দ্বিতীয়_সূচনা পর্ব-৫

0
2030

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৫
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

মামা আর ভাইয়ের সাথে কথা শেষ করে লবিতে যাওয়ার জন্য বের হয় অয়নন্দিতা। শাম্মিকে বার-বার না করা সত্ত্বেও শাম্মি ওড়নাটা ঘুরিয়ে পরিয়ে দিয়েছে। শাম্মির ভাষ্যমতে, তাকে এইভাবে ওড়না পরলে দারুণ লাগে। সুস্থ থাকলে একটা কথা ছিল কিন্তু হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে এখন ঠিক মতো চলা দায় হয়ে পড়েছে তার। এর উপর আবার এইভাবে ওড়না পরা আরেক ঝামেলা।
ধীর পায়ে লবির সামনে এগিয়ে যায় অয়নন্দিতা। সেখানে সবাই ভাগে ভাগে বসে আছে। সন্ধ্যায় চায়ের আড্ডা যাকে বলা যায় আর কি। অয়নন্দিতা যেতেই টুকটাক সবাই তাকায় তার দিকে। হালকা আকাশি রঙের সালোয়ার স্যুট সাথে সাদা রঙের ওড়নায় তাকে বেশ মানিয়েছে। অয়নন্দিতাকে আসতে দেখে শাম্মি এগিয়ে যায় তার দিকে।
‘এতক্ষণ লাগল বুঝি?’
‘কথা শেষ করেই তো এলাম।’
‘আচ্ছা আয়, এইখানটায় বোস।’
‘স্যাররা কোথায়?’
‘স্যাররা ওইপাশে। জানিস আমরা আগামীকাল ভোরে সূর্য উদয় দেখব।’
‘কে বলল?’
‘শরীফ স্যার বলেছে।’
‘ওহ।’
‘জানিস, স্যারের সঙ্গে যেই ভদ্রলোক এসেছেন, তিনি নাকি খুব ভালো গান গায়।’
‘যেই ভদ্রলোক আমায় জখম করেছেন, তিনি?’
‘বেচারার কী দোষ বল, ইচ্ছা করে তো আর দেয়নি।’
‘ব্যাপার কী, হঠাৎ তার হয়ে কথা বলছিস? ভালো লেগে গেছে নাকি?’
‘কার না লাগবে বল। কী স্মার্ট, আর কী গুড লুকিং। আহ, দেখলেই প্রেম প্রেম লাগে?’
‘আস্তে বল, কেউ শুনলে তিল থেকে তাল বানাবে। চুনোপুঁটিকে ডলফিন বানাবে।’
‘অয়নি,,,!’
‘আচ্ছা শোন, তোরা বোস এখানে। আমি ওইপাশ থেকে ঘুরে আসি।’
‘এই ভর সন্ধ্যায় ওইপাশে যাওয়ার দরকার নাই। আমাদের সাথেই বোস।’
‘বসে-বসে আলোচনা সমালোচনা শুনতে ভালো লাগবে না আমার। আমি বরং ঘুরে আসি।’
শাম্মিকে বসিয়ে রেখে অয়নন্দিতা লবি থেকে বের হয়ে আসে। একটু এগিয়ে যেতেই সে শরীফ স্যার আর ফারহানকে দেখতে পায়। অয়নন্দিতা তাদের সামনে গিয়ে বলল,
‘স্যার, একটু কথা ছিল।’
অয়নন্দিতার কন্ঠস্বর শুনে ফারহান এবং শরীফ একত্রেই তার দিকে তাকায়।
‘হ্যাঁ, বলো।’
‘স্যার, আমি একটু ওইপাশ থেকে ঘুরে আসি?’
‘ওইপাশটা অন্ধকার তো। তুমি লবিতেই বোসো না সবার সঙ্গে।’
‘স্যার আমার একা-একা হাঁটতে মন চাইছে। বেশি দূরে যাব না।’
‘ওকে। সাবধানে যাও। আর প্লিজ, দয়া করে বেশি দূরে যেও না।’
‘ওকে স্যার।’
ফারহান অয়নন্দিতার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল এতক্ষণ। এক জোড়া শান্ত মলিন চোখও যেন আকুতি করছে। এমনটাই মনে হলো তার। আকাশি রঙের সালোয়ার স্যুটে দারুণ লাগছে তাকে। ঠিক যেন বন্দনা। বন্দনার কথা মনে হতেই চোখ জোড়া বন্ধ করে ফারহান। কী ভাবছে সে এইসব। এখানে সে ঘুরতে এসেছে। মন ফ্রেশ করতে এসেছে। মাথায় যেই চাপটা ছিল সেই চাপটা দূর করতেই এখানে আসা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। উল্টো আরও চাপ বাড়ছে। সে বার-বার বন্দনাকে নিয়েই ভাবছে। চোখ খুলতেই তার সামনে থাকা অসম্ভব মায়াময়ী মেয়েটা হারিয়ে গেল। হঠাৎই শরীফ বলল,
‘চল, অন্যান্য টিচাররা ওইখানে দাঁড়িয়ে আছে। যাওয়া যাক।’
‘দোস্ত তুই যা। আমি না কিছুক্ষণ পর আসব।’
‘শিওর?’
‘হুম শিওর।’
‘ওকে।’

শরীফ চলে গেলে ফারহান উল্টো পথে হাঁটা শুরু করে। গন্তব্যস্থল দূরে অবস্থিত নির্জন রাস্তা। যেখানে কিছু দীর্ঘশ্বাস গোপন করা যাবে।
হাঁটতে-হাঁটতে কিছুটা দূরে চলে এসেছে অয়নন্দিতা। বিরাট বড়ো গাছের গুড়ির ওপর বসে পড়ে অয়নন্দিতা। নজর তার আকাশ পানে। বড়ো একটা চাঁদ উঠেছে আজকে আকাশে। চাঁদটাকে ঘিরে আশেপাশে অনেকগুলো তারা জ্বলছে। অয়নন্দিতা ভাবে ওই তারাগুলোর মধ্যে দুটো তারা তার মা আর বাবা। টিভিতে দেখেছে সে, মৃত মানুষরা তারা হয়ে যায়। আসলেই কি মৃত্যুর পর সবাই তারা হয়ে যায়? অনেকদিন হলো চিৎকার করে কাঁদে না সে। চোখ দিয়ে পানি গড়াতে-গড়াতে ইদানীং চোখ জোড়াও শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। আজ গলা ফাটিয়ে কান্না আসছে। আশেপাশে তেমন কেউই নেই।
অয়নন্দিতার ভেতরটা হু-হু করে ওঠে। চোখ বেয়ে পানি গড়ায়।
‘আম্মু, কীভাবে আছো আমায় ছেড়ে? জানো কত দিন হয়ে গেছে আমি তোমাকে আর দেখতে পাই না। আমার চুলে তোমার হাতটা আর পড়ে না তো। তোমার হাতের গরুর মাংসটা কতদিন হলো আর খাওয়া হয় না। গভীর রাতে আমার ঘরে আর কেউ উঁকি দিয়ে দেখে না তো আম্মু। এইভাবে ঠকিয়ে চলে গেলে আমায়। দিব্যি ভালো আছো আব্বুর সঙ্গে। তাই না? আর আমি এখানে এইভাবে পড়ে আছি।’
শব্দ করে কান্না করে অয়নন্দিতা। হেঁচকি তুলে কাঁদছে অয়নন্দিতা। ঢোক গিলে আবারও বলে,
‘আব্বু, তোমার প্রতি ভীষণ রাগ লাগে। আম্মুকে কেন এত ভালোবেসেছ তুমি যে, আম্মু তুমি যাওয়ার পর-পরই চলে গেল। দেখেছ আব্বু, আমি বলতাম না যে, আম্মু আমার থেকে বেশি তোমাকে বেশি ভালোবাসে। মিলল তো আব্বু। আম্মু সত্যিই তোমাকে বেশি ভালোবাসে। তাই তো আমায় একা করে দিয়ে তোমার কাছে চলে গেল। ভাবলও না আমার কথা। দু’জনেই স্বার্থপরের মতো চলে গেলে।’
বাবা-মা ছাড়া একটা সন্তান এই দুনিয়ায় কীভাবে থাকতে পারে তা কেবল সে-ই জানে।

ফারহান কিছুটা পথ হাঁটতেই কারো কান্নার শব্দ পায়। মনে হচ্ছিল কেউ যেন খুব কষ্ট নিয়ে কাঁদছে। ফারহান ভাবে, তার চাইতেও কি কেউ কষ্টে আছে? তার ভেতরে যেমন দুঃখের বসতবাড়ি তেমন কি অন্যের ভেতরেও দুঃখের জমিন আছে?
ফারহান ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে সেই কান্নার শব্দের কাছে।

চলবে…………………

[বিঃদ্রঃ শরীরটা ভালো না তেমন। তাই অল্প লিখলাম আজকে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here