পুনম পর্বঃ১৯

0
1396

#পুনম
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ১৯

লাবণ্য আজ খুশিতে বাক-বাকুম! ওর মনে হচ্ছে খুশিতে আজ মরেই যাবে! না না মরে গেলে তো চলবে না।মরে গেলে এত খুশি উদযাপন করবে কে? তাছাড়া ক্লাসের শাঁকচুন্নিগুলোকেও তো দেখাতে হবে মোবাইল।ওরা এতদিন ওকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে এবার সবার দাঁত ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো করে তা দিয়ে যদি দাঁত না মেজেছি তবে আমি লাবণ্য নই।হুহ!
বিকালে ওর পছন্দের কতগুলো মেকাপ সামগ্রী পেলো আর সন্ধ্যায় এত দামি টাচ ফোন। অবশ্য মোবাইলটা নয়াপুর, তাতে কি? যা নয়াপুর তাহাই আমার। ইশ!কতদিনের শখ ছিল একটা এন্ড্রয়েড মোবাইলের।
কিন্তু নয়াপু এমন কটকট করে তাকিয়ে আছে কেন বল্টু ভাইয়ের দিকে?

বল্টু ভয়ে কয়েক ঢোক গিলে, ইফতার টেবিলে বসে পড়ে।ও অবশ্য চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আংকেল ইফতার না করে যেতে দিবে না।তাই এখন ইফতার টেবিলে বসে পুনমের আগুন চোখ দেখতে হচ্ছে! বল্টু চুপিসারে দীর্ঘশ্বাস ফেলে! এই তানভীর ভাইয়ের জন্য আর কত কি সহ্য করা লাগে আল্লাহ জানে?
মেজ আপা বলে উঠলো,
—– কি ব্যাপার বলতো পুনু?তুই লটারিতে এত ভালো একটা মোবাইল পেলি তারপরও মুখটা এমন শুটকির মত লটকিয়ে কেন রাখছিস?
বড় আপা উত্তরে বলে উঠলো,
—– দেখো লটারিতে পেয়েছে না আবার অন্য কোথা…..?

পুনম শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
—–বড় আপা তুমি একথা দ্বারা কি বোঝাতে চাইছো? সরাসরি কথা বলবে।এরকম ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলবে না।তোমার মত আমরা এত ডিপ্লোমেটিক কথা বুঝিনা!

বড় আপা আর কিছু বললো না।বাবা সামনে আছে।আবার কি না কি বলে দেয় বাবা, তখন ইষ্টির আব্বুর সামনে ছোট হতে হবে ওকে। তার থেকে এখন চুপ থাকাই ভালো!
পুনম চেয়ার ঠেলে উঠে পড়ে। সবাইকে বলে, জরুরী ফোনে কথা আছে, সেরে এক্ষুনি এসে পড়বে । বল্টু চোরাচোখে তাকায় পুনমের দিকে।বুঝতে পারে জরুরী কলটা এখন তানভীরের কাছে যাবে। বল্টু মোবাইলটা সম্পর্কে পুনমের বাসার সবাইকে বলেছে,
তাদের ভার্সিটিতে এই মোবাইল কোম্পানি থেকে লোক এসেছিল তারা একটা কুইজ প্রতিযোগিতা করেছিল কিছুদিন আগে তার লটারিতে আজকে এই মোবাইলটা পুনমের নামে সিলেক্ট হয়েছে। এই কথা সবাই অনায়াসে বিশ্বাস করে নিয়েছে কিন্তু সত্যিটা তো পুনম আর বল্টু দুজনেই জানে…….

—–হ্যালো!এসবের মানে কি? আমাকে বলুনতো….

তানভীর অবাক হলো না পুনমের প্রশ্নে।যখন কল এসেছে তখনই বুঝেছে এতক্ষণে বল্টু তার কাজ করে দিয়েছে। এখন যা করতে হবে তা হলো সম্পুর্ণ বিষয়টাকে না জানার ভান করতে হবে।

—–এই পুনমি, কিসের কথা বলছো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা পুনমি।

—-একদম না জানার ভান করবেন না।আপনি আমাকে মোবাইল পাঠিয়েছেন কেন?

—-মোবাইল…আমি…তাও তোমাকে…কখন পাঠালাম? তুমি কি আবোল তাবোল বলছো পুনমি?

—-মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পড়েছেন এমন ভাব করছেন। আর কতবার বলেছি প্রত্যেক কথার শেষে এমন পুনমি পুনমি করবেন না। আপনি কি ভেবেছেন এসব দামি উপহার দিলেই আমি আপনার প্রেমে পড়ে যাবো? কখনো না…..তাই এসব ছারুন।

তানভীর পুনমের কথা শুনে ঠোঁট চেপে হাসে।বুঝাই যাচ্ছে রেগে বেলুন হয়ে রয়েছে তারপর আবার হাসির শব্দ শুনলে তুলকালাম বাঁধাবে।তানভীর মনোক্তি করে,এই মেয়ের এত আত্মসম্মান? ভালোবেসে কিছু দিলে কি আত্মসম্মান ছোট হয়? হয় না তো। তা একে কে বুঝাবে?

—-তুমি আমার প্রেমে পড়নি বুঝি? আমি তো দেখলাম তুমি আমাতে আঁছড়ে পড়েছো…..

—–একদম ফালতু কথা বলবেন না।

—–কিসের ফালতু? প্রেমে না পড়লে কি কাউকে ওভাবে চুমু ফুমু দেয়া যায়?বলো?

পুনম নিজের কপাল চাপড়ায়।কার সাথে কথা বলছে ও? এর সাথে কথা বলা আর কলাগাছের সাথে কথা বলা একই! এই মানুষটার কথা শুনে পুনমের সাড়া গা জ্বলে যায়! এই এক চুমুর জন্য পুনমের যে আরো কত কিছু সহ্য করতে হবে……

—-খুব বেশি সাহস দেখাচ্ছেন না আপনি? এত সাহস কিন্তু ভালো না বলে দিচ্ছি….

—-প্রেমে পড়ে সাহসীরা হয় ভীতু আর ভীতুরা হয় সাহসী! তাই এতে দোষের কিছু নেই।আর আমিও তো চাই তুমি একটু আধটু সাহস দেখাও। আমি যেদিন থেকে সাহসী হলাম তুমি তো সেদিন থেকে একদম মেনি বিলাই হয়ে গেছো পুনমি!

—-একেবারে পুলিশ কম্পেলেন করবো অসভ্য লোক।

—-করো করো…. আমিও তখন পুলিশকে বলবো, এই যে পুনম নামের মেয়েটিকে দেখতে পাচ্ছেন, একদম সহজ সরল চেহারা। আসলে এই মেয়ে মহা দুষ্টু!আমার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে এই মেয়ে আমায় চুমু টুমু দিয়ে একাকার করে ফেলেছে! যাকে বলে পুরুষ নির্যাতন! তখন দেখি তোমার পুলিশ আমার কি করে?

—–অসভ্য!…..বলে পুনম কল কেটে দেয়।আর একটা কথাও বলবে না ও এই ফাজিলটার সাথে।কত বড় সাহস বলে কিনা আমি ওনাকে হ্যারেস করেছি! রাগে পুনমের পায়ের তালু থেকে মাথার চান্দি পর্যন্ত গরম হয়!কিড়মিড় করতে করতে ডায়িনিং টেবিলের সামনে এসে বল্টুর গালে সপাট করে একটা চড় মেরে দেয়…..
বল্টু গালে হাত দিয়ে বোকার মত তাকিয়ে থেকে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,মারলি কেন আমায়?
বাবা সহ সবাই জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পুনমের দিকে…পুনম নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে,
—-বড় একটা মশা পড়েছিল তোর গালে।দেখতে একদম এডিস মশার মত! তাই মেরেছি।

সবাই সে কথা বিশ্বাস করলেও বল্টু ঠিকই বুঝে যায় কোন মশা পড়েছিল তার গালে।আর সে কেন মার খেলো?

***********************
সবাই খাওয়ার পর পাবনী হালকা কিছু খাবার তুলে রাখে সুমন ভাইয়ের জন্য। কেবল মানবিকতার খাতিরে এই আলাদা যত্নটুকু করে পাবনী।মায়া হয় মানুষটাকে দেখলে কিন্তু কখনো সুমন ভাইকে নিয়ে কোন নোংরা চিন্তা পাবনী করে নি।অথচ কাল বড় আপা কিভাবে নোংরা ইঙ্গিতে পাবনীকে বললো,
—–কিরে পাবনী সুমনকে দেখলাম তোর জন্য চুড়ি নিয়ে আসতে আবার তুই ওর খাবারের দিকে খেয়াল রাখছিস, জামা ধুয়ে দিচ্ছিস।মতলবটা কি বলতো?আমার দেবরের গলায় ঝুলে পড়তে চাইছিস?তুই যে আতুর সে কথা কি ভুলে গেছিস?তোর পায়ের পিছনে কত টাকা ঢালতে হয়…সুমনের আছে কি যে তোকে বিয়ে করে চিকিৎসা চালাবে?নাকি আমাদের ঘারে উঠতে চাইছিস?

পাবনী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল বড় আপার কথা শুনে।দু’চোখ জলে ভরে উঠেছিল কিন্তু কিছুই বলতে পারেনি শুধু অশ্রুসিক্ত চোখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল…..তা দেখে বড় আপা বলেছিল,
—–এত ঢঙ কোথায় পাসরে পাবনী? ভেবেছিস কি তোর কান্না দেখে গলে যাবো আর তুই আমার সংসারে ঢুকে পড়বি।সবসময় তো খুব শান্ত হয়ে সবার সামনে ঘুরিস তবে তলে তলে এত ছলাকলা কোথায় শিখলি?

ঐ মুহুর্তে বাসায় প্রবেশ করতে গিয়ে পুনম সবই শুনে ফেলে। সে কাঁধে ঝুলানো হ্যান্ডব্যাগটা সোফায় ছুড়ে মেরে বড় আপার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিল,
—-কি সমস্যা তোমার বড় আপা? তুমি কি চাইছো বলতো? ঝামেলা বাঁধাতে?সবসময় দেখে এসেছি বড় আপা শান্ত পরিবেশকে তুমি সবসময় উল্টা পাল্টা কথা বলে অশান্ত করে তুলতে।কেন? আমরা তোমার কি ক্ষতি করেছি বলতো?
একটা কথা মন দিয়ে শুনে রাখো বড় আপা আমি পুনম, পাবনী নই।যে তুমি বলবে আর আমি শুনবো।নিজের বোনকে কি করে তুমি আতুর বলতে পারো? আর রইলো কথা টাকা ঢালার।টাকা ঢাললে আমার বাবা ঢালে তাতে তোমার কি?এই ঘরে তোমার অধিকার ততটুকু যতটুকু একজন নাইওরির হয়।এর বেশি নাক গলাবে না। তাছাড়া তোমার সংসারের সাথে কবেই বা সুমন ভাই যুক্ত ছিল? তুমি আর তোমার জামাই তো তাকে এতকাল চাকরের মত দেখো এসেছো।আজ তাকে নিজের বলে দাবি করছো যে? আর বড় আপা তুমি আর তোমার জামাই খেয়াল রেখো চাকর আবার মালিক না হয়ে যায় আর মালিক চাকর? বুঝেছো?

পুনম পাবনীর হাতে ঝাকা দিয়ে বলেছিল, —সেজ আপা সবসময় এমন মুখ বুজে থাকবিনা।দেখলে মেজাজ গরম হয়! কেন বললি না তোর বড় বোন কে যে কাল সুমন ভাই এক ঝুড়ি চুড়ি এনেছিল বাসার ছোট বড় সবার জন্য! তবে তোকে কেন এসব বলতেছে?প্রতিবাদ করতে শেখ সেজ আপা! আর তোর একার জন্য যদি এনেও থাকে তবে সমস্যা কি? যে নিজে ছলাকলা করে বিয়ে করছে সে আবার অন্যকে বলে কিভাবে? মুখ খুলতে শিখ!

পাবনী কালও কিছু বলতে পারি নি না আজ বলতে পারবে।ও এরকমই! সকল কথা, কষ্ট, বেদনা,অবজ্ঞা চেপে রাখতে পারে!

***********************
তানভীর যখন মাকে নিয়ে বাসায় ফিরলো তখন রাত আটটা।বাসার পরিবেশ খুবই ঠান্ডা!এমনকি সারভেন্টদের কাজের আওয়াজও আসছেনা। তার মানে হায়দার হোসেন এসে ভালোই চোটপাট চালিয়েছে।মাকে রুমে পাঠিয়ে দিয়ে রাজুকে খবর দেয় তানভীর। তানভীর লক্ষ্য করে রাজুর মুখ থমথমে।যেন বিপদের পাহাড় তার সঙ্গে ঘুরছে।
—-রাজু তোমার বড় স্যার কোথায়?
—-সে প্রাইভেট রুমে!
—- ও তা কার সাথে?
—–কারো সাথে না,স্যার আপনাকে দেখা করতে বলেছে।
—-তারুণ কোথায়?
—-ছাদে বই পড়ছে।
—শোন রাজু কেউ মারা যায় নি যে তোমার এমন মুখ করে কথা বলতে হবে।ইজি হও।কিছু মানুষকে গোমড়া মুখে মানায় না!
—-স্যার আই এম স্যরি!
—স্যরি বলার মত কিছুই হয়নি। তুমি তোমার কাজ করেছো।
রাজু বিড়বিড় করে বলে,স্যার আপনার বিপক্ষে আমার কিছুই বলতে মন চায় না।তবু বলতে হয়। আপনি শাস্তি পেলে আমার খুব কষ্ট হয়!খুব!
—-স্যার আমি ঠিক করেছি চাকরি ছেড়ে দেবো।
তানভীর অবাক হলো না। তানভীর জানে রাজু ওকে পছন্দ করে কিন্তু ওই যে কাজ…..
—-তুমি খুব ভালো একটা ছেলে রাজু।আমার সামনে অনেক কঠিন সময় …..আমি চাই তখন তুমি আমার পাশে থাকো ভাইয়ের মত।
রাজু হুট করে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেললো।সে তানভীর স্যারের ভাই হওয়ার যোগ্য না!কখনো না!
*********************
—–তুমি জানতে না আজ আমি আসবো তানভীর?
—-হ্যা জানতাম!
—তোমার মা একজন মানসিক রোগী। তুমি কোন সাহসে তাকে নিয়ে বের হও?
—–আপনার কাছে আমার মা মানসিক রোগি হতে পারে কিন্তু আমার কাছে না।
হায়দার হোসেন লক্ষ্য করলেন তানভীর তার চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে কথা বলছেন…যা আগে কখনো করিনি। এবং এও লক্ষ্য করলেন তার ছেলের চোখে আলাদা বিদ্যুৎ বিচ্ছুরণের ছটা।পুড়িয়ে দেবার জন্য এই বিচ্ছুরণই যথেষ্ট! হায়দার হোসেন ভিতর থেকে বিচলিত হলেন কিন্তু চোখে মুখে স্বাভাবিক থেকে ছেলের সাথে কথা বললেন,
—–ডক্টর বলেছেন তোমার মায়ের সমস্যা আছে আমি বলিনি।
তানভীর মৃদু হেসে বললো,
—–ডক্টর টা তো আপনারই নির্বাচিত করা তাই না?
—-আমি তোমার বাবা তানভীর। আমার সম্পর্কে এত খারাপ ধারণা পোষা কি ঠিক?
—-স্যরি টু সে… আপনার সম্পর্কে আমার আগে খারাপ ধারণা ছিল কিন্তু আজ থেকে শুধু ই ঘৃন্য ধারণা রাখি!

হায়দার হোসেন কি করবেন ভেবে পেল না।সামনে বসা ছেলেটা যদি তার নিজের ছেলে না হতো তবে এতক্ষণে তার লাশ পড়ে থাকতো।রাগে সারা শরীর রি রি করছে। তার মানে শায়লা সব বলে দিয়েছে তাই আজ তার ছেলে তার সাথে এই ধৃষ্টতা দেখাতে পেরেছে।শায়লা এর জন্য কঠিন শাস্তি পাবে। কঠিন!

—-তার মানে তুমি সব কিছু জেনে গেছো।আশা করি তুমি বুঝতে পেরেছো আমি কি করতে পারি আমার অবাধ্য হলে….
—আমি অপেক্ষায় রইলাম।
—-তুমি তারিনের বাসায় গিয়েছ কেন?
—আপনি আপনার মেয়েকে ভুলে যেতে পারেন কিন্তু আমি আমার বোনকে ভুলতে পারবো না।
—আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি নাকি আবার পড়াশুনা শুরু করেছ চাকরির জন্য। তার কি কোন দরকার আছে? আমার যে কোন একটা অফিসে তোমাকে তো আগেই বসতে বলেছিলাম তবে বসলে না কেন?
—-আমি নিজে কিছু করতে চাইছি।
—অবাধ্য হয়েও না তানভীর!এই কার্ডটা রাখো, আমার বন্ধুর মেয়ে এই অফিসে বসে। আশা করি তোমাদের বন্ধুত্ব দারুণ হবে।

তানভীর কার্ডটা ছুঁয়েও দেখলো না। সে একই ভাবে বললো,
—-আমি আগ্রহ বোধ করছি না।
—তুমি কি চাও না তোমার মা ভালো থাকুক?
—সে এমনিতেও ভালো নেই।আশা করি আপনার প্রশ্ন শেষ হয়েছে এখন আমি উঠি।আর আমাকে তালাবদ্ধ করে রাখার কথা চিন্তা ও করবেন না।কারণ এতকাল আমি চেয়েছি বলে আমাকে বন্দি করতে পেরেছেন।

তানভীর উঠে রুমের দরজা পর্যন্ত গেলে হায়দার হোসেন আবার বলে উঠলেন,
—–তুমি কি চাও না তোমার সেই বন্ধুটি ভাল থাকুক? নাকি তাও চাও না।

কথাটি শুনে তানভীরের বুকের ভিতর ধক করে ওঠে।পুনমের কিছু হলে ওর হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবে। তারপরও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে ওঠে,
—-আপনি এছাড়া আর কি পারেন?কারো দূর্বলতায় আঘাত করাই তো আপনার সাহসীকতা।তবে সে আমার মায়ের মত ভীতু নয়। যে চাইলেই ভেঙে ফেলতে পারবেন।
আর আপনাকে আর একটা কথা বলে রাখি তা জেনে আপনি আনন্দিত হবেন,আমি তাকে যতটা চাই সে যদি ততটা আমাকে চাইতো তবে কারো সাধ্য ছিল না আমাকে তার কাছ থেকে দূর করার! আপনার ছেলে তার পিছনে তৃষ্ণার্ত পাখির মত ঘুরে কিন্তু সে ফিরেও তাকায় না!

তানভীর আর একমুহূর্ত দাঁড়ায় না।সে হনহনিয়ে হেঁটে বের হয়ে যায়….যত যাই হোক তবু আর ভয় পাবে না ও এই বাবা নামক মানুষটিকে!

********************
জামাল ব্যস্ত পায়ে এসে পুনমদের দরজায় কড়া নারে।পুনম পড়ছিল। এত রাতে এত জোরে দরজা ধাক্কানোর শব্দে উঠে এসে দেখে তার মেজ দুলাভাই কাঁদো কাঁদো মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
—-কি হয়েছে দুলাভাই?
—-তোমার আপা খুব বমি করছে। দেখো তো কি হয়েছে? আমার খুব ভয় করছে।
এতক্ষণে সবাই উঠে এসে জরো হয় মেজ আপার রুমে। দেখে মেজ আপা বালতিতে মুখ দিয়ে ওয়াক ওয়াক করছে….
মা বলে ওঠে, ঝুমা তোকে কতবার বলেছি খাওয়ার আগে বমির ঔষধ টা খাবি। তা না করে খালি বমি।

জামাল লেবু পাতা ধরে বসে ঝুমার নাকের কাছে।যদি বমি কমে।পুনমের মনে হচ্ছে এখনি তার মেজ দুলাভাই কেঁদে দিবে।কি যন্ত্রণা! এরা দুজন দুজনকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা।এরকম সময় বমি হয়। তবে ওতোটাও মারাত্মক অসুস্থ নয় মেজ আপা।গ্যাসের সমস্যা আছে সারাদিন হাবিজাবি খায় তাই হয়তো বমি করছে কিন্তু তার দুলাভাইর অস্থিরতা ব্যাপক। তাই
পুনম বলে ওঠে,
—-দুলাভাই আমি শুনেছি এরকম সময় স্ত্রীর বমি হলে সাথে যদি স্বামী বমি করে তবে নাকি বমি কমে যায়। বিশ্বাস করুন!

ঘরের সবাই পুনমের দিকে বোকার মত তাকিয়ে থাকে এমনকি মেজ আপাও।তবে বাবা মুখ চেপে হাসছেন।
পুনমের কথা সত্যি করে জামাল সত্যিই বমি করতে চেষ্টা করছে!ওয়াক ওয়াক করছে। পাশ থেকে মরিচা বলে ওঠে, দুলাভাই গলায় আংগুল দেন তয় বমি আইবো।দেন দেন।
জামাল তাও দিল যদি এতে ঝুমার বমি কমে। ঝুমার বমি তো কমেছে সেই কখন! সে অবাক চোখে চেয়ে থেকে তার স্বামীর দিকে বলে ওঠে, গাধা!

চলবে,
এতদিন যার জন্য গল্প দিতে দেরি হতো কাল তারা চলে গেছে।আমার বোন আর তার পুচকু সোনা এসেছিল বেড়াতে আমাদের বাসায়।রোজায় এসেছে আর কাল চলে গিয়েছে।তাদের রেখে আমি মোবাইল হাতে নিলেই বোনটা রাগ করতো।পুরো একবছর দুই মাস পড়ে এসেছে।একসাথে খাওয়া থেকে শুরু করে ঘোরাঘুরি শপিং সবই করেছি।খুবই ব্যস্ততা ছিল আমার। রাত বারোটা ছাড়া ফ্রি হতাম না। এখন ওরা চলে গেছে এখন যেমন আমার বাসাটা খাঁ খাঁ করছে তেমন বুকের ভিতরটা! সবথেকে মনে পড়ছে পুচকুটার আদো স্বরে আম্মা ডাকটা!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here