোবাসি।”

দু’হাত দিয়ে নিজের মাথা চেপে ধরে নিবেদিতা।মালিহা তার কাঁধে সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিমায় হাত রাখে।

“দেখ, সবসময় সব কিছু এক থাকে। এই যে তোর এই কাস্টোমাইজ কফি মাগটাকেই দেখ। তুই যখন নতুন নতুন কিনেছিলি, তখন কত এক্সাইটেডই না ছিলি! এখন এটা শুধু নর্মাল একটা কাপ, অন্যসব কাপের মতোই। আগের সেই স্পার্কটা তোর বোধ হয় না এটাতে। বিয়ের বা সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এই রীতিই চলে।

তোদের সম্পর্ক বা বিয়ের প্রথমদিকে যেই স্পার্কটা ছিল তা হারিয়ে গেছে। আর এটা অস্বাভাবিক কিছু না বা ও তোকে আর ভালোবাসে না এমন না। ও শুধু তোর সাথে একদম ইউসড্ টু হয়ে গিয়েছে তাই আর… যেটা প্রকৃতিগতভাবেই স্বাভাবিক।”

“সো উই হ্যাভ লস্ট দ্য স্পার্কেল অফ আউয়ার লাভ।”

এর মধ্যেই একজন এসে জানালো নতুন বস এসে পড়েছে। অগত্যা নিজেদের কথোপকথন ছেড়ে সেদিকে এগিয়ে যায় তারা। নতুন বসের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই অবাক নিবেদিতা।
“আ-আবরাহাম!”

আবরাহাম চোখ টিপ দেয় তার দিকে তাকিয়ে। ঠোঁটের কোণে যুবকের দুষ্টু হাসি।

___

আরাধ্যের মেজাজ বিগড়ে আছে। এক ফোঁটা জলও সে মুখে নেয়নি এখনো। সে ভেবেই পাচ্ছে না নিবেদিতার ন্যায় বোকা-সোকা, অল্পভাষী মেয়ে কী করে এই সামান্য কারণে বাড়ি ছাড়তে পারে?
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here