বৃষ্টিস্নাত ভোর পর্বঃ১৫

0
5197

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ১৫
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

ডাইনিং এ বসে ব্রেকফাস্ট করছে ইনশিরাহ আর মারশিয়াদ।ইনশিরাহ প্রগাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মারশিয়াদ এর দিকে।লাল হয়ে আছে দুচোখ।চোখের উপরি অংশ ফুলে আছে।মুখের উজ্জ্বলতাও ফিকে হয়ে আছে।
থমথমে গলায় ইনশিরাহ বলল—

“সারারাত ঘুমাও নি তাই না??

মারশিয়াদ গম্ভীর স্বরে বলল–

“তেমন কিছু নয়।”

“মিথ্যে বলছো তুমি!!

“তুমি জানো আমি মিথ্যে বলি না।”

ইনশিরাহ গলার স্বর একটু নিচু করে বলল–

“তাহলে এখন কেনো বলছো??

“বললাম তো তেমন কিছু নয়।”

ইনশিরাহ টেবিলেল চাপড় মেরে উঠে দাড়ায়।রুষ্টকন্ঠে বলল—

“নিজেকে এতো কষ্ট কেনো দাও তুমি??

মারশিয়াদ হাত থেকে কাটা চামচ টা রেখে টেবেলের উপর দুই হাতের কনুই রেখে হাতের আজলায় রাখে নিজের চিবুক।গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইনশিরাহ এর দিকে।মেয়েটা ধীরে ধীরে ওকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।ইনশিরাহ গলা উচু করে আবার বলল–

“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো!
আমার কথার উত্তর দাও।”

মারশিয়াদ সোজা হয়ে বসে মৃদু হাসে আর বলল–

“কী উত্তর দিবো??

“তাকে তুমি কেনো যেতে দিলে??

“সে আমার নয়।”

“তাকে তুমি ভালোবাসো জান।!

“উহু।
ভালোলাগা আর ভালোবাসা এক নয়।”

“সে তোমার ভালোবাসা।”

“নাহ।ভালোলাগা।
সে আজরাহান এর ভালোবাসা।”

“তুমি পিছিয়ে গেলে কেনো?
তুমি চাইলেই সে তোমার হতে পারতো।”

“আজরাহান কে আমি হারাতে পারবো না।”

ইনশিরাহ ক্ষেপে উঠে।রুদ্ধশ্বাসে বলল–

“এতো কিসের টান তোমার ওর জন্য??
কেনো এতো ইম্পর্টেন্স দাও ওকে??

মারশিয়াদ নির্বিকার ভাবে তাকিয়ে ভাবে এই মেয়েটা আজকাল ওকে নিয়ে অনেক চিন্তা করে।ধীর কন্ঠে বলল—

“ওর জন্যই তো আমি তোমাকে পেয়েছি।”

“আমি কোথাও হারিয়ে যাই নি।শুধু আড়ালে ছিলাম।তার মানে এই নয় তুমি আমার জন্য নিজের সবকিছু বিসর্জন দিবে!!

“বললাম তো আই ডোন্ট লাভ হার।”

“কেনো তুমি তোমার মায়ের মতো হলে!!

মারশিয়াদ অধর ছড়িয়ে হাসে।আর বলল–

“মম তোমাকে দেখতে চেয়েছে।”

“আমি তার সাথে দেখা করবো না।”

“সে আসছে বাংলাদেশ।”

ইনশিরাহ চোখ উল্টে তাকায়।ইনশিরাহ এর দিকে তাকাতেই মারশিয়াদ দেখে আজরাহান তটস্থ হয়ে সেখানে উপস্থিত।মারশিয়াদ জিঙ্গাসু কন্ঠে বলল–

“তুই এতো সকালে এখানে??

আজরাহান কন্ঠে কাঠিন্য রেখে বলল–

“তোর সাথে আমার কথা আছে।”

মারশিয়াদ উঠে গিয়ে আজরাহান কে নিয়ে লিবিং রুমের অপর পাশে জানালার পাশে গিয়ে দাড়ায়।আজরাহান শক্ত কন্ঠে বলল–

“তোকে প্রহর কী বলেছে??

মারশিয়াদ অধর বাকিয়ে হাসে।আর বলল–

“এইটা জিঙ্গেস করতে এসেছিস!!!

“যা জিঙ্গেস করেছি তার উত্তর দে।”

মারশিয়াদ ঠান্ডা সুরে বলল–

“রেড চিলি এতোটা বোকা নয় যে তুই তাকে ফোর্সলি কিস করেছিস আর সে আমাকে তা বলবে।”

“তাহলে তুই কী করে জানলি??

“তার কৈফিয়ত কী তোমাকে দিতে হবে??

দীপ্ত কন্ঠে ইনশিরাহ এর ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নে অক্ষিযুগল ক্ষীন করে তাকায় আজরাহান।চোয়াল শক্ত করে বলল–

“এখানে তোমার কোনো কাজ নেই শিরনি।তুমি যেতে পারো।”

“হা হা হা।তুমি বললে আর আমি শুনলাম।কেনো এসেছো এখানে!!
মারশিয়াদ কে প্রশ্ন করার তুমি কে??

আজরাহান দৃঢ় কন্ঠে বলল–

“কি সমস্যা তোমার।সব জায়গায় ওই লম্বা নাক না ঢুকালে চলে না!!

“জাস্ট শাট আপ।”

“শাট আপ বোথ অফ ইউ।কী শুরু করলি তোরা??

মারশিয়াদ এর কড়া কন্ঠে দমকে যায় দুজন।মারশিয়াদ এক শ্বাস ছেড়ে বলল–

“আজরাহান তুই বাসায় যা।কাল বিয়ে তোর অনেক কাজ।ঝামেলা বাড়াস না।”

আজরাহান সপ্রতিভ হয়।রাশভারী কন্ঠে বলল–

“যাচ্ছি আমি।তবে মনে রাখিস এই শিরনির জন্য যদি আমার ভাইয়ের চোখ থেকে যদি এক ফোটা পানি পড়ে তাহলে কিন্তু আমি তোদের দুজনের একজন কেও ছাড়বো না।”

“কাউকে ছাড়তে হবে না তোর।যা এখন।”

ইনশিরাহ ফুসে উঠে।ফ্যাসফ্যাসিয়ে বলল–

“কতো বড় অসভ্য দেখেছো!!কী বলল??

“ছাড়ো ওকে।বস তুমি।”

সেদি আজরাহান প্রহর কে নিয়ে গেলে মারশিয়াদ এর মা কল করে।আমেরিকা থেকে কল করায় নেটওয়ার্ক ঝামেলা করছিলো।তাই মারশিয়াদ উঠে হাটতে থাকে।হাটতে হাটতে ছাদের কার্নিশে এসে দেখে সিড়ি ঘরের পেছনেই আজরাহান প্রহর এর অধর ছুইয়ে আছে।লাইন কেনে যাওয়ার আর নেটওয়ার্ক এর সমস্যার কারনে কল ব্যাক করেনি মারশিয়াদ।নিজের জায়গায় গিয়ে বসে আবার।

মারশিয়াদ ইনশিরাহ কে নিয়ে কাউচে বসে।ইনশিরাহ এখনো ফোস ফোস করছে।আজরাহান কে কেনো যেনো ও একদম ই সহ্য করতে পারে না।মারশিয়াদ একগাল হেসে বলল–

“তোমাকে একটা মজার কথা বলি!!

ইনশিরাহ তপ্ত কন্ঠে বলল–

“বলো।”

“আজরাহান এর মারমেইড কে জানো!!

ইনশিরাহ ভ্রু ক্রটি করে।এই সম্পর্কে ও আশফিক এর কাছে শুনেছে।কিন্তু মেয়েটাকে কখনো দেখেনি।

“নাহ।”

“মিষ্টি ই হলো আজরাহান এর মারমেইড।”

ইনশিরাহ বিস্মিত কন্ঠে বলল—

“কি বলছো তুমি!!মানে নুরাইসা!!
তাহলে তো এই মেয়ের কপালে দুঃখ আছে।”

মারশিয়াদ হো হো করে হেসে উঠে।আর বলল–

“তা তো আছেই।”

“তুমি কিছু বলবে না!!

“নাহ।”

“কেনো??

“এইটা আজরাহান আর ওর মারমেইড এর ব্যাপার।
যা বলার পরে বলবো।”

“আমি আজো ও তোমাকে বুঝতে পারি না।”

মারশিয়াদ ইনশিরাহ এর চুল টেনে বলল–

“এতো বুঝতে হবে না সুয়োরানী।”

“একদম আমাকে সুয়োরানী বলবে না।
আর তুমি আমার ফ্ল্যাট কেনো বিক্রি করে দিলে??

“কারন এখন থেকে তুমি এখানেই থাকবে।”

“জোর করবে??

“একদম না।এইটা তোমারও বাড়ি।”

ইনশিরাহ নিঃশ্চুপ।নিজের হ্যান্ডব্যাগ থেকে একটা পেপার বের করে একটা নিউজ দেখায় মারশিয়াদ কে।আর বলল–

“দেখো ভালো করে নিউজ টা।আজকাল মানুষ কতোটা হিংস্র হয়ে যাচ্ছে।”

কুহুকপুর গ্রামের মোতালেব খাঁ পুরোনো আমলের জমিদার এর বংশধর।জমিদারি না থাকলেও প্রভাব প্রতিপত্তি কোনো অংশে কম নয় বরং বেশি।প্রয়াত বাবার নামে গ্রামের মানুষদের জন্য একটা হসপিটাল খোলে।প্রথম প্রথম সব ঠিক ছিলো।কিন্তু কয়েকমাস আগে থেকে সেখানকার হসপিটাল এর ভিতরে কিছু একটা চলছে।গত মাসেই কিছু বাচ্চা ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়ছিলো।কয়েকদিনেই তারা সেড়ে উঠেছে।কিন্তু একদিন সকালেই রক্তবমি শুরু হয়ে দুজন শিশুর মৃত্যু ঘটে।আর বাকিদেরও মুমুর্ষু অবস্থা।জানা যায় আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
মারশিয়াদ মনোযোগ দিয়ে পুরো ঘটনা শুনলো।ফিক করে হেসে বলল–

“তোমার কোনো কাজ নেই!!
রাতের ঘুম বাদ দিয়ে এইসব কী নিউজ নিয়ে ঘুরে বেড়াও!!

“এটা মোটেও হাসার বিষয় নয় জান।
হারানোর যন্ত্রণা সে বুঝে যে হারায়।”

মারশিয়াদ নির্বাক দৃষ্টি ক্ষেপন করে ইনশিরাহ এর দিকে।অক্ষিপল্লব ভিজে উঠেছে তার।

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত মানে সৃষ্টির সেরা জীব।মানুষকে আল্লাহ বিবেক,বুদ্ধি,চেতন দিয়ে সৃষ্টি করছেন।আর অন্যদিকে পশুদের দিয়েছেন হিংস্রতা।কিন্তু আজ মানুষ পশুদের হিংস্রতাকে হার মানিয়ে দিয়েছে।স্বার্থের লোভে কেড়ে নেয় অন্যের জীবন।দ্বিতীয়বার ভাবারও প্রয়োজন বোধ করে না।কথায় আছে—
“প্রান থাকলেই প্রাণি হয় কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হওয়া যায় না।”
,
,
,
সকাল হতেই আজরাহানদের বাড়িতে সাজ সাজ রব।আজ বিয়ে।অনেক বড় আয়োজন তাই অনুষ্ঠান কোনো একটা ম্যারেজ হল এ হবে।বাড়ির সব আত্মীয় স্বজন ইতিমধ্যে চলে গেছে সেখানে।সানায়া লাগাতার তারাফ কে কল করে যাচ্ছে।কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ রিসিভ করছে না।অবশেষে রিসিভ করে তারাফ।সানায়া বেশ রেগে কিছুক্ষন ঝাড়ে তাকে।কিন্তু তারাফ নিরুপায়।একটা জরুরী কাজে আটকে গেছে সে।বিয়েতেও আসতে পারবে না।

সানায়া গিয়েছিলো সেই এনজিও তে।কথা বলেছে তাদের সাথে।পুরো একটা দিন ওই অসহায় মেয়েদের জীবন কাহিনী শুনেছে।মানুষ আসলেই অধম।না হলে কী করে একজন স্বামী তার স্ত্রী কে টাকার লোভে কোনো দেহ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিতে পারে!!
একজন পুরুষ কী করে পারে তারই বোনের বয়সি কোনো মেয়েকে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে এসিড ছুড়ে দিতে!!একজন স্বামী যৌতুকের লোভে কী করে পারে তার গর্ভবতী স্ত্রীর গায়ে গরম তেল ঢেলে দিতে!!
মানুষ সত্যিই অদ্ভুত প্রাণি।

বাড়ির প্রায় সবাই রেডি হল এ যাওয়ার জন্য।আজ আজরাহান শেরওয়ানী পড়েছে।একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা!!
অফ হোয়াইট কালারের শেরওয়ানীর উপর গোল্ডেন কালারের কারচুপির কাজ।সবাই বাড়ির বাইরে গাড়িতে উঠার জন্য রেডি।প্রহর কে নিতেই ভিতরে এসেছে আজরাহান।
মাত্রই রেডি হয়ে নিজের ঘর থেকে বেরিয়েছে প্রহর।গাঢ় হলুদ রঙের ল্যাহেঙ্গার উপর মাল্টি কালারের কাজ করা।সামনের চুল ফুলিয়ে পিছনে একটা বড় খোপা করা আর তাতে গোলাপ ফুল ঘুজে দেওয়া।আজরাহান ওকে দেখেই সেখানেই স্তব্ধ।আটকে থাকে ওর চোখ ওর ডিঙি নৌকার দিকে।যেনো কোনো সুরম্য নারী ওর সামনে এসে দাড়িয়েছে।আজরাহান দম নিতেই ভুলে গেছে।পাতলা ওড়নাটার এক পাশ কোমড়ের একপাশে সেফটিপিন দিয়ে লক করে বুকের উপর দিয়ে নিয়ে শাড়ির আচলের মতো করে রেখেছে।পাতলা ওড়নার উপর দিয়েই প্রহর এর বুকের আর উদরের বস্ত্রহীন ধবধবে ফর্সা অংশ কাপিয়ে তুলছে আজরাহান এর শিরা উপশিরা।এক স্নিগ্ধ,সতেজ চাহনি তে দেখছে প্রহর কে।প্রহর নিজের ওড়না নিয়ে ব্যস্ত তা ছড়িয়ে বুকের উপর মেলে দিচ্ছে।আজরাহান ধম ধম করে কয়েকপা ফেলে এসে ছো মেরে প্রহর এর হাত ধরে ওকে ঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।আজরাহান স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে।নিগূঢ় দৃষ্টি।খুটিয়ে খুটিয়ে আপাদমস্তক দেখছে প্রহর কে।ওকে দেখলে মনে হয় না পনেরো বছরের কিশোরী সে।দেখে মনে হচ্ছে সদ্য যৌবনে পা রাখা কোনো পঞ্চদশী।চোখে গাঢ় কাজল যেনো চোখ দুটোকে মায়াবী করে তুলেছে।আজরাহান এর ধ্যান ভাঙে প্রহর এর নির্লিপ্ত স্বরে।

“দেখা শেষ হয়েছে আপনার!!যেতে দিন আমাকে।”

আজরাহান শুকনো ঢোক গিলে।হৃদয়ের তৃষ্ণার সাথে সাথে তার শরীরের তৃষ্ণাও বেড়ে যাচ্ছে।নিজেকে সংযত করে আজরাহান।শক্ত কন্ঠে বলল–

“এতো সেজেছিস কেনো তুই!!
পাগল করে দিবি আমাকে!!

“আপনি তো এমনিতেই পাগল।সরেন।যেতে দিন আমাকে।”

“কোথায় যাবি??

“কোথায় আবার !!
বিয়েতে।”

“আগে চেঞ্জ করে আয়।এইটা পড়ে একদম বাহিরে যাবি না তুই।”

“কেনো,কেনো যাবো না!!
ছোট মা আমাকে বিয়েতে পড়ার জন্য কিনে দিয়েছে এইটা।”

“তো!!
তাতে কী হয়েছে।এইটা চেঞ্জ করে অন্যটা পড়ে আয়।”

আজরাহান প্রহর এর কোমরের দিকের ওড়না ধরে আবার বলল–

“এইটা কী কারচিফ পড়েছিস!!
সবই তো দেখা যায়।”

“তাতে আপনার কী !!

“এইটা পড়ে বাইরে গেলে ছেলেরা তোকে গিলে নিবে।”

“নিলে নিবে তাতে আপনার কী সমস্যা??

আজরাহান প্রহর এর কোমর ধরে ওকে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে নেয়।দু হাত দিয়ে প্রহর কে বুকের সাথে চেপে ধরে।শান্ত কন্ঠে বলল–

“আমার জিনিস তুই অন্যকে কেনো দেখাবি!!

প্রহর ওর মাথা টা একটু আলগা করে বলল–

“ইশশশ!!
এসেছেন উনার জিনিস।ছাড়েন আমাকে।”

“ছাড়বোনা।কী করবি তুই!!

আজরাহান প্রহর এর গালে নাক ঘষে ওর গালে একটা চুমু খায়।আজরাহান এর চোখে নেশা ভর করে।ওর পঞ্চ ইন্দ্রীয় সচল হয়ে উঠে প্রহর এর উষ্ণ দেহের সংস্পর্শে।জ্বলন্ত কয়লা যেনো তার উনুনের অভিমুখ খুজে চলছে।আজরাহান প্রহর এর চোখে মুখে বারংবার অধর ছোয়াতে থাকে।আজরাহান প্রহর কে এমনভাবে জড়িয়ে আছে প্রহর ইচ্ছে করেও এক চুল নড়তে পারছে না।আজরাহান এর এহেন কাজে মুখ বিকৃত করে প্রহর।চোখ বড় বড় করে ঠোঁট কামড়ে বলল–

“কী শুরু করেছেন আপনি??

আজরাহান বলল–

“তোমায় লিখেছি আমার গদ্যে
ছড়ায় লিখা আমার ছন্দে,
তোমায় বেসেছি ভালো আমি
সহস্র বছর শতাব্দে ।।

—-তানভি

সম্পূর্ন ঘরে সুনসান নিরবতা।চলন্ত ফ্যানের ভনভন আওয়াজ।আর তা বাড়ি লেগে মৃদু শব্দের প্রতিধ্বনি হচ্ছে দেয়ালে।প্রহর এর নিঃশ্বাস আজরাহান এর বুকে আছড়ে পড়ছে।উষ্ণ,উতপ্ত শ্বাসে অবগাহন করছে আজরাহান।প্রহর স্থির,নিশ্চল,সমাহিত হয়ে আছে আজরাহান এর বুকে।ঠান্ডা,গাঢ় আর আবেগ মাখা কন্ঠে প্রহর বলল–

“রাহান ভাইয়া,দেরি হয়ে যাচ্ছে।যাবেন না??

আজরাহান শান্ত,স্বাভাবিক স্বরে বলল–

“যাবো।তুই চেঞ্জ করে নে।”

প্রহর এক ঝটকায় সরে আসে আজরাহান এর কাছ থেকে।গরগর করে বলল–

“নাহ।করবো না।”

“তাহলে কিন্তু আমি,,

“কী করবেন??

“খেয়ে ফেলবো তোকে।
আমি বাইরে যাচ্ছি।তুই চেঞ্জ করে আয়।”

“বললাম তো করবো না করবো না করবো না।”

আজরাহান কিছু না বলেই বাইরে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়।বদ্ধ দ্বারের ওপাশে কয়েকবার কড়াঘাত করলেও আজরাহান দরজা না খুলে বলল–

“যদি বিয়েতে যেতে চাস তাহলে তাড়াতাড়ি চেঞ্জ কর।নাহলে কিন্তু আমি তোকে রেখেই চলে যাবো।”

প্রহর এর বেশ বিরক্ত লাগে।এই লোকটা সবসময় এমন করে।অসভ্য লোক।
,
,
,

পুরো ম্যারেজ হল লোকে লোকারন্য।সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত।আজরাহান এর সাথেই ঢোকে প্রহর।ওকে দেখে দৌড়ে আসে নুরাইসা।সাদা রঙের ওয়েষ্টার্ন গাউন পড়েছে সে।প্রহর কে ওর সাথেই নিয়ে যায়।ইনশিরাহ আর মারশিয়াদ পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে।নীল রঙের কাতান পড়েছে ইনশিরাহ।আর মারশিয়াদ খয়েরী রঙের শার্টের সাথে ব্রাউন রঙের ব্লেজার।বেচারি নির্ধার বেহাল দশা।নিরণ কে থামানো যাচ্ছে না।ওর কান্নার আওয়াজ সাউন্ড বক্সও হার মেনে যায়।নিরণ কে কাঁদতে দেখে নির্ধার কাছ থেকে নিয়ে প্রহর সিড়ে বেয়ে উপড়ে আসে।বিশাল জায়গা জুড়ে ম্যারেজ হল।দোতলা হলের নিচের বড় দুইটা হল রুম।তার একটাতে বর কনের জন্য আসর সাজানো হয়েছে। নন্দিতা কে যেখানে রাখা হয়েছে সেইটা একটু ছোট রুম।পরে আনা হবে আসরে।এছাড়াও রয়েছে আরোও চার পাচটা রুম।দোতলায় বড় করিডোর।সোজা খোলা বারান্দা।করিডোরের দুই পাশে চারটে রুম।

অ্যাশ কালারের উপর হালকা গোলাপী কালারের কাজ এর পাঞ্জাবী পড়েছে আশফিক।দুই ভাই পাশাপাশি দাড়িয়ে নুরাইসার গতিবিধি লক্ষ্য করছে।একটা ফুলের ডালা নিয়ে এগোতেই একজন সার্ভিস বয় এর সাথে লেগে হাতে থাকা বোরহানির গ্লাস থেকে কিছু অংশ নুরাইসার গাউনে পড়ে যায়।বিক্ষিপ্ত কন্ঠে নুরাইসা বলল–

“চোখে দেখোনা!!
দিলে তো আমার ড্রেস টা নষ্ট করে।”

সার্ভিস বয়টি ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়ে।পিনপিনে স্বরে বলল–

“সরি ম্যাম আমি দেখতে পাই নি।”

নুরাইসা ওয়াশরুম এর কথা জিঙ্গেস করতেই সার্ভিস বয় ওকে রুম দেখিয়ে দেয়।নুরাইসা বিদ্যুত গতিতে রুমে গিয়ে ঢুকতেই দেখে ওটা একটা ফাকা রুম।ওর শরীর রাগে রি রি করে উঠে।দরজার লক ঘুরাতেই ও বুঝতে পারে তা বাইরে থেকে লক করা।কতক্ষন মোচড়া মোচড়ি করেও দরজা খুলতে পারে না নুরাইসা।কারো শীতল কন্ঠ শুনতে পায় নুরাইসা।

“কেমন আছেন হোয়াইট মারমেইড??

ও ফিরে তাকাতেই দেখে আজরাহান দাড়িয়ে।হীম হয়ে আসে নুরাইসার দেহপিঞ্জর।হৃদযন্ত্রটা ধড়াস ধড়াস করে কম্পিত হতে থাকে।কেপে উঠে নুরাইসা।আজরাহান এর চোখ দুটো তে আগুন জ্বলজ্বল করছে।ঠোঁটে তার স্মিত হাসি।আগুন ঝরা দুচোখ যেনো কেমন নেশার্ত।গা দিয়ে বেরোচ্ছে অ্যালকোহলের বিশ্রি গন্ধ।নুরাইসার প্রানপাখি পাখা ঝাপটাতে শুরু করে।আজরাহান নেশার্ত।যদি কিছু করে বসে!!নুরাইসা প্রানপনে লক খোলার চেষ্টা করছে।দরজায় ধড়াম ধড়াম করে হাত দিয়ে থাবা মেরে যাচ্ছে।কিন্তু কোনো লাভ হলো না।

“ভয় পাচ্ছেন মারমেইড!!

আজরাহান এর কন্ঠ শুনেই পেছন ফিরতেই দেখে আজরাহান একদম ওর কাছে দাড়ানো।কেঁদে উঠে নুরাইসা।আজরাহান ওর দুই হাত নুরাইসার দুই পাশে রেখে নেশাভরা কন্ঠে বলল–

“ভয় পাবেন না মারমেইড।কেউ কিচ্ছু জানবেনা।শুধু আপনি কোনো আওয়াজ করবেন না।আমার কাজ হয়ে গেলেই আমি চলে যাবো।”

নুরাইসার কান্নার আওয়াজ বাড়তে থাকে।অনুনয় করে বলল—

“প্লিজ আমাকে যেতে দিন।আই এম সরি।”

“তা বললে কী হয়!!
এতো বড় সুযোগ কী হাত ছাড়া করা যায়!!

“প্লিজ যেতে দিন আমাকে।প্লিজ!!

“আগে আমার কাজ তো শেষ হোক।”

নুরাইসা কাঁদতে কাঁদতে দরজা ঘেষে নিচে বসে পড়ে।আজরাহান ও সাথে বসে পড়ে।ঢোল ঢোল করছে ওর শরীর যেনো এখনই নুরাইসার উপর পরে যাবে।নুরাইসা দু হাত জোড় করে আবার ও অনুনয় করতে থাকে।আজরাহান ঘাড় বাকিয়ে ওর মুখটা নুরাইসার কাছে নিতেই নুরাইসা এক বিকট চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here