উপন্যাস প্রপর্ণ পর্ব-২৯

0
2633

#উপন্যাস_প্রপর্ণ(২৯)
#কুরআতুল_আয়েন

সকাল হতে না হতেই বেলী নিজের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রেডি হতে লাগলো।একটু পরেই তার আব্বা আসবে,তাকে নিয়ে যেতে।বেলী আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের ফোলা পেট টা দেখছে আর কান্না করছে।কান্না করার আসল কারণ সে নিজেও জানে না।তার এখন মনে হচ্ছে,কেনোই বা জেদ দেখিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য রাজি হয়েছিলো।এখানে থাকলেই ভালো হতো।বুরাগকে না দেখে সে কীভাবে থাকবে তা এখন মনে করেই বেলী কেঁদে কেটে একাকার।

বুরাগ থমথমে মুখ নিয়ে রুমে ঢুকে বেলীর সামনে দাঁড়ালো।বেলীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,

–“কাজ টা একদম ভালো করছো না তুমি বেলী।আমার কথা অমান্য করেছো তো দেখে নিও এর প্রতিশোধ আমি কীভাবে নেই।”

বেলী বুরাগের কথার পিঠে মুখ ভেঙচি মেরে বললো,

–“আমার থেকে প্রতিশোধ না বরং আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।কারণ,আমি চলে গেলে ওই মৌমির সাথে সময় কাটাতে পারবেন।আমি থাকলে তো অনেক সমস্যা হতে পারে।আপনাদের মাঝখানে তো আমি বাঁধা হয়ে আছি।তাই,আমার চলে যাওয়ায় ভালো।”

বুরাগ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বেলীর দিকে।বেলীর কথা শুনে তার প্রচন্ড রকমের রাগ হচ্ছে।মৌমির সাথে তার সম্পর্ক টা শুধু বন্ধুত্বের।এমনকি বেশ ভালো বন্ধুও তারা।আর,এইখানে বেলীর মুখে এইসব কথা শুনে বুরাগের প্রচন্ড রকমের রাগ হচ্ছে।একটা ভালো সম্পর্ক কে বেলী ভুল বুঝছে।তার মানে বেলী তাকে বিশ্বাস করে না।যেখানে বেলী তাকে বিশ্বাস এই করে না সেখানে তার থাকার দরকারও নেই!!তাই বুরাগ রাগান্বিত হয়ে বললো,

–“বাবা আসলে চলে যেও।তোমাকে যেনো আর আমার আশেপাশে না দেখি।”

ব্যাস!বুরাগের এই কথাটাই যথেষ্ট ছিলো বেলীর মনে আঘাত হানতে।বুরাগের মুখে এমন একটা কথা শুনবে সে কখনো ভাবতেও পারে নি।যে কিনা একটু আগেই রাগারাগি করছিলো তার চলে যাওয়া নিয়ে আর সেই কিনা বলছে তাকে যেনো তার আশেপাশে না দেখে।বেলী ঝাপসা চোখে তাকিয়ে আছে বুরাগের লাল হয়ে যাওয়া মুখের দিকে।চোখের পানিটুকু মুছে নিয়ে বললো,

–“ঠিকাছে আমাকে আপনার আশেপাশে আর দেখবেন না।”

বুরাগের চোয়াল আরো শক্ত হয়ে গিয়েছে।বেলীর দিকে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে রুম ত্যাগ করে চলে গেলো।বুরাগ চলে যেতেই বেলী ধীর গতিতে বিছানায় বসে পড়লো।চোখ দিয়ে তার অঝোর পানি পড়ছে।ইচ্ছে করছে বুরাগের কাছেই থেকে যেতে।কিন্তু,চাইলেও সে এই ইচ্ছা টাকে প্রাধান্য দিবে না।বুরাগের কথার মর্ম সে রাখবে!সে বুরাগের আশেপাশে আর থাকবে না।
—-
সোফায় বসে আছেন অলি সাহেব।শুভ্র সাদা পাঞ্জাবি টা গায়ের সাথে লেপ্টে আছে।একটু আগেই এসে পৌঁছছেন তিনি।অলি সাহেব কয়েকবার এসেছিলেন এই রহমান ভিলাতে।কোহিনূরকে বিয়ে দেওয়ার সময় এসেছিলেন,আরেকবার,শহরে কিছু কাজের সূত্র এসে থেকেও ছিলেন।আর আজকে,বেয়াই হয়ে এসেছেন।

অলি সাহেবের সামনের সোফাটায় বসে আছেন আফিয়া আর কোহিনূর।টি-টেবিলের সামনে বাহারি রকমের নাস্তা।সাথে চা’য়ের কেটলিও আছে।টুকটাক কথা বলছেন আর চা খাচ্ছেন।এরিমধ্যে,বেলী নিচে নেমে আসলো।অলি সাহেবকে দেখে বেলী ঝাপটে ধরে কেঁদে উঠলো।এখান থেকে চলে যাওয়ার কষ্টে।কিন্তু,অলি সাহেব ভেবে নিয়েছেন বেলী উনাকে এতোদিন পর দেখেছে বলে কান্না করছে।তাই অলি সাহেব বেলীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর বলছেন,

–“আরে বোকা মেয়ে কান্না করার কি আছে।আমি তো তোর সামনেই আছি।আর এখন থেকে তো বাড়িতে আমাদের সাথেই থাকবি।তোর আম্মা এখন পর্যন্ত আমাকে কতোবার যে ফোন দিলো।”

বেলী মাথা নিচু করে রেখেছে।তার খুব কষ্ট হচ্ছে বুরাগের জন্য।যেতে ইচ্ছে করছে না এইখান থেকে।কিন্তু,সে কিছুতেই থাকবে না।সে তো বুরাগকে বলেছে,সে বুরাগের আশেপাশে থাকবে না।তো কেনোই শুধু কাঁদছে এইখানে থাকার জন্য।উঁহুহু!সে থাকবে না এইখানে!কিছুতেই না।এখনোই চলে যাবে।

বেলী থমথমে গলায় বললো,

–“আব্বা!আমি এখনোই বের হতে চাই।আম্মাকে দেখার জন্য মন খুব অস্থির করছেন।”

অলি সাহেব হেসে বললেন,

–“ঠিকাছে আমরা এখনেই বেরিয়ে পড়বো।”

আফিয়া বেলীর দিকে কিছুক্ষণ সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করে নিলেন।হুট করেই উপরের দিকে চোখ পড়লো উনার।করিডোরের সামনে বুরাগকে বেলীর দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন।উনি বুঝে নিয়েছেন,ছেলে আর ছেলের বউয়ের মধ্যে অভিমান কমে নি বরং,আরো দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে।তবে,উনি এইটাকে আর গুরুত্ব দেন নি।কারণ,সংসারে মান অভিমান থাকবেই।আর,মান অভিমানের ফলে সম্পর্ক আরো গাঢ় হয়।ভালোবাসাও যেনো দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

অলি সাহেব আর বেলী সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।বেলী যাওয়ার আগে একপলক তাকিয়ে ছিলো বুরাগের দিকে।তখনও বুরাগের চোখ বেলী লাল দেখেছিলো।বেলী বুরাগের এরূপ চোখ দেখলে প্রচন্ড ভয় পেতো কিন্তু,আজকে তার উল্টো টা হয়েছে।বেলী আজকে বুরাগকে দেখে ভয় পায়নি,তবে তার মনে অনেক অভিমান জমা হয়েছে।

বুরাগ শক্তপোক্ত মুখ করে দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ বেলীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো।রাগে তার শরীর ফেটে যাচ্ছে।যাওয়ার আগে একবারও তাকে বলেও পর্যন্ত যায় নি।সেই বা কেনো যাবে!এক তো তাকে আর মৌমিকে নিয়ে ভুল বুঝেছে আর,দ্বিতীয়তো, যাওয়ার আগে একবারও তার কাছে আসলো না।এইসব কিছুর ফয়সালা নিবে বুরাগ।রাগ সংবরণ করার জন্য হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে আছে।

আফিয়া ছেলের কাছে এসে নিঃশব্দে এসে দাঁড়ালেন।বুরাগকে রাগতে দেখে বললেন,

–“কি রে রেগে আছিস কেনো?বেলী চলে গিয়েছে অথচ ওর কাছে গেলিও না কথাও বললি না।”

বুরাগ আনমনেই বলে উঠলো,

–“ও নিজের ইচ্ছেতেই চলে গিয়েছে সেখানে আমি গিয়ে কিই আর বলবো।ও আমাকে ভুল বুঝেছে!মৌমির সাথে ও আমাকে সন্দেহ করেছে।এই চিনলো আমাকে।মৌমি তো আমার ভালো বন্ধু।এমনকি যাওয়ার আগে,আমার কাছে একবারও আসলো না।”

আফিয়া বুঝতে পেরেছেন ছেলের মনের ভিতরে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।উনি মুচকি হেসে বললেন,

–“বাঙালি মেয়েরা নিজের স্বামীকে অন্যকোনো মেয়ের সাথে দেখতে পছন্দ করে না।সেটা বন্ধু বা অন্যকেউ এই হোক।তারা স্বামী নিয়ে খুব সেনসিটিভ।”

বুরাগ চমকে পিছনে তাকালো।মা’কে দেখে আমতাআমতা করে বললো,

–“মা তুমিও কি বাবাকে নিয়ে সেনসিটিভ।”

বুরাগের এমন প্রশ্নে আফিয়া কিছুটা মিহিয়ে যান।কি বলবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না।উনার সাথে তো আজাদ রহমানের সম্পর্ক কোনোদিনও ভালো ছিলো না।কিন্তু,উনি তো ভালোবাসেন উনার স্বামীকে।বুরাগের কথার উত্তর দিতে উনার ভালো লাগছে না।তাই এইখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য তাড়া দিয়ে বললেন,

–“বুরাগ আমাকে যেতে হবে বাবা।অনেক কাজ পড়ে আছে।সবার জন্য রান্না করতে হবে।”

আফিয়া দ্রুত গতিতে হেঁটে চলে যান।বুরাগ মায়াময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মা’র যাওয়ার দিকে।পরমুহূর্তেই বিরবির করে বলতে লাগলো,
‘তোমার কষ্ট দেখলে আমার খুব কষ্ট হয় মা।তুমি যে ভিতরে ভিতরে অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়েছো তা কেউ জানতে না পারলেও আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি।এমনকি বাবাও একদিন বুঝবে।’

বুরাগ ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।গুটিগুটি পা’য়ে রুমের দিকে এগিয়ে আসলো।দরজাটা বন্ধ করে,বিছানায় মাথা এলিয়ে দিয়েছে।পাশে হাত বুলিয়ে কিছুটা ভাঙা গলায় বললো,

–“তোমাকে ছাড়া আমি কীভাবে থাকবো বেলী!তোমার স্মৃতি নিয়ে থাকতে গেলে তো আমার আরো দমবন্ধ হয়ে আসবে।আমার যে,তোমাকে প্রয়োজন বেলী।তোমার স্মৃতিগুলো না।
তবে,আজকে তুমি মোটেও ঠিক করো নি।এরজন্য তোমাকে আমি কোনোদিনও ক্ষমা করবো না।”

মৌমি আজকে ভিষণ খুশি।তার একমাত্র কারণ,বেলীর বাপের বাড়ি যাওয়া।সে তো এটাই চেয়েছিলো,বুরাগকে একা পাওয়া,তার সাথে সময় কাটানো।আজকে থেকে তার আর বুরাগের মধ্যে কেনো বেড়াজাল নেই।সে যখন ইচ্ছে বুরাগের কাছে যেতে পারবে।মৌমি নাচতে নাচতে চলে যায়।মুখে ফেস প্যাক লাগাবে।আজকে একটু রূপচর্চা করে বুরাগের সামনে নিজেকে অন্যভাবে তুলে ধরবে।
—-
বেলী জাবেদার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।জাবেদা আলতো হাতে বেলীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।অন্যসময় মায়ের এই পরম আবেশে বেলীর দু’চোখে ঘুমেরা রাজত্ব করে নিতো কিন্তু আজকে সম্পূর্ণ তার ব্যতিক্রম।মন তার বুরাগের ভাবনায় বিমোহিত হয়ে আছে।ইচ্ছে করছে এক ছুটে বুরাগের কাছে চলে যেতে।

জাবেদার মনে আজকে বেশ শান্তি লাগছে।বেলীকে পেয়ে তিনি শিউলির কিছু কষ্ট কমাতে পেরেছেন।এই তো উনার কাছে মনে হচ্ছে এটাই শিউলি আর এটাই বেলী।বেলীকে গর্ভবতী অবস্থায় দেখে জাবেদার একদম চোখ জুড়িয়ে গিয়েছিলো।আগের থেকে বেলী যে দ্বিগুণ সুন্দরী হয়ে গিয়েছে তা দেখে জাবেদা শুধু মুচকি হেসেছিলেন।তবে,বেলীকে এইভাবে চুপ থাকতে দেখে উনার বেশ খানিকটা খটকা লাগলো।পরমুহূর্তেই জাবেদা ভেবে নিয়েছেন,হয়তোবা জার্নি করে এসেছে এই শরীর নিয়ে এইজন্য মনে হয় চুপ হয়ে আছে।

জাবেদা নিষ্পলক চেয়ে আছেন বেলীর দিকে।কি সুন্দর বাচ্চাদের মতো গুটিগুটি মেরে শুয়ে আছে।জাবেদা মুখে প্রাণবন্ত একটা হাসি টেনে মনে মনে আওড়াতে লাগলেন,

–“মেয়েটা খুব বড় হয়ে গেলো।মেয়ে এখন মা হবে।অথচ তাকেই এখনও বাচ্চা বাচ্চা লাগে।”

বেলী এবার না ঘুমিয়ে পারলো না।আরাম পেয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে গিয়েছে।বেলী ঘুমিয়ে পড়তেই জাবেদা বেলীর মাথার নিচে একটা বালিশ দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন।অনেকদিন হলো,শিউলির কবরের আগাছা পরিষ্কার করা হয় না।আজকে পরিষ্কার করে দিয়ে আসবেন।
—-
রাতে একটা হোটেলে উঠেছে স্নিগ্ধা আর লিটন।হোটেলের করুণ অবস্থা দেখে স্নিগ্ধার বেহাল দশা।লিটন ময়লা,জীর্ণ বিছানাটায় শুয়ে আছে।আর মনে মনে,বকে যাচ্ছে মৃত পারভীনকে।লিটনের এক কথা,আজকে তার এই অবস্থার জন্য দায়ী শুধুমাত্র পারভীন।পারভীন এইরকম অঘটন টা না ঘটালে লিটনের আজকে এই পরিণতি হতো না।বেঁচে থাকলে লিটন নিজেই ওকে মেরে ফেলতো।লিটন বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।গা’য়ে শার্ট পড়ছে আর আড়চোখে স্নিগ্ধার হাবভাব দেখছে।স্নিগ্ধাকে দেখলেও লিটনের এখন গা জ্বলে উঠে।তবে,রাতের সঙ্গীর জন্য হলেও লিটনের এখন স্নিগ্ধাকে দরকার।তাই তো,তখন বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ার পরও লিটন রাগটাকে দমিয়ে রেখে স্নিগ্ধার সাথে ভালো করে কথা বলে ওর সাথে নিয়ে এসেছে।না হলে,তো কখন এই স্নিগ্ধাকে বের করে দিতো।কিন্তু,এখন তো সে ক্ষুধার্ত প্রাণী।শরীরের ক্ষুধা মিটানোর জন্য হলেও তার এখন স্নিগ্ধাকে লাগবে।

স্নিগ্ধা লিটনিকে শার্ট পড়তে দেখে ক্যাটক্যাট গলায় বললো,

–“কোথায় যাচ্ছো তুমি?”

লিটন সোজাসাপ্টা উত্তরে বললো,

–“রাতের খাবার কিনতে যাচ্ছি।তুমি একটু বসো আমি যাবো আর আসবো।”

–“এইখানের যে অবস্থা!না জানি খাবার দাবারের কি অবস্থা হবে।এমনেই আমি এইখানে থাকতে পারছি না।শুধুমাত্র তোমার ভুলের জন্য আমাকেও এইখানে আসতে হয়েছে।”

লিটন রেগে তাকালো স্নিগ্ধার দিকে।স্নিগ্ধার কথা তাকে জ্বালাতে সক্ষম।তার ইচ্ছে করছে স্নিগ্ধাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলতে।তবে,এই রাগ টা এখন মোটেও দেখাবে না লিটন।নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বললো,

–“আসার পর থেকেই তো শুনছি তোমার এইসব লেইম কথা।আমার ভুলের জন্য তোমাকে সাফার করতে হয়েছে।আচ্ছা!ভুলের কথা বলছো কেনো?আমরা কোনো ভুল করি না।আমরা তো একে অপরকে ভালোবাসি বলো।তাহলে,এইখানে ভুল আসবে কোথা থেকে।ভালোবাসতে গেলে এইরকম অনেক কিছুই সহ্য করতে হয়।”

স্নিগ্ধা একরাশ বিতৃষ্ণা নিয়ে বললো,

–“এটাই আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।এমন জানলে কখনো তোমার কাছে ধরা দিতাম না।এখন প্লিজ যাও!কিছু ভালোমানের খাবার নিয়ে আসো।আর,খাবার না আনতে পারলে নিজের মুখটা দেখিও না আমাকে।যত্তসব!!”

লিটন আগুনের ফুলকির মতো জ্বলে উঠলো।তার ভিতরে মনে হয় আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠছে।স্নিগ্ধার দিকে কিছুক্ষণ রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।
—-
রাতে খাবার খেয়ে সোফায় বসে ছিলো বুরাগ।রুমে যেতে একদন্ডও ভালো লাগছে না।বারবার বেলীর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।আর,বেলীর কথা মনে উঠতেই ভিতরে ভিতরে অনেকটা রাগ জমা হয়।তাই,মনকে একটু শান্ত করার জন্য বুরাগ রায়ানকে ভিডিও কল দিলো।তখনি হাসি আর খুশি দৌড়ে বুরাগের কাছে গিয়ে বসলো।বুরাগ তাদের দেখে হাসি দিয়ে আর কিছু বলে নি।কল হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই রায়ান ফোন রিসিভ করলো।রায়ানকে খালি গা’য়ে দেখে হাসি হেসে ফেললো।কিছুটা চিল্লিয়ে বললো,

–“রায়ান ভাইয়া!তোমাকে কেমন ক্যাবলা লাগছে।”

খুশি চট করে তাকালো ফোনের স্ক্রিনের দিকে।রায়ানকে এইভাবে দেখে সাথে সাথেই মাথা নিচু করে ফেললো।সে একদম ভাবতে পারে নি তার বুরাগ ভাইয়া রায়ানকে ফোন দিয়েছে।খুশি আবারও একবার ফোনের স্ক্রিনে তাকালো।রায়ানকে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখে সোফা ছেড়ে দৌড়ে চলে গেলো।

রায়ান বেচারা খুশি চলে যেতেই মুখটাকে নিভু নিভু করে ফেলেছে।কি অপলক ভাবেই না দেখছিলো খুশিকে।কিন্তু মাঝখান দিক দিয়ে খুশি নিজেই পগারপার হয়ে গেলো।খুশির সামনে থাকলে দু এক থাপ্পড় বসিয়েই দিতো।খুশি কি বুঝবে তার মনের অবস্থা।আজকে খুব রাগ লাগছে খুশির উপর।এখন কেনো চলে গেলো সামনে থেকে।সে তো ফোনের অপাশে আছে এপাশে তো নেই।সে তো বিদেশ আছে,বাংলাদেশে তো নেই।এমনকি সে তো খুশির থেকেও দূরে আছে তাহলে!কেন খুশি আজকেও দৌড়ে চলে গেলো।একটু বসলে কি হতো!সে তো আর ওইদিনের মতো চুমু দিতো না।জাস্ট একপলক চোখের দেখা দেখতো শুধু!!
রাগে দুঃখে রায়ান ফোন কেটে দিয়েছে।তুলতুলে বিছানা টার উপর ফোনটাকে পাথরের মতো ঢিল মেরে ফেলে দিয়ে সামনে রাখা একুরিয়াম টার দিকে এগিয়ে গেলো।মাছ গুলোর দিকে তাকিয়ে তাদের ছুটাছুটি দেখছে।কমলা রঙের মাছটা নীল রঙের মাছটার সাথে শরীর ঘেঁষে মিশতে নিলেই রায়ান কিছুটা তিক্ত মেজাজ নিয়ে বলে উঠলো,

–“আমার রুমে থেকে তোরাও প্রেম করছিস নাকি।আমি আছি কষ্টে আর তোরা আছিস সুখে।ঢং কতো তোদের।”

বলেই গটগট করে বারান্দায় চলে যায় রায়ান।নাক,মুখ ফুলিয়ে বললো,আর তাকাবো না তোমার দিকে খুশি।আমার থেকে তোমাকে আর পালাতে হবে না।

বুরাগ কতক্ষণ আহাম্মকের মতো তাকিয়ে রইলো ফোনের দিকে।সে কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দিলো।বুরাগ পাশে বসা হাসির দিকে তাকালো।হাসিও মুখটাকে ভোঁতা করে তাকিয়ে আছে।হাসি উঠে চলে আসলো রুমে।বুরাগ উঠে আসতে নিলেই মৌমি চেপে ধরলো।বুরাগের বেশ অস্বস্তি হচ্ছে এখন।তার কানে বেলীর কথা গুলো বাজছে।তাই,বুরাগ,মৌমিকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।কিন্তু,মৌমি থামার মেয়ে না!সেও বুরাগের পিছন পিছন হাঁটা ধরলো।

চলবে..
(দয়া করে রেসপন্স করার চেষ্টা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here