চলো রোদ্দুরে পর্ব-২০

0
1790

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_20

ঘুম থেকে উঠতেই নুহাশ এর মুখোমুখি হতে হলো ভোর কে। চোখে মুখে আতঙ্ক। নুহাশ যেন ভোর কে দেখে খুশি তে বাক শক্তি হারিয়েছে। একটু এগিয়ে এসে মেয়েটার বাহু তে স্পর্শ করলো। সঙ্গে সঙ্গে দু হাত পিছিয়ে গেল ওহ। ভ্রু টা বাঁকিয়ে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো।
_তুমি এখানে?

_আপনি এখানে কি করছেন?

_আমার কথা বাদ দাও। রিসোর্ট টা তো বুক করা হয়েছে। ওয়েট ওয়েট তুমি কোন পক্ষ?

ছেলেটার প্রশ্নে আগ্রহ খুঁজে পেলো না ওহ। তবে ভেতর থেকে ভয় কাজ করছে। শুকনো ঢোক গিলে ছুটে চলে আসলো।মাথার এলোমেলো চুল গুলো হাতিয়ে হাঁটা লাগালো নুহাশ। মাথা টা এখনো ঝিম মেরে আছে।

বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভোর কে লক্ষ্য করে যাচ্ছে সুপ্তি। মেয়েটা বার বার পায়চারি করে যাচ্ছে। যেন কেউ ওর কলিজা খুবলে নিয়েছে। সুপ্তির ঠোঁট টা সামান্য ফাঁক হয়ে গেল। কিছু বলতে গিয়ে ও পারছে না বলতে। সাইট টেবিল থেকে পানি নিয়ে ঢক ঢক করে পান করলো। সুপ্তি কিছু বলবে তখনি বেরিয়ে গেলো মেয়েটা। বেড থেকে উঠে আনমনেই সুপ্তি বলল
‘ আজব তো! ‘

_সুপ্তি শোন না অনেক গুলো কাজ করতে হবে। ডেকোরেশন টায় একটু গড়মিল হয়ে গেছে।

_সে কি।

রুম থেকে বেরিয়ে কথা টা বললো সুপ্তি। রাদ কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। হাত উঁচিয়ে থামতে বললো। মিনিট খানেক অপেক্ষা করলো সুপ্তি। কথা শেষ হতেই বলল রাদ
_ পুরো রুম টা আবারো ক্লিন করতে হবে। ভুল করে ওরা অর্কিড এর জায়গায় টিউলিপ লাগিয়েছে।

_হোয়াট এতো বার বলার পর ও ভুল করলো?

_হ্যাঁ একটু দেখ না। আমি রনিত কে কল করে যাচ্ছি। শালার নাম্বার টা বন্ধ। এদিকে আসলে পুরো বিয়ে ভেস্তে যাবে।

সুপ্তি কঠোর ভঙ্গিতে পথ আগালো। রাদ রনিতের নাম্বার ছেড়ে রূপ কে কল করলো। টিউলিপ এ এলার্জি রয়েছে রনিতের। দু হাত দূরে থাকলে ও শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়।
আবারো ফিরে এসেছে সুপ্তি। কিছু টা রাগ নিয়ে রাদ বলল
_ফিরে এলি কেন? একটা সামান্য কাজ তারপর ও

ছেলে টা কথা শেষ করার ফুসরত পেলো না তাঁর আগেই সুপ্তি বলল
_ভোর কে চিন্তিত দেখাচ্ছিল। বোধ হয় তোকে খুঁজছে।

_কখন?

_একটু আগেই।

_আচ্ছা।

রাদ এর শীতল কন্ঠ শুনে সুপ্তির ঠোঁট প্রসারিত হলো। আনমনেই গুন গুন করে কয়েক টা গান শুরু করলো। তখনি নিজের ফোন টা বেজে উঠলো। ঠান্ডা সুরের গান ‘অনিকেত প্রান্তর’। নাহিদ কল করেছে, তা ও ভিডিও কল। মুখ বাকালো মেয়েটা। কল রিসিভ করতেই নাহিদ বলল
_কি রে রঙিলা দারুন ইনজয় করছিস বোধহয়?

_অবশ্যই করছি।তোর কোনো সমস্যা?

_উহহু তা কেন হবে। আমি না থাকলে তোর ভালোই হয়।

_হায় মেয়েবাজ অনুষ্ঠানে না থাকলে এতো দারুন ফিলিং হয় জানা ছিলো না।

_সুপ্তি।

নাহিদ এর ধমকে মুখ বাকায় মেয়েটা। তারপর ই বলে
_আমাকে কল করেছিস কেন?

_শখ করে করি নি। রাদ এর ফোন বিজি, আর বাকি দের ফোন সুইচ অফ। উপায় না পেয়ে রঙিলা কেই কল করতে হলো।

_একদম রঙিলা বলবি না।

_একশ বার বলবো।

_নাহিদ।

_ধ্যাত তোর সাথে কথাই বলবো না।

কল টা কেঁটে দিলো নাহিদ। সুপ্তি রাগে গজগজ করছে। একে তো নাহিদ কল করেছে তাঁর উপর কল কেঁটে অপমান? আজ এর হেস্ত নেস্ত করবেই। কয়েক পা এগিয়ে মুখ টা শুকনো হয়ে গেল। নাহিদ তো জাপান চলে গেছে। নিজ মন খারাপে রেগে গেল সুপ্তি। মাথা চেপে ধরে বলল
‘ এই রাসকেল টা থাকলে ও ভেজাল না থাকলে ও ভেজাল। আশ্চর্য! ‘
.

_আমি হোস্টলে ফিরে যাবো ডাক্তার সাহেব।

_এমন কেন বলছো? কাল অব্দি ছুটি নিয়ে এসেছি আমি।

_ভালো লাগছে না।

_কেউ কিছু বলেছে?

_উহহু।

_তাহলে?

_জানি না।

মেয়েটার চোখ ছলছল করছে। রাদ বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ভোর চিন্তিত। চোখে লাগানো কাজল লেপ্টে যাচ্ছে। এগিয়ে আসে রাদ। মেয়েটার থুতনি উঁচু করে চোখের নিচে লেগে থাকা কাজল টুকু বুড়ো আঙুলের সাহায্য মুছে দেয়। আবারো ভরে উঠে দু চোখ। এবার রাদ চিন্তিত হয়। শীর শীর বাতাসে চুল গুলো উড়ছে। কয়েক টা অগোছালো চুল ছেলেটার মুখে এসে লাগছে।
_তুমি এমন চাঁপা কেন মেয়ে? বলেছি তো সমস্ত টা আমায় বলবে।

_ঐ ছেলেটা।

_কোন ছেলে?

_কলেজের।

রাদের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। আবার বিরক্ত করেছে ভোর কে? কিন্তু ভোর তো রিসোর্ট এই ছিলো।
_কি করেছে ওহ?

_কিছু করে নি। তবে আজ সকালে রিসোর্ট এ দেখেছি আমি।

মুহুর্তেই রাদের রাগ চিন্তায় পরিনত হয়।ছেলেটা কে দেখার আগ্রহ জাগে। ভোর বলল
_আমার ভয় করছে। আমি চলে যাবো। আমি চাই না আমার জন্য আর কোনো সমস্যা সৃষ্টি হোক।

_থামো তুমি। নিজেকে দোষ দিতে পারলেই মহান হয়ে যাও?

_আমি তো

_কাঁদবে না। তুমি না সাহসী? আইন নিয়ে পড়া শোনা করবে। তাহলে এমন মানসিকতা কেন?

মাথা টা নিচু করে ফেলে ভোর। ধীর কন্ঠে বলে
_দুঃখিত।

_নো ফরমালিটিস। এখন আমরা বর যাত্রী যাবো। দেখি তো

মেয়েটার মাথায় ঘোমটা টেনে দেয় রাদ। ভোর কে বউ বউ লাগছে। অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে ওর। ঘোমটা তুলতে চাইলে রাদ বাঁধা দেয়। মেয়ে টা ও আর কিছু বলে না। রাদ এর শুট এর হাতা চেপে ধরে হাঁটতে থাকে।

আধ ঘন্টা যাবত একটি উপন্যাস পড়ে চলেছে ভোর। গাড়ি তে বসে উপন্যাস পড়ার আইডিয়া রাদ এর। যেহেতু ইনায়ার বাসা এক ঘন্টার পথ তাই এই সময় টুকু উপন্যাস পড়লে কাজে লাগবে। তাছাড়া উপন্যাস টি একটি মেয়ের নারী হওয়ার গল্প। সমরেশ মজুমদার এর সাতকাহন। ভোর কে অনেক কিছু জানতে সাহায্য করবে।

জ্যাম এ আটকে গেলো গাড়ি টা। স্টিয়ারিং এ হাত রেখে অপেক্ষা করছে রাদ। ভোর এর পূর্ন মনোযোগ উপন্যাসে। মানুষ ক্লাসের বই পড়ে না অথচ গল্প উপন্যাস থেকে চোখ সরে না।
_ভোর।

কোনো উত্তর নেই। রাদ অবাক হলো না। কারন এই বিষয় টা ওহ নিজে অনেক বার উপলব্ধি করেছে। মেয়েটার বাহু তে হালকা হাতে ধাক্কা দিতেই চমকে উঠলো। তুতলিয়ে বলল
_জিইই

_ভয় পাচ্ছো কেন?

_না মানে হঠাৎ।

_আচ্ছা বাদ দাও।

_হুম।

কিছুক্ষণ নিরবতা চললো। জ্যাম ছাড়তে গাড়ি চলতে শুরু করলো। আবারো উপন্যাসে মজেছে মেয়েটা। আনমনেই হেসে উঠলো রাদ। কি অদ্ভুত, এই চব্বিশ বছরের জীবনে একটি মেয়ে কে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছে সে। অবশ্য দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বয়সের প্রয়োজন পরে না। বরং প্রয়োজন হয় মানসিকতার। একজন শক্ত মন ধারী, পূর্ন ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ হওয়া জরুরি।

‘ ক্ষনিকের জীবনে কিছু এমন কাজ করতে হয় যাতে করে হাজার না হোক অন্তত এক দিনের জন্য ও সেই কাজের জন্য কেউ মন থেকে প্রার্থনা করবে।’

ইনায়া কে বউ সাজে একদম ই সুন্দর লাগছে না। এমন টাই ধারনা ইনায়ার। সারাক্ষন সাঁঝ গোঁজ করা মেয়েটা আয়না তে নিজেকে দেখতে চাচ্ছে না। এই নিয়ে চলছে সোরগোল।

এতো বার বোঝানোর পর ও কারো কথা শুনছে না। কথা টা রাদের কানে যেতেই হাঁটু তে হাত রেখে হাসতে লাগলো ওহ। রনিতের রাগ হয়। দশ টা পাঁচ টা না একটা মাত্র বউ ওর। তাঁর একটি কাজে হাসবে সকলে? উহু কখনোই সম্ভব নয়।

_উচিত হচ্ছে না রাদ।

_কেন হবে না?

_আমার বউ হয় ওহ।

_আগে বিয়ে হোক।

_কি বলতে চাচ্ছিস?

_তোর মতো শশুর ভীত প্রানী কে কি বলবো?

রনিতের কি হলো জানা নেই। তবে আজ সবাই কে চমকে দিয়ে স্ট্রেজ থেকে নেমে গেলো সে। সোজা ইনায়ার কাছে, সবাই বাঁধা প্রদান করছে। চেঁচামেচির শব্দ শুনে ইনায়া মাথা টা ঘুরাবে তখনি মেয়েটা কে চেপে ধরলো ভোর। বলল
_আপু একদম নয়। বিয়ের আগে মুখ দেখতে দিবো না। ভাইয়া কে পেমেন্ট দিতে হবে।

মেয়েটার চঞ্চলতা দেখে সবাই অবাক হলো। সব থেকে বেশি অবাক হলো রাদ। কারন ভোর সাধারনত এতো টা ফ্রেন্ডলি কথা বলে নি অন্য কারো সাথে। স্বস্তি ময় একটা শ্বাস ওকে যেন আঁকড়ে নিলো। নিজ কার্যের সফলতার কিছু মুহুর্ত অনুভব করলো ছেলেটা।

**আজ থেকে নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here