পুনম পর্বঃ২৪

0
1498

#পুনম
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ২৪

—আপনি এই কাজটা কেন করেছেন?জবাব দিন…
হায়দার হোসেন তার অফিস কেবিনের চেয়ারে বসে নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে তানভীরের দিকে।তিনি অবাক হলেন না ছেলের প্রশ্নে।
–কথা বলছেন না কেন?এতবড় নিকৃষ্ট কাজটি কেন করলেন?
তানভীর রাগে থরথর করে কাঁপছে।চোখমুখ থেকে যেন আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে।
—কি করেছি আমি?আর এভাবে কথা বলছো তুমি আমার সাথে…. কতবড় সাহস তোমার!
তানভীর পাশের চেয়ারে প্রচন্ড রাগে লাথি মারে..
–কি ভাবে কথা বলবো আপনার সাথে?আমি আপনার ছেলে এই কথাটা ভাবলেও আমার ঘৃণা হয়!ছি!
—এনাফ তানভীর। আর একটা কথাও তুমি বলবেনা।কোথাকার কোন ছোটলোকের জন্য তুমি আমার সাথে চোখ রাঙিয়ে কথা বলছো!
—হ্যা আমি বলবো, একশো বার বলবো।আপনার ছেলে ঐ মেয়েটির জন্য পাগল!শাস্তি দিলে আপনি আমাকে দিবেন তাকে কেন আঘাত করলেন আপনি?ঐ মেয়েটি ওর পরিবারের একমাত্র ভরসার জায়গা!আপনাকে আমি এসব কেনই বা বলছি? আপনি পরিবারের কি বুঝেন?
—লিসেন মাই বয়..তুমি বসো। আমরা ঠান্ডা মাথায় কথা বলি।এটা অফিস….আর আমি এত কষ্ট কেন করছি?তোমাদের জন্যই তো।
তানভীর চেয়ার টেনে বসে।এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে পিছনে ঠেলে দেয়।বাবার দিকে তাকিয়ে উদভ্রান্তের মত হাসে!সে হাসি দেখতে বড় ভয়ংকর লাগে…..
—ঠিকাছে মি.হায়দার হোসেন।আসুন একটা ডিল হয়ে যাক….ভেবেছিলাম পুনমের থেকে দূরে থাকলে হয়তো আপনি ওর ক্ষতি করবেন না।কিন্তু আপনি তো….
এখন থেকে না হয় আপনার সাথে আপনার মত করেই চলবো, কি বলেন?টিট ফর ট্যাট….
—-তানভীর আমি তোমার বাবা!আর কিসের ডিলের কথা বলছো?
—বাবা মাই ফুট!….হাসালেন আপনি!বাবা কেমন হয় তা আপনি জানেন?আপনি শুধুমাত্র আপনার স্বার্থ বুঝেন….আর কারো না!
—-সরাসরি কথা বলো তানভীর। তুমি ভালো করেই জানো মাথা গরম করে কথা আমি বলিও না আর কাজ করিও না।
—-হা হা তাই তো।আপনি তো আবার কোল্ড মার্ডারড! শুনুন আজ আপনাকে আমি বলে দিচ্ছি এই টাকা পয়সা, সম্পত্তি এভরিথিং আমি ঠান্ডা মাথায় ত্যাগ করছি!আমি কিছুই চাই না।আর যে তুরুপের তাশ দিয়ে এতদিন আপনি আমার মাকে ব্যাল্কমেইল করেছেন আজ থেকে সেই তাশ দিয়ে না হয় আমি খেলবো!কি বলেন? শত হলেও আমি তো আপনারই ছেলে!
—-তুমি কিসের কথা বলছো?
—-আচ্ছা মি.হায়দার হোসেন বলুন তো তারুণের বয়স কত হলো?১৮ না কি ১৯? আমাদের তারুণের তো জানা উচিত যে তার বাবা তাকে কতটা ভালোবাসে। তাইনা?
—-তানভীর! তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো?এই হায়দার হোসেন কে?
—-হা হা…ভয় দেখানো আপনার কাজ।আর এই তানভীর কাজ করে দেখায়…..
—তুমি কি চাইছো?
—এইতো একদম বিজনেস ম্যানের মত কথা বলছেন।ভেরি গুড! সিম্পল কথা!আমার মা, পুনম আর পুনমের পরিবার ভালো থাকবে তো আপনিও ভালো থাকবেন। কি ডিলটা কেমন?
এতক্ষণ হায়দার হোসেন ঠান্ডা মাথায় কথা বললেও এবার চেচিয়ে উঠলেন,
—-তুমি ওই দুই টাকার একটা মেয়ের জন্য আমায় থ্রেট দিচ্ছো।তুমি জানো ওসব ছোটলোকঘরের মেয়েরা টাকা ছাড়া কিচ্ছু বুঝেনা।তোমাকে ফাঁসাচ্ছ তানভীর!
—রিয়েলি?
—ওকে ওকে তানভীর। তোমার যখন ওই মেয়েটিকে এতই পছন্দ তখন আমি তোমাকে ব্যবস্থা করে দেই….তুমি দেখো ওরা টাকার জন্য সব পারে….
—-আপনি আর একটা কথা পুনমকে নিয়ে আজেবাজে বললে….আমি সব ধ্বংস করে দিবো…সব!
তানভীর দাঁড়িয়ে পড়ে,পুনরায় চেয়ারটায় লাথি মারে…টেবিলের উপর থাবা মেরে বলে,
—-আমার পুনম আপনার ওইসব কলগার্ল নয়।আর আপনার বন্ধুর মেয়েকে বলে দিবেন আমাকে যেন বিরক্ত না করে।ঐ সব ছোট পোশাক পড়ে তানভীরকে দূর্বল করতে পারবেনা।
—-তানভীর আমি প্রমাণ করেই ছাড়বো…. ছোটলোকেরা সব পারে…সব!
—-এতকিছু আপনার দেখতে হবে না….আপনি শুধু ডিলের কথা মনে রাইখেন….

তানভীর যেভাবে ঝড়ের মত এসেছিল সেভাবেই ঝড়ের মত বেড়িয়ে গেলো।হায়দার হোসেন মাথা চেপে ধরে…. আপাতত তাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে…..তানভীরকে খেপালে সব শেষ হয়ে যাবে!
মোবাইলে একটা নম্বর তুলে কল লাগায়…..
রিসিভ হতেই চেঁচিয়ে বলে ওঠে, —কুত্তার বাচ্চা…ঘটনা তানভীর জানলো কিভাবে?বিতলামি করোস…একদম মাটিতে পুঁতে ফেলবো…প্রমাণ রাইখা কাজ করোস কেন বান্দির পোঁ?
****************************
পাঁচ মাসে পড়েছে ঝুমার।এতদিন বমি থাকলেও ইদানীং খালি ক্ষুদা লাগে।মনে হয় পাহাড় পর্বত সব খেয়ে ফেলতে পারলে এই ক্ষুদার জ্বালা কমবে!তারউপরে সারা শরীরে ঘাম হয়।বারবার পস্রাব হয়।কি এক জ্বালা?অসহ্য!
ঝুমা দরজার দিকে বারবার তাকায়।জামাল গেছে তার জন্য খাবার আনতে এখনো আসছে না কেন?ভাতঘুম দিয়ে ওঠার পর একবার ওয়াশরুমে যাওয়ার পরই পেট পুরো খালি হয়ে গেছে।পেটের মধ্যে মোচড় মারছে…..

জামাল এসে ভাতের থালা হাতে দেয় ঝুমার!কচুর তরকারি আর ভাত।তা দিয়েই হাসিমুখে ভাত খাওয়া শুরু করে ঝুমা।যেন কত মজার খাবার!একবারো জানতে চায় না,দুপুরে তো মাছ রান্না হয়েছিলো তবে শুধু কচুর তরকারি কেন? জামাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে।তার বউটা তাকে এত ভালোবাসে কেন? এই যে সে কাজ কর্ম করে না। তাতেও ঝুমার কোন আক্ষেপ নেই। পুনম ঠিকই বলেছে এবার তার একটা কাজ করার সত্যিই দরকার!জামালের চোখ ভিজে আসে,কি সুন্দর তার বউটা খাবার খাচ্ছে! খুব ক্ষিদে পেয়েছিলো হয় তো।
—-আর কয়টা ভাত এনে দিবো ঝুমু?
—না না এতেই হবে।
—-আস্তেধীরে খাও….গলায় না আটকে যায় আবার।
—আচ্ছা!
—-ঝুমু খাওয়া হইলে কাপর চোপড় একটা ব্যাগে নাও।আমরা তোমাদের বাড়িতে যাবো!
—-দুদিন আগেই না এলাম।
—-বুঝো না কেন? পুনম আজ বেড়াতে যাবে না।তাই যাবো।তোমার কমলা রঙের শাড়িটা পইড়োতো।তোমারে কমলা রঙে ভীষণ মানায়!

ঝুমা ভাত মুখে নিয়ে লাজুক ভাবে হাসে।জামালের চোখ আবার ভিজে আসে।তার বউটা এত সুন্দর কেন?
ঝুমা ঝটপট খাবার খেয়ে তৈরি হতে শুরু করে।সে জানতেও পারে না।একটু আগে তার জন্য খাবার আনতে গিয়ে জামালকে কত কথা বলছে তার বড় ভাবি।যে পুরুষের রোজগার নেই তার বউয়ের এত খাই খাই থাকতে নেই!
*********************************
—এতই যখন চিন্তা তবে মেয়েকে যেতে দিচ্ছেন কেন?
পান চিবোতে চিবোতে বলে সালেহা।
—-তুমি বুঝবে না পুনমের মা!
—-সব তো খালি আপনি আর আপনার মেয়ে বুঝেন!আমি কিছু কইলেই দোষ!
—চুপ করো।আমার মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে…দেখছো তারপরও ভ্যাজরভ্যাজর!
—-মানা কইরা দেন যাওয়া লাগবে না।কত পোলাপন থাকবো….যদি কোন উল্টোপাল্টা ঝামেলা হয়…..
—আর একটা কথাও বলবেনা।খালি বোকা বোকা কথা! আমার পুনমকে নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে।এইসব ঝামেলা আমার পুনম ভালোই সামলাতে পারে!
—-কে পুনম কি খালি একলা আপনার মেয়ে…..সবসময় খালি আমারে দুষেন….আমার ছেলেটা বাঁইচা থাকলে আপনার সংসারে উষ্টা মাইরা আমি চইলা যাইতাম তারে নিয়া।
নিয়াজ উদ্দিন বিরক্তি চোখে তাকিয়ে থেকে উঠে পড়েন। এখানে থাকলে এখন এই বোকা মহিলার ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কান্না দেখতে হবে।
তার এমনিতেই মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। একসিডেন্টটা হওয়ার পর রাতে তার কিছুতেই ঘুম হয় না।তার পুনমের কিছু হলে মরে যাবে সে।মেয়েটা ওই আঘাত নিয়েও একফোঁটা রেষ্ট নেয় নাই।নিয়াজ উদ্দিন রাগারাগি করলেই বলতো, বাবা শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সওয়াবে তাই সয়!
কিন্তু তিনি তো জানতেন, নিয়মিত না পড়ালে টিউশন বাদ যাবে তাই মেয়েটা এত খাটতো!এখন কিছুটা সুস্থ হলেও বাবার মন তো।চিন্তারা পিছু ছাড়ছেই না।
নিয়াজ উদ্দিন দেখেন তার মেজ মেয়ে ঝুমা আর জামাই বাসায় ঢুকতেছে।কমলা রঙের শাড়ি আর মাতৃত্বকালীন সৌন্দর্য সবমিলিয়ে তার বোকা মেয়ে ঝুমাকে ভীষণ মায়াবী লাগছে!
নিয়াজ উদ্দিন বিড়বিড় করে বলে, আমায় একটু অর্থ দাও আল্লাহ! আমি আমার পাঁচ মেয়েকে নিয়ে আমার দেশটা ঘুরে দেখাতে চাই!আল্লাহ এই দরিদ্র পিতার দোয়া কবুল করো!
***************
লাবণ্য বকবক করেই যাচ্ছে। পুনম তৈরি হচ্ছে আর লাবণ্যের বকবক শুনছে।
—–নয়াপু শুনছো তো,আমার জন্য কিন্তু ঝিনুকের মালা আনবে।আর….ঐ যে ঝিনুকের উপর নাম লেখায় সেগুলো আনবে…মনে থাকবে তো?আর শুনো….আচার আনবে…আর…
পাবনী এসে ধমক দেয়।লাবণ্য চুপ হয়ে যায়।মরিচা লাবণ্যকে পাশ থেকে বলে…ও ছোড আফা হাইজা আফায় কি হাছাই সমুদ্দ দেকতে যায়?
—হ্যা মরিচা বু।আর কতবার বলবো সুন্দর করে কথা বলো….
—-আইচ্ছা!
পাবনী কিছু টাকা পুনমের হাত ব্যাগের পকেটে রাখে।এখন বললে নিবেনা বরং বাসা থেকে বের হওয়ার পর ফোন করে বলে দিবে।কতদূরে যাবে…. কিছুর প্রয়োজন হলে কার কাছে চাইবে?কিছু টাকা জমানো ছিলো….পাবনী তো কোথাও বের হয় না….টাকা টা নাহয় পুনম কাজে লাগাক।
—-সেজ আপা তোমার কিছু লাগবে না?
পুনমের প্রশ্নে পাবনী হালকা হাসে।
—না!
—আমি আজ কথা দিলাম সেজ আপা।তোমার বিয়েতে না হয় আমার তরফ থেকে কক্সবাজার ঘুরার প্যাকেজ উপহার থাকবে।
পাবনী চিৎকার করে বলতে মনে চায়, খোঁড়া পা নিয়ে কি সমুদ্রের জলে নামা যায়?তাতে সমুদ্রের জল অপবিত্র হয়ে যাবে পুনম!

লাবণ্য মোবাইল নিয়ে বারান্দায় গিয়ে কল দেয় তারুণ কে।
—-হ্যালো!
—-হ্যা বল লাবণ্য।
—কি করছিস?
—-পড়ছিলাম।
—জানিস তারুণ আজ নয়াপু সমুদ্র দেখতে যাচ্ছে।
—তাই।
—-তারুণ তুই কখনো সমুদ্র দেখেছিস?
—না!
—-আমিও দেখিনি।
—- কোন একদিন আমি তোকে সমুদ্র দেখতে নিয়ে যাবো লাবণ্য!
—সত্যি?
—হ্যা। তবে একশর্তে…
–কি তারুণ?
—-কথা দে তুই আমাকে ছাড়া কখনো সমুদ্র দেখতে যাবিনা।আমরা একসঙ্গে দেখবো!
—কথা দিলাম তারুণ!
********************
লাল হলুদ মিশেল একটা সালোয়ার কামিজ পরেছে পুনম।দেখতে একদম হলদে পাখির মত লাগছে।পুনম তৈরি হয়ে ড্রয়িং রুমে আসে…..
বাবা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। তার মেয়েটা এত সুন্দর কেন?
বল্টু ফোন দিয়ে যাত্রাবাড়ী যেতে বলেছে।সেখান থেকে চট্টগ্রাম রোড ধরে সোজা কক্সবাজার যাবে বাস!সুমন ভাই রিকশায় বসে অপেক্ষা করছে।সে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসবে।পুনমের হুট করে কান্না পাচ্ছে। এই মানুষগুলোকে ছেড়ে যেতে মন সায় দিচ্ছে না।কখনো তো পরিবার রেখে একা কোথাও যায়নি।বাবা মুখটা আমচুর বানিয়ে রেখেছে।সেজ আপার চোখ ছলছল করছে,পুনম সেজ আপাকে বাসার সবার দিকে খেয়াল রাখতে বলে।মেজ আপা হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
—-মেজ আপা তোমার জন্য কিসের আচার আনবো?
—-বরই, তেতুল,জলপাই, আম,চালতা……
জামাল ধমকে ওঠে।পুনম হেসে দিয়ে মেজ আপার কপালে চুমু দেয়।
রিকশায় ওঠার সময় মা কয়েক ধরনের দোয়া পড়ে ফুঁ দেয় পুনমের শরীরে। পুনম হুট করে মাকে জরিয়ে ধরে।মায়ের চোখও জলে ভরে ওঠে।
—–একা যেতে ভয় করছে পুনু?আজ তোদের ভাইটা বেঁচে থাকলে একা কোথাও যেতে হতো নারে পুনু…..
পুনম মাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে।ও এই বোকা মাকেই ভীষণ ভালোবাসে।মায়ের বুকে মুখ গুজে বলে,
—সাবধানে থেক মা।পান বেশি খেয়ো না…..আমি এসে তোমায় ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো।ঠিকাছে?
—আইচ্ছা!
*********
যাত্রাবাড়ী এসে দেখে ওদের অনেক বন্ধুরা চলে এসেছে।সুমন পুনমকে বাসে বসিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় বলে,
—-আমি কাল চলে যাবো পুনম।রাশেদ সাহেব কে বলো তার কাজ করে যেতে।আমার কোন আপত্তি নেই।পুনম, তোমার সেজ আপাকে আমি ভালো রাখতে পারবো কিনা জানি না?তবে ভাইজানকে ভালো থাকতে দিবো না।
সুমন চলে যায়।পুনম বাসের জানালা থেকে সুমনের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। পুনম জানে সুমন ভাই কষ্ট পাচ্ছে….ঘরে আগুন লাগলে তবু ছাই থাকে কিন্তু বিশ্বাসের ঘরে আগুন লাগলে কিচ্ছু থাকে না!

বাসের ইঞ্জিন চালু করেছে ড্রাইভার। সাকিব শিমুল বর্ষা শশী নাহিদ বল্টু আর ডিপার্টমেন্টের আরো কয়জন হইহই করে বাসে ওঠে। যার যার সিটে বসে পড়ে….
ওদের ক্লাসে কয়েকটা গ্রুপ আছে ভাগ করা। নিজেরাই ভাগ করেছে।এক গ্রুপের সাথে আর এক গ্রুপ না ঠেকলে কথা বলে না।একেকে গ্রুপ একেক জায়গায় প্লান করে ঘুরতে যাচ্ছে। এই গ্রুপের সবাই মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা। তাই গ্রুপের নাম মিডল গ্রুপ!ওরা যাচ্ছে কক্সবাজার।
পুনমকে দেখে সাকিব বলে ওঠে, —-ওরে দেখ দেখ,পূর্নিমা নামছে আমগো বাসে।তা কি মনে কইরা এই পূর্ণিমার মনে হলো আমাবস্যা কাটাতে?
পুনম হাসে।ও জানে এখন ওর পঁচানি শুনতে হবে।বন্ধুদের সময় দেয়ার না কারণে ক্ষেপে বোম হয়ে রয়েছে।
শশী বলে,—-ওরে বাসে উঠতে দিছে কে?লাথথি মাইরা বাস থেকে ফালা।
বল্টু বলে, —ছেড়ে দে! আমগো পুনম এমনিতেই ব্যথা পেয়ে আছে তারপর লাথথি দিলে দোষ হইবো।মরা মাইরা খুনের দায় আর কি!
—-আমি কিন্তু নেমে যাবো?
বর্ষা বলে,—-ওরে কেউ বাসের দরজা দেখাই দে….ও নাইমা যাক।
পুনম হতাশ হয়…এরা আজ ওরে ভালোমত বাগে পাইছে।
শিমুল আর নাহিদ পুনমের গাল ফুলানো দেখে হাসতে হাসতে গান গাইছে,
—-তোরা দেখ,দেখ, দেখরে চাইয়া
আমগো পুনম রাগ করেছে গাল ফুলাইয়া!
ও তোরা দেখ…..
বাস ছেড়ে দিয়েছে।যে যার সিটে বসে গেছে।পুনমের সিটের সোজাসুজি সামনের সিটের অপর পাশের সিটে বল্টু বসছে।তার পাশে রিমি।হ্যা রিমিও যাচ্ছে। প্রথমে রিমিকে নিতে না চাইলেও এখন গার্লফ্রেন্ড নিয়ে তার আদিখ্যেতার শেষ নেই।নাহিদ আর বর্ষা বসেছে একসাথে। তারা প্রেমিযুগল।শশী আর শিমুল বসেছে একসাথে। দুটোতে এখনই ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে।জানলার পাশে বসা নিয়ে। ইন্ডিয়া পাকিস্তান সন্ধিক্ষণে যেতে পারে কিন্তু শশী শিমুলে সন্ধিক্ষণ অসম্ভব। সাকিব যে সিটে বসেছে তার পাশের সিট ফাঁকা। কিন্তু সেখানে কেউ যাবেনা।শশী বলে, তুই যা শিমুল।শিমুল বলে, শশী তুই যা।
পুনম বলে ওঠে, আমার পাশের সিটটা তো ফাঁকা আমার পাশে একজন আয়।শিমুল ভাই আমার তুই আয়।
শিমুল চেঁচিয়ে ওঠে,—একদম ওমেন কার্ড খেলবি না।এই বান্দনিকে যেতে বল।আমি আগে বসছি।
বল্টু বলর,পুনম তোর পাশের সিটটা বুক করা।সামনে থেকে উঠবে সে।পুনম আর কথা বলে না।বাসের লাইট নিভিয়ে দেয়া হয়েছে।হালকা হালকা বৃষ্টি নামছে।নাহিদ আর বর্ষার প্রেমের আলাপ শুনতে পাওয়া যায় মৃদু আওয়াজে ।রিমি বল্টুর কাঁধে মাথা রেখে বাহিরে তাকিয়ে আছে।
পুনম মোবাইল চেক করে।কোন কল নেই।কি হয়েছে মি.তানভীরের?সে কি জানে পুনম কক্সবাজার যাচ্ছে?

কিছুক্ষণ পরই বাস থেমে যায়।লাইট জ্বলে ওঠে।পুনম ভুত দেখার মত চমকে ওঠে তাকিয়ে থাকে বাসে ওঠা ছেলেটির দিকে।বৃষ্টিতে ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে সামনে এগিয়ে আসছে ছেলেটি।হালকা ব্লু কালারের শার্টে ছেলেটিকে দেখতে দেবদূত মনে হচ্ছে।পুনম চোখ বন্ধ করে আবার তাকায়।না সে ভুল দেখছে না।পুনম তাকিয়ে দেখে বল্টুর ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা। ছেলেটির পিছনে আরো একজন উঠে আসে।ছেলেটি এসে পুনমের পাশের সিটে ধপাস করে বসে পড়ে।
পুনম কেঁপে ওঠে। পায়ের তলা শিরশির করে।মাথা ঘুরায়!কন্ঠমনি রোধ হয়ে আসে!
পুনম বিড়বিড় করে বলে,বড্ড ভুল হয়ে গেছে।কেন আসলাম।আমি নেমে যাবো বাস থামাও!বাস থামাও!

কিন্তু ততক্ষণে বাস চলতে শুরু করেছে।সব লাইট নিভে গেছে।বাহিরের বৃষ্টির জোর বাড়ছে আর তার সাথে বাড়ছে পুনমের অস্থিরতা!

চলবে,
মাথা ব্যথা,গলা ব্যথা….জ্বর জ্বর ভাব।দোয়া করবেন আমার জন্য। আর সবাই নিরাপদে থাকবেন।
বাই দা রাস্তা,ছেলেটি কে🧐🧐🧐

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here