#জীবন_সাথী💜
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
২৪.
~
আপনি আমাকে ভালোবাসেন মি. আরাফ মোহাম্মদ।সিরিয়াসলি!আমি তো ভাবতেই পারছি না।উফফ!ভাবতেই সারা শরীরে শিহরণ দিয়ে উঠছে।আচ্ছা স্যার আপনি আমাকে কবে থেকে ভালোবাসতে শুরু করেন বলুনতো!ইশ!কাল কি মিষ্টি করে বলেছিলো;অনু আমি তোমাকে ভালোবাসি।হায় মে মার জাভা;
.
বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে উঠে অনু।চোখ মুখ তার খুশিতে ঝলমল করছে।বারান্দার এক পাশে দেয়ালটায় হেলান দিয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছটার সাথে কথা বলছিলো সে।তার আরাফ স্যার তাকে ভালোবাসে।কাল সেটা আরাফ নিজের মুখে বলেছিলো আর আজ রিহান ও বলেছে।অনুর যেন আজ খুশির শেষ নেয়;এই কয়দিনে সে যে আরাফের উপর ভীষণ রকম দুর্বল হয়ে পড়েছে তা আজ অনুর মুখের হাসিই প্রমান করে দিচ্ছে।অনু তার চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়।তারপর মনে মনে বলে,
”ভালোবাসি আরাফ স্যার!”
এইটুকু বলেই হুট্ করে সে চোখের পাতা খুলে ফেলে।তারপর মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বলে,
”এত সহজে তো আমি আপনার ভালোবাসা স্বীকার করবনা মি.আরাফ মোহাম্মদ।আপনাকে আগে প্রচুর জ্বালাবো;জ্বালাতে জ্বালাতে আপনার জীবন ফালাফালা করে ফেলবো।হু!তখন বুঝবেন এই অনুকে কান ধরে দাঁড় করানোর কি পরিণতি হয়;আমাকে যখন ভালোবাসে তাহলে আমি প্রপোস করার পর আমাকে সবার সামনে কান ধরে দাঁড় করিয়েছিলেন কেন হু?এটার জন্য হলেও তো আপনাকে আগে নাকানিচুবানি খেতে হবে তারপর আছে না আমার বাবাকে ১ বছর আমাদের থেকে দূরে রাখার জন্যও আপনি শাস্তি পাবেন।আর আপনার সমস্ত শাস্তি দেয়া শেষ হওয়ার পরই আমি আপনার ভালোবাসা গ্রহণ করবো।”
শক্ত মুখে নিজের মনে কথা গুলো বললো অনু।পরক্ষনেই সে আবার ভাবে,
”হুম খুব তো বড় বড় কথা বলেছি স্যারকে নাকানিচুবানি খাওয়াবো।কিন্তু আমার এই লুচু মনটা তো এখনই স্যারের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আকুপাকু করছে;আমি নাকি আবার ভাব নিয়ে থাকবো।আমার এই লুচুমির স্বভাবের কারণেই তো আর পারবো না।”
এইটুকু বলে অনু মনে মনে ভাবে,
”না না অনু তোকে পারতেই হবে।কোনোভাবেই কাউকে এখন বুঝতে দেওয়া যাবে না যে তুইও আরাফ স্যারকে পছন্দ করিস বিশেষ করে ওই শাকচুন্নি বান্ধবীদের তো নাই।”
.
কথা গুলো ভেবে অনু চোখ বন্ধ করে বড় করে একটা নিশ্বাস নেয়;তারপর সে চোখ খুলতেই দেখে আরাফ তার সামনে দাঁড়ানো।আরাফ অবাক চোখে অনুকে দেখছে;অনুও আরাফের দিকে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।সে কি আদৌ আরাফকে সত্যিই দেখছে নাকি এটা শুধু মাত্র তার কল্পনা সেটাই বুঝতে পারছে না সে।বেশ কিছুক্ষন ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে অনু বলে উঠে ,
”আপনি কি সত্যিই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আরাফ স্যার?নাকি আমি আপনাকে জাস্ট ইমাজিন করছি কোনটা?”
অনুর কথা শুনে আরাফের ব্রু কুঁচকে আসে।সে অনুর কিছুটা কাছে এসে বলে,
”তোমার কি মনে হয়?”
অনু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরাফকে দেখছে।তারপর সে কিছু একটা ভেবে আরাফের হাতে জোরে একটা চিমটি মারে।অনুর এমন কাজে আরাফ পুরো বেকুব হয়ে যায়।এই মেয়ের কি করে না করে নিজেই সেটা জানে না।আরাফ ব্রু কুঁচকে বলে,
”চিমটি দিলে কেন?”
আরাফের কথা শুনে অনু গোল গোল চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
”তার মানে সত্যি আপনি আমার কল্পনা না আপনি সত্যিই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।”
এইটুকু বলে অনু দাঁত দিয়ে জিভ কেটে বলে,
”সরি স্যার!আমার চিমটিটা কি বেশি লেগেছে।”
অনুর এমন চুপসে যাওয়া মুখটা দেখে আরাফের ভীষণ হাসি পাচ্ছে।সে অনুকে আরো ভয় দেখানোর জন্য ইচ্ছে করে রেগে বলে ,
”তোমার সাহস তো কম না।তুমি আমাকে চিমটি কাটো।তোমার স্যারকে তুমি চিমটি দিলে;কি ভয়ানক সাহস তোমার!পি.এ কে বলতে হবে তার মেয়ের এই বেয়াদবির কথাটা।”
আরাফের এমন জোর গলার কথা শুনে অনু বেচারির তো কাঁদো কাঁদো অবস্থা।সে বিনয়ের স্বরে আরাফকে বলে,
”সরি স্যার!সত্যি আমি বুঝতে পারিনি।প্লিজ আপনি বাবাকে কিছু বলবেন না।আমি সত্যি বলছি আর জীবনেও এমন কিছু করবো না প্রমিস।”
অনুর কথা শুনে আরাফ তার হাত দুটো বুকের উপর ভাঁজ করে অনুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
”না এত সহজে তো ক্ষমা করা যাবে না।তুমি যা করেছো সেটা অনেক বড় অন্যায়।স্টুডেন্ট হয়ে স্যারকে চিমটি কাটো কত বড় আস্পর্ধা।আর এত বড় অন্যায় করার পরও তুমি বলছো তোমাকে কোনো পানিশমেন্ট না দিয়েই ছেড়ে দিতে।কখনোই না।”
আরাফের কথায় অনু তো পারে না এক্ষনি কেঁদে দেয়।আকাশে মেঘ জমেছে যেকোনো সময় বৃষ্টি হতে পারে।অনুকে দেখে আরাফের কাছে এখন তেমনই মনে হচ্ছে।চোখে তার টলমল করা পানি গুলো এক্ষনি গাল বেয়ে নেমে যাবে।অনু কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,
”কি পানিশমেন্ট স্যার।আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো তবু আপনি বাবাকে কিছু বলিয়েন না প্লিজ।”
আরাফ মনে মনে ভাবে এই মুখ্যম সময় অনুর পেট থেকে কথা বের করার।আরাফ আবার তার চোখ মুখ শক্ত করে বলে,
”ঠিক আছে বলবোনা।তবে আমি এখন তোমাকে যা জিজ্ঞেস করবো তার সত্যি সত্যি উত্তর দিতে হবে।আর যদি একটুও মিথ্যে বলার চেষ্টা করো তাহলে আমি এক্ষনি গিয়ে পি.এ কে সব বলে আসবো।কি বুঝেছো তো?”
আরাফের কথা শুনে অনু মনে মনে ভাবে আরাফ তাকে কি এমন জিজ্ঞেস করবে।কালকের কোনো কথা নয়তো?যদি এমন কিছু হয় তাহলে সে কি বলবে তাই ভাবছে সে।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর অনু বিনয়ের স্বরে বলে,
”জ্বি স্যার বলুন।আমি সব সত্যিই বলবো?”
আরাফ মুচকি হাসে।তারপর সে অনুর আরো কিছুটা কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।আরাফের এমন কাছে আসায় অনু দু কদম পিছিয়ে যায়।অনু আড় চোখে একবার আরাফের দিকে তাকায়।আরাফের চোখের উপর চোখ পড়তেই থমকে যায় সে।আরাফের ওই হালকা বাদামি চোখগুলিতে আজ এক অন্য রকম অনুভূতি দেখতে পাচ্ছে সে।আরাফের চোখে এক বিশাল মায়া সমুদ্র আছে যেই এই চোখের দিকে তাকাবে সেই এই সমুদ্রে ডুবে যাবে।এই মুহূর্তে অনু ও ডুবে যাচ্ছে।চাইলেও সে চোখ ফিরিয়ে আনতে পারছে না।অনুর কাছে মনে হচ্ছে আরাফের চোখ গুলো যেন তাকে পসেস(নিয়ন্ত্রন) করছে।অনুর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আরাফ অনুর মুখের কাছে কিছুটা ঝুকে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে মিহি কন্ঠে বলে উঠে,
”ভালোবাসো আমায়?”
আরাফের এই মিহি কন্ঠের কথা শুনে কেঁপে উঠে অনু।আরাফ তার কানের কাছে গিয়ে কথা বলার সময় আরাফের ঠোঁটগুলো অনুর কান ছুঁয়েছিল।তাতে করে অনু যেন পুরো ফ্রিজড হয়ে গিয়েছে।অনু কিছুটা দূরে সরে যেতে নিলেই আরাফ অনুর কোমর আগলে তাকে তার খুব আছে নিয়ে আসে। অনুর তো এবার জান যায় যায় অবস্থা।আরাফের এমন অদ্ভুত আচরণ সে হজম করতে পারছে না।তাই সে কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে বলে,
”ক-কি ক-করছেন স্যার?”
আরাফ অনুর ঠোঁটের উপর আঙ্গুল দিয়ে বলে,
”হুশ!অন্য কোনো কথা না।শুধু আমি যা বলেছি তার উত্তর দাও।”
কথাটা বলে আরাফ তার বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে অনুর ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে আবারো বলে উঠে,
”কি হলো বলো ভালোবাসো কিনা?চুপ থাকলে হবে না।তাড়াতাড়ি উত্তর দাও।”
ঠোঁটের উপর বার বার আরাফের আঙুলের বিচরণে অনুর তো পুরো দম বন্ধকর অবস্থা তৈরী হয়েছে।অনুর মনে হচ্ছে এক্ষনি তার সমস্ত দম ফুরিয়ে সে মারা যাবে।অনুর ভীষণ অস্বস্থি হচ্ছে; সেটা বুঝতে পেরে আরাফের ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি ফুটে উঠে।আরাফ আস্থে করে ঠোঁট থেকে হাত নামিয়ে অনুর গলার আছে নিয়ে যায়;তারপর সে আস্থে করে অনুর গলার উপর হাত দিয়ে বিচরণ করতে থাকে।অনু এবার আর থাকতে না পারে আরাফকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়;মনে হচ্ছে অনেকক্ষন পর সে নিশ্বাস নিতে পারছে।অনুর অবস্থা দেখে আরাফ মুচকি হাসে।আরাফের হাসি দেখে অনুর এবার ভীষণ রাগ হচ্ছে।অনু চোখ মুখ শক্ত করে বলে,
”আপনি কি পাগল হয়ে গিয়েছেন স্যার?কি করছিলেন আপনি?”
আরাফের ঠোঁটের কোণে এখনো মিষ্টি একটা হাসি ঝুলানো।সে বাঁকা হেসে বলে,
”কই কি করেছি আমি?আমি তো জাস্ট তোমাকে ছোট্ট একটা প্রশ্ন করেছি এটার ঠিক ঠিক উত্তর দিয়ে দাও আমিও এখান থেকে চলে যাচ্ছি।”
অনুর এবার মনে পড়ে আরাফের প্রশ্নের কথা!সে আরাফকে ভালোবাসে কিনা এটাই তো জিজ্ঞেস করেছে?কিন্তু এভাবে হুট্ করে আরাফ তাকে এই প্রশ্ন কেন করলো।অনু যে এতো কিছু প্লেন করলো সব কি তাহলে জলে ভেসে যাবে।না না এতো সহজে সে আরাফের কাছে নিজেকে ধরা দিবে না।কথাটা ভেবে অনু নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,
”স্যার আপনি এইসব কি বলছেন?আমি কেন আপনাকে ভালোবাসতে যাবো।আপনি আমার স্যার হন;স্যার হলো বাবার সমান!এই ক্ষেত্রে আমি আপনাকে আমার বাবার মতো ভালোবাসতে পারি।তাই না স্যার”
অনুর কথা শুনে আরাফের মুখের মুচকি হাসিটা বিলীন হয়ে যায়।আরাফ চোখ মুখ কুঁচকে বলে,
”লাইক সিরিয়াসলি।আমি তোমার বাবার মতো!তুমি যে বোকা সেটা আমি আগেই জানতাম কিন্তু তুমি যে এত বড় মাপের আহাম্মক তা আজকে জানলাম।ইডিয়ট একটা।”
.
কথাটা বলে আরাফ রাগে হন হন করে অনুর রুম থেকে বেরিয়ে যায়।অনু যখন বলেছিলো আরাফ তার বাবার মতো তখন আরাফের মুখের অবস্থা যা হয়েছিল না অনু ভেবেই হাসতে হাসতে কুপোকাত হয়ে যাওয়ার অবস্থা।অনু পেট চাপড়ে হেসে বলে,
”আহা বেচারা স্যার!আপনার জন্য আমার ভীষণ মায়া হচ্ছে।আসছিলেন আমাকে ভালোবাসার কথা বলার জন্য আর আমি কিনা আপনাকে আমার বাবা বানিয়ে দিলাম।”
কথাটা বলে আবারো হাসতে আরাম্ভ করে অনু।
.
নিজের রুমে এসে ধপ করে খাটে বসে পড়ে আরাফ।এই মুহূর্তে অনুর উপর তার ভীষণ রাগ হচ্ছে।কথায় চেয়েছিলো অনুর মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনবে আর অনু কি বললো সে কিনা তার বাবার মতো।কথাটা ভেবেই চোখ মুখ কুঁচকে আসবে তার।তারপর কিছু একটা ভেবে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বলে,
”আমাকে কোন দিক দিয়ে বাবার মতো লাগে হু!আমাকে তো বর বর লাগে সেটা কি বোঝেনা অনু!স্টুপিড একটা বলে কিনা আমাকে সে বাবার মতো ভালবাসবে।ইচ্ছে তো করছে এক থাপ্পড়ে সব গুলা দাঁত ফেলে দিতে।”
এইটুকু বলেই কিছু একটা ভেবে আরাফের ঠোঁটের কোণে দুষ্ট একটা হাসি ঝুলিয়ে মনে মনে বলে,
”যায়ই বলোনা কেন জান।আজ তোমার চোখে মুখে আমার প্রতি অন্য রকম অনূভুতি দেখেছি আমি।আমি খুব ভালো করেই জানি তুমি ও আমার প্রতি দুর্বল।কিন্তু সেটা প্রকাশ করছো না।আমিও দেখবো জানেমান কতদিন তুমি তোমার দুর্বলতা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে পারো।খুব শীঘ্রই সেই দিনটা আসবে যেদিন তুমি নিজে আমার কাছে এসে বলবে;’ভালোবাসি আরাফ’ ।
চলবে..
(আল্লাহকে ভয় করো;পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়)