শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ১

0
8549

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
#পর্ব : ১

🌸
রোশনি বেশ খুশি মনেই ফুটপাত ধরে হেটে চলেছে।হাতে একটা বক্স আর দুটো প্যাকেট। মন আর মেজাজ আজ বেশ ফুরফুরে।আজ তার ছোট ভাইটার জন্মদিন।ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়েই সে একটা শপ থেকে রেড ভেলভেট কেক আর কিছু গিফট নিয়ে বাড়ি ফিরছে।রোশনি একটা ক্যান্টিনে কাজ করে।ক্যান্টিনেই নানা রকম কেক থাকে তবে আজকে রেড ভেলভেট কেকটাই ছিলো না।আসলে ছিলো না এমনটা নয়।সব গুলোই সেল হয়ে গেছে।তাই বাইরের শপ থেকেই রোশনিকে কিনতে হয়েছে।এখন মাসের শেষ সময় চলছে।হাতে তেমন টাকাও নেই।মাসের শুরুতেই সংসার খরচ থেকে কিছুটা টাকা বাচিয়ে রেখেছিলো ।সেটা দিয়ে রোশনি এই কেক আর কিছু গিফট কিনেছে।এই মাসের এখনো সাতটা দিন বাকি।সাত দিন গেলে তবেই রোশনি এই মাসের মাইনেটা পাবে।কিভাবে চলবে এই বাকি দিনগুলো সেটাই ভাবছে রোশনি।চিন্তাই ভ্রুটা কুচকে গেলেও মুহূর্তেই ঠোটের কোনে হাসি ফুটে এলো।এই মাসের বাকি দিনগুলো নাহয় একটু কষ্ট করে ম্যানেজ করে নেবে।তার ভাইটার জন্য সে এটুকু করতে পারবে না।অবশ্যই পারবে।রোশনির আপন বলতে এই ভাইটাই আছে।আর আছে একটা চাচি।বাবা,মা কে সেটাওও জানে না।আদৌও তার বাবা মা বেচে আছে কিনা সে বিষয়েও তার কোনো ধারনা নেই।রোশনি দেখতে খুব সুন্দরি।প্রথম দেখাই কোনো ছেলের মন কেড়ে নেওয়ার মত না হলেও সেই ছেলেকে দ্বিতীয় বার রোশনিকে চোখ তুলে দেখার মত সৌন্দর্য তার আছে।রোশনি হাটতে হাটতেই বাড়ির দিকে এগুচ্ছে।বাড়ি থেকে ক্যান্টিন বেশ অনেকটাই দুরে।তবুও মাঝে মাঝেই সে হেটে যাওয়া আসা করে।যাতে করে গাড়ি ভাড়াটা বাচে।তার ভাইটাকে যে অনেক বড় করতে হবে।রোশনি এসব ভাবতে ভাবতেই বাড়ি চলে আসে।

আর এদিকে মিষ্টার অধির চৌধুরির জন্য ওয়েট করছে তার ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট আর একজন মেয়ে ইমপ্লোয়ি। ওদের অপেক্ষার অবশান ঘটিয়ে মিষ্টার অধির চৌধুরিকে নিয়ে তার প্রাইভেট চপার আকাশ থেকে মাটিতে ল্যান্ড করে।চপারের দরজা খুলতেই বেরিয়ে আসে হ্যান্ডসাম, স্টাইলিশ, মুডি,আর এ্যারোগেন্ট ব্যাক্তি দি অধির চৌধুরি।ব্লাক অফিশিয়াল ড্রেস আর সানগ্লাসে তাকে বরাবরের মতই হ্যান্ডসাম লাগছে।তার লুক,স্টাইল আর বুদ্ধিমতার জন্যে অনেক মেয়েরই সে ড্রিম বয়।অধির চৌধুরির মত পার্সোনালিটি থাকা মুখের কথা নয়।দেশ বিদেশ জুড়ে তার বিজনেস।ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ম্যান দি অধির চৌধুরি।গত পড়শুই সে ইউএস গেছিলি বিজনেসের জন্যে।আর আজ দেশে ব্যাক করলো।তাকে মাঝে মাঝেই দেশের বাইরে যেতে হয়।তবে অধির চৌধুরির ফুল ফ্যামিলি বাংলাদেশেই থাকে।অধির চোখের সানগ্লাসটা বাম হাত দিয়ে ঠিক করে সামনে এগুতে থাকে।অধির চৌধুরিকে আসতে দেখেই ম্যানেজার আর এ্যাসিস্ট্যান্ট দৌড়ে ওনার কাছে চলে যায়।আর ওদের সাথে থাকা মেয়েটা হা করে তাকিয়ে থাকে অধিরের দিকে।এতোদিন টিভি আর ম্যাগাজিনে অধির চৌধুরিকে দেখে ক্রাশ খেলেও আজ সামনা সামনি দেখে যেন চোখের পলকও ফেলতে পারছে না।ছবির থেকেও যে হাজারগুন বেশি সুন্দর এই ছেলে তার কোনো বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।অধিরের সামনে দাড়িয়েই ম্যানেজার আর এ্যাসিস্ট্যান্ট হাসি মুখেই ওয়েলকাম করে।অধির ওদের কথার কোনো রকম উত্তর না দিয়েই সামনের দিকে হাটতে থাকে।ল্যাম্বারগিনি ভিনেনো গাড়ির সামনে দাড়াতেই একজন বডিগার্ড দরজা খুলে দেয়।অধির গাড়িতে বসতেই বডিগার্ড তাড়াতাড়ি করে দরজা বন্ধ করে নিজের গাড়ির দিকে হাটা দেয়।অধিরের গাড়ি চলতে শুরু করলেই তার পিছন পিছন দুটো গাড়ি গাড়িও চলতে থাকে।একটাতে বডিগার্ড আর অন্যটাতে ম্যানেজার সহ বাকি দুজন।অধিরের গাড়িটা সোজা চৌধুরি ম্যানশনে এসে থামে।বাড়ির চারপাশে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে আছে কালো পোশাক পড়া কিছু লোক।হাতে রিভলবার। এরা চব্বিশ ঘন্টা চৌধুরি ম্যানশনের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।অধির চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে।বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখে বাড়ির সবাই ড্রয়িংরুম এ বসে আছে।অধিরের পরিবারটা জয়েন ফ্যামিলি।অধিরের মা,বড় মা,ছোট পাপা,ওর নিজের দুটো বোন,চাচতো দু ভাই আর তার দাদিজানকে নিয়েই তার পরিবার।যদিও তার দাদিজান এখানে খুব একটা থাকে না।তিনি গ্রামের বিশাল জমিদার বাড়িতেই বেশি থাকেন।স্বামির স্মৃতিতে ঘেরা জমিদার বাড়িতেই তিনি বেশি আরাম পান থাকতে।এছাড়াও সেখানেও রয়েছে অনেক রকমের চাষাবাদ।ফল,ফুল থেকে শুরু করে সবজি আর কিছু খামারও রয়েছে সেখানে।তাই মাঝে মাঝেই তাদের সবাইকে সেখানে গিয়ে থাকতে হয়।অধিরের দাদা ছিলেন বিখ্যাত জমিদার।বলতে গেলে পৃথিবীর শীর্ষ ধনীদের তালিকায় অধির চৌধুরির নাম প্রথম দিকেই পাওয়া যায়।অদির ওদের সামনে দাড়াতেই আদিল ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে অধিরকে।অধিরও মুচকে হেসে আদিলের পিঠে হাত রাখে।অধিরকে জড়িয়ে রেখেই আদিল বাচ্চাদের মত বলে ওঠে..

আদিল : ভাইয়া,,,,,জানো তোমায় কত মিস করেছি আমি।তুমি চলে যাওয়ার পর সাহিল আমায় অনেক জালিয়েছে। আমায় রান্না করে খাওয়াইনি পর্যন্ত।মাকে একটুও ভালোবসে না ও।এরপর থেকে আমাকেও তুমি সাথে করে নিয়ে যাবে কিন্তু……

আদিল বাচ্চাদের মত করে বলে চলেছে কথাগুলো।তখনই আদিলের পিঠে চাপড় মেরে পাশ থেকে সাহিল বলে উঠলো,,,,

সাহিল : ওয়ে ড্রামাবাজ,,,,,,ড্রামা শেষ তোর….?

আদিল অধিরকে ছেলে সাহিলের দিকে তাকিয়ে নিজের পিঠে হাত বুলাতে শুরু করলো।

সাহিল অধিরের সাথে হাগ করে আদিলের দিকে তাকালো।

আদিল : দেখেছো ভাইয়া তোমার সামনেই আমাকে কেমন মারছে। তাহে ভাবো তুমি না থাকলে এই ছোট বাচ্চাটার উপর কত কিছু করে…..

আদিল অসহায় ফেস করে কথা গুলো বলতেই অধির গম্ভির ভাবে বলে উঠলো…

অধির : সত্যিই তো।ওকে আমার সামনে মারছিস..?আর এভাবে কেউ মারে..? এভাবে মারতে হয়….

বলেই আদিলের গালে ছোট্ট করে চাটা মারলো।আর তারপরেই অধির আর সাহিল মিলে হাত উঠিয়ে হাইফাইভ করে হেসে উঠলো।আর আদিল গোমরা মুখ করে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো।ওতের তিনজনের কান্ড দেখে বাড়ির বাকি সবাইও হেসে উঠলো।এরপর অধির বাকি সবার সাথেও হাগ করে কুশল বিনিময় করে নিজের রুমে চলে গেলো।অধির চৌধুনি মুডি আর এ্যারোগেন্ট হলেও নিজের ফ্যামিলির কাছে সে একদম আলাদা।সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলা বিশেষ করে তার দুই ভাই আর দুই বোন তার কলিজা।অধিরের দুই বোনের নাম হিয়া আর রিয়া।হিয়া হাইয়ার স্টাডির জন্যে বর্তমানে দেশের বাইরে আছে।আর রিয়া ইন্টার ফান্ট ইয়ারে পড়ে।সে এখন কলেজে আছে।সাহিল আর অধির সমবয়সি।সাহিল ও অধিরের সাথে বিজনেস সামলাই।তবে অধিরের মত অতোটা কাজ নিয়ে পড়ে থাকে না।আর আদিল এখন ইউনিভার্টিতে পড়ে।

অধির ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে।তারপর কিচেনে গিয়ে নিজের জন্য ব্লাক কফি,সাহিলের জন্য নরমাল কফি,আর আদিলের জন্য প্রোটিন শেক বানিয়ে ট্রে তে করে হাটা দেয় গার্ডেন এরিয়ার দিকে।কারন এই সময় ওরা ওখানেই থাকে।অধির ট্রে হাতে করে পুলের পাশে যেতেই দেখে আদিল আর সাহিল বসে আড্ডা দিচ্ছে।অধির ওখানে যেতেই আদিল খানিকটা সরে বসে অধিরকে জায়গা করে দেয় বসার জন্যে।তারপর ট্রে থেকে যে যার মত মগ তুলে নিয়ে চুমুক দিতে দিতে গল্পে মেতে ওঠে।

এদিকে রোশনি বাড়ি ফিরে বসার রুমটা খুব সুন্দর করে সাজায়।বেশ কিছু বেলুন দিয়ে সাজানোর পর চলে আসে বাড়ির সামনের ছোট্ট বাগানটাই।সেখানে লাগানো বেশ কিছু ফুলগাছে ফুল ফুটে আছে।রোশনি একটা ঝুড়ি নিয়ে গাছে থেকে বেশ কিছু গোলাপ আর বেলি ফুল তুলে আনে।বাগানটা রোশনি নিজের হাতেই তৈরি করেছে।ফুল রোশনির কাছে একটা দূর্বলতা। তাই বাড়ির সামনের জায়গাটুকুতে নানা রকম ফুলের গাছ লাগিয়েছে।শুধু কি তাই….? এই ছোট্ট জায়গাটাতে বেশ কিছু সবজি আর কিছু ফলের গাছও আছে।রোশনি বাগানটা একটু পরিষ্কার করেই ফুলগুলো নিয়ে বাড়ির মধ্যে চলে যায়।ফুলগুলো দিয়ে ছোট্ট টেবিলটা সুন্দর করে সাজায়।তারপর রান্নাঘরে চলে যায় রান্না করতে।ফ্রীজ খুলে দেখে কয়কটা ডিম আর একটু মাংশ আর দুধ ছাড়া বেশি কিছু নেই।দুদিন আগেই তো রোশনি কিছু ফল আর মিষ্টি এনে রেখেছিলো ফ্রীজে। তাহলে সেগুলো কোথায় গেল…? পরোক্ষনেই মনে হলো হয়তো চাচি খেয়ে নিয়েছে সব।রোশনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্রীজ থেকে ডম,মাংস আর দুখ বের করলো।তারপর বিরিয়ানি,পায়েস আর পুডিং বানিয়ে সব ঠিকঠাক মত রেে বেরিয়ে এলো রান্নাঘর থেকে।

ওড়না দিয়ে গলা মুছতে মুছতেই বলে উঠলো রোশনি…

___এবার গোসলটা সেরে নিই।একটু পরেই তো নকুল (আয়াশ) চলে আসবে।আজকে ওকে একদম চমকে দেবো।…….(হেসে)

রোশনি গোসল সেরে এসে রুমের মধ্যে পায়চারি করছে।তখনই দরজায় কেউ শব্দ করলো।রোশনি আয়াশ এসেছে ভেবে মুচকি হেসে দরজা খুলে দিলো।সামনে দাড়ানো মানুষটাকে দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেল রোশনির।দরজার ওপাশ থেকে মোটাশোটা এক মহিলা তীক্ষ্ণ কন্ঠে গর্জে উঠলো….

রাহেলা বেগম : সামনে এমন ঢঙের মত দাড়িয়ে আছিস কেন…? সর সামনে দেখে….

রোশনি সরে দাড়াতেই রাহেলা বেগম ভিতরে চলে এলো।রোশনি একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে দরজাটা কোনো রকম ভেজিয়ে চলে এলো।এদিকে বসার ঘর এমন সাজানো দেখে রাহেলা বেগম ভ্রু কুচকে তাকালো রোশনির দিকে।

____ঘর এমন সাজিয়েছিস কেন…? বিয়ে টিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিস নাকি….? তোকে আবার কে বিয়ে করবে শুনি…?

রাহেলা বেগমের তাচ্ছিল্যের হাসি দেখেও চুপ করে রইলো রোশনি।রোশনি বেশ চুপচাপ আর শান্ত স্বভাবের মেয়ে।তাই অযথা প্যাচাল করার কেনো ইচ্ছে বা রুচি কোনোটাই এখন ওর নেই।চাচির কথা শুনে নরম গলায় বলে উঠলো রোশনি..

____আমার বিয়ে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না চাচি।আজ নকুলের জন্মদিন তাই একটু…..

রোশনিাে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই টেবিলে রাখা কেকটার দিকে নজর যেতেই রাহেলা বেগম আতকে উঠলেন।

___এই কেক কোথায় পেলি…? নিশ্চয় টাকা খরচ করে কিনে এনেছিস…।বলি এমনিতেই মাসের শেষ,,,, হাতে তো টাকা পয়সা কিছুই থাকে না।তাহলে এটা ঘটা করে এসব আদিখ্যেতা করার কোনো মানে আছে…? এতো দামি কেক না আনলে চলতো না…? এই মাসের এখনো সাতটা দিন বাকি আছে সে খেয়াল আছে তোর…?

রোশনি এবার চাচির দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে উঠলো…..

___প্লিজ চাচি,,,,আজকে অন্তত চুপ থাকো।আমি জানি মাসের এখনো সাত দিন বাকি আছে। আজ ামার ভাইটার জন্মদিন আর ওর জন্মদিনে আমি এইটুকু করবো না…?

____বাকি দিন গুলো,কি তোর বাপ এসে চালিয়ে দিয়ে যাবে…?ও,,,তোর বাপ কে সেটাও তো জানিস না…..

রাহেলা বেগমের কথায় চোখের কোনে পানি জমা হলো রোশনির।তবুও সেটা চোখ বেয়ে পড়তে না দিয়ে বলে উঠলো…

____বাকি দিন গুলোও আমিই চালিয়ে নেবো চাচি।তোমাকে ভাবতে হবে না।

রাহেলা বেগম আর কিছু না বলে মুখ ঝামটা দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।আর কিছুক্ষন পরে আয়াশ স্কুল থেকে ফিরলো।রোশনি আয়াশকে দেখেই ছুটে গেলো ওর কাছে।আয়াশ নিচের দিকে মুখ করে আছে।রোশনি আয়াশের সামনে হাটু গেড়ে বসে বলে ওঠে….

____কি হয়েছে আমার নকুলের….? নকুল সোনার মুড অফ কেন…?

রোশনির কথা শুনে আয়াশ চোখ তুলে তাকায় রোশনির দিকে।তারপর কোনো রকম বলে ওঠে….

__আজও সবাই আমাকে নিয়ে মজা করেছে।

আসলে আয়াশের কথা গুলো বেধে বেধে যায়।আর এটা নিয়ে অনেকেই ওর সাথে মজা করে।রোশনি ডক্টরের সাথে কথাও বলেছে।ওর অপারেশন করলেই ও সবার মত স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারবে।তবে অপারেশনে অনেক টাকা লাগবে।তাই তো রোশনি অনেক কষ্ট করে দিন রাত কাজ করে চলেছে।একটু একটু করে টাকাও জমিয়ে রাখছে।রোশনি আয়াশের পিঠ থেকে স্কুল ব্যাগটা নিয়ে টেবিলে রাখে।তারপর আয়াশের মাথার চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলে ওঠে…

___কেউ কি জানে,,,,,,যে কারো এই বেধে বেধে যাওয়া কথা শুনে পাশের বাড়ির টুসি তার উপর ফিদা হয়ে গেছে…?

মুহূর্তেই আয়াশের মুখে হাসি ফুটে উঠলো…

___সত্যিই…….???

রোশনি মাথা নাড়াতেই আয়াশের ঠোট দুটো আরো কিছুটা প্রসারিত হলো।

____ভালোই হয়েছে বলো,,,,,,আমাদের ক্লাসে রোল নম্বর দুই ওই যে টিনা,,,,,তোমাকে একদিন দেখালাম না ও,,,,ওর সাথে আজ আমার ব্রেকআপ হয়েছে।আমার পুরোনো জুতো দেখে হেসেছিলো ও…..

আয়াশ বেশ মন খারাপ করেই কথা গুলো,বললো।আয়াশের মন খারাপ দেখেও রোশনি মুচকি হাসলো।তারপর আয়াশের চোখ চেপে ধরতেই আয়াশ বলে উঠলো…..

____আমার চোখ ধরছো কেন বাডি….

আয়াশের কথায় মুচকি হেসে রোশনি সামনের দিকে এগুতে লাগলো।টেবিলের সামনে আসতেই আয়াশের চোখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো রোশনি।টেবিলের উপর কেকটা দেখেই খুশিতে চিকচিক করে উঠলো আয়াশের চোখ।রোশনি আয়াশের কপালে ঠোট ছুইয়ে বলে উঠলো…..

____হ্যাপি বার্থডে সোনা।ম্যানি ম্যানি হ্যাপি রিটার্নস অফ দা ডে……

আয়াশ ঠোট দুটো প্রসারিত করে বলে উঠলো…

___তোমার মনে ছিল…? আমি তো ভাবলাম ভুলেই গেছো।আর আমার জন্মদিনে এই কেক কাটতে ইচ্ছে করছিলো তুমি কি করে জানলে….?

আয়াশের কথায় মুচকি হেসে উঠলো রোশনি।

___তোর নিল চিরকুট থেকে জেনেছি…

___ওটা তো আমি কাগজে লিখে প্রে করেছিলাম আল্লার কাছে।যাতে আল্লাহ আমার উইশটা পুরন করে।কিন্তু তুমি কোথায় পেলে……?

____সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না।এখন তাড়াতাড়ি গোসল করে এসো।কেক কাটতে হবে তো।আমার তো কেকটা দেখেই লোভ হচ্ছে খেতে……

রোশনির এমন বাচ্চামো করে বলা কথায় খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে আয়াশ।আয়াশ গোসল করে আসতেই রোশনি একটু নতুন জামা আর প্যান্ট পড়িয়ে দেয় আয়াশকে।

____এই ড্রেসটা কোথায় পেলে বাডি….?

রোশনি আয়াশের চুল আচড়ে দিতে দিতে বলে উঠলো….

___এটা তিশা আন্টি তোমায় দিয়েছে।বার্থডে গিফট হিসেবে।আন্টির ক্যান্টিনে কাজ আছে তো তাই আসতে পারে নি…

___আর জয়……?

জয়ের নামটা শুনেই রোশনি আয়াশের দিকে তাকালো।দেখলো আয়াশ মুচকি মুচকি হাসছে।তা দেখে রোশনি বলে উঠলো…..

___এই এমন ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত হাসছিস কেন..? জয় আসতে পারবে না।আন্টির শরির খারাপ তাই আন্টির কাছে গেছে কাল।সকালে জয়ের সাথে কথা হয়েছে।তোর সাথে কথা বলবে রাতে।

এরপর রোশনি আয়াশকে সাথে করে বসার ঘরে চলে আসে।চাচিকে ডাকতে গেলে তিনি সোজা না করে দেন।তার নাকি এসব আদিখ্যেতা দেখার ইচ্ছে নেই।

___আস্ত একটা হাতি।সারাদিন শুধু তোমার আর আমার মাথা খেতে থাকে।চিড়িয়াখানার লোকজন যদি একে দেখে তো হাতি মনে করে সত্যি সত্যিই নিযে চলে যাবে…

আয়াশের কথা শুনে রোশনি খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে।তারপর দুজন মিলে কেক কেটে দুজন দুজনকে খাইয়ে দেয়।এরপর রোশনি দুটো প্যাকেট এনে আয়াশের হাতে ধরিয়ে দেয়।

___এটা কি….?

রোশনি চোখ দিয়ে ইশারা করে খুলে দেখতে।আয়াশও প্যাকেট খুলে দেখে,,,,নিউ স্কুল ব্যাগ,নিউ টিফিন বক্স, নিউ ওয়াটার বোটল,নিউ সুজ…….আর সাথে একটা ডেইরিমিল্ক।আয়াশ রোশনির দিকে তাকাতেই রোশনি বলে ওঠে……

____কি পছন্দ হয়েছে নকুল সোনার…?

আয়াশ কিছু না বলে রোশনিকে জড়িয়ে ধরে।রোশনিও দু হাতে আয়াশকে জরিয়ে নেয় নিজের সাথে।

___হয়েছে আর সেন্টি খেতে হবে না।তোর জন্যে বিরিয়ানি, পায়েস আর পুডিং বানিয়েছি।চল খাবি,,,,নয়তো চাচি দেখলে আর কিচ্ছুটি পাবি না….

রোশনির কথা শুনে আয়াশ ফিক করে হেসে ওঠে।

এদিকে দিনের আলোকে ঠেলে দিয়ে পৃথিবীর বুকে সন্ধ্যা নেমেছে।দোতলার খোলা বারান্দায় হাতে কফির মগ নিয়ে বসে আছে অধির।খোলা বারান্দার পাশ বেয়ে মাথা উঠিয়ে দাড়িয়ে আছে বিশাল কালো গোলাপের গাছটি।তাতে অসংখ্য ছোট বড় কালো গোলাপ ফুটে আছে।অধির ছোট থাকতেই সে নিজ হাতে গাছটা লাগিয়েছিলো।অধিরের কালো পছন্দ।তাই তো গাড়ি থেকে শুরু করে রুমের প্রত্যেকটা জিনিস কালো,,,সাথে রুমের পর্দাগুলোও।সাদা থাই গ্লাস দিয়ে ঘেরা পুরো দোতলা।আর চারপাশে কালো পর্দা। এমনকি অধিরের ড্রেসআপও কালো।সে সব সময় কালোই পড়ে।ফর্সা শরিরে যা সত্যিই মারাত্মক লাগে।অধির বারান্দার সোফায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে।কানে ব্লুটুথ লাগানো।সামনে ল্যাপটপ। আর তারপাশে কফির মগ।এখন সে তার কিছু ফরেনার ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং করবে।………

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here