#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৫২
🌼
দশ মিনিট হতে চলল জয়ের পিছু পিছু ঘুরে চলেছে রিয়া।তবে জয়ের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।চোখ মুখ স্বভাবসুলভ গম্ভীর।রিয়া নামক কোনো মেয়ে যে তার পাশে আছে সেটা সে খুব নিঁখুত ভাবে এড়ানোর চেষ্টা করছে।বাম হাতের লিস্টে আরো একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে সেল্ফের উপরে নিচে তাকিয়ে কাঙ্খিত জিনিসটি না পেয়ে বোধ হয় হতাশ হল জয়।রিয়া বেশ সূক্ষ্ম ভাবে জয়কে পর্যবেক্ষণ করছে।জয়ের ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত কুচকানো।রিয়া আড় চোখে উঁকি দিয়ে লিস্টের শেষ নামটা চট করেই পড়ে নিল।নিউট্রেলা সয়া চাংকস…..বোধ হয় এটাই খুজছে জয়।রিয়া সামনের প্রতিটা তাকে উপরে নিচে খুজেও পেল না।পেছনের তাকের একদম উপরের দিকে নিউট্রেলা সয়া চাংকস এর প্যাকেট দেখতে পেয়ে চোখ চিকচিক করে উঠল তার।তবে সেই চিকচিক ভাবটা বেশিক্ষন টিকল না।উপরের তাক অবধি নাগাল পাওয়া অন্তত তার পক্ষে সম্ভব নয়।রিয়া কয়েকবার লাফিয়েও ছোঁয়া পেল না।ঠোট ফুঁলিয়ে আরো একবার লাফাতে নিতেই কেউ লম্বা হাত বাড়িয়ে উপরের তাক থেকে অনায়েসে প্যাকেটটা লুফে নিলো।রিয়া ভ্রু কুচকে হাতের মালিকের সন্ধান করতে পাশে তাকাতেই জয়কে আবিষ্কার করল।জয় কি হাঁসল? তার মনে হচ্ছে জয় হাঁসছে। কিন্তু ঠিক ধরা যাচ্ছে না।রিয়া গাল ফুলিয়ে তাকায়।জয় বাম হাতে ভ্রু চুলকে অন্য দিকে হাটা দেয়।রিয়া নিজের মনেই বিরবির করতে থাকে।আজ হাইটটা যদি একটু বেশি হতো তাহলে এই লোকের উচু নাকটা সে ভেঙে দিতে পারত।ছোট বেলায় কি মা তাকে কমপ্লেন খাওয়াতে গাফিলতি করেছিল?রিয়া ঠিক করল বাড়ি ফিরে সে মাকে জিজ্ঞাসা করবে।ঠিক ঠাক মত কমপ্লেন খাওয়ালে নিশ্চয় তার হাইট এতোটুকু হতো না।তার হাইট নিয়ে এই জয় নামক বাজে লোকটাও হাঁসত না।রিয়া ঠিক করল আজ থেকে আবারো সে কমপ্লেন খাওয়া শুরু করবে।দরকার হলে কমপ্লেনের কৌটায় ডুবে থাকবে।তবুও তাকে লম্বা হতে হবে।যদিও এই বয়সে এসে কমপ্লেন কতোটা কার্যকরী হবে সেবিষয়ে তার যথেষ্ট কনফিউশন আছে।তবে যেকরেই হোক তাকে লম্বা হতে হবে।দরকার হলে গাছের ডালে ঝুলাঝুলি করবে তবুও তার উচ্চতা বাড়ানো চাই।এই ছেলেটার উচু নাকটা ভাঙতেই হবে।জয় জিনিসের দামগুলো পে করে শপ থেকে বেরিয়ে এসে গাড়ির ডিকিতে জিনিসগুলো রাখল।ড্রাইভিং সীটে বসতেই গাড়ির দরজা খুলে হুরমুরিয়ে পাশের সীটে এসে বসল রিয়া।জয় ভ্রু কুচকে তাকায়।এই মেয়ের কি তাকে বিরক্ত করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই? কাজ না থাকলে প্রয়োজনে কিছু অকাজ করবে তাই বলে তাকে বিরক্ত করার কি প্রয়োজন? জয়কে এভাবে তাকাতে দেখে চোখ মুখ কুচকে তাকাল রিয়া।পনি টেইল করা চুলগুলোকে কাঠি দিয়ে আটকে নিয়ে বলল,
-কি হল গাড়ি চালান না কেন? তাড়াতাড়ি বাসায় চলুন।আমি খিদে পেয়েছে।
জয়ের ভ্রু জোড়া আরো কুচকিয়ে এলো।আর মুখ বন্ধ করে রাখা যাচ্ছে না।জয় থমথমে মুখে প্রশ্ন করল,
-খিদে পেয়েছে তো বাড়ি চলে যাও।নয়ত রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খেয়ে নাও।আমার গাড়িতে উঠে বসার মানে কি?
রিয়া বিরক্ত চোখে তাকালো।পরমুহূর্তেই হাসি হাসি মুখ করে বলল,
-আমার খিদে পেয়েছে এবং আমি আপনার হাতের রান্না খেতে চাই।কেমন রান্না করেন সেটা জানতে হবে না? বিয়ের পরে তো আপনাকেই রান্না করতে হবে।আমি তো রান্না “র” টাও পারি না।
জয় সরু চোখে তাকালো।এক ভ্রু উচু করে বলল,
-তুমি বিয়ে অবধি পৌছে গেছো?যেখানে তোমার প্রপোজালটাই এক্সেপ্টেবল নয়!!!
-প্রবলেম নেই।আজ না হোক কাল আপনি মানতে বাধ্য।এতো সহজে আপনার পিছু ছাড়ছি না। তবে আপনার বাসায় যাওয়ার অন্য একটা কারনও আছে।আমার ডায়েরিটা বোধ হয় আপনার বাসায় রয়ে গেছে।খুঁজে পাচ্ছি না কোথাও।এখন আমার দিকে কুটিল চোখে না তাকিয়ে গাড়ি চালান।আমি গাড়ি থেকে নামছি না।
রিয়ার কথায় প্রগাঢ় জিদ খুজে পেল জয়।এই মেয়ে না চাইলে তাকে চড় থাপ্পড় দিয়েও নামানো সম্ভব নয়।জয় হতাশ চোখে তাকিয়ে ছোট্ট দির্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট করল।সামনের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল,
-স্বপ্ন দেখা ভালো। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে যাওয়াতে যেন কষ্ট পেও না।কারন তোমার স্বপ্নটা পূরন হওয়ার মত না।গ্যারান্টি দিচ্ছি আমি।
-আজ কাল মানুষ ওয়ারেন্টি দিচ্ছে না আর আপনি গ্যারান্টি দিচ্ছেন?
জয় কথা বাড়াল না। এই মুহূর্তে তার তর্ক করতে ইচ্ছে করছে না।রিয়ার মনটা হঠাৎই বিষন্নতায় ভরে উঠল।অজানা ভয়ে শরির ঘেমে উঠছে।কি জানি তার দেখা স্বপ্নটা আসলেই পূরন হবে কি না!!রিয়ার চোখ ভরে এল।জয়ের কাট কাট মুখটাকে শান্ত নজরে দেখে নিয়ে সীটে গা এলালো।চোখ বন্ধ করতেই নানান রকমের বাজে চিন্তা এসে মাথায় জমা হল।পৃথিবীতে সবার ভালবাসা পূর্নতা পায় না।খুব অল্প সংখ্যক মানুষের ভালোবাসা পূর্নতা পায়।ইশশ,,,সেই অল্প সংখ্যক মানুষের তালিকায় যদি তার নামটা থাকতো!!!!নিজেকে হয়ত সত্যি সত্যিই ফেরি টেলস এর পরি বলে মনে হত!!!রিয়ার বিষন্ন মুখটাকে দেখে নিয়ে খুব গোপনে দির্ঘশ্বাস ফেলল জয়।মেয়েটার হাসি খুশি মুখটাতে বিষন্নতা মানায় না।একদম মানায় না।জয়ের মায়া হয় মেয়েটাকে দেখলে।কিন্তু দ্বিতীয় বার কাউকে ভালবাসার সাহস তার নেই।ভয় হয়। ভালবাসা তার জিবনের সব রঙ মুছে দিয়েছে।বেঁচে থাকতেও জিবন্ত লাশ বানিয়ে দিয়েছে।প্রথম বারের ব্যর্থতায় উঠে দাড়াতে পারলেও দ্বিতীয় বার উঠে দাড়াবার ক্ষমতা তার নেই। একদমই নেই।
——–
পিয়া আর আদি যখন রোশনিদের থেকে বিদায় নিল ঘড়িতে তখন মোটামুটি এগারোটা।ভার্সিটি যাওয়ার প্ল্যানটাও মাঠে মারা গেল।আদি হঠাৎ ব্রেক কষল।পিয়া ভ্রু কুচকে বাইরের দিকে তাকিয়ে আবারো আদির দিকে তাকালো,
-এখানে গাড়ি থামালে কেন?
আদি চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল,
-কারন আমি এখন এক কাপ কফি খাবো।এখানকার কফি ভিষন ফেমাস।আমি এদিকে আসলে কখনো না খেয়ে যাই না।
পিয়া নিজেও নেমে এল গাড়ি থেকে।আদির পিছু পিছু কিছু দূর আসতেই ছোট খাটো একটা ক্যাফে দেখতে পেল।জায়গাটা খোলামেলা।জায়গায় জায়নায় ছোট ছোট কয়েকটা টেবিল রাখা।প্রতিটা টেবিলের জন্য তিনটে করে চেয়ার বরাদ্দ।পাশ দিয়ে ছোট খাটো একটা লেক।মোটামুটি অনেকটাই মনোরম এবং শান্ত পরিবেশ।পিয়ার জায়গাটা বেশ পছন্দ হল।আদির মুঠো ফোনটা বেজে উঠতেই পিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল আদি,
-আমার একটা আর্জেন্ট কল এসেছে। কথা বলে আসছি।তুমি গিয়ে অর্ডার দাও।আর শুনো,,,,কফিতে আমন্ড মিল্ক দিতে বলবে।সাথে দুইটা বরফের টুকরো।তিনটে নয়।
আদি চলে যেতেই বিরবির করে উঠল পিয়া,
-এক কফিতেই কত রকম আইটেম!!!এটা দেবে না ওটা দেবে।তিনটা দেবে না দুইটা দেবে।যতসব ঢং।আজাইরা…..
পিয়া বিরবির করতে করতেই সামনের দিকে এগিয়ে গেল।দুটো কফি অর্ডার করতেই লোকটা বলে উঠল,
-সরি ম্যাম,,,,আমন্ড মিল্কটা শেষ হয়ে গেছে।নরমাল দুধ আছে।দেবো?
-ওকে দিয়ে দিন।নো প্রবলেম।
-ওকে ম্যাম।
পিয়া নিজের মনেই বিরবির করে উঠল,
-ব্যাপারটা কি ঠিক হবে? দূর,,,,!!ও কি বুঝতে পারবে নাকি।
পিয়া কফির মগ নিয়ে টেবিলে রেখে চেয়ার টেনে বসতেই আদি এল।পিয়া কফিতে চুমুক দিতেই আদি ভ্রু উচিয়ে প্রশ্ন করল,
-কেমন?
-হুম বেশ ভাল।
আদি এবার নিজেও কফিতে চুমুক দিল।তবে স্বাদটা একটু ভিন্ন মনে হচ্ছে।আদি খুব একটা পাত্তা না দিয়ে দ্বিতীয় বার চুমুক দিল।এবারো কেমন যেন অন্যরকম মনে হল।মিনিট দুয়েকের মাথায় পুরোটা শেষ হতেই বলল,
-কফির স্বাদটা আজকে অন্যরকম মনে হচ্ছে।আমন্ড মিল্কের মত একদমই নয়।
পিয়া কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে বলল,
-হতে পারে ওরা অর্গানিক আমন্ড মিল্ক দিয়ে বানিয়েছে।আর তাছাড়াও নরমাল কফি নরমাল মানুষে খায়।তোমার মত আমি তো আর শাহেনশাহ নই যে আমার আমন্ড মিল্ক ছাড়া চলবে না!!!আমি মিডিলক্লাস ঘরের ট্রিপিক্যাল মেয়ে,,,,,গরুর দুধই আমার পছন্দ। বাই দা ওয়ে,,,,,কফিটা নাকি তোমার ভালো লাগে নি।তারপরেও তো সবটা শেষ করে ফেলেছো।
আদি ভ্রু কুচকে তাকাল।বিরক্ত গলায় বলল,
-ও হ্যালো…!!কফি খাওয়ার জন্যেই এখানে এসেছি।আর একটা কথা,,,আমার এর টেস্টে প্রবলেম নেই।আমার শুধু নরমাল দুধে প্রবলেম।কারন নরমাল দুধে আমার এলার্জি আছে।
পিয়া সরু চোখে তাকাল।ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করল,
-এলার্জি!!! নরমাল দুধ খেলে কি সমস্যা হয় তোমার?
-নরমাল দুধে গলা ব্যথা হয়।গলার মধ্যে চুলকায়।সাথে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।আর আমি অবশ্যই মজা করছি না।ওকে….।
কথাটা শেষ করতেই গলায় খুশখুষ করতে লাগল আদির।কথা বলতে চেয়েও পারলো না।পিয়া সরু চোখে তাকাল।দুধের রিয়্যাকশন শুরু হয়ে গেছে।পিয়া ভয়ে ভয়ে তাকাতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করল আদি।কিন্তু পারল না।গলা চেপে ধরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।পিয়া দ্রুত আদিকে ধরার চেষ্টা করল।আদির মাথাটাকে কোলের উপর নিয়ে ডাকতে লাগল একের পর এক।ততোক্ষনে ওদেরকে ঘিরে ভিড় জমে গেছে।পিয়া চিৎকার করে বলতে লাগল,
-প্লিজ কেউ সাহায্য করুন।প্লিজ।ওকে হসপিটালে নিতে হবে।কেউ সাহায্য করুন….।
সবাই মিলে আদিকে ধরে গাড়িতে উঠালো।পিয়া সময় নষ্ট না করে নিজেই ড্রাইভ করতে শুরু করল।ভয়ে ওর হাত পা কাপছে।হঠাৎ করেই কি হয়ে গেল!!!।আদি জ্ঞান হারাচ্ছে।পিয়া পিছনের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল,
-আদি প্লিজ চোখ বন্ধ করো না।প্লিজ তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করো।আই এম সরি আদি।আমি একদম বুঝতে পারি নি।আমাকে ক্ষমা করে দাও।প্লিজ।কিছু হবে না তোমার।তুমি শুধু তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করো।আমরা এখনি হসপিটালে পৌছে যাবো।
কথাগুলে বলতে বলতেই চোখ থেকে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে।এই সব কিছুর জন্যে সে দায়ি।তার জন্যেই আদির এই অবস্থা।আদির কিছু হয়ে গেলে সে কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।কিছুতেই না।
———-
ক্লান্ত রৌদ্রময় দুপুরে আলিশান বিছানায় ভাত ঘুম দিচ্ছিলো অধির।রোশনি কিছু কাজ সেড়ে রুমে আসতেই অধিরের ঘুমন্ত মুখে নজর পড়ল।রোশনি ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে গেল।খুব সাবধানে অধিরের পাশে গিয়ে বসল।ঘুমের মাঝে কতোটা শান্ত দেখাচ্ছে ওকে।কতোটা নিষ্পাপ। মানুষকে বোধ হয় এই একটা সময়ই সব থেকে শান্ত এবং নিষ্পাপ দেখায়।রোশনি স্থির চোখে তাকালো।কালচে লাল ঠোট জোড়া অদ্ভুদ সুন্দর দেখাচ্ছে।চোয়াল জুড়ে ঘন কাল দাড়ি গুলো আগের থেকে কিছুটা বড় হয়েছে।ভাল লাগছে দেখতে।চুলগুলোও বেশ কিছুটা লম্বা হয়েছে।সামান্য ভাজ পড়া চুল গুলোতে বেশ মানিয়েছে।রোশনি খুব নিঁখুত ভাবে দেখছে।এই একটা সময়েই সে কোনো রকম সংকোচ ছাড়া অধিরের দিকে তাকাতে পারে।রোশনি ডানহাতটা তুলে অধিরের গালে রাখল।খু্ব যত্ন নিয়ে দাড়ি গুলোতে হাত বুলালো।রোশনির হাতের ছোঁয়া পেয়ে ঘুমের মাঝেই নড়ে উঠল অধির।রোশনি হাত সরালো না।হাত বুলাতেই থাকলো। খানিক বাদে নিজের অজান্তেই মুখটা এগিয়ে নিয়ে গেল অধিরের দিকে।প্রথমে গালে তারপর ঠোটে খুব আঁলতো ভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো।এরপর তাকিয়ে রইল নিষ্পলক। কিছুদিন আগেও যেই মানুষটার উপস্থিতি তার বিরক্ত লাগল,ঘৃনা লাগত আজ সেই মানুষটাকে ঘিরেই কত শত মায়া!!!এক মূহুর্ত দূরত্ব যেন সহ্য হয় না আর।কিছুদিন আগেও যেখানে মনে হত এই মানুষটাকে ভালবাসা অসম্ভব সেখানে এখন মনে হয় এই মানুষটাকে না ভালবেসে থাকাটা অসম্ভব। এতো দিনের টুকরো টুকরো অনুভূতি গুলোকে জুড়তেই নতুন এক শব্দের উন্মোচন করেছে রোশনি।ভালবাসা…!!হ্যা সে ভালবাসে এই পাগল,অ্যাংরি, ইগোস্টিক আর মুডি পুরুষটাকে।কখন কিভাবে হয়েছে সেটা বলা মুশকিল।হয়ত প্রথম থেকেই একটু একটু করে তৈরি হয়েছে এই অনুভূতি।জিবনের প্রতিটা মূহুর্তে এখন তার এই পুরুষটাকে পাশে চাই।কাছে চাই।এতোটা কাছে যেন মৃত্যু ছাড়া আর কোনো শক্তি তাদের আলাদা করতে না পারে।রোশনির গরম নিশ্বাস চোখে মুখে আচড়ে পড়তেই চোখ মেলে তাকালো অধির।ঘুম ঘুম চোখেও প্রিয়তমার মুখটা চিনতে এতোটুকু কষ্ট হল না।অধির টান দিয়ে রোশনিকে টেনে নিল নিজের বুকে।রোশনিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে মুখ গুজল গলায়।রোশনির কাঁপুনি বাড়ল।দম আটকে আসল।শরির জুড়ে বয়ে গেল ঠান্ডা স্রোতের ধারা।অধির রোশনির গলায় খুব গভির ভাবে ছুঁয়ে দিয় ঘুম ঘুম গলায় বলল,
-এখনো পর্যন্ত আমার ছোঁয়া গুলোর সাথে পরিচিত হতে পারো নি সুইটহার্ট? এতো কাঁপলে তো আমি ঠিক থাকতে পারবো না।কে সামলামে তখন হুম?
রোশনির বলতে ইচ্ছে করলো,,”আপনার ছোঁয়া গুলো এতো গভির কেন অধির? আমি সহ্য করতে পারি না।ধ্বংস হয়ে যায়।মারা যাই”…কিন্তু বলা হল না।দাতে দাত চেপে সহ্য করতে লাগল অধিরের একের পর এক অসহ্য স্পর্শ।কয়েক মিনিট বাদে গলায় মুখ গুজে রেখেই বলল অধির,
-রাতে তোমার জন্যে সারপ্রাইজ অাছে সুইটহার্ট। গেট রেডি ফর দা নাইট।
রোশনি জানতে চাইল না কেমন সারপ্রাইজ। কাল তাদের বিয়ের ছয় মাস পূর্ন হবে।দেখতে দেখতেই ছয় মাস কেটে গেল।সময়গুলো যেন তাদের থেকে পালাতে চাইছে।রোশনি নিজের মনেই বিরবির করল,,,”আপনার জন্যেও একটা সারপ্রাইজ অাছে অধির।আজ আমি সম্পূর্ন আপনার হতে চাই।সম্পূর্ন রুপে আপনার।একজন নারী হিসেবে পরিপূর্নতা পেতে চাই।আমার অনুভূতির কথা জানাতে চাই।”……..কথাগুলো অধিরের কান অবধি পৌছালো না।গুটি শুটি মেরে অধিরের বুকে মাথা রাখতেই দু হাতে শক্ত করে জড়িয়ে নিল অধির।আবেশে চোখ বুজে এল রোশনির।এই বুকে এতো কেন প্রশান্তি!!!এতো কেন গভিরতা!!এতো কেন নিরাপদ!!!জানা নেই রোশনির।
———
আদির জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করল।চোখ পিট পিট করে তাকাতেই দেখল তার বাম হাতে হাত রেখে বেডে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে পিয়া।মুখটা কেমন বিষন্ন দেখাচ্ছে।আদির তখনকার কথা মনে পড়ল।পিয়াকে ডাকতে যেতেই গলায় ব্যথা অনুভব করলো আদি।তখনই শরিরে সাদা রঙের এপ্রোন জড়িয়ে ভেতরে এল মধ্যবয়সি একজন ডক্টর।আদিকে ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে প্রশ্ন করল,
-এখন কেমন ফিল করছেন মিষ্টার আদিল?
আদি কোনো রকমে বলল,
-গলায় কিছুটা ব্যথা করছে।আর…
আদির কথার মাঝেই ডাক্তার বলে উঠলেন,
-ডোন্ট ওয়ারি,,,,,কিছু দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।আমি কিছু মেডিসিন প্রেসক্রাইব করে দিচ্ছি নিয়মিত খাবেন।এছাড়াও বাইরের খাবার এভোয়েড করবেন এবং বেশি বেশি পানি পান করবেন।আশা করি খুব দ্রুত রিকভার করবেন।
-আমি এখানে কতোক্ষন ধরে আছি ডক্টর?
-আপনার ওয়াইফ আপনাকে এখানে তিন ঘন্টা আগে নিয়ে এসেছিলেন।আমরা তো ওনাকে দেখে ভিষন চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম।প্রচুর কান্না করছিলেন উনি।
আদি পিয়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালো।এরপর ডাক্তারে দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
-হ্যা কিছুটা ইমোশনাল ও।বাই দা ওয়ে,,,আমি এখান থেকে কখন রিলিজ পাবো?
ডক্টর নিজেও মুচকি হাসলেন।বললেন,
-আপনি চাইলে এখনি চলে যেতে পারেন।
-ওকে ডক্টর।থ্যাংক ইউ।
ডাক্তার কেবিন থেকে বিদায় নিতেই পিয়ার দিকে তাকাল আদি।কয়েক ঘন্টার ব্যবধানেই মেয়েটার চোখ মুখ যেন শুকিয়ে গেছে।আদি ডান হাত তুলে পিয়ার মাথায় রাখতে যাবে তার আগেই ঘুম ভেঙে গেল পিয়ার।আদি হাত সরিয়ে নিল।আদির জ্ঞান ফিরতে দেখে চট করে উঠে দাড়ালো পিয়া।ভিষন ব্যস্ত হয়ে বলতে শুরু করল,
-ও তোমার জ্ঞান ফিরে এসেছে? কেমন লাগছে এখন? কষ্ট হচ্ছে কোথাও?আচ্ছা দাড়াও,,,আমি ডক্টরকে ডাকি।
পিয়া চলে আসতে নিলে হাত ধরে আটকায় আদি।বলে,
-ডক্টরের সাথে আমার কথা হয়েছে।তোমার ডাকা লাগবে না।
পিয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
-কথা হয়েছে!!!কখন? কিভাবে?
আদির সহজ উত্তর,
-যখন তুমি আরাম করে ঘুমাচ্ছিলে তখন।
পিয়া ছোট্ট শ্বাস টেনে বেডের একপাশে বসল।বসে থাকতে থাকতে কখন যে চোখটা লেগে গেছিলো তার!!পিয়া আফসোসের সুর তুলে বলল,
-আই এম সো সরি আদি।আমি জেনে বুঝে কিছু করি নি।তুমি তো মরেই যাচ্ছিলে।অবশ্য ভালোই হত যদি তুমি মরে যেতে।যদিও দোষটা আমার নয় বুঝলে? দোষটা তোমার।আগেই বলতে পারতে দুধে তোমার এলার্জি। কিন্তু না… তোমার তো লম্বা চড়া একটা লিস্ট বলার দরকার ছিল আমায়।
আদি বিরক্ত চোখে তাকালো। বলল,
-চুপ করবে একটু? আমি এলার্জি তে তো মরি নাই কিন্তু তোমার এই বকবক শুনে নির্ঘাত মরে যাবো।দয়া করে চুপ করো।আর একটা কথাও তুমি বলবে না।একটা কথা মানে একটা কথাও না। বুঝেছো তুমি?
-হা হা হা,,,,,ভেরি ফানি।আমি কথা বলবো এবং অবশ্যই বলবো।আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম। হসপিটালে…
পিয়াকে শেষ করতে দিল না আদি।বলল,
-আচ্ছা বাবা এবার তো চুপ হয়ে যাও।এখনো বেঁচে আছি আমি।এখন বাড়ি চলো।
পিয়া মুখ ফুলিয়ে তাকালো।ও আসলেই ভিষন ভয় পেয়ে গিয়েছিল।যদি তার ভুলের জন্য আদির কিছু হয়ে যেত তাহলে নিজেকে সে কখনোই ক্ষমা করতে পারত না।আদি বেড থেকে নেমে জুতা পড়তে নিচু হতেই পিয়া বলে উঠল,
-আমি হেল্প করছি।
-দরকার নেই।আমি পারবো।
আদি নিজে থেকেই জুতা পড়ল।খানিক কষ্টও হল তবে পিয়াকে বুঝতে দিল না।গলার সাথে সাথে পুরো শরির কেমন ব্যাথা আর দূর্বল মনে হচ্ছে তার।আদি পিয়াকে বুঝতে না দিয়ে হাটার জন্যে পা বাড়াতেই দূর্বলতা বেরিয়ে এল। পড়ে যেতে নিলেই দ্রুত হাত ধরে নিল পিয়া।
-আমি একা যেতে পারবো।
পিয়া চোখ রাঙিয়ে তাকালো।বলল,
-আর একটা কথা বললে সোজা মাথা ফাটিয়ে দিবো বলে দিলাম।
আদি আর কথা বাড়ালো না।এই মেয়েকে নিয়ে ভরসা নেই।মাথা টাথা ফাটিয়ে দিতেই পারে।অযথা না না করে রাগিয়ে দেওয়া উচিত হবে না।এই মূহুর্তে চুপ করে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
চলবে…….