বদ্ধ হৃদয়ের অনুভূতি পর্বঃ৪৬ শেষ পর্ব

0
8767

#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ৪৬
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

হাসপাতালের শুভ্র বিছানায় বসে আছে আম্বের।তার শরীরের নিম্নাংশে অবর্ণনীয় ব্যথা।একরকম দম আটকে বসে আছে সে।

পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর,তৃপ্তিকর আর ভালোবাসার শব্দ হলো মা।এই একটা ডাক শোনার জন্য একজন নারী মৃত্যু মুখ থেকে ফিরে এসেও অধরে লাগিয়ে রাখে সুখের হাসি।মৃত্যুকে হার মানিয়ে জয় করে নেয় নিজের মাতৃত্বকে।প্রসব বেদনায় একজন নারী পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম যন্ত্রণা হাসি মুখে সহ্য করে।

দক্ষিনা জানালা দিয়ে হুরহুরে বাতাস ভেতরে আসছে।পর্দা উড়িয়ে কেবিনে ভ্যাবসা গরম শীতল করায় ব্যস্ত তারা।তার সাথে সূর্যের প্রখর রশ্মির তেজ।মৃদু বাতাসে বেডের কোনার চাদর খানিক পরে পরে দুলে উঠে।নিষ্প্রভ চোখে তাকিয়ে তাই দেখছে আম্বের।কারো পায়ের দুর্বোধ্য আওয়াজে চকিতে সামনে তাকায় আম্বের।মাহাদ ম্লান চোখে দাঁড়িয়ে আছে।

মাথা উঁচিয়ে চোখের পাল্লা প্রশ্বস্ত করে তাকায় আম্বের।আর বিশেষ কোনো অঙ্গভঙ্গি সে করলো না।বিড়ালপায়ে তার সামনে এসে বসলো মাহাদ।আম্বের সপ্রতিভ হয়ে তাকিয়ে রইলো।দুইজনই কোনো কথা বললো না।একে অপরের নিগূঢ় চাহনিতে যেনো সমস্ত রাগ,ক্ষোভ,অভিমান একে একে নিঃশেষ হতে লাগলো।

শান্ত ও শীতল গলায় প্রশ্ন করলো মাহাদ—

“কেমন আছেন প্রজাপতি?

আম্বের এর যেনো কী হলো!এই একটি বাক্যেই ঝমঝমিয়ে কেঁদে ফেললো সে।তার ক্রন্দনে বাতাসে আলোড়ন সৃষ্টি হলো।ঘন বর্ষার মতো দুচোখ দিয়ে জল ঝড়িয়ে বললো—

“কেন এলেন আপনি!কেন এলেন!যখন প্রয়োজন ছিলো তখন তো আসেন নি।এখন কেন এলেন!

মাহাদ নরম গলায় বললো–

“আমি না আসলে খুশি হতেন!

আম্বের সমানতালে কাঁদতে কাঁদতে মাহাদ এর বুকে উপর্যুপরি কিল ঘুষি মারতে লাগলো।মাহাদ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ব্যস্ত গলায় বললো—

“কী করছেন!আপনার সার্জারী হয়েছে।স্টিচ এ টান লাগবে।শান্ত হোন।”

আম্বের বাচ্চাদের মতো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো—

“কেন আসেন নি আপনি?এতো হৃদয়হীন কেন আপনি!

মাহাদ কোমল গলায় বললো—

“আমি কী আপনার থেকে দূরে!নাতো।আত্নার আত্নীয় কখনো দূরে থাকে না।আমি তো সবসময় আপনার সুগন্ধে মিশে আছি।”

আম্বের গলা ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।মাহাদ তার অধর ছোঁয়ায় আম্বের এর দুই চোখের পাতায়।আলতো চুমু খায় তার ঠোঁটে।মিষ্টি গলায় বললো—

“তোর চোখের পাতায়
লেগেছে আজ ঘোর,
তোর ঠোঁটের ছোঁয়ায়
বেঁধেছি প্রানের ডোর।”

সার্জারির জন্য যখন কোনোভাবেই আম্বের রাজি হচ্ছিলো না তখন ফাইরুজা মাহাদ কে কল করে তার সাথে কথা বলিয়ে দেয় আম্বের এর।আগ্নেত্রী অনেকবড় ঝুঁকি নিয়ে সার্জারি করে কারণ ডক্টর সাগ্নিক অলরেডি হসপিটাল থেকে চলে গেছে।ছোট্ট আমাদ হয়তো তার মায়ের মতো ভাগ্যবান।তাই সকল বাধা ডিঙিয়ে সেও এই পৃথিবীর বুকে তার অস্তিত্ব গাড়লো।

মাহাদ নির্মল গলায় বললো–

“দাড়ান বাবুকে নিয়ে আসি।”

মাহাদ উঠে গিয়ে আম্বের এর বিপরীত দিকে রাখা দোলনা থেকে বাবু কে কোলে তুলে নেয়।মাহাদ এর মনে হলো যেনো শরতের শুভ্র মেঘ তার কোলে নেমে এসেছে।আলগোছে অতি যত্ন সহকারে তাকে নিয়ে আসে আম্বের এর কাছে।আম্বের এর কোলে দিতেই চকচক করে উঠে তার দু চোখ।আমাদ এর গালে আঙ্গুল ছোঁয়াতেই মনে হলো যেনো তুলোর বল।ওর নাকের উপর হাত রেখে আম্বের বললো—

“দেখেন,নাকটা একদম আপনার মতো।আর গায়ের রঙও।”

মাহাদ বিগলিত হাসে।স্বাভাবিক গলায় বললো—

“আমার ছেলে তো আমার মতোই হবে।নাহলে ভাববো…।”

আম্বের ভ্রু ক্রুটি করে তাকাতেই একগাল হাসে মাহাদ।নিরুদ্বেগ গলায় বললো—-

“আমার নয় আমাদের আমাদ।বুঝলেন প্রজাপতি।”

“হু।”

মাহাদ আমাদ এর কপালে চুমু খেয়ে তাকিয়ে আছে।আম্বের জিঙ্গাসু গলায় বললো–

“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন!একদম আমার ছেলেকে ফিল্মস্টার বানানোর কথা ভাববেন না।”

মাহাদ ঝরা হেসে বললো–

“জন্ম আমার ইচ্ছে তে হয়েছে,বেড়ে উঠা না হয় আপনার ইচ্ছেতেই হোক।”

মাহাদ কিছুক্ষন থামলে আম্বের উদ্বেগপূর্ণ গলায় বললো—

“জানেন,আদ্রিতার বাবা…।”

কথা শেষ করতে না দিয়েই আম্বের এর ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে ধরে মাহাদ।শক্ত গলায় বললো—

“কোনো কথা না।আমি যা বলি শুনেন।”

মাহাদ সব খুল বললো।অবিশ্বাস্য আম্বের এর দৃষ্টি।ঝিমঝিম করে উঠে তার মস্তিষ্ক।আম্বের নিজেকে খুব ভারি অনুভব করলো।হালকা ডলে পড়তেই মাহাদ দু হাতে আবদ্ধ করলো তাকে।অস্ফুটভাবে আম্বের বললো—

“এইসব কী বলছেন আপনি!

“এটাই সত্য।মি.আর মিসেস খান ই আপনার বাইলজিক্যাল পেরেন্টস।আদ্রিতা আপনারই বড় বোন।”

মাহাদ এর দিকে গভীর দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে রইলো আম্বের।তার প্রস্ফুটিত অক্ষিযুগল দিয়ে অঝোরে ঝড়ছে নোনা শ্রাবণের ধারা।মাহাদ স্মিত হেসে মৃদু গলায় বললো—

“একজন ফিল্মস্টারের প্রেমে পড়ে আপনার জীবনটাও পুরো ফিল্ম হয়ে গেলো।হয়তো এই জন্যই ভাগ্যবিধাতা আমাদের এক করেছে।দুজন নিঃস্ব মানুষ এক হয়ে তাদের স্বপ্নগুলো পূরণ করবে বলে।”

আম্বের উসখুস গলায় বললো—

” তারপরেও আমি তাকে ক্ষমা করবো না।সে অপরাধী।”

মাহাদ অনুযোগের গলায় বললো—

“সাজা তো আমারো প্রাপ্য।আমিও তো কম কষ্ট দেয়নি আপনাকে।আপনি যে সাজা দিবেন আমি মাথা পেতে নিবো।”

আম্বের দৃঢ় হয়ে বললো—

“দিবোই তো।”

আম্বের টুপ করে কামড়ে ধরে মাহাদ এর হাত।অনেকটা জোরেই দেয়।তবুও টুঁ শব্দ করলো না মাহাদ।আম্বের মুখ সরাতেই মাহাদ ধাতস্থ হয়ে বললো–

“এইটুকুই!

“নাহ।”

আম্বের মাহাদ এর হাত ঘুমন্ত আমাদ এর মাথায় রেখে বললো—

“বাবাইসোনাকে ছুঁয়ে বলেন আর কখনো কোনো মেয়ের দিকে তাকাবেন না।”

মাহাদ বোকা বনে যায়।এইটা কোনো কথা!এ কেমন শাস্তি!
মাহাদ অসহায় গলায় বললো–

“কিন্তু সুগন্ধি,ফিল্ম করতে গেলে মেয়েদের দিকে তাকাতেই হবে।”

“এতোকিছু বুঝিনা আমি।আপনি আর কোনো মেয়ের দিকে তাকাবেন না।”

মাহাদ হাত সরিয়ে নেয়।আশ্বস্ত গলায় বললো–

“আচ্ছা।তাকাবো না।”

আম্বের সন্তুষ্ট হলো না।সে আবারো মাহাদ এর হাত আমাদ এর মাথায় চেপে ধরে।তীক্ষ্ম গলায় বললো—

“বাবুকে ছুঁয়ে বলেন।সব মেয়েকে ভাইয়ের নজরে দেখবেন!

“এ কোন মুসিবত!

“এটাই ফজিলত।পাপ থেকে বাঁচার।বলেন?

মাহাদ নির্বিঘ্ন গলায় বললো—

“কাউকে ছুঁয়ে কসম কাটা ঠিক নয়।আর বাবু তো…।”

“আপনি বলবেন না?

মাহাদ শীতল নিঃশ্বাস ফেলে বললো—

“ওকে।আজকের পর আপনাকে ছাড়া কাউকে দেখবোনা।”

মাহাদ আমাদ এর নরম তুলোর মতো গালে ছোট্ট চুমু খেয়ে বললো—

“আমার আর ফিল্ম করা হবে না বাবাইসোনা।ভাইয়ের নজরে তো আর নায়িকাদের দেখতে পারবো না।তাই এখন থেকে ফিল্মস্টার মাহাদ আবইয়াজ নয় শুধু মাহাদ আবইয়াজ।”

“কিন্তু মাহাদ!

“কথা দিয়েছি তো।তা রাখবো।”
,
,
,
আজ সাতদিন পর হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করা হয়েছে আম্বের কে।মাহাদ আম্বের আর আমাদ কে নিয়ে সোজা কাজী অফিসে যায়।সেখানে আগে থেকেই মিশ্মিয়া,রিমেল,আগ্নেত্রী,তন্ময়,ফাইরুজা আর ইমু উপস্থিত।এইবার ধর্মীয় নিয়ম মেনেই বিয়ে হয় আম্বের আর মাহাদ এর।সাক্ষীর কোনো অভাব হলো না।সবার মুখে হাসি থাকলেও একজনের ছিলো গোমড়া মুখ।আম্বের নরম পায়ে ইমুর কাছে এসে বললো—

“কিরে,কথা বলছিস না কেন?

ইমু কিছু বললো না।ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।মাহাদ দূর থেকেই তাকিয়ে আছে ইমুর দিকে।কাছে যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করলো না।ইমুর ছোট ছোট নিষ্প্রাণ চোখ যায় আম্বের এর কোলে থাকা সাদা তোয়ালে পেচানো আমাদ এর দিকে।সেদিকে তাকিয়েই প্রশ্ন করলো–

“বাবুকে আমার কোলে দিবে?

“নে।”

আমাদকে কোলে নিতেই কেমন যেনো অদ্ভুত অনুভূত হলো ইমুর।আম্বের আর মাহাদ এর উপর জমে থাকা পাহাড়সম রাগ,অভিমান মুহুর্তেই ধসে পড়লো।ছোট ছোট পাখির ছানার মতো নরম হাত,পা নাড়িয়ে কেঁদে উঠে আমাদ।তুলতুলে নরম গোলাপী নখের আঁচড় কাটে ইমুর মুখে।পুলকিত হয় ইমু।তার অধর কোণে ফুটে উঠে ঝরঝরে হাসি।আমাদ এর গালে গাল ছোঁয়াতেই ইমুর মনে হলো এ যেনো হাওয়াই মিঠাই।মুহূর্তেই মিলিয়ে যাবে।আম্বের কোলে তুলে নেয় আমাদ কে।

তন্ময় এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মাহাদ।তার ডেসটিনেশনের ডিফিনেশনের কারণেই আম্বের কে বিয়ে করে মাহাদ।আগ্নেত্রীর প্রতিও ঋনী সে।এক কঠিন মুহূর্তে আগ্নেত্রীর একটা ছোট্ট মিথ্যে একটা প্রাণ বাঁচায়।মিশ্মিয়া আর রিমেল বিয়ে করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।এতোকিছুর মাঝে এসে দাঁড়ায় রাহাত শেখ।ছেলের কাজে অনুতপ্ত সে।ক্ষমা চায় আম্বের এর কাছে।নিজের মেয়ের সাথে করা অন্যায়ের জন্য ফাহাদ কে পাঁচ বছরের জন্য জেলে পাঠায় মাহতাব খান।ওলিজা জানেনা কোন মুখে সে ক্ষমা চাইবে।মাহাদ ঘুরেও তাকালো না সেইদিকে।কিন্তু মন থেকে তার কোনো অভিযোগ নেই তার মায়ের প্রতি।
,
,
,
বাড়িতে প্রবেশ করতেই ফুলের গালিচায় পা পড়ে আম্বের এর।ঝুপ ঝুপ করে গোলাপের পাঁপড়ি ছিটিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাদের।আলতাফ সামনে এসে দাঁড়িয়ে মন ভরে দেখে তার বউমনি কে।মাহাদ আলতো গলায় বললো–

“বাবুকে আমার কাছে দিন।”

আমাদ কে মাহাদ এর কাছে দিয়ে আলতাফ কে সালাম করে আম্বের।আলতাফ প্রানখুলে দোয়া করে।আর বললো—

“সুখময় হোক আপনার প্রতিটি মুহূর্ত।আনন্দে ভরে উঠুক আপনার প্রতিটি দিন।বিশ্বাস আর ভালোবাসায় ঘেরা থাকুক আপনার চারপাশ।এই ইট,পাথরের ঘরকে ভালোবাসায় পূর্ন করেন।”

আম্বের এর চোখ ভরে আসে।ঝাপসা চোখে তাকাতেই দেখতে পায় আসমীরা আর মাহতাব খান দাঁড়িয়ে।আসমীরা কাছে আসতেই তাকে মা মা বলে জড়িয়ে ধরে আম্বের।

মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন উপড়ে যাওয়া গাছের মতো হামলে পড়ে আম্বের তার মায়ের উপর।দেয়ালের প্রতিটি ইট উৎকর্ণ হয়ে শুনছে এক মায়ের হৃদয় বিদারক কান্না।সিমেন্ট বালির তৈরি ফ্লোরের প্রতিটি অংশ যেনো আজ সাক্ষী হচ্ছে দুজন নারীর বুকভরা কান্নার।দীর্ঘ বিশ বছর পর নিজের সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরার যে অকৃত্তিম ভালোবাসা,অকল্পনীয় খুশি,শরীরের অবিচ্ছেদ্য অংশ হারিয়ে ফিরে পাওয়ার যে আনন্দ আজ সবাই দেখছে।

আসমীরা উন্মাদের মতো চুমু খেতে থাকে আম্বের কে।আম্বের তার ধরা গলায় মা মা বলে ডাকছে।তৃপ্তিতে ভরে উঠে আসমীরার সমস্ত শরীর।

“সন্তান নারীদেহের সেই কাঙ্ক্ষিত অংশ যার অনুপস্থিতিতে একজন নারী একটা মিলিয়ন ডলারে কেনা সৌন্দর্য বর্ধনের শোপিস এর মতো।নারী সত্তার পূর্নতা তার উদর থেকে নয় মাসের অশুদ্ধ রক্ত থেকে জন্ম নেওয়া সেই মাংসপিন্ডের।যার শুদ্ধতা একমাত্র এনে দিতে পারে নারীর পূর্নতা।”

মাহতাব বিবশ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।তার করা সকল অন্যায়ের শাস্তি আজ তার সামনে।সামনে দাঁড়ানো মাহাদ কে তার ক্ষীপ্র বাঘ মনে হচ্ছে।যে এখনই ছিঁড়ে খাবে তাকে।আম্বের একটা ধারালো তলোয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।যেনো এখনই সে তার সাথে করা অন্যায়ের শোধ নিবে।আর রোজা!
সে রক্ত মাখা মুখে দাঁড়িয়ে আছে একটা অগ্নিকুন্ডের মুখে।মাহতাব এর মনে হলো এখনই রোজা তাকে টেনে হিঁচড়ে সেই জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে ফেলে দিবে।আর আসমীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।সে প্রসন্ন।পাপের শাস্তি পাচ্ছে মাহতাব খান।
ভাবতেই গা শিউরে উঠে মাহতাব খান এর।

মাহতাব খানকে দেখে দগ্ধ হয় আম্বের এর চোখ।তাতানো গলায় বললো—

“কেন এসেছেন আপনি?আর কী চান আপনি?সব তো কেড়ে নিয়েছেন?

মাহতাব খান জমাট বাঁধা গলায় বললেন—

“আমায় ক্ষমা করে দে মা।”

আম্বের ঝাঁঝালো গলায় বললো–

“কিসের মা!

“আমি তোর বাবা।”

“নাহ।আপনার মতো মানুষ কখনো কারো বাবা হতে পারে না।একজন বাবা কখনো কারো জীবন নিতে পারে না।আর জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায় না।আহমেদ আমার বাবা।আমাকে জন্ম না দিয়েও সে আমার বাবা।আমার বেস্ট বাবা।”

ঝুমঝুমিয়ে কাঁদছে আম্বের।মাহতাব খান একটু কাছে এসে আম্বের কে ছুঁতে চাইলেই আম্বের সরে দাঁড়ায়।তপ্ত গলায় বললো—

“একদম ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না আমাকে।আপনার ওই নোংরা হাত আমাকে অপবিত্র করে দিবে।ভালোই হয়েছে আমার মা আমাকে আপনার কাছ থেকে দূরে রেখেছে।আপনি বাবা হওয়ার যোগ্য না।আপনি একটা পশু।
আপনাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।কখনো না।”

আম্বের দৌঁড়ে শোবার ঘরে আসে।বিছানায় বসে অনবরত কাঁদতে থাকে।এমন কেন হলো!কেউ ছিলনা তাই ই তো ভালো ছিলো।এখন কেন এমন লাগছে!নিজেকে আজ সত্যিই অনাথ মনে হচ্ছে আম্বের এর কাছে।

মাহতাব বুকে হাত দিয়ে ঢলে পড়লেন।বড্ড ব্যথা হচ্ছে তার বুকে।মাহাদ পানি এনে তাকে খেতে দেন।আধ খাওয়া পানি মুখ থেকে উপচে পড়ে তার।কম্পনরত গলায় বললো—

“আমার মেয়ে কী কখনো আমাকে বাবা বলে ডাকবে না?

মাহাদ নিষ্কম্প চোখে তাকায় আসমীরার দিকে।
,
,
ক্রন্দনরত আম্বের এর পাশে এসে বসে মাহাদ।গলার শ্লেষ্মা পরিষ্কার করে বললো—

“এইটা কী ঠিক হচ্ছে!

“কী বলতে চান আপনি!ক্ষমা করে দিবো আমি তাকে!

মাহাদ শীতল গলায় বললো–

“ক্ষমা মহৎ গুন।”

“আপনি পারবেন তাকে ক্ষমা করতে?

মাহাদ ঘাড় হেলিয়ে বললো—

“তার উপর আমার কোনো রাগ নেই।এতোকিছুর বিনিময়ে আমি আপনাকে পেয়েছি।তাই তাকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।বাবারা কখনো অপরাধী হয় না।”

‘পৃথিবীতে খারাপ পুরুষ থাকতে পারে কিন্তু খারাপ বাবা কখনো হয় না।একজন সন্তানের জন্মের সাথে সাথে একজন বাবারও জন্ম হয়।পুরো দুনিয়ার জন্য সে শুধু পুরুষ হলেও একজন সন্তানের জন্য সে বাবা।শুধু বাবা।’

আম্বের জিঙ্গাসু গলায় বললো–

“রোজা!তার কী হবে!সে যে বিনা অপরাধে শাস্তি পেলো!সে কী করে ক্ষমা করবে মাহতাব খান কে!আমার মা।যাকে সে এতোটা কষ্ট দিয়েছে!সে পারবে ক্ষমা করতে!

“আপনি কী বলতে চান বলেন তো।আপনার মুখে বাবা ডাক শোনার জন্য স্যার নিজের প্রাণও দিতে পারে।”

আম্বের দারাজ গলায় বললো—

“তাহলে তাকে বলেন আমার মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে।রোজার কাছে ক্ষমা চাইতে।পারবে সে?

মাহাদ স্মিত হাসে।রহস্য গলায় বললো–

” আপনার মা তার স্বামী কে ক্ষমা করবে কি না তা তার মতামত।রোজা ক্ষমা করলে স্যার কে ক্ষমা করে দিবেন আপনি?

আম্বের নিরীহ গলায় বললো–

“মাহাদ!

“রোজা বেঁচে আছে।অ্যাকসিডেন্টে সে মারা যায় নি।কিন্তু…।”

“আম্বের উৎসুক গলায় বললো—

“কিন্তু!

“শী ইজ প্যারালাইজ।তার হৃদস্পন্দন ছাড়া আর কোনো কিছু তাকে সাড়া দেয় না।”

আম্বের অশ্রুসিক্ত চোখে মাহাদ এর বুকের সাথে লেপ্টে বসে।মাহাদ এক হাতে তাকে জড়িয়ে ধরে।বললো—

“এতোটাও কঠোর হবেন না প্রজাপতি।সন্তান হারানোর বেদনা তাকে পাথর করে দিয়েছে।আপনি পারবেন সেই পাথরে ফুল ফোটাতে।”

,
,
,

একটা হুইল চেয়ারে নিথর,নিস্তব্ধ,নিশ্চল হয়ে বসে আছে রোজা।তার স্থির দৃষ্টি।মাহাদ এসে বসে তার সামনে।রোজার দুই হাত নিজের মুষ্টিতে নিয়ে বললো–

“কেমন আছো রোজা?

রোজা দুইবার পলক ফেললো।মাহাদ বিগলিত হাসলো।স্মিত গলায় বললো—

“তোমার সাথে কেউ দেখা করতে এসেছে।”

মাহতাব খান কে দেখে রোজার চোখের পাতা কাঁপতে থাকলো।মাহাদ শক্ত করে তার হাত ধরে বললো—

“শান্ত হও রোজা।”

মাহতাব খান কোনো কথা বললেন না।হাত জোড় করে রোজার সামনে বসে কাঁদতে লাগলেন।পাশ থেকে মাহাদ বলতে থাকলো–

“‘রাগ’ ধ্বংস করে দিতে পারে জীবন, সম্পদ, সম্মান এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক। জীবনে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়। এ কারণেই নবীজি (সা.) এটাকে বলেছেন, ‘আদম সন্তানের অন্তর একটি উত্তপ্ত কয়লা’ (তিরমিজি)। আল্লাহর ক্ষমা পেতে হলে তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করতে হবে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন, যা তৈরি করা হয়েছে পরহেজগারদের জন্য। যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষকে ক্ষমা করে, বস্তুত আল্লাহ সত্কর্মশীলদিগকেই ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৪)।

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রচুর আত্মসংযম ও ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, যখন তাঁকে অপমান, অপদস্থ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল। রাগ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে। যে ব্যক্তি রাগ নিয়ন্ত্রণ করে, সে আধ্যাত্মিকভাবে এবং জাগতিকভাবেও পুরস্কৃত হয়। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)।

এক ব্যক্তি নবীজি (সা.)-কে বললেন, ‘আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, “তুমি রাগ করো না”। ওই ব্যক্তি কয়েকবার তা বললেন। নবীজি (সা.) প্রতিবারই বললেন, “রাগ করো না”।’ (বুখারি, খণ্ড: ৮, অধ্যায়: ৭৩, হাদিস: ১৩৭)। এ ছাড়া নবীজি (সা.)-এর জীবন থেকে এমন অসংখ্য ঘটনা আমরা দেখতে পাই, যেগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি, যখন রাগ আমাদের গ্রাস করতে চায় কিংবা আমরা রাগান্বিত অবস্থায় থাকি, তখন আমাদের কী করা উচিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তবে তার উচিত বসে পড়া। যদি তার রাগ কমে যায়, তবে ভালো; নয়তো তার উচিত শুয়ে পড়া।’ (তিরমিজি)।

নবী করিম (সা.) আমাদের উপদেশ হিসেবে আরও বলেছেন রাগান্বিত অবস্থায় অজু করতে, যা রাগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার একটি উত্তম পদ্ধতি। নবীজি (সা.) বলেন, ‘রাগ আসে শয়তানের পক্ষ থেকে; শয়তানকে তৈরি করা হয়েছে আগুন থেকে, আর একমাত্র পানির মাধ্যমেই আগুন নেভানো সম্ভব। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তার উচিত অজু করা।’ (আবু দাউদ)। এ ছাড়া নবীজি (সা.) শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগের কথাও বলেছেন। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমি এমন একটি কালেমা জানি, যা পাঠ করলে ক্রোধ দূর হয়ে যায়। (আর তা হলো) “আউযু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বনির রাজিম” অর্থাৎ, আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।’ (মুসলিম, অধ্যায়: ৩২, হাদিস: ৬৩১৭)।

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (র.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) আমাদের আরও উপদেশ দিয়েছেন, ‘যদি তোমাদের কেউ রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তবে তাকে নীরব থাকতে দাও।’ যদি কোনো ব্যক্তি শান্ত বা নীরব হওয়ার চেষ্টা করে, তবে এটা অবশ্যই তাকে মারামারি কিংবা কটু কথা বলায় বাধা প্রদান করবে।

জীবনের এক কঠিনতম সময়ে আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) তায়েফে গিয়েছিলেন, আশা করেছিলেন তায়েফবাসী তাঁর কথা শুনবে, তাঁকে সহযোগিতা করবে। কিন্তু সহযোগিতার পরিবর্তে তিনি পেলেন অপমান। তাঁর শরীর থেকে রক্ত গড়িয়ে পায়ে গিয়ে জমাট বাঁধল। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর কাছে একজন ফেরেশতা এলেন। ফেরেশতা তায়েফের দুপাশের পাহাড় এক করে দিয়ে তায়েফবাসীকে হত্যা করার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু দয়াল নবী (সা.)-এর উত্তর ছিল, ‘ (না, তা হতে পারে না) বরং আমি আশা করি মহান আল্লাহ তাদের বংশে এমন সন্তান দেবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে শরিক করবে না।’ (বুখারি, খণ্ড: ৪, অধ্যায়: ৫৪, হাদিস: ৪৫৪)।

হজরত আলী (রা.) এক যুদ্ধে অমুসলিম বাহিনীর সেনাপ্রধানকে সম্মুখযুদ্ধে ধরাশায়ী করলেন এবং যখন তাকে হত্যা করতে উদ্যত হলেন, তখন তিনি আলী (রা.)-এর মুখে থুতু নিক্ষেপ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে আলী (রা.) লোকটিকে ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেলেন। তখন ওই সেনাপ্রধান বললেন, ‘আপনি আমাকে হত্যা করতে পারতেন, কিন্তু তা করলেন না কেন?’ উত্তরে আলী (রা.) বললেন, ‘আপনার সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। আপনার সঙ্গে আমি যুদ্ধ করেছি শুধু আপনার অবিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি বিদ্রোহের কারণে। আমার মুখে থুতু নিক্ষেপের পর আমি যদি আপনাকে হত্যা করতাম, তবে তা হয়ে পড়ত আমার ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও প্রতিশোধস্পৃহার বহিঃপ্রকাশ, যা আমি কখনোই চাই না।’ (সাহাবা চরিত)।

নবীজি (সা.) একবার সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কাকে তোমরা অধিক শক্তিশালী মনে করো?’ তাঁরা উত্তর দিলেন, ‘যে ব্যক্তি কুস্তিতে অন্যকে হারিয়ে দিতে পারে।’ নবী করিম (সা.) বললেন, ‘সে প্রকৃত বীর নয় যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং সে-ই প্রকৃত বীর যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।’ (বুখারি: ৫৬৮৪)। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব তোমাদের যা দেওয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগমাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী, তাদের জন্য যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের পালনকর্তার ওপর ভরসা করে। যারা বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধান্বিত হয়েও ক্ষমা করে।’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত: ৩৬-৩৭)।

এতকিছু তোমাকে এইজন্যই বললাম কারণ আজ তোমার ক্ষমা খুব প্রয়োজন স্যার এর।ক্ষমা করে দাও তাকে।”

রোজার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো।পাশ থেকে তার বাবা দারাজ গলায় বললেন—

“উঠে দাঁড়ান মি.খান।আমার মেয়ে আপনাকে ক্ষমা করেছে।শুধু মনে রাখবেন সব সন্তান ই তার বাবা মায়ের প্রাণ।দম্ভ,অহমিকায় কারো প্রাণ কেড়ে নিবেন নি।”

মাহতাব খান তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করলেন।আসমীরাও তাকে ক্ষমা করে দিলেন।কারণ তাকে দেওয়া কষ্টের শাস্তি তো সেদিন থেকে শুরু হয়েছে যেদিন আদ্রিতার মৃত্যু ঘটেছে।

আম্বের এর মুখে বাবা ডাক শুনে মাহতাব খান এর খরা হৃদয়ে বাণ এলো।মেয়েকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিলেন তিনি।আর প্রতিজ্ঞা করলেন তার সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে হলেও রোজা কে তিনি সারিয়ে তুলবেন।
,
,
,
কাঁদতে কাঁদতে ঘরে ঢোকে আম্বের।তার মুখ গিয়ে ঠেকে মাহাদ এর বক্ষদেশে।দুই হাতে শক্ত করে আম্বের কে জড়িয়ে ধরে মাহাদ।কোমল গলায় বললো—

“যত কান্না করার করে নিন প্রজাপতি।আজকের পর আর কাঁদতে পারবেন না।”

আম্বের কান্না থামিয়ে নাক টেনে টেনে বললো—

“কী করবেন তাহলে?

“ঢকঢক করে গিলে নিবো আপনাকে রেড ওয়াইন।”

মাহাদ আম্বের কে একটু উঁচু করে বিছানায় শুইয়ে দেয়।তার উপর উবু হয়ে বললো—

“আজকের পর আর কাঁদতে দিবো না আপনাকে।”

মাহাদ আম্বের এর গাল,গলা,ঠোঁটে চুমু খেলো।আম্বের দূর্বল হাতে ধাক্কা মেরে বললো–

“কী হচ্ছে এইসব!

“আপনাকে একমাসের জন্য আপনার বাবা মায়ের কাছে থাকতে হবে।”

আম্বের ভীত গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লো–

“কেন?

“কারণ আমাদের আবার বিয়ে হবে।পুরো নিয়ম মেনে বিয়ে হবে।তাই এই একমাস আপনাকে আপনার বাবার বাড়িতেই থাকতে হবে।আর এর মাঝে আমি একটা চাকরিও খুঁজে নিবো।”

“তাই বলে একমাস!আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।”

“থাকতে হবে সুগন্ধি।এই একমাস আপনি আপনার বাবা মায়ের সাথে সময় কাটাবেন।”

আম্বের ম্লান চোখে তাকিয়ে রইলো।মাহাদ বিগলিত গলায় বললো–

“এরপর আমাদের আবার বিয়ে হবে।বাসরও হবে।”

আম্বের ব্যস্ত গলায় বললো–

“বাসর!কিসের বাসর!

“ওমা !বিয়ে হবে বাসর হবে না!এইটাও তো নিয়ম।”

“যাহ,
বেশরম পুরুষ।”

“বাহ!এই একমাস বসে বসে আর কতো ধরনের পুরুষ হয় লিখবেন।বাসর রাতে বসে বসে পড়বো।”

আম্বের খলখলিয়ে হাসে।মাহাদ নিচু হয়ে আম্বের এর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো—

“তিনবার বিয়ে হবে আমাদের।দীর্ঘ এগারো মাস উপোস করিয়ে রেখেছেন আমাকে।এইবার অমৃত খাইয়ে আমার উপোস ভাঙাতে হবে আপনাকেই।”

আম্বের সলজ্জ গলায় বললো–

“খবিশ পুরুষ !

মাহাদ জোর হাতে নিজের সাথে চেপে ধরে আম্বের কে।তার গলায় মুখ গুঁজে বললো—

“একমাস আপনাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে আমার প্রজাপতি।ঘুমাতে পারবোনা আমি আপনার সুগন্ধ ছাড়া।”

“তাহলে কেন যেতে দিচ্ছেন আমাকে?

মাহাদ দীর্ঘসময় নিয়ে আম্বের এর কিশলয় ন্যায় অধরপল্লব হতে শুঁষে নিতে থাকে তার অধরামৃত।তার চোখে চোখ রেখে বললো—

“আপনাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য।আপনার সুগন্ধে নিজেকে মেশানোর জন্য।আপনিই তো আমার বদ্ধ হৃদয়ের অনুভূতি।”

একে অপরকে শক্ত বাঁধনে আড়ষ্ট করে মাহাদ আম্বের।তাদের ভালোবাসা পূর্নতা পেয়েছে তাদের আমাদ রূপে।

হিংসা,দ্বেষ,ক্রোধ,প্রতিহিংসা কখনো সুখ বয়ে আনে না।সকল রাগ,অভিমান,প্রতিশোধ ভুলে পৃথিবী ভালোবাসার হোক।জাগ্রত হোক সকল ভালোবাসার মানুষের বদ্ধ হৃদয়ের অনুভূতি।

________________ সমাপ্ত_________________

(একটু আগেই দিয়ে দিলাম।আশা করি সবাই তাদের অনুভূতি আজ প্রকাশ করবেন।

নতুন গল্পের প্রোমো ঠিক আজ রাত সাড়ে দশটায় পাবেন।হ্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here