#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_13
‘ হেইই সুইট গার্ল ‘
অনাকাঙিক্ষত কারো ডাকে পেছন ফিরে তাকায় ভোর। তিন টে ছেলে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে স্টুডেন্ট তবে পোশাক দেখে মনে হয় মডেলিং করতে এসেছে। এদের কে পাত্তা না দিয়ে সামনে আগায় মেয়েটা। তবে পেছন থেকে কারো দৌড়ে আসার শব্দ কানে আসে। হঠাৎ ই লম্বা করে ছেলেটা কাছে চলে আসে। কোমরে হাত গুঁজে দিয়ে বলে
_ডাক দিলে সাড়া দেও না কেন?
_আমার ক্লাস আছে।
_ কলেজে আবার ক্লাস? আরে রাখো তো সব ই এক।
_দয়া করে পথ ছাড়ুন।
_আরে ছাড়বো তো। আগে কিছু প্রশ্নের উত্তর দাও।
প্রশ্নের কথা শুনে বিস্ফোরিত চোখে তাকায় ভোর। ভ্রু দুটো সামান্য বেঁকে ও গেছে। পাশ কাঁটিয়ে চলে যেতেই ছেলেটা হাত ধরে ফেলে। পুরো শরীরে যেন বিদ্যুত চমকে যায়।ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে বলে
_একদম টাচ করবেন না। খুব খারাপ হয়ে যাবে তাহলে।
_ওহ হো কামন ইয়ার, এতো হাইপার কেন হচ্ছো।
_দেখুন আমি আপনার সাথে কথা বলতে আগ্রহী নই।
গট গট শব্দ তুলে ভোর চলে যায়। পেছন থেকে ছেলে টা চেঁচিয়ে বলে
_লিসেন, নুহাশ এর থেকে কেউ ছাড়া পায় না। প্রতি টা মেয়ে কে জবাব দিহি করতে হয়।
গাঁ ঝম ঝম করে মেয়েটার। ছেলেটার আচারন এক দম সঠিক নয়।দেখেই বোঝা যায় মেয়ে দের উত্ত্যক্ত করাই এর প্রধান কাজ।
_ক্লাস কেমন হলো?
_হুমম কিছু বললেন?
_আরে ক্লাস কেমন হলো?
_ভালো।
_কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে আছো তুমি? চোখ মুখ শুকনো দেখাচ্ছে কেন?
_না তো। এমনি শীতের কারনে হয়তো।
গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে রাদ। হাতে সময় কম। গাড়ি টা হোস্টেলের দিকে মোর ঘোরাতেই ভোর বলে
_ডাক্তার সাহেব আপনার কাছে সময় হবে?
সময়ের কথা শুনে গাড়ি টা থামিয়ে দেয় রাদ। এবার ভোরের দিকে পূর্ন দৃষ্টি মেলে তাকায়। মেয়েটার চোখ মুখ কেমন অন্ধকার দেখাচ্ছে। কিছু নিয়ে গভীর চিন্তিত দেখাচ্ছে। যদি ও হাতে একদম ই সময় নেই তবু ও রাদ বলে
_হুম আছে বলো।
_একটা নিস্তব্ধ জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন? কোলাহল নেই যেখানে। শুধু গুটি কয়েক পাখির আওয়াজ।
বিস্মিত দুই চোখ অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ করেই ভোর কেন এমন চাইছে? তবে কি সে বিরক্ত এই শহরে। গলা টা শুকনো লাগে। পাশ থেকে পানির বোতল টা খুলে মুখে দিতে নিয়ে ও দেয় না। ভোরের দিকে এগিয়ে দেয়। পানি টা যেন খুব করে টানছে ওকে। খপ করে বোতল টা হাতে তুলে নেয়। নিমিষেই পুরো বোতল পানি শেষ করে দেয়। চিন্তিত কন্ঠে রাদ বলে
_কি হয়েছে তোমার? একটু খোলসা করে বলো। না হলে তো প্রবলেম সলভ হবে না।
নাক টা লাল হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই এর কারন বুঝতে পারলো না রাদ। চোখ দুটো ও কেমন দেখাচ্ছে। আলতো হাতে ভোরের বাহু তে স্পর্শ করে রাদ।
_কি হয়েছে বলো আমায়? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
_একটা ছেলে আমার হাত ধরেছিলো। তখন থেকে সব এলোমেলো লাগছে। আমি জানি না কেন আমার এমন লাগছে। প্রচন্ড ঘৃনা হচ্ছে। মনে হচ্ছে হাত টাই কেঁটে ফেলি।
বলতে বলতে কেঁদে ফেলে ভোর। রাদ যেন হতবাক হয়ে যায়। মেয়েটা এমন পাগল কেন?
লেকের ধারে বসে আছে ভোর আর রাদ। শহর থেকে একটু দূরে এই লেক টাই আছে যেটা নিস্তব্ধ আর কোলাহলমুক্ত। গুটি কয়েক পাথর কুরিয়ে নিয়ে আসে রাদ। ভোরের দৃষ্টি লেকের টলটলে পানি তে। হয়তো পুরনো স্মৃতিচারণ করছে সে।
একটা পাথর পানি তে ছুঁড়ে দিতেই ভোরের ধ্যান ভাঙে। রাদ বলে
_শুধু মাত্র হাত স্পর্শ করেছিলো তাই না?
_হুম।
_বাজে কোনো ইনটেনশন ফিল করেছো?
_উহু।
_তাহলে এতো টা হাইপার হয়ে যাচ্ছো কেন?
_জানি না আমি। শুধু মাত্র মনে হলো উচিত হয় নি। আমি অনুভব করেছি আমি অন্য
থেমে যায় ভোর। পুরো কথা শেষ না করেই বলে
_ আমার ভালো লাগে নি। আমি চাই না আমাকে স্পর্শ করুক কেউ। আমার ঘৃনা হয়।
_পুরোই পাগল তুমি। দেখি এর জন্য এতো টা কাঁদে কেউ? পুরো রাস্তা তে কাঁদতে কাঁদতে এসেছো।
ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটায় ভোর। রাদের মনে কিছু একটা অনুভব হয়। সামান্য স্পর্শ কাউ কে এতো টা এট্রাক করতে পারে।
.
রাত নয় টা বেজে গেছে তবে কাজ শেষ হয় নি। হবেই বা কি করে? দুপুরে লাঞ্চ টাইমে গিয়ে অফিসে ফিরেছে সন্ধ্যা তে। প্রায় সবার ছুটি হয়ে গেছে। শুধু মাত্র বসে আছে রাদ আর মুসতাকিম। প্রথম প্রথম হওয়া তে রাদ যেন বিরক্ত হচ্ছে। তবে মুসতাকিম পূর্ন দমে কাজ করছে। একেই বলে দক্ষতা। মানুষ একটা কাজের সাথে যতো বেশি জড়িয়ে যাবে ততো বেশি দক্ষ হবে।
_স্যার ম্যাম ফোন করেছেন।
_উফফ মম আবারো কল করেছে। আচ্ছা ফোন টা রিসিভ করে দাও তো।
রিসিভ করে দূরে চলে যায় মুসতাকিম। ওপাশ থেকে রামিসা বলেন
_এখনো বাসায় ফিরলে না, আবার ডিনার ও করলে না। দুপুরে কথা ছিলো বাসায় এসে লাঞ্চ করবে। কিন্তু তা ও আসলে না। তোমার ড্যাড না থাকাতে বড্ড অনিয়ম করছো তুমি।
_অনেক কাজ মম। আরো কিছু টা সময় লাগবে।
_সে লাগুক। রাত দুটো বেজে যাক, আমার কোনো অসুবিধা নেই। শুধু মাত্র ডিনার টা কমপ্লিট করে আমাকে জানাও।
_ডিনার করার মতো সময় নেই মম।
_তাহলে এখনি বাসায় আসো। দরকার হলে বাসায় বসে সারা রাত কাজ করবে।
_মম।
_মুসতাকিম কে ফোন দাও।
_মুসতাকিম এদিকে আসো, দেখো মম কি বলে।
ফোন নিয়ে চলে যায় মুসতাকিম। আবারো কাজে মনোযোগ দেয় রাদ। ইফতিহারের প্রতি প্রচন্ড ক্ষোভ জমা হয়েছে। মানুষ এভাবে কি করে কাজ করতে পারে?
একটু তেই হাঁপিয়ে গেছে রাদ। আর ইফতিহার তো গত বিশ বছর যাবত এই কোম্পানি ও হসপিটাল সমান তালে সামলাচ্ছেন।এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে বিজনেস এর থেকে মেডিকেল এর মোটা মোটা বই শেষ করা অনেক সহজ। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতেই গলা শুকিয়ে যায় রাদের। টেবিলে থাকা গ্লাসের পানি টা শেষ করে দেয়। ডাক্তারি, মেডিকেল আবার বিজনেস এতো সব কি করে সামলাবে ওহ?
_এই আধ ঘন্টা কোথায় ছিলে মুসতাকিম? কতো বার করে ডাকলাম। ইনফেক্ট তোমার ফোন ও অফ।
_স্যরি স্যার। ম্যাম আমাকে যেতে বলেছিলেন সেই কারনেই গিয়েছিলাম।
_মম?
_জি স্যার।
_উফফ আবার কেন?
_ডিনার পাঠিয়েছেন।
_এই রাতের বেলা রান্না করেছে তাই না? ওয়েট আজ মম এর সাথে আমার একটা ঝগড়া হবে।
রামিসা কে কল করে রাদ। অথচ ফোন রিসিভ করেন না তিনি। একটু দূরে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে মুসতাকিম। কয়েক বার ফোন করে শেষ মেশ থম মেরে যায় ছেলেটা। রাদের দিকে খাবার এগিয়ে দিয়ে বলে
_ম্যাম বলে দিয়েছেন ফোন রিসিভ করবেন না। আপনার জন্য লেমন রাইস করেছেন। খেয়ে ফেলুন স্যার। ম্যাম এর হাতের রান্না জাস্ট ওয়াও। আমি মিস করতে চাচ্ছি না। আমি গেলাম।
খাবার নিয়ে চলে যায় মুসতাকিম। প্লেটের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে রাদ। রামিসা কে বেস্ট মায়ের উপাধি দিতে চায় ওহ। বাড়ি তে কাজের লোক থাকলে ও স্বামী সন্তানের জন্য নিজ হাতে রান্না করবে। সচরাচর এমন টা দেখা যায় না। আজকাল একটু পয়সা হলেই কিচেনে যেতে চায় না কেউ।আর এদিকে রামিসা পুরোই উল্টো। এতো প্রপার্টিজ থাকতে ও পরিবারের মানুষদের নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াবে।সত্যিই তো টাকা তে সুখ কেনা যায় না। সুখ তো হয় ভালোবাসায়।
পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পরে রাদ। রনিত আর ইনায়ার বিয়ের জন্য কথা বলতে হবে। তবে ভোর কে কলেজে পৌছে দিতে হবে। তাই রনিতের সাথে দেখা করে হোস্টেলের কাছে আসে। শীতে কাঁপতে কাঁপতে বের হয় ভোর। গলায় মোটা করে মাফলার জড়ানো। দাঁতে দাঁত যেন লেগে যায়।
_চলুন ডাক্তার সাহেব।
_হুম যাবো। এতো কাঁপা কাপি করছো কেন?
_প্রচন্ড শীত। আপনার শীত লাগছে না?
_একদম ই নয়।
_কেন?
_আমার শরীরে উষ্ণতা বেশি। দেখো আমি একদম ফিট। আর তুমি শুকনো পাতার মতো।
_শুকনো পাতার মতো?
কথা টা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে ভোর। হেসে ফেলে রাদ। গাড়ি তে উঠতেই হিটার অন করে দেয়। স্টিয়ারিং এ হাত রেখে বলে
_গাড়ি ড্রাইভ শিখবে?
_আমি?
_হুম।
_আমার দ্বারা হবে না।
_অবশ্যই হবে। আজ থেকে গাড়ি ড্রাইভ শিখাবো তোমায়।
খুশি হয় ভোর। গাড়ি চালানো টা ওর ছোট বেলার স্বপ্ন বলা যায়। গ্রামে তখন কাঁচা রাস্তা। ঘন্টায় একটা করে গাড়ি যেতো রাস্তা দিয়ে। আর নির্লিপ্ত তাকিয়ে থাকতো ভোর। এক বার প্রচন্ড বৃষ্টি তে কাঁদা জমে গিয়েছিলো আর গাড়ি আটকে গিয়েছিলো। তখন ওরা সবাই মিলে গাড়ি টা ঠেলে দিয়েছিলো। ভাবতেই হেসে ফেলে ভোর।
_আজ কে যদি ঐ ছেলেটা তোমার কাছে আসে তাহলে আমাকে কল করবে।
_কল করতে হবে না।
_হুস। যা বলছি তাই। কল করবে আমায়। না হলে খবর আছে তোমার।
_আচ্ছা কল করবো।
হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায় রাদ। ভোর ও ক্যাম্পাসে চলে আসে।
.
শুভ্র পাঞ্জাবি তে রনিত যেন রাজকুমার। বেডে আধ শোয়া হয়ে দেখে চলেছে রাদ। রনিত এর চাপ দাঁড়ি অথচ ক্লিন সেভ করে রাখে। এ দিকে রাদ চায় চাপ দাঁড়ি হোক, অথচ ওর চাপ দাঁড়ি নয়। সেই কারনে ক্লিন সেভ করতে হয়। আয়না তে রাদ কে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে
_ কি রে ভাই আমাকে দেখে লাভ কি তোর? আমি তো ইনায়া কে বিয়ে করবো। তাছাড়া আমি গে হতে পারবো না।
_শালা হারামি। তোর দিকে গে এর নজরে তাকিয়ে ছি আমি। মানছি তুই সাদা ফরেনার এর মতো বাট নাক টা দেখেছিস? একদম ই তাল গাছের মতো লম্বা। ছিইই
_উফ আমার নাক নিয়ে এতো সমস্যা কেন তোর? তোর নাক ও তো লম্বা।
_তোর মতো তাল গাছ নয়।
কিছু বলবে তখনি দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হয়। দরজা খুলতেই বিচ্ছু বাহিনী প্রবেশ করে। দু হাত দূরে সরে যায় রাদ। বলে
_রূপ একদম নয়। উল্টো পাল্টা কিছু করলে তোর খবর আছে। আমি অনেক কষ্ট করে গোসল করে এসেছি।
_কামন ভাই একটু রঙ খেললে কি হবে?
_ অনেক কিছু হবে।
_ভাইয়া তোকে একটু লাগাই?
_তুই কি বড় হবি না রূপ? ভারসিটি তে পড়িস, লম্বায় আমাকে ছাড়িয়ে গেছিস। এখনো কি বাচ্চা মি করবি?
_বাসায় বিয়ে লেগেছে আর মজা করবো না। আমরা তিন বন্ধু এসেছি তোমাদের ভূত করার জন্য।
রঙ মাখাবে তখনি ঘরে আসে রনিতের সব বন্ধু রা। সময় কম দেখে রূপ রা ও চলে যায়।
সুপ্তি এসেই রাদ এর সাথে চিপকে গেছে।কিছু একটা নিয়ে চাঁপা হাসির গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বার বার চোখ পাকাচ্ছে রাদ। নাহিদ বসে পরেছে ফোন নিয়ে। আর দ্বীপ আর রায়া চলেছে প্রেম নিবেদনে। কেউ যেন রনিত কে পাত্তাই দিচ্ছে না। পরিশেষে ছেলেটা নাহিদের পাশে এসে বসে। বাঁকা হেসে নাহিদ বলে
_সিঙ্গেল ফিল হচ্ছে ব্রো?
_একদম। আজ আমি সিঙ্গেল না হয়ে ও সিঙ্গেল। বিয়ে টা হোক দেখবি তোদের সবাই কে কি পরিমানে জেলাসি ফিল করাই।
_আমি জেলাস হবো না।
_হবি কি করে? তুই তো মেয়ে বাজ।
বিগলিত হাসে নাহিদ। ওর হাসির শব্দে সবাই গোল গোল করে তাকায়। রাদ বলে
_শুরু হয়ে গেল এর পাগলামি।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে