একটুখানি পর্ব :৩

0
1604

একটুখানি
#লামিয়া চৌঃ
পর্ব:৩

-এই কুহু কি হলো ছাদ থেকে কাপড়গুলো নিয়ে আয়।
– মা পিহুকে বলো না। আমাকে দিয়ে সব কাজ করাতে হয় কেনো তোমার?
– পিহু জীবনেও এখন নড়বে না সে কম্পিউটার নিয়ে বসে আছে।
– আমিও পারবো না।
– পারবো না এটা আবার কোন ধরনের কথা? যা বলছি।
কুহু এখন মোটেও চাচ্ছে না ছাদে যেতে। কারণ আজ শুক্রবার। শুক্রবার দিন ঐ আজবটা ছাদেই দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু মাকে কিছু বলতেও পারছেনা। মাকে কিছু জানালেই মা তিলকে তাল বানিয়ে ফেলবে। এখন যদি কুহু তার মাকে কলরবের কথা জানায় শিউর মা সোজা কলরবের বাসায় যেয়ে উঠবে তারপর তার বাবা – মা চৌদ্দ গোষ্ঠীকে কথা শুনিয়ে আসবে। এটা খুবই কুৎসিত একটা ব্যাপার হবে। এধরনের কর্মকাণ্ডে দেখা যায় হিতে বিপরীত হয়। ছেলেরা দমে যাওয়ার বদলে মনে জিদ পুষে রাখে আর সুযোগ পেলেই ঝাড়ে।
তাছাড়া কলরব যে তাকে ডিস্টার্ব করে ব্যাপারটা তেমন না। কলরব শুধু কুহুকে বাস্কেটবল ছুঁড়ে দেয় আর সেটা পাস করতে বলে। অবশ্য একবার নাম জিজ্ঞাসাও করেছিল কুহু বলেনি। সেজন্য কুহুকে ফুলটুশী বলে ডাকে। ফুলটুশীও যে সবসময় ডাকে তেমন না। যখনই কলরব কুহুকে তার নাম জিজ্ঞাসা করে কুহু তখন চুপ করে থাকে আর তখনই কলরব কুহুকে বলে, ” ইটস্ ওকে ফুলটুশী “এটাই কুহুর সবচেয়ে বেশি বিরক্ত লাগে। রাস্তা ঘাটের যেকোনো ছেলে তাকে ফুলটুশী বলবে সেটা কুহুর একদমই সহ্য হয় না। কুহু বেডরুমে যেয়ে পিহুর পিছনে দাঁড়িয়ে পিহুকে বললো,
– পিহু ছাদ থেকে কাপড়গুলো নিয়ে আয় তো।
– এটা কি আমার কাজ??
– প্লিজ!
– বিছানা গোছানো আমার কাজ আর এসব কাপড়- চোপড় আনা নেওয়া গোছানো এগুলো তোর।
– আমি আজ থেকে বিছানা গোছাবো আর তুই ছাদ থেকে কাপড়..
– মোটেও না আমার ঘর থেকে বের হতে ভালো লাগে না। একদমই না পারতে বের হই।
– একটু করলে কি হয়?? বড্ড বেয়াদব হয়ে গিয়েছিস তুই। চড় থাপ্পর কয়েকটা খেলে ভালো হয়ে যাবি।
– এমন রেগে যাচ্ছিস কেনো?
– কেনো জানিস না? ঐ ফাজিলটা তো ছাদেই আছে।
– তো কি হয়েছে?
– আমি যাব না ছাদে।
– কেনো?
– দেখ ব্যাপারটাকে আমি প্রথম সিরিয়াসলি না নিলেও এখন বেশ ভাবাচ্ছে আমাকে। নিজের বোনকে বাসায় পর্যন্ত পাঠিয়ে দিয়েছে।
– কেনো পাঠিয়েছে বল তো?
– কারণ আমাকে এই কয়েকদিন ছাদে দেখেনি তাই হয়তো।
– ঠিক তাই। এখন তুই ভেবে দেখ যদি তোকে না দেখতে পেয়ে ঐ কলরব বাসা পর্যন্ত চলে আসে তাহলে কেমন হবে?
– বাসায় আসতে যাবে কেনো?
– যেহেতু বোনকে একবার পাঠিয়েছে নিজে আসতে আর কতদিন।
– কি করতে বলছিস?
– বলছি তুই নিজের মতো চলবি ঐ আজবের জন্য নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার দরকার নেই। তবে এখন থেকে বাস্কেটবল হাতেও নিবি না। সেদিন বাস্কেটবলটা যদি ভালো মানুষী না দেখিয়ে পাস না করতি তাহলে এতদূর গড়াতো না।
– একজন মানুষ হেল্প চেয়েছে করেছি এতে আমার দোষ কোথায়?
– হেল্প করাটাই তোর দোষ।
– তুই হলে কি করতি?
– চুপচাপ না শোনার ভান করে চলে আসতাম।
– আসলেই কেনো যে এ কাজটা করতে গেলাম।
– একদিন করার পর যখন সে বললো তোকে প্রতিদিন একটুখানি করে করে শিখাবে তারপরো তুই তাকে প্রায়ই বল পাস করেছিস। এটা তোর অনেক বড় একটা ভুল। দেখ তুই কিন্তু সেই লেভেলের সুন্দরী না যে তোকে দেখেই লাভ এট ফার্স্ট সাইট জাতীয় কিছু হয়ে যাবে কিন্তু তোর সাথে চলতে চলতে ধীরে ধীরে ভালোলাগাটা তৈরী হয়ে যাবে তুই হচ্ছিস তেমন টাইপের মেয়ে। আমার মনে হয় বেচারা বল পাস করতে করতে তোকে তার মনটাও পাস করে দিয়েছে।
– আমি ছাদে যাচ্ছি কাপড় আনতে।
– যাও বাবু যাও কিন্তু নিজের মনটা আবার পাস করে দিও না।
কুহু ছাদে যেতেই না চাইতেও চোখ চলে যায় পাশের ছাদে।
কলরব সেখানে বাস্কেটবল নিয়ে পায়চারী করছে। কুহুকে দেখেই বলটা কুহুদের ছাদে ছুঁড়ে ফেললো।
কুহু না দেখার ভাণ করে কাপড় নামাতে লাগলো। কাপড় নিয়ে চলে যেতে পা বাড়াতেই কলরব বললো,
– বলটা একটু পাস করো তো।
কুহুর মেজাজটা প্রচণ্ড রকমের খারাপ হয়ে গেল। এতদিন আপনি করে বলতো এখন তুমি করে বলছে। কোনোরকম রাগটা মাটি চাপা দিয়ে চলে যেতে নিলেই কলরব আবার বলে,
– এতদিন বেড়াতে গিয়ে হয়তো ভুলেই গেছো সুন্দর করে কীভাবে বল পাস করতে হয়। বলটা এমন ভাবে তোমাকে ছুঁড়ে ফেলতে হবে যেন বলটা ঠিক আমার হাতে আসে কেমন?
কুহু চিবিয়ে চিবিয়ে কলরবকে বললো,
– আপনার কি মনে হয় আমি কোনোদিন বাস্কেটবল খেলা দেখিনি?
– তা মনে করবো কেনো?
– তাহলে এমন করে বলছেন কেনো?
– কেমন করে?
– আপনার কি মনে হয় বাস্কেটবল কি মানুষ এভাবে খেলে? হাতে হাতে ছুঁড়ে খেলে?
– না তা খেলবে কেনো?
কুহু কলরবকে আর কিছু না বলেই ছাদ থেকে নেমে আসে। রুমে ঢুকেই আলনায় কাপড় গুছিয়ে রাখতে রাখতে পিহুকে বলে,
– আজবটা আজ কি করেছে জানিস?
– আজবের কাহিনী তো কয় মাস ধরে শুনছিই এখন তুই তোর ট্রেনের ঘটনাটা বল।
– কোন ঘটনা?
– ঐ যে কোন অদ্ভুত ছেলের কথা বলবি বললি না?
– ও হ্যা পরে বলবো এখন মেজাজ প্রচণ্ড রকমের খারাপ।
– ওকে আপুণি।
কুহু বাসায় এসেছে দুদিন হলো কিন্তু এখনো লাগেজ থেকে জিনিশপত্র নামানো হয়নি। সন্ধ্যায় চা খেয়েই কুহু লাগেজ থেকে সব নামিয়ে রাখতে শুরু করে। তারপর লাগেজটা আলমারির পাশে এক সাইডে রেখে হ্যান্ডব্যাগটায় হাত দেয়। চেইন খুলতেই কূজনের দেয়া বইটা চোখে পড়ে আর নিমিষেই ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। বিছানার মাঝামাঝি একটা বালিশ রেখে সেটায় উপুড় হয়ে শুয়ে কুহু বইটা পড়তে শুরু করে। পিহুর হোম টিউটর চলে যাওয়ার পর পিহু রুমে এসে কুহুর হাতে বই দেখে বলে,
– এটা না একবার পড়েছিস?
– হুম কলেজের লাইব্রেরী থেকে নিয়ে পড়েছি।
– এটা কি কিনেছিস নাকি?
– নাহ্ কূজন দিয়েছে।
– একটা খারাপ মানুষ তোকে বই দিল আর তুইও তা নিয়ে নিলি?
– তুই কি দেখেছিস তাকে তাহলে খারাপ মানুষ বলছিস কেনো? যদি দেখার পর বলতিস তাহলে আমি মেনে নিতাম কারণ আমি জানি তুই মানুষ চিনতে কখনোই ভুল করিস না।
– তুই ই তো খারাপ বললি?
– আমি আবার কখন বললাম?
– ঐ যে বললি না কুজন।
পিহুর কথা শুনে কুহু হাসতে হাসতে বইটা বন্ধ করে উঠে বসে বললো,
– আরে গাধী দীর্ঘ উ- কার। সমার্থক শব্দ পড়িসনি কখনো?
– পাখির ডাক??
– হুম তাই।
– এটাই কি ঐ অদ্ভুত ছেলেটা?
– হুম।
– পুরোটা বল।
– বলছি।
কুহুর কাছে সব শুনে পিহু বললো,
– আইডিটা আমাকে একটু দেখিয়ে দে তো।
– কেনো?
– মজা করবো।
– একদম না পরে ঝামেলা হলে?
– হবে না আমি কি উনার সাথে প্রেম করবো নাকি? না এ ধরণের কোনো কথা বলবো জাস্ট জানালা আর উনার কানেকশনের ব্যাপারে জানবো।
– কোনো প্রয়োজন নেই।
– একটু করি না মজা।
– না করেছি কানে যায়নি?
– আচ্ছা আচ্ছা।
..
– ইরিন! ইরিন! ইরিন!
– কি হলো ভাইয়া এভাবে চেচাচ্ছো কেনো?
– কি করছিলি?
– তেমন কিছুই না আর্ট করছিলাম।
– ডিস্টার্ব করলাম?
– ভাইয়া কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো তো।
– কুহুর সাথে আজ দেখা হয়েছিল।
– ভাবি এসেছে??
– এই ভাবি ভাবি করছিস কেনো?
– তাহলে কি ডাকবো? লজ্জা পাচ্ছো বুঝি? লজ্জা তো নারীর ভূষণ।
– এসব লজ্জা টজ্জা আমার নেই। থাকলে কি আর ক্লাস টেনে পড়ুয়া বোনের কাছে নিজের প্রেমের কাহিনী বলতাম নাকি?
– তাহলে ভাবি ডাকলে সমস্যা কোথায়?
– কারণ পরে মুখ ফসকে কুহুকে ভাবি বলে ফেলবি আর আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে।
– ভাবির সাথে কি আমার কথা হওয়ার কোনো স্কোপ আছে?
– আপাতত নেই তবে হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্।
– কীভাবে?
– জেনে যাবি এখন তুই তোর কাজে যা।
– ওকে ভাইয়া।
– এই শোন নে তোর চকলেট।
– থেঙ্ক ইউ ভাইয়া।
– আর শোন ভাবি ডাকা অফ করে আপাতত আপু ডাকার অভ্যাস কর পরে সারাজীবন তো ভাবিই ডাকতে হবে তাইনা?
– ওকে আমার হবু ভাবির বর।
– কথাটা বেশ পছন্দ হয়েছে। “হবু ভাবির বর” দারুণ বলেছিস। এটার জন্য কাল দুইটা চকলেট বক্স এনে দিব আমার বোনকে।
– ইউ আর দা বেস্ট ব্রাদার ইন দা ওয়ার্ল্ড।
– আর তুই বেস্ট সিস্টার ইন দা গ্যালাক্সি।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here