উপন্যাস প্রপর্ণ, পর্ব-২০

0
3153

#উপন্যাস_প্রপর্ণ(২০)
#কুরআতুল_আয়েন

শিউলি মারা যাওয়ার আজকে একসপ্তাহ পার হয়ে গেলো।আশেপাশের মানুষগুলোর কর্মকাণ্ড ঠিক থাকলেও আশাকুঞ্জ নিবাস আগের মতোই নিস্তব্ধ।রাত নেই দিন নেই জাবেদা ডুকরে কেঁদে উঠেন।শিউলির কবরের পাশে গিয়ে বসে থাকেন।কবরে হাত বুলিয়ে দিয়ে নিজের মনকে শান্ত রাখেন,এই ভাবেন উনি শিউলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।শিউলির সমস্ত ছবি,জামাকাপড় নিজের কাছে রাখেন।এগুলো দেখলে তিনি অনুভব করতে পারেন শিউলি তাঁর বুকে মাথা নুইয়ে শুয়ে আছে,তাঁর আঁচল নিয়ে খেলছে।অলি সাহেব নিজের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও তিনি প্রতিটা মুহূর্ত শিউলির জন্য কাঁদেন।নিরবে বসে শিউলির জন্য চোখের পানি বিসর্জন দেন।বিনা আক্কাসের সাথে বিদেশে পাড়ি জমানোর জন্য শিউলিকে শেষ দেখতে পারে নি।তবে যখন শুনেছে শিউলির সাথে এইরকম একটা নির্মম ঘটনা ঘটে গিয়েছে তখন থেকেই বিনা শিউলির জন্য কেঁদে ভাসিয়েছে।আক্কাস বিনাকে শান্ত করতে গিয়ে বেশ হিমশিম খেয়েছে।পরিবারের ছোট সদস্য রা একটু বেশিই আদর পেয়ে থাকে।শিউলি ছোট হওয়ায় সবার থেকে বেশি আদর পেয়েছে।শিউলি আর সবুজ এক ক্লাসে পড়লেও সবুজ শিউলির থেকে এক বছরের বড়।অন্যদিকে সবুজ,সারাদিন মনমরা হয়ে বসে থাকে।স্কুলে যেতে চায় না,সুমনা অনেক কষ্টে বুঝিয়ে সুঝিয়ে সবুজকে স্কুলে পাঠান।আর নিরবে কাঁদেন।বেলী বিনা বিয়ে হওয়ার পর শিউলিই তো ছিলো বংশের একমাত্র মেয়ে।আজকে সেও পরকালে পাড়ি জমিয়েছে।
পুলিশ নিজেদের কাজকর্ম করে যাচ্ছেন।আপ্রাণ,চেষ্টা করছেন করিমকে খুঁজে পাওয়ার জন্য।পুলিশের জন্য কাজ টা আরো সহজ হতো যদি শিউলির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট টা থাকতো।লাশ দেখেই বুঝা গিয়েছে শিউলিকে ধর্ষণ করে মারা হয়েছে।আর,ব্লেডের আঁচড়ের দাগ গুলো যে স্পষ্ট ক্ষোভ থেকে দিয়েছে তাও কারোর অজানা নয়।বুরাগ পুলিশকে কড়া আদেশে বলে দিয়েছে যেকোনো মূল্যে ওর করিমকে ধরা চায়।তার জন্য যা করতে হয় তাই করবে।
শিউলির আরেক খুনি রোকসানা!!যা সবার কাছে অজানা।শিউলি নিজের জীবনকে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলো কিন্তু,রোকসানার বাঁশের আঘাত টায় শিউলি নেতিয়ে গিয়েছিলো।সেই,রোকসানা নিশ্চিন্ত মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।মাঝেমধ্যে জাবেদাকে গিয়ে স্বান্তনা দিয়ে আসছে আর সেই সাথে খবর নিচ্ছে সবকিছুর।আমাদের আশেপাশের মানুষগুলোই হুটহাট করে বড্ড ভয়ংকর হয়ে উঠে।

বেলীর শরীর কিছুটা ভালোর দিকে।মাথার আঘাত টাও কমে এসেছে।মাঝেমধ্যে ব্যথা করে উঠে।আজকে আবার তারা ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিবে।বেলী চেয়ারে বসে বুরাগের ব্যাগ গোছানো দেখছে।সাহস করে বুরাগ কে কথাটা বলতে গিয়েও বলতে পারছে না।একবার বুরাগের সামনে হেঁটে আসে,আরেকবার বুরাগকের কাছে সাহায্যের নাম করে এগিয়ে যায়।তবুও,বুরাগ বেলীকে পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।বেলীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলছে।কিন্তু বেলী তো আর বিশ্রাম করার মেয়ে না।মূলত বুরাগ এইজন্যই বেলীকে পাত্তা দিচ্ছে না।মনে মনে রাগে ফুঁসছে।বেলী গলাটা পরিষ্কার করে আমতাআমতা করে বললো,

–“একটা কথা বলতে চাই।”

বুরাগ নিজের মতোই ব্যস্ত।বেলীর কথা সম্পূর্ণ তার কান পর্যন্ত পৌঁছছে।তাও কোনো উত্তর দিচ্ছে না।না জানি উত্তর দিতে গিয়ে কখন বকা দিয়ে দেয়।তাই নিশ্চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করছে বুরাগ।

বেলী শাড়ির আঁচল টা এপাশ ওপাশ করে দেখছে।আঁচল থেকে বের হয়ে আসা সুতা গুলোকে ধরে টানছে।বুরাগের কোনো উত্তর না পেয়ে বেলী কিছুটা চেঁচিয়ে বললো,

–“শুনছেন আপনি!বলছিলাম আমি একটা কথা বলতে চাই।”

বুরাগের ব্যাগ গুছানো শেষের দিকে।শুধু নিজের তোয়ালে আর বেলীর একটা শাড়ি রয়ে গিয়েছে।বেলীর শাড়িটা ঢুকিয়ে সোজা হয়ে বসলো বুরাগ।টি-শার্টের গলাটা একটু টেনেটুনে গম্ভীর মুখ করে বললো,

–“কি বলবে বলো।তবে উল্টো পাল্টা কিছু বললে খারাপ কিছু হবে কিন্তু।”

বুরাগের গম্ভীরমুখের কথা শুনে বেলী বার কয়েক চোখের পলক ফেললো।শুকনো একটা ঢোক গিলে বললো,

–“বলছিলাম আমি এইখানে কিছুদিন থাকতে চাই আম্মার সাথে।”

বুরাগ গরম চোখে তাকালো বেলীর দিকে।শরীরে তো আগে থেকেই গরম লাগছে আর এখন বেলীর কথা শুনে মাথা গরম হয়ে গিয়েছে।ক্যাটক্যাট গলায় জবাব দিলো,

–“না!এইটা হবে না।তুমি আমার কাছে থাকবে।পারলে আমি মা’কে ঢাকা নিয়ে যাবো আমাদের সাথে কিন্তু তোমাকে কিছুতেই আমার চোখের আড়াল হতে দিবো না।”

বেলীর মেজাজ এখন যেনো সপ্তম আকাশে ছুঁইছুঁই করছে।কিন্তু কিছুতেই নিজের রাগ টাকে সংবরণ করতে পারছে না।অবশেষে না পেরে কিছুটা তেজী গলায় বললো,

–“এতোই ভালোবাসা আপনার,যার জন্য আমাকে আপনি চোখের আড়াল হতে দিচ্ছেন না।আগে এমন ভালোবাসা কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলেন আপনি?”

ঘামে লেপ্টে থাকা চুল গুলো কপাল থেকে সরাতে সরাতে বুরাগ বললো,

–“ভালোবাসা না থাকলে বিয়ের কয়েকমাসের মাথায় মা হতে না।তোমার মধ্যে যে বেড়ে উঠছে সে তো আমাদের ভালোবাসারই অংশ।”

বেলী হতভম্বের মতো তাকিয়ে রইলো বুরাগের দিকে।বুরাগ নিজের মতোই ব্যস্ত।মনে হচ্ছে,তার আশেপাশে কেউ নিয়ে।হুট করেই বেলী শব্দ করে কেঁদে উঠলো।বেলী কেন কান্না করছে তা সে নিজেও জানে না।শুধু এইটুকু জানে তার কান্না করতে ইচ্ছা করছে।

বেলীর কান্না দেখে বুরাগ হন্তদন্ত হয়ে বেলীর কাছে এসে হাঁটুগেঁড়ে বসলো।ভয়ার্ত গলায় বেলীকে বললো,

–“খারাপ লাগছে তোমার বেলী?কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে বলো?”

বেলী বুরাগের হাত দুটো আঁকড়ে ধরলো।কান্নারত অবস্থায় বললো,

–“আমি থেকে যাই না কয়েকদিন।আম্মার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে।”

–“বেলী!তোমাকে ডাক্তার দেখাতে হবে।সব কিছু ঠিক আছে কিনা তা না জানা পর্যন্ত আমার শান্তি হচ্ছে না।কান্নাকাটি করেও কোনো লাভ হবে না।বাচ্চা না আসা পর্যন্ত তুমি আমার কাছেই থাকবে।পারলে,আমি মা’কে নিয়ে যাবো।তাও তুমি আমার কাছেই থাকবে।”

বেলী করুণ চোখে তাকালো বুরাগের দিকে।বুরাগ বেলীর গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলো।বেলী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বুরাগের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
—-
আট মাসে পড়েছে পারভীনের অন্তঃসত্ত্বা।এতেই পেট টা ফুলে আছে অনেক।দুটো বাচ্চা ধারণ করতে পারভীনের ইদানীং খুব কষ্ট হয়।তবে,তিনি অপেক্ষার প্রহর গুনছেন,কখন তিনি তাঁর সন্তানদেরকে কোলে নিতে পারবেন।বিছানা ছেড়ে আস্তে করে নেমে দাঁড়িয়েছেন পারভীন।পা’গুলো অতিরিক্ত ফুলে আছে পানি আসায়।কালকেই লিটন ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়েছিলো।ডক্টর বলেছেন ব্যায়াম করতে।অনেকক্ষণ বসে থাকায় পারভীনের কোমর ধরে গিয়েছে।বাসা সম্পূর্ণ ফাঁকা।তবে একটু আগেই আফিয়ার কাছ থেকে জেনে নিয়েছেন তারা রওনা করে দিয়েছে।পারভীন গুটিগুটি পা’য়ে সারারুম হাঁটছেন।হাত গুলো বারবার খুলছেন আর মুঠো করছেন।লিটন ত্রিশ মিনিট আগে ওয়াশরুমে গিয়েছে এখনো আসছে না।পারভীন শুধু ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকাচ্ছেন।একা একা কিছুতেই ভালো লাগছে না।একটু গল্প করতে ইচ্ছা করছে।টেবিলে উপর থেকে লিটনের ফোনটা বেজে উঠলো।পারভীন আস্তে আস্তে পা’য়ে টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলেন।ফোনে আসা কল টা দেখে কিছুটা চমকালেন পারভীন।বিরবির করে বলতে লাগলেন,
স্নিগ্ধার সাথে কবে থেকে কথা হয় ওর।একবারো তো বললো না আমাকে।

তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে লিটন বেরিয়ে আসলো ওয়াশরুম থেকে।পারভীনের হাতে নিজের ফোনটা দেখে কিছুটা ভড়কে গেলো।তড়িঘড়ি করে পারভীনের সামনে গিয়ে টান মেরে ফোনটা নিয়ে নিলো।ফোনের স্ক্রিনে স্নিগ্ধার নাম দেখে কিছুটা চমকে উঠলো।পারভীন এক অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন লিটনের দিকে।পারভীনের চাহনি দেখে লিটন ঠোঁটে একটা মেকি হাসি টেনে বললো,

–“তুমি উঠেছো কেন?শুয়ে থাকো।”

পারভীন সরুচোখে লিটনের দিকে তাকিয়ে বললেন,

–“ডক্টর এই তো বলেছেন আমাকে হাঁটতে।ভুলে গেলে নাকি।”

–“সারাদিন এতো কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হয় ভুলেই গেছিলাম।একদমই মনে ছিলো না।”

পারভীন কিছুটা ঠেস দিয়ে বললেন,

–“এতো কিসের চিন্তা তোমার।”

–“অফিসের হাজারটা কাজ থাকে বুঝলে পারভীন।”

পারভীন লিটনের কথার পিঠে কিছু বললেন না।পেটে হাত দিয়ে আস্তে করে বিছানায় বসে পড়লেন।লিটন তোয়ালে টা বারান্দায় মেলে দিয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো।পারভীন লিটনের দিকে তাকিয়ে বললেন,

–“স্নিগ্ধার সাথে কবে থেকে ফোনে কথা হয় তোমার??আর,ওই বা কেন তোমাকে ফোন দেয়??”

লিটন মনে মনে অনেকটা ভয় পাচ্ছে।পারভীন যে তাকে এমন একটা কথা জিজ্ঞেস করবে তা কিছুতেই ভাবতে পারে নি।পারভীনের কথায় আমতাআমতা করে বললো,

–“বেশিদিন হয় নি।আসলে মেয়েটা আমার কাছে চাকরি চেয়েছিলো তাই নাম্বার দিয়েছি।”

–“তো চাকরি দিয়েছো কি?”

–“না এখনো দেয় নি।তবে হয়ে যাবে।”

পারভীন কিছু না বলে ছোট উত্তরে জবাব দিলেন,

–“ওহহ্”

লিটন ওপাশ হয়ে শুয়ে আছে।বেশ বুঝতে পারছে তার সহধর্মিণী পারভীন তাকে সন্দেহ করছেন।তাও,সে কোনো পরোয়া না করেই ঘুমের দেশে তলিয়ে যাচ্ছে।অপাশে পারভীন একমনে চেয়ে আছে লিটনের দিকে।মনটা কেমন খঁচখঁচ করছে উনার।
—-
বেলী চলে যাওয়ায় যেনো জাবেদার বুকটা আরো শূন্য লাগছে।নিজেকে ঠিক রাখতে যেনো খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে জাবেদার জন্য।জাবেদা সামনের ঘরটায় নিঃশব্দে বসে রইলেন তার সামনেই পুলিশের তিনজন কর্মী বসে আছেন।শিউলির লাশ টা যেদিকে পাওয়া গিয়েছিলো সেদিকে আবারও তাঁরা তল্লাশি চালাতে এসেছেন।

রোকসানা সবেমাত্র বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলো।সামনের রাস্তাটায় পুলিশের গাড়ি দেখেই বড়সড় একটা ঢোক গিললো।দ্রুত পায়ে সামনে এগিয়ে গেলো।কিছুটা দূর আগাতেই জাবেদা আর পুলিশদের কে বসে থাকতে দেখে সেখানেই এগিয়ে গেলো।আশেপাশের অনেক মানুষই রয়েছে সেদিকে।তাদের আড়ালে রোকসানাও গিয়ে দাঁড়ালো।ভয়ে তার কপালে ঘামের রেখা জন্ম নিচ্ছে।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জাবেদা কে বলছেন,

–“যেখানে লাশ পাওয়া গিয়েছে তার পাশের কচু ক্ষেতের ঝোঁপঝাড়ে একটা বাঁশ পড়ে ছিলো।বাশের মধ্যে রক্তও ছিলো।আমাদের যতোটুকু মনে হচ্ছে এই বাঁশ দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।আসল খুনিকে তা আমরা না জানা পর্যন্ত বলতে পারছি না।করিমকে আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি।আমাদের সন্দেহও করিমের উপর হচ্ছে।তবে করিমের সাথে আরো কেউ ছিলো।”

জাবেদা ডুকরে কেঁদে উঠলেন।মুহুর্তেই উনার চোখের সামনে শিউলির মুখটা ভেসে উঠলো।জাবেদা হাতজোড় করে অনুনয় করে বললেন,

–“যাই কিছু হয়ে যাক না কেন করিমকে যেনো খুঁজে বের করা হয়।”

রোকসানার এবার সত্যি সত্যি ভয় হচ্ছে।ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।সবার আড়াল থেকে বের হয়ে সোজা ঘরে ঢুকে পড়লো।সুতি ওড়না টা দিয়ে কপালের ঘামটুকু মুছছে আর মনে মনে আওড়াচ্ছে,

–“আমি তো ভুইল্লাই গেছিলাম বাঁশটার কথা।বাঁশটা পুলিশের হাতে চইলা গেলো আমি যদি ধরা পইড়া যাই তাহলে!!করিম কি আমারে বাঁচাবে??আজকেই করিমের লগে কথা কওয়া লাগবো।না হলে দেরি হইয়া যাইবো।”
—–
বিকেল চারটা নাগাদ বেলীরা এসে পৌঁছায়।বুরাগ সবাইকে নামিয়ে দিয়েছে।এবার প্রস্তুতি নিচ্ছে ডক্টরের কাছে যাওয়ার জন্য।আফিয়া নেমে বুরাগ বললেন,

–“বেলীর মুখটা একটু দেখো বুরাগ!কেমন শুকিয়ে গিয়েছে।কালকে ডক্টরের কাছে গেলেই হবে।বেলীর জন্য আজকের জার্নি টা খুব কষ্ট হয়ে গিয়েছে।”

বুরাগ নাছোড়বান্দা হয়ে জবাব দিলো,

–“না মা!আমি এখনোই ডক্টরের কাছে যাবো।চেকআপ না করানো পর্যন্ত আমার শান্তি হচ্ছে না।বেশিক্ষণের ব্যাপার না!এই ধরো এক ঘন্টা।”

আফিয়া রাগ দেখিয়ে বললেন,

–“তোমাকে কিছু বলা মানেই দোষ।নিজের জেদ টা সবসময় বজায় রেখেছো।”

আফিয়া কথা গুলো বলেই চলে গেলেন।বুরাগ পাশে বসা ঘুমন্ত বেলীর দিকে তাকিয়ে আবারও গাড়ি স্টার্ট দিলো।
—-
ঘুমের মধ্যে অসম্ভব গরম অনুভব করছে বেলী।একটু বাতাসের জন্য হাসফাস করছে বেলীর বুকটা।গলা বেয়ে ঘাম জড়ছে।কানে গাড়ির হর্ণের শব্দ পেয়ে বেলী চমকে উঠলো।চোখ,মুখ কুঁচকে ঘুম থেকে উঠে পড়ে বেলী।চারপাশে গাড়ি দেখে বেলী বুরাগের দিকে তাকালো।বুরাগ ভাবলেশহীন ভাবে চোখে সানগ্লাস দিয়ে বাহিরের আশপাশ দেখছে।বেলী লম্বা একটা হাই তোলে বললো,

–“আমরা কোথায় আছি এখন!পৌঁছতে আর কতো সময় লাগবে।”

বুরাগ বেলীকে ঘামতে দেখে এসির সবটা পাওয়ার বাড়িয়ে দিলো।বেলীর প্রশ্নের উত্তরে বললো,

–“ডক্টরের কাছে নিয়ে যাচ্ছি।”

বেলী মুখটাকে গোঁমড়া করে বললো,

–“এখনেই আসতে হলো আপনার।কালকেও তো আসতে পারতাম।আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে।গরমে অবস্থা খুব খারাপ।গা গুলিয়ে আসছে।”

–“আর একটু সহ্য করো।একটু পরেই জ্যাম ছুটে যাবে।”

বেলী চুপ করে বসে আছে।বুরাগের খুব খারাপ লাগছে বেলীকে এই অবস্থায় দেখে।তাও,আজকে ডক্টরের কাছে না গেলে ওর মনে হয় ঘুমেই হবে না।মিনিট পাঁচেক পর জ্যাম ছুটে গেলে বুরাগও নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
——–
আফিয়া খুব দ্রুত খাবার রেডি করছেন।বেলী কিছুই খেতে পারছে না।তাই,বেশি করে শুকনো মরিচ দিয়ে আলু ভর্তা করছেন।জ্বাল জিনিসটা খেলে ভালো লাগবে তাই।হাসি,খুশি মনমরা হয়ে বসে আছে সোফায়।তারা তাদের রুমে যেতেও ভয় পাচ্ছে।একটু পর পর শুধু শিউলির বিধস্ত লাশটা চোখে ভেসে উঠছে।বুরাগ ডক্টরের কাছ থেকে ঘন্টাখানেক আগেই এসেছে।ফ্রেশ হয়ে বেলীকে ফ্রেশ হতে বলেছে।প্রেগন্যান্সির সবকিছুই ঠিক আছে।তিনমাস চলছে।বুরাগ হাসি,খুশির মাঝখানে গিয়ে বসে পড়লো।দু’জনকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।হাসি,খুশিও বুরাগের বুকে ঢলে পড়েছে।

আফিয়া বেলীকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে এসেছেন।বেলী চুপচাপ শুয়ে আছে।মাথাটা ধরে আছে তার।এই ভালো লাগে তো এই খারাপ লাগে।বুরাগ লাইট অফ করে দিয়ে বেলীর পাশে শুয়ে পড়লো।বেলীকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।বেলী নাও বললে বুরাগ বুঝতে পেরেছে বেলীর মাথা ধরে আছে।তাই বেলীকে নিজের আরেকটু কাছে নিয়ে মাথা টা যত্ন করে টিপে দিচ্ছে।আরাম পেয়ে বেলী ঘুমের দেশে তলিয়ে যাচ্ছে।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here