প্রেমাসক্তি’ পর্ব – ২৭

0
4764

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#part – 27

বেলা এগারোটা তন্ময় এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।
নীলিমা তিন বার ডেকে গেছে , তন্ময় বলেছে তার নাকি এখনো ঘুম পাচ্ছে।
নীলিমা বার বার মন খারাপ করে নিচে চলে আসছে।
সবাই সেই কখন নাস্তা সেড়ে নিয়েছে।
নীলিমা আর তন্ময় এখনো মুখে একটা শুকনো দানা ও কাটেনি।
রাগে কটমট করতে করতে বাড়ির ভেতর আসলো রবিন।
নীলিমা ভ্রু কুঁচকে ভাই কে দেখে নিলো।
সকাল বেলাই তো হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো।
তখন তো হাসি খুশি ই ছিলো , আর আজ এতো তাড়াতাড়ি ফেরার কারন টাই বা কি ?

নীলিমা একটা আইস ব্যাগ এনে দিয়ে রবিনের পাশের সোফা টা তে বসলো।
রবিন কিছু বলল নাহহ , আইস ব্যাগ কিছুক্ষণ মাথায় রেখে বলল
– নীহু শান্তি হচ্ছে নাহহহ আমার, আমাকে মাইনাস সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ফেলতে থাক।
মনে হচ্ছে সূর্য আমার কাছে , নীলিমা উঠে গিয়ে এসি টা অন করে দিলো।
এই শীতের মধ্যে এসি টা পৃথিবীর সব থেকে বেমানান বস্তু।

রবিনের শরীর এখনো কাঁপছে, মনে হচ্ছে কাঙ্খিত ব্যাক্তি টাকে পেলে রাস্তায় গাড়ি চাপা দিয়ে মারবে।

নীলিমা রবিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মিনমিনে কন্ঠে বলল
– ভাইয়া তোমার বিয়ে করা উচিত।
ভাবি আসলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
নো টেনশন

রবিন বোনের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল
– বিয়ের বয়স হয় নি আমার।

নীলিমা ব্যঙ্গ করে বলল
– বুড়া বয়সে এসে বলছে বিয়ের বয়স হয় নি এখনো।
29 বছরের কচি খোকা

রবিন মাথা চেপে নিজেকে শান্ত করে বলল
– ঠিক বলেছিস তুই , আমি বিয়ে করবো।
এই বছরে আজকেই ইনফেক্ট এখনি।

রবিনের কথায় নীলিমা হো হো করে হাসতে লাগলো।
তন্ময় মাত্র ই ঘুম থেকে উঠেছে, দু জনের হাসিতে সামান্য নাক কুঁচকে বলল
– দু ভাই বোন হাসা হাসি করছিস কেন ?
আমি কি মিস করে গেলাম।

নীলিমা কোনে মতে হাসি থামিয়ে বলল
– তোমার বন্ধুর বিয়ের প্যারা লেগেছে ।
সে বিয়ে করবে, ইনফেক্ট আজকেই।

নীলিমার কথা শুনে তন্ময় অ্যাহহ বলে উঠলো।

রবিন দাঁতে দাঁত চেপে বললেন
– অ্যাহহ নয় হ্যাঁ।

নীলিমা পেট চেপে ধরে হাসতে হাসতে উপরে চলে আসলো।

তন্ময় রবিন কে বিজ্ঞ দের মতো করে দেখে বলল
– কি হয়েছে রে তোর ?

– কিছু না , আবার অনেক কিছু।

– কিহহহ ?

– আরে ভাই বলিস নাহহহ , আজ ও ঐ রায়না নাহহ আয়না আমার হসপিটালে চলে এসেছে।
কোনো রোগ নেই , আর দুদিন পর পর ই এপোয়েনমেন্ট নিতে আসে।
হাউ ইয়ার ?
এই মেয়েটাকে এতো কিছু বলার পর ও লজ্জা সরম হলো নাহহ।
তন্ময় ভ্যবলার মতো চেয়ে থেকে বলল
– তার মানে তুই ঐ মেয়েটা কে বিয়ে

রবিন তন্ময় কে থামিয়ে দিয়ে বলল
– ঠাপ্পর দিলেই ঠিক হবি।
শালা সব সময় একটু বেশি ই বুঝিস।

তন্ময় মুখ ভার করে বলল
– আজ পর্যন্ত যতো ভবিষ্যদ্বাণী করেছি , সব গুলোই সত্যি হয়েছে।
তোদের টা ও হবে বর্ষ।

রবিন ব্যঙ্গ করে বলল
– ঝরে বক মরছে আর ফকিরের কেরামতি ও বাড়ছে।

রবিনের কথা শুনে তন্ময় ও হেসে দিলো।
হাসতে হাসতে টেবিলে রাখা স্টিল এর বাটিটা টেবিল থেকে পরে গেল।
ঝনঝন শব্দে মূখরিত পরিবেশ , কিচেন থেকে মিসেস মাহমুদ ছুটে এলেন।

তন্ময় আর রবিন লম্বা হয়ে দাড়িয়ে আছে।
মিসেস মাহমুদ সূক্ষ্ম পর্যবক্ষেণ করে কিচেনে চলে গেলেন।

মিসেস মাহমুদ যেতে না যেতে তন্ময় আর রবিন আবার গগন কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো।

*

তন্ময় আর নীলিমার বিয়ের ছোট খাটো অনুষ্ঠান হবে বলে ঠিক করা হয়েছে।
কয়েক জন আত্মীয় আর কাছের মানুষ দের নিয়েই ঘরোয়া ভাবে ধর্ম মতে বিয়ে পড়ানো হবে।
তারপর সামনের মাসেই সবাই চলে যাবে ইউ এস এ তে।
সবাই বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে , ছোট খাটো অনুষ্ঠান হলে ও কেনা কাটার কমতি নেই।
এক জনের পর একজন কেনা কাটা করেই যাচ্ছে।

একটু আগে নীলিমা কে তন্ময় এসে বলে গেছে শপিং এ বের হবে।
নীলিমা রেডি হচ্ছে, সাদা কালো রঙের থ্রি পিস পরে উচু করে চুল বেঁধে নিয়েছে, সাথে হালকা লিপস্টিক।
তন্ময় সাওয়ার নিয়ে বের হতেই মুখ দিয়ে ছোট্ট করে বলল
– মাশআল্লাহ।

নীলিমা লজ্জা পেল , তন্ময় দরজা লক করে এসে নীলিমা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

নীলিমা লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল
– কি করছো কি , ছাড়ো।
বের হতে হবে তো ,,

তন্ময় নীলিমার কাঁধে নাক ঘষে বলল
– বের তো হবো ই বেগম , তার আগে একটু আদর হয়ে যাক।

নীলিমা তন্ময় কে ছাড়িয়ে বলল
– তোমার বাজে কথা ছাড়ো তো।
যখন ই দেখবে তখনি ঘেঁষাঘেষি করার ধান্দা।

– চার বছর পর বউ কে কাছে পেয়ে ও যে বান্দা বউ কে কাছে টেনে নিলো না সে নাকি ঘেঁষাঘেষি করার ধান্দা করে।
কেউ বিশ্বাস করবে নাহহহ

– আজব তো , এতো কথা কোথা থেকে শিখলে।
যেন কম্পিউটার, উত্তর রেডি করাই থাকে।

তন্ময় মৃদু হেসে ট্রাওয়াল দিয়ে চুল মুছে নিয়ে বলল
– বুকের জ্বালা বুঝবে না গো।

নীলিমা ভ্রু কুঁচকে রইলো।
তন্ময় কাবাড থেকে একটা শপিং ব্যাগ বের করে বলল
– নীলি এটা পরে নাও।

নীলিমা অবাক হয়ে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল
– আমি তো রেডি , তাহলে এটা পরবো কেন ?

তন্ময় ব্যাগ থেকে বোরকা বের করে দিয়ে বলল
– এটা বোরকা ম্যাডাম, আপনাকে নিয়ে শপিং এ খোলা মেলা যাওয়া যাবে নাহহ।

আপনার চাচা আর ওনার গুনধর ছেলে পাগলা কুত্তার মতো খুঁজে চলেছে।

নীলিমা কিছু না বলে বোরকা পরে নিলো।
ব্লু রঙের হালকা ডিজাইন করা বোরকা।
দেখে মনে হচ্ছে এটা একটা গ্রাউন।
মাথায় সুন্দর করে হিজাব করে নিয়ে মুখ আটকে নিলো।
ব্যাস ওকে আর কেউ চিনতে পারবে নাহহ।

তন্ময় মৃদু হেসে হাত ঘড়ি পরে নীলিমা কে নিয়ে বেরিয়ে পরলো।

*
রাত নয় টা , নীলিমা আর তন্ময় টুকটাক সমস্ত কিছু ই শপিং করে নিয়েছে।
এখন বাড়ি ফেরার পালা , নীলিমা বায়না ধরলো রাস্তার পাশের শিক কাবাব খাবে।
তন্ময় বারন করে দিলো , কারন রাস্তার ধারের খাবার স্বাস্থ্য সম্মত নয়।
নীলিমা মন খারাপ করে বসতেই তন্ময় গাড়ি থেকে নেমে নীলিমার জন্য রেসটুরেন্ট থেকে কাবাব নিয়ে আসলো।
কিন্তু নীলিমা সেই কাবাব খাবে নাহহহ।
উপায় না পেয়ে তন্ময় নীলিমা কে নিয়ে রাস্তার ধারের একটা দোকানে গেল।
নীলিমা মহা খুশি , তন্ময় মৃদু হেসে দোকানদার কে বলল
– মামা দু প্লেট কাবাব দিন তো।

দোকানদার কাবাবের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলল
– মামা কাবাবের সাথে কোন রুটি নিবেন ?

নীলিমা গলা উচিয়ে বলল
– মামা ফ্রোজেন পরোটা দিন।

তন্ময় দাতে দাত চেপে বলল
– নো পরোটা , রুটি খাবা, পরোটা খেলে গ্যাসের সমস্যা হবে।

নীলিমা বায়না ধরলো , কিন্তু তন্ময় মানলো নাহহ।
তন্ময় দোকান দার কে কালাই রুটি দিতে বললো।

নীলিমা রাগি চোখে তাকাচ্ছে সাথে কাবাব আর রুটি চিবুচ্ছে।

তন্ময় ভাবলেশহীন ভাবে খাচ্ছে।
খাওয়া শেষে তন্ময় দুটো মালাই চা দিতে বলল ।
চা খাওয়া হলে তন্ময় বিল পে করে দিয়ে নীলিমা কে নিয়ে গাড়ি তে উঠতে লাগলো।
তন্ময়ের এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে সাহেল।
নীলিমা সাহেল কে দেখে আঁতকে উঠলো।
কাঁপা হাতে তন্ময়ের হাত ধরতেই তন্ময় ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

নীলিমা হাত দিয়ে ইশারা করতেই তন্ময় দেখলো সাহেল।
সাহেল পেছন ঘুরে ছিলো , ওদের দিকে ঘুরবে তখনি নীলিমা তন্ময় কে হেচকা টান মারলো।
নীলিমা কে না চিনলে ও তন্ময় কে চিনে যাবে ওও।

তন্ময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
– এতো ভয় পেও না নীলি , এদের সমস্ত অপরাধ সবার চোখের সামনে নিয়ে আসবো।
শুধু একটু সময় লাগবে।
নীলিমা তন্ময় কে খিচে ধরে আছে , তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সেই দৃশ্য।
সেই গুলির শব্দ, তন্ময় পাহাড় থেকে পরে গিয়েছিলো।

তন্ময় নীলিমার হাত ধরে বলল
– কি হলো নীলি ?

নীলিমা কাঁপা কাঁপা হাতে তন্ময়ের হাত ঝাঁকিয়ে বলল
– আমি বাড়ি যাবো আরিয়ান , এখনি যাবো।

তন্ময় মাথা ঝাঁকিয়ে নীলিমা কে নিয়ে গাড়ি তে উঠে বসলো।
নীলিমা তন্ময়ের এক হাত ধরে বসে রইলো।
তন্ময় দীর্ঘশ্বাস টেনে গাড়ি চালাতে লাগলো, মেয়েটা তন্ময় কে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তায় থাকে।

*

সকাল থেকেই গায়ে হলুদের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে।
নীলিমা হা হয়ে বসে আছে , সব কিছু তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
সবাই তাকে একটা কাজ ও করতে দিচ্ছে নাহহ।
পটের বিবি হয়ে দেখে যাচ্ছে সে , কিছুক্ষণ পর ই মিহি, কনা , রুমি তাদের হাসবেন্ড কে নিয়ে চলে আসলো ।
নীলিমা সবার সাথে কুশল বিনিময় করে নিলো।

মিহির কোলে ছোট্ট একটা মেয়ে , নীলিমা এগিয়ে গিয়ে বাচ্চা টা কে কোলে নিয়ে বলল
– মামুনি টাহহ আমার ,কেমন আছে ?

বাচ্চার বয়স দু বছর, আধৌ আধৌ বুলিতে কিছু বলল আর হাসতে লাগলো।

নীলিমা হেসে কনার দিকে তাকালো।
কনা লজ্জা হাসি তে মুখরিত , নীলিমা চোখ নাচিয়ে বলল
– বাহহহ ভাইয়া কে সোজা করতে করতে আজ তুই ই সোজা হয়ে গিয়েছিস।
তা ম্যাডাম এর পেটে যেই বেবি টা আছে , সেটা কি কিক মারে নাকি ?

– মাত্র তিন মাস নীলু, তুই পারিস ই বটে।
অনেক দুষ্ট হয়ে গিয়েছিস ,,,

রুমির দিকে তাকাতেই রুমি বলল
– একদম কিছু বলবি নাহহ , দু বছর ধরে বিয়ে করেছি।
আগে এই গাঁধা টা কে মানুষ করে নিইই তারপর একটা বেবি নিয়ে আসবো।

নীলিমা হো হো করে হাসতে লাগলো।
হাসতে হাসতে দরজায় চোখ পরলো তার , দরজা দিয়ে রেহান আসছে।
রেহান কে দেখে নীলিমার অস্বস্তি হতে লাগলো।
রেহান নীলিমা কে কনগ্রেচুলেশন জানিয়ে বলল
– নীলু দেখো আগের সমস্ত কিছু ই বাদ, এখন আমি ভাবছি আমার ছেলের সাথে তোমার মেয়ে হলে প্রেম করিয়ে দিবো।
তারপর মেয়ে কে তুলে নিয়ে এসে আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।
এটাই হবে তোমাদের শাস্তি।

নীলিমা অপ্রস্তুত হাসলো , রেহানের কথার মানে বুঝলো না সে।
এক মিনিট বাদেই বাইশ তেইশ বছর বয়সী একটা মেয়ে এসে বলল
– রেহান আমি আর পারছি নাহহ , তোমার ছেলে বড্ড জ্বালাচ্ছে আমায়।
পাপার কাছে গেলেই তার শান্তি।

রেহান এক বছর বয়সী ছেলেটাকে কোলে নিতেই ছেলেটা হাসতে লাগলো।

নীলিমার মুখে ফুটে উঠলো খুশির ঝলকানি।
তারমানে রেহান বিয়ে করেছে , সাথে এক বছর বয়সী একটা ছেলে ও আছে।

সবাই খুব আড্ডা দিতে লাগলো।
সন্ধ্যায় হলুদ সম্পূর্ণ হয়ে গেল , হলুদ শেষে মেহেন্দির উৎসব হলো।

নীলিমা হাতে মেহেদী পরে দাড়িয়ে রইলো।
একটা মেয়ে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই নীলিমা বলল
– রায়না ,

রায়না নীলিমার গালে চুমু খেয়ে কানে হাত দিয়ে বলল
– সরি আপু ।

নীলিমা রাগি চোখে তাকিয়ে বলল
– এতো দেরি করলি কেন ?

– নয়টা বাজে তো , জানোই তো সিলেট ছিলাম , স্টেশন থেকে সোজা চলে এসেছি।

নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– মিহির সাথে দেখা হয়েছে ?

– ইসসস ভুলেই গিয়েছিলাম।
আচ্ছা আপুর সাথে দেখা করে আসছি।

নীলিমা মৃদু হাসলো, মেয়েটি পুরোই পাগল।
দেখে কেউ বলবে না এটা মিহির বোন , সব কিছুতেই নীলিমা কে আগে রাখে সে।
নীলিমা মৃদু হেসে হাতের মেহেদি দেখতে লাগতো।
জ্বলজ্বল করছে আরিয়ান নাম টা, তন্ময় সব সময় ই তার কাছে আরিয়ান হয়ে থাকবে।

*
গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে রায়না নিচে নামছিলো।
তাড়াহুড়ো তে একজনের সাথে ধাক্কা লেগে যায় তার।
ছেলেটা মৃদু স্বরে সরি বলতেই রায়না ছেলেটার গাল টিপে দিয়ে বলল
– আরে ডাক্তার বাবু যে

রবিন রাগি চোখে তাকিয়ে বলল
– এই মেয়ে আপনি এখানে কি করছেন ?

– বিয়ে বাড়িতে এসেছি।

– আপনাকে কে ইনভিটিশন দিয়েছে বের হন এখনি।

রবিন খেয়াল করে নি আশে পাশে দুজন লোক ছিলো।
কথা টা সে অন্য ভাবে বলতে চেয়েছিল । কিন্তু এভাবে অপমানের স্বরে হয়ে গেল।
রায়নার দিকে লোক দুটো বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো।
রায়নার বেশ কষ্ট হলো , রায়না কিছু বলল না আর।
মাথা নিচু করে চলে গেল , রবিন বিরক্তি ঝেড়ে উপরে উঠে গেল।
এই মেয়েটা তাকে পাগল করে দিচ্ছে , ভয়ঙ্কর মেয়ে।

রায়না বাসা থেকে বের হয়ে বাগানের এক কোনে কাঁদতে লাগলো।
রবিন তাকে এমন ভাবে না বললে ও পারতো।
লোক গুলো কি ভাবলো তাকে ।
রায়নার ফোন বেজে উঠলো রায়না ফোন রিসিপ করে বলল
– আসছি আপু।

রায়না মুখে পানির ছিটে দিয়ে ভেতরে চলে আসলো।

নীলিমা কে তন্ময় টানছে , নীলিমার আগেই
সবাই জোড় গলাতে বলতে লাগলো।
বিয়ের আগে আর বউ এর সাথে থাকা যাবে না ।

তন্ময় দাতে দাত চেপে বলল
– আমার বউ আমার সাথেই থাকবে।

তন্ময়ের এরকম নির্লজ্জর মতো ব্যবহার নীলিমা কে অস্বস্তি তে ফেলে দিচ্ছে।

নীলিমা হাত ছাড়িয়ে বলল
– আমি আমার বন্ধুদের সাথে থাকবো।
তুমি তোমার বন্ধুদের সাথে থাকো গিয়ে , যাও।

তন্ময় রাগি চোখে তাকিয়ে চলে গেল।
সবাই এক যোগে হেসে উঠলো।
নীলিমা বেচারি শুকনো ঢোক গিলে নিলো।
কাল তন্ময় তাকে কাঁচা ভাজবে।

*

সকাল সকাল ই রবিন বের হয়েছে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ রোগী দেখতে।
না হলে বোনের বিয়ে তে কেউ হসপিটালে যায়।
সকাল এগারোটা , রবিনের রোগী দেখা শেষ।
রবিন পকেটে ফোন পুরে নিয়ে চেম্বার থেকে বের হবে তার আগেই দুটো মেয়ে হুরমুরিয়ে একটা মেয়ে কে নিয়ে ঢুকলো।

রবিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখলো , রায়না।
রায়না কে দেখেই রেগে গেল সে , কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়ে দুটো বলল
– ওর হাতে বেশ অনেকটা জখম হয়েছে।
প্লিজ একটু ফাস্ট ড্রেসিং করে দিন।

মেয়ে দুটোর কথাতে রবিন রায়নার হাতের দিকে তাকালো।
রায়না অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে আছে।
হাতে বেশ অনেকটা থেতলে গেছে।

রবিন ক্ষীন গলাতে বলল
– কি হয়েছে ?

রায়না কিছু বলল না।
মেয়ে দুটো বলল
– পরে গিয়ে এই অবস্থা , ওওহহহ আসতেই চাইছিলো না , টেনে নিয়ে আসলাম।
কে জানে এই
হসপিটালে আসতে ওর কি প্রবলেম ।

রবিন ছোট্ট করে বলল
– আপনারা যেতে পারেন , আপনাদের দেখে মনে হচ্ছে তাড়াহুড়ো তে আছেন।
চিন্তা করবেন না আমি ওকে পৌছে দিবো।

রায়না কিছু বলছে না দেখে মেয়ে দুটো চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
যাওয়ার আগে বলে গেল
সাবধানে যেতে।

রায়না রাগি চোখে ওদের দিকে তাকাতেই মেয়ে দুটো অপ্রস্তুত হাসলো।

রবিন তুলো নিয়ে রায়নার কাছে গেল।
রায়না কিছু বলল না , রায়না কে ঘুরিয়ে হালকা করে বা হাত ধরে সুন্দর করে ড্রেসিং করে দিলো।
রায়না সামান্য ব্যাথা পেয়ে আহহ করে উঠতেই রবিন রায়নার হাত খিচে ধরলো।

রায়নার সর্ব শরীরে শিহরন জেগে উঠলো।
চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
রবিন মৃদু স্বরে বলল
– কাঁদছেন কেন ? খুব ব্যাথা লাগছে?

রবিনের কথার উত্তর দিলো না সে।
বিষয়টা রবিনের খারাপ লাগলো।
মেয়েটার জ্বালানো তে অভ্যস্ত সে ।
হঠাৎ ই অনুভব করলো , রায়না কে খুব মিস করছে ওহ।
রবিন মৃদু হেসে বলল
– খুব অভিমান হয়েছে ?

– যার তার সাথে আমি অভিমান করি নাহহ।

– ডাক্তার বাবুর সাথে ও না ?

– আমার কোনো ডাক্তার বাবু নেই।

– ওহহহ আচ্ছা।

রবিন রায়নার হাতে মলম লাগিয়ে দিলো।
রায়নার খুব কষ্ট হতে লাগলো।
ছেলেটার প্রতি এতো দূর্বল হওয়া টা ঠিক হয় নি তার।
রায়নার চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে রবিনের হাতে পরলো।

রবিন কেঁপে উঠে বলল
– এই মেয়ে একদম কাঁদবে না।
উনিশ বছরি মেয়ে আবেগ কেন এতো ?

রায়না ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকিয়ে বলল
– ডাক্তার বাবু আমি ভালোবাসি।

– কাকে ভালোবাসো ?

– আপানকে।
– কেন ভালোবাসো আমায় ?
– জানি না কেন ভালোবাসি , কিন্তু বাসি।
– কবে থেকে ভালোবাসো ?
– তা ও জানি নাহ , হঠাৎ ই একদিন মনে হলো আমি আপনাতে আসক্ত ডাক্তার বাবু, বহু দিন ধরে আসক্ত।
– জানো আমার বয়স কত ?
– প্রয়োজন নেই।
আমি জানি শুধু আপনাকে ভালোবাসি।

– তুমি আমার দশ বছরের ছোট রায়না।

– হবে হয়তো , আমি ভাবি নাহহ , আমি আপনাকে ভালোবাসি ডাক্তার বাবু।
আমি জানি আপনি কাউ কে ভালোবাসেন নাহহ।
আমাকে একটু ভালোবাসা দিন না প্লিজ ?

রায়নার আকুলতায় রবিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
মৃদু স্বরে বলল
– আমি ভালোবাসি ,

রায়না চমকে তাকালো , রবিনের কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই সে জানে।
সাড়ে সাত বছর আগে নীলিমার জন্য স্কুলের গেটে দাড়িয়ে থাকতে দেখতো রবিন কে।
তখন সে ক্লাস সেভেন এ পড়ে।
সেই দেখাতেই কৌতুহল জাগে তার , ছেলেটার প্রতি আগ্রহ জাগে।
কিন্তু কিছু দিনের মাঝেই রবিন হাড়িয়ে যায়।
মাঝে কেটে যায় অনেক গুলো বছর , এক প্রকার ভুলেই গিয়েছিলো রবিন কে।
হঠাৎ ই দুই বছর আগে একদিন ফেসবুকের একটা প্রোফাইল ভেসে উঠে তার কাছে।
সেদিন চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরেছিলো।
যদি ও তার কারন রায়না জানে নাহহহ ।
তারপর থেকেই রবিন কে প্রতি দিন জ্বালিয়েছে সে।
আর প্রেমে পরা বারন নামক শর্ত জেনে ও প্রেমে পরে গিয়েছে।
দিন রাত এক করে রবিনের খোঁজেই থাকতো সে।
রবিনের কোনো গালফেন্ড নেই।
আর এখন রবিন বলছে কাউকে ভালোবাসে ।

রায়না মলিন হেসে বলল
– কে সে ?

রবিন রায়নার কাছে এসে একটা চেয়ার টেনে বসলো।
তারপর বলল চোখ বন্ধ করো দেখাবো তাকে।
রায়না অতি উত্তেজনায় সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে নিলো।
রবিন মৃদু হেসে বলল

নাম ভুলে গেছি, দুর্বল মেধা
স্মরণে রেখেছি মুখ;
কাল রজনীতে চিনিব তোমায়
আপাতত স্মৃতিভুক ।

ডাকিব না প্রিয়, কেবলি দেখিব
দু’চোখে পরান ভরে;
পূজারী যেমন প্রতিমার মুখে
প্রদীপ তুলিয়া ধরে ।

তুমি ফিরে যাবে উড়ন্ত রথে
মাটিতে পড়িবে ছায়া,
মন্দির খুঁড়ে দেখিব তোমায়
মন্দ্রিত মহামায়া ।

ভুলে যাব সব সময়-নিপাতে
স্মরণে জাগিয়ে প্রেম,
আঁধারে তখন জ্বলিবে তোমার
চন্দনে মাখা হেম।
💙
[“স্মরণ’’
____নির্মলেন্দু]

রায়না চমকে তাকালো , রবিন মৃদু হেসে বলল
– আজ খুব ইচ্ছে হচ্ছে নিয়ম ভেঙ্গে মাথায় চরে বসি।
খুব ইচ্ছে হচ্ছে কাউকে জড়িয়ে ধরে বলি ভালোবাসি।মনের সমস্ত অনুভূতি আয়নাতে জড়িয়ে দেই।

খুব ইচ্ছে হচ্ছে কাউকে আপানাতে মাখি।

জানি না কেন এতো এতো ইচ্ছে ।
তবে তার অন্তর কাঁপিয়ে আজ বলেই দিচ্ছি আমি ও তাকে ভালোবাসি।

রায়না মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো।
রবিন মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিতেই রায়না তৃষ্ণার্ত পথিকের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো।
দুটো হৃদয় সকল বেড়াজাল পেরিয়ে মনের অন্ধকার কে ঝাঁপিয়ে দেখে নিলো প্রেমাসক্তির সূর্যোদয়।

বি : দ্র :ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here