#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ২৮
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
শীতের শুরুর বিকালটা কেমন যেনো থমথমে।নাতিশীতোষ্ণ বলা চলে।না গরম না ঠান্ডা।বিকেলের সময়টা কে অনেকে মন খারাপের সময় ও বলে থাকে।মিষ্টি রোদ তখন চুপটি করে ঘাপটি মেরে বসে থাকে।বায়ুহীন প্রকৃতি কেমন যেনো বিমর্ষ।মন খারাপের বৈকালবেলা।
কুহেলিকা নিজের বারান্দায় বসে প্রহর এর মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে।মেয়েটা তেল দিতেই চায় না চুলে।অনেক জোর জবরদস্তি করে আজ কুহেলিকা প্রহর এর চুলে তেল লাগিয়ে দিচ্ছে।কুহেলিকার মোবাইলে গেম খেলছে প্রহর।সরল গলায় কুহেলিকা বলল–
“আজরাহান তোকে কিছু বলেছে??
“না তো।”
কুহেলিকা ঈষৎ গাঢ় কন্ঠে বলল–
“মিথ্যে বলছিস কেনো??
“ও মা আমি কখন মিথ্যে বললাম!!
কুহেলিকা খপ করে প্রহর এর হাত থেকে মোবাইল টা কেড়ে নেয়।প্রহর ঠোঁট গোল করে কুহেলিকার দিকে ফিরে তার কোমর জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে আনম্র গলায় বলল–
“প্লিজ ছোট মা আরেকটু দাও না।আর একটু।”
কুহেলিকা দৃঢ় গলায় বলল–
“আগে আমার কথার জবাব দে।”
“সত্যি বলছি।কিছু বলেনি রাহান ভাইয়া।”
কুহেলিকা প্রহর কে সোজা করে বসিয়ে ওর গাল টিপে হালকা হেসে বলল–
“আজরাহান কে বিয়ে করবি??
প্রহর ভ্রু কুচকে চোখের কোন ক্ষীন করে বলল–
“নাহ।তোমার পাগল ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না।
খালি আমাকে জ্বালায়।”
“ভেবে বলছিস তো??
তাহলে কিন্তু আমি অন্য পাত্রী দেখবো।”
প্রহর মুখ গোমড়া করে ফিকে গলায় বলল–
“তোমার ওই পাগল ছেলেকে কে বিয়ে করবে!!
কুহেলিকা ফোড়ন কেটে স্বাভাবিক গলায় বললেন–
“তুই না করলে তাতে কী!!
আমার রাজকুমার এর মতো ছেলের কী মেয়ের অভাব পড়বে না কী!!
প্রহর দীপ্ত গলায় বলল–
“তাহলে করাও তোমার পাগল ছেলে কে বিয়ে।আমি করবো না তাকে বিয়ে।না,না,না।”
প্রহর হি হি করে হেসে কুহেলিকার ঘর থেকে বের হয়ে আসে।কুহেলিকা উচু গলায় প্রহর কে শুনিয়ে বলল–
“পরে কিন্তু আমার ছেলের জন্য তোকে কাঁদতে হবে।”
“বয়েই গেছে আমার।”
কুহেলিকা মৃদু স্বরে হেসে বললেন–
“পাগলি মেয়ে কোথাকার!
এই জন্যই তো আমার পাগল ছেলেটার সাথে তোর বিয়ে দিতে চাই।”
প্রহর উচ্ছ্বাসিত হয়ে রান্না ঘরে গিয়ে দাড়ায়।নন্দিতা রাতের জন্য রান্না করবে তাই সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।প্রহর পাশে গিয়ে দাড়িয়ে হালকা হেসে সরস গলায় বলল—
“তোমার কোনো হেল্প লাগবে ভাবী??
“নাহ।”
প্রহর নিশ্চুপ দাড়িয়ে নন্দিতার রান্না দেখছে।উচ্ছলিত গলায় বলল–
“একটা মজার ঘটনা বলি??
“বল।”
প্রহর খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে।নন্দিতা ভ্রযুগল কুঞ্চি করে বলল–
“এতো হাসছিস কেনো??
প্রহর কোনোমতে মুখে আর পেটে হাত চেপে হাসি বন্ধ করে বলল–
“বলছি,বলছি।”
প্রহর কয়েকটা লম্বা দম ফেলে বলল—
“একবার কী হয়েছিলো জানো!!
রাহান ভাইয়া শাওয়ার নিতে গিয়েছিলো।আর আমি উপরে গিয়ে ওয়াটার ট্যাংক এর লাইন বন্ধ করে দেই।”
নন্দিতা বিস্মিত গলায় বলল–
“কেনো??
“শাস্তি।
আমার চুল কেটে দিয়েছিলো তাই।”
“আজরাহান তোর চুল কেনো কাটলো!!!
প্রহর দূর্বল গলায় বলল–
“আমি চুলে বেনুনি করে পাশের বাসায় গিয়েছিলাম তাই।”
নন্দিতা উৎসুক গলায় বলল–
“পাশের বাসায় গেলে চুল কেটে দিবে কেনো??
“আরে ওই বাসায় একটা ছেলে ছিলো।আমার সাথেই পড়তো।ও আমার চুলের ভিতর ফুল গুজে দিয়েছিলো তাই।”
নন্দিতা মৃদু ছন্দে হেসে উঠে।সরস গলায় বলল–
“আজরাহান তো ভালোই দুষ্ট!!
“দুষ্ট না ছাই!
আস্ত পাগল।এই জন্যই ছোট মা তাকে আজাইরা রাহান বলে।”
হঠাৎ ডোর বেল বাজতেই প্রহর দীপ্ত কন্ঠে বলল–
“রাহান ভাইয়া এসেছে।আমি যাই।”
“আচ্ছা।”
দরজা খুলতেই কোনোরকম কথা ছাড়াই ভিতরে প্রবেশ করে আজরাহান।চোখ মুখ কেমন যেনো শক্ত হয়ে আছে।প্রহর বারকয়েক আজরাহান কে ডাকলেও তা আজরাহান এর কর্ণকুহর হলো না।সিড়ি ভেঙে ধপ ধপ পা ফেলে নিজের ঘরে চলে যায়।
প্রায় এক ঘন্টা পরও যখন আজরাহান খেতে আসেনি তখন ওকে ডাকার জন্য আজরাহান এর ঘরে যায় প্রহর।
আজরাহান বাইরে ছিলো কোনো একটা কাজে।তাই দুপুরে খাওয়া হয়নি।প্রহর ঘরে গিয়ে দেখে।আজরাহান শুধু একটা ট্রাউজার পড়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।সিলিং ফ্যান ফুল স্পীড এ ছাড়া।ঘরে ঢুকতেই কেঁপে উঠে প্রহর।বদ্ধ ঘরে ফ্যানের শো শো আওয়াজ স্পষ্ট।প্রহর নরম পায়ে আজরাহান এর কাছে গিয়ে দাড়ায়।উন্মুক্ত শরীরে শুয়ে আছে আজরাহান।এই লোকটার কী ঠান্ডা লাগে না!!ফর্সা পিঠ এর কোথাও কোথাও লাল হয়ে আছে।প্রহর এর চোখ ধাধিয়ে যায়।কাঁপা কাঁপা হাতে আজরাহান এর পিঠে হাত রাখতেই আজরাহান তপ্ত গলায় বলল–
“এখন যা প্রহর।”
প্রহর কিঞ্চিৎ ঢোক গিলে বলল–
“খাবেন না রাহান ভাইয়া??
“খিদে নেই আমার।তুই যা এখান থেকে।”
প্রহর ভয় পেয়ে যায়।আজরাহান এর গলা স্বাভাবিক নয়।রূষ্টতায় ভরা।নরম গলায় বলল–
“কেনো!!কী হয়েছে??
আজরাহান ঘাড় ঘুড়িয়ে মাথা এপাশ করে ক্রোধিত গলায় বলল—
“তোকে যেতে বলেছি যা এখান থেকে।আর একটা প্রশ্ন করবি ঠাটিয়ে এক চড় মারবো।বের হ আমার ঘর থেকে।”
আতকে উঠে প্রহর।আজরাহান এর ধমকে অনেকটা কেঁপে উঠে।প্রহর দেখতে পায় আজরাহান এর দুই চোখ রক্তিম হয়ে আছে।মুখটাও একদম লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আজরাহান এর ধমকেই দুই কদম পিছিয়ে যায় প্রহর।আজরাহান উত্তেজিত গলায় আবার বলল—
“এখনো দাড়িয়ে আছিস কেনো তুই।যা বলছি।”
প্রহর তড়িৎ গতিতে বেরিয়ে আসে।ঝমঝম করে কেঁদে উঠে।এই লোকটা এমন কেনো!!সবসময় নিজের খেয়াল খুশি মতো ব্যবহার করে। আমি কী মানুষ নই!!
আমার কী খারাপ লাগে না!!
যখন ইচ্ছে হবে কাছে টেনে নিবে আবার যখন ইচ্ছে হবে ছুঁড়ে ফেলে দিবে।
অসভ্য বর্বর লোক!!নিজের ঘরে গিয়ে অঝোড়ে কাঁদতে থাকে প্রহর।বিছানায় শুয়ে ফোপাতে থাকে।কাঁদতে কাঁদতে ঘুমের দেশে কখন পাড়ি জমায় প্রহর জানে না।
মাগরিবের আযানের মিষ্টি মধুর ধ্বনিতে ঘুম ভাঙে প্রহর এর।বিছানায় উঠে বসতেই ঝিমুনি দিয়ে উঠে মাথা।ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নেমে আয়নার সামনে দাড়ায় প্রহর।চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে।কেনো!!
মনে পড়ছে না প্রহর এর।ওয়াশরুম থেকে অযু করে এসে জায়নামাজ এ বসে প্রহর।নামায শেষ করেও বসে থাকে নিশ্চল হয়ে।কেনো যেনো খুব কান্না পাচ্ছে প্রহর এর!!
ঝরঝর করে কেঁদে উঠে প্রহর।কিছুতেই ভুলতে পারছে না আজরাহান এর কথা।এমন কেনো করলো সে!!সত্যিই কী সে অন্য কাউকে বিয়ে করতে চায়!!তাই আর সহ্য করতে পারছে না আমাকে!!তাহলে কেনো বলল আমাকে ভালোবাসে!!
এই লোকটা সবসময় এমন করে।কেনো করে!!প্রহর ইচ্ছে করেও এই লোকটার মায়া ছাড়তে পারে না।শত খারাপ ব্যবহার এর পরও নিজেকে দুরে সরাতে পারে না।যেনো কোনো ঔন্দ্রজালিক মোহে আড়ষ্ট করে রেখেছে আজরাহান ওকে।চুম্বকের মতো টেনে ধরে।এখন তো প্রহর চাইলেও সরে আসতে পারবে।আজরাহান কিছুতেই ওকে ছাড়বে না।এক মৃত্যু ছাড়া!
,
,
নিস্তব্ধতায় ঘিরে রয়েছে পুরো ঘর।যেনো সবকিছুই অসাড়।আজরাহান এর চোখ দিয়ে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে অগ্নিশিখা।থমথমে গলায় আজরাহান বলল–
“তোমার বাবা যা করছে তা মোটেও ঠিক নয় ভাবী।”
নন্দিতা বেশ কিছু সময় চুপ থেকে শান্ত গলায় বলল–
“বাবা যা করেন বুঝেই করেন।”
সটান করে দাড়িয়ে যায় আজরাহান।উদ্ভাসিত চোখে তাকিয়ে প্রদৃপ্ত গলায় বলল–
” ভুল বলছো তুমি।স্যার যা করছেন একদম ঠিক নয়।আর তার ফলাফল ও ভালো হবে না।”
নন্দিতা গাঢ় গলায় বলল—
“তুমি বুঝতে পারছো তুমি কী বলছো!!
আজরাহান অধর কোনে বাঁকা হাসে।শক্ত গলায় বলল–
“বাচ্চা নই আমি।আমি জানি আমি কী বলছি।”
“দেখো আজরাহান….।”
“এতো দেখাদেখির কিছু নাই।নুরাইসা বাচ্চা না।সে এডাল্ট।ওরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসে।”
“প্রত্যেক বাবা মা ই চায় তার মেয়েকে ভালো ঘরে বিয়ে দিতে।”
আজরাহান বিক্ষিপ্ত হাসে।চোয়াল শক্ত করে বলল–
“পরিবার ধুয়ে পানি খাবে তোমার বাবা!!
অামি অতশত বুঝি না।নুরাইসার বিয়ে মারশিয়াদ এর সাথেই হবে।আর যদি স্যার রাজী না হয় তাহলে ওকে তুলে এনে মারশিয়াদ এর সাথে বিয়ে দেবো।আর আমি যে তা করতে পারি এটা তোমার বাবা ভালো করেই জানে।”
নন্দিতা তপ্ত গলায় বলল–
“এইসব কী ধরনের কথাবার্তা আজরাহান!!
বাবা তোমার গুরুজন।”
“স্যার কে আমি যতটা শ্রদ্ধা করি ঠিক ততটাই আমার বন্ধুকে ভালোবাসি।আমি ইচ্ছে করলেই আজ স্যার কে এইসব বলে আসতে পারতাম।শুধু মাত্র তাকে সম্মান করি বলে তার মুখের উপর কিছুই বলি নি।”
আজরাহান কথা শেষ করেই সামান এর রুম থেকে বের হয়।ওর মনে হলো কেউ একজন এখানে ছিলো।এই মেয়েটার এই স্বভাব গেলো না।আজরাহান এর মনে পড়লো প্রহর এর সাথে বিকেলে আনেক রুড ব্যবহার করেছে।
ভিতরে ঢুকেই দরজা লক করে দেয় আজরাহান।বিছানায় সোজা হয়ে শুয়েছিলো প্রহর।উঠে বসে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিপাত করে।আজরাহান কে দেখেই বিস্মিত গলায় বলল–
” আপনি!!
আজরাহান ওর কাছে গিয়ে কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে।প্রহর রাগী গলায় বলল–
“যান এখান থেকে।যান বলছি।”
আজরাহান শান্ত ও স্নিগ্ধ গলায় বলল–
“সরি রেড রোজ।তখন মাথা ঠিক ছিলো না।”
প্রহর ঝাঝিয়ে উঠে বলল–
আপনার তো কখনো মাথা ঠিক থাকে না।আপনি আসলেই একটা পাগল।”
আজরাহান হৃদয় জুড়ানো হাসি দিয়ে বলল–
“বললাম তো সরি।”
তপ্ত গলায় প্রহর ঝামটা মেরে বলল–
“সরি বলতে হবে না।যান এখান থেকে।আর একদম আমাকে রেড রোজ বলবেন না।যাকে বিয়ে করবেন তাকে গিয়ে বলেন।”
আজরাহান উৎসুক চোখে তাকিয়ে জিঙ্গাসু গলায় বলল–
“কাকে বিয়ে করবো আমি!!
“কাকে আবার যাকে আপনার জন্য খুজে আনবে ছোট মা।”
আজরাহান ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে।উচ্ছ্বাসিত হয়ে আজরাহান সরস গলায় বলল–
“মা কী সত্যিই আমার জন্য মেয়ে দেখছে না কী!!মা কে সে কবে থেকে বলছি আমার জন্য মেয়ে দেখতে।”
প্রহর এর কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠে।মরে যেতে ইচ্ছে করছে একদম।এতোই যখন অন্য মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছা তাহলে আমাকে কেনো বলল বিয়ে করবে!!বুকটা ফেটে যাচ্ছে।খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু নিজেকে সংযত করে কোনোরকম শ্বাস আটকে ফিকে গলায় প্রহর বলল–
“আপনি সত্যিই বিয়ে করবেন!!
আজরাহান দীপ্ত হেসে ফিচেল গলায় বলল–
“আমি কী সারাজীবন কুমার থাকবো নাকী!!
তোর কোনো চাহিদা না থাকতে পারে আমার তো আছে।আমার এই যৌবন কী আমি বৃথা যেতে দিবো নাকী!!তুই তো আমাকে বিয়ে করবি না।আর বয়স হলে কোনো বাবা আমাকে তার মেয়ে ও দিবে না।তাই যত তাড়াতাড়ি বিয়ে করা যায় ততই মঙ্গল।”
আজরাহান অলসতা দুর করার অভিনয় করে প্রহর এর একদম কাছে গিয়ে মৃদু স্বরে আবার বলল–
“রাতে একা একদম ঘুম আসে না রে রেড রোজ।এতোবড় একটা শীতের রাত।কী করে একা কাটাই বল!!
ঝমঝম করে অক্ষিযুগল দিয়ে তীব্র বাদলের ধারা ঝড়িয়ে আজারাহান এর বুকে উপর্যুপরি কিল ঘুষি মারতে থাকে প্রহর।নাক টেনে টেনে বলল—
“যান এখান থেকে যান।আর একবারও আমার কাছে আসবেন না।অসভ্য,বর্বর,জঙলী।যা এখান থেকে।কর গিয়ে তুই বিয়ে।”
প্রহর জীভ কাটে।কী বলল সে!!আজরাহান কে তুই!!
আজরাহান সরু চোখে তাকিয়ে আছে।প্রহর কান্না থামিয়ে ভয়াতুর চোখে তাকিয়ে আছে আজরাহান এর দিকে।আজরাহান অধর কোনে বাঁকা হেসে প্রহর এর গালে শক্ত চুমু খায়।ওর কপালে কপাল ঠেকিয়ে স্মিত আওয়াজ এ বলল–
“মা কে আমি সব বলেছি।তোর পরীক্ষা শেষ হলেই আমাদের বিয়ে দিবে।”
প্রহর শান্ত হয়।কিন্তু হেঁচকি তোলা বন্ধ হয়নি।সেভাবেই নরম গলায় বলল–
“তাহলে বললেন কেনো অন্য কাউকে বিয়ে করবেন!!
” তোকে পরীক্ষা করে দেখলাম।”
প্রহর দুই হাতে আজরাহান এর কলার চেপে গাঢ় গলায় বলল—
“আরেকবার বললে মেরেই ফেলবো আপনাকে।”
“আমি তো কবেই মরে আছি তোর প্রেমে।”
প্রহর উচ্ছ্বাসিত হয়ে জড়িয়ে ধরে আজরাহান কে।দরজায় করাঘাত পড়ে।তার আওয়াজ এই সপ্রতিভ হয় প্রহর।আজরাহান এর দিয়ে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে নরম গলায় বলল–
“রাহান ভাইয়া!!
আজরাহান উঠে দাড়ায়।শান্ত এবং স্বাভাবিক গলায় বলল–
“তুই বস আমি দেখছি।”
প্রহর আজরাহান এর হাত টেনে ধরে।কম্পনরত কন্ঠে বলল–
“যদি ছোট মা হয়!!
“বললাম তো আমি দেখছি।”
আজরাহান দরজা খুলতেই দেখে কুহেলিকা গম্ভীর ভাব নিয়ে দাড়িয়ে।চোখে মুখে বিরক্তিকর আভাস।আজরাহান এর দিকে তীক্ষ্ম চোখ তাকিয়ে কঠিন গলায় বললেন—
“তোমার সাথে আমার কথা আছে।”
“চলো।”
ড্রয়িং রুমে নিরুত্তাপ হয়ে বসে আছে সানোয়ার আহমেদ।কুহেলিকা থমথমে গলায় বললেন–
” এইসব এর মানে কী আজরাহান!!কী বলেছো তুমি নাবীন ভাই কে!!
আজরাহান নরম এবং গাঢ় গলায় বলল–
“কী বলেছি তা না জেনে তো আর আমাকে ডাকোনি!!
কুহেলিকা আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো তেতে উঠা গলায় বললেন–
“আজরাহান!!
নিজের শিক্ষা দীক্ষা সব হারিয়ে ফেলছো নাকী!!কাকে কী বলতে হয় তার জ্ঞানটুকুও তোমার নেই!!
আজরাহান কিছু বলতে যাবে তখনই প্রহর এর আত্নচিৎকার শুনে দৌড়ে আসে ওরা।কম্পনরত প্রহর এর দু হাত ঝবঝব করছে রক্ত।দেখেই গা গুলিয়ে উঠে কুহেলিকার।বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে আজরাহান আর নন্দিতা।অস্ফুট কন্ঠে প্রহর বলল–
“ছোট মা!!
ধপ করে অজ্ঞান হয়ে নিচে পড়ে কুহেলিকা।নন্দিতা শশব্যস্ত হয়ে কুহেলিকা কে সামলানোর চেষ্টা করে।ধীর পায়ে সেখানে এসে দাড়ায় সানোয়ার আহমেদ।সম্পূর্ন মেঝে জুড়ে রক্তের প্রবাহিত ধারা।মুহুর্তেই এক হাত বুকে চেপে অন্য হাতে দেয়ালে হেলান দিয়ে পড়ে সানোয়ার আহমেদ।আজরাহান আস্তব্যস্ত গলায় বলল–
“বাবা!!!!
চলবে,,,