#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৩১
🌼
রাত তখন বোধহয় এগারোটার মত বাজে।রোশনি চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে সিড়ি দিয়ে উঠতেই দিদামের মুখোমুখি হলো।রোশনি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে গিয়েও দিদামের কথায় থেমে গেলো।
-তোমার এই এ্যাটিটিউড না আমার সামনে অনন্ত দেখাবে না।তুমি ভিষন চালাক একটা মেয়ে।অধিরের আগে পিছে ঘুরে তুমি ওকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছো।তবে ভুলে যেওনা আমি কে। আমি এতো সহজে সব কিছু মেনে নেবো না।ভুল করেও তুমি আমার সাথে তোমাকে কম্পেয়ার করো না।অধির আগেও আমার ছিল।আর এখনো আমারই আছে।তোমার প্রতি ও এ্যাট্রাক হয়েছে মাত্র।দুদিন পরে এ্যাট্রাকশন চলে গেলে ও আবারো আমার কাছে চলে আসবে।
রোশনি চোখ মুখ কুচকে তাকালো।হাত ভাজ করে সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলে উঠলো,
-আমার সাথে লাগতে এসো না মিস দিদাম।ফল ভালো হবে না।একটা সাজেশন দিই শোনো।খেলা সব সময় নিজের লেভেলের খিলাড়ির সাথে খেলবে।আসলে খিলাড়ি দূর্বল হলে না খেলায় মজা পাওয়া যায় আর না জিতে মজা পাওয়া যায়।আর খিলাড়ি যদি নিজের বরাবরি হয় তাহলেই জমবে মজা।তখন জিতার খুশিও থাকবে অনেক।মূল্যও থাকবে অনেক। তুমি আমার লেভেলের নও। তোমার সাথে খেলে আমি মজা পাবো না।সো অন্য কাউকে খুজে নাও।
দিদাম চোখ মুখ শক্ত করে তাকালো।বললো,
-আমার সামনে বেশি স্মার্ট সাজার চেষ্টা করো না।তুমি সবার সামনে নিজেকে যতোটা স্মার্ট দেখাও ততোটা স্মার্ট তুমি নও।ভুলে যেও না অধির এখনো আমার উডবি।
রোশনি মুচকি হাসলো। তার এই মুহূর্তে কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে না।সে শুনেছিল কোথাও।সাইলেন্স ইজ দা বেস্ট আনসার অফ অল স্টুপিড কোশ্চেন। এন্ড স্মাইল ইজ দা বেস্ট রিয়্যাকশন ইন অল ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশনস।দিদাম আরো কিছু বলবে তার আগেই অধির রোশনিকে ডাক দিলো।রোশনি দিদামের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।বললো,
-তোমার উডবি আমায় ডাকছে মিস দিদাম আহমেদ।
রোশনি চলে যেতেই দিদাম সাইড থেকে ফ্লাওয়ারভাজটা তুলে ছুঁড়ে মারলো দূরে।রোশনি শব্দটা শুনতে পেয়েও পিছনে ফিরে তাকালো না।ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়েই রুমের দিকে পা বাড়ালো সে।
সকালে কারো আদুরে ডাক কানে এলো রোশনির।ঘুমের মাঝেও বুঝতে পারলো কেউ খুব যত্ন নিয়ে তাকে ডাকছে।রোশনির ভালো লাগছে গলার স্বরটা।কামড়ে কুমড়ে খেয়ে নিতে ইচ্ছে করছে।রোশনি ঘুমের মাঝেই হাসলো।ঘুম জড়ানো গলায় বললো,
-উফফ কন্ঠটা কি মিষ্টি!!!আমার তো খেয়ে নিতে ইচ্ছে করছে।
অধিরের শরিরের লোপকূপ দাড়িয়ে গেছে।এই মেয়ের ঘুম জড়ানো কথায় কবে জানি সে মারা যায়।তারউপর এই মেয়ের এসব কথা। অধির মুচকি হেসে রোশনির মুখের উপর থেকে আলতো হাতে চুল সরালো।বললো,
-সুইটহার্ট এভাবে বলো না।নয়তো বেশিক্ষণ বেঁচে থাকতে পারবো না।তোমার নেশায় এমনিতেই আটকে গেছি।এভাবে আমাকে আর ধ্বংস করো না।
অধিরের কথাগুলো রোশনির কানে গেলো কিনা বোঝা গেলো না।তবে ঘুমের মাঝেই ঠোঁট গোল করে হাসলো রোশনি।অধিরের দৃষ্টি সেদিকেই আটকে গেলো।গোলাপি ঠোটগুলোকে গভির ভাবে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করলো।অধির নিজের দৃষ্টি ফেরালো।নিজের ইচ্ছেটাকে মনের মাঝেই দাবিয়ে রাখলো।সে এভাবে রোশনিকে পেতে চায় না।রোশনি নিজে থেকে যেদিন তার কাছে আসবে সেদিনই নিজের সুপ্ত ইচ্ছেগুলো সে পূরন করবে।তার আগে নয়।অধির কিছুক্ষন রোশনির ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে রোশনির মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।আদুরে গলায় কয়েকবার ডাকতেই রোশনি চোখ মেলে তাকালো।রোশনিকে চোখ পিটপিট করে তাকাতে দেখে অধির মুচকি হেসে বলে উঠলো,
-গুড মর্নিং মিসেস অধির চৌধুরি।
অধিরকে দেখে হাই তুলে উঠে বসলো রোশনি।সদ্য ঘুম থেকে উঠায় চোখ দুটো খানিক ফোলা ফোলা দেখাচ্ছে তার।অধির যেন এটারও প্রেমে পড়ে গেলো আবার।এই মেয়ের প্রতিটা রুপেই সে নতুন করে প্রেমে পড়ছে।ফোলা ফোলা চোখ আর এলোমেলো চুলে ভিষন আদুরে দেখাচ্ছে রোশনিকে।অধিরের ভিষন ইচ্ছে করছে রোশনিকে খুব করে আদর করে দিতে।অধিরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকালো রোশনি।হাই তুলতে তুলতে বললো,
-কি সমস্যা? এভাবে অসভ্যের মত তাকিয়ে আছেন কেন?
অধিরের ঘোর কাটলো।ঘোর আপত্তি জানিয়ে বললো,
-স্ট্রেঞ্জ!!!অসভ্য আমি।আর অসভ্যের সব লক্ষন তোমার মাঝে?
অধিরের কথার মানে বুঝতে না পেরে ঠোঁট উল্টে তাকালো রোশনি।ঠোঁট গোল করে বললো,
-আপনি কথা এমন গোল গোল ঘুরাচ্ছেন কেন হ্যা? যা বলার সোজা সুজি বলুন।
রোশনি কথা শেষ হতেই অধির ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
-এই একদম ঠোঁট উল্টিয়ে কথা বলবে না।আমার প্রবলেম হয়।
-মানে? এতে কি করে আপনার প্রবলেম হয় শুনি?
কথাটা বলে আবারো ঠোঁট উল্টালো রোশনি।
-এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার?আবার ঠোঁট উল্টালে কেন? বললাম না আমার প্রবলেম হয়।তখন কিছু করে বসলে আমাকে অসভ্য বলতে পারবে না কিন্তু।
-আশ্চর্য। কি বলছেন তখন থেকে?আর কি করবেন আপনি? বলুন।
রোশনি আবার ঠোঁট উল্টাতেই অধির ঝুকে গেল রোশনির দিকে।ফিসফিসিয়ে বললো,
-মানা করার পরেও বার বার কেন ঠোঁট উল্টে কথা বলছো?তুমি বুঝতে পারছো আমার ভেতরে এখন কি চলছে?আর এক বার ঠোঁট উল্টালে কিন্তু আমি কিস করে নেবো বলে দিলাম।
অধিরের কথায় চোখ বড় বড় করে তাকালো রোশনি।লোকটা আসলেই অসভ্য।শুধু অসভ্য নয় অসভ্যের চূড়ান্ত পর্যায়।রোশনি অধিরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
-আপনি আসলেই অসভ্য।সকাল সকাল অসভ্যামি শুরু করে দিয়েছেন।
অধির মুচকি হাসলো রোশনির দিকে তাকিয়ে।
-বাহ আমি এটা বলতেই অসভ্য হয়ে গেলাম? আর ঘুমের মাঝে তুমি যেটা বললে সেটা কি হা?
-কি বলেছি আমি ঘুমের মাঝে?
-তুমি বলেছো আমার কন্ঠটা নাকি ভিষন মিষ্টি।তোমার কামড়ে কুমড়ে খেয়ে নিতে ইচ্ছে করছে।
রোশনি চোখ মুখ কুচকে তাকালো।নাক ছিটকে বললো,
-ছিঃ আমি এমন বাজে কথা কখনোই বলি নি।আপনি মিথ্যে বলছেন।
অধির এবার উঠে বসলো।বাচ্চাদের মত করে বললো,
-আমি জানতাম তুমি বিশ্বাস করবে না।কিন্তু তুমি স্বিকার করো আর না করো তাতে সত্যিটাতো আর মিথ্যে হয়ে যাবে না।তুমি সত্যিই এটা বলেছো।
-আমি কখনোই এমন অসভ্য কথা বলি নি।এসব আপনি বানিয়ে বানিয়ে বলছেন।
-ওকে বাবা।তুমি বলো নি আমিই বানিয়ে বানিয়ে বলছি।হ্যাপি? এবার তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো নয়তো আমি কিন্তু আদর করে দেবো।
রোশনি একটা বালিশ অধিরের দিকে ছুড়ে মেরে ওয়াশরুমে চলে গেলো।অধির হাসতে হাসতেই বিছানা ঠিক করলো।রোশনি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো অধির প্লেটে খাবার বাড়ছে।
-অাজ হঠাৎ রুমে খাবার নিয়ে এলেন যে?
-আজ দুজনে একসাথে খাবো তাই।এখন তাড়াতাড়ি এসো।
রোশনি সোফায় বসে ভ্রু কুচকে তাকালো অধিরের দিকে।
-এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
-একটা প্লেট কেন? আরেকটা কোথায়?আমি খাবো কিসে?
-কেন এই প্লেটে।এক প্লেটেই খাবো আজ দুজন।
-মানে কি? এক প্লেটে খেতে যাবো কোন খুশিতে? অকেশনটা কিসের শুনি?
-সুইটহার্ট…? আমাদের মত কাপলদের এক প্লেটে খাওয়ার জন্যে কোনো অকেশনের প্রয়োজন আছে নাকি?ইউ নো হোয়াট? দাদি বলে একসাথে একপ্লেটে খাবার খেলে দুজনের মধ্যে ভালবাসা বাড়ে।এন্ড ইউ নো গেইজ ঘরওয়ালি? তোমার আমার সম্পর্কে এটা ভিষন ভাবে প্রয়োজন। আমার মনটা দিন দিন ভিষন লোভি হয়ে যাচ্ছে বুঝেছো?সব সময় কিছু না কিছু পেতে চাচ্ছে।এই এখন যেমন তোমার হাতে খেতে চাচ্ছে।কিন্তু আমার তো ফাঁটা কপাল।বউ আমাকে খাইয়ে দেবে সেই কপাল আমার নেই।আপাততো এক প্লেটে খেলেই মনকে কোনো রকম শান্তনা দিতে পারবো।প্লিজ শেয়ার করো।ইউ নো না? শেয়ারিং ইজ কেয়ারিং।
রোশনি বিরক্ত চোখে তাকালো। বললো,
-আপনার মনে হচ্ছে না আপনি বেশি বেশি করছেন? আর এসব পাগলামির মানে কি?
-তুমি এটাকে পাগলামি বলছো সুইটহার্ট? এটা আমার ভালোবাসা।বৃষ্টির মতো হঠাৎই চলে এসেছে আমার জিবনে।ভিজিয়ে দিয়েছে পুরোপুরি আর ভালোবাসায় পাগলামি না থাকলে সেটা কেমন ভালোবাসা।ভালোবাসায় পাগলামি না থাকলে আমরা তাজমহলকে বিল্ডিং মনে করে ভুলে যাবো একদিন।ওটাকে ভালবাসার প্রতিক হিসেবে কখনো মনে করবো না।ভালবাসায় পাগলামো থাকা ভিষনই গুরুত্বপূর্ণ সুইটহার্ট।
রোশনি লম্বা শ্বাস ফেলে অধিরের হাত থেকে প্লেট কেড়ে নিয়ে খেতে শুরু করলো।অধির সেদিকে তাকিয়ে ফুস করে নিশ্বাস ছাড়লো। রোশনির বাম হাতের অনামিকা আঙুলে তার দেওয়া রিংটা চোখে পড়তেই ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো তার।মনে মনে বললো,
-তুমি আমার থেকে কোথাও যেতে পারবে না সুইটহার্ট। এখন তুমি আমার থেকে দূরে তখনই যেতে পারবে যখন আমাদের দুজনের মধ্যে যে কোনো একজনের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।এতো সহজে আমি তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবো না সুইটহার্ট। আর নাই তোমাকে যেতে দেবো।আমার খাঁচায় আজিবন তুমি বন্ধী থাকবে ঘরওয়ালি। যতোক্ষন আমি না চাইবো সেই খাঁচার দরজা কেউ খুলতে পারবে না।
রোশনি খাবার চিবুতে চিবুতে বললো,
-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমার অস্বস্তি হচ্ছে।
রোশনির কথায় অধির হাসলো।ভ্রু চুলকাতে চুলকাতে বললো,
-কি করবো সুইটহার্ট। চোখ শুধু তোমাকেই যে দেখতে চাই।বাই দা ওয়ে আমি একটা ইমপর্টেন্ট মিটিং এ যাচ্ছি।ফিরতে রাত হবে।
অধিরের কথায় চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো রোশনির।তারমানে আজ সারাদিন সে মুক্ত। রোশনির মুখের দিকে তাকিয়ে অধির বলে উঠলো,
-এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই।আমি না থাকলেও আমার নজর তোমার উপরেই থাকবে।সো বেশি উড়া উড়ির চেষ্টা করবে না।পাতা সাধারনত বাতাসের ইচ্ছেতে ওড়ে এটা নিশ্চয় জানো।তেমনই আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তুমিও উড়তে যেওনা সুইটহার্ট। এখন খাবারটা শেষ করো।
রোশনি জয়ের রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে।অস্বস্তি, ভয় আর জড়োতায় ক্ষীপ্ত হয়ে মৃদু ঘামছে শরির।লম্বা শ্বাস টেনে দরজায় হাত রেখেও থেমে গেলো সে।জয়ের মুখোমুখি দাড়ানোর সাহস করে উঠতে পারলো না।তপ্ত নিশ্বাস ফেলে পিছনে ফিরতেই দেখলো দিদাম দাড়িয়ে আছে বিষ্ময় নিয়ে।রোশনি দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে নিতেই প্রশ্ন ছুড়লো দিদাম,
-তুমি এখানে কি করছিলে? এটা ওই জয় না কি যেন নাম।ওর রুম তাই না?এখানে তোমার কি কাজ?
-আমি জানতাম না এই রুমে উনি আছেন।আমি ব্যস রুমটা দেখছিলাম।ভেতরে কেউ আছে বুঝতে পেরেই ফিরে যাচ্ছি।
-ও…..
রোশনি আর দাড়ালো না।নিজের রুমে চলে এলো।বেলকোনিতে দাড়িয়ে গোলাপগুলোকে ছুঁয়ে দিলো।এই বাড়িতে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা এটা রোশনির কাছে।অদ্ভুদ এক বন্ধত্ব হয়ে গেছে জায়গাটার সাথে।মন খারাপের সময় এখানে দাড়ালে অদ্ভুদ ভাবেই তার মন হালকা হয়ে যায়।গোলাপগুলোকে আলতো হাতে ছুয়ে দিলেই শরির জুড়ে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যায়।এই জায়গাটা হঠাৎই ভিষন নিজের হয়ে গেছে।রোশনি আকাশের দিকে তাকালো।তপ্ত রোদ এসে মুখে পড়তেই চোখ বুজলো সে।
সাহিল তখন রুমে বসে কিছু ভাবছিলো।আদি সাহিলকে ডাকতে ডাকতেই রুমে এসে সাহিলের পাশে বসলো।এক নজর আদিকে দেখে নিয়ে আবারো ভাবনায় ডুব দিলো সে।আদি নিজের মতোই বক বক করছে।সাহিলের কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে আদি ভ্রু কুচকে তাকালো।বললো,
-আমার কথা শুনছিস তুই? কোন দুনিয়ায় আছিস? মনে হচ্ছে গভির কোনো চিন্তায় ডুবে আছিস?
সাহিল ভুস করে নিশ্বাস ছাড়লো।বললো,
-অনেকটাই ডুবে আছি।বুঝতে পারছি না কিছু।
-আমি থাকতে তোর চিন্তা কিসের? তোর এই ডুবুরী ভাই যখন এসে গেছে তখন তোর কিছু ভাবতে হবে না।আমি ঠিক সাঁতরে তোকে পাড়ে তুলে আনবো। প্যারা নাই চিল।
সাহিল ভ্রু কুচকে তাকালো।দুমদাম কয়েকটা দিতে পারলে যদি একটু শান্তি পেতো সে।তার এই ভিন্ন প্রজাতির দুই ভাইয়ের কারনেই সে একদিন সুইসাইড করে নেবে।
-তুই যাবি এখান থেকে।এমনিতেই মাথা ভর্তি প্রশ্ন তার উপর তোর এই থার্ডক্লাস কথা।রিডিকিউলাস। যা বের হ রুম থেকে।
আদি আয়েশ করে বসলো।ঠোটে হাসির রেখা টেনে বললো,
-প্রশ্ন?কেমন প্রশ্ন? আমাকে বল আমি এক চুটকিতেই তোর সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেবো।
সাহিল সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,
-অধির আর রোশনির বিয়ের বিষয়টা কিছুতেই ক্লিয়ার হচ্ছে না।আই এম ড্যাম সিওর কিছু গন্ডগোল অবশ্যই আছে।অধির কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে।
-ভাইয়া কেন কিছু লুকাবে? ভাইয়া তো সবকিছু আমাদের সাথে শেয়ার করে।তাহলে?
-কিন্তু এবার কিছু লুকাচ্ছে।কিন্তু সেটা কি?অধির এখনো পর্যন্ত মিডিয়ার লোকজনের কাছে তার বিয়েটা গোপন রেখেছে। কিন্তু কেন? ভালোবেসে বিয়ে করে মানুষের থেকে কেন আড়াল করছে রোশনিকে।এমনকি মিডিয়ার লোকজন ব্যাপারটা যাতে না জানে তার জন্যে কড়া সিকিউরিটির ব্যবস্থা করেছে।কিছু মাথায় ঢুকছে না।
রোশনি দাদির রুমের দিকে যেতে নিতেই দিদামের কিছু কথা কানে এলো।শোনার কোনো রকম ইচ্ছে না থাকলেও নিজের নাম শুনে দাড়িয়ে গেল সে।মিসেস ঝুমা চৌধুরির রুম থেকেই কথার আওয়াজ আসছে।রোশনি একটু এগিয়ে গিয়ে কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা চালালো।
-আন্টি আমার কাছে একটা দারুন আইডিয়া আছে।রোশনিকে হেনস্তা করার পার্ফেক্ট সুযোগ এটা।
-তাই নাকি।কি আইডিয়া বল শুনি।
-আমি মাত্রই সাহিল আর আদির কথা শুনে এলাম।সাহিল বলছিল অধির নাকি চাই না তাদের বিয়ের বিষয়ে কেউ জানুক।মিডিয়ার লোকজন যাতে বিষয়টা জানতে না পারে তাই অধির সিকিউরিটির ব্যবস্থা করেছে।এখন আমাদের যে করেই হোক এটা মিডিয়ার লোক জনের কান পর্যন্ত পৌছে দিতে হবে।ব্যস তার পরেই খেলা শুরু হবে।
মিসেস ঝুমা চৌধুরি নাক ছিটকালেন।বললেন,
-এটা তোর দারুন আইডিয়া? সারা দুনিয়ার মানুষকে জানাতে চাস ওই দুই টাকার মেয়েটা অধিরের বউ? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর?
-উফফ আন্টি তুমি বুঝতে পারছো না বিষয়টা।আমি কখন বললাম ওই মেয়েটা অধিরের বউ এটা ওদের জানাবো?
-তাহলে?
-শোনো,,,,আমরা ওদের কাছে এটা বলবো যে সি ইজ এ প্রস্টিটিউট। বাংলায় কি বলে যেন?
-বে*….
-এক্সাক্টলি। বে*……অধিরের দেহরক্ষী। এখন অধিরও নেই বাড়িতে।ওকে বাঁচানোর মত কেউ নেই।আর এমনিতেও অধির যেহেতু তাদের বিয়ের বিষয়টা পাবলিশ করতে চাই না সেহেতু রোশনিকে প্রস্টিটিউট বললেও অধির মুখ খুলবে না।
-আরে বাহ।খুব ভালো প্ল্যান করেছিস।এবার মজা বুঝবে ওই মেয়েটা। আমার ছেলেকে ফাসিয়ে বিয়ে করার ফল কি হতে পারে সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝবে এবার।দেরি করিস না।জলদি মিডিয়াকে কনফর্ম কর।তাড়াতাড়ি আসতে বল।
কথাগুলো শুনে রোশনির সারা শরির কাপতে লাগলো।শেষ পর্যন্ত তাকে প্রস্টিটিউট এর সাথে তুলনা করা হলো।চোখ ভেঙে কান্না এলো তার।মনের মাঝে একটাই প্রশ্ন এলো,,, অধির এখন বাড়িতে নেই।তাকে কে বাচাবে এই অপমানের হাত থেকে? পরোক্ষনেই আবার মনে হলো দিদাম ঠিকই বলেছে।অধির যখন চাই না তাদের বিয়ের খবর কেউ জানুক তখন অধির এখানে থাকলেও হয়তো সে তাকে বউ হিসেবে ঘোষনা করতো না।রোশনির পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসছে।এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছে জন্মালো তার।কিন্তু সেটারও উপায় নেই।সে যে অধির নামক খাঁচায় বন্দি।রোশনি আল্লাহকে ডাকতে লাগলো।একমাত্র উনিই পারেন তাকে এই লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে।
চলবে……..