শেষ বিকেলের আদর❤️শেষ পর্ব

1
7230

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
শেষ পর্ব

🌼
ঘুমের মাঝেও অনুভব হচ্ছে শরিরের উপর ভারি কিছু আষ্টেপৃষ্ঠে রয়েছে।দমটা বুঝি এই বেরিয়ে যাবে যাবে ভাব।পিয়া চট করে চোখ খুলে তাকালো।প্রতিদিনের মত আজও সেই চিরপরিচিত সেই মুখ।পিয়া নড়ে চড়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও লাভ হল না।সুঠামদেহি পুরুষের হাতের বাধন থেকে মুক্ত হওয়া তার সাধ্যে নেই।পিয়া ভুঁস করে নিশ্বাস ফেলে আদির গালে হাত রাখল।চেহারায় আগের সেই বাচ্চামোটা খুব একটা নজরে পড়ে না এখন।তাই বলে দুষ্টুমি হারিয়ে যায় নি।সেগুলো এখনো খুব যত্নেই আগলে রেখেছে আদি।ক্লিন শেইভ করে রাখা গাল গুলোতে এখন খোচা খোচা দাড়ির বহর।চোখে মুখে এখন ম্যাচিউরিটির ছাপ।তবে মাঝে মধ্যেই সেই আগেই আদির উপস্থিতি ঘটে।এই তো আদিয়ার জন্মের সকালের ঘটনা।পিয়ার যখন প্রসবব্যাথা শুরু হল তখন তাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটলো সবাই।আদির অবস্থা ছিল করুন।মনে হচ্ছিলো পিয়াকে নয় অপারেশন থিয়েটারে তাকে ঢুকানো হচ্ছে।ব্যাথাটা যেন তার নিজের হচ্ছে।ঘেমে নেয়ে বিশ্রী এক কান্ড।পিয়ার হাত ধরে ডাক্তারদের সাথে সেকি ঝগড়া!!কিছুতেই ভেতরে যেতে দেবে না সে।এদিকে পিয়া তখন ব্যাথায় কাতরাচ্ছে।একপর্যায়ে অস্থির পিয়া হুট করেই চড় বসালো আদির গালে।ডাক্তার হয়ত এমন দৃশ্য কখনোই দেখেনি।হা করে তাকিয়েছিল ওদের দিকে।বুঝায় যাচ্ছিলো তারা শক পেয়েছে।পিয়া ব্যাথা ট্যাথা ভুলে আদিকে দু চারবার ধমকা ধমকি করতেই পিয়ার হাত ছেড়েছিল আদি।যতোক্ষন অপারেশন চলেছে ততোক্ষন দরজার সামনেই পায়চারি করে গেছে বেচারা।এমনটাই শুনেছিল পিয়া।কিন্তু পরের দিনই পুরোনো আদির এন্ট্রি হল।শুরু হল তার জগৎ বিখ্যাত ফ্ল্যাটিং। সেটাও হসপিটালের নার্সের সাথেই। বেডে শুয়ে শুয়ে সেই দৃশ্যই আয়েশ করে দেখছিল পিয়া।আদির এসব ছেলেমানুষিতে এখন অনেকটাই অভস্থ্য সে।ব্যাপারটা এখন ইনজয় করে পিয়া।কেটে গেল বেশ কিছু সময়।আদির ফ্ল্যাটিং এখনো চলছে।ছেলেটার ধৈর্য আছে বলতে হবে।আরো কিছু সময় পার হতেই একজন নার্স এল পিয়াকে মেডিসিন দিতে।চিকন পাতলা দেখতে মেয়েটা পিয়াকে বালিশে হেলান দিয়ে বসিয়ে নির্দিষ্ট কয়েকটা ট্যাবলেট এগিয়ে দিল ।এরপর গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলল,

-অনুমতি থাকলে একটা প্রশ্ন করি ম্যাম?

-অনুমতি না দিলে বলবে না?

পিয়ার হাস্যজ্জল কথাতে হেসে ফেলল মেয়েটা।গ্লাসটা এগিয়ে দিতে দিতে বলল,

-আসলে দুদিন ধরে খেয়াল করছি স্যার মেয়েদের সাথে অনেক বেশি মজা করে কথা বলেন।ফ্ল্যাটিং টাইপ আরকি।মেয়েদের সাথে এতো হেসে হেসে কথা বলে আপনার খারাপ লাগে না?

পিয়া হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাস নিল।ওষুধগুলোকে পানির সাথে পেটে চালান করে দিয়ে পাশ ফিরে তাকালো।সাদা রঙের রকিং ক্রেডেলে ছোট্ট আদিয়া নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।এখনি চোখে মুখে আদির ছাপ স্পষ্ট।স্বভাবগুলোও যদি বাবার মতোই হয় তাহলে বাকি জিবনটা তেজপাতা হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই টুকু বাচ্চা একবার কাদঁতে শুরু করলে পুরো হসপিটাল মাথায় তুলে ফেলে।চোখ মুখ খিচে কান্না করতে করতে দম আটকে যাওয়ার যোগাড় হয়।জিদ ধরা সেই কান্না থামানোর সাধ্য কারো নেই।অথচ বাবা যখন কোলে নিয়ে গালে দুটো চুমু দিবে ব্যস সাথে সাথে কান্না উধাও।কান্না বলে যে পৃথিবীতে কোনো জিনিস আছে সেটা মনেই থাকবে না তখন।বাবার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে অদ্ভুুত ভঙ্গিতে ঠোট বাকাবে।এই টুকু মেয়ে এখনি বাপের ভক্ত হয়ে গেছে।ভবিষ্যতে এই মেয়ে যে বাপের সাথে মিলে তার জিবনটা ঝরঝরে করে ফেলবে সেটা এখনি টের পাচ্ছে পিয়া।পিয়া হাত বাড়িয়ে ঘুমন্ত আদিয়ার গালে হাত ছোঁয়ালো।আদিয়ার মুখে আদির চেহারার আদল মিলানোর চেষ্টা করতেই ভ্রু জোড়া কুচকে এল।চেহারার প্রায় এইটটি ফাইভ পার্সেন্টই বাপের মত দেখতে।একটু তো মায়ের সাথে মিল থাকতে পারতো!!মেয়েটাও বাপের মতোই বেঈমান।পিয়া ছোট্ট পাতলা কাঁথাটা টেনে দিয়ে আদিয়ার ছোট্ট ছোট্ট হাত পা গুলো ঢেকে দিয়ে বালিশে হেলান দিলো।সামনে দাড়ানো মেয়েটা মুচকি হেসে বলে উঠল,

-বেবি দেখতে পুরোটাই বাবার মত হয়েছে।তাই না ম্যাম?

পিয়া মুচকি হাসল।মেয়েটা বিকেলের ওষুধ গুলো গুছাতে গুছাতে আবারো বলে উঠল,

-বললেন না তো ম্যাম,,,স্যারের এসবে আপনার খারাপ লাগে কি না?

-তোমার নামটা যেন কি?

মেয়েটা সুন্দর করে হেসে বলল,

-মালতী।

-বাহ!! খুব সুন্দর নাম তো?

মেয়েটা বোধহয় লজ্জা পেল।লাজুক হেসে মাথা নিচু করতেই পিয়া বলে উঠল,

-প্রথম প্রথম জেলাস ফিল করতাম ওর এসব করাতে। রাগ হত ভিষন।তবে খারাপ কখনোই লাগে নি।ওর হাসি হয়ত পাবলিক লিমিটেড। কিন্তু কষ্ট!!!ওটা প্রাইভেট লিমিটেড।আনন্দটা সবার সামনে প্রকাশ করলেও কষ্টটা শুধু আমার সামনেই প্রকাশ করে।খুশিটা হয়ত সবার সাথে শেয়ার করে কিন্তু কষ্টটা শুধু আমার সাথেই। ওর সব সিক্রেট আমার কাছে প্রকাশিত।এমনকি সারা দিনে কোন মেয়েকে কি বলেছে,, মেয়েটা কেমন রিয়্যাক্ট করেছে সেই সব কিছুই আমাকে নিয়ম করে বলা ওর প্রতি রাতের কাজ।বলতে গেলে ব্যাপারটা এখন বেশ ইনজয় করি আমি।একদমই খারাপ লাগে না।

নার্সটা মুচকি হেসে প্রস্থান নিলো।খানিক বাদেই আদি এলো।ঘুমন্ত আদিয়ার কপালে ঠোট ছুইয়ে পিয়ার পাশে বসল।পিয়ার ডান হাতটা হাতের মুঠোই নিয়ে হাতের উল্টো পিঠে ঠোট ছোয়ালো।”

আদি ঘুমের মাঝে নড়ে চড়ে উঠতেই ভাবনার সুতো কাটল পিয়ার।এরপর হঠাৎই মনে পড়ল আদিয়ার কথা।তার যদি ভুলো মন না হয় তাহলে স্পষ্ট মনে আছে আদিয়া তাদের মাঝখানে ছিল।পিয়া সচেতন চোখে পুরো বিছানায় চোখ বুলিয়েও আদিয়ার খোজ পেল না।আদিকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করে ডাকল,

-আদি?এই আদি? উঠো।আদিয়া কোথায়? আদি শুনছো? আদিয়া নেই।

আদির ঘুম কাটতে এটুকুই যথেষ্ট ছিল।চট করে চোখ মেলে তাকিয়ে হুড়মুড় করে উঠে বসল।বিছানার ব্লাঙ্কেট সরিয়ে নড়িয়েও আদিয়াকে পাওয়া গেল না।পিয়া বিছানা ছেড়ে নেমে খাটের নিচ সহ পুরো রুম খুজেও পাওয়া গেল না ছোট্ট আদিয়াকে।দশ মাসের চোট্ট বাচ্চা রুম থেকে এভাবে কিভাবে উধাও হয়ে যায়!!আদি অস্থির চোখে খাটের নিচে ঝুকে আরো এক বার চোখ বুলিয়ে উঠে দাড়ালো।পিয়ার অস্থির মুখের দিকে চেয়ে বলল,

-হোয়ার ইজ মাই বেবি…?

পিয়া কিছু বলতে গিয়েও বলল না।হুড়মুড় করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।আদিও ছুটল পিয়ার পিছু পিছু।সিড়ি দিয়ে গটগট শব্দ তুলে এলোমেলো চুল নিয়ে বসার ঘর অবধি আসতেই আনোয়ারা চৌধুরি ভ্রু কুচকে তাকালেন ওদের দিকে। চোখের চশমাটা নাকের ডগা থেকে ঠেলে দিয়ে বলে উঠলেন,

-তোরা এভাবে কোথায় ছুটছিস?

বিধ্বস্ত আদি অস্থির গলায় জবাব দিল,

-আদিয়াকে পাচ্ছি না দাদি।কথা বলার সময় নেই।খুজতে হবে।

মিসেস আনোয়ারা কিছু বলবে তার আগেই সাদাদ আদিয়াকে কোলে নিয়ে বসার ঘরে এল।সাদাদের কোলে আদিয়াকে দেখে দেহে প্রান ফিরে পেল দুজনে।পিয়া স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লেও আদি চোখ ছোট ছোট করে সাদাদের সামনে গিয়ে দাড়ালো।সাদাদ বোকা বোকা চোখে তাকাতেই ডান কানে টান পড়ল।সাদাদ ‘উহ’ শব্দ করতেই মুখ খুলল আদি,

-এই পাজি!আদিয়াকে নিয়ে এসেছিস বলে নিবি না? ভয় পাইয়ে দিয়েছিস একদম।বজ্জাত পোলা।

সাদাদ ছোট্ট আদিয়াকে আরো একটু শক্ত করে ধরে ঠোট ফুলিয়ে বলল,

-কান ছাড়ো চাচ্চু।লাগছে তো।

-লাগার জন্যেই তো ধরেছি।তোর কান আজ আমি ছিড়েই ফেলবো বেয়াদব।

সাদাদ হঠাৎই কুটিল হাসল।আদি কিছু না বুঝে ভ্রু কুচকে তাকাতেই সাদাদ অনেকটা ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

-ঠিক আছে ছিড়ে ফেলো।তুমি আমার কান না ছাড়লে আমিও ছোট আম্মুকে বলে দিবো যে বেলা আন্টির নাম্বার চেয়েছিলে তুমি আমার কাছে।এটা শুনে ছোট্ট আম্মু কি তোমার কান আস্ত রাখবে?বলো বলো….।

আদির কুচকানো ভ্রু জোড়া আরো কিছুটা কুচকে গেল।এই ছেলে যে তার মতই পাজি কি করে ভুলে গেল সে!।দেখে কে বলবে এটা সাহিলের ছেলে!কথা বার্তা থেকে শুরু করে চাল চলন সবকিছুতেই আদির কার্বন কপি।বেলা হল নাতাশার খালাতো বোন।সাদাদের বার্থ ডে তেই পরিচয় হয়েছিল।না হয় সাদাদকে বলেছিল নাম্বার এনে দিতে তাই বলে এটা নিয়ে তাকে ব্লাকমেইল করতে হবে?পাজি কোথাকার!! ব্যাদ্দোব পোলা।

___

‘বৃষ্টি ভেজা বর্ষার দুপুর, ভুনা খিচুড়িতে মন মাতুক’ টাইপ ফিল নিয়ে বিছানায় পা গুটিয়ে বসে আছে নাতাশা।যদিও এখন দুপুর না।শেষ বিকেল চলছে।তাতে কি? ফিলটাই আসল।বাইরে তুমুল বর্ষন। যাকে বলে দুনিয়া অন্ধকার করে দেওয়া বৃষ্টি।নাতাশা সরে গিয়ে জানালা ঘেষে বসল।থাই গ্লাসের কাচে বৃষ্টির পানি চুইয়ে চুইয়ে গড়িয়ে পড়ছে।বাইরে বিদ্যুৎ চমকানির ঝলক।নাতাশা জানালার থাই গ্লাস ঠেলে সরিয়ে দিতেই সারা শরিরে আচড়ে পড়ল মেঘকন্যার অভিমানি কান্না।চোখে মুখে ঠান্ডা পানির ছাঁট পড়তেই শরির কেপে উঠল।চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ঘ্রান নেওয়ার চেষ্টা করেও ঘ্রান পাওয়া গেল না।এমন অনেক গল্প পড়েছে যেখানে নায়ক বা নায়িকারা বৃষ্টির ঘ্রান পায়।কই সে তো পাচ্ছে না।ওদের কি স্পেশাল নাক নাকি!!!নাতাশা ঠোট ফুলিয়ে চোখ মেলে তাকালো।সাহিল তখন সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু করছিল।নাতাশার দিকে নজর দিতেই ভ্রু কুচকে গেল তার।চোয়াল শক্ত করে ধমকে উঠতেই মুখ কাচুমাচু করে তাকালো নাতাশা।নাতাশাকে আগের মতই থম মেরে বসে থাকতে দেখে দ্বিতীয় বারের মত ধমকে উঠল সাহিল,

-জানালা বন্ধ করতে বলেছি।এক বাচ্চার মা হয়ে গেছো অথচ এখনো বাচ্চামো গেল না।ভিজে যাচ্ছো সেদিকে খেয়াল আছে? জ্বর টর বাঁধালে তো সেই আমাকেই অফিস টফিস বাদ দিয়ে সেবা করতে হবে।আমার আপাততো সেবা টেবা করার সময় নেই।অফিসে প্রচুর কাজ।এখনো থম মেরে বসে আছো কেন? জানালা বন্ধ করো।

নাতাশা কুটিল চোখে চেয়ে জানালায় গ্লাস টানল।ততোক্ষনে মুখ সহ শরিরের অনেকখানি অংশ্যই ভিজে গেছে। সাহিল কোল থেকে ল্যাপটপ নামিয়ে তোয়ালে আনল।নাতাশাকে টেনে মুখ হাত পা মুছে দিয়ে সরু চোখে তাকালো,

-জামা ভিজে গেছে।এখুনি চেন্জ্ঞ করবে।যাও।আমি দ্বিতীয় বার বলতে চাচ্ছি না নাতাশা।

নাতাশা চোখ ছোট ছোট করে কুটিল চোখে তাকালো।আজকাল সুযোগ পেলেই ব্যাটা খালি ধমক দেয়।নাতাশা কিছু বলবে তার আগেই ছুটতে ছুটতে সাদাদ এল।এক লাফে বিছানায় উঠে মায়ের পাশে বসল।বাবার দিকে এক পলক তাকিয়ে মায়ের দিকে ফিরে বসে বলল,

-আম্মু চলো না বৃষ্টিতে ভিজি।খুব মজা হবে।

ছেলের কথায় চোখ মুখ চিকচিক করে উঠল নাতাশার।তবে সেই খুশি বেশিক্ষন টিকল না।তার আগেই সাহিল ধমকে উঠল,

-এতোক্ষন একজন ছিল এখন আরেকজন এসে হাজির হয়েছে।এতো কেন বৃষ্টিতে ভিজতে হবে? বৃষ্টির পানি কি পরিমান ঠান্ডা ধারনা আছে? ‘আসছে আম্মু চলো না ভিজি।মজা হবে….’।পরে যখন জ্বর বাধিয়ে বিছানায় পড়ে থাকবা তখন মজা টের পাবা।যাও গিয়ে বোনের সাথে খেলো।

সাদাদ চোখ মুখ কুচকে বিছানা ছেড়ে নামলো।রুম থেকে চলে যেতে যেতে বলল,

-ভিজার কথা বললেই খালি ধমকায়।যাও তোমাদের সাথে ভিজবোই না।ছোট চাচ্চু ঠিকই বলে,,,তুমি একটা হুনো বিড়াল।

-এই কি বললি? পালাস কেন? আজ তোর খবর আছে।দাড়া বলতেছি…।

সাদাদকে আবার পায় কে!এক ছুটে রুম থেকে হাওয়া।সাহিল চোখ মুখ কুচকে নাতাশার দিকে তাকাতেই দেখল নাতাশার ঠোটের কোনে দুষ্টু হাসি।সাহিল সরু চোখে তাকিয়ে বলল,

-এখন তো হাসবাই।ছেলেতো আমাকে বিড়াল বলেছে।তোমাকে তো আর বলেনি।

সাহিলের কথার মাঝেই ফোড়ন কাটল নাতাশা,

-উঁহু,,,বিড়াল না।হুনো বিড়াল।

সাহিল চোখ রাঙিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই জামার কলারে টান পড়ল সাহিলের।নাতাশা কলার ধরে টান দিতেই ঝুকে গেল কিছুটা।নাতাশা মুখটা আরো একটু এগিয়ে নিয়ে বলল,

-এই যে মিষ্টার সাহিল চৌধুরি?সারা দিন কাজ আর ধমকের উপরে থাকলে চলবে? ঘরে যে সুন্দরি বউ আছে তার দিকেও তো নজর দিতে হবে।আমি যদি আগের রুপে ফিরে আসি তুমি কিন্তু মুশকিলে পড়ে যাবা।এখন কোনো প্রশ্ন ছাড়া আমার সাথে ছাদে যাবা এবং আমার সাথে ভিজবা।একটা কথা বলবা তো একদম মাথা ফাটিয়ে দিবো।

____

বিছানা জুড়ে এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে রিয়া।চোখ দুটো শূন্যে।মনটা ভালো নেই তার।শাশুড়ি মায়ের সাথে আড্ডা দিয়ে ঘন্টা খানিক হল রুমে এসেছে।বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে অথচ জয়ের খোজ নেই।সময়ের সাথে সাথে বৃষ্টির প্রখরতা বাড়ছে।রিয়া টেডি জড়িয়ে চোখ বুজলো।অকারনেই কান্না পাচ্ছে তার।এই মন খারাপের কারন তার জানা নেই।হুটহাট মন খারাপে ভিষন বিরক্ত রিয়া।রিয়া অনুভব করল বন্ধ চোখের কোন বেয়ে এক ফোটা গরম জল গড়িয়ে পড়ল।মন খারাপের কারন খুজতে খুজতেই তলিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে। কতোক্ষন ঘুমিয়েছে ঠিক নেই।ঘুম ভাঙল কপালে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শে। রিয়া কেপে উঠল।চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আবিষ্কার করল জয়কে।জয় দ্বিতীয় বারের মত কপালে ঠোট ছোঁয়াতেই ঠোট গোল করে হাসল রিয়া।কাঁথা উঠিয়ে হাত বাড়াতেই চট করে কাঁথার মধ্যে ঢুকে গেল জয়।জয়ের বুকে মিশে যেতেই সারা শরির শিরশির করে কেঁপে উঠল রিয়ার।বরফের মত ঠান্ডা জয়ের শরির।তবুও ছাড়ল না রিয়া।জয়ের বুকেই গুটিশুটি মেরে পড়ে রইল।জয় রিয়াকে জড়িয়ে রিয়ার সবটুকু উষ্ণতা শুষে নেওয়ার সর্বান্তক চেষ্টা করে বলল,

-মা বলল রাতে কিছুই খাই নাই।ক্ষুদা লাগে নাই?

-উঁহু,,,খেতে ইচ্ছে করছে না।

-এটা কেমন কথা?খেতে ইচ্ছে করবে না কেন? আচ্ছা বলো কি খাবে?আমি নিজে হাতে তোমার জন্য রান্না করবো

-আমার কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না।আচ্ছা শুনো না…

-হুম…

-ভাবি ফোন করেছিল।

-কি বলল?

-আমাদের যেতে বলেছে।অনেক দিন যাওয়া হয়না।চলো না একটু ঘুরে আসি।সাদাদ,আদিয়া ওদের একটু দেখে আসি।

-আচ্ছা যাবো।তবে বেশি দিন থাকতে পারবো না।দুদিনের বেশি ছুটি পাওয়া যাবে না।দুদিন থেকেই চলে আসতে হবে।একা থাকার প্ল্যান থাকলে এখুনি মাথা থেকে বের করে দাও।তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসবে না।সো আমার সাথে যাবে এবং আমার সাথেই আসবে।যদি রাজি থাকো তবেই নিয়ে যাবো।নয়ত নয়।

রিয়া জয়ের থুতনিতে ছোট্ট করে কামড় দিয়ে বলল,

-তোমাকে ছেড়ে আমিও থাকবো নাকি!তুমি জানো না আমি জামাই পাগল!

রিয়ার কথায় হেসে ফেলল জয়।রিয়াকে আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে কপালে ঠোট ছোয়ালো।বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে মুখ খুলল রিয়া,

-জয়?

-হু…

-চলো না আমরা বেবি নিই।চার বছর হয়ে গেছে আমাদের বিয়ের।এখন তো আমি বড় হয়ে গেছি।নাতাশা আপু,দিয়া আপু এমনকি পিয়া ভাবিরও বেবি হয়ে গেছে।রোশনি ভাবিও তো প্রেগন্যান্ট।বাড়িতে মা আর আমি সারাদিন একা একা বোর হই।তুমিও সারাদিন অফিসে থাকো।একটা বেবি থাকলে চট করেই সময় কেটে যাবে।চলো না বেবি নিই।

জয় হতাশ নিশ্বাস ছাড়ল।কাতর গলায় বলল,

-তুমি এখনো বেবি নেওয়ার মত স্টেবল না রিয়া।প্রেগনেন্সিতে কত রকমের ক্রাইসেসি থাকে।যদি তোমার কিছু হয়ে যায়? তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না রিয়া।তোমাকে আমি হারাতে পারবো না।আমরা নাহয় অ্যাডাপ্ট করে নিবো।

রিয়া মাথা তুলে তাকালো।কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

-অ্যাডাপ্ট কেন করতে হবে? তুমি কি পারবা না আমাকে বেবি দিতে?

জয় নাক ছিটকে তাকালো।বলল,

-ছিঃ রিয়া।কিসব বলছো?

-ঠিকই বলছি।আমার বেবি চাই মানে চাই।তুমি এখনি আমাকে বেবি দিবা।এখনি মানে এখুনি।বলো দিবা…।

জয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকাল,

-এভাবে কিভাবে বেবি দিবো ?

-আমি কিছু জানি না।আমার বেবি চাই।এবং এখনি।বেবি দাও আমায়।

-এভাবে বললেই কি বেবি হয়ে যায় নাকি!এর জন্যে অনেক প্রসেসিং করা লাগে।

-ঠিক আছে।যা করার সব করো। তবুও আমার বেবি লাগবে।বুঝেছো তুমি?

জয় হঠাৎই রিয়ার দিকে ঝুকে গেল।ডান হাতের আঙুল রিয়ার পাতলা ঠোট জোড়ার চারপাশে নাড়াতেই রিয়া থতমত খেয়ে গেল।শুকনো ঢোক গিলে বলল,

-কি করছো?

জয় বাকা হেসে বলল,

-বেবি তো এমনি এমনি হয় না সোনা।অনেক কিছু করতে হয়।তোমার যখন এতোটাই শখ হয়েছে তখন বেবি তো নিতেই হবে।আমার পুরুষত্বের উপর প্রশ্ন তুলেছো।এবার তো বেবি নিয়েই ছাড়বো।

রিয়া শুকনো ঢোক গিলল।এই ছেলের কথা বার্তা সুবিধার ঠেকছে না।গিরগিটির মত হুট করেই রঙ বদলে ফেলা ভালো লক্ষন নয়।রিয়া জিব্বাহ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে নিয়ে তুতলে যাওয়া গলায় বলল,

-আমি বেবি নিবো না।তুমি সরে যাও।

জয় ভ্রু উচিয়ে বলল,

-কেন? একটু আগেই না বেবি নেওয়ার জন্যে পাগল হয়ে যাচ্ছিলে? এখন কি হল?

-তোমাকে দেখে ভয় পাচ্ছি আমি।আমার বেবি লাগবে না।আমি আর কখনও বেবির কথা বলবো না।সত্যি বলছি।

জয় আবারো বাকা হাসল।রিয়ার থুতনিতে ছোট্ট করে কামড় বসিয়ে বলল,

-কিন্তু আমার মাইন্ড তো ডিসট্র্যাক হয়ে গেছে সোনা।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বেবি নিবো।এখন তো আর সিদ্ধান্ত পাল্টানো যাবে না।

রিয়া কাঁদোকাঁদো মুখ করে তাকিয়েও লাভ হল না।ততোক্ষনে জয় রিয়ার গলায় মুখ গুজেছে।রিয়া চোখ বুজে জয়ের চুল খামচে ধরে আটকানোর চেষ্টা করল।লাভ হল না।জয় নিজের কাজে মত্ত।রিয়া বুঝল এই ছেলেকে এখন আটকানো সম্ভব নয়।জয়ের দেওয়া গভির ছোঁয়াগুলো সহ্য করার প্রাণপণ চেষ্টা করেও বিশেষ লাভ হল না।ক্ষনে ক্ষনেই কেপে উঠল নারী সত্তা।

___

সময়টা বোধহয় আজ থেকে চার বছর আগের।ঠিক মনে পড়ছে না রোশনির।কোনো এক সন্ধ্যার প্রহর।রোশনি তখন দিয়ার সাথে ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত।দিয়ার ছেলে হয়েছে মাস চারেক হল।সামনে মাসেই দেশে আসবে বাবুকে নিয়ে।বাবুর জন্যে আলমারি ভর্তি জিনিস কিনে রেখেছে রোশনি আর অধির।বাড়িতে বাবুর প্রথম আগমন বলে কথা।তার উপর চৌধুরি পরিবারের প্রথম বেবি। রোশনি যখন কথার ঝুড়ি খুলে বসেছে তখনই পেটে কারো স্পর্শ পেল রোশনি।ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোর আগেই কাধে কারো গরম নিশ্বাস পড়ল।মানুষটাকে চিনতে এক মুহূর্তও দেরি হল না রোশনির।অধির রোশনির খোলা কাধে ঠোট ছোয়াতেই নড়ে উঠল রোশনি।অধিরের থেকে নিজেকে সরানোর চেষ্টা করতেই আরো শক্ত করে চেপে ধরল অধির।হাতের বাধন শক্ত করে ঘাড়ে ফু দিলো।রোশনি ঘাড় ঘুরিয়ে করুন চোখে তাকালো।ইশারাই সরে যেতে বললেও অধিরের মধ্যে সরার কোনো লক্ষন দেখা গেল না।রোশনি ছোট্ট শ্বাস টেনে ফোনে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করল।তবে অধিরের অত্যাচারে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।কথা বলতে গেলেই কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।এর মধ্যে দিয়াও বার কয়েক প্রশ্ন করে বসেছে,,”তুই হঠাৎ করে এভাবে কেন কথা বলছিস?”প্রশ্ন করাটা স্বাভাবিক।আগামাথা হীন কথা বললে এমন প্রশ্ন তো করবেই।রোশনি মুখ কাচুমাচু করে তাকাতেই মুচকি হাসল অধির।বিষয়টা বেশ ইনজয় করছে সে।রোশনিকে আরো একটু জ্বালাতে রোশনির ঘাড়ে অনবরত ঠোট ছোয়াতে লাগল অধির।অধিরের এমন কান্ডে দম আটকে খিচে দাড়িয়ে রইল রোশনি।অধিরকে ঠেলে সরানোর মত শক্তিটুকুও কোথাও যেন হারিয়ে গেল।অধির হাতের ছোয়া গাঢ় করতেই নিশ্বাস আটকে আসল রোশনির।ফোনের ওপাশে দিয়ার অনবরত বলতে থাকা হ্যালো হ্যালো শব্দ শোনা যাচ্ছে।উত্তর দেওয়ার মত শক্তিটুকুও নেই আপাততো রোশনির।রোশনি জোরে জোরে নিশ্বাস নিতেই অধির রোশনির হাত থেকে ফোন নিয়ে লাইন কেটে ছুড়ে মারল দূরে।সোফার কোরো এক কোনায় গিয়ে আচড়ে পড়ল ফোনটা।অধির হুট করেই রোশনিকে কোলে তুলে নিলো।সন্ধ্যাটাকে আরো একটু মোহনীয় করতে পা বাড়ালো বিছানার দিকে।

কথাটা মনে পড়তেই চোখ ভরে এল রোশনির।বাইরে তখনও দুনিয়া অন্ধকার করা বৃষ্টি।আকাশের সাথে পাল্লা দিয়ে রোশনির কাদতে ইচ্ছে করছে।আজ কাল হঠাৎ হঠাৎই মুড সুয়িং হচ্ছে।অকারনেই অধিরের উপর প্রচন্ড রাগে মাথা ফেটে যায়।হাত পা ছড়িয়ে কান্না পায়।প্রেগনেন্সিতে এগুলো নরমাল।কিন্তু সমস্যা হল কোনো কিছুকেই নরমালি নেওয়া যাচ্ছে না। এই তো সপ্তাহ খানিক আগের ঘটনা।হুট করেই শখ হল শাড়ি পড়বে।শাড়ি পড়তে গিয়ে বাধল আরেক বিপত্তি। আলমারি ভর্তি শাড়ি অথচ একটা শাড়িও পছন্দ হচ্ছে না। সব গুলোই কেমন ক্ষ্যাত লাগছে দেখতে।অথচ মাস তিনেক আগে নিজেই পছন্দ করে কিনেছিল এগুলো।রোশনি শব্দ করে আলমারির দরজা লাগিয়ে পা বাড়াল পিয়ার রুমে।পিয়ার কাছে গিয়েও বিশেষ লাভ হল না।বরং রাগের পরিধিটা হু হু করে বেড়ে গেল। সারা ঘর খুজেও শাড়ির ছিটে ফোটাও চোখে পড়ল না রোশনির।ঘরে শাড়ি কেন থাকবে না?এক জন মেয়ে হিসেবে অবশ্যই তার শাড়ি থাকা উচিত।পড়ুক বা না পড়ুক,,,শাড়ি থাকতে হবে এটাই মূল।পিয়াকে অযথায় কয়েকটা ঝাড়ি মেরে গটগট আওয়াজ তুলে ভারি পেট নিয়ে রুম ত্যাগ করল রোশনি।বেচারি পিয়া দুঃখ দুঃখ মুখ করে সবটা হজম করল।সিদ্ধান্ত নিলো আজই আলমারি ভর্তি শাড়ি কিনবে সে।একটা মেয়ে হয়ে তার আলমারিতে শাড়ি না থাকাটা সত্যিই অনেক বড় পাপ।জেনে শুনে কিছুতেই এই পাপ করা যাবে না।কিছুতেই না।

পিয়ার রুম থেকে বের হয়ে সোজা হানা দিয়েছে নাতাশার রুমে।নাতাশা আলমারি থেকে একটার পর একটা শাড়ি বের করে করে রোশনির সামনে ধরছে।আপাততো এটাই তার কাজ।এবং বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে শাড়ি পছন্দের কাজ করছে রোশনি।এই নিয়ে প্রায় পনেরোটার মত শাড়ি দেখাল নাতাশা।এখনো অবধি একটাও পছন্দ হয় নি তার। নাতাশা করুন চোখে আলমারিতে উঁকি দিলো।স্টকে আর বেশি শাড়ি নেই।নাতাশা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে,,,বাকি তিনটার মধ্যেও যদি পছন্দ না হয় তাহলে কান্না করে দিবে সে।অবশেষে সব শাড়ি দেখানোর পরেও পছন্দ হল না রোশনির।নাতাশার অবস্থা এমন যে সত্যি সত্যিই কিছুক্ষন বাদে সে কান্না করে দিবে।রোশনি আলমারির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে খাট থেকে নেমে এল।আলমারিতে অবশিষ্ট হলুদ রঙের শাড়িটা বের করে হাতে নিতেই ঠোটের কোনে হাসি ফুটল।শাড়িটাকে উল্টে পাল্টে দেখে নিয়ে মুহুর্তেই সরু চোখে তাকালো রোশনি,

-এই সুন্দর শাড়িটা আগে দেখাও নাই কেন? তুমি ইচ্ছে করে এটা দেখাতে চাও নাই তাই না? কুটনি বেডি…..

রোশনি মুখ ঝামটা মেরে শাড়ি নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই ঠোট উল্টে তাকালো নাতাশা।এই শাড়িটা দেখেই কিছুদিন আগে রোশনি বলেছিল পুরো সরিষা ক্ষেতের মত দেখতে লাগছে।জিবন্ত সরিষা ক্ষেত।আরো কত কি।সেজন্য ইচ্ছে করেই শাড়িটা দেখায় নি নাতাশা।অথচ আজ নাকি তার এই শাড়িটায় পছন্দ হয়েছে!!নাতাশার কান্না পাচ্ছে।দিন রাত এক করে হাত পা ছড়িয়ে কান্না পাচ্ছে।দুঃখে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

রুমে এসে বেশ খুশি মনেই শাড়িটা পড়ে নিল রোশনি।শাড়ি পড়া শেষ করে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়াতেই হুট করে মেজাজ খিচে গেল।সেই সাথে কান্নাও পেলো।পেটটা শাড়ির উপর থেকে পাহারের মত উচু হয়ে আছে।নিজের কাছেই নিজেকে পান্ডা মনে হচ্ছে।ছিঃ কি বিদঘুটে দেখাচ্ছে তাকে।রোশনি চট করে শাড়ি খুলে দূরে ছুড়ে মারল।মনে মনে ঠিক করল জিবনে কখনোই আর শাড়ি পড়বে না সে।সেদিন সামান্য এই বিষয় নিয়েই সারা রাত কেদেছে রোশনি।বেচারা অধির হাজার চেষ্টা করেও সেদিন রোশনির কান্না থামাতে পারে নি।করুন চোখে শুধু রোশনির মুখের দিকে চেয়েছিল।
এদিকে দিনে কত বার যে তার নামে শাশুড়ি মায়ের কাছে বিচার নিয়ে যায় তার ইয়ত্তা নেই।অধিরের এখন আফসোস হয়। ভিষন আফসোস হয়।মা কেন রোশনিকে মেনে নিল!!না মানলে তো আর বিচার দিতে পারতো না তার নামে।এদিকে দাদি তো আছেই।সব মিলিয়ে বলতে গেলে মোটামুটি রকমের তেজপাতা হয়ে গেছে অধিরের জিবন।অথচ আজ অবধি মুখ থেকে একটা “উঁহ” শব্দ পর্যন্ত বের হয় নি অধিরের।

হঠাৎ কারো উপস্থিতিতে ঘোর কাটল রোশনির।বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছিল রোশনি।বৃষ্টি থেমেছে ঘন্টা খানিক হল।বাতাসে ঠান্ডার প্রকোপ।লোম দাড়িয়ে যাওয়ার মত ঠান্ডা অথচ পাতলা ফিনফিনে শাড়ি জড়িয়ে নির্বিকার দাড়িয়ে আছে রোশনি।সেদিনের প্রতিজ্ঞাটা বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারে নি রোশনি।দুদিন পরেই হুট করে আবারো ইচ্ছে হল গায়ে শাড়ি জড়াতে।এরপর থেকে প্রতিদিনই শাড়িতে কাটছে দিন রাত।রোশনি অধিরের দিকে ফিরে তাকাতেই কালো চাদরে ঢেকে দিল রোশনির শরির।সামনের চুল গুলোকে কানের পাশে গুজে দিতে দিকে বলল,

-এই ঠান্ডার মধ্যে চাদর না নিয়ে রুম থেকে বেরিয়েছো কেন? এতো কেয়ারলেস হলে হয় সুইটহার্ট? তুমি তো এখন একা নও।তোমার ভেতরে একজনের অস্তিত্ব আছে তার জন্যে হলেও তো নিজের দিকে একটু খেয়াল রাখবে। আমাকেও অফিস ছেড়ে বাড়িতে থাকতে দাও না।অথচ নিজের খেয়ালটাও ঠিক মত রাখো না।কাল থেকে অফিস টফিস সব বাদ।যতোই রাগ দেখাও।আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।

রোশনিকে নিশ্চুপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল অধির,

-কি হয়েছে আমার প্রিন্সেসের আম্মুর? মন খারাপ?

রোশনির উত্তরের অপেক্ষা না করেই অধির বলে উঠল,

-তোমার জন্য আকাশ হবো মন খারাপের দিনে,,,খুব ইচ্ছে হলে জ্যোৎস্না দেবো সুখের দামে কিনে।

অধিরের কথা শেষ হতেই রোশনি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বলে উঠল,

-ভালবাসি।

অধির থমকে তাকালো।অস্থির দৃষ্টি স্থীর হল।পরমুহূর্তেই ঠোটের কোনে ফুটে উঠল তৃপ্তির হাসি।হাত বাড়িয়ে রোশনিকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আবন্ধ করল বাহুডোরে। রোশনি অধিরের প্রশস্ত বুকে মুখ ঘষে ফুপিয়ে উঠল।অধিরের কপাল কুচকে গেল।রোশনিকে নিজের থেকে ছাড়াতে চেয়েও পারল না।রোশনি শক্ত করে মিশে রইল বুকের সাথে।অধির রোশনির মাথায় হাত রাখল।নরম গলায় বলল,

-কি হয়েছে সুইটহার্ট?কাদছো কেন?আমার কোনো কথায় কষ্ট পেয়েছো?আই এম সরি সুইটহার্ট। প্লিজ কান্না করো না।আমি সহ্য করতে পারি না তোমার কান্না।

রোশনির কান্না থামার পরিবর্তে আরো বাড়লো।অধিরের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল।অস্থির গলায় প্রশ্ন করল

-আমার চিন্তা হচ্ছে সুইটহার্ট। প্লিজ কান্না থামাও।

রোশনি ঠোট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো।তবুও মাঝে মধ্যেই ফুপিয়ে উঠছে।রোশনি ফুপাতে ফুপাতেই বলল,

-আমি তোমাকে অনেক জ্বালায় তাই না? অনেক কষ্ট দিই? তুমি আমার উপর বিরক্ত হয়ে গেছো তাই না? আমার না আজ কাল হুট করেই রাগ উঠে যায়। কান্না পেয়ে যায়।বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে এগুলো করি না।তুমি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।

অধিরের ঠোটের কোনে হাসি ফুটল।শব্দহীন সেই হাসি অন্ধকারেই মিলিয়ে গেল।আদুরে গলায় বলল

-হুশশশ,,,,,এসব ভেবে কাঁদছো?আমি জানি সুইটহার্ট তুমি এগুলো ইচ্ছে করে করো না।প্রেগনেন্সিতে মুড সুয়িং হয় এতে কান্না করার কি আছে!!কে বলল আমি তোমার উপর বিরক্ত হয়ে গেছি? আমি তো এগুলো ইনজয় করি। বাবা হওয়ার মত খুশির নিউজ দ্বিতীয়টা নেই সুইটহার্ট । তুমি জানো না আমি ঠিক কতোটা খুশি।এখন কান্না বন্ধ করো তো।নয়ত এখানে কিন্তু ভূত আছে।কান্না করে ওদের ডিস্টার্ব করলে কিন্তু ঘাড় মটকে দিবে।

রোশনি ভেজা চোখে অধিরের দিকে মাথা তুলে তাকাল।ঠোট ফুলিয়ে বলল,

-ভূত টুত হয় না আমি জানি এটা।তুমি অযথা আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছো।

অধির ভ্রু উচিয়ে বলল,

-কে বলেছে ভূত হয় না?তুমি জানো না,,, যারা অসম্পূর্ণ ইচ্ছে রেখে মরে যায় তারা ভূত হয়ে যায়।

-একদম মিথ্যে কথা।এমন কিছুই হয় না।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন বাংলাদেশ যেন সোনার বাংলা হয়।সেটা তো হয় নি।কই বঙ্গবন্ধু তো ভূত হয়ে ফিরে আসেন নি।মাইকেল জ্যাকসন দেড়শো বছর বাচতে চেয়েছিলেন।কিন্তু মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সেই মারা গেলেন।উনি তো ভূত হয়ে ফিরে আসেন নি।তাহলে কি এই ভূতটার অসম্পূর্ণ ইচ্ছেটা এর থেকেও বড় ছিল?মিথ্যেবাদী একটা।

রোশনিকে ভ্রু কুচকে তাকাতে দেখে হাসার চেষ্টা করল অধির।বাম হাতের আঙুল দিয়ে ভ্রু চুলকে বলল,

-মিথ্যে বলাটা একটা আর্ট বুঝেছো? সবার দ্বারা মিথ্যে বলা সম্ভব নয়।আর তুমি কি জানো,,,, মিথ্যে কথা দিনের মধ্যে চৌদ্দ বার বলা যায়।

রোশনি চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই মুখে আঙুল দিল অধির।আজে বাজে কথা বলে বউকে রাঙিয়ে দেওয়া উচিত হবে না।রোশনি আবারো অধিরের বুকে মাথা রাখল।বেশ কিছুক্ষন কাটার পর রোশনি ভয় জড়ানো গলায় বলে উঠল,

-আমার ভয় হয় অধির।যদি ডেলিভারির সময় আমি মরে যায়!!আমি তোমার সাথে আরো অনেক দিন বাচতে চায় অধির।আরো অনেক বছর বাচতে চায়।

কথাটা বলতে বলতেই ফুপিয় কেদে উঠল রোশনি।রোশনির মাথায় হাত বুলিয়ে গোপনে দির্ঘশ্বাস ফেলল অধির।ভয় তো তারও হয়।রাতে ঘুম আসে না শুধু এই চিন্তাটার জন্যেই।তবে আল্লাহর উপর তার পুরো বিশ্বাস আছে।আল্লাহ তার বান্দাকে কখনোই নিরাশ করেন না।অধির আরো একবার গোপনে দির্ঘশ্বাস ফেলে নরম গলায় বলে উঠল,

-জানো আমি যখন ছোট ছিলাম তখন কেউ যদি প্রশ্ন করতো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে? তখন আমি না ভেবেই জবাব দিতাম আমার মা।ছোট বেলায় মা ই ছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।দাদির কাছে শুনেছিলাম আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মা প্রায় মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছিল।টানা তিন দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিল মা।আমাকে,, বাবাকে একা করে চলে যায় নি মা।আল্লাহর পরে একমাত্র শক্তিশালী হয় মা।আমি জানি আমার রোশনি দূর্বল মা নয়।সে কিছুতেই হারতে পারে না।তোমাকে বলেছিলাম না সুইটহার্ট ,,,,এতো সহজে আমার থেকে তোমার মুক্তি নেই।তাহলে কিভাবে ভাবছো এতো তাড়াতাড়ি তোমাকে হারিয়ে যেতে দিবো।শক্ত করে ধরে রাখবো তোমায়।তবুও যদি তুমি হারিয়ে যাও,,, তোমার সাথে সাথে আমিও হারিয়ে যাবো তোমার হাত ধরে।এতো সহজে তোমার মুক্তি নেই আমার থেকে সুইটহার্ট।এবার কান্না থামাও।অনেক হয়েছে কান্না।

রোশনি কান্না থামিয়ে নিজেকে সামলালো।অধির হুট করেই রোশনিকে কোলে তুলে নিল ।রোশনি দুহাতে শক্ত করে গলা জড়িয়ে মাথা রাখল অধিরের প্রশস্ত বুকে।এই মানুষটাকে একা করে চলে যাওয়ার সাহস তার নেই।আরো অনেক অনেক বছর বাঁচতে চায় এই পুরুষটার সাথে।হাতে হাত রেখে পাড়ি দিতে চায় অনেকটা পথ।অনেকগুলো ভোর।অভিমানের পাতা মেলে অপেক্ষা করতে চাই শেষ বিকেল অবধি।সন্ধ্যা নামার আগে শেষ বিকেলের আদরে জড়িয়ে নিতে চায় এই পুরুষটাকে।অধির রোশনির কপালে ঠোট ছুঁইয়ে পা বাড়ালো রুমের দিকে।হঠাৎই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামলো।বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে গেয়ে উঠল অধির,

“aa tujhe in bahon mein bharke
আয় তোকে এই বুকে জড়িয়ে নিয়ে

aur bhi kar loon main kareeb
আরো আপন করে নিবো

tu juda ho to lage hai
তুই দূরে থাকলে তো মনে হয়

aata jata har pal ajeeb
প্রতিটা মুহূর্ত আজব

is jahan mein aur na hoga
এই দুনিয়াতে আর কেউ নেই

mujhsa koi bhi kushnaseeb
আমার চেয়ে সৌভাগ্যবান

tune mujhko dil diya hai
তুই আমাকে হৃদয় দিয়েছিস

main hoon tere sabse kareeb
আমি তোর সবথেকে আপন

tere bina na saans loo
তোকে ছাড়া নিশ্বাস নিবো না

tere bina na main jeu
তোকে ছাড়া আমি বাঁচবোনা

tere bina na ek pal bhi
তোকে ছাড়া এক মুহূর্তও না

reh saku….. reh saku
থাকতে পারি…..থাকতে পারি

tu humsafar…tu humkadam
তুই সফরের সঙ্গি…তুই চলার সঙ্গি

tu humnava mera
তুই জিবনসঙ্গী আমার

tu humsafar…tu humkadam
তুই সফরের সঙ্গি…তুই চলার সঙ্গি

tu humnava mera
তুই জিবনসঙ্গী আমার

tu hi haqeeaqat… khawwb tu
তুই’ই বাস্তব… স্বপ্ন তুই

dariya tu hi…pyaas tu
সমুদ্র তুই’ই… তৃষ্ণা তুই

tu hi dil ke beqarari
তুই’ই হৃদয়ের অশান্তি

tu sukun…tu sukun
তুই শান্তি…তুই শান্তি

সমাপ্ত………

1 COMMENT

  1. Onekdin por bhalo ekta golpo porlam.. tan tan lekha.. chena plot, ending common, tao bhalo laglo.. presentation ta khub sundor..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here