#তুমি_নামক_প্রাপ্তি
#part:3
#Suraiya_Aayat
9.
রাতে কাঁদতে কাঁদতে ছেলেকে নিয়ে কোনোরকম ভাবে ঘুমিয়ে পড়েছিল আরু , ও নিজে কিছু খাইনি তার সাথে আরশিয়ান ও কিছু খাইনি , তার দাবি তার তার নাকি খিদে পাইনি ৷ আরশিয়ানের কথার পরিবর্তে আরশিয়ানকে একটা রাগী কন্ঠে বলতেই আরশিয়ান বলল
‘ তার মাম্মামের খিদে না পেলে নাকি তারও খিদে পায়না ৷’ কথাটা বলে আরুর কোলে মাথা রেখে আরশিয়ান ঘুমিয়ে পড়েলো , জোর করেও ছেলেটাকে খাওৎঅতে পারলো না ৷
সকালে আরূর ঘুম ভাঙতেই মনে পড়ে গেল যে আশিয়ান রাতে কিছু খাইনি ৷ কোলে মাথারত আরশিয়ানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরু, ছেলেটা কত বোঝে আরুর কষ্টটা সেটা ভাবলেই আরু অবাক হয়ে যাই ৷
আরু আরশিয়ানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল ‘সেদিন যদি একটি বারের জন্য হলেও আপনার হাত ধরে আটকাতে পারতাম তাহলে হয়তো আজকে আমাদের এতটা কষ্ট পেতে হতো না ৷’
একটা ত্রিকোন প্রেমের সম্পর্ক যেম
জীবনটাকে এতোটা কষ্ট দিতে পারে তা আমি জানাতাম না ৷
যেখানে সামিল ছিলো আরিশ , আরু আর ইলমাজ নামক মানুষটি ৷
(ইলমাজ আরুর প্রাক্তন প্রেমিক ৷ আপাতত এটুকু জানুন বাকিটার সত্যতা ধীরে ধীরে উৎঘাটিত হবে )
আরশিয়ান এর জন্য ওভেনে ডিমের পোচটা বসিয়ে দিয়ে আরু কিছু একটা ভেবে হঠাৎ ব্যালকনিতে গেল তারপরে হতাশ হয়ে আবার কিচেনে ফিরে এলো ৷ কালকের সেই কালো গাড়িতে বসে থাকা মানুষটা ছিল হুবহু আরআশের মতো, আর ওর নিচের ফ্লোরে যে মানুষটা সেদিন গিটার হাতে বসেছিল তাকে পিছন থেকে দেখতেও অনেকটা আরিশের মতই, তাই দুটি মানুষের মধ্যে এমন হুবহু মিল থাকায় আরু দেখতে গিয়েছিল ব্যালকনিতে যে কেউ আছে কি, কিন্তু ব্যালকনিতে কেউ নেই, তাই আরুকে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হলো ৷
আরশিয়ান এর জন্য ডিমের পোচ আর ব্রেড রেডি করে ডাইনিং টেবিলের উপর রাখতেই চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে তাকিয়ে দেখে নিল আরু, জিনিসপত্র সব গুছিয়ে নিয়েছিল , এখনো কোনো কিছুই আবার নতুন করে সাজানো হয়নি, পুনরায় আবার গোছাতে হবে, যে শহর আরু একবার তার প্রিয় মানুষের আভাস পেয়েছে সেখান থেকে প্রিয় মানুষটাকে খুঁজে না পেয়ে আরু কোথাও যাবে না ৷
আরুর এই 5 বছরের দীর্ঘ জীবনটা কত অগোছালো কতটা কষ্টে পার করেছে আরশিয়ান কে নিয়ে ,আর কিভাবে সমাজের প্রত্যেকটা মানুষকে ভুল প্রমাণ করে নিজেকে সিঙ্গেল মাদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে সেটা আরু নিজে খুব ভালো করেই জানে, এখন আর আগের মতো আরিশের ভালোবাসার পরশ নেওয়া হয়না,আরিশকে দুবাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরা হয় না ,নানান ধরনের আবেগমাখা কথা বলে তাকে আবেগে আপ্লুত করে দেওয়া হয় না , মানুষটার হাতে হাত রেখে কতদিন পথ চলা হয়না, হয়তো যেদিন আরিশ ফিরে আসবে সেদিন অভিযোগের বন্যায় ভাসিয়ে দেবে আরিশ ,নিজেকে লুটিয়ে দেবে আরিশের বুকে ৷
10.
একটা সিএনজিতে বসে আছে আরু আর আরশিয়ান দুজনেই ৷ কিছুক্ষন আগেই আরুর বাবা আরুকে ফোন করে তার বাড়িতে দ্রুত যাওয়ার কথা জানাতেই আরু প্রথমে যাবেনা বলে কিন্তু কিন্তু করলেও পরে তিনি বলেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য তিনি নাকি আরুকে ডেকেছেন সেই জন্যই ৷ খুব একটা দরকার ছাড়া আরু ওর বাপের বাড়িতে যায় না, নিজের মানুষের মায়া ত্যাগ করে বেরিয়ে এসেছে অনেকদিন আগেই, এখন আর খুব একটা কষ্ট হয় না তাদেরকে ছেড়ে থাকতে ৷
ছোট্ট আরশিয়ান আরুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি করে তাকাতেই আরূ আরশিয়ানকে জিজ্ঞাসা করে উঠলো ‘ ‘আমার চকলেট বয়টা কি আমাকে কিছু বলবে?’
‘ মাম্মাম কোথায় যাচ্ছি আমরা?’
‘আমারা তো নানুর বাসায় যাচ্ছি ৷’
‘ নানু আমাকে খুব ভালবাসে তাই না?’
আরু আরশিয়ানের দিকে একটা মুচকি হেসে বলল ‘সবাই তোমাকে ভালবাসে, শুধু তোমার পাপা ছাড়া, সে তোমাকে ভালবাসলে একদিন তোমাকে ছেড়ে দূরে সরে থাকতে পারত না ৷’
আরশিয়ান তার মায়ের মুখে কষ্টের ছাপ বুঝতে পেরে বলল
‘ তুমি কষ্ট পেয়ো না,পাপা একদিন ঠিক ফিরে আসবে সেদিন তোমার আশিয়ান তার পাপাকে অনেক বকে দিবে ৷’
আরশিয়ানের এমন আবেগমাখা কথা শুনে আরু ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো,সেই যে আরুর বেঁচে থাকার সম্বল ৷
11.
‘ কতবার বলেছিনা তুমি আমাকে এসব কথা বলবেনা , আর তাছাড়া এমন তো না যে আমি টাকায় বসে বসে খাচ্ছি , আমি নিজেকে যেমন single mother বরে পরিচয় দিতে পারি তেমনি আমি একজন কর্মীজিবী,নিজে উপার্জন করি তাই আমার নিজের জীবনের সব ছোট বড়ো সব সিদ্ধান্ত আমার, তাই আমার ব্যাপারে কোন কথা বলার অধিকার আমি তোমাদেরকে দিইনি ৷'( আরু উচ্চস্বরে )
‘ তুই কি আরশিয়ানের চিন্তা করছিস? তাই যদি হয় তাহলে এটা কোন ভাবার বিষয় আরশিয়ান আমাদের সাথে থাকবে , যতই হোক ও আমাদেরই একজন!’
কথাটা শুনে ছোট্ট আরশিয়ান তার মায়ের আঁচল খামছে ধরলো ভয়ে, ওর মা ওর প্রান , মা কে ছাড়া থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয় ৷
আরুর মাথায় যেন আগুন চড়ে গেল ৷ আরিশ ছাড়া ও ওর জীবনে কোন দ্বিতীয় পুরুষের কথা ভাবেনি আর সেখানে ওর বাবা ওর 2য় বিয়ের কথ বলছে তাও আবার কার সাথে তার প্রাক্তন প্রেমিক ইলমাজের সাথে ৷ আবার তার ওপর তার জীবনের অংশ আরশিয়ানকে ওর থেকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে ৷
আরু এবার হুংকার দিয়ে বলল
‘ একদম চুপ ! আর একটাও কথা না, আর একটাও কথা বললে এখানে আমি রক্তের বন্যা বইয়ে দেবো ৷ আর একটাও কথা না ৷ আরশিয়ান আমার জীবন, আরশিয়ান আমার কলিজার টুকরা,ওকে আমার থেকে দূরে সরানোর কথা যে ভাববে তাকে দুনিয়া থেকে সরানোর দায়িত্ব আমি নিয়ে নেব ৷ আরশিয়ান আমার জান, কেও ওকে দূরে সরানোর কথা ভাবলে তার অন্তিম সময় ঘনিয়ে আসবে ৷ (আরশিয়ানকে জাপটে ধরে)
আরুর চোখে জলের সাথে যেন আগুনের ফুলকি ঝরছে ৷ ছোট্ট আরশিয়ান ভয়ে আরুর কোমর জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো ৷
আরু ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
‘ আম্মু আমি আসছি ৷ আর এই অমানবিক মানুষটাকে বলো যেন আমার আর আমার ছেলের জীবন থেকে দূরে থাকে অন্যথায় আমার হাতে প্র হারাবে ৷’
কথাটা বলে আরু আরশিয়ানকে কোলে করে নিয়ে যেতেই আরুর বাবা বলে উঠলো
‘ আমিও দেখবো একা একটা মেয়ে মানুষের তেজ কতোদূর যাই !’
আরু একটা তাচ্ছিল্যর হাসি হেসে বলল
‘ অযথা নিজেকে ধ্বংস করতে এসো না , ভষ্ম হয়ে যাবে !’
কথাটা বলে আরশিয়ানকে নিয়ে চলে গেল ৷
ছোট্ট আরশিয়ান আরুর গলা জড়িয়ে ধরে আছে, আর আরূ ওকে জাপটে কোলে ধরে আছে ৷
রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছে আরু ছেলেকে কোলে নিয়ে আর চোখের কোনা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, সামনের রাস্তাটা ক্রমশ ঝাপশা হয়ে আসছে ৷ না পেরে চোখের পলক ঝপকাতেই টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ল, এবার লক্ষ স্পষ্ট ৷ ছোট্ট ছেলেটাকে নিয়ে ওর জীবন সংগ্রাম তা যে সহজ নই তা আরু বুঝতে পারলো আজ ৷ এতদিন বাইরের মানুষের কাছ থেকে অপদস্থ হয়েছে আজ তার নিজের মানুষ, নিজের বাবা এমনটা করলো ৷ আর কারোর প্রতি আরুর বিশ্বাস নেই ,এ সমাজ ওকে ভালোভাবে বাচতে দেবে না ৷এখন একটাই অপেক্ষা তা কেবল আরিশের ৷ আদেও কি সে কখনো ফিরবে নাকি অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে একদিন ও শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবে ৷
………..
সারাটা রাস্তা আরু হেটেই এসেছে, এতোটা পথ আরশিয়ানকে কোলে করে আনতে আনতে আরশিয়ান ঘুমিয়ে পড়েছে ৷
আরু গেট দিয়ে ঢুকতেই আবির বলে উঠলো
‘ কোথায় গিয়েছিলে ? আর চোখ মুখের এই অবস্থা কেন? অনেকটা পথ কি হেটেই এসেছো?’
আরু ক্লান্ত , আবিরের করা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার শক্তিটুকু ওর মাঝে নেই ৷
অবুও ভদ্রতার খাতিরে সব প্রশ্নের উত্তর একেবারে দিয়ে বলল
‘ হমম ৷’
কথাটা বলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই আরুর চোখে পড়ল সেই কালো গাড়িটা যেখানে ও আরিশের মতো একজনকে দেখেছিলো ৷
আরুর শরীর কাপছে , এজানা এক প্রাপ্তি খুজে
পেল ৷ তাড়াতাড়ি করে কম্পিত কন্ঠে আবিরকে বলল
‘ ওইই ওইইই কালো গাড়িটা কার?’
আবির আরুর কথায়া খানিকটা অবাক হয়ে বলল
‘ ওটা তো তিতাশ বলে একজনের ,নতুন ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে ৷ কেন?’
‘ আপনি সিওর ওটা তিতাশ? উনার নাম কি আরিশ না?’
‘ না না, ওনার নাম তিতাশ ৷’
‘ আপনি একটু ভেবে বলেন না, আরিশ কিনা !’
‘ নাহ তিতাশ ৷’
এটাহতে পারে না , উনি আরিশ ৷ উনি আমার আরিশ ৷ কথাটা বলে আরু আরশিয়ানকে দিয়ে দৌড়াতে লাগলো ৷ প্রিয় মানুষের খোজ ও পেয়ে গেছে !
#চলবে,,,,
বাসায় অনেক মেহমান এসেছে তাই ছোট করে লিখলাম , আর পরের পর্বে ধামাকা আছে ৷ আপনাদের কতোটা ভালো লাগছে জানি না, তবে আমি এমন একটা গল্প লিখতে পেরে আমি খুশি ৷