#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৪১
#সুরাইয়া_নাজিফা
এইমাত্রই গাড়িটা এসে পৌঁছেছে শানদের বাড়ির সামনে। আমি একবার বাহিরের দিকে তাকালাম কিছুদিনের ব্যবধানে বাড়িটা যেন নতুন নতুন লাগছে। চারপাশে আলোর রোশনাই চোখ ধাঁধিয়ে যাবার উপক্রম। একটা বাড়ি অন্ধকার করে দিয়ে অন্যবাড়িকে আলোয় আলোকিত করে সাজানোকেই হয়তো মেয়ে বলে। আমি চোখটা নামিয়ে নিলাম। বাড়ির ভিতর থেকে সবাই দৌঁড়ে এলো আমাদের নিয়ে যাবার জন্য। যদিও সবাই আমার পরিচিত তাও সবকিছু নতুন নতুন লাগছিল। আমি বের হওয়ার আগে শান বের হয়ে আমার সামনে হাত বারিয়ে দিল,
“ওয়েলকাম টু মাই হাউস ফর দ্যা সেকেন্ড টাইম সুইটহার্ট। ”
আমি শানের দিকে এক নজর তাকিয়ে মুচকি হেসে শানের হাতে হাত রেখে বেরিয়ে এলাম। আমাকে দেখেই শানের ফুফাতো বোন সানিয়া দৌঁড়ে এলো। আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“ওয়েলকাম মেজ বৌমনি। ”
আমি মিষ্টি হেসে বললাম,
“ধন্যবাদ কিউটি। ”
তারপর ও আপুর কাছে গিয়ে একই রকমভাবে ওয়েলকাম জানালো। আমাদের সবাই ফুলের পাঁপড়ি ছড়াতে ছাড়াতে বাড়ির সদর দরজা পর্যন্ত নিয়ে এলো। দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম শ্বাশুড়ী মা দাঁড়িয়ে আছে। মাকে দেখতে পেয়ে মুখে হাসি খেলে গেল। পাশেই ফুফু শ্বাশুড়ী দাঁড়িয়ে। এই মহিলার মুখে আজও হাসি নেই মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আজও পর্যন্ত বুঝতে পারলাম না যে এই মহিলার আমাকে নিয়ে এতো কি সমস্যা। যাইহোক ওনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলাম। প্রথমে আমি আর শান গিয়ে বাড়ির প্রত্যেক গুরুজনকে সালাম করলাম। সবাই আমাদের মাথায় হাত দিয়ে মন ভরে দোয়া করলেন। এরপর স্মৃতি আপু আর আরশ ভাইয়া সবাইকে সালাম করার জন্য এগিয়ে এলো। শান সহ সবাইকে সালাম করে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আমি আঁতকে উঠে বললাম,
“আরে এসব কি করছো তোমরা আমি কেন?”
ফুফু শ্বাশুড়ী মুখ গোমড়া করেই বললেন,
“সম্পর্কে তুমি ওদের বড়ই হও তাই তোমাকে সালাম করবে এটাই স্বাভাবিক এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?কি হলো আরশ তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন দ্রুত এই পর্ব শেষ কর আরো কাজ আছে। ”
আরশ ভাইয়া আর আপু আবারও এগিয়ে আসতে আমি পিছিয়ে গিয়ে বললাম,
“সম্পর্ক তো আমাদের শুধু একটা না তাই না আরো একটা সম্পর্ক আছে আমার যেখানে আমি সবার ছোটই হই তাই আমি চাই না আমি এমন একটা অস্বস্থি কর পরিস্থিতিতে পড়ি।”
ফুফু শ্বাশুড়ী আমার দিকে কটমট চোখে তাকালো শ্বাশুড়ী মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আচ্ছা ও যখন চাইছে না তখন থাকুক না।করতেই হবে এমন তো কোনো কথা নেই। ”
আমার মুখে হাসি ফুঁটে উঠল।আমি জানতাম কেউ না বুঝলেও মা ঠিক আমাকে বুঝবে।
আমি হেসে আরশ ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
“তবে আজকে তোমার কাছে আমার কিছু চাওয়ার আছে ভাইয়া।”
আরশ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“যা খুশি চাইতে পারো তোমার অধিকার আছে। আমার সামর্থ্য থাকলে সেটা অবশ্যই দিবো। ”
“কথা দিচ্ছো তো?”
“দিলাম। ”
আমি আপুর হাত আরশ ভাইয়ার হাতে দিয়ে দিলাম।শান সহ সবাই বিষ্মিত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি বললাম,
“বড়ভাবী বা ছোট বোন হিসেবে আজকে তোমার কাছে ছোট্ট একটা জিনিস চাইবো সেটা তুমি আদেশ বা অনুরোধ যেটাই ভাবো আজকে থেকে আমার বোনের যে হাতটা ধরেছো সেই হাত যত ঝড়, বাঁধা,বিপত্তি যাই আসুক না কেন কখনো ছাড়বে না। কখনো যেন আমার বোনের চোখ থেকে একফোঁটা পানি না পড়ে সব সময় এভাবেই সব পরিস্থিতিতে ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে কি থাকবে তো?”
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ওদের দিকে আরশ সহ সবাই পুরো স্পিচলেস হয়ে গেছে। আমি এমন একটা কথা বলবো সেটা হয়তো উপস্থিত কেউই ভাবতে পারেনি।
আরশ একটা লম্বাশ্বাস ফেলে বললো,
“তুমি যখন কিছু চাইবে বলেছিলে আমি ভেবেছিলাম তোমার জন্য কিছু চাইবে কিন্তু তুৃমি তো প্রথম থেকেই আমাকে ঋণী করে রেখেছো আজ আরো বেশী করে ফেললে।তোমার মনটা অনেক বড় ভাবীজান। তুমি তোমার জন্য কিছু চাইলে সেটা হয়তো আমার দেওয়ার সামর্থ্য ছিল কিন্তু যা চাইলে সেটা জানিনা আমি ঠিকভাবে পালন করতে পারবো কিনা তবে কথা দিচ্ছি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তোমার কথা রাখার চেষ্টা করবো। ”
স্মৃতি চোখে পানি নিয়ে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে। যেই মেয়েটাকে ও এখন পর্যন্ত ছোটই ভেবে এসেছে সে কেমন জানি চোখের সামনে হঠাৎ একজন দায়িত্ববান মানুষ হয়ে গেল। যে বড় বোনের মতো ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর মাথার উপর।
আমি আপুর চোখের পানি মুছে দিয়ে হেসে বললাম,
“ধন্যবাদ ভাইয়া। ”
“উহুম ধন্যবাদ নয় এত বড় মনের পরিচয় দিয়েছো তাই বড়ভাবী হিসেবে একটা সালাম তো তোমার প্রাপ্য কি বলো?”
“না না লাগবে না। ”
“লাগবে এটা আমার ইচ্ছা স্মৃতি না করুক আমি তো করতেই পারি। ”
আমি লজ্জা পেয়ে নিজের মুখ ডেকে নিলাম। শান কানে কানে বললো,
“হায় মেরী জান এমন এমন কাজ করো মাঝে মাঝে আমি কনফিউশনেই পড়ে যাই যে এটা আমার সেই পিচ্ছি বউটা তো সবাইকে ইমোশনাল করে দিলে। ”
আমি শানের দিকে তাকালাম। শান ঠোঁটে একটু দুষ্টমির হাসি ফুঁটিয়ে তুলে বললো,
“কথাবার্তা শুনে তো মনে হচ্ছে বড় হয়ে গেছ তাহলে আজকে আর ছাড়াছাড়ি হবে না কোন কি বলো?”
উনার কথা শুনে আমার হিচকি উঠে গেল আর চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম। কি সর্বনাশা কথা! শান হেসে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল।
★
★
আমি আমাদের রুমে বসে আছি লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে। শানের জন্য অপেক্ষা করছি। চারপাশে মোমের হালকা আলো আর ফুলের ঘ্রাণে ঘরটা মোহনীয় লাগছে। জানালার সাদা পাতলা পর্দা গুলো ফুরফুর করে উড়ছে। বাহিরে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। আমার কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে। বুকের ভিতরে হৃদপিন্ডের লাফালাফিটা যেন দ্বিগুন হয়ে গেছে।বসে থাকতেই অস্বস্থি হচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না।তারউপর শান তখন যেই কথা বললো এতে তো ভয় আরো বেশী লাগছে। নিজের ভাবনায় নিজেই নিজের মাথায় একটা গাট্টা মারলাম এতগুলো দিন হয়ে গেছে এটলিষ্ট সম্পর্কটা এখন তো স্বাভাবিক করা প্রয়োজন। ভাবতেই লজ্জা পেয়ে গেলাম। একটা লম্বাশ্বাস ফেলে নিজেকে তৈরী করতে থাকলাম শানের জন্য।
অনেকক্ষন ধরে বসে আছি কিন্তু শানের আসার কোনো খবর নেই। আমি বিরক্ত হয়ে ঘোমটাটা খুলে ফেললাম। বিছানা থেকে নামার জন্য এক পা নিচে দিতে যাবো তখনই দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করল শান। শানকে দেখেই আবার দ্রুত বিছানার উপর ঘুটিশুটি মেরে ঘোমটাটা টেনে দিলাম। শান এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে আর আমার হৃৎপিন্ডের ধুকপুক শব্দটা যেন আরো বেড়ে যাচ্ছে। আমি নিজের শাড়ী খাঁমছে চোখ মুখ খিঁচে বসে রইলাম। শান এসে আমার সামনে বসলো। তারপর আমার ঘোমটাটা ফেলে দিলেন আমি কেঁপে উঠলাম।
শান আমার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উপরে তুলে বললো,
“বি নরমাল সুইটহার্ট এমন রোবটের মতো হয়ে আছো কেন? ”
আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলাম,
“কি ব্যাপার কথা বলবে তো? এমন বিহেভ করছ যেন এটা আমাদের প্রথম দেখা। ”
শান হাসলো। আমার গলা যেন বসে গেছে কথা না বলতে বলতে আমি গলাটা পরিষ্কার করে বললাম,
“আসতে এতটা সময় লাগলো? ”
শান আমার একটু কাছে এগিয়ে এসে বললো,
“অপেক্ষা করছিলে বুঝি? ”
আমি একটু পিছিয়ে গিয়ে বললাম,
“আজকে রাতে তো এমনটাই কথা ছিল। ”
শান আমাকে টেনে উনার কাছে নিয়ে আসলো চোখে মুখে দুষ্টমির রেখা ফুটিয়ে তুলে বললো,
“আজকে রাতে তো আরো অনেক কিছুরই কথা আছে তাহলে সেসবও হবে বলছো। ”
আমি চোখ নিচু করে বললাম,
“জানি না। ”
শান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সোহার মুখের দিকে। তারপর বললো,
“আচ্ছা গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেও। ”
কথাটা বলে শান সরে গেল। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমি আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে এগোতে নেবো তখনই শান বললো,
“দাঁড়াও তোমার চেন্জ করতে সময় লাগবে আগে আমি চেন্জ করেনি তারপর তুৃমি। ”
কথাটা বলেই শান নিজের জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। আমি ভাবলাম যতক্ষন শান আসবে ততক্ষনে গয়না গুলো খুলে রাখি। আমি গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম আস্তে আস্তে সব গয়না গুলো খুলতে শুরু করলাম প্রায় খোলা শেষ সব কিন্তু নেকলেসে গিয়ে আটকে গেছি। শান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বেডে এসে বসল। আমি শুধু নেকলেসটা নিয়ে টানাটানি করছিলাম। কিন্তু অনেকক্ষন ধরে টানাটানি করেও কোনো লাভ হলো না।
“কি হয়েছে?”
আমি শানের দিকে ঘুরে বললাম,
“জানি না এটা খুলছেনা। ”
“দেখি আমি খুলে দিচ্ছি। ”
“না থাক আমি ট্রাই করে দেখি। ”
“এতক্ষন তো ট্রাই করলে হয়েছে কিছু তাহলে সারারাত করলেও হবে না দেখি ঘুরো পিছনে। ”
কোনো উপায় না পেয়ে আমি আয়নার দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম। শান এসে আমার পিছনে দাঁড়ালো। শানের হাত আমার ঘাড়ে লাগতেই আমি শিউরে উঠলাম শান খোলার ট্রাই করতে লাগল। কিছুক্ষন পর আমি ধীর কন্ঠে বললাম,
“হয়েছে? ”
“কিভাবে প্যাঁচিয়ে ফেলেছো god knows ওয়েট। ”
কথাটা বলেই উনি আমার ঘাড়ের দিকে ঝুকলেন হঠাৎ উনার ঠোঁটের স্পর্শ লাগতেই আমি পুরো জমে গেলাম নিজের শাড়ী শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে রইলাম। বুকের মধ্যে সব ইনস্ট্রুমেন্টস যেন একসাথে বাজছে। খুব দ্রুত নিঃশ্বাস পড়ছিলো। নড়াচড়া বাদ দিয়ে পুরো স্থির হয়ে রইলাম
“ওকে হয়ে গেছে। ”
শান আমার গলা থেকে নেকলেসটা খুলে দিলো আমি নেকলেসটা হাতে নিয়ে রেখে দিলাম আর শানের সামনে থেকে দৌঁড়ে সরে চলে গেলাম একটা থ্রীপিস নিয়ে ওয়াশরুমে। শাড়ী চেন্জ করে থ্রীপিসটা পড়ে নিলাম। তারপর হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। উফ এতক্ষন কি ভার ভার লাগছিলো শরীর এখন হালকা লাগছে।কিছুক্ষন ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। কেন যেন ভয় লাগছে প্রচুর। যতই ফ্রী হওয়ার ট্রাই করছি তত বেশী ভয় লাগছে। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে নিজের বুকের মাঝে হাত রেখে একটা লম্বাশ্বাস নিলাম। তারপর দরজা খুলে বের হয়ে আস্তে আস্তে রুমের ভিতরে এগিয়ে আসলাম কিন্তু কিছুটা এগোতেই পা যেন আর সামনে যেতেই চাচ্ছে না। শানের সাথে চোখাচোখি হতেই লজ্জা লাগছে প্রচুর।
“দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
হঠাৎ শানের কন্ঠ শুনতেই ঘাবড়ে গেলাম তুতলিয়ে বললাম,
“ন না ম মানে ঐ আমার একটা জিনিস পড়েছে এখানে সেটাই খুঁজছিলাম।”
কথাটা বলেই আমি এদিক ওদিক খোঁজার অভিনয় করতে লাগলাম শান আমার সামনে এসে দাঁড়ালো আর কিছু না বলেই আমায় কোলে তুলে নিলো আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“ক কি করছেন? ”
“তোমার না মানে ঐ নামে যাই হারিয়েছে সেটা কাল খুঁজো এখন এই মৃদু আলোতে খুঁজে পাবে না। ”
শান এনে আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিলো। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। শান আমার পাশে বসে আমার একগালে হাত রেখে আমার অনেকটা কাছে চলে এলো।শানের শীতল হাতের স্পর্শে আমি কেঁপে উঠলাম। ভয়ে প্রচুর পরিমাণে ঘামতে লাগলাম আমি।
“কি ব্যাপার সুইটহার্ট গরম লাগছে কি তোমার? ”
উনার কথা শুনে চমকে উঠে বললাম,
“মানে? ”
“মানে যেই হারে ঘামছো আই থিংক তোমার অনেক গরম লাগছে। ”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“না ঠিক আছি। ”
শান উনার একহাত দিয়ে আমার একপাশে হাত রাখতেই আমি বিছানার চাদরটা শক্ত কর চেপে ধরলাম শান ফিসফিস করে বললো,
“আমার তো মনে হচ্ছে না। ”
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলাম।
“এসিটা আরেকটু বাড়িয়ে দেবো। ”
আমি “হ্যাঁ সূচক ” মাথা নাড়ালাম শান হেসে পাশ থেকে রিমোট নিয়ে এসিটা বাড়িয়ে দিলো।
“এখন ঠান্ডা লাগছে। ”
“হুম। ”
“তো এখন কি করবে?”
উনার কথা শুনে আমার হিচকি উঠে গেল কি অদ্ভুত প্রশ্ন করছে বুঝলাম না? আমি বললাম,
“পানি খাবো। ”
শান কিছুক্ষন ড্যাবড্যাব চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল তারপর মুচকি হেসে উঠে গিয়ে আমার জন্য পানি নিয়ে আসলো উনি পানি আনতেই আমি এক নিঃশ্বাসে পানিটা খেয়ে নিলাম। তারপর গ্লাসটা উনাকে দিয়ে দিলাম উনি গ্লাসটা পাশে রেখে আবারও আমার পাশে আধশোয়া হয়ে বসল। আমি এখনো ওভাবেই মূর্তির মতো বসে। উনি আমার চুলে হাত বুলিয়ে চুল নিয়ে খেলা করছিলো।
হঠাৎ বলে উঠলো,
“তোমার কি এখনো গরম লাগছে। ”
“কেন? ”
“এখনও ঘামছো তুমি অনেক তাই বললাম।”
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম অদ্ভুত উনি কি বুঝতে পারছে না কিছু শুধু শুধু এভাবে খোঁচা মেরে আমাকে লজ্জায় ফেলার কারণ কি হনুমান একটা।
“বেশী গরম লাগলে ওড়নাটা খুলে রাখো। ”
উনার কথা শুনে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম কি বলেন উনি এসব? আমি দ্রুত বলে উঠলাম,
“না লাগবে না ঠিক আছি আমি। ”
“আচ্ছা তাহলে বসে আছো কেন শুয়ে পড়ো। ”
“হুম। ”
আমি আস্তে আস্তে ওনার থেকে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে শুয়ে পড়লাম শান রাগান্বিত হয়ে বললো,
“এতো দূরে গিয়ে শুয়েছো কেন? মাঝে যাদের জন্য জায়গা রেখেছো তারা এখনো পৃথিবীতে আসেনি তাই আমার কাছে এসো। ”
উনার কথা শুনে লজ্জায় আমার কান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে আরে মুখে তো কোনো লাগামই নেই উনার। আমি এখনও ওখানেই শুয়ে ছিলাম।উনি আমাকে টেনে উনার কাছে নিয়ে আসলেন। তারপর আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
“ঘুমাও। ”
বলেই উনি আমার চুলের মধ্যে মুখ গুজে শুয়ে পড়লেন। কিন্তু আমার ঘুম আসছে না। উনার গরম নিঃশ্বাস আমার গলা ঘাড় জুড়ে পড়ছে যার ফলে চাইলেও চোখ বন্ধ করতে পারছি না।
শান মুখ তুলে বললো,
“কি হলো ঘুমাচ্ছো না কেন?”
“ঘুম আসছে না। ”
উনি ভ্রু কুচকে বললে,
“কেন?”
“আরে এতদিন আপনার সাথে রাত জেগে কথা বলতে বলতে তো রাত জাগার অভ্যাস হয়ে গেছে তাই হয়তো। ”
শান উঠে বসল আমি বললাম,
“কি হলো উঠে গেলেন যে? ”
“তুমিই তো বললে ঘুম আসছে না। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“সেটা তো আমার আসছে না আপনার কি?”
“আমারই তো সব আমার সুইটহার্ট একা রাত জাগবে আর আমি ঘুমাবো সেটা হতে পারে নাকি।”
তারপর কিছুক্ষনই দুজনে চুপচাপ বসে রইলাম। রাত বাড়ছে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুজনেরই হার্টবিট। কারো মুখে কোনো কথা নেই। শুধু চোখে চোখে মনের কথা গুলো আদান – প্রদান করা হচ্ছে।
শান বুঝতে পারছে সোহা আনইজি ফিল করছে তাই সোহাকে ফ্রী করার জন্য বললো,
“এভাবে চুপচাপ বসে থেকে তো কোনো লাভ নেই আই থিংক আমরা কিছু করতে পারি। ”
আমি তুতলিয়ে বললাম,
“ক কি ক করতে পারি?”
শান হেসে বললো,
“এইতো গল্প করতে পারি বা যেকোনো খেলাও খেলতে পারি। ”
শানের কথা শুনে আমার চোখ চকচক করে উঠলো আমি একটু উত্তেজিত হয়ে বললাম,
“গুড আইডিয়া বাট গল্প করব না খেলবো। ”
“ফাইন কি খেলবে?”
“লুডু। ”
শান নিজের কপালে হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকালো আর মনে মনে বিরবির করে বললো,
“হায়রে কি ভাগ্য আজকের রাতেও বসে বসে লুডু খেলতে হচ্ছে। ”
আমি কপাল কুচকে বললাম,
“কিছু বললেন?”
শান হেসে বললো,
“না। ”
তারপর শান নিজের ফোন থেকে লুডু বের করলো। আমরা দুজনেই বসে বসে লুডু খেলতে লাগলাম। আমার আগে ছয় পড়লো। পরপর আমি ভালো খেলছিলাম। আমার একটা ঘুটি ছিলো শানের তিনটা।আমি কিছুটা ভাব নিয়ে বললাম,
“এইবার হারবেন আপনি।”
শান একদৃষ্টিতে কোটের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“আচ্ছা সেটা তো পরেই বুঝা যাবে কে হারে আর কে জিতে।”
” বুঝাই তো যাচ্ছে। ”
“রিলাক্স সুইটহার্ট এতো উতলা হওয়ার কিছু নেই খেলা এখনো বাকি আছে। ”
আমি মুখ ভেঙিয়ে আবার খেলায় মনোযোগ দিলাম। বাট হঠাৎ করেই কি হলো শান পরপর পর তিনটা ঘুটি দিয়ে আমার একটা ঘুটি ঘিরে ধরল। আমি ঘুটি তুলছিলাম আর উনি ঘুটিটা শুধু খেয়েই যাচ্ছিলো। শেষবার যখন খেলো আর উঠলোই না ফলস্বরূপ উনি জিতে গেল। উনার মুখে বিশ্বজয়ী একটা হাসি ফুটে উঠলো। আমি মুখ গোমড়া করে রইলাম।
“বলেছিলাম না খেলা এখনো বাকি আছে দেখেছো তো আমি জিতে গেছি। ”
আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম,
“আচ্ছা ভালো হয়েছে তবে। ”
শান হেসে ঘড়ির দিকে তাকালো রাত আড়াইটা বাজে।
“আচ্ছা অনেক রাত হয়ে গেছে এবার ঘুমিয়ে পড়ো। ”
আমি চোখ পিটপিট করে বললাম,
“ঘুমাবো?”
“নাহলে আর কি করতে চাও তুমি?”
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললাম,
“অদ্ভুত লোক সারাদিন কত কথা বললো আর এখন ঘুমাচ্ছে? ”
হঠাৎ শান আমার কাছে এসে আমার চুল একপাশে সরিয়ে আমার ঘাড়ে একটা ডিপ কিস করলো আমি নিজের চোখ বন্ধ করে রইলাম। শান আমার গালে হাত দিয়ে আমার মুখটা উনার দিকে ফেরালো,
“তুমি চাইলে ঘুমাবো না অন্য কিছু করতে পারি তবে তুমি কি চাও আমি কিছু করি?”
কথাটা বলে উনার মুখটা আমার দিকে এগিয়ে আনতে লাগলেন আমি লজ্জা পেয়ে দুই হাত দিয়ে আমার মুখটা ডেকে নিলাম। শান আমার কোমড়ে হাত দিয়ে আমাকে উনার কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
“হায়রে এতো লজ্জা পেলে তো আমার বংশ আর আগেই যাবে না। ”
উনার কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম।উনি আর কখনো শুদ্রাবেন না। উনার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম আর আমিও উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।
.
.
চলবে