#উপন্যাস_প্রপর্ণ(২৭)
#কুরআতুল_আয়েন
মাঝরাত!বুরাগ বেলীকে নিয়ে ভালোবাসার গহীনে যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।বেলী শুধু বুরাগকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে।প্রায় অনেকগুলো দিন পর বুরাগ বেলীকে কাছে পেয়েছে।চারমাস আসার অপেক্ষায় বুরাগ অধীর আগ্রহে বসে ছিলো।বেলী সুখের গোঙানির আওয়াজ করতেই বুরাগ আরো জাপটে ধরে নেয় বেলীকে।
_____
রান্নাঘরে আফিয়া আর কোহিনূর মিলে খাবারের তোরজোর করছেন।অফিসের কিছু কলিগ আর বুরাগের কিছু বন্ধুবান্ধব আসবে।বুরাগ আজকে অফিসে যায় নি।আজাদ রহমানও বুরাগকে কিছু বলার সাহস পান নি।বুরাগ আজাদ রহমানকে দেখলেই পা’য়ের রক্ত যেনো মাথায় চড়ে বসে।তখন নিজেকে ঠিক রাখা বুরাগের জন্য অনেকটা দুষ্কর হয়ে যায়।বেলীও ডাইনিং টেবিলে বসে হাতের কাজগুলো করে এগিয়ে দিচ্ছে।শরীর টা মোটামুটি ভালো লাগছে তার।আর,বিছানায় বসে থাকতে থাকতে বেলীর এখন কিছুতেই ভালো লাগে না।তাই,বুরাগকে মানিয়ে নিচে নেমে এসেছে।বুরাগ সোফায় বসে আনমনে বেলীর দিকে তাকিয়ে রইলো।আজকে বেলীকে কেন জানি বুরাগের কাছে খুব আকর্ষণীয় লাগছে।মুখের সৌন্দর্য যেনো আগের থেকে আরো ফুটে উঠেছে।বুরাগ বেলীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বেলীর কাছে এগিয়ে গেলো।বেলীর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
–“বেলী একটু উপরে আসো তো।”
বেলী সাথে সাথে জবাবে বললো,
–“মোটেও না!আপনার মতলব ভালো ঠেকছে না।আর,এইখানে আমার কাজ আছে।”
বুরাগ রাগান্বিত গলায় বললো,
–“না আসলে কিন্তু,মা আর ছোট আম্মুর সামনে তুলে নিয়ে যাবো।তখন কেমন হবে ভেবে নাও তুমি।”
বেলী বাধ্য হয়েই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।বুরাগকে বকতে বকতে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।বেলী ঢুকতেই বুরাগ দরজাটা লাগিয়ে বেলীকে জাপটে ধরে বেলীর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।বেলী কড়া গলায় বললো,
–“আপনি কি পাগল হয়েছেন নাকি?রাত নেই দিন নেই শুধু এইসব করার ধান্দায় থাকেন।”
বুরাগ শব্দ করে হেসে বললো,
–“কি ধান্দায় থাকি গো।একটু বলবে।”
বেলী নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেলো।মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে।এমতাবস্থায় বেলী বুরাগের কথার পিঠে বললো,
–“জানি না।”
–“কি জানো না!বলো না একটু শুনি কিসের ধান্দায় থাকি আমি।”
বেলী লজ্জায় মাথাটা নুইয়ে ফেললো।বুরাগকে নিজের থেকে জোর করে ছাড়িয়ে রুম থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে আসলো।বুরাগ হাসতে হাসতে শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিলো।
বিকালের দিকে সবাই বুরাগদের বাসায় চলে আসে।বেলী আজকে শাড়ি পড়েছে।শাড়ি পড়ে তার দমবন্ধ হয়ে আসছে।অনেকদিন পর পড়েছে তাই এমন হচ্ছে।বুরাগ সবার সাথে বেলীকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।বেলীও হাসি,মুখে কুশল বিনিময় করে নিলো সবার সাথে।
কিছুক্ষণ কথা বলে বেলী সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়ে নাস্তা গুছাতে লাগলো।বুরাগ আগের ন্যায় সবার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।হুট করেই বুরাগের চোখ পড়লো কোণায় বসে থাকা নীলের উপর।নীল লোভাতুর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে বেলীর দিকে।নীল বুরাগদের কোম্পানিতে নতুন জয়েন করেছে।বুরাগ চোখ,মুখ শক্ত করে নীলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো।কিন্তু,নীলের সেদিকে কোনো খেয়ালেই নেই।বুরাগ নীলের থেকে চোখ ফিরিয়ে বেলীর দিকে তাকালো।বেলীকে দেখে বুরাগের রাগ যেনো আরো দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে।বেলী কাজের হুশে থাকায় তার নিজের দিকে কোনো খেয়াল নেই।কোমর আর পেটের পাশ থেকে বেলীর শাড়িটা অনেকটাই সরে গিয়েছে।ফর্সা উন্মুক্ত পেট টা একদম ভেসে উঠেছে।বুরাগ চোয়াল শক্ত করে নিজেকে সামলে নিলো।এইখানে কিছুই করতে পারবে না সে।আর দোষ তো বেলীর!সে কেনো নিজের দিকে কোনো খেয়াল রাখবে না।বুরাগের মনে ভয় জেঁকে বসেছে।বুরাগ মনে মনে ভেবে নিয়েছে,যদি বেলীও স্নিগ্ধার মতো হয়ে যায় তাহলে কি করবে সে!!সে তো বেলীকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারে না।
বুরাগের ভাবনার মধ্যেই বেলী নাস্তা নিয়ে সবার সামনে গেলো।বুরাগ শুধু বেলীকে দেখছে আর রাগে ফেটে যাচ্ছে।বেলী সবাইকে হাসিমুখে নাস্তা দিয়ে আরেকটা নাস্তার প্লেট নিয়ে নীলের দিকে এগিয়ে গেলো।বুরাগ না করতে গিয়েও করে নি।বুরাগ শুধু দেখতে চায় বেলীর মতিগতি।বেলী নীলকে নাস্তা দিতে গিয়ে নীলের হাতের সাথে তার হাতটা আচমকাই লেগে যায়।নীল নিষ্পলক চেয়ে থাকলেও বেলী অস্বস্তি নিয়ে হাত টা সরিয়ে আনলো।জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বেলী নীলের সামনে থেকে চলে আসলো।এইটাই বেলীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।বুরাগ হাত মুঠো করে নিজেকে সংযত করে সবার সাথে কথা বলে সবাইকে বিদায় জানিয়ে দিলো।সবাই চলে গেলেও নীল শরীর টাকে মোচড়ামুচড়ি করে একটু দেরিতে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।যার ফলে,যাওয়ার আগে নীলের সাথে বেলীর একবার চোখাচোখি হয়ে যায়।যা বুরাগের চোখ এড়ায়নি।বুরাগ কিছু না বলে গটগট করে উপরে চলে যায়।এতো কিছুর মাঝেও বেলী বুরাগের রাগ টা ধরতে পারলো না।
রাতে বেলী শাড়ি পাল্টিয়ে নরমাল একটা ঢিলেঢালা জামা পড়ে নিলো।গোসল করতে চেয়েছিলো কিন্তু ঠান্ডা লাগবে বলে আর গোসল করে নি।বুরাগকে সোফায় বসে কাজ করতে দেখে বেলী আর কিছু বলে নি।গুটিসুটি মেরে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।বুরাগ বেলীর কাজে থ হয়ে গেলো।সে তো ভেবেছিলো বেলী প্রতিদিনের মতো তার পাশে এসে বসবে,কথা বলবে।কিন্তু বেলী না এসে বসলো তার পাশে আর না বললো কোনো কথা।তার মানে কি!বেলীও স্নিগ্ধার মতো পাল্টে যাবে।
বুরাগ রেগে গিয়ে বেলীর দিকে তেড়ে এসে বেলীর হাত ধরে টেনে বসালো।বেলী ভয়ে,বুরাগের দিকে তাকিয়ে রইলো।বুরাগের রক্তের ন্যায় চোখ দেখে বেলী ভয়ে কিছুটা পিছিয়ে যায়।কিছু বলতে যাবে তার আগেই বুরাগ বেলীর গালে সটান করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।বেলী আহাম্মকের মতো গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে রইলো বুরাগের দিকে।বুরাগ মিহি চেঁচিয়ে বললো,
–“আমাকে তোর এখন ভালো লাগে না তাই না।কালকেও তো আমার পাশে বসে কি সুন্দর করে কথা বলেছিলি!সারারাত তোকে ভালোবেসে ছিলাম আর আজকে আমার পাশে বসার একটুও সময় পাস নি তুই।পাশে না বসলেও একটাবার কথা তো বলতে পারতিস।”
বেলী বুরাগের দিকে তাকিয়ে কান্না করে দিলো।ক্রন্দনরত গলায় বললো,
–“আমার শরীর খারাপ লাগছিলো তাই এসে শুয়ে পড়েছি।আর,আপনি তো কাজ করছিলেন।”
–“একদম নাটক করবি না।খারাপ তুই।তুইও ওই স্নিগ্ধার মতো।তোকে আমার একদমই সহ্য হচ্ছে না বেলী।”
বেলী বুরাগের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না।বুরাগের দিকে এগিয়ে আসতেই বুরাগ বেলীকে ছিটকে সরিয়ে দিলো।দাঁত কটমট করে বললো,
–“একদম আমার কাছে আসবি না তুই।”
–“আপনি এমন করছেন কেন?আমি কি করেছি কিছুই তো বুঝতে পারছি না।আপনি কাজ করছিলেন বলে আর যায় নি আপনার কাছে।যদি আপনি বিরক্ত হন।”
বুরাগ তাচ্ছিল্যের একটা হাসি টেনে বললো,
–“তুই তো সাধু!তুই কিছুই করিস নি।যা করেছি তো আমি করেছি।”
বেলী কান্না করতে করতে বললো,
–“আপনি হেয়ালি না করে বলুন না প্লিজ কেনো এইরকম করছেন।”
বুরাগ বেলীর কথা পাত্তা না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।বেলী বুরাগের যাওয়ার পানে ঝাপসা চোখে তাকিয়ে রইলো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বেলী নিজের পাশে বুরাগকে দেখতে না পেয়ে চমকে উঠলো।কাল রাতে কান্না করে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো তা বেলী নিজেও জানে না।সাইড বক্সের উপর বুরাগের ফোন,ঘড়ি,ওয়ালেট না দেখে বেলী হন্তদন্ত হয়ে শ্বাশুড়ি আফিয়ার রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।এতোটুকু জায়গা আসতে গিয়ে বেলী একদম হাঁপিয়ে উঠেছে।বেলী রুমে ঢুকেই বলতে লাগলো,
–“মা!আপনার ছেলে কোথায়?”
আফিয়া সবেমাত্র রান্নাঘর থেকে এসে একটু বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।বেলীকে এইভাবে দেখে আফিয়া কিছুটা ভয় পেয়ে যান।আফিয়া বেলীকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললেন,
–“বুরাগ তো কখন অফিসে চলে গিয়েছে।তুই ঘুমিয়ে ছিলিস এইজন্য মনে হয় তোকে ডাকে নি।”
বেলী ছোট করে বললো,
–“ওহ্!”
–“তোর কি শরীর খারাপ লাগছে বেলী।”
বেলী মাথা নাড়িয়ে বললো,
–“না মা!আমি ঠিক আছি।”
আফিয়া আর কিছু বললেন না।শুধু বেলীর দিকে তাকিয়ে রইলেন।বেলীর মুখে স্পষ্ট অস্থিরতা ছাপ দেখতে পারছেন।’কি কারণ নিয়ে এতোটা অস্থিরতায় আছে’কথাটা বেলী কে বলতে গিয়েও আর বলতে পারলেন না আফিয়া।
_____
জাবেদা উঠোনের সামনে একটা চৌকতে বসে আছেন।শাক কুঁটছেন আর মনমরা হয়ে বাহিরের সরু রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে আছেন।আজকে জাবেদার শিউলিকে খুব মনে পড়ছে।আজকের দিনেই তো শিউলি জাবেদার কোল জুড়ে এসেছিলো।শিউলির কথা মনে আসতেই জাবেদা শব্দ করে কেঁদে উঠলেন।জাবেদার কান্নার আওয়াজ পেয়ে অলি সাহেব দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন।জাবেদার কাছে হাঁটুগেঁড়ে বসে বলতে লাগলেন,
–“কি হয়েছে তোমার জাবেদা?কান্না করছো কেন তুমি?”
জাবেদা কথা বলেন না।নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছেন।কান্নার ফলে জাবেদার হাত কাঁপছে।অলি সাহেব,জাবেদার হাত থেকে সবজি গুলো নিয়ে বাটিতে রেখে দিয়ে বললেন,
–“শিউলির কথা মনে পড়ছে জাবেদা?”
জাবেদা কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,
–“আজকের দিনেই তো শিউলি আমার কোলে এসেছিলো।ও কেনো আমাকে রেখে চলে গিয়েছে।আমি আর নিতে পারছি না।”
জাবেদার কথা কর্ণপাত করতেই অলি সাহেবের চোখ দুটো পানিতে ভরে উঠলো।উনি তো ভুলেই গেছিলেন আজকে যে শিউলির জন্মদিন।এইদিনেই তো শিউলি তাঁদের মাঝখানে এসেছিলো।অলি সাহেব দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
–“জাবেদা নিজেকে শান্ত রাখো।যা হয়েছে তা আমাদের মেনে নিতে হবে।”
জাবেদা কিছু বলেন না অলি সাহেবের কথার পিঠে।ভিতরে ভিতরে উনার ক্রোধ জ্বলে উঠছে।মনে মনে ভেবে নিয়েছেন,করিমকে উনি কিছুতেই ছাড়বেন না।নিজের আক্রোশ মিটিয়ে করিমকে শেষ করতে উনি পিছুপা হবেন না।
—-
বেলী সোফায় চুপচাপ বসে ছিলো।সেই বিকেল থেকে বেলী রাত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।এখন প্রায়,দশটার উপরে বাজে।কলিং বেল বেজে উঠতেই বেলীর অস্থিরতা বেড়ে গিয়েছে।বেলী উঠতে নিলেই আফিয়া এসে বাঁধা দিয়ে বললেন,
–“বেলী আমি যাচ্ছি।তুই বসে থাক।”
বেলী চুপ করে বসে যায়।চাতক পাখির মতো মেইন দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।শুধুমাত্র একটিবার বুরাগকে দেখার জন্য।
আফিয়া দরজা খুলে চমকে উঠলেন।বুরাগের পাশে জিন্স,টপস পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখে আফিয়া দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন।খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন,
–“মৌমি তুই!কেমন আছিস?তুই আসবি আমাকে একটিবার বললিও না।”
মৌমি মেয়েটি মিষ্টি হেসে বললো,
–“আন্টি!তোমাকে যদি বলেই দিতাম আমার আসার কথা তাহলে,তোমার মুখের এইরকম চমক টা কি দেখতে পেতাম।”
–“আগে ভিতরে আয়।তারপর কথা হবে।”
বুরাগ শুধুমাত্র একটু হেসে আফিয়া আর মৌমি কে রেখে চলে যায়।সোফায় বসে থাকা বেলীকে দেখে বুরাগ তেমন কিছু না বলেই উপরে যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরলো।বেলী উঠতে নিলেই পিছনে ফিরে অতি আধুনিক পোশাক পরিহিতা মৌমিকে দেখে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।মনে মনে আওড়াতে লাগলো,তাহলে কি এই মেয়েটা আর উনি একসাথেই এসেছেন।কে এই মেয়েটি।বেলীর কিছুই ভালো লাগছে না।মনের ভিতরে অতিরিক্ত অস্থিরতার ফলে বেলীর শরীর টা কেমন নেতিয়ে আসছে।তাও,আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসলো বেলী।
আফিয়া মৌমিকে একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলেন।মৌমি হলো আফিয়ার বান্ধুবী বাসন্তীর মেয়ে।মৌমিরা আমেরিকায় থাকে।বুরাগ আর মৌমি একদম সমবয়সী।তার থেকে বড় কথা তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ টা একটু বেশিই।অনেকদিন পর মৌমি বাংলাদেশে এসেছে।কিছুদিন থেকে আবার চলে যাবে আমেরিকায়।
বেলী রুমে গিয়ে দেখে বুরাগ ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল পরিপাটি করছে।গুটিগুটি পা’য়ে বুরাগের সামনে দাঁড়িয়ে বেলী মিনমিনে গলায় বললো,
–“চলুন আপনি খাবেন।রাত তো অনেকটাই হতে চললো।”
বুরাগ শক্ত গলায় বললো,
–“তোমার এতো ভাবতে হবে না আমার খাওয়া নিয়ে।আমি আর মৌমি একসাথেই খেয়ে এসেছি।”
বেলী এবার বুঝতে পেরেছে ওই মেয়েটির নাম তাহলে মৌমি।কেন জানি,বেলীর ভিতর টা খুব হাঁসফাঁস করছে।বেলী কিছু বলার আগেই বুরাগ বেলীকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত চলে যায়।বেলী আহাম্মকের মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো বুরাগের যাওয়ার পানে।বেলী ক্রন্দনরত গলায় বিরবির করে বলতে লাগলো,
কেন আপনি এমন করছেন আমার সাথে।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি পারছি না আপনার এই রকম আচরণ সহ্য করতে।
বেলী না খেয়েই শুয়ে পড়ে।কান্না করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে বেলী।বুরাগ এতোক্ষণ ধরে মৌমির সাথে গল্প করছিলো।এতোদিন পর বন্ধুদের পেলে যায় হয় আর কি।বুরাগ গল্প করতে করতে বেলীর কথা বেমালুম ভুলে যায়।মৌমিকে শুভ রাত্রি বলে বুরাগ পানি খাওয়ার জন্য ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো।আফিয়া তখন রান্নাঘরের ব্যবহৃত জিনিসগুলো ধুঁয়ে মুছে রাখছিলেন।এতোক্ষণ কোহিনূরও ছিলেন আফিয়ার সাথে।কিন্তু,আলামিন রহমানের গলার আওয়াজ পেয়ে কোহিনূর চলে যান নিজের রুমে।
বুরাগ পানি খাওয়ার সময় একটা প্লেটে অবহেলায় খাবার পড়ে থাকতে দেখে আফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“মা!কে খায় নি?খাবার গুলো এইভাবে পড়ে আছে কেনো?”
আফিয়া বুরাগের কথার আওয়াজ পেয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন।ডাইনিং টেবলে বেলীর জন্য রাখা খাবার টা দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বললেন,
–“বেলী খায় নি?ওকে তো আমি বলেছিলাম খেয়ে নিতে।মেয়েটা তো দুপুরেও খায় নি আবার রাতেও না।এইসময়ে এইসব করলে তো অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।হঠাৎ করে কি এমন হয়ে গেলো মেয়েটার।তার মানে মেডিসিনও খায় নি।”
মা’র কথা শুনে বুরাগের বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো।বেলী দুপুর থেকে খায় নি কথাটা পুনরায় কানে বাজতেই বুরাগ রাগে ধপাধপ্ পা’য়ে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।বেলীকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে বুরাগ কিছুক্ষণ অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।বেলীর মায়াময় মুখটা দেখে বুরাগের খুব খারাপ লাগছে।বেলী যে কান্না করেছে তাও বুঝতে পেরেছে।কিন্তু,বুরাগের যে খুব রাগ হচ্ছে বেলীর উপর।বেলীর ভুলের জন্যই তো নীল বেলীর দিকে ওইভাবে বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।তাও,আবার আজকে অফিসে নীল বুরাগের কাছে অনেকটা ইনিয়েবিনিয়ে বেলীর কথা জিজ্ঞেস করেছিলো।তারপর থেকেই বুরাগের মাথায় রাগ চড়ে আছে।নীল তার অফিসের একজন সাধারণ কর্মচারী হয়ে তার নিকটে বেলীর খোঁজ জানতে চায়।নীলের এই দুঃসাহসিক কাজ টা বুরাগকে তেলেবেগুনে জ্বালানোর জন্য যথেষ্ট।তখন যে বুরাগ নিজেকে কীভাবে সংযত রেখেছিলো তা একমাত্র বুরাগেই জানে।
—-
গতকালকের মতোই বেলী ঘুম থেকে উঠে বুরাগকে নিজের পাশে পায় নি।ভেবে নিয়েছে অফিসে চলে গিয়েছে।না খাওয়ার ফলে তার শরীর টা অনেকটা দূর্বল লাগছে।ফ্রেশ হয়ে ধীর গতিতে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।কিন্তু,সোফায় বুরাগ আর মৌমিকে শরীর ঘেঁষে বসে থাকতে দেখে বেলীর পা কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।বুকের ভিতর অসহনীয় ব্যথা অনুভব করছে বেলী।ব্যথাটা যেনো ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে।নিজেকে ঠিক রাখা খুব দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে বেলীর জন্য।বেলী চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো।
বেলীকে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে দেখে আফিয়া কিছুটা ভয় পেয়ে যান।উনি তখন রান্নাঘরে কাজ করছিলেন।রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির মাথায় বেলীকে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে তিনি আসলেই ভয় পেয়ে যান।কিছুটা ভয়ার্ত গলায় বললেন,
–“বেলী কি হয়েছে তোর?ঠিক আছিস তুই?এমন করছিস কেনো তুই?”
বুরাগ পিলে চমকে উঠলো মা’র কথা শুনে।বেলীর দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায় বুরাগ।দ্রুত গতিতে সোফা ছেড়ে উঠে বেলীর দিকে এগিয়ে যেতেই বেলী কিছুটা পিছিয়ে যায়।ছলছল চোখে বুরাগের দিকে তাকিয়ে সিঁড়ির হাতল ধরে নিচে নেমে আসলো।আফিয়া বুঝতে পেরেছেন তাঁর ছেলে আর ছেলের বউয়ের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে মান অভিমানের খেলা চলছে।পরমুহূর্তেই বেলীকে নিজের কাছে আসতে দেখে আফিয়া সেসব চিন্তা বাদ দিয়ে বেলীর দিকে এগিয়ে গেলেন।বেলী জোরে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
–“মা!আমি একটা কথা বলতে চাই।”
আফিয়া বেলীর দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে রইলেন।এমনকি বুরাগও।আফিয়া ভ্রুকুটি কুঁচকে বললেন,
–“হ্যাঁ বল!কি বলবি।”
বেলী মিনিট পাঁচেক সময় নিয়ে বললো,
–“মা!আমি বাড়ি যেতে চাই।আম্মা’কে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।আর,বাচ্চা পৃথিবীতে আসার বাকি সময় টা আমি আম্মার সাথেই থাকতে চাই।আপনি দয়া করে আব্বাকে একটু ফোন দিয়ে বলবেন আমাকে নিয়ে যেতে।”
আফিয়া বেলীর কথায় কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাজি হয়ে গেলেন।তিনি ভেবে নিয়েছেন,বেলী জাবেদার কাছে থাকলে ভালো হবে।আর,জাবেদাও অনেকটা খুশি হবেন।শিউলিকে হারিয়ে জাবেদা তো অনেকটাই পাগলপারা।এখন,বেলীই তাঁর কাছে সব।তার উপর বেলী প্রথম মা হবে।এই সময় টা তো মেয়েরা বাপের বাড়িই থাকে।
কিন্তু,বুরাগ কিছুতেই মানতে পারছে না বেলীর চলে যাওয়ার কথাটা।বেলীর মুখে এরূপ একটা কথা শুনে সে মুখের চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে রইলো বেলীর দিকে।সেই সাথে রাগে হাত দুটোও মুঠো করে নিলো।সে তো বেলীকে বলেছিলো,বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত বেলী কিছুতেই কোথাও যেতে পারবে না।সবসময় তার চোখের সামনে থাকতে হবে।তাহলে,এখন কোন সাহসে বেলী চলে যাওয়ার কথা বলছে!!
বুরাগ রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায় নিজের রুমে।সারারুম জুড়ে পায়চারী করছে আর বিরবির করে বলছে,
আজকে বেলীকে কাছে পেলে বুঝিয়ে দিবো আমি কি জিনিস।আমার কথা অমান্য করার ফল তাকে হারে হারে টের পাইয়ে দিবো।আর একবার আমার থেকে দূরে যাওয়ার ধান্দা করলে একদম ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে দিবো ওই বেয়াদব মেয়েকে।
চলবে..
(দয়া করে একটু রেসপন্স করবেন।আমি লিখে কোনো মজা পাচ্ছি না।তাল হারাই ফেলছি।)