একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব:২২
কুহু নীচে নামতে নামতে পিহুর পিঠে এলোপাথাড়ি মারতে লাগলো।
– আপুণি সরি সরি।
– এই এভাবে তো কোনোদিন কারো সাথে কথা বলিস না কিন্তু খাবারের নাম নিতেই অবশ্যই।
– আপুণি সরি।
– কিসের সরি হ্যা?
– এই আমার উপর দোষ দিচ্ছিস কেনো?
– তো কার উপর দিব??
– তোর রাক্ষসী হাসির কারণেই কিন্তু বুঝেছে যে কেউ দাঁড়িয়ে।
কুহু এবার দমে গেল। কিছুক্ষণ ভেবে তারপর আবার বললো,
– হাসিটা কেনো উঠেছিলো??? কার জন্য উঠেছিলো? কে ছাদে আমাকে নিয়ে এসেছিল?
– আমি কিন্তু সরি। বাট আমি না নিয়ে এলে এতো সুন্দর গান কীভাবে শুনতি?
– তা ঠিক ওরা অনেক সুন্দর গান গায়।
– আচ্ছা কূজন কি ওদের রিলেটিভ?
– মনে হয়।
– তবে টিয়া পাখি আর কাকের বিষয়টা জোস ছিল।
– হা হা হা।
– আবার রাক্ষসী হাসি…
– সরি সরি। তোর বাস্কেটবল এনেছিস??
– এই তো।
..
কূজন ডিনার শেষে মোবাইল হাতে অনেকটা সময় বসে ভাবলো কুহুকে সে কি মেসেজ পাঠাবে। অনেক ভেবে লিখলো,
“জোছনায় নাকি মানুষ অনেক ভুলভাল দেখে। আমিও কি তেমন কিছুই দেখেছি? চোখের চাহনীতে হঠাৎ আপনি ভেসে উঠলেন কেনো কুহু??
কূজন মেসেজ সেন্ড করে কলরবের সাথে আড্ডায় মেতে উঠলো। কলরবের কথা শুনে হাসতে হাসতে কূজনের অবস্হা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
..
কুহু ঘুমানোর জন্য বেডে শুতেই আবার গান শোনার ইচ্ছা জাগলো কুহুর। তাই মোবাইল নিয়ে গান ছেড়ে এফবিতে লগইন করলো।কূজনের মেসেজ দদেখে কুহু সিন করলো। কুহু মেসেজ পড়ে অভিভূত হয়ে থাকলো কতক্ষণ তারপর পিহুকে বললো,
– পিহু কূজন যেমন সুন্দর গান গায় তেমন সুন্দর মেসেজও পাঠায়।
– আরে সুন্দর মেসেজ পাঠানোর জন্য বই আছে না কিছু ঐ যে আমাদের বাসায়ই তো আছে ঐগুলোর মতো কোনো বই থেকে বা গুগোল থেকে নিয়ে তোকে পাঠিয়েছে।
– আরে না তেমন না। তোকে শোনাচ্ছি।
পিহু সবটা শুনে বললো,
– কূজন তো কবিতাও লিখে তাই একটু ভাবিস্টভাবে লিখেছে আরকি।
– দেখলি তো এখন ঠিকই পল্টি মারলি।
– তুই রিপ্লাই কি দিয়েছিস?
– আমি লিখেছি,
” আপনি এখানে যে? ”
– কি রিপ্লাই দিল?
– এখনো দেয়নি।
– দিলে বলিস তো।
– অবশ্যই।
– হা হা হা।
..
কূজন ভাবতে পারেনি কুহু এতো তাড়াতাড়ি রিপ্লাই দিবে। কলরবের সাথে আড্ডা শেষে কূজন এমনিতেই মেসেঞ্জারে মেসেজ চেক করছিলো। কুহুর লিখা তিন শব্দ পড়ে কূজনের সারাটা দিনই যেন স্বার্থক মনে হলো। কলরব তখন ঘুমিয়ে পড়েছে। কূজনের আবার চোখে প্রবলেম হয় তাই আলো নিভিয়ে মোবাইল ইউজ করে না। কলরব ঘুমোচ্ছে তাই লাইটও অন করছে না পাছে আবার কলরবের প্রবলেম হয়। কূজন এতো রাতে চশমা পড়ে শুয়ে শুয়ে টাইপ করছে। শিউর একটু পর চোখ জ্বালা শুরু করে দিবে। তারপরো কুহুর মেসেজ এর রিপ্লাই করছে তাও খুব ভেবে চিন্তে লিখছে সে। কূজন চোখ বন্ধ করেই পাঁচ ছয় মিনিটের মধ্যে আস্ত কবিতা লিখে ফেলতে পারে আর সামান্য মেসেজ শুধু কুহুর জন্য তাই এতোটা সময় নিয়ে ভেবে লিখছে।
” একটুখানি দেখা তো আজ হয়েই গেল বাকিটা না হয় দিনের আলোতে খুঁজে নিবেন।”
কুহু বেশ ইমপ্রেসড কূজনের মেসেজ দেখে। তবে পিহু পুরাই বিরক্ত।
– সোজা সাপ্টা কথা এতো ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে ঢং করে বলার কি আছে?? অটিস্টিক!
– এই কতো সুন্দর গুছিয়ে কথা বলেন আর তুই যা তা বলছিস।
– অদ্ভুত।
– হ্যা তা একটুখানি।
– আমি তোমার কথা বলছি মিস কুহু আরিজা, তুমি অদ্ভুত।
– আমি আবার কি করলাম?
– এই যে এই ছেলের সাথে চেটিং করছিস মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না আমার আর তাও এই পাগলা ছাগলার কথা পড়ে ফিদা হয়ে যাচ্ছিস।
– ফিদা হতে যাব কেনো?
– আচ্ছা এটা কোনো কথা? জিজ্ঞাসা করেছিস এখানে কীভাবে? বললেই হয় উনি বেড়াতে এসেছেন অর সামথিং। না মশাই বলেছেন দিনের আলোতে খুঁজে বের করতে।
– কাব্যিক আরকি।
– পাগল! পাগল!
– তুই প্রতিবন্ধী।
– ইশ আপনি তো এই পোলার মেসেজে পটে যাচ্ছেন। পটবি তো পটবি গান শুনে পট কতো সুন্দর কণ্ঠ না আজাইরা অটিস্টিক মার্কা মেসেজ পড়ে আকাশে বাতাসে উড়বেন তিনি।
– মোটেও না।
– অবশ্যই।
– হি হি হি।
কুহু পিহু কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে তার খবরই নেই। অন্যদিকে কূজন মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে একটানা তাকিয়ে রিপ্লাই পাওয়ার অপেক্ষা করতেই লাগলো। মাঝে চোখে জ্বালা শুরু করাতে ওয়াশরুমে যেয়ে চোখে পানির ঝাপটা দিয়ে এসেছে। তারপর বিছানায় শুয়েই আবার মোবাইল হাতে অপেক্ষা করতে লাগলো। ফজরের দিকে চোখ লেগে এলো কূজনের। তখনই কলরব নামাজ পড়তে উঠলো। ফ্রেশ হয়ে কূজনকে ডাকলো। কূজন ঘুমঘুম কণ্ঠে বললো,
– মাত্র ঘুমিয়েছে পরে কাজা পড়ে নিবে।
কলরব আর কিছু বললো না। কলরব মনে করছে কূজনের বোধহয় এসি ছাড়া থাকতে কষ্ট হচ্ছে তাই বোধহয় ঘুমাতে পারেনি। পরক্ষণেই আবার মনে হলো না এখন হালকা শীত পড়েছে। ঠিক শীতও না ঠান্ডা একটা আবহাওয়া। তাই গরম নিয়ে সমস্যা নেই।কলরব মসজিদ থেকে বের হয়ে ফাঁকা রাস্তায় হাঁটতে লাগলো। কলরব ভেবেছিল কুহুর সাথে বুঝি আবার এক সপ্তাহ পর সরাসরি দেখা হবে বা কথা হবে। কিন্তু আজই হয়ে গেল। কলরব আল্লাহকে মনে মনে হাজারবার ধন্যবাদ জানাতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো মানুষ একটুখানি সুখের পিছনে ছুটে হুচট খেলে ভাবে সব শেষ কিন্তু সৃষ্টিকর্তা একটুখানি নয় সবটুকু সুখ কুঁড়িয়ে পাওয়ার জন্যই রাস্তা দেখিয়ে দেয়।
চলবে…