#পুনম
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ৩২
জামিলা হসপিটালের করিডোরে বসে আছে।তার চোখে মুখে আনন্দের ফোয়ারা।হাতে প্রেগন্যান্সির কাগজ।যাতে দেখা যাচ্ছে রেজাল্ট পজিটিভ!
এই সংবাদটার জন্য এতদিন মুখিয়ে ছিল জামিলা।হারুনকে পুরোপুরি তার আয়ত্তে আনা এখন এক চুটকির ব্যপার!হারুন তাকে বিয়ে করতে রাজি হলেও তার দুই মেয়েকে ছাড়তে রাজি নয়।সতীনের সন্তান কেউই কাম্য করে না।এখন জামিলার এই অনাগত সন্তানই পারবে হারুনকে শুধু একমাত্র তার বানাতে! উফফ!একবার ঐদিকের ঝামেলা শেষ হলে এরপর বিন্দাস জীবন।শাড়ি চুড়ি,স্বর্ণ অলংকার বাড়ি গাড়ি কোন কিছুরই আর অভাব হবেনা জামিলার। কাঙ্খিত সুখের লোভে জামিলার চোখ দুটি চক চক করে ওঠে! হসপিটাল থেকে বের হয়ে দুই প্লেট মোল্লার দোকানের বিরানি খেয়ে বাসার উদ্দেশ্য হাঁটে।আজ হারুন আসছে ঢাকা…নিজেকে আজ ঘসে মেজে এমন ভাবে সাজাবে যে হারুন যেন তার পুরোপুরি মধ্যে ডুবে যায়!
************
শায়লা হক আজ অনেক দিন পর পুরানো ড্রয়ারটা খুলেছে।ড্রয়ারটা খোলার সাথে সাথে শায়লার চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে আসে।চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা মুখ।কি সুন্দর! কি পবিত্র মুখখানি! নায়লা…!আমার নায়লা!
নায়লার ব্যবহৃত জিনিসপত্রের উপর হাত বুলাতে থাকে,তারপরই ডুকরে কেঁদে ওঠে শায়লা।বিড়বিড় করে বলতে থাকে,
‘কেমন আছিস খুকি?’ ‘আমাকে তুই ক্ষমা করেছিস তো?’
নায়লা, হায়দার হোসেন, তানভীর, তারুণ, ভাইয়া,বাবা একে একে সবার মুখ চোখের সামনে ভাসতে শুরু করে।শায়লা চুল খামচে বসে পড়ে।মনে করতে চায়না সেসব দিন।কি বিভৎস! কি যন্ত্রাণাদায়ক! শরীরে কাঁপন ধরে।কপালের পাশ থেকে চিকন ঘামের রেখা নামে। জ্ঞান হারাবার আগে মৃদুস্বরে বলে,’আমি তোমাকে ঘৃণা করি হায়দার হোসেন!ভীষণ ঘৃণা করি!’
********
আজ শুক্রবার। ছুটির দিন।পুনম কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।পড়তে বসা দরকার!কিন্তু কেন যেন মনটা সায় দিচ্ছে না।বিকেলে মিতুর জন্মদিন। যাবে কি যাবে না?এ নিয়ে দ্বিধা কাজ করছে।মি.তানভীরের উপর রাগ করে একবার ভাবছে যাবে না আবার রাশেদ ভাই সুমনের জন্য এত খাটাখাটনি করছে।তার মেয়ের জন্মদিনে না গেলে কেমন দেখায়।কাজটা অকৃতজ্ঞের মত হয় যায়! আচ্ছা সেখানে গেলে যদি মি.তানভীরের সাথে দেখা হয়ে যায়, তখন? দেখা হলে হবে।নিজেকে নিজে বলে পুনম।সেদিনের সেই রাতের ঘটনার পর আর তানভীর তার সামনে আসেনি। কেন?নিজেই ক্ষ্যাপা ষাড়ের মত বিহেভ করবে আবার নিজেই রাগ করে দূরে থাকবে।আজব! এসব ভাবতে ভাবতেই পুনমের মুখ লালচে হয়ে ওঠে। অসভ্যটা সেদিন কিরকম করে চুমু খাচ্ছিলো! ছি! পুনমের আশ্চর্য লাগছে।সেদিন রাগ করে থাপ্পড় মারলেও আজ কেন যেন রাগ লাগছে না।বরং সেই উত্তপ্ত পৌরষালী স্পর্শের কথা মনে হলে লজ্জা লাগছে।’ছি!পুনম তোর কত অধপতন হয়েছে দেখ’ নিজেকে নিজেই শাসিয়ে ওঠে।
*********
লাবণ্য এক কাপ চা এনে পুনমের সামনে রাখে।পুনম অবাক হওয়ার ভান করে বলে,
‘ মেকাপরাণী লাবণ্য আজ আমার জন্য চা এনেছে।এতটা পরিববর্তন কেন? ‘
” কোন কারণ নেই।সেজপা অসুস্থ তাই ভাবলাম…. ”
” আচ্ছা।গুড ভেরি গুড!”
” নয়াপু আমার ভীষণ মন খারাপ।”
পুনম চায়ের কাপটা সরিয়ে লাবণ্যকে নিজের কাছে টেনে বসায়।ছোট বোনের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চোখের ইশারায় সায় দায়।লাবণ্য মিনমিন করে বলে,
” আমার পড়তে ভালো লাগে না নয়াপু।আমি আর পড়তে চাই না।যে সব রেজাল্ট করি তাতে তোমাদের মান থাকে না।”
“লাবণ্য পড়াশোনাটা কেবল ভালো মার্কসের জন্য নয়।পড়াশোনাটা নিজের জন্য। নিজের আত্মতৃপ্তি, আত্মসম্মানের জন্য! তাই কে কি ভাবলো?ডাজ নট মেটার! ভাবছি তোকে মেকাপ এন্ড বিউটির জন্য একটা কোর্সে ভর্তি করিয়ে দেবো।পাশাপাশি টুকটাক পড়াশোনা।ব্যস হয়ে গেলো।কোন চাপ নিস না।সবাই ভালো হয় না সবকিছুতে।”
লাবণ্য খুব খুশি হয়।তার নয়াপু তাকে কতটা বুঝে। চোখে জল এসে যায় লাবণ্যের।পুনমের বুকে মাথা গুজে দেয়।পুনম মৃদু হেসে লাবণ্যের চুলে বিলি কাটে।
“নয়াপু,আমি যে সোসাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ভিডিও আপলোড করি। সেজেগুজে নাচি…তুমি তো তা নিয়ে কখনো বকলে না।বাসার সবাই কিন্তু বারণ করেছে শুধু তুমি বাদে।”
“কেন বকা দেবো।তুই কি এখনো ছোট আছিস।নিজের ভালো নিজের বুঝতে হবে লাবু।খাবার না খেলে যেমন আমরা দূর্বল হয়ে পড়ি তেমন অতিরিক্ত খেলে বদহজম হয়।তেমনি সব কিছুরই ভালো ও খারাপ দিক আছে। তোর ভালো তোকেই বুঝতে হবে।তাছাড়া আমি বিশ্বাস করি লাবণ্য কখনো এমন কাজ করবে না যাতে আমরা কষ্ট পাই।”
“তুমি এত ভালো কেন নয়াপু।”
“কোন মানুষই শতভাগ ভালো বা খারাপ হয় না, লাবণ্য। তোর কাছে তোর নয়াপু ভালো হলেও কারো না কারো কাছে আমি খারাপ,খুব খারাপ!”
********
সুমন চোখ মেলে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে।সমস্ত শরীর বিষের মত ব্যথা!চোখের পাতা ভারী!মাথায় ভোঁতা যন্ত্রণা হচ্ছে।
চারদিকে তাকিয়ে বুঝলো,পুরুষ ওয়ার্ড এটা।চারপাশে অসুস্থ মানুষের আহাজরি।হসপিটালে আসার আগে নিজের রোগটা বড় মনে হলেও,হসপিটালে এলে বুঝা যায় কত মানুষ কত রোগে আক্রান্ত!
পাবনীর জ্বর শোনার পর থেকেই সুমনের ভীষণ অস্থির লাগছিলো।মেয়েটার মুখটা একটু দেখার জন্য বুকের মধ্যটায় চিন চিন ব্যথা করছিলো।তাই এদিকের কাজ কিছুটা গুছিয়ে রাতে রওনা হয়েছিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। বাস থেকে নামতেই কোথা থেকে চার পাঁচটা ছেলেরা এসে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করলো।যতক্ষণ পর্যন্ত না সুমন জ্ঞান হারালো ততক্ষণ পর্যন্ত মারলো।অজান্তেই নিঃশ্বাস ছাড়ে সুমন।কি কারণে তাকে মারলো? এই প্রশ্নটাই তাড়া করছে। এই ঘটনার পিছনে কি আদৌ বড় ভাইজানের হাত আছে?
একটু নড়তেই বুঝতে পারে শরীরের গিটে গিটে ব্যথা!সুমনের হুট করে খুব মন খারাপ হয়।অসুস্থতার সময় আপনজনের সান্নিধ্য সবাই আশা করে।সুমন এই শহরের অলিগলিতে হারিয়ে গেলেও কেউ খোঁজ নিবেনা!তার কি আদৌ কেউ আছে?
পাবনী মেয়েটা তার কতটা আপন?নিজের মনকে শুধায় সুমন কিন্তু কোন উত্তর পায়না।
সুমন নিজেই স্বগোতক্তি করে,”আই মিস ইউ মা!আই মিস ইউ ভেরি মাচ!”
********
মিষ্টি রঙের একটা হাফসিল্ক শাড়ি, ম্যাচিঙ ব্লাউজ,চোখে হালকা কাজল আর ন্যুড কালারের লিপস্টিক। ব্যস! এতটুকু সাজেই পুনমকে চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাগছে।আর বরাবরের মত দুই ভ্রুর মাঝখানের কালো তিলটা যেন সৌন্দর্যের মাত্রা দিগুণ করে ফুটিয়ে তুলেছে।
পুনম চোখঘুরিয়ে আশেপাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।কিন্তু নবাবপুত্রের দেখা না পেয়ে স্বস্তির চেয়ে বরং অস্থির লাগে!
পুনম নিজেকে নিজে সমানে বকে যাচ্ছে।মিতুর জন্মদিনে আসলে যে ওকে এতটা লজ্জায় পড়তে হবে জানলে আসতোই না।উফফ!কি যন্ত্রণা! তারিন বুবু তার সকল গেস্টের কাছে পুনমকে নিজের ভাইয়ের বউ বলে পরিচিত করে দিয়েছে।কি অস্বস্তি কর ব্যপার।আর কোন সম্বোধন ছিল না,ডাইরেক্ট বউ।তাও ঐ কচ্ছপটার?যার কোন খবরই নেই!
আর রাশেদ ভাই তো দেখেই বলে ফেলেছে,
“আরে শালাবউ যে,মাশাল্লাহ কি দারুণ লাগছে।আজ আমার সত্যিই শালাবাবুকে হিংসে হচ্ছে। ইশ!কি ভুল করে ফেললাম!”
পুনম তখন পারেনা তো নিজেকে কোন গর্তের ভিতর লুকিয়ে ফেলে।রাশেদ ভাইও যে এভাবে বলবে তা পুনম তা কল্পনাও করেনি।
সোফার এক কোণে পুনম অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে বসে আছে।বার বার কপাল ঘাড় ঘেমে যাচ্ছে। কি বিশ্রী একটা অবস্থা!
পাশ থেকে এক মহিলা বলে উঠলো,”ভাবি এত সুন্দর ভাইয়ের বউ কোথা থেকে যোগার করলেন?
পুনম মনে মনে বলে,”ওরে বেক্কল মহিলা, তা জেনে আপনার কি?”
শুনতে পেলো তারিন বলছে,”তানভীরেরই পছন্দ ভাবি।”
কখন কেক কাটবে কে জানে?বাসায় ফিরতে হবে।হুট করে দরজার দিকে চোখ যেতেই পুনম দেখতে পেলো মি.তানভীরকে।নীল একটা গেঞ্জির উপর সাদা একটা শার্ট পড়েছে।শার্টের বোতামগুলো খুলে রেখছে।কালো জিন্স।ব্যাকব্রাশ করা চুল,ঘর্মাক্ত মুখ,খোঁচা খোঁচা দাড়ি….সবকিছু মিলিয়ে মি.তানভীরকে মারাত্মক লাগছে!পুরো আড়াই মাস পর দেখলো মানুষটাকে!বুকের ভিতর অজান্তেই ধক করে উঠলো!কারণ কি কে জানে?
দেখে তো মনে হচ্ছে খুব ভালোই ছিলো।হুহ!যা খুশি থাকুক গে……..পুনম চোখ ফিরিয়ে নেয়।ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে দেখার মত কিছুই নেই!
তানভীর রুমে প্রবেশ করতেই মিতু ঝাপিয়ে মামার কোলে উঠলো। তানভীর অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে ভাগ্নিকে।গালে ভাঁজ পড়া হাসি নিয়ে কথা বলছে মামা ভাগ্নি।পুনমকে দেখে তানভীরের চোখে প্রথমে মুগ্ধতা পরে ক্রোধ দেখা দেয়!নিজেকে সামলে বলে,
“” বুবু কেক ফেক যা কাঁটার তাড়াতাড়ি কাটো।আমার খুদা পেয়েছে ভীষণ!”
সাথে সাথেই তারিন চঞ্চল ফরিংয়ের মত উড়ে উড়ে সবকিছুর ব্যবস্থা করছে।ঝটপটের সহিত কেক কাঁটা হয়ে গেলো।পুনম খেয়াল করে দেখলো মি.তানভীর একবারো তার দিকে তাকাচ্ছে না।উল্টো আরো চোখে চোখ পড়লে কটমটিয়ে তাকিয়ে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিচ্ছে !আশ্চর্য!
পুনম বিদায় নিয়ে চলে আসতে চাইলো, পারলো না।মিতু মেয়েটা “মামি এখন যাবে না।মামি এটা,মামি ওটা… করে কান ঝালাপালা করে দিয়েছে পুনমের।পুনম শুধু আল্লাহ আল্লাহ করছে….এখান থেকে রেহাই পাওয়ার!
পুরোটা অনুষ্ঠানে তানভীর এমন ভাব করলো যেন পুনমকে সে চিনেই না।পুনমও আর মাথা ঘামালো না। মি.তানভীরের মোহ কেটে গেলেই বরং ভালো! ” যা না পাওয়ার তা চাওয়ার সাধ করা মস্ত বড় বোকামী ” আর পুনম বোকা কোন কালেই ছিল না!
তারিন অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছে তার ভাইটা গাপুসগুপুস করে বিরিয়ানি খেয়ে যাচ্ছে। তার কোনদিকেই নজর নেই,যেন কতদিনের অনাহারি! আর পুনমও কেমন সরে সরে থাকছে।ব্যপারটা কি? রাজু খাওয়া শেষ করে সবে কোকের বোতলে মুখ লাগিয়েছে তখনই তারিন কনুই দিয়ে রাজুর পেটে গুতো দিয়ে বলে, “” ব্যপার কি রাজু?এদের মধ্যে কি হয়েছে?”
ভরা পেটে গুতো খেয়ে রাজু মুখ বিকৃত করে বলে,”বুবু এরা দুজনেই আহাম্মক…. এদের কথা আমার কাছে বইলেন না….এরকম পানসে প্রেম আমার লাইফে আমি দেখিনি।”
তারিনের মেজাজ খিঁচড়ে যায়, কপাল কুঁচকে বলে,
“মানে কি?”
রাজু বিরক্তির সাথে বলে,
“বুবু এদের মধ্যে শাস্তি পর্ব চলছে…যাকে বলে ইউনিক প্রেম।এসব আপনি বুঝবেনা….বরং যা হয় তা শুধু দেখতে থাকেন!”
********
পুনমের মেজাজটা অসম্ভব খারাপ।একেতো মি.তানভীরের ঐ হামবড়া আচরণ একদম সহ্য হয়নি।নিজেকে কি মনে নবাবপুত্র? পুরোটা অনুষ্ঠানে পুনমকে ইগনোর করেছে। ইগনোর করেছে ভালো কথা কিন্তু একটু একটু পর চোখ গরম করে কেন দেখছিল?নবাবপুত্র কি ভেবেছে?যে সে ইগনোর করলেই এই পুনম তার পিছু পিছু ঘুরবে আর বলবে, “ওহে প্রনয়েশ্বর!আমাকে আপনি গ্রহণ করুন!” কখনো না! নেভার এভার!যে যেরকম থাকুক! হু কেয়ার?
আর মেজাজ খারাপের দ্বিতীয় কারণ হলো, লাবণ্য একটু আগে কল করে কান্নাকাটি করে যা বলেছে।তার সারমর্ম হলো….আজ শেষ বিকেলের দিকে সেজ আপাকে আবার যেন কারা দেখতে এসেছে।তাও বিনা নোটিশে! একেতো সেজ আপা অসুস্থ। তার উপর যখন তাদের সামনে গেছে তারা আপাকে রেখে লাবণ্যকে পছন্দ করেছে।আর মাও তাতে সায় দিয়েছে।কতবড় জঘন্য মানুষ….একজন দেখতে এসে আর একজনকে পছন্দ করে।যেন পন্য বাছাই!
আর লাবণ্য তাতে তেতে উঠতেই মা নাকি যা তা বলেছে সেজ আপাকে আর লাবণ্য কে।
পুনমের গলার কাছে এসে কষ্টরা দলা পাকায়…কিন্তু কান্না আসে না।তার চুপচাপ সেজ আপাকে কেউ কিছু বললে পুনমেন ভীষণ কষ্ট হয়!
রাতের বেলা বাজারের সকল কিছুরই দাম কম থাকে তাই পুনম কিছু তরকারি কিনেছিলো।তার মধ্যে লাবুর কলে পুনমের শান্ত মাথা বিগড়ে গেছে।বাজারের ব্যাগটা নিয়েই বাসায় ঢুকেই বসার রুমে সবাইকে বসা দেখতে পায়।অসুস্থতা কাটিয়ে উঠলেও সেজ আপা ভীষণ দূর্বল।সেই দূর্বল চোখে মুখে আজ ভীষণ হতাশা দেখতে পেলো পুনম! লাবু কেঁদে কেটে চোখ মুখ ফুলিয়েছে। পুনম বাজারের ব্যাগটা প্রচন্ড রাগে ফ্লোরে আঁছাড় মারে।
“সমস্যা কি মা?এসব কি শুরু করেছো?অসুস্থ সেজ আপাকে সাজিয়ে ঘুছিয়ে পুতুল বানিয়ে তাদের সামনে নিলে, তাদের পছন্দ হলো না তো পরের টাকে পুতুল বানালে।কেন? যে আমার এক বোনকে রিজেক্ট করে তার সাথে অন্য বোনের কথা ভাবো কি করে?”
মা এতক্ষণ থমথমে মুখে বসে থাকলেও এবার তেতে উঠেই জবাব দিলো,
” তো কি করবো?বল…পাঁচ পাঁচটা মেয়ের জ্বালা আর নিতে পারছি না।বড়টার সংসারে অশান্তি….. ঝুমা অসুস্থ… পাবনী এত বড় দামড়ি মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না….আর তুই…. তুইতো কারো কথাই কানে নিস না….এত বড় বেয়াদব।আর ছোটটা…. পড়াশোনায় তো শূন্য তাই ঘরে বসিয়ে অন্ন ধ্বংস না করে পরের বাড়ি যেয়ে ঘর করুক।
বলতে বলতে মা কেঁদে দেয়।পরক্ষনেই আবার বলে,
“তোর বাপের বয়স হইছে।আমি অসুস্থতায় ভুগি।তোদের কোন হিল্লে করে না গেলে কি করে শান্তি পাবো? ঘরে তিনটা মেয়ে অবিবাহিত এর যন্ত্রণা তুই কি বুঝবি?আমার ছেলেটা বেঁচে থাকলে এ দিন আমার দেখতে হতো না।”
পুনম সমান তেজের সাথে বলে,
“বিয়ে হলেই যদি গতি হয় তবে তোমার আর দুই মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করছো কেন? খবরদার বলে দিচ্ছি মা…আর কোন দিন তুমি আমার বোনদের খাবার খোঁটা দিবে না। আমি সারাদিন কাদের জন্য খাটি? ”
মা কাঁদোত স্বরেই বলে, ” এর থেকে দোয়া কর তোর মা যেন মরে যায়।এত চিন্তা আর নিতে পারি না। আমার ছেলেটা বেঁচে থাকলে এত চিন্তা আমার করা লাগতো না।”
বাবা পাশ থেকে বলে,”আহা সালেহা চুপ করো,মেয়েটা বাইরে থেকে আসছে!” নিয়াজ উদ্দিনকে আজ সত্যিই বিপন্ন দেখাচ্ছে। মেয়েদের চিন্তায় সেও কাহিল।
পুনম এবার একটু নরম হলো।মায়ের পায়ের কাছে বসে পুনম মায়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,
“মা তোমার ছেলে বেঁচে নেই তো কি হয়েছে? আমি আছি না।কোন চিন্তা করো না।এই দেখো টিকিট কেটে নিয়ে এসেছি।বাবাকে কাল কুমিল্লা পাঠাবো বড় দুলাভাই আসলে কি চায় তা জানার জন্য? আর তোমার মেজ মেয়ের কোলে দুদিন পর নাতি নাতনি আসবে।চিন্তা কিসের? আর সেজ আপাকে নিয়ে চিন্তা করছো? আর চিন্তা করো না।তার জন্য সুপাত্রের ব্যবস্থা হয়েছে। শুধু কটাদিন সময় দেও।
বাসার সবাই অবাক চোখে তাকায় এ কথা শুনে।আর মা অবিশ্বাসের স্বরে বলে,” পুনু তুই সত্যি বলছিস?কে সে?
পুনম হেসে বলে,”হুম মা।সে পুরাই রাজপুত্র। রাজ্য গুছিয়ে তারপর তোমার মেয়েকে নিতে আসবে।এতটুকু সময় সে চেয়েছে আমি না করি কি করে?আর সে কে? তা তখনই দেখো।কিন্তু এতটুকু জানি তোমার সেজ মেয়ের স্বামীভাগ্য ভীষণ ভালো!
আর আমায় নিয়ে চিন্তা করো না মা। ক্যারিয়ার না গুছিয়ে আমি বিয়ে করবো না।আর আমাদের লাবু তো এখনো ছোট।আর একটু বড় হোক তখন না হয় ওকেও বিদায় করবো।ঠিকাছে? এত টেনশন আর কখনো করো না মা।তোমাদের কিছু হলে আমি হেরে যাবো মা।”
হটাৎই সালেহা পুনমকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। এ কান্না কিসের? তা শুধু মা নামক মানুষগুলোই ভালো বুঝে!
চলবে,
সবাই সাড়া দিবেন আশাকরি।ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। আর অসুস্থতা ফের ভালো মত আমায় ধরেছে।কবে ছাড়ে কে জানে?