#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৫৩ (দ্বিতীয় এবং শেষ পরিচ্ছেদ)
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)
গত দু’মাসে অনেক কিছু বদলে গেছে। ফারহান তার ব্যবসায় আরও এগিয়ে গেছে৷ জাহরাফ আর কোনো ক্ষতি করেনি কিংবা ক্ষতি করার চাঞ্চ পায়নি। অয়নন্দিতাকে নিয়ে বাকি জীবনটা সুখেই থাকতে চায় সে।
অয়নন্দিতাও নিজের স্বামী সংসার নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। সংসারটাকে মনের মাধুরি মিশিয়ে সাজিয়েছে সে। এই সংসার কেবলই তার। প্রতিদিন সকালে নাস্তার টেবিলে সবাই মিলে একত্রিত হয়ে নাস্তা এবং রাতে সবাই একত্রে রাতের খাবার খাওয়ার ব্যাপারটা যেন ঈদের মতো। রওশন বেগম এখন ছাড়া হাত-পা। আগে ছিল এক বউমা এখন হয়েছে দুই বউমা। ফারাশ বিয়ে করেছে এক মাস হবে। খুব ধুমধাম হয়নি বিয়েতে। ফারাশ চায়নি বিয়েটা ধুমধাম করে হোক। নায়াও এতে সহমত পোষণ করলে দুই পরিবারের কিছু লোকজনের উপস্থিতিতে বিয়ে হয় ফারাশ এবং নায়ার। নায়াও অয়নন্দিতার মতো সমান তালে সংসারে সময় দেয়। কারণ, ফারাশ আগেই তাকে দিনে অন্তত একবার করে হলেও অয়নন্দিতার বর্ণনা শোনাত। শুনতে শুনতে নায়া এখন অয়নন্দিতাকে অয়নন্দিতার থেকেও বেশি চেনে।
কিচেন রুমে অয়নন্দিতা এবং নায়া উভয়েই উপস্থিত আছে। নায়া চা বানাচ্ছে অয়নন্দিতা অন্য কাজে ব্যস্ত। নায়া এদিক-সেদিক তাকিয়ে অয়নন্দিতাকে বলল,
‘ভাবী, সাজির কন্ডিশন কিন্তু ভালো ঠেকছে না।’
নায়া’র কথায় অয়নন্দিতা কপাল কুঁচকায়।
‘মানে?’
‘সাজি ইদানীং মন মরা হয়ে থাকে। তেমন কথাও তো বলে না।’
‘সাজিকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু সে বুঝতে চায় না। ওইদিকে ভাইয়াও বুঝতে চাইছে না৷ দু’পক্ষের চাপে আমি পিষে যাচ্ছি।’
‘হাসান ভাইয়া কিন্তু চাইলে পারে।’
‘আমি তুমি কিংবা বাকিরা খুব সহজেই বলতে পারি গো নায়া। তবে যার যায় সে-ই বোঝে। মিলি ভাবী ভাইয়ার জন্য অনেক কিছু ছিল। তার এইভাবে চলে যাওয়াটা সে মানতে যেমন পারছে না আবার সাজির এমন আবদারও মানতে পারছে না।’
‘না পারছি সাজিকে বোঝাতে আর তুমি না পারছ হাসান ভাইয়াকে বোঝাতে।’
‘ফারাশ ভাইয়া কিন্তু সাজির ফুল সাপোর্টে।’
‘হ্যাঁ ভাবী। ফারাশ তো কাল রাতেও বলল শুধু একবার হাসান ভাই রাজি হোক। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ের ব্যবস্থা করব।’
নায়া চা বানিয়ে ফেলেছে৷
‘ভাবী, উপরে যাও। ভাইয়া রেডি হয়েছে কি না দেখ। নাস্তা রেডি৷’
‘তুমি টেবিল সাজাও আমি আসছি।’
‘আচ্ছা।’
ফারহানকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অয়নন্দিতা দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফারহানকে ফরমালে বেশ লাগে। মাঝে মাঝে অয়নন্দিতার হিংসা হয়। খুব হিংসা হয়। এইতো কিছুদিন আগে। কলেজের একটা প্রয়োজনীয় কাজে লিগ্যাল গার্জিয়ান হিসেবে ফারহানের যাওয়ার কথা ছিল। ফারহান গিয়েছিল সেখানে। মেয়েরা জানে যে সে অয়নন্দিতার হাজবেন্ড তবুও হা করে গিলে খেয়েছে মনে হয়েছে। আজ-কালকার মেয়েগুলোও বেহায়ার সেরা। সেদিন ফারহানের ওপরও তার রাগ হয়েছিল। কেন সে এমন ফিটফাট হয়ে কলেজে গেল। অয়নন্দিতা ভেবে নিয়েছে, সে আর কখনও কলেজে তার স্বামীকে নেবে না। ফারাশকে ভাই হিসেবে নেওয়া যেত। কিন্তু ফারাশকেও নেবে না। ফারাশও বেশ সুদর্শন। ঠিক করেছে, এরপর থেকে গার্জিয়ান হিসেবে শ্বশুরকে নেবে।
ফারহান ততক্ষণে অয়নন্দিতাকে দেখে ফেলেছে। অয়নন্দিতার এইভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে ফারহান খানিকটা অবাক হয়। দু’পা এগোতেই অয়নন্দিতা নড়েচড়ে ওঠে।
‘নাস্তা রেডি। খেতে এসো।’
অয়নন্দিতা বের হতে নিলে ফারহান তার হাতটা ধরে।
‘সারাক্ষণ এমন পালিয়ে পালিয়ে থাকো কেন?’
‘পালিয়ে পালিয়ে থাকি?’
‘হ্যাঁ।’
‘পালিয়ে থাকব কেন? আর রাতে তো তোমার সঙ্গেই বিছানায় ঘুমাই। পালালাম কোথায়?’
‘এইযে পালাচ্ছিলে।’
‘পালাইনি। ওকে। খেতে এসো।’
‘মেজাজ এখনও ঠিক হয়নি। হায়রে আল্লাহ।’
‘তোমাকে আর আমার কলেজে যেতে হবে না।’
‘হায়রে খোদা। সেইদিনের কথা ধরে বসে আছো। আচ্ছা এতে আমার দোষটা কোথায়?’
‘এত সেজেগুজে যেতে হবে কেন তোমায়?’
‘সেজেগুজে না গেলে তোমায় নিয়ে সবাই মজা করবে তো। বলবে, অয়নন্দিতার বর বয়স্ক, দেখতে কেমন খেত লাগে। এই সেই।’
‘আমার বুড়া জামাই-ই ভালো। তাদের কি? তুমি আর সেজেগুজে যাবে না। ব্যাস।’
‘তুমি তো বেশ হিংসুটে।’
‘হ্যাঁ। আমার স্বামীর ক্ষেত্রে আমি বেশ হিংসুটে।’
ফারহান গাল বাকিয়ে হাসে। অয়নন্দিতা বলে,
‘হাত ছাড়ো। নিচে যাব।’
ফারহান অয়নন্দিতাকে কাছে টেনে নেয়৷ সে কিছু বলবে তার আগেই ফারহান এক হাতে দরজা আটকে দেয়। আচমকা এমন কিছু হবে অয়নন্দিতা ভাবতে পারেনি। ফারহান অয়নন্দিতাকে দেওয়ালের সঙ্গে লেপ্টে ধরে বলে,
‘এত হিংসা মনে? হ্যাঁ।’
‘হু।’
‘তবে তৃষ্ণা মেটাও।’
‘মানে?’
ফারহান আর কথা না বাড়িয়ে অয়নন্দিতার ঠোঁট জোড়ায় নিজের ঠোঁটে মিলিয়ে দেয়। অয়নন্দিতা ফারহানের ব্লেজার আঁকড়ে ধরে। ঘরে থাকা ঘড়িটা টিকটিক শব্দ করছে। বারান্দা দিয়ে শো শো শব্দে বাতাস আসছে। জানালা দিয়ে কড়া রোদ এসে তাদের দু’জনের শরীরে পড়েছে। শরীর জোড়া একে অন্যের সঙ্গে মিশে আছে।
চলবে………………………….