শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ৪৪

0
3668

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৪৪

🌼
পিয়ার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আদি ছাড়াও অারো মানুষের উপস্থিতিতে খানিক চমকালো পিয়া।চোখ পিটপিট করে সবটা পর্যবেক্ষণ করতেই কানে এলো ফিসফিসিয়ে বলা কিছু কথা।কথা গুলো কিছুটা এমন…

-হেতেরা যে স্বামি স্ত্রী তার প্রমান কি?ভুইলা গেছো চারমাস আগের ঘটনা।ওই পোলাও তো কইছিল মাইয়াডা হেতের বউ লাগে।পরে কি হইল?ধানের মাঠে তো মাইয়াডার ছিন্ন ভিন্ন লাশ পাইলাম।গ্রামের মুখ্য শুখ্য মানুষ দেইখা আমাগো বার বার বোকা বানাইবো এইডা হইতো না।হেগো প্রমান দিতে হইবো।আর প্রমান দিতে না পারলে পোলাডার ব্যবস্থা গ্রামের মানুষই নিবো।আমাগো গ্রামে এসব কুকীর্তি আর মাইনা নিবো না।

-হ হ আমরাও জলিল মিয়ার লগে একমত।হেতেরা শহর থেইকা এইহানে আইসা কুকর্ম করবো আর আমরা চাইয়া চাইয়া দেখুম?এইডা আর হইতো না।ওরা স্বামি স্ত্রী না হইলে দুইজনের মুখে কালি লাগাইয়া সারা গ্রাম ঘুরাইতে হইবো।যাতে কইরা পরের বার আর কেউয়ের সাহস না হয়।তোমরা কি কও?

উপস্থিত সবাই ওনাকে সমর্থন করলো।আদি এখন কিভাবে এর মোকাবেলা করবে জানা নেই।ফোনটাও কাছে নেই।এদিকে সে যদি বলে তারা স্বামি স্ত্রী নয় তাহলে গ্রামের লোকগুলো কি করবে তারও ঠিক নেই।এদের বুঝানো দ্বায়।আদি কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিয়া ছোট্ট করে আদির নাম ধরে ডাক দিলো।পিয়ার জ্ঞান ফিরেছে দেখেই ঠোটের কোনে এক টুকরো হাসি ঝুলিয়ে ছুটে এল আদি।

-থ্যাংক গড তোমার জ্ঞান ফিরে এসেছে।আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম।

পিয়া প্রতিত্তরে কিছু বলল না। শোয়া থেকে উঠে বসতে নিতেই আদি তাকে সাহায্য করলো।পিয়া ঘরের ভেতর উপস্থিত সবার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালো।আদিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-আদি আমি তোমার সাথে একা কথা বলতে চাই।

আদি কিছু বলার আগেই এই বাড়ির মালিক মকবুল মিয়া অর্থাৎ কালকের সেই দুজনের মধ্যে একজন সবাইকে বাইরে যেতে বললেন কিছু সময়ের জন্য।সবাই বেরিয়ে যেতেই উনিও বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে।যাওয়ার আগে ভাঙা দরজাটাও ভেজিয়ে দিয়ে গেলেন।এখন ছোট্ট মাটির ঘরটাতে কেবল আদি আর পিয়া।পিয়া ছোট্ট চৌকিটা থেকে উঠে দাড়াতে গিয়েও মৃদু আর্তনাদ করে ধপ করে বসে পড়ল।আদি অস্থির হয়ে পিয়াকে চৌকিতে বসাতে বসাতে ব্যস্ত হয়ে বলতে লাগল,

-বি কেয়ারফুল পিয়া।তোমার শরির অনেকটাই দূর্বল।বসে থাকো।

পিয়া নিজের মাথার পেছনের দিকটাই হাত দিতেই ব্যথা অনুভব করলো।ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে চোখ মুখ কুচকাতেই একটু আগের ঘটনাটা মনে পড়ে গেল।পিয়া চোখ বুজে লম্বা শ্বাস নিলো।এই গ্রামের পাশের গ্রামেই তার খালার বাড়ি।মায়ের দিকের লোক জন বলতে উনিই আছেন শুধু।দুদিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় পিয়া ওনাকে দেখতে এখানে আসে।কিন্তু এসেই যে এমন সব বাজে সিচুয়েশনে পড়তে হবে সেটা মাথাতেও আসে নি তার।পিয়া সোজা হয়ে বসে প্রশ্ন ছুঁড়ল,

-কি হচ্ছে এখানে? কিসের প্রমান চাইছেন ওনারা?

আদি চোখ নামিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠল,

-আসলে,, ,, কাল যখন তুমি ওদের আঘাতে অজ্ঞান হয়ে যাও তখন তোমাকে নিয়ে আমি একটা ছাউনির নিচে আশ্রয় নিই।তখন বৃষ্টি পড়ছিল ভিষন। সন্ধ্যাও হয়ে গেছিল প্রায়।তোমারও সেন্স ছিল না।আমি ভিষন ভয় পেয়ে গেছিলাম। তখনই এই গ্রামের দুজন লোক আসে ওখানে।তোমাকে ওভাবে সেন্সলেস দেখে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে। আমি ওনাদের কাছে সাহায্য চাইলে ওনারা জিজ্ঞাসা করেন তুমি আমার কি হও।তোমার যেহেতু সেন্স ছিলনা তাই তোমাকে আমি একহাতে জড়িয়ে রেখেছিলাম।সেটা দেখেই ওনারা ভেবে নিলেন আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ।আমিও সত্যিটা আর ওনাদের জানায় নি।সত্যিটা জানলে হয়ত ওনারা সাহায্য করতেন না।সেই মুহূর্তে আমার এটাই মনে হয়েছিল।ব্যস তারপর এখানে আসি।

-তারপর?

আদি চোখ তুলে তাকালো।পিয়ার মুখটাকে পর্যবেক্ষণ করে বলে উঠল,

-মানে?

-মানে তো তুমি বলবে মিষ্টার আদিল চৌধুরি।এখন ওনারা আমাদের বিয়ের প্রমান চাইছেন।কোথায় পাবে প্রমান? কি দরকার ছিল মিথ্যে বলার? এখন প্রমান দিতে না পারলে কালি মেখে পুরো গ্রাম ঘুরাবে সেটা ভাল হবে?

-আমি আর কি করতাম? তখন যেটা ঠিক মনে হয়েছিল সেটাই করেছি।আমি কিভাবে বুঝবো এরা এখন প্রমান চাইবে।

আদির কথায় ভুস করে নিশ্বাস ছাড়ল পিয়া।কিছুক্ষন নিরব থেকে বলে উঠল,

-যে করেই হোক এখান থেকে বেরোতে হবে।

-কিন্তু কিভাবে?

পিয়া কিছু বলবে তার আগেই দরজা ঠেলে ভেতরে এলেন মগবুল মিয়া।দুজনকে কিছুক্ষন পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে বললেন,

-জলিল মিয়া কাজি ডাকছে।আপনাগো বিয়া পড়ানো হইবো।

মগবুল মিয়ার কথা কানে যেতেই আদি পিয়া চমকে তাকাল।দুজনের মুখ থেকে এক সাথেই বেরিয়ে এলো,

-কিহহহ?এই বিয়ে কিছুতেই হতে পারে না।

দুজনের মুখে একই কথা শুনে কপাল কুচকালেন মগবুল মিয়া।সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললেন,

-বিয়া ক্যান হইতে পারবো না?আপনেরাই তো কইছেন আপনেরা স্বামী স্ত্রী। তাইলে সমস্যা কই?

লোকটার কথায় খানিক অপ্রস্তুত হয়ে গেল দুজন।আসলেই তো,,,,স্বামী স্ত্রী যেহেতু সেক্ষেত্রে এই বিয়েতে দ্বিমত থাকা একেবারেই উচিত নয়।কিন্তু তারা তো সত্যি সত্যিই স্বামী স্ত্রী নয়। এখন লোকটাকে কিভাবে বুঝাবে এটা?আদি খানিক হাসার চেষ্টা করে বলে উঠল,

-দেখেন ভাই,,,ওকে বিয়ে করতে আমার কোনো আপত্তি নেই।কিন্তু ও তো আগে থেকেই আমার বউ।তাহলে আবার বিয়ে করার কি প্রয়োজন আছে বলেন?

-সেইডাই তো বুঝবার পারতাছি না।মাইয়াডা যহন আপনের বউ লাগে তাইলে আবার ওরে বিয়া করতে সমস্যা কই?আপনাগো একটা কথা জানায় রাখি।যদি বিয়া করেন তাইলে আমরা কিছু কমু না।কিন্তু যদি বিয়া না করেন তাইলে এইডা প্রমান হইয়া যাইবো আপনেরা স্বামী স্ত্রী না।তহন গ্রামের লোকগুলান কিস্তু আপনাগো ছাড়বো না।তাই কইতাছি আপনেরা যেহেতু স্বামী স্ত্রী তাই বিয়াডা কইরা নেন।অন্য কাউরে তো বিয়া করতে কইতাছি না,,, আপনের বউয়ের লগেই বিয়া দিমু।চিন্তা নিয়েন না।

নিয়ম মত বিয়ে পড়ানোর কাজ শেষ হল।আদি আর পিয়াকে রেখে একে একে সবাই বিদায় নিলো ঘর থেকে।কিছুক্ষনের মাঝে মগবুল মিয়ার বউ প্লেটে খাবার দিয়ে গেলেন।পিয়া তখন ছোট্ট চৌকিটাতে পা ঝুলিয়ে বসে আছে।আর আদি ঘরের এক কোনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে।অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনা.. দুটো জিবনকে হঠাৎই এক সুতোই বেধে দিল।না চাইতেও এক জন আরেক জনে বাধা পড়ল।

সেই রাতের মত আজও ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।কিন্তু আজ আদি নেই সাথে।আজ সে একা।সে একাই থাকতে চাই।অপ্রত্যাশিত সেই ঘটনাকে অপ্রকাশই রাখতে চাই ।মাঝরাতে দেখা ভয়ংকর কোনো অপ্রিয় স্বপ্নের মতোই ভুলে যেতে চাই সেই ঝুম বৃষ্টির রাতটাকে।সেই সাথে গোপন সেই সম্পর্কের সুতোটাকে গোপনেই ছিঁড়ে ফেলতে চায়।তবুও বার বার কেন মনে পড়ে যাচ্ছে সেই রাতটা? কেন পিছু ছাড়ছে না? এই বৃষ্টিও যেন সেই ঘটনা জানান দিতে ব্যস্ত।পিয়া দেয়াল ঘড়িতে চোখ বুলালো।দশটা বিশ বাজে।সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।কখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি তো কখনো ঝুম বৃষ্টি।পিয়া বেলকোনিতে পেতে রাখা বেতের সোফায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে।চোখ বুজতেই মুঠো ফোনটা কোমল সুর তুলে বেজে উঠল।পিয়া পাশ ফিরে তাকাতেই দেখল অারাফ ফোন দিচ্ছে।পিয়া দির্ঘশ্বাস ফেলল।ফোনটা রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না তার।কথা বলতেও ইচ্ছে করছে না।পিয়ার দোটানার মাঝেই রিং কেটে গিয়ে দ্বিতীয় বারের মত বাজতে শুরু করল।পিয়া ছোট্ট শ্বাস ফেলে ফোনটা টিটেবিল থেকে তুলে নিয়ে কানে ধরলো।প্রায় সাথে সাথেই ওপাশ থেকে ব্যস্ত গলায় বলা কিছু কথা ভেসে এল কানে,

-হ্যালো? পিয়া!!আর ইউ ওকে?কাল থেকে কন্টিনিউয়াসলি তোমাকে ফোন করছি রিভিস করো নাই কেন?তুমি জানো আমি কত চিন্তায় ছিলাম? বাই দা ওয়ে তুমি ঢাকায় ব্যাক করবে কবে?

-আরাফ???আমি আপনার সাথে পরে কথা বলি? প্লিজ…

আরাফকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কাটলো পিয়া।লম্বা শ্বাস টেনে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল সোফায়।পিয়ার হঠাৎই মনে হল,,, জিবনটা ভিষনই কমপ্লিকেটেড।

——

সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল অধির।অন্যদিকে আলিশান বিছানায় বসে হুমায়ুন আহমেদ এর বই পড়ছিল রোশনি।তখনই দরজা ঠেলে ভেতরে এলো আঠারো উনিশ বছরের একটা মেয়ে।পড়নে সাদা আর নিলের মিশ্রনে টপ আর স্কার্ট। গলায় বিভিন্ন রঙের মিশ্রনে তৈরি ওড়না।লম্বা চুলের বেনি।হাত ভর্তি চুড়ি।চোখে মোটা করে কাজল।সেই সাথে চোখে মুখে একরাশ লজ্জা।মেয়েটা নিঃসন্দেহে সুন্দর দেখতে।তবে তার এই লজ্জা লজ্জা ব্যাপারটা রোশনির পছন্দ হচ্ছে না।মেয়েটার এই লজ্জাটা শুধু অধিরের সামনেই সীমাবদ্ধ। অন্য সময় এই লজ্জার রেখা খুজে পাওয়া যাচ্ছে না চেহারায়।মেয়েটার এমন হুটহাট রুমে চলে আসাটাও পছন্দ হচ্ছে না রোশনির।এমনকি আসার সময় নক করেও আসছে না।কারো রুমে আসতে হলে যে নক করে আসতে হয় সেই বিষয়টাই যেন জানে না মেয়েটা।ম্যারানস বলেও যে একটা বিষয় থাকে সেটাও যেন বেমালুম ভুলে বসে আছে।রোশনি নিজের মনেই বিড়বিড় করে ভ্রু কুচকালো।আরো একটু খেয়াল করতেই দেখল মেয়েটার হাতে একটা প্লেট।এবং তাতে বেশ কয়েক ধরনের ফল কাটা।রোশনির মাথাটা ধপ করে জ্বলে উঠল।এই মেয়ে বড্ড বেশি ঘুরঘুর করছে অধিরের আশেপাশে।রোশনি আড় চোখে তাকিয়ে রইল ওদের দিকে।মেয়েটা লাজুক লাজুক মুখ করে এগিয়ে গেল অধিরের দিকে।অধিরের সামনে ফ্রুটস এর প্লেট ধরতেই চোখ তুলে তাকালো অধির।মেয়েটাকে দেখে নিয়ে মুচকি হাসতেই দাত দাত চেপে তাকাল রোশনি।অধির প্লেটটা নিয়ে টি টেবিলে রাখতে রাখতে বলে উঠল,

-থ্যাংক ইউ ময়না রানি।এক দম পার্ফেক্ট টাইমে এসেছিস।খিদে পেয়েছিল ভিষন।

অধিরের হাসি হাসি কথায় লজ্জায় আরো খানিকটা নুইয়ে গেল মেয়েটা।কিছুক্ষন নিরব থেকে লজ্জা মাখা গলায় বলতে লাগল,

-দাদি তো মাঝে মাঝেই এখানে আসেন।আপনি কেন আসেন না অধিরদা? আগে তো ছয় মাসে এক বার এলেও গত এক বছরে একবারের জন্যেও আসেন নি।আপনি কি খুব ব্যস্ত থাকেন শহরে?

ময়নার কথায় হেসে ফেলল অধির।একটুকরো ফল মুখে পড়ে নিয়ে চিবুতে চিবুতে বলল,

-তা তো একটু ব্যস্ত থাকি ময়না রানি।ইচ্ছে থাকলেও নানা ব্যস্ততায় আসা হয়ে ওঠেনি।এখন বলতো পড়া শোনা কেমন চলছে?

-পড়াশোনা ঠিকই চলছে।দাদি বলেছে এইচএসসি এক্সাম শেষ হলেই আমাকে শহরে নিয়ে যাবে।শহরের কোনো বড় ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিবে।

-আরেহ বাহ!!!তাহলে তো আমার খেয়াল রাখার জন্যেও একজন পেয়ে যাবো।বুঝলি ময়না রানি,,,,এমনিতে আমার খেয়াল রাখার মানুষের বড় অভাব চলছে।আশে পাশে অনেকে থাকলেও তারা ঠিক আমার দিকে খুব একটা নজর দিচ্ছে না।তুই আসলে অন্তত আমার খেয়াল রাখার একজন পাবো।

কথাটা যে রোশনিকে উদ্দেশ্য করেই অধির বলল সেটা বেশ করে বুঝতে পেরেছে রোশনি।তার দিকে খেয়াল রাখার জন্যে তো আলাদা মানুষ আছে তাহলে সে কেন খেয়াল রাখতে যাবে? একদমই খেয়াল রাখবে না সে।ময়না লাজুক হেসে বলে উঠল,

-আর তো কয়েক মাস বাকি।তারপরেই তো চলে যাবো।তখন আপনার সম্পূর্ন খেয়াল রাখার দায়িত্ব আমার অধিরদা।তাছাড়া আমি খেয়াল করেছি,,আপনি আগের থেকে শুকিয়ে গেছেন।

ময়নার কথা শেষ হতেই মুখ খুলল রোশনি।বইয়ের পাতায় চোখ রেখে বলল,

-কি বলোতো…. তোমার অধিরদাকে তো কেউ খেতে দেয় না তাই বেচারা দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে।তুমি বরং দেরি করো না।তোমার অধিরদার সাথে এবারই ঢাকায় চলে যাও।যদিও সেখানেও একজন আছে তোমার অধিরদার খেয়াল রাখার জন্যে।তবে সে ঠিক একা একা খেয়াল রেখে উঠতে পারছে না ওনার।তুমিও না হয় ওর সাথে মিলে দুজনে একসাথে খেয়াল রেখো তোমার অধিরদার।

ময়না ভ্রু কুচকে তাকালো রোশনির দিকে।চোখ ছোট ছোট করে বলল,

-মতলব?আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না।

রোশনি মুচকি হেসে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বলল,

-সব কথার মতলব হওয়া জরুরী নয় ময়না।ওপসস সরি….ময়না রানি।কি বলো তো…এই মতলবি দুনিয়াতে যদি বেমতলবি কোনো কথা থাকে তবে সেই বেমতলবি কথারও অনেক বড় মতলব থাকে …।তবে মতলবি মানুষের সাথে থাকার বা কথা বলার কোনো মতলবই নেই।আর তোমার মত বেমতলবি মানুষের সাথে কথা বলারও কোনো মতলব নেই।তাই এই মতলবি পৃথিবীতে মতলবি মানুষের বেমতলবি কথা গুলোকে এড়িয়ে চলায় ভাল।বুঝেছো?তাহলে এবার যেতে পারো।

ময়নার কুচকানো ভ্রু জোড়া আরো খানিকটা কুচকে গেলো।রোশনিকে তার খুব একটা পছন্দ হচ্ছে না।সেটা হয়তো অধিরের বউ সে জন্যেই।রোশনিও যে তাকে খুব একটা পছন্দ করে নি সেটা তার কথা শুনেই বুঝা যাচ্ছে।যদিও রোশনির কোনো কথায় তার বোধগম্য হয় নি।ময়না আর কথা বাড়াল না।গুটি গুটি পায়ে দরজা অবধি যেতেই আবারো রোশনির কথা কানে এলো ময়নার।

-এরপর থেকে কারো রুমে আসার আগে নক করে আসবে ময়না রানিইইই…..।নয়ত মানুষ তোমাকে ম্যানারলেস ভাববে।

ময়না ফিরে তাকালো না।উত্তরও দিল না।গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে গেল নিশ্চুপ। ময়না চলে যেতেই বাকা হাসল রোশনি।রোশনির মুখে বাঁকা হাসি দেখে চোখ মুখ কুচকে তাকালো অধির। রোশনি অধিরের দিকে তাকাতেই দেখল অধির ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।রোশনি সেদিকে খুব একটা পাত্তা না দিয়ে বউয়ের পাতায় চোখ বুলাতে লাগল।

-এটা কি হল?

রোশনি অধিরের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলল,

-কি হল?

-তুমি ময়নার সাথে ওভাবে কথা বললে কেন?

রোশনি কিঞ্চিৎ রাগ দেখিয়ে বইটা বন্ধ করে বালিশের নিচে রাখল।দাতে দাত চেপে বলল,

-ওহ তো আপনার খারাপ লেগেছে? আপনার মত আদুরে গলায় হেসে হেসে কথা বলা উচিত ছিল বুঝি?ঠিক আছে এর পর থেকে আমি আপনার ময়না রানিকে ময়নাপাখি বলে ডাকবো। হ্যাপি…?

রোশনির কথায় খানিক ভড়কে গেল অধির।রোশনির এমন হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারন কিছুতেই স্পষ্ট হচ্ছে না।

-আশ্চর্য…!!এমন রেগে যাচ্ছো কেন?

-আপনার মনে হচ্ছে আমি রেগে যাচ্ছি? রেগে গেলে রেগে যাচ্ছি তাতে আপনার কি? আপনি বরং ফ্রুটস খান।কত আদর করে কেটে এনেছে ফলগুলো।শুধুমাত্র আপনার জন্য। কত খেয়াল রাখে আপনার। সো কিউট না……?

কথাগুলো শেষ করেই রুম থেকে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল রোশনি।রোশনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হতাশ দির্ঘশ্বাস ফেলল অধির।রেগে যাওয়ার মত সত্যিই কি কোনো ঘটনা ঘটেছে?বউয়েরা কি এভাবেই অকারনে রেগে যায়?নাকি তার বউই শুধু অকারনে রাগে? জানা নেই অধিরের।প্লেট থেকে এক টুকরো ফল তুলে মুখে দিতে যেতেই ছোঁ মেরে ছিনিয়ে নিল রোশনি।এরপর প্লেটটা তুলে নিয়ে বড় বড় পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।রোশনির ওভাবে চলে যাওয়া এরপর আবার ফিরে এসে হাত থেকে ফ্রুটস এর প্লেট ছিনিয়ে নিয়ে চলে যাওয়া,,, কোনোটাই ক্লিয়ার হচ্ছে না অধিরের।অধির শুধু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে রোশনির যাওয়ার দিকে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here