#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৫৫
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)
যা হবার কথা ছিল না। তাই-ই হয়েছে। হাসানকে তার ছোটো বোন ফোন করে জানিয়েছে সাজি তাদের বাসায় গিয়েছে। বাবা-মা মামা বাসায় যাবে, ওই মুহুর্তে সাজি সেখানে পৌঁছায়। পরে সাজিই নাকি তাদের পাঠিয়ে দিয়েছে। সে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয়েই হাসানকে ফোন করেছে। বলেছে বিকেল পর্যন্ত থাকবে। এটা শুনেই হাসানের মাথা গরম হয়ে যায়। তার মাথায় এটাই আসছে না সাজি এমন কেন করতেছে। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বের হয়ে যায় হাসান। গন্তব্যস্থল নিজ বাসা।
পথ যেন শেষই হচ্ছে না আজ। অফিস থেকে বাসায় আসতে মোটামুটি ৩০/৩৫ মিনিট লাগে। দুপুর টাইম বলে সহজে রিক্সা পাওয়া যাচ্ছিল না। আর বাসে সে ওঠে না। তবুও রিক্সা যা পেল লোকটা একটু বয়স্ক হওয়ায় ধীরে ধীরে রিক্সায় প্যাডেল মারছেন। হাসানের সহ্য হচ্ছে না। বয়স্ক বলে কিছু বলতেও পারছে না। মিনিট দশেক এইভাবেই পার হয়ে যায়। ফোন করে অয়নন্দিতাকে।
দুইবার ফোন বেজে যাওয়ার পর অয়নন্দিতা ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই হাসান বলা শুরু করে,
‘আমায় তো তোরা পাগল করে দিবি।’
ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে অয়নন্দিতা বলল,
‘এইসব কী বলো ভাইয়া? তোমায় পাগল করতে যাব কেন?’
‘তোর ননদ কোথায়?’
‘সাজি তো ক্যাম্পাসে। কেন?’
‘ক্যাম্পাসে। হ্যাঁ, ক্যাম্পাসে। কয়টা বাজে এখন। ঘড়ি দেখছস। আড়াইটার মতো বাজে। এখনও সে ক্যাম্পাসে?’
‘ওর প্রায়ই তিনটায় ক্লাস থাকে। কখনও সন্ধ্যায় ক্লাস থাকে। এখন হয়েছে কী, সেটা বলো?’
‘তোর ননদ ক্যাম্পাসে নাই। ও আমার বাসায়।’
‘তোমার বাসায় মানে!’
‘ভং ধরবি না একদম। দেখ অয়নন্দিতা, আগেই বলে দিয়েছিলাম। সেদিনও সাবধান করে দিয়ে এসেছিলাম। এই মেয়ের এত জেদ কেন? কিছুতেই শোনে না। আমি আর বরদাস্ত করব না। আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়ব।’
‘কী করবা তুমি?’
‘এই মেয়ের জন্য আজকে কাজ করতে পারলাম না আমি। এই মেয়ের খবর আছে আজকে।’
‘তুমি কি বাসায় যাচ্ছো নাকি?’
‘হ্যাঁ। ওর বিয়ের শখ চিরদিনের মতো ঘুচিয়ে দিব আমি।’
হাসান আর কিছু না বলে ফোন রেখে দেয়। অয়নন্দিতা দ্রুত ফোন করে সাজিকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সাজি ফোনটা রিসিভ করেনি। অয়নন্দিতাও ভেবে পায় না সাজির কি দরকার ওই বাসায় যাওয়ার। জোর গলায় কিছু বলতেও পারে না। ফারহান রাগ করবে। শত হোক একটা মাত্র বোন তার। শাশুড়িও কিছু বলে না। শ্বশুর বললেও সাজি শোনে না।
অয়নন্দিতা ফারহানকে ফোন করবে ভেবেও করেনি। কারণ, হিতে বিপরীত হবে।
সব গোছানোর পর ড্রইংরুমের সোফায় বসে ফোনটা হাতে নিতেই অয়নন্দিতার ৫ টা মিসডকল দেখতে পায় সাজি। কল ব্যাক করবে ওই সময়ই ডোরবেলের শব্দ শুনতে পায় সে। হাসানের বাবা-মা চলে এসেছে ভেবে হাসিমুখেই দরজা খোলে সাজি। কিন্তু বেচারি বুঝতেই পারেনি তাকে অবাক করে হাসান দাঁড়িয়ে থাকবে। ততক্ষণে হাসানের চোখ রক্ত রঙা লাল হয়ে আছে। সাজি চিন্তাই করতে পারেনি এইসময় হাসান আসবে। তার মস্তিষ্ক তখন এটা ভেবেই ব্যস্ত যে, এইসময় তো হাসানের আসার কথা না। হাসান কি কোনো ভাবে জেনে গেছে যে, সে এখানে এসেছে। দু’হাত মোড়াচ্ছে সাজি। হাসান ততক্ষণে বাসার ভেতরে। হাতে থাকা অফিস ব্যাগটা এক আছাড় মারে হাসান৷ হাসানের এমন আচরণ দেখে সাজি চোখ-জোড়া বন্ধ করে ফেলে।
হাসান চিলের মতো ছোঁ মেরে সাজিকে ধরে। এমন ভাবে ধরে যে, সাজি নড়ে ওঠে। নরম শরীরে এমন শক্ত করে কেউ ধরলে যে কারোই ব্যথা পাওয়ার কথা।
‘লাগছে আমার।’
‘লাগুক৷ তুমি কোন সাহসে আমার বাসায় এসেছ?’
‘ভালোবাসলে সাহস লাগে নাকি। হাতটা ছাড়ুন। লাগছে আমার।’
‘হাতটা ভেঙে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করতেছে আমার।’
‘আমার হাতটা ভেঙে গুড়িয়ে দিলে আপনি সুস্থ থাকবেন তো?’
‘থ্রেট দিচ্ছো আমায় তুমি? তোমার বাপ ভাইয়ের টাকা বেশি। সেই থ্রেট দিচ্ছো তুমি আমায়?’
‘একদম না। আপনার জন্য আমিই যথেষ্ট। আমার বাপ ভাই লাগবে না।’
‘সাজি…’
‘হাসান…’
হাসানের মতে সাজি বেয়াদবির শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে। নিজেকে বহুক্ষণ কন্ট্রোলে রাখার পরেও শেষ রক্ষা হলো না। ঠাটিয়ে এক চড় বসিয়ে দেয় সে সাজির গালে। থাপ্পড়টা এতই জোরে ছিল যে সাজি জায়গা থেকে সরে যায়। মুহুর্তেই গালটা জ্বলে ওঠে সাজির। রাগের মাথায় হাসানের বোধশক্তি কাজ করে না। না চাইতেও সে সাজির গালে চড় বসিয়ে দিয়েছে। বাম গালে থাপ্পড়টা পড়ায় সাজিও যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। ছোটোবেলা থেকে এই পর্যন্ত তাকে কেউ মারেনি। আজ এত বড়ো হয়ে অন্যের হাতে থাপ্পড় খাওয়া। তা-ও আবার যাকে সে ভালোবাসে তার হাতেই। ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না তার। হাসানও বুঝতে পেরে দেওয়ালের সঙ্গে নিজের হাত দিয়ে ঘুষি মারে। চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
‘বের হয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে। একমাত্র তোমার জন্য এমন হলো। আমি হাসান কখনও মেয়েদের গায়ে হাত তুলিনি। এই প্রথম এমন হলো। একমাত্র তোমার জন্য।’
সাজি একটা শব্দও করেনি। চোখের পানি মুছে ঝড়ের বেগে হাসানের সামনে এসে দাঁড়ায়। হাসান তাকিয়ে আছে সাজির মুখের দিকে। গালে নজর যায় তার। তিনটা আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মেয়েটার গালে। হাসান তখনই নিজের নজর সরিয়ে নেয়।
‘চলে যাও আমার সামনে থেকে। চলে যাও।’
সাজি চট করেই হাসানের কলার চেপে ধরে। চোখ থেকে তখনও পানি গড়িয়ে পড়ছে।
‘চলে যাওয়ার জন্য আমি আসিনি। চড়টার কথা তো ভুলব না সেই সাথে আপনাকে তো কখনও ভুলব না। দিস ইজ মাই চ্যালেঞ্জ মিস্টার হাসান।’
কথাটা শেষ করেই হাসানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সাজি উঁচু হয়ে হাসানে ঠোঁট জোড়ায় নিজের ঠোঁট চেপে ধরে। হাসান সাজিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়৷ হাসান যতই সাজিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে সাজি ততই হাসানকে আরও শক্ত করে চেপে ধরে। হাসানের ঘাড়ে নিজের হাতের সাহায্যে শক্ত করে ধরে রাখে। কিস করতে করতে সাজি মনে মনে বলে, ভালোবাসা যে কতটা প্রখর এখন তুমি টের পাবে। বি রেডি।
চলবে………………………
[আবার দেখা হবে বেলীফুল —– লেখাটা পড়ে কী ভাবনা আসছে মাথায়। একবার চলে যাবেন। সেই সাথে গল্প কেমন লাগছে। সেটাও বলে যাবেন 😇]