#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৫৮
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)
মিলির বাবা-মা দু’জনেই উপস্থিত হয়েছেন। হাসান তাদের সামনে বসা। আয়শা বেগম খাইরুল সাহেব দু’জনেও বসে আছেন। মিলির মায়ের চোখে পানি। আয়শা বেগম মিলির মায়ের দুঃখ বুঝতে পারছেন। মিলি সাধ করে এসেছিল এই ঘরে। কিন্তু নির্মম ভাগ্য তা হতে দিল না। কেড়ে নিল মিলিকে দুনিয়া থেকে। সব শেষ করে দিল। খাইরুল সাহেব নিজে মিলির বাবা-মাকে ফোন করে ডেকেছেন। কিছু সিদ্ধান্ত নিতে চান তারা। মিলির মা-বাবাকে এটা জানানো উচিত বলে মনে করেছেন তারা। যদিও আজ-কালকার ফ্যামিলিগুলো এইসব পাত্তা দেন না। কিন্তু তাদের সম্পর্কটাই অন্যরকম। তাই সবটাই জানাতে চান তারা।
সবই শুনলেন তারা৷ এবার তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানার পালা। মিলির বাবা সব দিক ভেবে বললেন,
‘মিলি নেই। না আছে ওর কোনো সন্তান। এখন সম্পর্কটা এমন যে, আমরা আপনাদের কিছু বলতে পারব না।’
খাইরুল সাহেব বললেন,
‘কেন বলবেন না? আর সম্পর্ক কেমন? আমাদের সম্পর্কটা আজীবনই থাকবে। মেয়ে নেই তার মানে এই না যে, সম্পর্ক থাকবে না। হাসান যেমন আপনাদের ছেলে হয়ে ছিল এখনও তেমন হয়েই থাকবে।’
মিলির মা সবই বুঝতে পেরেছেন। তিনি কিছুক্ষণ ভাবলেন। এরপর বললেন,
‘একই ঘটনা যদি মিলির সঙ্গে ঘটত তাহলে আমরাও দ্বিতীয় চিন্তা করতাম। হয়তো কয়েক মাস পর কিংবা বছর খানেক পর৷ আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না। আমরা খুশি মনে রাজি আছি। আপনারা এগোতে পারেন।’
আয়শা বেগম কথার সাথে তাল মিলিয়ে বললেন,
‘বউ হয়ে এসেছিল আমার বাড়িতে। যেমনই ছিল, আমার মেয়ে হয়েছিল। আল্লাহ পাক কপালে যে এমন এমন রাখছেন, তা বুঝতে পারিনি।’
‘সেটাই। অনেক কান্নাকাটি করছি। ফিরে কি আসছে? ফিরে আসে নাই। কখনও আসবেও না। সবারই জীবন আছে একটা। আমরা চাই, হাসান নতুন করে সব শুরু করুক৷ আমরা মন থেকে রাজি। আর হাসান, অবশ্যই বাসায় যাবে।’
হাসানের কন্ঠনালী ধরে গেছে। কথা বের হচ্ছে না মুখ থেকে। তবুও বহু কষ্টে বলল,
‘আপনারা না চাইলেও আমি যাব ওই বাসায়। কারণ, ওই বাসায় মিলির ঘ্রাণ আছে। আর এই বাসায় মিলির অস্তিত্ব আছে। আমি যাব ওই বাসায়।’
আরও কিছুক্ষণ কথা হলার পর হাসান উঠে যায়। নিজের ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেয় সে। মিলির ছবির দিকে তাকায়৷
‘অসময়ে আমায় ছেড়ে চলে গেলে তুমি। তোমার কাছে অনেক কিছু চাইবার ছিল। চাইবার সুযোগ দিলে না। সব সময় নিজেরটুকুন বুঝে নিয়েছ। আমারটুকুন বুঝে নেওয়ার সুযোগ দিলে না। আমার প্রতি রাগ হয় মাঝে মাঝে। কিন্তু রাগও করতে পারি না। তুমি তো জানো, রাগপ আমার দ্বারা হয় না। জীবনে কখনও যেই কাজ আমি করিনি সেই কাজটাও করে ফেলেছি। দেখলে তো, তোমার চলে যাওয়াটা আমায় কতটা খারাপ বানিয়ে দিয়েছে। আমি তোমাকে কখনও ভুলতে পারব না মিলি। কখনও না। ভালোবাসি আমি তোমায়। তুমি শারীরিক রুপে আমার কাছে নেই এটা যেমন সত্যি তেমনি এটাও সত্যি যে তুমি আমার মনে থাকবে। সারাজীবন। সাজিকে নিয়ে তোমার মনে কোনো রাগ রেখো না। সাজি তার জায়গায় থাকবে আর তুমি তোমার জায়গায়। আগেই বলেছি সাজি, আমি তোমায় সারাজীবন ভালোবাসব।’
হাসানের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। এই ঘরে রাখা মিলির কিছু ছবি আছে। ছবিগুলো সে সরাতে চায় না। এই বিষয়টা নিয়ে সে কথা বলবে।
অয়নন্দিতার হাতে একশো কাজ। সাজির বন্ধুরা এসেছে। মেহেন্দির অনুষ্ঠান চলছে। নায়াকে বকা ঝকা দিয়ে মেহেদী দিতে বসিয়েছে সে। নায়া মেহেদী দিতে চাইছিল না। সে কাজ করবে। এত কাজ অয়নন্দিতার উপর ছেড়ে নিজে বসে বসে মেহেদী দিবে এটা তার কাছে খারাপ লাগছিল। অয়নন্দিতা, রওশন বেগম বুঝিয়ে তাকে বসিয়েছে। নায়া এ বাড়িতে বউ না মেয়ের মতো চলতে পারে। কোনো বাধা নিষেধ নেই। শাশুড়ি যেন মা আর জা যেন বড়ো বোন। নায়ার কোনো কিছুতেই সমস্যা হয় না। বিয়ের আগে ফারাশ যেমনটা বলেছিল তার থেকে অধির আদর পায় নায়া এ বাড়িতে।
অয়নন্দিতার সব দিকে চোখ। সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা থেকে শুরু করে পরেরদিনের অনুষ্ঠানের সবটাই অয়নন্দিতা সামাল দিচ্ছে। বাইরের দিকটা ফারহান এবং ফারাশ দেখছে।
রান্নাঘরে অয়নন্দিতা কাজে ব্যস্ত। রওশন বেগম এসে সামনে দাঁড়ান। শাশুড়িকে দেখে অয়নন্দিতা বলে,
‘কী ব্যাপার, আপনি এখানে কী করছেন? আপনি হাতে মেহেদী লাগাননি কেন?’
‘বউ কি আমি নাকি তুমি?’
‘বউ তো স্টেজে। আমি তো বউয়ের ভাবী।’
‘তুমি আমার ছেলের বউ। আমার ঘরের লক্ষী। তুমি এখানে খেটে মরতেছ। কাজের মানুষরা সব গোছাবে। তুমি চলো, মেহেদী দিবে।’
‘মা, আমি এইগুলো শেষ করি। এরপর বসব।’
‘নাহ। বহু কাজ করেছ। ওইদিকে নায়ারও মেহেদী দেওয়া শেষ। ফারহান কয়েকবার এসে এদিক-ওদিক তাকিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, আমার ছেলেটা তার বউকে খুঁজছে। চলো, বসবে চলো।’
‘মা, আমি পরে মেহেদী দিয়ে নেব।’
‘তুমি এখনি মেহেদী দিবে। নয়তো সাজি রাগ করবে। সাজি পাঠিয়েছে আমায়। এখনি চলো।’
শাশুড়ির আবদারে রাজি হয় অয়নন্দিতা। রান্নাঘর থেকে বের হবে এমন সময় শাশুড়ি ডাক দেয়।
‘অয়নন্দিতা।’
পেছনে তাকে অয়নন্দিতা।
‘জি মা।’
‘সবুজ শাড়িতে তোমায় খুব সুন্দর লাগছে।’
এক গাল হাসে অয়নন্দিতা। নিজের পরনের শাড়ির দিকে তাকায় একবার। মাথা উঁচু করে শাশুড়িকে থ্যাংকস জানিয়ে স্টেজের দিকে পা বাড়ায় সে৷
ফারহান কাজের ফাঁকে একবার স্টেজের দিকে এগিয়ে আসে। তার চোখ এদিক-ওদিক। তার মিষ্টি বউকে খুঁজছে সে। যদিও অয়নন্দিতা বলেছিল, স্টেজে আমায় খুঁজে লাভ নেই। কারণ, আমি ব্যস্ত থাকব। তবুও তার নজর খুঁজছে অয়নন্দিতাকে।
ফারাশ আর নায়াকে চোখে পড়ে তার। নায়া তার হাতের মেহেদী দেখাচ্ছে ফারাশকে। তারা সেল্ফি তুলছে। নায়া ফারাশের কথা হাসছে। এদের দু’জনের জুটি টা বেশ সুন্দর। অয়নন্দিতাকে চোখে পড়ে ফারহানের। সবুজ শাড়িতে অসাধারণ লাগছে অয়নন্দিতাকে। রজনীগন্ধার মালাটায় অপূর্ব সুন্দর লাগছিল তার বউকে। পেছন থেকে সাজি এসে ভাইকে নাড়া দেয়।
‘কী দেখছ ওইদিকে?’
বোনের কথায় নিজেকে কন্ট্রোল করে ফারহান।
‘কোথায় কী দেখছি?’
‘মিথ্যা বলছ কেন? তুমি ভাবীকে দেখছিলে। তাই না’
বোনের কথাটা সত্যি। আসলেই সে তার বউকে দেখছিল। ফারহান এক নজর ফারাশ আর নায়া’র দিকে তাকায়। এরপর চট করেই মাথায় বুদ্ধি আনে।
‘সাজি, শোন না।’
‘বলো।’
‘তোর মেহেদী দেওয়া শেষ?’
‘এই দেখ৷ কী সুন্দর হয়েছে না।’
‘বাহ! খুব সুন্দর হয়েছে। এবার একটা কাজ করতে পারবি।’
‘কী কাজ?’
‘আমার মোবাইলটা নিয়ে যা। তোর ভাবী যেন না দেখে, কিছু ক্যান্ডিট ছবি তোল। না যেন দেখে।’
‘ওহ হো৷ ক্যান্ডিট ছবি!’
‘ইয়ার্কি না করে ছবি তোল গিয়ে।’
‘ওকে।’
ভাইয়ের কথায় সাজি স্টেজের দিকে এগিয়ে যায়। সাজি হাঁটছে। এমন সময় সাজির মোবাইলে মেসেজ টোন বেজে ওঠে। যেখানে লেখা আছে, সাজি, জানি তুমি ব্যস্ত। ফ্রী হয়ে ফোন দিও। কিছু কথা বলব৷ সিরিয়াস কিছু ভেবে নিও না। নরমাল কথা বলব। মেসেজটা পড়ে সাজি মুচকি হাসে।
চলবে………………….