শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব ৫৭

0
4620

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৫৭

🌼
সকালে ঘুম ভাঙলো তিক্ষ্ম কিছু শব্দে।কানের উপর বালিশ চেপে ধরেও আটকানো গেল না শব্দের তিক্ষ্মতা।রিয়া ভুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বিছানা ছাড়ল।এলোমেলো চুলগুলোকে কাঠি দিয়ে আটকে নিয়ে পা বাড়ালো রুমের বাইরে।অসহ্য শব্দটাকে অনুসরন করে এসে পৌছালো রান্না ঘরের দরজায়। জয় একমনে ব্লেন্ডারে কিছু ব্লেন্ড করছে।রিয়া বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে এগিয়ে এল কয়েক পা।জয় এক পলক রিয়াকে দেখে নিয়ে কাজে মন দিল।রিয়া চোখ মুখ ফুলিয়ে কেবিনেটের উপর পা তুলে বসে বলল,

-ছয়টা বাজে জয়। আর কিসব আওয়াজ করছো?তুমি তো ঘুমাওই না আমাকেও ঘুমাতে দিচ্ছো না।তুমি কি জম্বি? ঘুম টুম পায় না নাকি তোমার?এত সকালে কে ওঠে শুনি?

জয় চপিং করতে করতে বলল,

-আমি সকাল করে উঠি না রিয়া। তুমিই লেইট করে উঠো। আমার সকাল আরো আধা ঘন্টা আগে হয়ে গিয়েছে।তুমি লেইট করে ফেলেছো।

-তুমি আসলেই জম্বি।এতো সকালে উঠে কি করো একটু বলবে?

জয় স্থীর চোখে তাকিয়ে বলতে শুরু করল,

-বডি ক্লক,এক্সসারসাইজেজ,সাথে নিউজ পেপার পড়া,সারা দিনের প্ল্যানিং করা,এন্ড ক্রিয়েটিভলি চিন্তা করা।আর তুমি নিশ্চয় শুনে থাকবে পরিশ্রমীরা কখনো দেরি করে ওঠে না।যে ঘুমিয়ে থাকে তার ভবিষ্যৎও ঘুমিয়ে থাকে।ঢুকেছে মাথায়?তোমারও উচিত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়া।

রিয়া ঠোট ফুলিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠল,

-শো অফ কোথাকার…।আমার ভবিষ্যৎ ঘুমিয়ে থাকুক বা জেকে থাকুক,, তাতে আমার মাথা ব্যাথা নেই।বিয়ে করেছি কি ভবিষ্যৎ এর চিন্তা করার জন্য? এখন শুধু শুয়ে বসে জামাই এর টাকায় দিন কাটাবো।যত চিন্তা এখন থেকে তুমি করবে।অনেক চিন্তা করেছি,,,এবার আমার বিশ্রাম।

জয় রিয়ার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে ভুস করে নিশ্বাস ছাড়ল।এই মেয়ে এলিয়েনের থেকে কোনো অংশে কম নয়।জয় কথা না বাড়িয়ে নিজের কাজে মন দিল।জয়কে চপিং বোর্ডে রসুন কাটতে দেখে রিয়া নাক মুখ কুচকে বলে উঠল,

-তুমি কি এতোগুলো রসুন খাবারে দেওয়ার প্ল্যান করছো?

জয় ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

-হ্যা।কেন…?

রিয়া নাক ছিটকে বলল,

-আমার এগুলোর গন্ধ সহ্য হয় না।

জয় রসুনের পরিমান কমিয়ে দিল।ফ্রীজ খুলে ধুনিয়া পাতা বের করে পরিষ্কার করে গুছিয়ে কাটতে লাগল।রিয়া ভ্রু কুচকে সবটা দেখছিল।খানিক বাদেই ঠোট গোল করে বলে উঠল,

-তোমার কি আজই মাস্টার শেফ হতে হল?আমার খিদে পেয়েছে।তাড়াতাড়ি রান্নাটা শেষ করো ….!!খাবার খেয়ে ঘুমাবো আমি।আর আমি যতোক্ষন ঘুমাবো ততোক্ষন তুমিও আমার সাথে ঘুমাবে। বুঝতে পেরেছো…?

__

সূর্য মাথার উপরে উঠে গেলেও বিছানা ছাড়ে নি অধির আর রোশনি।অধিরের বুকে গুটিশুটি মেরে অধিরের ঘুমন্ত মুখের দিকে অপলক চেয়ে আছে রোশনি।ডান হাতে কালো দাড়িগুলোতে হাত বুলিয়ে অস্থির চোখে অধিরের পুরো মুখটা চষে বেড়াচ্ছে।অধিরের গরম নিশ্বাস চোখে মুখে আচড়ে পড়তেই অদ্ভুদ শিহরনে শরিরে কাটা দিচ্ছে।রোশনি দুষ্টু হেসে মুখটা এগিয়ে নিয়ে কামড় বসালো অধিরের পাতলা ঠোট জোড়ায়। প্রায় সাথে সাথেই অস্ফুট শব্দ করে চোখ মেলে তাকালো অধির।রোশনি ততোক্ষনে সরে এসেছে।অধির ঠোটে হাত দিয়ে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়েও বিশেষ লাভ হল না।রোশনির চোখে মুখে তখনো দুষ্টু হাসির বহর।রোশনি বাম চোখ টিপে দিয়ে বিছানা ছাড়তেই কপাল কুচকে তাকালো অধির।রোশনির যাওয়ার দিকে চেয়ে থেকে বিড়বিড় করে উঠল,

-রাক্ষুসী একটা।

__

আটটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট।মাত্রই রাতের খাবার শেষ করে রুমের দিকে যাচ্ছিলো পিয়া।কিন্তু বসার ঘর অবধি আসতেই ভ্রু কুচকে গেল তার।আদি আর স্নেহা বসে গল্প করছে।শুধু গল্প নয় বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসতে হাসতে যেন শহিদ হয়ে যাচ্ছে।মেয়েটা নাকি আদির বাবার বন্ধুর মেয়ে।এখানে জাস্ট কিছুদিনের জন্য ঘুরতে এসেছে।এমনটাই শুনেছে পিয়া।যদিও তাতে কোনো রকম ইন্টারেস্ট পিয়ার নেই কিন্তু যত সমস্যা তার গুণধর স্বামিকে নিয়ে।মেয়ে দেখলে তো তার মাথা ঠিক থাকে না।এবারেও সেটাই ঘটেছে।মেয়েটার পেছনে হাত ধুয়ে পড়েছে।যদিও মেয়েটা খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না পিয়ার।পিয়া চোখ মুখ শক্ত করে গলার স্বর উচু করে আদিকে উদ্দেশ্য করে ডাকতেই ভ্রু কুচকে তাকালো আদি।ইশারাই কেন ডাকছে জিজ্ঞাসা করতেই পিয়া কোনো রকম হাসার চেষ্টা করে বলে উঠল,

-তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে আদি।ইটস আর্জেন্ট।প্লিজ রুমে এসো।

আদি কিছু বলতে যাবে তার আগেই চোখ রাঙিয়ে তাকালো পিয়া।চোখ রাঙানিতে কাজ হল।আদি বিরস মুখে স্নেহাকে বাই বলে পিয়ার পিছু পিছু রুমে এল।রুমে আসতেই পিয়া চোয়াল শক্ত করে প্রশ্ন করল,

-তুমি ওখানে বসে কি করছিলে?

আদির সহজ উত্তর,

-লাইন মারছিলাম।

পিয়া থতমত খেয়ে কয়েক সেকেন্ড বোকার মত চেয়ে থেকে বলে উঠল,

-মানে?

-মানে লাইন মারার ট্রাই করছিলাম। তুমি তো সাফ জানিয়ে দিয়েছো তুমি নাকি আমাকে ভালবাসো না।আমি তো আর সিঙ্গেল থাকতে পারি না।সেজন্যেই ট্রাই করছিলাম মেয়েটাকে পটানোর।

পিয়া হঠাৎই বলার মত কিছু খুজে পেল না। তাই চুপ করে দাড়িয়ে রইল।কয়েক সেকেন্ড বাদে আদি আবারো বলে উঠল,

-আচ্ছা শুনো,,,,,আমরা তো ফ্রেন্ড তাই না?

-হুম।তো…?

-তাহলে কোনো উপায় বলো কিভাবে মেয়েটাকে পটানো যায়।বন্ধু হয়ে যদি বন্ধুকে সাহায্যই না করো তাহলে কি ফায়দা? এখন তাড়াতাড়ি কোনো প্ল্যান বলো।

পিয়া প্রায় সাথে সাথেই ভ্রু কুচকে উচু গলায় বলে উঠল,

-কি..? আমি বলবো?

-ফফ আস্তে।চিল্লাও কেন?বউ এর মত অভার এ্যাকশন নয়,,,বন্ধুর মত প্ল্যান অফ এ্যাকশন বলো।ফাস্ট……

পিয়া হাত ভাজ করে দাড়ালো।বলল,

-আমি কোনে হেল্প টেল্প করতে পারবো না।আর এমনিতেও,,,, আমার মনে হয় না মেয়েটা তোমাকে পাত্তা দিবে।তাই বলছি,,,রিজেক্ট হওয়ার আগেই রাস্তা বদলে নাও।

-তুমি তো দেখি আমাকে সাহায্য করার পরিবর্তে আমার মনোবল ভাঙার প্ল্যান করেছো।যাও তোমার হেল্পের প্রয়োজন নেই।আমি একাই হ্যান্ডেল করবো।দেখো এবার ওকে কিভাবে পটায়।

-ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন,,,,, স্নেহা তার রুমে চলে গিয়েছে।ঘুমানোর প্রস্তুুতিও এতোক্ষনে নিয়ে নিয়েছে হয়ত।তাহলে….?

আদি ঠোট গোল করে হেসে নিয়ে বলল,

-তুমি কি জানো,,,, আমাদের দেশের মেয়েরা সাধারনত চারটা পাঁচটার দিকে স্কুল,কলেজ বা অফিস শেষ করে বাসায় ফিরে।এরপর এক ঘন্টা বাবা মার সাথে,এক ঘন্টা টিভি দেখে,,,কিছুক্ষন খাবার টেবিলে সময় কাটিয়ে ঠিক রাত নয়টার দিকে নিজের রুমে যায়।কিন্তু ঘুমায় ঠিক বারোটার পরে গিয়ে।আর এই যে নয়টা থেকে বারোটার মধ্যে যে তিন ঘন্টা টাইম থাকে না…!!!এই সময়টাকে লাকি টাইম বলে।বাংলাদেশের ৮০% মেয়ে এই সময়টাতেই পটে।বুঝেছো….?

পিয়া চোখ ছোট ছোট তাকিয়ে কিছুক্ষন থম মেরে দাড়িয়ে থেকে বলল,

-কিন্তু তুমি এই রুমে,, আর স্নেহা আরেক রুমে।তোমাদের দেখাদেখি তো দূর কথা বলার চান্সও নেই।কিভাবে পটাবে তাহলে?

-মার্ক জুকারবার্গ নামক এক মহাপুরুষ ফেসবুক নামক একটা বস্তু আবিষ্কার করেছে অন্য দেশের মেয়ে পটানোর জন্যে।সেখানে আমি দেশী মেয়ে পটাতে পারবো না…?এখুনি ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাবো।তারপর চ্যাটিং,,ফ্ল্যাটিং এন্ড সব শেষে সেটিং।

কথাটা শেষ করার সাথে সাথে ল্যাপটপ নিয়ে বিছানার উপর ঝাপিয়ে পড়ল আদি।বিছানার উপর বুকে ভর করে শুয়ে ফেসবুকে লগ ইন করে স্নেহা হক লিখে সার্চ করতেই হাজার হাজার স্নেহা হকের আইডি শো করল।আদির হাস্যজ্জল মুখটা মুহূর্তে চুপসে গেল।এতো এতো স্নেহা হকের মাঝে এই স্নেহার আইডিটা কিভাবে খুজে পাবে সে?পিয়া উঁকি দিয়ে আদির চুপসানো মুখটা দেখে নিয়ে ঠোট টিপে হেসে বলে উঠল,

-কি হল..? কিশমিশের মত মুখটা এমন চুপসে গেল কেন…?খুজে পাচ্ছো না বুঝি…?

পিয়ার কথা শেষ হতেই স্নেহার আইডিটা খুজে পেল আদি।ঠোটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠল,

-এই তো পেয়ে গেছি।ছিঃ…প্রোফাইল পিকচারটা কি বাজে!! আর কোনো পিকচার নাই নাকি…?

মুহূর্তেই পিয়ার মুখের হাসিটা বিলীন হল।এতো সহজে কেন পেতে হবে আইডিটা..? আদি এক পলক পিয়ার শুকনো মুখটা দেখে নিয়ে বলল,

-এখন তোমার মুখটা কিশমিশের মত চুপসে গেল কেন যেমনটা কিছুক্ষন আগে আমার হয়েছিল…!যখন আইডিটা খুজে পাচ্ছিলাম না তখন আমার ফিউজ উড়ে গিয়েছিল। এখন যখন খুজে পেলাম তখন তোমার ফিউজ উড়ে গেল?আমাদের দুজনের মুভমেন্ট কিন্তু একইরকম।কেনো না আমরা দুজন এক হয়ে যায়..?

পিয়া চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই ছোট্ট শ্বাস টেনে স্নেহার আইডিতে রিকুয়েস্ট পাঠাল আদি,

-ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট তো পাঠিয়ে দিলাম কিন্তু এক্সসেপ্ট কেন করছে না?

পিয়া মনে মনে বিড়বিড় করে উঠল…”এক্সসেপ্ট না করলেই হয়।…”।কিন্তু পিয়ার ভাবনাকে পাল্টে দিয়ে রিকোয়েস্ট এক্সসেপ্ট করল স্নেহা।প্রায় সাথে সাথে মেসেঞ্জারে হাই লিখে পাঠালো আদি।কয়েক সেকেন্ড বাদেই রিপ্লাই দিল স্নেহা।পিয়া বিছানায় বসে ঠোট ফুলিয়ে দেখতে লাগল সবটা।আদি ঠোটের কোনে হাসি ফুটিয়ে লিখল,

-তোমার প্রোফাইল পিকচারটা মারাত্বক রকমের সুন্দর।আমার তো দম আটকে যাচ্ছে দেখে।

লেখাটা দেখার সাথে সাথে চট করে বলে উঠল পিয়া,

-কেবল না বললে প্রোফাইল টিকচারটা একদম বাজে লাগছে দেখতে? তাহলে এখন কেন বলছো মারাত্বক সুন্দর লাগছে? মিথ্যে বলতে লজ্জা করছে না?

আদি এবার ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো।ভ্রু কুচকে বলল,

-এটুকুও জানো না..? আরে বাবা মেয়েদের পটাতে হলে এসব বলতে হয়।আর মেয়েদের তাড়াতাড়ি ইমপ্রেস করতে বেশি বেশি মিথ্যে বলতে হয়।তুমি বুঝবা না।এখন স্নেহাকে ছাদে দেখা করতে বলবো।ডিস্টার্ব করো না।

পিয়া সচেতন চোখে তাকিয়ে বলল,

-কেন?

-কথা বলার জন্য।আর সব সময় বউ এর মত কথা না বলে বন্ধুর মত রিয়্যাক্ট করো।ইউ নো না,,,,,উই আর ফ্রেন্ডস…!!!বাই দা ওয়ে,,,,,আমি ছাদে যাচ্ছি।তুমি নিশ্চয় যাবে না…?

পিয়া চোখ মুখ কুচকে বলে উঠল,

-কেন যাবো না? অবশ্যই যাবো।

-গুড চয়েজ।কিন্তু কেন যাবে?

-তুমি না বললে,,, উই আর ফ্রেন্ডস? বন্ধুকে সাহারা পাহাড়া দুটোই দিতে হবে তো..!!!!

আদি পিয়ার দিকে কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে চেয়ে থেকে বিশেষ পাত্তা না দিয়ে স্নেহার সাথে কনভারসেশনে মনোযোগী হল।এক পর্যায়ে স্নেহার পাঠানো লম্বা চড়া টেক্সট এ হাসি উবে গেল আদির।আদির শুকনো মুখটা দেখে নিয়ে হু হা করে হাসিতে ফেটে পড়ল পিয়া।আদি দুঃখ দুঃখ মুখ করে তাকালেও পিয়ার হাসি কমল না।ম্যাসেজটা ছিল এরকম….

“আদি তুমি কিন্তু ভুলে যাচ্ছো তুমি ম্যারিড। তোমার একটা বউ আছে।মেয়েটা তোমার থেকেও বেশি সুইট।আর তুমি কিনা ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়েদের পিছনে ঘুরছো?ভদ্রতার খাতিরে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সসেপ্ট করেছি।হাই এর রিপ্লাইও দিয়েছি।তাই বলে কি তুমি আমাকে ছাদে ডাকবা? আই ডোন্ট লাইক দিস।ম্যারিড ছেলেদের প্রতি আমার ইন্টারেস্ট নেই।ডিস্টার্ব করো না।”

আদি দুঃখি দুঃখি মুখ করে পিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

-তুমি হাসছো..? তোমার উচিত দুঃখি দুঃখি মুখ করে আমাকে শান্তনা দেওয়ার।আমার সাথে তাল মিলিয়ে একটু কান্না করার।

আদির কথায় পিয়ার তো কান্না পেলোই না উল্টে হাসিতে পেট ফেটে এল।আদি ঠোট গোল করে বলল,

-মেয়েদের কাছে পাত্তা না পাওয়াতে যে খুশি হয় তাকে বউ বলে। আর প্রেমে রিজেক্ট হয়ে যে দুঃখী হয় তাকে লাভার বলে।

পিয়া হাসি থামিয়ে বলে উঠল,

-সবই ঠিক আছে। কিন্তু আমি কেন কাঁদবো তোমার সাথে..?

আদি পিয়ার দিকে সোজা চোখে তাকিয়ে বলল,

-প্রেমে রিজেক্ট হয়ে ছ্যাঁকা খেলে তাকে কোম্পানি দেওয়াকে বন্ধু বলে।এখন চলো তুমি আমাকে কোম্পানি দিবে…।

-আমার তো আর কোনো কাজ নেই না..?পারবো না আমি।তুমি দুঃখে ভেসে যাও বা ডুবে যাও তাতে আমার কিছু যায় আসে না।আমি এখন ঘুমাবো।ঘুম পাচ্ছে আমার।

পিয়া বিছানায় গা এলাতেই হঠাৎই পিয়ার দিকে ঝুকে আসে আদি।পিয়া চমকে তাকাতেই আদি আরো একটু ঝুকে আসে।ডান হাতে পিয়ার ঠোটের চারপাশে নাড়াতে নাড়াতে বলে ওঠে,

-আমি যখন ওর সাথে কথা বলছিলাম তখন তুমি জেলাস ফিল করছিলে রাইট…?ইউ নো হোয়াট বেবস…..!!জেলাসি ইজ দা বেস্ট ফিলিংস ফরএভার।তোমার মনের কথাটা আমার কাছে ওপেন সিক্রেট হয়ে গেছে এখন।মুখ ফুটে এবার বলেই দাও।

পিয়া স্থীর চোখে চেয়ে থেকে আদির বুকে ধাক্কা দিল।আদিকে সরিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে মুচকি হাসল।আদি নিজেও মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে শব্দহীন হেসে বিছানায় গা এলালো।

___

দিনটা শক্রবার।সন্ধ্যার পরবর্তি প্রহর।নতুন প্রজেক্টের সফলতায় ছোট খাটো একটা পার্টি থ্রো করেছে অধির।বাড়ির ছেলে মেয়ে সহ কাছের কিছু ফ্রেন্ড উপস্থিত আছে।সবাই সবার মত ইনজয় করছে।আদি তখন স্নেহার সাথে কথা বলার ট্রাই করছিল।তখনই এন্ট্রি হল পিয়ার।গোল্ডেন কালারের ডিজাইনার শাড়িতে প্রথম যৌবন যেন ঠিকরে বের হচ্ছে।আদি কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ চোখে চেয়ে থাকল শুধু।আশে পাশে দৃষ্টি যেতেই দেখল কয় টা ছেলে রিতিমত চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে পিয়ার শরিরকে।আদির মেজাজ মুহূর্তেই আকাশ ছুঁলো।পিয়ার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে উঠল,

-এমন চুড়েলের মত সেজেছো কেন?জানো কেমন দেখতে লাগছে..?সত্যি বলছি কার্টুনের মত লাগছে তোমায়।তোমার চুল গুলো দেখো…।বাঁশ ঝাড়ের মত লাগছে দেখতে।চোখ দেখো,,,,মনে হচ্ছে দেড় দুইশো কিলো মাশকারা লাগিয়েছো।এমন মনে হচ্ছে কোনো চলতি ফিরতি পান্ডা আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।ঠোটের কথা আর কি বলবো..? মনে হচ্ছে এটা কোনো মানুষের ঠোট না,,,,তোতা পাখির ঠোট।আর তোমার এই পার্স…!!!এই পার্স না মানুষ স্বাধীনতার আগে ব্যবহার করতো।তুমি না চলতি ফিরতি পান্ডার মত দেখতে লাগছো।পান্ডাও তোমার থেকে বেটার।ট্রাস্ট মি…..

পিয়া কিছু বুঝতে না পেরে বোকা বোকা চোখে চেয়ে থাকলো আদির দিকে।আদি পিয়ার হাত ধরে একটা রুমে নিয়ে আসতেই হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো পিয়া।এতোক্ষনে কথাগুলো মাথায় ঢুকেছে তার।এই ছেলের সাহস কত!!!তাকে চলতি ফিরতি পান্ডা বলে..? পিয়া দু কদম এগিয়ে এসে আদির শার্টের কলার চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলে,

-কি বললে তুমি..? আমি পান্ডার মত দেখতে? আমার চুল বাঁশ ঝাড়ের মত ? আমার ঠোট তোতা পাখির মত? কোন এংগেল থেকে আমাকে পান্ডা মনে হয় তোমার? অসভ্য পোলা….

আদি মুচকি হেসে পিয়ার কোমরে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলে,

-কার এতো বড় সাহস আমার বউকে এসব বলার? এখনি তার গর্দান নিয়ে নিবো।তুমি শুধু তার নামটা আমায় বলো।এত বড় সাহস কোথায় পেল সে? আমার বউকে তো পুরো বম লাগছে দেখতে।কখন না জানি তার রুপে দম বন্ধ হয়ে মরে যায়।

পিয়া চোখ মুখ কুচকে বলে উঠল,

-একদম ঢং করবা না।তুমি নিজেই এগুলো বলেছো।ছাড়ো আমায়।দূরে যাও আমার থেকে…..

-উফফ বেবস,,,,তোমাকে এগুলো বলতে পারি আমি? তোমাকে শাড়িকে কতটা সুন্দর লাগছে আইডিয়া আছে তোমার? ওখানে সবক’টা ছেলে তোমার দিকে বিশ্রী নজরে তাকাচ্ছিল।সেজন্যেই তো এগুলো বললাম।যাতে ওদের নজর তোমার উপর থেকে সরে যায়।রাগ করেছো…?

পিয়া চোখ নামিয়ে নিয়ে ছোট্ট করে বলে উঠল,

-উঁহু….

আদি মুচকি হেসে পিয়াকে বুকে জড়িয়ে নিতেই পিয়া পরম যত্নে মাথা রাখল আদির বুকে।হৃদপিন্ডের ঢিপঢিপ আওয়াজটা গুনে গুনে পার করতে লাগল মধুময় মূহুর্ত গুলো।

__

নিচ থেকে মিউজিকের আওয়াজ আসছে।রোশনি মুখ ভার করে বসে আছে বিছানায়। ওর থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে দাড়িয়ে আছে অধির।রোশনি অধিরের থমথমে মুখটা দেখে নিয়ে আবারো মুখ খুলল,

-আর কত বার ক্ষমা চাইবো অধির?আমি জানি আমি অনেক বড় ভুল করেছি।এতো গুলো দিন তার শাস্তিও পেয়েছি।তারপরেও কেন আমাকে একটা বার সুযোগ দিচ্ছো না?আমি আর পারছি না অধির।তোমার এই দুরত্ব আমি আর মেনে নিতে পারছি না।আমার ভুলের পেছনে তোমার দোষও আছে অধির।তোমার কাছে বারবার জানতে চেয়েছি আয়াশের ব্যাপারে।কিন্তু তুমি আমায় কিছু বলো নি।ঠিম মত বাড়িতেও ফিরতে না।একটা বার ফোন পর্যন্ত দিতে না।আমি মেন্টালি সিক হয়ে পড়েছিলাম সেই সময়।অন্য দিকে দিদামের দেখানো ভিডিও ফুটেজ।যেখানে তুমি বলছিলে আমাদের মাঝে যে আসবে তাকেই তুমি শেষ করে দিবে।আমি আর কি করতাম তখন..?

এতোক্ষনে মুখ খুলল অধির,

-আমার প্রতি এতটুকুও বিশ্বাস ছিল না তোমার?দিদামের কথা বিশ্বাস হয়ে গেল আজানাক।ভিডিওতে আমি এক বারও বলেছি আমি আয়াশকে মেরে ফেলবো?আমি বলেছিলাম আমাদের মাঝে যে আসবে তাকে মেরে ফেলবো।অবশ্যই সেটা আয়াশ ছিল না।দিমাম ছিল।আমার প্রতি তোমার বিশ্বাস কোনো দিনই ছিল না রোশনি।তুমি আসলে আমাকে কখনো ভালোই বাসো নি।

অধির আর কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।অধির চলে যেতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল রোশনি।এতো বড় ভুল সে কি করে করল? কেন বিশ্বাস করল না অধিরকে? তাহলে আজ এই দিনের মুখোমুখি তাকে হতে হতো না।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here