শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ৪৯

0
3770

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৪৯

🌼
-ছেলেটা কে?

-সেটা জেনে তুমি কি করবে? আমার লাগছে আদি। হাত ছাড়ো।

আদির মধ্যে কোনো পরিবর্তন হল না।হাতের বাঁধন আগের মতোই শক্ত। পিয়া এবার জোরে ধাক্কা দিল আদিকে।আদি টাল সামলাতে না পেরে পিছিয়ে গেল একপা।রক্ত চক্ষু নিয়ে পিয়ার দিকে তাকাতেই দেখল পিয়া ভিষন রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছে।আদি খু্ব একটা পাত্তা না দিয়ে তৃতীয় বারের মত প্রশ্ন করল,

-আমি জানতে চেয়েছি ছেলেটা কে?

পিয়ার আর সহ্য হল না।এই ছেলে তো রিতিমত সীমা পার করে ফেলছে।কিসের এতো অধিকার দেখাচ্ছে?পিয়া ঘৃনা নিয়ে তাকালো। বলল,

-ছেলেটা কে তাইতো?ওকে ফাইন। তাহলে শুনো,,,,ছেলেটা আমার উডবি।আগামি সপ্তাহে ওর সাথে আমার বিয়ে।জানা হয়ে গেছে?হ্যাপি…? নাও লিভ….জাস্ট গো আউট অফ মাই আইস….

চোয়াল শক্ত হয়ে এল আদির।তীব্র কিছু রাগে শরির কাপতে লাগল।হঠাৎ করেই চোখ দুটো রক্তিম বর্ন ধারন করল।কপালের রগ ফুলে উঠতেই পিয়াকে হেঁচকা টান দিয়ে দেওয়ালের সাথে আটকে নিল আদি।পিয়ার গাল একহাতে চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বলে উঠল,

-হোয়াট ডু ইউ মিন বাই উডবি? তুমি বিয়ে করছো মানে?তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারো না।ভুলে যেওনা তোমার বিয়ে হয়ে গেছে।

পিয়া রক্ত চক্ষু নিয়ে দাতে দাত চেপে তাকালো,

-ওহ প্লিজ…।জাস্ট শাট ইউর মাউথ।আমি ওই বিয়ে মানি না বুঝেছো? কোনো দাম নেই এই বিয়ের।তোমাকে বলেছিলাম না,,,আমার সামনে আসবে না।আর আমাকে টাচ করার সাহস কোথায় পেলে তুমি? ছাড়ো আমাকে।কিসের এতো অধিকারবোধ দেখাচ্ছো?যদি স্বামির অধিকার দেখাও তবে এতটা কথা স্পষ্ট শুনে রাখো।আমার কাছে এই বিয়ে এবং তুমি কোনোটারই মূল্য নেই।জাস্ট গো টু হে…

পিয়া পুরো কথা শেষ করতে পারল না।আদির পুরুষালী ঠোট ততোক্ষণে তার ঠোট দখল করে নিয়েছে।পিয়ার হাত পা যেন অসাঢ় হয়ে আসছে।দমটা যেন গলাতেই আটকে যাচ্ছে বারবার।পিয়া হঠাৎ করেই উপলব্ধি করল সে মারা যাচ্ছে।জিবনে প্রথম কোনো পুরুষের স্পর্শে যেন তার মৃত্যু হচ্ছে।কয়েক সেকেন্ড পর সম্মিত ফিরে পেতেই দু হাতে জোরে ধাক্কা দিয়ে বসল পিয়া।হঠাৎ ধাক্কায় টাল সামলাতে না পেরে একপা পিছিয়ে গেল আদি।নিজেকে সামলে নিয়ে পিয়ার দিকে তাকাতেই শিউরে উঠল আদি।টলমলে লাল চোখদুটোতে যেন লাভা ঝরছে।পাতলা ঠোট জোড়া অনবরত কাঁপছে।রাগে, অপমানে এই মুহূর্তে মরে যেতে ইচ্ছে করছে পিয়ার।এই অপমান আর লজ্জার থেকে মৃত্যুটাই বোধ হয় সম্মানের ছিল।পিয়ার চোখ মুখ হঠাৎই শক্ত হয়ে এলো।আর পাঁচটা ট্রিপিক্যাল মেয়ের মত সে এটা সহ্য করবে না।তার কাছে সবার আগে আত্মসম্মান।আদি সেই আত্মসম্মানেই অাঘাত করেছে।এর শাস্তি তাকে পেতে হবে।পিয়া একপা এগিয়ে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রচন্ড গতিতে চড় বসালো আদির গালে।বিষ্মিত আদি বোকা বোকা চোখে চেয়ে রইল শুধু।পরমুহূর্তেই হাতের মুষ্টি শক্ত হয়ে এল তার।পিয়া আদির দিকে ঘৃনা নিয়ে তাকিয়ে চলে যেতে গিয়েও থেমে গেল।আদির মুখোমুখি দাড়িয়ে শক্ত গলায় বলল,

-সামনের শুক্রবারে আমার বিয়ে।এরপর থেকে আমার সামনে আসার দুঃসাহস যেন না হয়।আমার জিবন থেকে ওই রাতের ঘটনার মত আজকের ঘটনাটাও আমি মুছে ফেলতে চাই।সেই সাথে আদিল চৌধুরি নামক নিকৃষ্ট পুরুষটাকেও।

পিয়া আর দাড়ালো না।চোখের নিচের পানিটুকু মুছে নিয়ে চলে এল।আরাফের সামনে এসে দাড়াতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়াল আরাফ।বিষ্ময় নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল,

-পিয়া..? আর ইউ ওকে না?এমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে কেন তোমায়? কি হয়েছে?

পিয়া টেবিল থেকে পার্সটা তুলে নিতে নিতে বলল,

-বিয়ের ডেইটটা এগিয়ে নিয়ে আসুন আরাফ।সোমবার নয় আগামি শুক্র বারেই বিয়েটা করতে চাই আমি।এ্যারেন্জমেন্ট করুন।

হতভম্ব আরাফ কিছু বলবে তার আগেই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল পিয়া।আরাফ বিষ্ময়ে ঠাঁই দাড়িয়ে রইল।কিছুক্ষন আগেও যেই মেয়েটা বিয়ের ডেইট পিছাতে বলছিল সেই মেয়েই ডেইট এগিয়ে আনতে বলছে? কি হল হঠাৎ করে ওর?এমন বিধ্বস্ত চেহারার পেছনের কারনটাই বা কি?

——-

সন্ধ্যার পরপরই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে দেমির আর দিয়ার।দির্ঘ প্রেমের সম্পর্কের আজ একটা নাম হল।সুন্দর একটা পরিণতি পেল।খুব ঘরোয়া ভাবেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।দিয়া চাইনি কোনো রকম প্রোগাম করতে।সব সময় সাদা মাটাতেই অভস্ত সে।সেখানে বিয়ের মত পবিত্র জিনিসে এতো জাঁক জমক করে কি লাভ?বিয়েটা যত সাদামাটা ভাবে করা যায় ততোই ভাল।সাদা রঙের বেনারশি শাড়ি জড়িয়ে বেলকোনিতে দাড়িয়ে দিয়া।বাতাসে প্রেম প্রেম গন্ধ।মাতাল হাওয়ায় বেনারশির ভারি আচলটা হালকা পাতলা উড়ছে।বাংলাদেশে আসা প্রায় পাঁচ দিন হতে চলল।এই পাঁচ দিনে অনেক কিছুই বদলালো তার জিবনে।বদলের এই অবাধ্য নিয়মটা তার ছোট থেকেই।খুব অল্প বয়স থেকেই সে লক্ষ্য করেছে তার জিবনে হঠাৎ হঠাৎই নতুন কোনো পরিবর্তন এসে তাকে অজানা মোড়ে দাড় করায়।মায়ের মৃত্যু থেকে শুরু করে তার এখানে আসা সবটাই এই আমুল পরিবর্তনের কারনেই হয়েছে।এই পরিবর্তনটা কিছুতেই পিছু ছাড়ে না তার।অদ্ভুদ এক বন্ডিং তৈরি হয়েছে ওর সাথে।দিয়া ভুঁস করে নিশ্বাস ছাড়ল।আজ তার খুশি হওয়া উচিত।কিন্তু সে খুশি হতে পারছে না।নাকি নিজে থেকেই খুশি হতে চাইছে না বুঝতে পারছে না দিয়া।বুঝার চেষ্টা করতে গেলেই মাথাটা নানান চিন্তা এবং ভয়ে ভোঁতা হয়ে আসছে।এতো বছর পর যখন আদরের ছোট্ট বোনটার খোঁজ পেল সে,, যখন তাকে বুকে জড়িয়ে আদরে আদরে ভরিয়ে তুলতে মন চাইল তখনই যেন অজানা ভয়ে হাত পা বাধা পড়ল তার।রোশনিকে প্রথম দেখাতেই খুব পরিচিত মনে হয়েছিল দিয়ার।ছোট্ট সেই মায়া ভরা মুখটার সাথে কোথাও যেন মিল নজরে আসছিল।এক সেকেন্ডের জন্য মনে হয়েছিল এটাই সেই ছোট্ট বিভা।সন্দেহ সত্যি হল।রোশনির শরিরের সেই অদ্ভুদ তিল গুলো দেখে নিশ্চিত হল দিয়া।ছোট্ট বিভা গলার কিছুটা নিচে,পেটে আর বাহুতে এক সাথে অনেক গুলো তিল একসাথে ছিল।সেই তিলগুলো যখন রোশনির শরিরে দেখল তখন এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেছিল সে।অসাবধানতায় যখন রোশনির পেটের দিক থেকে শাড়িটা সরে গিয়েছিল অদ্ভুদ ভাবেই দিয়ার নজর পড়েছিল রোশনির পেটে।দিয়ার ঘটকা টা প্রথম তখনই লেগেছিল।পরে যখন আরো একটু খেয়াল করল তখন গলার নিচে আর ডান বাহুতেও একাধিক তিল স্পষ্ট হল।ছোট থাকতে এই তিলের জন্যে দিয়া ওকে তিলুমনি বলে ডাকত।সেই ছোট্ট বোনটাকে চোখের সামনে দেখে কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়েই বসে ছিল দিয়া।পরে যখন চিৎকার করে সবাইকে জানাতে ইচ্ছে হল সে তার হারানো বোনকে ফিরে পেয়েছে তখনই ঝুমা চৌধুরির কথা গুলো মনে পড়ল দিয়ার।দিয়াকে তিনি একদমই সহ্য করতে পারেন না সেটা সম্পর্কে বেশ অবগত দিয়া।রোশনিকেও যে তিনি পছন্দ করেন না তা সেদিনের সেই কথা গুলো শুনেই বুঝেছে সে।এখন যদি উনি জানতে পারেন রোশনিই হল দিয়ার হারানো বোন তাহলে হয়ত রোশনির এই বাড়িতে থাকা আরো কঠিন হয়ে যাবে।যদিও দিয়া জানে অধির থাকতে রোশনির কোনো ক্ষতি কেউ করতে পারবে না।তবুও এসব জানা জানির পর অধিরের সাথে ঝুমা চৌধুরির সম্পর্ক নষ্ট হবে।দিয়া চাই না তাদের বোনের কারনে মা ছেলের সম্পর্ক খারাপ হোক।সে নাহয় সবার অজান্তেই রোশনিকে ভালোবাসবে।স্নেহ করবে।তাদের এই রক্তের সম্পর্কের কথা নাহয় সবার কাছেই লুকিয়ে রাখবে।

—-

দেমিরের শরিরে সাদা পান্জাবিবি।ফর্সা শরিরে সাদা রঙটা যেন একদম মিশে গেছে।দেমিরের মনটা ভিষন ফুরফুরে আজ।স্বপ্নের সেই নারীকে আজ পুরোপুরি নিজের করে পেয়েছে সে।এই খুশি প্রকাশ করার মত না।দেমির রুমের দরজা খুলতে হাত বাড়াতেই সামনে এসে দাড়াল দিদাম।দেমির ভ্রু কুচকে তাকালো,

-কিছু বলবি..?

দিদাম নাক মুখ ছিটকে তাকালো।বলল,

-হোয়াটস রং উইথ ইউ ভাইয়া?তুই এখানে কেন এসেছিস ভুলে গেছিস?আর বিয়ে করলি ভাল কথা।দুনিয়াতে আর কোনো মেয়ে পেলি না? সেই রেপ….

দিদামকে কথা শেষ করতে দিল না দেমির।দিদাম কথা শেষ করার আগেই ধমকে উঠল দেমির।চোয়াল শক্ত করে বলল,

-শাট আপ দিদাম।শব্দটা উচ্চারন করবি না।আমার বউয়ের নামে আমি একটা বাজে ওয়ার্ড ও টলারেট করবো না।ভুলে যাস না,,,,ভালবাসি আমি ওকে।অতিতে ওর সাথে কি হয়েছিল সে সম্পর্কে বিন্দু মাত্র সমস্যা আমার নেই।আমি শুধু এটুকু জানি,,,আমি ওকে ভালবাসি।ওকে যদি এক জন কেন,, একশো জনও রেপ করে তারপরেও ওকে আমি ভালবাসি।ওর নামে কিছু বলার আগে দশ বার ভাববি কার নামে কি বলছিস।

ভাইয়ের এমন রাগে দমে গেল দিদাম।আফসোসের সুর তুলে বলল,

-আই এম সরি। আর বলবো না।কিন্তু তুই কেন এখনো কিছু করছিস না? কোনো প্ল্যানিংও তো করিস নাই।

দেমিরের মুখের রঙ পাল্টালো।রহস্যময় হেসে বলে উঠল,

-যা প্ল্যানিং করার করা হয়ে গেছে।তুই শুধু আমার কথা মত কাজ করবি।প্ল্যান মোতাবেক সবকিছু চললে কালই রোশনির এই বাড়িতে শেষ দিন হবে।অধির চাইলেও রোশনিকে এই বাড়িতে রাখতে পারবে না।শুধু সকাল হওয়ার অপেক্ষা।এখন রুমে যা।দিয়া আমার জন্যে অপেক্ষা করছে।

-ওকে।গুড নাইট।

-গুড নাইট।

দেমির দরজা খুলে ভেতরে চলে যেতেই নাক ছিটকালো দিদাম।দিদাম ভেবে পায়না দেমিরের মত ছেলে কি করে এমন একটা মেয়েকে ভালবাসতে পারে।যাকে কিনা রেপ করা হয়েছে।এটা জেনেও কিভাবে কোন ছেলে সেই মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হতে পারে?দেমির একজন মানুষ এবং বন্ধু হিসেবে ঠিক যতটা খারাপ,, একজন প্রেমিক এবং স্বামি হিসেবে ঠিক ততোটাই ভাল।এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই দিদামের।

——-

অন্ধকার রুমে হাত পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে পিয়া।শরিরে এখনো হলুদের সাজ।হাত ভর্তি মেহেদির রঙ।গালে শুকিয়ে আসা হলুদের অংশ।অন্ধকার রুমটাতে মোমবাতির টিমটিমে আলো।মুখে টেপ লাগানো বিধায় নিশ্বাস নেওয়াটাও দুষ্কর হয়ে দাড়িয়েছে পিয়ার।একঘন্টা যাবত হাত পা মুচড়ামুচড়ি করে দড়ির ঘর্ষণে হাত পাও জ্বালা করছে।পিয়া বুঝে উঠতে পারছে না তাকে কে অপহরন করতে পারে।এই মতলবি দুনিয়াতে কার এমন প্রয়োজন পড়ল তার মত মেয়েকে কিডন্যাপ করার? টাকার উদ্দেশ্যে হলে নিশ্চয় তার মত মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েকে কেউ অপহরন করত না।পিয়ার সচেতন মষ্তিষ্ক অন্য কিছু বলছে।সন্ধ্যায় যখন হলুদের রিচুয়াল চলছিল তখন রোশনির উপর বেজাই চটে ছিল পিয়া।আজ তার গায়ে হলুদ অথচ তার একমাত্র বন্ধু অনুপস্থিত। বিষয়টা মেনে নেওয়ার মত না।তাই তো রোশনির সাথে এক দফা ঝগড়ার উদ্দেশ্যে ফোন হাতে বাগানে এসেছিল পিয়া।রোশনিকে কয়েকটা কঠিন কথাও শুনিয়েছিল।তবে সেই কথার রেশ বেশিদূর অবধি চলে নি।রোশনির না আসতে পারার কারন শুনতেই ঝগড়ার ইতি টানতে হয়েছিল তাকে।রোশনির না আসতে পারার কারন হল দেমির আর দিয়ার বিয়ে।বাড়ির বউ বাড়ির বিয়ে ছেড়ে বান্ধবীর হলুদ অনুষ্ঠানে এসে ঢেই ঢেই করে আনন্দ করে বেড়াবে সেটা খুব একটা শোভনীয় দেখাবে বলে মনে হয় না।পিয়ার খারাপ লাগলেও কিছু বলে নি।তবে বিয়ের দিন সকাল সকালই রোশনি তার সামনে উপস্থিত হবে সেটা জানতেই রাগ কমেছিল খানিক।রোশনির সেই আশ্বাসের উপর আস্থা রেখেই ফোন কেটেছিল পিয়া।বাগান ছেড়ে বাড়ির দিকেই ফিরছিল তখনই পেছন থেকে কে যেন তার মুখে রুমাল চেপে ধরল।প্রায় সাথে সাথেই চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেল।এরপর আর কিছু মনে নেই।যখন জ্ঞান ফিরল তখন নিজেকে এই অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করল।তবে পিয়া এখনো অবধি বুঝতে পারছে না তাকে কে কিডন্যাপ করবে? আর কেনই বা করবে?পিয়ার ভাবনার মাঝেই দরজা খোলার আওয়াজ এল।পিয়া সচেতন চোখে তাকালো।অন্ধকারে পুরুষের একজোড়া পা চোখে পড়ল পিয়ার।লোকটা আরো কয়েক পা এগিয়ে আসতেই অন্ধকার ছাপিয়ে মুখটা স্পষ্ট হল।সামনে দাড়ানো মানবের মুখটা দেখা মাত্রই বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেল পিয়া। কয়েক সেকেন্ড সেভাবেই তাকিয়ে রইল শুধু।পরমুহূর্তেই রাগে, ঘৃনায় চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।আদি দরজা লাগিয়ে খাবারের প্লেট নিয়ে পিয়ার মুখোমুখি বসল।পিয়ার কঠিন চোখের দিকে তাকিয়ে ভিষনই শান্ত গলায় বলে উঠল,

-এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।তোমাকে আমিই কিডন্যাপ করেছি।আমি তোমার মুখের টেপ তুলে দিচ্ছি।চিৎকার করবে না একদম।নয়ত আবারো টেপ লাগাতে বাধ্য হবো আমি।যদিও তোমার চিৎকার শোনার মত এখানে কেউ নেই।

আদি পিয়ার মুখ থেকে টেপ তুলে দিতেই লম্বা কয়েকটা শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করল পিয়া।আদির শান্ত মুখের দিকে চেয়ে বলে উঠল,

-এসবের মানে কি আদি? কেন তুলে এনেছো এখানে আমাকে? কাল আমার বিয়ে আদি।আমাকে যেতে দাও এখান থেকে।আমি কোনো রকম সিনক্রিয়েট চাই না।ভালোই ভালোই বলছি বাঁধন খুলে দাও।নয়ত…..

পিয়ার কথার মাঝেই মুখ খুলল আদি,

-নয়ত? নয়ত কি..? বলো নয়ত কি?এখনো এতো তেজ?তোমার এই তেজ যদি ভেঙে গুড়িয়ে না দিয়েছি তবে আমিও আদিল চৌধুরি না।তোমার এত বড় সাহস!!!তুমি আমার গায়ে হাত তুলো?আদিল চৌধুরিকে থাপ্পড় মারার পরিনতি কি হতে পারে এবার তুমি বুঝবে মিস পিয়া।

পিয়া আদির থেকেও শান্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

-কি করতে চাইছো তুমি?কি চলছে তোমার মনে? দেখো,,,, প্লিজ আমাকে যেতে দাও।সেদিনের ঘটনার জন্যে তুমি নিজেই দায়ি ছিলে।তুমি আমার সাথে মিসবিহেভ না করলে আমি তোমার গায়ে হাত উঠাতাম না।সেদিন তোমার ব্যবহারের কারনেই তোমার গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হয়েছিলাম আমি। তারপরও যদি তোমার মনে হয় আমি ভুল করেছি তাহলে আমি সরি।এবার দয়া করে আমাকে যেতে দাও।কাল আমার বিয়ে।আমি না ফিরলে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।প্লিজ আদি আমাকে যেতে দাও।প্লিজ….

আদি মনোযোগ দিয়ে বোতল থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলল,

-যেতে দেবো তো।তোমাকে সারাজিবন এখানে থাকার জন্যে তো নিয়ে আসি নি।ব্যস,,, সময় হলেই তোমাকে ছেড়ে দেবো।অন্যায় যেহেতু করেছো পানিশমেন্ট তো তখন পেতেই হবে।তুমি আদিল চৌধুরির ইগোতে আঘাত করেছো।মাশুল তো দিতেই হবে।

আদির শেষের বলা কথা গুলোতে রাগ স্পষ্ট।পিয়া আদির চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল,

-ভুল করছো আদি।দোষটা আমার নয়।দোষটা তোমার ছিল।যেটা তুমি মানতে পারছো না।একটা কথা কি জানো….পৃথিবীর প্রতিটা জিনিস চোখ দেখতে পায়।ভাল মন্দ সব কিছু।কিন্তু যখন সেই চোখেই কিছু একটা পড়ে তখন সে আর কিছুই দেখতে পায় না।তেমনই মানুষ খুব সহজে অন্যের দোষটা দেখতে পায় কিন্তু নিজের দোষটা তারা দেখতে পায় না।নিজের ভুলটা তাদের নজরে পড়ে না।তোমার ক্ষেত্রেও আমি তেমনটাই দেখছি।তুমি কত সহজে আমাকে দোষী বানিয়ে দিচ্ছো অথচ একবারও নিজের ভুলটা দেখছো না।তোমার সেই জঘন্য কাজের জন্যে একটা থাপ্পর বোধহয় খুব বেশি কিছু নয়।একটা থাপ্পর দিয়েছি বলে তুমি বলছো আমি তোমার ইগোতে আঘাত করেছি।অথচ তুমিতো আমার আত্মসম্মানেই অাঘাত করে বসেছো।দোষের পাল্লাটা কার বেশি ভারি আদিল চৌধুরি?

আদি কিছুটা দমে গেল।হঠাৎ করেই মনে হল সে ভুল করছে।কিন্তু ওই যে ইগো!!!বার বার সেই ইগো চলে আসছে সামনে।তার অনেক আচরনই অধিরের মত।অধিরের মতোই জেদ।সেটা অধিরের মত সব সময় প্রকাশ না পেলেও একবার যখন মাথায় জিদ চেপে বসে তখন ভাল মন্দ বিচার করার নূন্যতম ক্ষমতাটুকুও তার থাকে না।সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে সাহিল ওদের থেকে আলাদা।যেকোনো পরিস্থিতিকে নিজের আয়ত্বে আনার অদ্ভুদ এক ক্ষমতা রয়েছে ওর।আদি আবারো কঠিন চোখে তাকালো,

-তোমার জ্ঞানের কথা শোনার জন্যে মুখ খুলি নি।চুপচাপ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।কাল সময় মত ছাড়া পেয়ে যাবে।

আদি নিজ হাতে ভাত মেখে পিয়ার সামনে ধরল।ক্রুদ্ধ পিয়া মুখ ঘুরিয়ে নিতেই বাম হাতে পিয়ার গাল চেপে ধরল আদি।পিয়ার মুখে এক লোকমা ভাত পুরে দিতে দিতে বলল,

-আমাকে আর রাগিও না পিয়া।আমাকে রাগালে এর ফল আরো খারাপ হবে।

——

সকাল আটটা।বসার ঘরে জড়ো হয়েছে বাড়ির ছোট বড় প্রত্যেকটা সদস্য।সবার চোখে মুখে নিদারুন বিষ্ময়।রোশনির চোখ নোনা পানিতে টলমল করছে।পলক পড়লেই যেন গড়িয়ে পড়বে গাল বেয়ে।অধির নিশ্চুপ দাড়িয়ে আছে।খুব শান্ত দেখাচ্ছে তাকে।অধিরের সেই নিশ্চুপতায় যেন আরো বেশি করে ক্ষত তৈরি করছে রোশনির বুকে।রোশনি অসহায় চোখে আরো একবার অধিরের দিকে তাকাল।না… অধির আগের মতোই দাড়িয়ে আছে।তবে কি অধিরও তাকে চোর ভাবছে?রোশনির ভাবনার মাঝেই আবারো চেঁচিয়ে উঠলেন ঝুমা চৌধুরি,

-এই মেয়ে অধিরের দিকে তাকাচ্ছো কেন বারবার? আমার নেকলেসটা কোথায় সরিয়েছো ভালোই ভালোই বলে দাও।নয়ত আমি খুজে পেলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো তোমায় বলে দিলাম।

ঝুমা চৌধুরির কথার মাঝেই ফোড়ন কাটল দিদাম।ন্যাকামি সুর তুলে বলতে লাগল,

-আন্টি তোমার বোধ হয় কোথাও ভুল হচ্ছে।অন্যের হবু বরকে রুপের জ্বালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করতে পারলেও রোশনি কিছুতেই চুরি করতে পারে না।ও এমন টাইপের মেয়ে নয়।

ঝুমা চৌধুরি মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন,

-এই মেয়ে কোন টাইপের সেটা আমার খুব ভাল করে জানা হয়ে গেছে।এই ধরনের মেয়েরা সব করতে পারে।

এবার মুখ খুলল দেমির,

-আন্টি তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।রোশনি কেন তোমার নেকলেস চুরি করতে যাবে? ওর যদি নেকলেসের প্রয়োজনই পড়তো তাহলে অধিরকে বলতো না?

-কোন মুখে বলবে অধিরকে? স্বামি স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক আদৌও রয়েছে ওদের মধ্যে?কোন অধিকারে চাইবে অধিরের কাছে?

রোশনির যেন এবার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।অধির এখনো কেন চুপ করে আছে?অধির তাকে বলেছিল,,,সে থাকতে কোনো বিপদ তাকে ছুঁতে পারবে না।তাহলে এমন বিব্রতকর অপমানজনক কথা গুলো শোনার পরেও কেন এতো নিস্তব্ধতা?

-কিন্তু আন্টি,,,তুমি এতো নিশ্চিত ভাবে কি করে বলতে পারো যে,,নেকলেসটা রোশনিই নিয়েছে?

দিদামের কথার পিঠে আবারো মুখ খুললেন ঝুমা চৌধুরি,

-কাল যখন আমি নেকলেসটা তুলে রাখছিলাম তখন ওই রুমে রোশনি ছাড়া কেউ ছিল না।সিন্দুকের চাবি কোথায় থাকে সেটা আমি ছাড়া কেউ জানে না।কাল এই মেয়ে দেখেছে আমি চাবি কোথায় রাখি।এরপরেও কি আর কোনো সন্দেহ থাকে এই মেয়ে নেকলেসটা নেয় নি?এই সব পরিচয়হীন মেয়েরা সব পারে।বড় লোক ছেলেদের ফাসিয়ে বিয়ে করতে এসব মেয়েরা ওস্তাদ।রাস্তায় জন্ম হওয়া এসব মেয়েদের বাবা মায়ের ঠিক নেই।তাইতো….

এবার আর চুপ করে থাকতে পারল না অধির।ব্যস অনেক হয়েছে।আর না।সে চুপ করে আছে মানে যা ইচ্ছে তাই বলবে সেটা কিছুতেই মেনে নেবে না সে।অধির এবার উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠল,

-স্টপ মিসেস ঝুমা চৌধুরি।এনাফ ইজ এনাফ।অনেক বলে ফেলেছেন।আমি আর একটা বাজে শব্দও আমার বউয়ের বিরুদ্ধে শুনতে চাই না।অনেক হয়েছে।

অধিরের আশকারায় কান্নাটাকে আর আটকে রাখতে পারল না রোশনি।ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।এতোক্ষন ধরে বসার ঘরের এক কোনায় দাড়িয়ে ওড়নায় মুখ চেপে কাদছিল দিয়া।বোনের এমন অপমানে কিছু করতে না পারার কষ্ট কতোটা ভয়ানক সেটা এই মুহূর্তে সে বুঝতে পারছে।নিজেরই চোখের সামনে নিজের আদরের বোনকে যদি কেউ পরিচয়হীন রাস্তার মেয়ে বলে অপমানিত করে সেটা সহ্য করার ক্ষমতা হয়ত কোনো বোনেরই থাকে না।অধিরের নিস্তব্ধতা তাকে অবাক করেছিল।কিন্তু অধিরের প্রতিবাদে কান্না মিশ্রিত মুখেও এক টুকরো হাসি ফুটল দিয়ার।ঝুমা চৌধুরি আবারো মুখ খুললেন,

-তুই আমার নাম ধরে ডাকছিস!!!এই মেয়ে তোকে এতোটা বশ করে নিয়েছে যে,,,তুই তোর মায়ের সাথে উচু গলায় কথা বলছিস?এসব দেখার জন্যেই আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন?হাই আল্লাহ!!এমন দিন আসার আগে আমার মৃত্যু কেন দিলে না?

অধির এবার তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো,

-আজ থেকে মা ডাক শোনার অধিকার আপনি হারালেন মিসেস ঝুমা চৌধুরি।আজ আমার ভাবতে লজ্জা হচ্ছে আপনি আমার মা।আজ আপনি সমস্ত সীমা পার করে দিয়েছেন।মা হয়ে আপনি ছেলে আর ছেলের বউয়ের মধ্যাকার সম্পর্কের কথা তুলেছেন আপনি।পৃথিবীতে কোন মায়ের পক্ষে এটা বলা সম্ভব? আমি আপনাকে লাস্ট বারের মত ওয়ার্ন করছি মিসেস ঝুমা চৌধুরি,,,আমার বউ এর নামে আর একটা খারাপ কথাও আপনি বলবেন না।রোশনি পরিচয় হীন রাস্তার মেয়ে হয়েও ওর মধ্যে যে মানবতা আছে সেটা আপনাদের মত পরিচয় সম্পন্ন বড় বাড়ির মানুষদের মধ্যে নেই।

ঝুমা চৌধুরি এবার চেঁচিয়ে উঠলেন,

-একটা চোরের পক্ষ নিয়ে তুই তোর মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করছিস?এ জন্যেই কি তোকে জন্ম দিয়েছিলাম? তুই…..

ঝুমা চৌধুরির কথার মাঝেই চোয়াল শক্ত করে প্রশ্ন ছুড়ল অধির,

-কিসের ভিত্তিতে বার বার ওকে চোর বলছেন? কি প্রমান আছে যে রোশনিই আপনার নেকলেস চুরি করেছে?

আবারো ফোঁড়ন কাটল দিদাম,

-সেটা তো ওর রুম সার্চ করলেই পাওয়া যাবে।আই মিন,, সত্যিটা বেরিয়ে আসবে।

-ওকে ফাইন।যাও সার্চ কর।

অধিরের কথায় কাতর চোখে তাকালো রোশনি।অধির চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করল রোশনিকে।কথা মত পুরো রুম খুজেও নেকলেস পাওয়া গেল না।দেমিরের কপালে সূক্ষ্ম চিন্তার ভাজ।দিদামকে তো এই রুমেই রাখতে বলেছিল সে।তাহলে…? দিদাম নিজেও হতাশ।সে তো আলমারিতেই রেখেছিল তাহলে কোথায় গেল?ঝুমা চৌধুরি কটমট চোখে দিদামের দিকে তাকালেন।অধির এতোক্ষন চুপ চাপ দেখছিল।এবার ঝুমা চৌধুরিকে ইশারা করে বলে উঠলেন,

-ওপসসস….. পাওয়া গেল না?আর কোথায় সার্চ করা বাকি আছে আপনাদের? এখনো কি মনে হয় রোশনিই চুরি করেছে নেকলেস?

ঝুমা চৌধুরি মিইয়ে গেলেন।আমতা আমতা করে বললেন,

-নিশ্চয় অন্য কোথাও সরিয়ে রেখেছে।যে ধুরন্ধর মেয়ে!!!

অধিরের চোয়াল আবারো শক্ত হয়ে এল।ঝুমা চৌধুরির উদ্দেশ্যে কিছু বলতে যাবে তার আগেই এগিয়ে এল দিয়া।অধিরকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

-আমার মনে হয় তোমার সিন্দুকেই নেকলেসটা আছে মম।তুমি হয়ত ভাল করে না দেখেই…

ঝুমা চৌধুরি আবারো চেঁতে উঠলেন,

-কি বলতে চাইছো তুমি?আমি মিথ্যে বলছি?

-না না মম।আমি এমনটা মিন করি নি।আমি শুধু বলতে চাচ্ছি হয়তো নেকলেসটা ওখানেই আছে।শুধু তোমার নজর এড়িয়ে গেছে।একবার ভালো করে খুজে দেখে নিলেই তো হয়।আমার বিশ্বাস নেকলেসটা ওখানেই আছে।

কথামত ঝুমা চৌধুরির রুমে এসে জড়ো হল সবাই।ঝুমা চৌধুরি সিন্দুক খুলে দিয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,

-হয়ে গেছে দেখা? আমি আগেই বলেছিলাম এখানে নেই।বিশ্বাস হল না?এখন….

ঝুমা চৌধুরির কথার মাঝে আবারো মুখ খুলল দিয়া,

-মম এখানে তো অনেক গয়না আছে।তুমি একটু নিচের দিকটাই দেখো। না মানে,,, নিচে তো ঠিক মত দেখা যাচ্ছে না। তাই আরকি…

ঝুমা চৌধুরি চোখ রাঙিয়ে তাকালেন দিয়ার দিকে।এরপর গয়না গুলো উল্টে পাল্টে দেখতেই বেরিয়ে এল কাঙ্ক্ষিত সেই নেকলেস।ঝুমা চৌধুরি নেকলেস হাতে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলেন।দিদামকে এখন কষিয়ে দুঁটো থাপ্পড় দিতে মন চাচ্ছে তার।সামান্য একটা কাজও ঠিক মত করতে পারল না মেয়েটা।দিদাম নিজেও অবাক।সে তো নিজে হাতে নেকলেসটা রোশনির রুমে রেখে এসেছিল।তাহলে এখানে এল কিভাবে? দিদাম কাচুমাচু মুখ করে দেমিরের দিকে তাকাতেই দেখল দেমির চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে।দিদাম ভয়ে চোখ নামিয়ে নিল।দিয়ার ঠোটের কোনে মুচকি হাসি ফুটল।ভাগ্যিস দিদাম আর ঝুমা চৌধুরির প্ল্যানিংটা সে শুনে ফেলেছিল।তাই তো দিদাম আমারিতে নেকলেসটা রাখার পর দিয়া খুব চালাকির সাথে সেটা সেখান থেকে নিয়ে আবারো সিন্দুকে রেখে দিয়েছিল।বোনকে এ অপমানের হাত থেকে বাঁচাতে পেরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল দিয়া।ভারি বুকটা এতোক্ষনে যেন হালকা হল।কারো মুখেই কথা নেই।এই নিরবতাকে ঠেলে দিয়ে মুখ খুলল অধির।রোশনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-ব্যাগ গুছিয়ে নাও রোশনি।এই বাড়িতে আর এক মুহূর্ত নয়।যেই বাড়িতে আমার বউয়ের সম্মান নেই সেই বাড়িতে আমার পক্ষে থাকা সম্ভব নয়।চলো….

কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রোশনির হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে গেল অধির।দিয়া দেমিরও বেরিয়ে গেল পিছু পিছু।ঝুমা চৌধুরি এবার চোখ রাঙিয়ে তাকালেন দিদামের দিকে।দিদামের গালে শক্ত একটা চড় বসিয়ে দাতে দাত চেপে বললেন,

-আমার ছেলে যদি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তাহলে তোমার কি অবস্থা হবে সেটা তুমি ভাবতেও পারছো না।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here