বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗পর্ব-১৮

0
3665

💗 বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗
Part – 18
___________________________
18,,,,,,

পরির আজ শেষ পরীক্ষা,,,,,হল থেকে বের হয়েই নীল কে খোঁজাখুজি করছে পরি।
কিন্তু নীল আসে নি ,,,, সেই প্রথম দিন ই এসেছিলো।
পরি মুখ গোমড়া করেই রইলো।
পরির পরীক্ষা গুলো বেশি ভালো হয় নি।
নিশ্চিত রেজাল্ট ভালো আসবে না ,,,,,
পরির মন মেজাজ কিছুই ভালো নেই এখন।
এই কয়েকটা দিনে একটা ও বাইরের খাবার খায় নি পরি।
আজ মাথা টা বেশ গরম হয়ে আছে পরির।
তাই দোকান থেকে চারটে আইক্রিম কিনে নিয়ে আসলো।
মিসেস রাহেলা মেয়ের হাতে এতো গুলো আইক্রিম দেখে ভ্রু কুচকালেন।
পরি কিছু না বলে গাড়িতে উঠে এক এক করে আইসক্রিম খেতে লাগলো।
মিসেস রাহেলা কিছু বললেন না আর।
বেশ কয়েকটা দিন এভাবেই কেটে যায়।
নীলের সাথে ম্যাসেজ এ প্রচুর কথা হয়েছে পরির কিন্তু ফোনে একটি বারের জন্য ও কথা হয় নি।
পরি নীলের দেওয়া সরি লিখা চিরকুট টা দেখে নিলো।
সেইদিন কেন্দ্রের মাঠে দিয়েছিল নীল।
মিসেস রাহেলার ডাকে পরি ডয়িং রুমে আসলো।
ডয়িং রুমে এসে চাচাতো কাকা কে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিলো ।
সালাম জানিয়ে পাশে বসলো,,,,, টুকটাক সবাই কথা বললো।
পরি জানতে পারলো তার বান্ধবী হিয়ার মামার সাথে নাকি ওর কাজিন ফারিয়ার বিয়ে।
পরি খুশি হয়ে গেল ,,,,,
হিয়ার নানুর সাথে ও পরির ফ্যামিলির বেশ ভালো সম্পর্ক।
সবাই আত্মীয় কি না ,,,,,
হিয়া বার বার করে বলে দিয়েছি পরি যেন হলুদে তার সাথেই যায়।
যেহেতু পরির কাজিনের বিয়ে সাভারের কমিউনিটি সেন্টারে তাই এতো দূরে কেউ হলুদ দিতে যাবে না।
যার যার বাসাতেই হলুদ হবে।
পরি শাড়ি পড়ে বুঝে গেছে এই শাড়ি মহা ঝামেলা ।
তাই পরি ঠিক করেছে এবার আর শাড়ি পড়বে না।
হলুদের দিন বিকেলে পরি হিয়ার সাথে ওর নানু বাড়ি চলে যায়।
বিকেল টা আশে পাশে ঘুরেই কাটিয়ে দেয় ওরা।
সন্ধ্যার দিকে সবাই শাড়ি পড়তে বলে অনেক জোড়াজোড়ি করলে ও পরি শাড়ি পড়তে নারাজ।
অবশেষে হিয়ার আন্টি হিয়া কেই সাজাতে লাগলেন।
পরি বেডের সাইটে গিয়ে নীল কে ফোন লাগালো।
কিছুক্ষণ ফোন বাজার পর ই নীল কল রিসিপ করলো।

– হুমমম কেমন আছেন?

নীল – আলহামদুল্লিহ তুমি কেমন আছো ?

– আলহামদুল্লিহ ভালো।

নীল – হঠাৎ এই সময়।

– এমনি একটা ফাংশনে এসে বোর হচ্ছিলাম তাই ভাবলাম তোকে কল দেওয়া যাক।

নীল – হাহাহা ।
আবার তুই ?

– অবশ্যই আমি আমার অভ্যাস বদলাতে পারবো না।
তুমি ইচ্ছে হলে তুই করে বলো না হলে নাই।

নীল – হাহা তুমি ই ঠিক আছে।
তুই বললে কেমন যেন লাগবে।

– আচ্ছা যা ইচ্ছা।
তা কি ঠিক করবি ,,,,, ঠিক করেছিস ?
পড়াশুনা তো মনে হয় এখানেই শেষ।

নীল – উমমম কি করবো বলো।
পরিস্থিতি টাই যে এমন।
দেখি কি করি ।

– আরে পড়াশুনা ছাড়ার কি আছে ?
পড়াশুনা করলে জীবনে অনেক কিছু করা যায়।

নীল – হুমমম তুমি এসে সব পড়া কমপ্লিট করে দিয়ে যাও ।

– হাহা আমি কেন পড়বে হুম ?

নীল – উম সেটাই তো।
তা একটা জি এফ খুঁজে দেও ?

– মোটে ও না। পরে ঐ
মেয়ে আমাকে পেটাবে।

নীল – কেন ?

– কারন তার ঘাড়ে এমন একটা বজ্জাত ছেলে কে যে দিয়েছি।

নীল – হাহাহা তোমার সাথে কথায় পারা মুশকিল।

এমন হাজারো কথা হলো ওদের মাঝে।
প্রায় চল্লিশ মিনিট পর পরি ফোন রাখলো।
বুক ভরে নিশ্বাস নিলো ,,,, নীল তার নিশ্বাসে পরিনতি হয়েছে।
পরির ভাবনাতে ছেদ কাটলো হিয়া ।
হিয়া মিষ্টি হেসে বলল
– কথা হয়েছে?
পরি মাথা ঝাকালো,,,,
একমাত্র হিয়া ই জানে পরি যে নীল কে ভালোবাসে।পরি লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে বলল
– হুমমম চল।

হিয়া মিষ্টি হেসে বলল
– পুরো পাগল মেয়ে ।

পরি লজ্জাতে লাল হয়ে হিয়ার সাথে অনুষ্ঠান মঞ্চে চলে গেল।

_______________________

আজ রেজাল্ট দেওয়ার পালা ,,,,,
ভয়ে পরির হাত পা কাঁপছে।
সে জানে এ প্লাস পাবে না ,,,, নিশ্চয়ই এ গ্রেট পাবে তাহলে।
কিন্তু পয়েন্ট টা ও তো দেখতে হবে।
পরির সকাল থেকে সব কেমন উলট পালোট লাগছে ।
বেশ অস্বস্তি হচ্ছে ,,,,,, 12 টার পর যখন পরি তার জি এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট জানালো তখন স্তব্ধ হয়ে রইলো।
একি শুনলে সে ?
পরি যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না।
এক মূহুর্তে সব কিছু কেমন উলোট পালোট হয়ে গেল ওর।
পরির রেজাল্ট এ মাইনাস এসেছে।
পরি কাঁদতে লাগলো ,,,,,, যে মেয়ের এ প্লাস নিয়ে আশা সে এ প্লাস তো দূরে থাক এ গ্রেট ও পায় নি।
পরির কাঁদতে কাঁদতে খারাপ অবস্থা।
বাসার কারো ই মন ভালো নেই।
আশে পাশের সবাই পরি কে হালকা স্বান্তনা দিলে ও সবাই পরির প্রতি হতাশ।
পরি কে দিয়ে এমন রেজাল্ট কেউ ই আশা করে নি বোধহয়।
পরি বেশ কয়েক দিন ঠিক ঠাক খেলো না,, কথা ও বলল না।
এমন রেজাল্টে কেউ কি ঠিক থাকতে পারে?
______________________

আজ বহু দিন পর নীলের সাথে কথা হলো পরির।
বেশ অনেকদিন পর পরি অনলাইনে আসলো।
নীলের সাথে কথা বলে হালকা লাগছে খুব ।
পরি নবম শ্রেণীতে ভর্তি হলো,,,,, গ্রুপ হিসেবে ছোট থেকেই ইচ্ছে সাইন্স নিয়ে পড়ার।
তাই একটা রেজাল্টে তো সাইন্স নিয়ে পড়তে পারবে না এমন নয়।
তাই সাইন্স ই বেছে নিলো।
গ্রামের দিক হওয়াতে সাইন্স এ মাত্র 20 জন স্টুডেন্ট।
হাফসা কমার্স নিলো ,,,,, তাই পরির সাথে হাফসা র সম্পর্ক টা আলগা হয়ে গেল।
হিয়া সাইন্স নেওয়াতে হিয়ার সাথে সম্পর্ক আরো ও জোড়ালো হলো।
হিয়া কে সব কিছুই বলেছে পরি,,,,,,
হিয়া পরি কে সমর্থন ও করলো।
কারন হিয়া নিজে ও কারো ভালোবাসা তে বন্দি।
তাই অন্যের ভালোবাসা টা হিয়া বুঝতে পারে।
এভাবেই কেটে যেতে লাগলো দিন।
খারাপ সময় আসবেই তাই বলে সেটা নিয়ে শুধু আফসোস করলে চলবে না ।নিজে কে ঘুরে দাঁড়াতে ও তো হবে।
সাইন্স এর ক্লাস গুলো পরির বেশ ভালোই কাঁটে।
একটা ক্লাস পর পর ই বাইরে বের হওয়ার সুযোগ পায় সেই সুযোগে আশে পাশ টা ও ঘুরে আসে ওরা।
অথচ অন্য গ্রুপের স্টুডেন্ট রা ক্লাস করতে করতে একঘেয়েমি তে বসে থাকে।
পরি মনে মনে ভাবে ভাগ্যিস সাইন্স টা নিয়েছিলাম।
______________________

সাইন্স নেওয়াতে পরির তিনটে প্রাইভেট পড়তে হয়।
অন্য বিষয় গুলো সময় সল্পতার জন্য পড়া হয়ে উঠে না।
সেই কাক ভোরে উঠে স্কুলে যায় আর আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায় ।
শরীর টা আর সয় না পরির ,,,,,,
টিফিন মাঝে মাঝে নিয়ে যায় আর না হলে বাইরের ফাস্টফুড খায়।
সকাল বেলা ভাত খাওয়া সম্ভব নয়।
সকাল ছয় টা বাজে ঘুম থেকে উঠে ভাত খাওয়া টা অসম্ভব বিষয়।
তাই হালকা নাস্তা করেই পরি প্রাইভেটের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায় ,,, মাঝে মাঝে না খেয়েই চলে যায়।
মিসেস রাহেলা মেয়েকে তেমন কিছু বলেন না।
কারন সকাল বেলা খাওয়া টা কতোটা অস্বস্তিকর তা ওনি ও জানেন।
কিন্তু এভাবে থাকলে পরি অসুস্থ হয়ে যাবে ,,,,,তাই মাঝে মাঝে তো জোর করে খাবার ব্যাগে দিয়ে দেন।
যাতে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে খেয়ে নেয়।
এতো সকাল বেলা টিফিন এ ভাত নেওয়া ও সম্ভব না।
তাই শুকনো খাবার যেমন : রুটি , নুডলস, রোল কিংবা আলুর পরোটা নিয়ে যায় পরি।সেটা ও মাসে দুই তিন দিন।
বাইরের খাবার খেতে খেতে শরীর টা যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে।
তারপর উচ্চতর গনিত আর পদার্থ বিজ্ঞানের অপদার্থের মতো আচরন।
উফফফ পরি আর নিতে পারে না ।

_______________________

আজ বেশ অনেকদিন হয়ে গেল নীলের সাথে কথা হয় না পরির।
ফোন দেওয়ার তেমন কোনো সুযোগ পাচ্ছে না পরি।
আর ম্যাসেজ দিলে নীল কোনো রিপলে ও দিচ্ছে না।
বড্ড কষ্ট হচ্ছে ওর,,,,,,বুকের ভেতর চাঁপা কষ্ট টা খানিকক্ষণ পর পর ই শিউরে উঠছে।
হঠাৎ করে নীল কেন এমন করছে ?
পরি কি কোনো ভুল করেছে ?
নীল কে ছাড়া অনলাইন টা আজ বিষাক্ত মনে হয়।
পরি তো বলে ও নি যে ও নীল কে ভালোবাসে।
তাহলে কেন নীল ওর সাথে কথা বলে না ?
নীল কেন এমন করছে ?
পরির ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিতে।
এতো যন্ত্রণা পরি নিতে পারছে না,,,
সব তো ঠিক ই ছিলো তাহলে আজ কেন এমন করছে নীল।
তবে কি কখনো ই নীল কে পাওয়া হবে না ?
পরির মাথা টা ফেটে যাচ্ছে,,,,, অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে।
অসহায়ের মতো আকাশের অর্ধচন্দের দিকে তাকিয়ে আছে পরি।
আজ তারা রা ও পরির সাথে অভিমান করেছে,,, তাই তো তারা জোছনা ছড়াচ্ছে না।
পরি জানালা দিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।
থেকে থেকে কয়েকটা জোনাকি আলো ছড়াচ্ছে ।
কিন্তু এতো আঁধারের মাঝে সুপ্ত আলো টাকে পরির কাছে স্নিগ্ধ লাগছে না।
কথায় আছে না মনের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক।
মন ভালো তো সব কিছু ই সুন্দর আর মনে কষ্ট জমে থাকলে হাজারো সৌন্দর্য কে ও বিষাক্ত মনে হয়।
পরির ইচ্ছে করছে ছন্দ মেলাতে কিন্তু পারছে না।
সব কিছু যেন থমকে গেছে ,,,,
জীবনে এতোটা নিষ্ঠুর সময় পার করবে পরি কখনো কল্পনা ও করে নি।
অবশ্য সব কিছুই ঘটছে পরির কল্পনার জগত থেকে বাইরে।
নীল কে হঠাৎ ই এতো ভালোবেসে ফেলা আবার আলোকবর্ষ দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া।
জানালার গ্রিল শক্ত করে ধরে কপাল ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে পরি।
অনড়গল চোখ থেকে অশ্রু বর্ষন হচ্ছে।
পরি সিরিয়ালে দেখেছে অনেক গল্প তে ও পড়েছে মনের ভেতর নাকি ঝড় হয়।
কিন্তু এই সব কিছু পরির কাছে নিতান্ত ই হাস্যরসিকতা মনে হতো।
কিন্তু আজ সেই সব কিছু নিজের জীবনেই উপলব্ধি করছে সে।
জীবন টা বোধহয় সিনেমা হয়ে গেছে,,,, আর না হলে গোটা কয়েকশো পাতার বইয়ের মাঝে আটকে আছে।
চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ওর কিন্তু গলা দিয়ে একটি শব্দ ও আসছে না।
বোধহয় বাকযন্ত্র টা ও আজ পরির বিপক্ষে।
এই পৃথিবীতে তবে কি একা হয়ে গেলো সে?
না না একা কেন হবে চোখের বিরতীহীন অশ্রু কনা তো তার সাথে আছে।
কিন্তু এ অশ্রু কনা যে বড্ড যন্ত্রণা দায়ক।
পরি বাথরুমে চলে গেল ,,,, সাওয়ার ছেড়ে দিয়ে হাঁটু তে মুখ গুঁজে বসে রইলো।
শরীরের প্রতি টা নিউরন যেন কষ্ট দেওয়ার জন্য যেকে বসেছে।
পরির জীবন স্থির হয়ে গেছে ,,,,,
ভালোবাসার এ কি নিদারুণ যন্ত্রণা,,,
হাজারো যন্ত্রণার মাঝে ও যদি নীল কে পেতো সে।
ইসসস আক্ষেপ টা কি তবে রয়েই যাবে।
খাপছাড়া হয়েই কি জীবন তার নিজ গতিতে পর্দাপন করবে ?

( আসসালামুআলাই রির্ডাস । গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ ।
গল্প শেষ হয়ে গেলে কমেন্ট করা যাবে না এমন টা নয়।
যত দিন গল্প থাকবে প্লিজ কমেন্ট করবেন।
একটি কমেন্ট হাজারো উৎসাহ প্রদান করে ।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ফলো আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন )

বি: দ্র: ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💙 হ্যাপি রিডিং 💙

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here