প্রাণস্পন্দন•পর্বঃবোনাস_পর্ব

0
2071

#প্রাণস্পন্দন
#বোনাস_পর্ব
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

সারাদিনের ক্লান্ত,শ্রান্ত কিন্তু প্রফুল্ল মন নিয়ে বাসায় ফেরে আয়েন্দ্রি। অবসাদগ্রস্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতে পারলেই যেন সর্বসুখ প্রাপ্তি হবে।

সিঁদর মেঘে আচ্ছন্ন আকাশ। শীতল বহ্নিসখ। একটু পরেই মসজিদ হতে ভেসে আসবে মধুর গুঞ্জনে মাগরিবের আযান!

আয়েন্দ্রি ঘরে ঢুকেই চকিত হয়! একজন ভদ্রলোক বসে আছে। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। দীর্ঘ কাঁধ। গাম্ভীর্যপূর্ণ আনন। আয়েন্দ্রি পূর্ণ নজর দিয়েও চিনতে পারল না ভদ্রলোককে। আলফাজ সাহেব দৃঢ় চোখে তাকালেন আয়েন্দ্রির দিকে। আয়েন্দ্রি তার দৃষ্টি অবনত করে নিজের কক্ষের দিকে গেল।

ঘামতে শুরু করে আয়েন্দ্রি। ঢিবঢিব করছে তার বুক। বিচলিত মস্তিষ্ক। উচাটন চিন্ত ভাবনা। দরজার আড়ালে দাঁড়ায় আয়েন্দ্রি। ভদ্রলোকের নম্র গলার স্বর শুনতে পায় সে।

“আমি তাহলে আজ উঠি জনাব। ছেলেপক্ষকে বিয়ের তারিখ ঠিক করার কথা বলব।”

আলফাজ সাহেব দ্বিরূক্তি করলেন। বললেন—

“তারা তো আমার মেয়েকে দেখেনি?”

ভদ্রলোক মৃদু হেসে বললেন—

“ছেলে আপনার মেয়েকে দেখেছে। আর ছবি তো আমি তার মামা-মামিকে দেখিয়েছি। তাদের কোনো আপত্তি নেই।”

আলফাজ সাহেব স্বগৌরবে বললেন—

“তা হয় না। আমি তো আর ছেলেকে দেখিনি। তাকে আমি সরাসরি দেখতে চাই। আপনি তাদের শুক্রবার আসতে বলুন। আয়েন্দ্রিকেও না হয় আরেকবার পরখ করে নিল!”

ভদ্রলোক অমায়িক হেসে বললেন—

“জি জনাব, উত্তম প্রস্তাব। আমি তাদেরকে আপনার প্রস্তাব জানাব। আজ তাহলে আসি। আসসালামু আলাইকুম।”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। সাবধানে যাবেন।”

“জি, শুকরিয়া।”

ভদ্রলোক যেতেই আয়েন্দ্রি নিজের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে। সজলনেত্রে চেয়ে বিদুর গলায় বলল—

“এসব কী বলছো বাবা? প্রাণতো তোমাকে কথা দিয়েছে।”

আলফাজ সাহেব কঠিন গলায় বললেন—

“আমি কথা দেইনি। ওই ছেলের ওপর আমার ভরসা নেই। ছবিটা টেবিলে রাখা আছে। দেখে নিয়ো। ভালো ছেলে। একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তোমাকে পছন্দ করে নিজ থেকে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। বাবা-মা নেই এইজন্য নিজে আসেনি।সবকিছুরই একটা নিয়ম আছে। লোক মারফত খবর পাঠিয়েছে। বিয়ের পরও তোমাকে পড়াবে। তা নিয়ে তোমায় চিন্তা করতে হবে না। নিজেকে প্রস্তুত করো।”

আয়েন্দ্রি ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল—

“বাবা, তুমি প্রাণকে ধোঁকা দিতে পারো না। তুমি ওকে কথা দিয়েছ।”

“এমন কোনো কথা আমি ওকে দেইনি আয়ু। ছেলেপক্ষ দুদিন পর তোমাকে দেখতে আসবে। তৈরি থেকো।”

“বাবা! বাবা!”

আলফাজ সাহেব দৃঢ়চিত্তে হেঁটে গেলেন। একরাশ ক্ষোভ নিয়ে নিজের কক্ষে গিয়ে বিছানায় বসল আয়েন্দ্রি। ঝমঝমিয়ে কাঁদছে সে। ঝুমা নরম পায়ে এসে আয়েন্দ্রির পাশে বসলেন। আয়েন্দ্রি খপ করে মায়ের হাত ধরে বলল—

“মা, তুমি বাবাকে বুঝাও না। বাবা কেন এমন করছে? প্রাণ বলেছে ও সব সামলে নেবে। ওকে একটু সময় দাও তোমরা।”

ঝুমা ভারাক্রান্ত গলায় বললেন—

“ছেলেটাকে আমারও পছন্দ। কিন্তু তোর বাবাতো কারো কথা শুনছে না। আর দেখতেই তো আসবে। দেখলে তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না।”

“যদি বিয়ে হয়ে যায়?”

ঝুমা চুপ রইলেন। এই প্রশ্নের জবাব তিনি দিতে পারলেন না। আয়েন্দ্রি কম্পিত গলায় বলল—

“বলো না মা, যদি বিয়ে হয়ে যায়?

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ঝুমা। চাপা কষ্ট নিয়ে বললেন—

“তাহলে ভাগ্যকে মেনে নিতে হবে।”

আয়েন্দ্রি থম মেরে রইল। যদি এই কথা নিষ্প্রাণ জানে, তাহলে কী করবে সে? প্রাণ কী তার স্পন্দনকে তার থেকে আলাদা হতে দেবে?
,
,
,
“ধ্রুবতারাকে মারলেই কী সব সমাধান হয়ে যাবে?”

নিষ্প্রাণের করা প্রশ্নে ভাবান্তরহীন নয়নতারা। ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে একটা জ্বলন্ত মোমবাতি হাতে সে পায়চারি করছে। নিষ্প্রাণ ভাবিত নয়নে চেয়ে আছে তার করা প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষায়।
নয়নতারা কোমল গলায় বলল—

“যদি মেরে ফেলিস তাহলে ও তোর আকাশেই থাকবে। অন্যের আকাশে যাবে না।”

“কিন্তু আমি যে ওকে ভালোবাসি!”

“ভালো তো আমিও সবাইকে বেসেছি। কই তুই ছাড়া তো কেউ আমার ভালোবাসার মূল্য দিলো না।”

নিষ্প্রাণ নিস্পৃহ গলায় বলল—

“ওকে আমি মারতে পারব না।”

নয়নতারা সেই মোমবাতি হাতে একদম নিষ্প্রাণের সামনে এসে দাঁড়ায়। কিশোরী নয়নতারা থেকে যুবা নিষ্প্রাণ বেশ লম্বা। মৃত্যুর পরে তো মানুষের বয়স বাড়ে না!
নয়নতারা আবেশিত গলায় বলল—

“যদি সত্যিই ওর বিয়ে হয়ে যায়! কী করবি তুই?”

নিষ্প্রাণ সাবলীল গলায় প্রত্যুত্তর করে।

“যা করে এসেছি। মৃত্যু !”

অট্টহাসিতে অন্ধকার ঘরে আলোড়ন তুলে নয়নতারা। চোখের সামনে নিজের খুনিকে দেখে পৃথিবীর কেউ এত পুলকিত হয় না যতটা নয়নতারা হয়! মৃত্যু তার শরীরের মুক্তি দিলেও আত্মার মুক্তি দেয়নি।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here