উপন্যাস প্রপর্ণ পর্ব-২৮

0
2616

#উপন্যাস_প্রপর্ণ(২৮)
#কুরআতুল_আয়েন

একরাশ বিষন্নতা নিয়েই বেলীর সকাল টা কাটলো।বুরাগ রুমে বেলীর জন্য অপেক্ষা করছে।কিন্তু,বেলীর আসার কোনো নামগন্ধ না দেখে বুরাগ রাগ নিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।সিঁড়ি বেয়ে নেমে পুনরায় মৌমির পাশে ধপাস করে বসে পড়লো।মাথা ব্যথার ফলে,বুরাগ মাথাটা সোফায় এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।মৌমি আলতো করে বুরাগের মাথায় হাত রাখলো।বুরাগ চোখ বন্ধ করেই বললো,

–“মৌমি সুন্দর করে একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দে তো।ব্যথায় মাথার এপাশ ওপাশ মনে হয় ছিঁড়ে পড়ে যাবে।”

মৌমি মুচকি হাসলো।ঠোঁটে হাসি রেখেই বললো,

–“ঠিকাছে।আমি দিচ্ছি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে।”

বেলী রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আগের ন্যায় বুরাগ আর মৌমি কে কাছাকাছি বসতে দেখে মাথাটা নিচু করে ফেললো।এখন তার মাত্রাতিরিক্ত কষ্ট হচ্ছে।নিজের চোখের সামনে,নিজের স্বামীর মাথায় অন্যকেউ হাত বুলিয়ে দিলে তো কষ্ট হওয়ারই কথা।বেলী ঝাপসা চোখে একবার তাকালো তাদের দিকে।গুটিগুটি পা’য়ে রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।

কিছুক্ষণ পর বুরাগ সোফা ছেড়ে উঠে রান্নাঘরে উঁকি দিলো বেলীর খোঁজে।কিন্তু বুরাগ হতাশা হলো।রান্নাঘরে শুধু মা’কে দেখে বুরাগ গলা ঝেঁড়ে বললো,

–“মা!বেলী কোথায়?”

আফিয়া মুচকি হেসে পিছনে ফিরলেন।বুরাগের দিকে তাকিয়ে বললেন,

–“মান,অভিমানের খেলা চলছে নাকি?বুরাগ এমন হলে আমি বলবো,বেলীকে কষ্ট দিস না।আর,একটু আগেই বেলী রুমে গিয়েছে।”

আফিয়া আবারও কাজে লেগে পড়লেন।বুরাগ ভাবতে লাগলো বেলী কখন গিয়েছে!সে তো এইখানেই বসে ছিলো।পরমুহূর্তেই বুরাগ বিরবির করে বলতে লাগলো,মৌমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ায় চোখ দুটি আমার লেগে এসেছিলো।তাহলে,কি বেলী এইভাবে আমাদের দেখে কিছু না বলেই চলে গিয়েছে।বুরাগ কথাটা বিরবির করেই মনের গহীনে একরাশ কষ্টের দেখা পেলো।

বিকেলের দিকে বেলী বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো।আকাশে ঘন কালো মেঘ করেছে।হয়তোবা,একটু পরেই আকাশ ফাটিয়ে ঝুম বৃষ্টি নামবে।বেলীর চোখে একটু পর পরেই বুরাগ আর মৌমির ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে থাকাটা ভেসে উঠছে।জোরে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো বেলী।আনমনেই আকাশের পানে তাকিয়ে রইলো।

বুরাগ আস্তে আস্তে রুমে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।বেলীকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনেকটা শান্তি লাগছে তার।এই মাত্রই বেলীকে একা একটু পেয়েছে।আর,না হলে অন্যসময়,সে খুঁজলে বেলীকে পায় না আর বেলী খুঁজলে তাকে পায় না।তাদের মধ্যে মনে হয় লুকোচুরি খেলা চলছে।

বুরাগ ধীর গতিতে এগিয়ে গেলো বেলীর দিকে।বেলীর থেকে একটু দূরত্ব রেখে দাঁড়ালো।বুরাগ গলা কেশে বললো,

–“না খেয়ে কি প্রমাণ করতে চাও তুমি?আমি তোমাকে অত্যাচার করে খেতে দেয় নি।কাল,দুপুরে খাওনি এমনকি রাতেও খাওনি।খাবার গুলো কি দোষ করেছিলো যার জন্য ওদের উপর রাগ দেখাচ্ছো।’

বেলী বুরাগের কন্ঠ পেয়ে থম মেরে যায়।তার এখন পালাতে খুব ইচ্ছা করছে।বুরাগের সামনে কিছুতেই দাঁড়াতে পারবে না সে।তখন যে নিজেকে ঠিক রাখা খুব দুষ্কর হয়ে যাবে।যেমন এখন তার কান্না পাচ্ছে।ভিষণ কান্না পাচ্ছে।কান্না পাওয়ার এই তো কথা,বুরাগ আর মৌমি কে একসাথে দেখে তার মন টা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে।তাই তো,বুরাগের কথার কোনো উত্তর দিচ্ছে না।

বুরাগ বেলীর কোনো উত্তর না পেয়ে তেঁতো গলায় বললো,

–“আমার কথা কি তোমার কানে যাচ্ছে না?খাও নি কেন তুমি?না খেয়ে তুমি কি প্রমাণ করতে চাইছো।”

বেলী থমথমে গলায় উত্তর দিলো,

–“আমার ভালো লাগে নি তাই খাই নি।না খেয়ে কোনো কিছু প্রমাণ করার উদ্দেশ্য আমার নেই।”

–“হ্যাঁ বুঝেছি আমি।এখন থেকে এতো অভিনয় না করে সময়ের খাবারটা সময় করেই খেয়ে নিবে।আমার হাতে এতো সময় নেই,কে খাবে আর কে খাবে না তা দেখার জন্য।”

বুরাগের বিষাক্ত কথাগুলো বেলীর হৃদয়ে খুব আঘাত হানছে।চোখ ফেটে যাচ্ছে কান্নার দমকার ফলে।ঠোঁট কাঁমড়ে দাঁড়িয়ে আছে বেলী।তার যে করেই হোক বুরাগের সামনে স্বাভাবিক থাকতে হবে।কিন্তু,বেলী ভেবে পাচ্ছে না হুট করেই বুরাগের কি এমন হয়ে গেলো যার জন্য এতো টা পাল্টে গিয়েছে।বুরাগ তো তার সাথে কখনো এমন করেনি।
বুরাগ বেলীর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে রইলো।বুরাগ ভেবেছিলো বেলীর সাথে এইভাবে কথা বললে বেলী রিয়েক্ট করবে।কিন্তু,সেসবের আগামাথা কিছুই হলো না।বরং,বেলী বুরাগের দিকে ফিরেও তাকালো না।বুরাগ রাগে ‘ধুর’ বলে জায়গা প্রস্থান করলো।

মৌমি বুরাগকে খুঁজতে খুঁজতে বুরাগের রুমে চলে আসলো।বেলী তখনো আগের ন্যায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো।মনে তার হাজার ভাবনা নদীর স্রোতের মতো তীরে এসে ভিড় করছে।মৌমি রুমে ঢুকে বুরাগকে দেখতে না পেয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো।বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা বেলীকে দেখে কিছুটা চেঁচিয়ে বললো,

–“এই মেয়ে বুরাগকে দেখছো তুমি?ও তো রুমের দিকে এসেছিলো।”

বেলী,চমকে পিছন ফিরে তাকালো।মৌমিকে দেখে বেলীর মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো।বেলী মাথা নিচু করে বললো,

–“জানি না আমি!উনি কোথায় গেছেন!”

মৌমি একরাশ বিতৃষ্ণা নিয়ে বললো,

–“বউ হয়ে তুমি তোমার স্বামীর খবর জানো না।তাহলে,কেমন বউ তুমি?যে নিজের স্বামীর খোঁজ টাই রাখতে পারো না।এমন যদি হয় তোমার স্বামী অন্যকোনো মেয়ের কাছে গিয়েছে তাহলে তুমি কি করবে শুনি?তখনো কি বলবে জানি না আমি।এইজন্য আমি বুরাগকে বলেছিলাম,আমাকে বিয়ে কর।শান্তি পাবি আমাকে বিয়ে করে।কিন্তু,তা আর হলো না।এখন বুঝুক ঠেলা।যত্তসব।”

কথাগুলো বলেই মৌমি গটগট করে চলে যায় রুম থেকে।করিডোর দিয়ে হাঁটছে আর রাগে ফুঁসছে।এসেছিলো বুরাগকে পটাতে আর এসেই দেখে বুরাগ বিয়ে করে নিয়েছে তাও,আবার কয়েকদিন পর বাচ্চার বাবাও হবে।মৌমি আমেরিকায় থাকাকালীন ইচ্ছা করেই বুরাগের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলো।ভেবেছিলো,না বলে বাংলাদেশে গিয়ে বুরাগকে সারপ্রাইজ দিবে।সারপ্রাইজও দিয়েছিলো বাংলাদেশে এসে।তবে,বুরাগের বিয়ে আর বাবা হওয়ার খবর শুনে সে নিজেই দ্বিগুণ সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছিলো।

মৌমি চলে যেতেই বেলী ডুকরে কেঁদে উঠলো।বারবার কানে মৌমির কথাগুলো মাছির মতো ভনভন করছে।বেলী ক্রন্দনরত গলায় আওড়াতে লাগলো,তার মানে উনি আমার সাথে শান্তিতে নেই।আর,এইসব কথা গুলো মৌমি আপুকেও বলেছে।যদি শান্তিতে থাকতো তাহলে কি এইসব কথাগুলো মৌমি আপুকে বলতে পারতো।শান্তিতে নেই বলেই তো বলেছে।আমার এই তো দোষ।কোথায় উনি আর কোথায় আমি।আমাকে তো এখনো ভালোবাসতেও পারে নি।তাহলে,আমি কেন থাকবো এইখানে!আমি কালকেই চলে যাবো এইখান থেকে।তাও,উনি শান্তিতে থাকুক।
—-
বাসের জানালায় মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে স্নিগ্ধা।অজানা এক গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।পাশেই লিটন সিটে মাথা এলিয়ে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে।এতে স্নিগ্ধা বেশ খানিকটাই বিরক্ত হচ্ছে।মনে মনে বিরবির করছে,কি পাল্লায় পড়লাম আমি।সুইসাইড করেছে একজন,আর দৌড়াতে হচ্ছে আমাকে।ইশশ!পারভীন ফুপি কেন এই কাজটা করতে গেলো।আজকে যদি ফুপি এই কাজটা না করতো তাহলে,আমি বুরাগের কাছে আবারও যেতে পারতাম।মনের আক্রোশ মিটিয়ে নিজের চাহিদা গুলো মিঠাতে পারতাম।আমি জানি বুরাগের মনে আমার জন্য এখনো একটা সফট কর্ণার আছে।যা আমি নিমিষেই হাত করে ফেলতে পারতাম।কিন্তু,মাঝখান দিয়ে এমন একটা কাহিনি ঘটে সব শেষ করে দিলো।এখন মনে হচ্ছে,ওই লিটনের সাথে না জড়ালে খুব ভালো হতো।অত্যন্ত এইভাবে দৌড়াতে হতো না।
গাড়ি বাঁক নিতেই লিটনের মাথা স্নিগ্ধার কাঁধে এসে ধপাস করে পড়ে গেলো।স্নিগ্ধা রাগে লিটনের দিকে তাকিয়ে জোরে লিটনের মাথা টা সরিয়ে দিলো।যার ফলস্বরূপ লিটনের ঘুম ভেঙে যায়।লিটন স্নিগ্ধার দিকে তাকাতেই স্নিগ্ধা চেঁচিয়ে বললো,

–“এতোবড় একটা অন্যায় করে এখন ঘুমানো হচ্ছে তোমার।আজকে,তোমার জন্যই আমার এই হাল।না হলে,আমি এতোক্ষণে বেলীর জায়গায় থাকতাম।বুরাগের বউ হয়ে রহমান ভিলাতে রাণীর মতো থাকতে পারতাম।কিন্তু,তুমি আর তা হতে দিলে না।”

লিটনের ঘুম এখনো পুরোপুরি কাটে নি।লম্বা একটা হাই তোলে বললো,

–“এক হাতে কখনো তালি বাজে না।দিনদিন নাইটি,আন্ডারগার্মেন্টস পড়ে ছবি না দিলে তোমার প্রতি আমি আকৃষ্ট ও হতাম না।প্রথম ধাপ এ আমি আগালেও পরের ধাপে কিন্তু তুমিই এগিয়েছো।নিজের দিকে আমাকে কীভাবে আকৃষ্ট করা যায় তার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলে।সব বুঝি আমি বুঝলে স্নিগ্ধা।”

স্নিগ্ধা আমতাআমতা করে বললো,

–“যাই হোক!প্রথম তো তুমিই আমার সাথে ওইসব করেছো।আমি যাই করি না কেন তুমি বউ থাকতে আকৃষ্ট হবে কেনো।”

–“মুখের সামনে রসগোল্লা দিয়ে রাখলে কি না খেয়ে পারা যায়।তুমিই তো সবকিছু আমাকে খুলে দেখিয়েছিলে স্নিগ্ধা।এখন দোষ হয়ে গেলো আমার।”

–“কিসব বাজে কথা বলছো তুমি লিটন।নিজের চরিত্রে দোষ আছে তোমার।বউ থাকতে তুমি কেনই এইরকম করবে।আর,এখন সাফার করতে হচ্ছে আমাকে।”

লিটন এবার অনেকটা রেগে যায়।দাঁতে দাঁত চেপে স্নিগ্ধাকে বললো,

–“আর তুমি কি ভালো ছিলে নাকি।তোমাকে পতিতালয়ে মানায় বুঝলে স্নিগ্ধা।আমার তো মনে হয় পতিতালয়ে যারা থাকে তাদের থেকেও তুমি এক্সপার্ট।”

স্নিগ্ধা তেড়ে এসে লিটনের গলা চেপে ধরলো।লিটনও বা কম কিসে সেও স্নিগ্ধার চুলের মুঠি ধরে নিয়েছে।এইভাবে তাদের মাঝে অনেক ধস্তাধস্তিও হয়েছে।সাথে তাদের মুখের অশ্রাব্য গালি তো আছেই।বাসের সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।কেউ হাসছে,আবার কেউ ছি ছি করছে।লাস্টে,বাস কন্টাকটার বাস থামিয়ে তাদেরকে মাঝপথেই নামিয়ে দিয়ে সাঁই সাঁই করে চলে গেলো।লিটন আর স্নিগ্ধা একে অপরের দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে,এখনেই গিলে খেয়ে ফেলবে দু’জন দু’জনকে।
—-
রাতে বিছানা গুছিয়ে শুয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বেলী।সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাল সকালেই চলে যাবে এইখান থেকে।শ্বাশুড়ি আফিয়ার সাথেও কথা হয়েছে বেলীর।উনিই অলি সাহেবকে ফোন করে বলেছেন কালকে বেলীকে নিয়ে যেতে।যাওয়া ফাইনাল হতেই বেলীর মনটা আরো অন্ধকারে ছেঁয়ে যায়।তার কিছুতেই বুরাগকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।কিন্তু,এখানে থাকতেও তার মন মানছে না।শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছে।

বুরাগ রুমের দরজা লাগিয়ে বেলীর পিছনে এসে দাঁড়ালো।বেলীর হাত চেপে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে চেঁচিয়ে বললো,

–“তুমি চলে যাওয়ার সাহস করছো কীভাবে?আমি কি বলেছিলাম তোমাকে?ভুলে গেছো নাকি।”

বেলী চোখ,মুখ কুঁচকে ফেলেছে ব্যথায়।বুরাগের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো।বুরাগ বেলীকে নিজের সাথে চেপে ধরে বললো,

–“এখন মুখে কথা নেই কেনো তোর বেয়াদব মেয়ে।তোকে আমি বলেছিলাম না বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত তুই আমার কাছেই থাকবি।কোথাও যেতে পারবি না।তাহলে কেন তুই চলে যাওয়ার জন্য এমন করছিস।আমাকে তোর এখন ভালো লাগে না তাই না।”

বেলী ব্যথার ফলে কান্না করে দিলো।কান্নারত অবস্থায় বললো,

–“ভুল বলেছেন আপনি।আমাকে আপনার পছন্দ নয়।আমাকে ভালো লাগে না আপনার।আপনি শান্তি পাচ্ছেন না আমার জন্য।আমি আপনাকে সুখে,শান্তিতে রাখতে পারছি না।তার জন্যই তো আমি চলে যাচ্ছি আপনাকে ছেড়ে।যাতে,আপনি শান্তিতে থাকতে পারেন।আর দয়া করে,আমার বাচ্চার দিকে আপনি নজর দিবেন না।আমি চলে গিয়ে আপনাকে শান্তি দিচ্ছি এখন আপনিও আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিয়েন।আমার বাচ্চাকে নিজের কাছে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না।”

বুরাগ বেলীর কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে বেলীর দিকে।বেলীর পাগলামোর কথা শুনে বুরাগ আহাম্মক হয়ে গিয়েছে।কি বলবে সে কিছুই বুঝতে পারছে না।বাচ্চা না হওয়ার আগেই বলে দিলো বাচ্চার দিকে যেনো নজর না দেয়।এইটা কেমন কথা।নিজের বাচ্চার দিকে বাবা হয়ে সে নজর দিতে পারবে না।কথাটা ভাবতেই বুরাগ চোয়াল শক্ত করে তাকালো বেলীর দিকে।বেলীর কাঁধ চেপে ধরে বললো,

–“তোকে আসলেই বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে।যদি বাচ্চাটা এখন জন্মাতো তাহলে তাকে রেখে তোকে সত্যি পাঠিয়ে দিতাম।বাচ্চার বাবার থেকে বাচ্চাকে আলাদা করতে চাইছিস তুই!কতো বড় অন্যায় করতে যাচ্ছিস তুই আমার সাথে।তোকে এখন মেরে ফেললেও আমার শান্তি হবে না।”

আচমকাই বেলী বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠলো।রাগের মাথায় কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলেছে তা বেলী এখন বুঝতে পেরেছে।বুরাগের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো বেলী।বুরাগের চোখের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না সে।মাথা নিচু করে বিছানার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই বুরাগ হাত ধরে আটকিয়ে দিলো।আগের ন্যায় চেঁচিয়ে বললো,

–“আমার সামনে থেকে যদি এক পাও নড়িস তাহলে তোর পা দুটো আর তোর শরীরের সাথে জয়েন্ট রূপে পাবি না।”

বেলী শক্ত গলায় বললো,

–“আপনি এতো অসভ্য কেনো?কখন থেকে আমাকে তুই তোকারি করছেন।”

–“যে যেটার প্রাপ্য সেটাই ফিরিয়ে দিচ্ছি তাকে।”

–“আমি তো এখন খারাপ মেয়ে,ভালো মেয়ে তো ওই মৌমি।এইজন্যই তো আমার কাছে আর আসছেন না।আমার কথাও আপনি ভালো করে শুনছেন না।আমি যদি মরে যেতাম তাহলেও আপনার কোনো হুশ থাকতো না।আমার মরে যাওয়াই ভালো।”

বুরাগ বেলীর মুখ চেপে ধরে বললো,

–“ভুলেও আর,এইসব কথা মুখে আনবি না।আমার থেকে তোর মুক্তি নেই।আমি যতোদিন আছি ততোদিন তোকেও থাকতে হবে।আর,তুই তোকারি একবার না একশোবার করবো কারণ,আমার মুখ থেকে তুই তোকারি শুনার অধিকার টাও একমাত্র তোর আছে।তাই আমি যা ইচ্ছা তাই বলবো তোকে।”

বেলী মাথা নিচু করে কাঁদছে।আলতো ছোঁয়ায় পেটে একটা হাত রেখে অন্যহাত দিয়ে একটু পর পর চোখের পানি মুছছে।বুরাগ অসহায় চোখে তাকালো বেলীর দিকে।ইশশ!তার কয়েকদিনের খারাপ ব্যবহারে বেলীর যে খুব বেহাল দশা হয়েছে তা সে ঠিকই বুঝতে পারছে।কিন্তু,সে রেগে ছিলো বেলীর উপর।এমনকি এখনো রেগে আছে।তাই বলে,বাপের বাড়ি চলে যেতে হবে।বেলী কি ভুলে গিয়েছে সে যে তাকে ছাড়া থাকতে পারে না।তাকে জড়িয়ে না ধরলে রাতের ঘুম ভালো হয় না।

বেলী বুরাগের সামনে থেকে চলে আসার জন্য উল্টো ঘুরতেই বুরাগ বেলীকে পিছন দিক থেকে জাপটে ধরলো।বেলীর ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বললো,

–“এই বেলী একটু আগে কি বললে তুমি!আমি মৌমির জন্য তোমার কাছে আসছি না।তোমার কথাও ভালো করে শুনছি না।বেলী তুমি কি জেলাস হচ্ছো?জেলাস হলেও আমার কিছু করার নেই।কতোদিন পর মৌমি এসেছে শুধুমাত্র আমার সাথে দেখা করার জন্য।আর,কি সুন্দরীও হয়েছে বলো।”

বুরাগ কথাটা দুষ্টুমি করে বললেও বেলীর খুব গা’য়ে লেগেছে।স্বামীর মুখে অন্য কোনো মেয়ের নাম শুনা খুবই কষ্টকর।বেলী প্রথমে ভেবেছিলো বুরাগ তাকে বলবে,মৌমির সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই,তুমি ভুল বুঝছো।কিন্তু,এইসবের কিছু তো হলোই না উল্টো আরো রাগিয়ে দিলো তাকে।বেলী বুরাগের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানার এককোণায় গিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো।চোখ বন্ধ করে রাখলেও পানির অবাধ্যতা কমছে না।বরং,আরো বেড়ে যাচ্ছে।

চলবে..

(একটু মন্তব্য দরকার উপন্যাস টা নিয়ে।আমি তাল হারিয়ে ফেলেছি।কেমন এলোমেলো লাগে লিখতে গেলে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here